• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৭৫ | জুন ২০১৯ | গল্প
    Share
  • স্বপ্নমঙ্গল : সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়




    জয়ন্ত অফিস থেকে ফিরে দেখল অপালার মুখে তুমুল রক্তোচ্ছ্বাস, বাঁশির মতো পাতলা নাকের ডগা থেকে শুরু করে ফুলো ফুলো আদুরে ফর্সা গালে অসময়ের গোলাপখাস ছড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”

    অপালা চোখ ফিরিয়ে নিল, বলল, “হাত মুখ ধুয়ে এসো, চায়ের জল বসিয়েছি।”

    জয়ন্ত চোখে মুখে জল দিয়ে, পোষাক পালটে আসতে আসতে দেখল সেন্টার টেবিলে চা রেডি। অপালা কাপে টুং টাং করে চিনি গুলছে। চায়ে চুমুক দিয়ে জয়ন্ত উদ্বিগ্ন গলায় বলল, “শরীর-টরির খারাপ হয়নি তো?”

    অপালা গভীর মনোযোগ দিয়ে চায়ের কাপের গায়ে কলকা দেখছিল, যেন কাপ নয়, অ্যান্টিক পিস, সংকেত চিহ্নর মধ্যে কোনো লুপ্ত সভ্যতার হদিশ রাখা আছে, এই মুহূর্তে পাঠোদ্ধার না করলেই নয়, চোখ না তুলেই বলল, “আজকে দুপুরবেলা ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেছি, জানো?”

    জয়ন্ত চুপ করে রইল, অপালা খুব ডিটেইলে স্বপ্ন দেখে এবং অদ্ভুত ভাবে ঘুম ভেঙে যাবার পরও স্বপ্নের সব কথা তার পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে থাকে। অপালা বলল, “প্রথমে বুঝতে পারিনি, স্বপ্ন... কপালে কে যেন ঠান্ডা হাত রাখল, আমি ধড়মড় করে উঠে বসে দেখলাম এক সৌম্যদর্শন দিব্যকান্তি পুরুষ, মাথার চারদিকে জ্যোতি ফুটে বেরোচ্ছে, আমি অবাক হয়ে ভাবছি, দুপুরবেলা... সদর দরজা বন্ধ, ঘরে ঢুকলেন কী করে! উনি আমার মনের কথা বুঝে হাসলেন, কী মধুর সেই হাসি, বললেন - ভয় পেয়ো না, আমি যথেচ্ছগামী। পৃথিবীর কোনো দরজাই আমায় আটকাতে পারে না। আমি তাড়াতাড়ি খাট থেকে নেমে তাঁকে প্রণাম করলাম। তিনি আমায় কাছে টেনে কপালে চুমো খেলেন, আমি তাঁর শরীর থেকে পদ্মফুলের গন্ধ পেলাম।”

    এই পর্যন্ত বলে অপালা থামল। জয়ন্ত বলল, “তারপর...”

    অপালা বলল, “এই দেখ, তোমার জন্যে চাওমিন বানিয়ে রেখেছিলাম, দিতে ভুলে গেছি, দাঁড়াও গরম করে নিয়ে আসি।”

    জয়ন্ত বলল, “থাক না, খিদে পাচ্ছে না তেমন।”

    অপালার অভিমান হল, “ঘেমে নেয়ে বানালাম...”

    জয়ন্ত বলল, “আচ্ছা, দাও তবে...”

    কাঁটা-চামচে জড়িয়ে চাওমিন মুখে তুলে জয়ন্ত বলল, “বলো...”

    অপালা লম্বা লম্বা নখ রাখতে, নেলপালিশ লাগাতে ভালবাসে, জয়ন্তর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা নুডলের কুঁচি কড়ে আঙুলের অতিরিক্ত নখ দিয়ে তুলে নিয়ে বলল, “কী বলব?”

    জয়ন্ত বলল, “তোমার স্বপ্নের পুরুষের কথা।”

    অপালা যেন লজ্জা পেল একটু, বলল, “তিনি খাটের ওপরই কুশাসন বিছিয়ে বসলেন। আমি মেঝেয় বসতে যাচ্ছিলাম, আমাকে খপ করে হাত ধরে টেনে খাটের ওপর তাঁর পাশে বসালেন, কাঁধে হাত রেখে বললেন – নিজেকে কখনও নিচে নামিও না। তোমার মধ্যে স্বয়ং ঈশ্বর বিরাজ করছেন, তাঁকে অসম্মান করার কোনও অধিকার তোমার নেই। বলো কেন আমায় ডেকেছ? কী সমস্যা তোমার? কী গমগমে গলার স্বর! কথা শেষ হবার পরও কানের মধ্যে বাজতে থাকল।”

    অপালা কড়াইশুঁটি দিয়েছিল চাওমিনে, তার শেষ দানাটা দাঁতে চেপেই জয়ন্তর মনে হল পচা, ব্যাজার মুখে বলল, “তুমি আবার কখন ওনাকে ডাকলে?”

    অপালা বলল, “সে কী! রোজই তো কালী ঠাকুরের সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বলি – মা, একবার মুখ তুলে চাও। তোমায় জোড়া বালা দোবো। মনে হল ঠাকুরই দায়িত্ব দিয়ে ওনাকে পাঠিয়েছেন, আমাদের সমস্যার সমাধানের জন্যে।”

    সমস্যা একটা আছে বটে। বিয়ের পর সাত বছর ঘুরতে চলল এখনও আপনি আর কোপনি। অথচ ওদের চেষ্টার ত্রুটি আছে এমন নয়। ডক্টর আইচ রিপোর্ট দেখে বলেছেন দোষের মধ্যে জয়ন্তর স্পার্মগুলি একটু নাদুস-নুদুস অলস প্রকৃতির, যাচ্ছি যাব টাইপ। তবে তাতে অসুবিধে হবার কথা নয়। এমন অনেকেরই হয়। তারা দিব্যি বাপ হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারের পরামর্শ শুনে জয়ন্ত সিগারেট ছেড়ে দিয়েছে, ইদানীং ভোরবেলা পার্কে হাঁটতে যায়, শরীর চনমনে হলে স্পার্মগুলো কি আর বসে থাকবে?

    অপালা জয়ন্তর ভ্যাটকানো মুখের দিকে না তাকিয়েই বলে যাচ্ছিল, “বললাম – প্রভু, তুমি তো অন্তর্যামী, মনের মাঝারে যে মুখখানি ইচ্ছা হয়ে লুকিয়ে রয়েছে, আশীর্বাদ করো তাকে যেন কোলের মধ্যে পাই। তিনি বললেন - তথাস্তু!”

    এই পর্যন্ত বলে অপালা দু-হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে চুপ করে রইল। জয়ন্ত উটের মতো গলা বাড়িয়ে শুনছিল, বুঝতে পারেনি এত তাড়াতাড়ি গল্পটা শেষ হয়ে যাবে। একটু নিরাশ হয়ে বলল, “ব্যাস! অদ্ভুত বলছিলে...”

    অপালা মাথা নিচু করে বসে রইল। জয়ন্ত বলল, “কী হল?”

    অপালা নিজের বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলের নখের দিকে তাকিয়ে সসংকোচে বলল, “তারপর তিনি দু-আঙ্গুলে আমার গাল টেনে ঘুচি মুচি করে আদর করে দিলেন... আর আমার ঘুম ভেঙে গেল।”

    জয়ন্তর হাত লেগে চাওমিনের বাটিটা মেঝেয় পড়ে গেল, নেহাত আনব্রেকেবল বলে ভাঙল না। অপালা বাটিটা তুলে ট্রের ওপর রাখতে রাখতে বলল, “কী যে করো!”

    জয়ন্ত অস্ফুট স্বরে বলল, “অ্যাঁ, ঘুচি মুচি...!”



    দু-বছর হতে চলল কুট্টুসের, ছেলেটার মুখের দিকে তাকালেই জয়ন্তর সেদিন সন্ধেবেলা অপালার রেঁধে রাখা চাউমিনের মধ্যে পচা কড়াইশুঁটির দানাটার স্বাদ মনে পড়ে যায়। ভুলেই যেত, যদি না... সেদিন রাত্তিরে অপালাকে আদর করার সময় তার গালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া চুল সরিয়ে দিতে গিয়ে একটা ছড়ে যাওয়া দাগ দেখতে পেত, টাটকা দাগ, নখ লেগে চিরে গেলে যেমন হয়। অপালাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও পারেনি। স্বপ্ন দেখার ক’দিন পরেই অপালা লাজুক লাজুক মুখ করে বলেছিল, “জানো তো আমার না এ মাসে হয়নি...”

    জয়ন্ত খুশি হবে না দুঃখ পাবে বুঝে উঠতে পারেনি। ডক্টর আইচ অবশ্য ইউরিন টেস্টের রিপোর্ট দেখে খুশি হয়েছিলেন, বলেছিলেন, “জানতাম, ঝামেলা নেই, লেগে থাকলে হবেই...”

    সে তো না হয় হল। যথা সময়ে অপালার কোল আলো করে কুট্টুস এসে পড়ল। কিন্তু জয়ন্তর খুঁত-খুঁতুনিটা গেল না। অপালা চোখের আড়াল হলেই ছেলের মুখে আঁতিপাঁতি করে অন্য কোনো মুখ খোঁজে। অপালা নজর করেনি এমন নয়, জয়ন্তর অজান্তে কখনও ঘরে ঢুকে পড়েছে, গায়ে নাড়া দিয়ে বলেছে, “কী সব সময় হাঁ করে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকো বল তো! বাজার যাবে কখন?”

    মনে মনে হয়তো ভেবেছে, বেশি বয়সের ছেলে তো, তাই আদিখ্যেতা... ভাবুক গে, জয়ন্তর কিছু আসে যায় না। সন্দেহ নিরসন না হলে শান্তি নেই। এত দিন ছেলে হচ্ছিল না, ঠিক আছে, স্বপ্নের মধ্যে সন্ন্যাসী টাইপের একটা লোক এসে অপালার গাল টেনে ঘুচি মুচি করে দিয়ে গেল আর ছেলে হয়ে গেল, ব্যাপারটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না! কিন্তু সত্যিই যদি কিছু অসৈরণ হত অপালা কি সাতকাহন করে স্বপ্নমঙ্গল-কথা শোনাত? কাকতালীয় হতেই পারে, কিন্তু ছানাটা কাকের না কোকিলের – এই ডায়ালেমাটার একটা বিহিত হওয়া দরকার। জয়ন্ত ভাবল কুট্টুসকে মনে মনেও কাকের ছানা বলাটা বোধ হয় ঠিক হল না, তার গায়ের রঙ টুকটুকে ফর্সা, মায়ের ওপর গেছে, মুখখানাও অপালার আদলে। খুঁজেপেতেও অন্য লোকের ছায়া দেখতে পায় না। তবু জিজ্ঞেস করে, “তোমার সেই পাড়ার দাদা... স্বপনদা না কী যেন নাম... এখন কোথায়, খবর জানো?”

    অপালা আশ্চর্য হয়, “হঠাৎ স্বপনদার খোঁজ নিচ্ছ যে?”

    জয়ন্ত ও অপালার বিয়ের দিন ‘বর বড়ো না কনে বড়ো’ করার সময় অপালা ব্যালান্স হারিয়ে পিঁড়ি-ধরা একটি সুদর্শন যুবকের কাঁধ আঁকড়ে ধরেছিল। জয়ন্ত পরে জানতে পেরেছিল তার নাম স্বপন। অষ্টমঙ্গলায় গিয়ে শুনেছিল সেই স্বপন সন্ন্যাস নিয়ে বেলুড় মঠ না ভারত সেবাশ্রম কোথায় যেন চলে গেছে। ভেবেছিল গেছে তো গেছে, আপদ গেছে। বিয়ের পর পর নিজেদের চেনাজানার ব্যস্ততায় স্বপনদার প্রতি অপালার কোন গোপন দুর্বলতা ছিল কি না জানার অবকাশ হয়নি। বলল, “না, এমনিই... রাস্তায় একজন গেরুয়াধারী মহারাজ বাস ডিপোর ডাইরেকশান জিজ্ঞেস করছিলেন, কথায় কথায় জানলাম ভারত সেবাশ্রম সংঘের... তাই মনে পড়ল।”

    অপালা অন্যমনস্ক ভাবে বলল, “জানি না... আমারো ক’দিন ধরে স্বপনদার কথা মনে হচ্ছিল... কতদিন দেখি না।”

    জয়ন্ত ভুরু কুঁচকে বলল, “কতদিন?”

    অপালা সে কথার জবাব দিল না, কথা পালটে বলল, “বাজার নিয়ে না এলে রান্না হবে না কিন্তু। তুমি ওঠ এখন। স্বপনদার কথা পরে ভাবলেও চলবে।”



    কুট্টুসের দু-বছরের জন্মদিনে বিল্ডিঙের কয়েক জন বাচ্চাকে ডেকেছিল অপালা। বেলুন ফুলিয়ে, হ্যাপি বার্থডের শিকলি ঝুলিয়ে ঘর সাজিয়েছিল। সন্ধে হতে না হতেই আট দশটা বাচ্চা হৈ হৈ করে এসে পড়ল। তাদের সামলাতে হিমসিম খেয়ে গেল দুজনে। কুট্টুস কেক কাটার আগেই সামনের ফ্ল্যাটের লিটন কেকে আঙুল ডুবিয়ে খানিকটা ক্রীম খেয়ে নিল। শর্মা আন্টির নাতি গলায় চিপ্স আটকে খক খক করে কাশছিল। জয়ন্ত তাকে বাথরুমে টেনে নিয়ে যেতে যেতে হড় হড় করে বমি করে ফেলল। খাবার যা পেটে ঢুকল তার থেকে বেশি কার্পেটের ওপর ফেলে ছড়িয়ে তারা যখন বিদায় নিল তখন রাত সাড়ে নয় দশ। সব গুছিয়ে তুলতে তুলতে অপালার রাত হয়ে গেল। কুট্টুস ততক্ষণে সোফার ওপর ঘুমিয়ে কাদা। তাকে তুলে বিছানায় শোয়াতে শোয়াতে অপালা বলল, “কাল ডক্টর আইচের কাছে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিও তো।”

    জয়ন্ত একটা পেপারব্যাক নিয়ে ছেলের পাশে শোবার তাল করছিল। আধশোয়া অবস্থা থেকে সটান শিরদাঁড়া সোজা করে উঠে বসল, “মানে...?”

    অপালা কুট্টুসের চুলে বিলি কেটে বলল, “মানে আবার কী? আমাদের কুট্টুস সোনার একটা ভাই বা বোন হবে, তাই...।”

    জয়ন্ত গোঁজ হয়ে বসে রইল। অপালা জিজ্ঞেস করল, “কী হল?”

    জয়ন্ত বলেই ফেলল, “আবার কী সেই সন্নিসি ঠাকুর স্বপ্নে এসেছিলেন না কি?”

    অপালা অবাক হয়ে বলল, “তুমি কি হাত গুনতে পার? কী করে জানলে?”

    জয়ন্ত আতঙ্কিত হয়ে বলল, “আবার সেই ঘুচি মুচি...!”

    অপালা বলল, “ধ্যুত, এবার দরজার বাইরে থেকেই বিদেয় করে দিয়েছি।”

    জয়ন্ত মুখ তুলে তাকাল, “সে কী? কেন?”

    অপালা মুচকি হেসে বলল, “বলেছি, আমার বর ঘুচি মুচি পছন্দ করে না।”

    জয়ন্ত একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল, “আমি আবার কখন বললাম...”

    অপালা বলল, “মুখে না বললেও, মনে মনে তো বলেছ। আমার গালে নখের দাগ দেখে ভেবেছ স্বপ্নে নয় সত্যি সত্যি... ”

    জয়ন্ত হাঁদার মতো বলল, “সত্যিই নখের দাগ ছিল যে...”

    অপালা ছেলে ভুলনোর মতো করে বলল, “বোকা ছেলে, সেদিন চান করে চুল আঁচড়ানোর সময় আমার নিজের নখেই...”

    জয়ন্ত বলল, “তুমি জানতে... বলনি কেন এত দিন? কত কষ্ট পাচ্ছিলাম, জানো?”

    অপালা বলল, “দেখছিলাম, কতটা ভালোবাসো।”

    জয়ন্ত আলো নিভিয়ে অপালাকে কাছে টানল। বরের বুকের মধ্যে শুয়ে আদর খেতে ভালো লাগছিল অপালার। দু-জনের মধ্যে জমে থাকা অন্ধকার কেটে গিয়ে আজ অনেক দিন পর জানলায় চাঁদ উঠেছে। জ্যোৎস্নার দুধ ঘন হয়ে আকাশে সর পড়ে আছে। ভোর হয়ে গেছে ভেবে একটা কোকিল ডেকে উঠল কোথায়। হঠাৎ সেই সুপুরুষ সন্ন্যাসীর চেহারাখানা মনে পড়ল অপালার। কেমন করে হদিশ পায় কে জানে! ছেলে পেটে আসার ঠিক আগে দু-চোখ ওপচানো করুণা নিয়ে এসে হাজির হয়। আহা গো, কেমন মুখ চুন করে চলে গেল। যেতে যেতে বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছিল। স্বামী-সোহাগে ভেসে যেতে যেতে অপালার খুব মনকেমন করে উঠল। আর হয়তো কোনোদিন সে আসবে না।

    কী করে আসে! লোকলজ্জা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে, না কি? আজকাল কারো দুটোর বেশি ছেলে মেয়ে হয় নাকি?




    অলংকরণ (Artwork) : অলংকরণ: রাহুল মজুমদার
  • এই লেখাটি পুরোনো ফরম্যাটে দেখুন
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)