• Parabaas
    Parabaas : পরবাস : বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি
  • পরবাস | সংখ্যা ৮৬ | এপ্রিল ২০২২ | রম্যরচনা
    Share
  • সে (৬) : সমরেন্দ্র নারায়ণ রায়
    | | | | | ৬ | | | | ১০ | ১১ | ১২



    আজকাল বহু হাজার টাকার সাইকেল হলো নিতান্ত সাধারণ এলেবেলে পদার্থ। অন্ততঃ শহরে। শহরতলীতেও প্রায় তাই। কিন্ত সেই কিশোরবেলার যুগে আমাদের ওই ক্ষুদে শহরে নতুন একটা ১৫০ টাকার হারকিউলিস বা ২০০ টাকার হাম্বার ছিলো জনসাধারণের চোখ-ধাঁধানো জিনিস।

    আমার ছিলো মাঝামাঝি গোছের নর্টন। বিলিতী। আটাশ নয়, ছাব্বিশ। ঘন সবুজ রঙের। আস্তে আস্তে, একটি একটি করে সেটিতে লাগিয়েছিলাম সবুজ রঙের ক্যারিয়ার, সবুজ রঙের হাফ চেন গার্ড, কালো রঙের ডবল স্ট্যান্ড, কালো রঙের লক্ আর পেতলের কেরোসিন ল্যাম্প। পুরোনো একটা বাস্কেট বাড়িতে ছিলো, চাপিয়ে দিতাম সেটাই। মিউনিসিপ্যালিটির লাইসেন্স টোকেন নং ছিলো ১১৭। ওই সাইকেলটির জন্য আমার মাটিতে পা পড়তো না, পেড্যালের ওপর থাকতো কি না।

    দুম করে বিষয় পরিবর্তন করি একটু। ডাং গুলি খেলা দেখেছেন নিশ্চয়ই? ও, খেলেওছেন? বাঃ!

    তা ওই ঘোর বিহারেও আমরা ছেলে মেয়েরা সবাই মিলে খুব ডাং গুলি খেলতাম। আপনাদেরই মতো। এমন কি মনে আছে মন্ত্রটাও ছিলো বাংলা -
    ইসকেলেন্টি ঘুঁটির মাঠ
    চালতা দিয়ে চিংড়ি মাছ
    দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো আমাদের সকলের যে বাঁ পায়ের কড়ে আঙুলটি ধরে যথার্থ শ্রদ্ধাসহকারে উক্ত মন্ত্রটি সঠিক সুরে উচ্চারণ করতে পারলে খেলায় জয় অবশ্যম্ভাবী।

    তা এখানে গাছ, সেখানে গাছড়া এই সব বিরক্তিকর কারণে ডাং গুলির জন্য নিজেদের পাড়া আমাদের পছন্দ হচ্ছিলো না। তাই আমাদের কোনো একজনের (আমার নয়, বিশ্বাস করুন) মনে হলো যে দল বেঁধে গিয়ে জয়ন্তী নদীর চড়ায় একটা চ্যালেঞ্জ ম্যাচ খেললে কেমন হয়?

    যে কথা সেই কাজ। চার পাঁচটা সাইকেলে আমরা সাত আট জন চললুম নদীর ধারে খেলতে। কারুর মাথায় একবারও খেললো না যে বালির ওপর ডাং দিয়ে ঠুকে গুলি তোলাই যাবে না!

    চড়ায় পৌঁছে যখন ব্যাপারটা হঠাৎ বোঝা গেলো তখন আমরা কয়েকজন কটমট করে সেই বিশেষ একজনের দিকে তাকাতে লাগলাম, আর সে খালি বলতে লাগলো - তোরা তো, তোরাও তো...

    পথে একটা ঢালু কিন্ত খালি মস্ত বড়ো টাঁড় পড়তো, কথা না বাড়িয়ে ঠিক করা হলো যে সেখানেই ম্যাচ খেলা হবে।

    সেই ম্যাচ খেলা হলো। হয় জিতেছিলাম, নয় হেরেছিলাম। মনে নেই। আর ফেরার পথে পড়লো চড়াই। ডবল ক্যারি দূরের কথা, গাড়ি ঠেলে তুলতে হবে।

    তা জেতার আনন্দে বা হারার শোকে যাই হোক, গোঁয়ার্তুমি করে চড়াইয়ের মুখে সাইকেলে উঠতে গিয়ে নতুন হাফ চেন গার্ডে পা গেলো কেটে। তেমন পরিষ্কার বালিও কাছাকাছি ছিলো না যে চেপে দিয়ে রক্ত বেরোনো বন্ধ করবো। তাও কিছুটা চেষ্টা করলাম।

    সবাই মিলে দেরী করে ফিরে বকুনি খাওয়ার কোনো মানে হয় না, অন্যদের বললাম এগিয়ে যেতে আর আমাদের বাড়িতে একটু বলে দিতে।

    কিছুটা দূর আস্তে আস্তে ঠেলে উঠেছি, চড়াই প্রায় শেষ, দেখি যার আসল বদবুদ্ধি সে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

    - কি রে, দাঁড়িয়ে কেন রে, যা এগিয়ে যা, দিদাকে বলিস আমি আসছি
    - সে আমি যাচ্ছি, তোর পা টা দেখি, এ কি রে, এখনো রক্ত পড়ছে যে
    - আরে দেখ না, এমন জায়গায় কাটলো যে মুখ পৌঁছচ্ছে না, চুষে থামাতেও পারছি না
    - একটা কাজ কর, এখানটায় বসে পড়, হ্যাঁ, এইখানটায়, এক্কেবারে নড়বি না
    - এ কি এ কি করছিস তুই, ছাড় ছাড় বলছি
    - তুই থামবি - বলেই মাটির ওপর উপুড় হয়ে আবার সে শুরু করলো কাটা জায়গাটা চুষে রক্ত থামানোর চেষ্টা!

    রক্ত পড়া থেমেও গেলো একটু পরে।

    - একদম নড়বি না রে, একটু বসে থাক, আমি যাচ্ছি না, কাউকে বলিস না, আমরা কাহার তো। তুই ক্যারিয়ারে বসিস, আমি ঠিক ডবল টেনে নেবো, চড়াই তো শেষ…



    অলংকরণ (Artwork) : দীপঙ্কর ঘোষ
  • | | | | | ৬ | | | | ১০ | ১১ | ১২
  • মন্তব্য জমা দিন / Make a comment
  • (?)
  • মন্তব্য পড়ুন / Read comments