ভালোই করেছি কাজ থামিয়ে ফিরে এসে। মাথাটা বেশ ঢুপ ঢুপ করছিল। দুপুরেই এসেছি কলকাতা থেকে, দেড়শ’ কিলোমিটার দূরে স্থানীয় পঞ্চায়েত ইন্সপেকশনের কাজে। তিন জনের দলে আমি ও দু'জন অডিটর। আমি সুপারিন্টেন্ডেন্ট, তাই সরকারি রেস্ট শেডের একমাত্র ঘরে আমার থাকার ব্যবস্থা। বাকি দু'জন থাকছে পঞ্চায়েতের কর্মচারীদের বাড়িতে। বেচারারা যাবে কোথায়, গ্রামে তো হোটেল নেই, অতএব যাদের কাজের সমীক্ষা হবে তাদেরই বাসস্থানে আশ্রয় নিতে হয়, নুনও খেতে হয়।
অতিথিশালাটি ছোট। প্রচলিত নাম রেস্ট শেড, বাঙলায় বিশ্রামের ছাউনি। কোনও রকমে দাঁড় করানো ছোট লোহার গেট খুলে, সুরকির রাস্তা পেরিয়ে বাড়িটা। রেস্ট শেড থেকে কিছুটা তফাতে একটা ছোট ঘর। চৌকিদারের থাকার জায়গা। অন্ধকারের মধ্যেই চোখে পড়লো রেস্ট শেডের বারান্দায় একটা লণ্ঠনের শিখা কেঁপে চলেছে। অবাক হলাম, লণ্ঠন কেন এনেছে, অতিথিশালায় তো বিদ্যুতের বাতি ও পাখা আছে। কাছে পৌঁছুতে দেখি, একটি সাত-আট বছরের ছেলে বসে আছে লণ্ঠনটার পাশে।
জিজ্ঞেস করলাম -- তোমার নাম কি? কেন এসেছো?
বললো -- বিনু। লণ্ঠনটা তোমাকে দিতে বললো।
-- দুষ্মন্ত কোথায় ?
-- বাবা পঞ্চায়েত অফিস গেছে।
-- তা লাইট চলে গেছে কতক্ষণ হয়েছে?
--আপনি হাঁটতে যাওয়ার পরেই, আর আসে নি। লোড সেডি।
ছেলেটির মুখটা কেমন যেন বিষণ্ণ। প্রশ্ন করে বুঝলাম ওর শরীর ভালো আছে। বিনু প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, দুপুরে ওখানে খাবার দেয়। সবদিন ওর খাবার ভালো লাগে না। একা এই লণ্ঠনের আলোতে ভুতের মত বসে কি করবো, তাই ছেলেটাকে নানা কথার অছিলায় আটকে রেখে দিয়েছিলাম। ছেলেটির সঙ্গে কথা বলা শেষ হয় নি, একটি অল্পবয়সী মেয়ে ঘোমটায় মুখ ঢেকে একটা ছোট্ট রেকাবিতে চায়ের কাপ ও দুটো বিস্কুট নিয়ে কাছে এসে দাঁড়ালো। উঁচু বারান্দার সিঁড়িতেই বসে কথা হচ্ছিলো।
বললাম--এখানেই নামিয়ে রাখো, বারান্দাতে।
চা-বিস্কুট আমার সামনে বারান্দায় নামিয়ে রেখে ছেলেটাকে বকে উঠলো
--তোকে লণ্ঠন দিতে পাঠালাম, তুই এখনো এখানে বসে আছিস? যা শিগগিরি ঘরে যা। আমি আসছি।
ছেলেটি দৌড়ে চলে গেল। চায়ের কাপ আর বিস্কুটের প্লেট নামিয়ে মেয়েটিও।
চা খেতে খেতে ভাবছিলাম চৌকিদার দুষ্মন্ত নিশ্চয়ই চল্লিশ পার করেছে অনেক দিন হলো। মাথা-ভর্তি কাঁচা-পাকা চুল, মুখে দিশেহারা দৃষ্টি। দুপুরে যখন এখানে এসে পৌঁছালাম, ওই আপ্যায়ন করেছিল। এতটা দূরত্ব বাসে এসে ক্লান্ত লাগছিল। মটকার এক গ্লাস ঠাণ্ডা জল দিয়েছিল দুষ্মন্ত, অন্তরাত্মা শীতল হয়ে গেল।
কথায় কথায় জানালো ওর অদৃষ্টের কথা। বড় ছেলেটার ষোল বছর বয়স হয়েছিল, পড়াশুনা ছেড়েছে অনেক আগেই, ভ্যানরিক্সা চালাতো ব্লক অফিসের আশে পাশে। দুষ্মন্তই কিনে দিয়েছিল। দু’পয়সা রোজগারও করছিল। একদিন খবর এলো, একটা ট্রেকার ধাক্কা মেরে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে ভ্যান রিক্সাটাকে, সাথে ছেলেটাকেও। দৌড়ে গিয়েছিল হাসপাতালে, ততক্ষণে সব শেষ। বউটার শরীর এমনিতে ভালই ছিল, অনেক বছর পরে হওয়া বাচ্চাটাকে নিয়ে খুব খুশিতে ছিল। কিন্তু বড় ছেলেটা মরার পরে অসুস্থ হয়ে পড়লো নিজেও, নিজেকেই যেন দোষী সাব্যস্ত করলো। ছ’মাসের মধ্যে বেশি বেড়ে গেল রোগ। ডাক্তার বদ্যি দেখিয়ে জানা গেল টি বি রোগ হয়েছে। গরীবের ঘরেই সাধারণত রাজরোগ হয়। বছর খানেকের মধ্যে আর উঠে দাঁড়াতে পারে নি।
এক বছরও পেরোয় নি বৌ মারা গেছে, তাহলে এই মেয়েটা কে ? সম্পর্কটা কি বুঝে উঠতে পারলাম না। বছর পঁচিশ বয়স হবে। এর কথা তো কিছু বললো না। ধোঁয়াশা ব্যাপার মনে হচ্ছিলো।
সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হলো। বিদ্যুতের আলো জ্বলে উঠলো। রাত ঠিক ন'টার সময় রাতের খাবার নিয়ে এলো দুষ্মন্ত। ছোট্ট টেবিলে গুছিয়ে দিল ভাত, ডাল তরকারি ও ডিমের ঝোল। সাজিয়ে রেখে বললো,
-- হুজুর, মাছ এখানে সব সময় পাওয়া যায় না। কাল নিশ্চয়ই ব্লক অফিসের সামনে যে বাজার আছে, ওখান থেকে এনে রান্না করে দেব।
বারণ করলাম --ব্লক অফিস তো দশ কিলোমিটার দূর। দরকার নেই। যা আছে, তাই রান্না করো।
-- সাইকেলে যাবো, আধ ঘন্টা খানেক মাত্র লাগবে।
-- কি মাছ পাওয়া যায়?
-- পুকুরের হুজুর। অনেক পুকুর আছে কাছাকাছি, ওখান থেকেই ধরে আনে।
-- এত দূর যাবে?
-- আজ্ঞে হুজুর। আপনাকে সকালের চা দিয়ে, জল খাবার তৈরী করে আমি চলে যাব বাজার সাইকেলে, বসন্ত আপনাকে জলখাবার দিয়ে দেবে। পঞ্চায়েতের লোকেরা বলেছে, আপনি বড় সাহেব, ঠিক মত দেখাশুনা করতে।
--বসন্ত কে?
ঝাড়ুদার হুজুর। পঞ্চায়েত অফিস, রেস্ট শেড ঝাড়পোঁছ করে। ভালো ছেলেটা।
আরেকটা কথা জানার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু প্রশ্ন করতে বাধলো।
খাওয়া হয়ে গেলে, প্লেট গ্লাস সব নিয়ে যাবার সময় বললো দুষ্মন্ত,
--হুজুর, লণ্ঠনটা সারা রাত জ্বলুক। কখন লাইট চলে যাবে ঠিক নেই, ‘ইলেকট্রিক’ থাকে কম, রাতে যদি ওঠেন লণ্ঠনটা লাগতে পারে।
দরজা বন্ধ করে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। ক্লান্তও লাগছিল। সেই সকালে বেরিয়েছি তিন জনে। ব্লক অফিসে পৌঁছুতে দুপুর বারোটা। ব্লক অফিসের পাশেই একটা ছোট ভাতের হোটেল। ওখানে ডাল ভাত, একটা ভাজা ও তরকারির মিল, দাম পঁয়ত্রিশ টাকা। সেই খেয়ে, বাসের জন্য আর অপেক্ষা না করে, ট্রেকারে আরো আট জনের সঙ্গে গাদাগাদি করে বসে লক্ষিনপুর পঞ্চায়েতে এসে পৌঁছেছি দেড়টার সময়। জিনিসপত্র রেখে, আড়াইটাতে বসে গিয়েছিলাম কাজে। আগের দিন কাগজপত্র ঠিকঠাক করে রাখলে, পরের দিন কাজটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। কাল সারা দিনে সারতে হবেই। সন্ধ্যের বাসটা নিলে, রাত দশটার মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাবো। তবে কাজ করতে পারি নি বিশেষ। সকাল থেকে তাড়াহুড়ো করে যাতায়াতে মাথা ধরে গিয়েছিল। ফিরে এসেছিলাম ডাকবাংলো। খোলা পরিবেশে, অমন সুন্দর দূষণহীন হাওয়াতে, কেটে গেল মাথা ব্যথা।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। হঠাৎ ঘুম ভাঙলো ডুকরে কাঁদার আওয়াজে। একটা বাচ্চা ছেলের গলা। শব্দটা আসছে চৌকিদারের ছোট আটচালাটার দিক থেকেই। বুঝতে পারলাম সেই বিষণ্ণ মুখের ছেলেটাই কাঁদছে। কেন কাঁদছে ঐটুকু ছেলেটা, কে মারধর করছে ওই বাচ্চাটাকে? রাত এগারোটার সময় যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, ঐটুকু বাচ্চা ঘুমে কাদা হয়ে থাকার কথা, সে তখন কেন কাঁদে? শারীরিক যন্ত্রণা বা খিদের জ্বালা না হলে, ঐটুকু শিশুর ওই ভাবে কাঁদার কথা নয়। বাকি রাত অশান্তিতে ঘুমটা গভীর হয় নি, মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙেছে। বাচ্চার কান্নার আওয়াজ থেমে গেছে অনেক আগেই।
সকাল সাতটায় চা দিয়ে ওঠালো দুষ্মন্ত। চুপচাপ ওর হাত থেকে চা নিলাম। ও বাজারে যাবে মাছ আনতে। ঝাড়ুদার বসন্ত এসে পড়বে অল্প সময়ের মধ্যেই, আমি প্রস্তুত হলেই জলখাবারটা এনে দেবে। কেন যেন দুষ্মন্তকে আর সরল সাধাসিধে ভালো মানুষ মনে হচ্ছিলো না। ওর ছেলেটা অত রাতে কেন অমন করে ডুকরে ডুকরে কাঁদে! চুপ করেই রইলাম।
স্নান সেরে, পুজো-আহ্নিক শেষ করতে প্রায় ন'টা বাজলো। দশটা থেকে অডিট শুরু করবো বলে রেখেছি। পাঁচটার মধ্যে শেষ করে আবার ফেরার বাস ধরতে হবে। এক হাতে প্লেটে রুটি, আরেক হাতে অন্য এক প্লেটে বেশ কয়েকটা হৃষ্টপুষ্ট বেগুন ভাজা নিয়ে ঢুকলো বসন্ত। টেবিলে খাবারটা রেখে, নিচু হয়ে একটা মস্ত প্রণাম করে সোজা হলো। বেশ হাসিখুশি মানুষটা।
বললো -- স্যার, খেয়ে নিন। বেগুন ভাজাটা গরম খেতে ভালো লাগবে। আমি বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, হাঁক দিলেই সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবো।
দৌড়ে বেরিয়ে গেল। আমি খেতে বসলাম। একটা বাহারি কাঁচের গ্লাসে এক গ্লাস জল এনে টেবিলে রেখে যেমন দৌড়ে এসেছিল, তেমনি দৌড়ে বেরোতে যাচ্ছিলো।
আমি ডাকলাম -- দাঁড়াও বসন্ত।
ঘুরে দাঁড়ালো, বললো --হ্যাঁ স্যার।
--বসন্ত, মেয়েটা কে? কাল চা এনে দিয়েছিল সন্ধ্যায়, ঘোমটায় মুখ ঢেকে।
-- ওতো শ্যামলী। ভালো মেয়েটা। কেন স্যার, কিছু অসুবিধা হয়েছে?
--ও কে হয় দুষ্মন্তের? বাচ্চাটা?
--স্যার, ও দুষ্মন্তের বৌ। বাচ্চাটার সৎ মা।
--কবে মারা গেছে নিজের মা?
-- মাস পাঁচেক আগে।
-- একে কবে বিয়ে করলো?
--এই মাস দুয়েক আগে।
--বৌ মরার পর এক বছর ও পার না হতেই!
আমার অডিটরের মন, সহজে মানে না। নিজের অজান্তেই একটু ব্যাঙ্গাত্মক হাসি বেরিয়ে এলো। বসন্ত আর কিছু বললো না। বাইরে চলে গেল। আমিও বেরোলাম পঞ্চায়েত অফিসের দিকে কাজ শুরু করতে।
অনেক চেষ্টা করেও তিন জন মিলে সারতে পারলাম না। শেষ হতে রাত সাড়ে সাতটা হলো। শেষ বাসও ব্লক অফিস হয়ে চলে গেছে। অগত্যা রয়েই গেলাম, কাল সকালে যাবো ঠিক হলো। ফিরে এলাম আবার অতিথিশালায়। ঘন্টা খানেক পরে রাতের খাবার দিয়ে গেল দুষ্মন্ত। বেশ ভালো ছিল মাছটা, রান্নাটা আরো ভালো। সারা দিনের খাটুনির পরে খুব আয়েস করে খেলাম। জিজ্ঞেস করলামঃ
--এবেলাও তুমিই রেঁধেছ মাছ? খুব ভালো হয়েছে I
--না হুজুর, আমার বৌ। ওবেলা আমি রেঁধেছিলাম। মাছটা ও খুব ভালো রাঁধে, তাই ওকেই বলেছিলাম এবেলা রাঁধতে।
আর কিছু কথা হয় নি। শুতে যাবার আগে বললাম,
--দুষ্মন্ত, কাল সকালে ছ'টার সময়ে চা দিয়ে দিও। জলখাবার খাবো না। বাস পরিবর্তন করার সময় কিছু খেয়ে নেব। সাতটার সময় বেরিয়ে যাবো।
'আচ্ছা হুজুর,' বলে বেরিয়ে গেল। আমি দরজা বন্ধ করলাম। রাত প্রায় দশটা হয়ে গেছে।
ঘুম আসছিল না। আজ সারাদিন বাচ্চাটাকে দেখিনি। ওইটুকু বয়সে মাকে হারানো বড়ই দুর্ভাগ্য। তার উপর এমন বাবা, নিজে অন্তত দু' একটা বছর বাবা-মার স্নেহ দিয়ে ভুলিয়ে রাখতো। তা না করে, তড়িঘড়ি আবার বিয়ে করে নিয়ে এলো অল্পবয়সী একটা মেয়েকে। হঠাৎ কানে ভেসে এলো সেই ডুকরে ডুকরে কান্নার আওয়াজ। ওই বাচ্চাটার, বিনুর। খেতে দেয় নি, মেরেছে? চুপ করে শুনলাম কিছুক্ষণ। মন থেকে সরিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে থাকার চেষ্টা করলাম। কানে আঙ্গুল দিয়ে শব্দটা বন্ধ করার চেষ্টা করলাম। হলো না।
আর পারলাম না। উঠে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম। সুন্দর জ্যোৎস্নায়, হালকা হাওয়ায় ভেসে এলো হাস্নুহানার মিষ্টি গন্ধ। চারদিক যেন মোহময় হয়ে উঠেছে। তারই মধ্যে ভেসে আসছে এক বালকের করুণ কান্না। ধীর পায়ে, কঠিন মন নিয়ে এগিয়ে গেলাম দুষ্মন্তের চালা ঘরের দিকে।
ঘরের ভেতরে লণ্ঠনের আলো আঁধারি। বাইরে চৌকাঠের ওপরে বসে এক মহিলার অস্পষ্ট অবয়ব। আরো কাছে এগিয়ে গেলাম। শ্যামলী বসে আছে, আর কোলে বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে বিনু। আর মেয়েটা ওর পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আদরে। আমাকে দেখে সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো শ্যামলী। বিনু দাঁড়িয়ে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে তখনো ফুঁপিয়ে চলেছে। ঘরের ভেতরে লণ্ঠনের পলতের শেষ অংশটা নিভতে নিভতেও আলো দিয়ে যাচ্ছে। দুষ্মন্ত গভীর ঘুমে।
জিজ্ঞেস করলাম --ও কাঁদছে কেন?
উত্তর দিল শ্যামলী --ওর ঘুমাবার সময় মার কথা মনে হয়, রোজ মার সাথে ঘুমাতো তো, তাই। আগে তো সারা দিন কাঁদতো, এখন আমার কাছেই ঘোরাঘুরি করে সারা দিন। কিন্তু রাতে সামলাতে পারে না।
প্রশ্ন করলাম --একটা কথা তোমায় জিজ্ঞেস করবো?
চোখে হাসি নিয়ে বলে মেয়েটা -- বলেন বাবু!
সোজাসুজি প্রশ্ন করলাম চোখের দিকে তাকিয়ে -- তোমার দ্বিগুণ বয়সী, এত বয়স্ক লোককে বিয়ে করলে কেন? টাকা দিয়েছে তোমার বাবাকে?
হেসে ফেললো।
বললো --টাকা দেবে কোথা থেকে, ওর টাকা কৈ? আমিই বললাম বিয়ে করতে। প্রথমে রাজি হয় নি, পরে মেনে গেছে।
আমার কালো মনটা তখনও সন্তুষ্ট নয়। জিজ্ঞেস করলাম --কেন?
--বিনুর মা আমার দিদি। ও ছোট থেকেই আমার ন্যাওটা। কে দেখবে ওকে?
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম অল্পবয়সী মেয়েটার দিকে! ভালবাসা এমনও হয়! নিজের স্বপ্ন, আকাঙ্খা সব বিসর্জন দিয়ে মাতৃরূপে এই মেয়েটি। আমার চোখ ভিজে এসেছিলো।
বললাম --দুষ্মন্ত তো ঘুমাচ্ছে। যাও, এখন মা-বেটাতে শুয়ে পড়ো।
পরের দিন সকালে যাবার আগে হেসে বলেছিলাম দুষ্মন্তকে,
--ভালো করেছো, বিনুকে মা এনে দিয়ে।
মাথা নিচু করে, হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রওনা হলাম।