সূর্য-অভিসার

আমার নাম দিয়েছিলে 'নলিনী'।
বলেছিলাম, ''কবি তোমার গান শুনলে
আমি মরণ দিনের থেকেও প্রাণ পেয়ে
জেগে উঠতে পারি।''
সে আশা আমার হয়নি মিছে।
জীবনের অন্য পারে
রয়েছি তরুণী আজও, সময়ের ক্লান্ত হাত
যতই টেনেছে আমায় বিস্মৃতির অন্ধকারে,
তোমার গানে গানে এসেছি ফিরে,
ছায়া ফেলে গেছি তোমার 'ছেলেবেলা'-শেষের
নরম রোদের মতো স্মৃতিতে।

সূর্যের উদয় আমি দেখিনি;
মধ্যাহ্ন রবির দীপ্তি উজ্জ্বল করেনি আমায়
অস্তের রাগ পূরবী আমার জন্য নয়।
আমি শুধু দেখেছি উষামানবীর মতো ―
সূর্য ওঠার আগে পুবের আকাশে ছড়িয়ে পড়া
অলৌকিক অরুণ-আভা।
সেটুকুই তৃপ্তি আমার। তা না হলে হয়তো
তোমার বৌঠান, রাণু, বিজয়াদের মতোই
দশা হত আমার; উত্তর-আধুনিক গবেষণা
ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলত নলিনীর পাপড়িগুলোকে।
আমি তো বেঁচেছি।

শুধু একটা কথা ভেবে
বড় অভিমান হয়। বলেছিলাম, "কথা দাও―
তোমার মুখের সীমানা যেন কোনোদিন
ঢাকা না পড়ে।" সে কথা রাখোনি আমার।
প্রাজ্ঞ ঋষিত্বের পায়ে লাজুক কৈশোরকে বোধ হয়
এভাবেই শেষ করে দিতে হয়;
আর থেমে যায় নলিনীর
সাধের সূর্যাভিসার।

ছবিঃ রবীন্দ্রনাথ