দুটি বিতর্কিত গান: স্বরবিতান ৬৪র ভাষ্য
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের আগেই স্বরবিতান প্রথম প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত স্বরবিতানের ৬৬টি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। স্বরবিতান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক প্রকাশনা, কারণ রবীন্দ্রসংগীতের সুররক্ষণের জন্য স্বরবিতানই এখন প্রধান অবলম্বন। বিশেষত আজ সেইসব প্রবাদপ্রতিম আচার্য যাঁরা রবীন্দ্রনাথের কাছে বা তাঁর জীবৎ-কালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংগীতভবনে সংগীতের পাঠগ্রহণ করেছেন তাঁরা প্রয়াত, তাই এখন স্বরবিতানই শিল্পী ও শিক্ষকদের প্রধান আশ্রয়। গুরু পরম্পরায় শিক্ষিত শিল্পী ও প্রশিক্ষকদের কাছেও স্বরবিতান স্মৃতিসহায়ক হিসেবে অপরিহার্য, স্বরবিতানের দ্বারা বাহিত হয়েই সুরের সুরধুনী এখন বহমান। এ কথাও সর্বজনবিদিত যে স্বরলিপির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু যোগ্য গুরু যখন হাতের কাছে থাকেন না তখন স্বরলিপিই আমাদের পরমা গতি। কিন্তু স্বরলিপি যাঁরা প্রকাশ করেন সম্পাদনা করেন তাঁদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে নানা প্রশ্ন উঠছে। রবীন্দ্রনাথের জীবৎকালে স্বরবিতান প্রকাশিত হবার পূর্বকাল থেকেই রবীন্দ্রগানের স্বরলিপি নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সেই সব সুখ্যাত পত্রপত্রিকাগুলির মধ্যে অথবা কিছু গ্রন্থের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে ব্রহ্মসংগীত স্বরলিপি, শতগান, আনন্দসংগীত পত্রিকা, বীণাবাদিনী, সংগীতবিজ্ঞান প্রবেশিকা ইত্যাদি। এই সব পূর্বপ্রকাশিত স্বরলিপিগুলির পর্যায়ক্রমে স্বরবিতানে অন্তর্ভুক্ত হবে, এইটিই স্বাভাবিক ছিল। কিছুক্ষেত্রে তা যে হয়নি এমন নয়। কিন্তু পূর্বজ স্বরলিপিগুলিকে মর্যাদা না দিয়ে বিশ্বভারতী সংগীত সমিতি পরবর্তী স্বরলিপিকারদের অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছেন। এমন অনেক দৃষ্টান্তই আমরা খুঁজে পাই। পরবর্তী কালে স্বরবিতানের কোনো কোনো সংস্করণ থেকে পূর্ববর্তী স্বরলিপিকারদের স্বররলিপিগুলি স্বরবিতানের পরিশিষ্টে সংযোজিত হয়েছে। সুরান্তর, পাঠভেদে কিংবা ভিন্ন ছন্দ ও তাল থাকলে তাও সংযোজন করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে সবক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি। এমনই দুটি গানের স্বরলিপির বিষয়ই এই নিবন্ধের প্রাথমিক উপজীব্য। আমাদের প্রথম আলোচ্য বিষয় স্বরবিতান ৬৪। এই খণ্ডটি তার পূর্ববর্তী সব স্বরবিতান থেকে আলাদা। এটি প্রায় একটি গবেষণাধর্মী প্রকাশনা। কারণ রবীন্দ্রনাথের বারোটি গানের স্বরলিপি প্রকাশের মধ্যে এই গ্রন্থ সীমাবদ্ধ নয়। এতে আরও অনেক তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে, যা কস্মিন্কালে পূর্বজ কোনো স্বরবিতানে আমরা পাইনি। রবীন্দ্রগ্রন্থস্বত্ব লুপ্ত হবার পর এই গ্রন্থটির প্রথম প্রকাশনা, তাই বোধহয় বিশ্বভারতীর উপাচার্য মহাশয়ের একটি ভূমিকা দিয়ে এই গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ভূমিকাটিতে কয়েকটি তথ্য, কিছু বাক্যের পুনরাবৃত্তি এবং একটি যুগান্তকারী তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর ভাষাতেই জানাই সে তথ্যটি — "বর্তমান খণ্ডটি প্রকাশের পূর্বে তেষট্টি খণ্ড স্বরবিতান প্রকাশিত হয়েছিল।"—স্বরবিতান ৬৪-র আগে যে স্বরবিতান ৬৩ প্রকাশিত এই দুর্লভ তথ্য আবিষ্কৃত হল তাঁর ভূমিকায়। আমরা কৃতজ্ঞ। উপাচার্য মহাশয়ের ভূমিকাটির পরে রবীন্দ্রনাথের বারোটি গান স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত হয়েছে। মাত্র একত্রিশ পৃষ্ঠার মধ্যেই এই গানগুলির মুদ্রণ সমাপ্ত হয়েছে। কিন্তু স্বরবিতান ৬৪ ৫১ (+৪) পাতার বই। বাকি কুড়িটি পাতায় কী পাওয়া যাবে? তারই একটি বিবরণ দিই পাঠকের কাছে। প্রথমেই মুদ্রিত হয়েছে ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ এই গানটির তিনটি স্বরলিপি। প্রথমটির প্রকাশকাল ১৮৯৭-এ (১৩০৪ বঙ্গাব্দ) বীণাবাদিনীর প্রথম সংখ্যায়, স্বরলিপিকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। উল্লেখ্য যে এই স্বরলিপিটি এই প্রথম স্বরবিতানভুক্ত হবার মর্যাদা পেল। দ্বিতীয় স্বরলিপিটি প্রকাশিত হয় স্বরবিতান ৪৫-এ প্রকাশকাল ১৩৬৩ মে (১৯৫৬)। স্বরলিপিকার ইন্দিরাদেবী চৌধুরাণী। স্বরলিপিটি পাণ্ডুলিপি থেকে সংগৃহীত। স্বরবিতান ৪৫-এর পরিশিষ্টে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-কৃত স্বরলিপিটির কোনো উল্লেখ নেই। জ্যোতিরিন্দ্রকৃত স্বরলিপি শতাধিক বছর ধরে উপেক্ষিত পড়েছিল। স্বরবিতান ৬৪-তে ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ গানটির তৃতীয় স্বরলিপি ভি. বালসারা-কৃত। ১৯৫৬ সালে শ্রীমতী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এই গানটির যে রেকর্ড করেন তারই স্বরলিপি ভি. বালসারা করেছেন। এ প্রসঙ্গে আমরা পরে আসছি। খুবই আশ্চর্যের বিষয় ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ গানটির মূলগানের একটি স্বরলিপি এবং দুটি পাঠান্তর এই গ্রন্থে মুদ্রিত হয়েছে। অনুরূপভাবে ‘এ হরিসুন্দর’ গানটির মূলগানের স্বরলিপি এবং সঙ্গে দুটি পাঠান্তরও আছে। ‘খেলার সাথি বিদায়দ্বার খোলো’ গানটির মূলগানের স্বরলিপির সঙ্গে তার চারটি পাঠান্তর মুদ্রিত হয়েছে। ‘গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে’ গানটিরও মূলগানের একটি স্বরলিপি এবং তিনটি পাঠান্তর প্রকাশিত হয়েছে। একটি পাঠান্তরের স্বরলিপিও সংযোজিত হয়েছে। ‘বুঝি ওই সুদূরে ডাকিল মোরে’র মূলগানের উল্লেখ করা হয়েছে। সাহানা দেবীর গায়ন-অনুসারে স্বরলিপিটি এখানে মুদ্রিত, স্বরলিপিকার প্রফুল্লকুমার দাস। কিন্তু এই গানের রাজেশ্বরী দত্ত-কৃত রেকর্ড অনুসারে আশিস ভট্টাচার্য যে স্বরলিপি করেছিলেন, সেটি এই গ্রন্থে উল্লিখিত হলেও স্থান পায়নি। মন্ত্রগান ‘যদেমি প্রস্ফুরন্নির’ গানটির দুটি স্বরলিপি এখানে মুদ্রিত হয়েছে, হয়তো ‘যদি ঝড়ের মেঘের মতো আমি ধাই’ গানের মূলগান হিসেবে। ‘হিয়া কাঁপিছে সুখে কি দুখে’ গানটির মূল গানটিই শুধু মুদ্রিত হয়েছে। যে মূল কবিতা ভেঙে ‘যারা বিহানবেলায় গান এনেছিল’ সেটিও ছাপা হয়েছে। স্বরবিতানে ৬৪কে শুধু স্বরলিপির বই বলা যাবে না। গবেষণামূলক নেপথ্যচারিতা এই সংকলনের ধর্ম বলা যায়। স্বরবিতানের সুদীর্ঘ ইতিহাসে এর পূর্বে কোনো স্বরবিতান গ্রন্থে এরকম প্রবণতা দেখা যায়নি। এবার থেকে কি স্বরবিতানের নতন যুগ শুরু হল? এর আগে প্রকাশিত স্বরবিতানগুলির নতুন সংস্করণে কি আমরা এই একই উদ্যম ও অধ্যবসায় দেখতে পাব? স্বরবিতান ৬৪র কলেবর বৃদ্ধির কারণে এই আয়োজন নয় তো? দুর্জনের এই আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করার দায় বিশ্বভারতী সংগীত সমিতিরই। অপ্রকাশিত স্বরলিপি প্রকাশের সুযোগ বেশি না থাকলেও এখনও আছে। অতঃপর সংগীত যথাযথ টীকা, ব্যাখ্যা ও নেপথ্যের তথ্য সহ সেগুলি প্রকাশ করবেন এবং পুরোনো স্বরবিতানগুলি নতুন সংস্করণ প্রকাশের সময় গানগুলি সম্পর্কে সকল তথ্যভাণ্ডার উজাড় করে রবীন্দ্রসংগীত অনুসন্ধিৎসুদের হাতে তুলে দেবেন। স্বরবিতান ৬৪ কে বা কারা সম্পাদনা করেছেন তার স্পষ্ট কোনো উল্লেখ নেই। তবু ভাবী সম্পাদকের কাছে আমাদের এই প্রত্যাশা রইল। পূর্বেই ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ গানটির স্বরলিপি বিষয়ে পাঠককে অবগত করেছি। আবার সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসি। এই গানটি ১৯৫৬-র অগস্ট মাসে শ্রীমতী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গ্রামাফোন রেকর্ডে প্রথম প্রচারিত হয়। তার আগে এই গানের অন্য একটি স্বরলিপি ওই বছরেই মে মাসে ইন্দিরা দেবীচৌধুরানীর-কৃত পাণ্ডুলিপি থেকে স্বরবিতান ৪৫-এ প্রকাশিত হয়। তার বহু আগে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রণীত আরেকটি স্বরলিপি বীণাবাদিনীর পাতার অন্ধকারে পড়েছিল। এইসব তথ্যই কিছু পূর্বেই পাঠকদের সবিস্তারে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে যেটা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষণীয় সেটা এই যে পূর্ববর্তী দু’দুটি স্বরলিপি (তার মধ্যে একটি রবীন্দ্রনাথের জীবৎকালে প্রকাশিত) থাকা সত্ত্বেও সে দুটি উপেক্ষা করে শ্রীমতী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় রেকর্ড করায় আমাদের কিঞ্চিৎ বিস্ময় উদ্রিক্ত হয়। স্বরবিতান ৬৪-র শেষভাগে সম্পাদকীয় টীকা থেকে জানা যায় “গানটি প্রথম (রেকর্ডে) প্রচারিত হয় বিষ্ণুপুর ঘরানার রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশিত সুরে।” এই বাক্যটি বিস্ফোরক। কারণ এর বহুদূর বিস্তৃত তাৎপর্য আছে। এখন রবীন্দ্রসংগীত বলতে আমরা বুঝি সেই গানকে যে গান রবীন্দ্রনাথের রচনা এবং তার সুরও রবীন্দ্রনাথ-কৃত। রবীন্দ্রসংগীতের এই সংজ্ঞার মাপকাঠিতে বিচার করলে শ্রীমতী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ রবীন্দ্রসংগীত আখ্যা পেতে পারে না। এই একই মাপকাঠিতে পঙ্কজকুমার মল্লিক কর্তৃক সুরারোপিত ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’ গানটিও রবীন্দ্রসংগীত পদবাচ্য নয়। যদিও এই সুর রবীন্দ্রনাথ অনুমোদন করেছিলেন। আরেকটি গানের কথাও এখানে উল্লেখ্য। গানটি হল ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’, এ গানটিতে সুর দেন শান্তিদেব ঘোষ এবং রেকর্ড করেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। কিন্তু এ গান দুটির কোনোটিই গীতবিতান বা স্বরবিতানে স্থান পায়নি। স্বরবিতান ৬৪তে প্রথম একটি স্বরলিপি প্রচারিত হল যার সুর রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নয়। আমাদের বিস্ময় লাগে পূর্ববর্তী দুটি স্বরলিপি থাকা সত্ত্বেও তার কোনোটিকে গ্রহণ না করে আশ্রমকন্যা কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পূর্ণ তৃতীয় একটি সুর অবলম্বনে রেকর্ড করলেন। ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত রেকর্ডে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অপর যে গানটি গেয়েছেন সেটিও বির্তকিত। গানটি হল ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব গো’--মুক্তধারা নাটকের গান। কিন্তু স্বরবিতান ৫২, যেখানে এই নাটকের গানগুলির স্বরলিপি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে গানটিতে সুরভেদ পাঠভেদ ও ছন্দান্তর আছে। স্বরবিতান ৫২ প্রকাশিত হয় ১৩৬৪ (ইংরেজি ১৯৫৮) জ্যৈষ্ঠ। এর দুবছর আগেই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকর্ডটি প্রকাশিত। স্বরলিপি প্রকাশিত হবার আগেই যে সুরে, তালে ও কথায় এই গানটি রেকর্ড করা হল তার রূপটি নিশ্চয় স্বয়ম্ভূ নয়। এ সম্পর্কে প্রামাণ্য কোনো তথ্য আমরা পাই না। কিন্তু সেকালের শান্তিনিকেতনে রেকর্ডের সুরে গানটি গীত হবার সাক্ষ্য পাওয়া যায়। আশ্চর্যজনকভাবে স্বরবিতান ৫২ অন্য কোনো স্বরলিপি সম্পর্কে নীরব। গত শতকের পাঁচের দশক থেকে আমরা গানটি কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে রেকর্ড হওয়ার আগে এমনকি স্বরবিতান ৫২ প্রকাশিত হবার ঢের আগে যে গানটি মুক্তধারা নাটকে ত্রিমাত্রিক ছন্দে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরের অত্যন্ত কাছাকাছি সুরে পরিবেশিত হয়। পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে (১৯৫৩) সিগনেট প্রেসের কর্ণধার দিলীপকুমার গুপ্ত (যিনি ডি. কে. নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন) তৎকালীন বিদ্বজ্জনদের নিয়ে ‘হরবোলা’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংস্থা গড়ে তোলেন। এঁদের উপদেষ্টা ছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘হরবোলা’ রবীন্দ্রনাথের ‘মুক্তধারা’ নাটকটি মঞ্চস্থ করেন। পরিচালনার ভার নেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক কমলকুমার মজুমদার। সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কবি ও সংগীতকার জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র। এই নাটকে অংশগ্রহণ করেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দীপক মজুমদার প্রভৃতি তরুণ কবি সাহিত্যিকেরা। দীপকের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সুবাদে আমার অনুরোধে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের কাছ থেকে দীপক ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব গো’ গানটির স্বরলিপি আমাকে এনে দেন। সেই স্বরলিপিটি দীর্ঘ ষাট বছর ধরে আমার কাছে ছিল। আমার মনে হয় এই গানটির স্বীকৃতি পাওয়া উচিত। তাই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য শ্রী সুজিত কুমার বসুর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর ওঁরই নির্দেশে গত ২৫ জুলাই ২০০৪-এ জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র সূত্রে প্রাপ্ত স্বরলিপিটির জেরক্স কপি সমেত একটি চিঠি পাঠাই। চিঠিতে গানটিকে স্বীকৃতি দিয়ে ওটিকে স্বরবিতানভুক্ত করার প্রার্থনা ছিল। কোনো উত্তর বিশ্বভারতী থেকে অদ্যাবধি পাইনি। হয়তো স্বরলিপিটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। যে হস্তাক্ষরে প্রাপ্ত স্বরলিপিটি আমার কাছে সংরক্ষিত আছে, সেই হস্তাক্ষর জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের কি না- এ নিয়ে হয়তো সংশয় ছিল। কিন্তু আজ দীপক মুজমদার প্রয়াত। তাই জানার উপায় নেই। স্বরলিপিটি যে জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র-কৃত এ বিষয়ে আমার বিশ্বাস আছে। কারণ এই স্বরলিপিটি কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাওয়া রূপটির সঙ্গে হুবহু এক নয়। বিশেষ করে অন্তরার অংশে সুরভেদ লক্ষ্য করা যায়। তার চেয়েও বড়ো কথা, দীপক স্বরলিপিটি আমার হাতে দিয়ে বলেন, ‘নাও তোমার স্বরলিপি। বটুকদার কাছ থেকে আদায় করেছি।’ আজ এই নিবন্ধের শেষে দীপক মজুমদারের কাছ থেকে পাওয়া স্বরলিপিটি মুদ্রিত করতে পেরে ভালো লাগছে। অর্ধশতকের বেশি কাল ধরে অপ্রকাশের অন্ধকারে পড়ে থাকা স্বরলিপি প্রকাশের মুখ দেখল, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র শতবর্ষীয়ান হলেন। সেই উপলক্ষ্যে এটি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি। গানটি স্বীকৃতি পেলে রবীন্দ্রসংগীতের সংখ্যা একটি বাড়বে। কারণ এটিতে সামান্য হলেও পাঠান্তর আছে।
পরবাস, ২৫শে বৈশাখ, ২০১৭
|