ISSN 1563-8685




চারটি কবিতা

স্বীকারোক্তি

আমি নইলে দুঃখ পাবো বলে
তুমি টেলিফোন করেছিলে

অবান্তর এই হাবিজাবি লেখালেখি।
জানো সেদিন আমার সিগারেটের ধোঁয়ায়
যখন পাশে বসা বৃদ্ধের মুখ আবছা করে দিচ্ছি,
তিনি বললেন নিরীহ সংকোচে:
ভাই ধোঁয়াটা একটু ওদিকে ছাড়বেন?

কার্যত এই আমি অন্যরকম একা
সম্পূর্ণ পরাস্ত, বৃদ্ধটি ধুতির খোঁটায়
খুচরো পয়সা গুণছেন ভাড়া দেবেন বলে, আর
মুখ নিচু করে, (জগতের সব বিষণ্ণতা, বিমর্ষ তাঁর
চোখে মুখে) ফিসফিসিয়ে আমাকে কিছু বলছিলেন।

শোনো প্রিয়তমা,
এ কথাটা এতদিন তোমায় বলিনি
তুমি ভালোবাসবে না বলে।


আমার ইচ্ছেগুলো

চলে যাওয়ার ইচ্ছে আমার প্রবল
দুঃখ এই : আমার পরিত্যাগেরও কিছু নেই
বিশ্বাসঘাতক পরমাত্মার চারপাশের ফেরাফেরি
বর্ষীয়ান ফেরিওয়ালার ডাক
আমার সমস্ত দুপুরের একা সহ যে নির্জনতা
তাকে বিনামূল্যে নিয়ে চলে যায় ফেরিওয়ালা।

দূর থেকে তার হাঁক শুনে
নিশীথ বা আলেয়ার আধেক লৌকিক
আমন্ত্রণ মনে হয়, ফলে
আমি হেঁটে সূর্যাস্তের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে
সূর্যোদয়ের দিকে যাই
যৌনতা থেকে প্লেটোনিক প্রেমের সাথে
উদ্ভাসিত হই,
তখনই আমার ঈশ্বরের প্রতি উল্লাস সাধন
                      হয়ে যায় ।


মা’র কথা

ধনী রাজপুত্র
পৃথিবীর কোথাও দু’মুঠো ঐশ্বর্য পেলে
আমি একছুট্টে যাই না
ঈশ্বরের থেকে ঐশ্বর্যের রমণীয় উৎসার
যা দেখেছি আমার মা তে কিংবা মা’র মতো
         আপনাদের সমান রমণীতে।

বেলা যায়, বেলা যায়
অহরহ এক মাতৃমুখের আকর্ষ
আমার হৃদে বিঁধে থাকে
এত পরিস্ফুট, প্রসারিত চেনামুখ
আলগোছে অপেক্ষা নাম্নী নদীতটে
বসে আছে আমার মা, আমি ছাড়া পুত্রসম বলে
অভিত হবে এমন কেউ নেই তাঁর।

তছনছ হয়ে যাওয়া প্রাসাদোপম স্কুলের
পালিয়ে বেড়ানোর মুহূর্তের আমি অর্বাচীন
রাজপুত্র, তৃষায় দাঁড়িয়ে থাকি অপেক্ষার দ্বারে।


আমার সমস্ত চাওয়া

সমস্ত বসন্ত নষ্ট হয়ে গেছে।
আমি পদ্য রচে ঢেকে রাখি মুখ,
অচিন ফেরিওয়ালাকে চিনতে পারি না, তবু
তার চিৎকার সমস্ত রাত আমাকে বিভোর করে রাখে।

ফিরে ফিরে চাই, সেই ফেরিমুখকেই চাই,
তার দ্বারে আমাকে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান।
সে পুরনো জিনিস কেনে ও বেচে
ফেলে দেয় নতুনের অর্বাচীন প্রস্তাব।

এই যাচ্ছি, এই আসছি বলে
ছুট্টে যাই মস্ত স্টেশনারি শপে,
কী চাই ? কী কী যেন আমার চাই
ভুলে যাই, লিস্টি বানাবার মতো কেউ নেই।



(পরবাস-৪৯, অক্টোবর, ২০১১)