অন্ত্যজা
মাত্র একটি মুহূর্ত
তাতেই তোর দিব্য রূপগরিমায়
স্বর্গীয়তা ভরা কী এক ভাবসৌরভে
ভরিয়ে দিলে হৃদয় আমার।
ছবি যেন
দেবকন্যা রাজকন্যা ঋষিকন্যা কার
অজন্তার পাথুরে রেখার আঁকা
অনিন্দ্য সৌন্দর্য তোর।
অথচ এতেই তোর কোন এক জনমের অভিশাপ
ক্লেদময় দরিদ্রতা
সমাজের চোখে হেয় 'জাত'-এর নীচতা
পৃথিবীর অজ্ঞাত কোণের এই অন্ধকার।
তোর ললিত সৌন্দর্য
সাপের মতো মুক্ত কেশরাশি
দূর দিগন্তের শুভ্র নীল শিখরের মতো নাক
কাঁচা সোনার মতো উছলে ওঠা রক্ত
নীল পদ্মের মতো স্তোক-শ্যাম দেহবর্ণ
লাজে কামড়ে ধরা আঙুলের প্রান্তে দেখা
রাঙা চন্দনের বীজ ঠোঁটের পল্লবদুটি
অন্তরের ফেনিল যৌবনভারে
নত হয়ে আসা গলার ভাঁজটি
চলার ঢেউয়ে যেন পদ্মভঙ্গী নিটোল নিতম্ব
কাঁকর কুশের নিঠুর পরশে
আরক্ত পায়ের পাতা।
তোর এই রূপের উচ্ছল অভিলাষ
দেহ জ্বলে পুড়ে ভষ্ম হয়ে ওঠে স্নেহসৌরভের
সুহাগা জাগায়
দারিদ্র্য-সিক্ত তোর মলিন কাপড়ে
বিলের পাঁকে জাগে পদ্মের দ্যূতি।
একটি ক্ষণ রাত দিন দূরের—
চলন্ত গাড়ি থেকে হঠাৎ করে দেখা একটিক্ষণ
তার স্মৃতি জ্বলে ওঠে মনে
কুয়াশা লেপা জ্যোৎস্নার মতোঃ
তুই
রাত্রিশেষের শিশিরের
বাস্তবের পাঁক থেকে ওঠে আসা ব্যথাক্লিষ্ট পদ্মস্বপ্ন
অলক্ষ্মী সৌন্দর্যের লক্ষ্মী ঠাকুরাণী।
(পরবাস-৫২, সেপ্টেম্বর, ২০১২)