ISSN 1563-8685




দু'টি কবিতা

অলৌকিক

অলৌকিকের স্বাদ কারা যেন দিয়েছিল কাদের কাদের।
সেই সব ভুলে যাওয়া অলৌকিক, জন্মের আগের, আমরা যাকে
পোঁটলা করে রেখে আসি চিলেকোঠাঘরে।
পুরোনো জিনিস সব, সহজেই ভুলে যাওয়া যাবে।

মাথায় রাখিনা আমরা, অলৌকিক মাথায় রাখিনা।
আমরা পারি অলৌকিক বইয়ে রেখে দেওয়া,
গল্পকাহিনিতে রেখে দেওয়া।
রেখে দেওয়া পুরু ধুলো পড়া
পুরোনো ফ্রেমের ছবিটিতে।

মাঝে মাঝে ধূপধুনো দিয়ে
অলৌকিকে প্রণতি জানাও।
অন্যতর জীবন এখন বিছানার তলে লুকোনো তামার পয়সা, যেন।
বাকিটা ফিক্সড ডিপোজিট। মাথাময় উনোঝুনো রাগ,
স্ট্রেস, অফিস পলিটিক্স।

শুধু অলৌকিক জানে, কতোখানি প্রেম
অলৌকিক দিয়েছিল। বা কতোটা অলৌকিক
কারা কারা যেন
প্রেমসঙ্গে ফ্রি দিয়েছে, একদা, প্রাচীন
ভুলে যাওয়া দিনে।


ঘাটের কথা

গাহনের কথা বলো, ঘাটের কথাটি--
সিঁড়ি ধাপে ধাপে নামে জলের ভেতরে
দুপুরের মেঘরৌদ্রে শান্ত ঘটিবাটি
চিত্তচমৎকারা চিত্র প্রহরে প্রহরে।

গঙ্গাপাড়ে বসে আছে পানু ও সুমন
আলি রাজু পল্লবও, অবসাদে স্থিত
ঘাটে বেলা বয়ে যায় বেকার জীবন
সারিবদ্ধ হাত ও পায়ে চিত্রপরিচিত

ঘাটে নামে বৃদ্ধ লোক, যুবতী, প্রৌঢ়েরা
ঘষাঘষি করে তারা নিত্যি নব স্নানে
শ্রী অঙ্গে সাবান দিয়ে বিনা নড়াচড়া
চক্ষু মুদে স্থির থাকে ঘাটের সোপানে

কতো কতো সাবানের ফেনা তৈরি হয়
জলের ফেনায় সেই সাদা মেশে প্রায়
গামছায় জলস্ফূর্তি, কাপড়ে চোপড়ে
মনে তবু অন্ধকার মালিন্য না যায়

জান কয়লা হয়ে গেছে সাবানে না ধোয়
ফেনায় না যায় তার কালিমাসমূহ
প্রতিদিন অঙ্গ মাজো, মন মজে আছে
গঙ্গার বিবর্ণ পাড়ে ঝোঁকা গাছে গাছে

গঙ্গামাঈ নির্বিকার, কলিকাতাচ্ছলে
ছলাৎ মেশেন রঙে, কেমিক্যালে, মলে
গঙ্গাধারে ট্যাক্সি ধোয় বিহারি চালকও
সন্তরিছে উত্তরের ক্লান্ত গো-পালকও

দেশকালদণ্ডপল ধরে থাকে স্মিত
তবু না ফুরায় আহা তবু না ফুরায়
সারাদিন আড্ডা রচে বেকারত্বে স্থিত
কানু পল্লব রাজু জীবন কাটায়...

জীবিকা নাহয় নাই কীর্তন সহায়
বাতাসাপ্রসাদ আছে ভিডিওপার্লার
এমার্কা ছবি তো আছে মধ্যরাতে, হায়
বাপে খেদাইলেও মায়ে বাড়ে ভাতডাল

মারে না ধরে না কারে, প্রহরে প্রহরে
গালি দিয়ে তবু গান বাঁধে হেলাভরে
সকলি ফুরালো তবু ক্ষুর না চমকায়
শান্তনদীতীরে আহা! বেলা বয়ে যায়


(পরবাস-৫২, অক্টোবর, ২০১২)