ISSN 1563-8685




গ্রন্থ-সমালোচনা

|| যাঁর ছায়া ‘গোষ্ঠী’ ছাড়িয়ে আরও বহুদূর.... ||

বুদ্ধদেব বসু ও তাঁর সারস্বত গোষ্ঠী; মীনাক্ষী দত্ত; ‘আজকাল’ প্রকাশনা, কলকাতা-৯১. প্রথম প্রকাশঃ জানু ২০০৯। ISBN: 978-81-7990-074-1

যুদ্ধোত্তর বাঙালির মনন ও মনীষাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন কে?

কে? না, ‘কারা’ বলা উচিৎ ছিল, কারণ কোনো একজন ব্যক্তি হতে পারেন না, একাধিক উল্লেখ্য মানুষ তাঁদের ভূমিকা ও আন্দোলন নিয়ে একটা আধুনিক ধাঁচ গড়ে গড়ে দিয়ে গেছেন জাতটার। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের প্রভাব যদিও তখনও (এখনও) পরিব্যাপ্ত, তবু মুজফফর আহমেদ ও কম্যুনিস্ট আন্দোলন, বিভূতি বন্দ্যোর উপন্যাস, বুদ্ধ-বিষ্ণুর কবিতা, গণনাট্য আন্দোলন ও শম্ভু-বিজন, আব্বাসউদ্দিন-শচীনকর্তার গান, বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন, শান্তিগোপালের যাত্রাপালা থেকে যামিনী রায়ের ছবি থেকে সুচিত্রা-উত্তম---বাঙালির আধুনিকতায় উত্তরণটা মন্দ হয়নি বলতে হবে। বিষয়টা বিতর্কিত, তাই সেটা আরও না বাড়িয়ে আজকের প্রসঙ্গে আসা যাক।

###

পঞ্চাশের দশকের কলকাতা ও প. বাঙলার সুধী-মনচিত্রটি একবার ভেবে নেওয়া যাক। কোলাজটি বড়, তবু তার এক মস্ত জায়গা জুড়ে থাকবেই রবীন্দ্রোত্তর বাঙালির কাব্যচর্চাঃ দক্ষিণ-কলকাতার এক ভাড়াটে ফ্ল্যাট, তাতে এক কৃশকায় বাঙালি তাঁর স্ত্রী ও দুই-তিন শিশুকন্যা-পুত্র নিয়ে লিখে, হ্যাঁ শুধু লিখে (প্রধানতঃ, কবিতা), জীবন অতিবাহিত করার ব্রত নিয়েছেন। কী সাহস, লেখার সময় কম পড়বে বলে কলেজের চাকুরিটিও ছেড়ে দিয়েছেন! জন্ম নিয়েছে আধুনিক বাংলা কবিতা আন্দোলন, যার অন্য নাম ‘কবিতা-পত্রিকা আন্দোলন’ বা ‘কবিতা-ভবন আন্দোলন’-ও বলা চলে।

হ্যাঁ, এই নিয়েই কাহিনি, এবং ঘোড়ার মুখের। লিখেছেন বুদ্ধদেবের ‘ইলেক্ট্রা’-কন্যা মিমি উর্ফ শ্রীমতী মীনাক্ষী দত্ত । আর কী সে লেখা! ‘আনপুটডাউনেব্‌ল’ বিশেষণটি আজ বহুব্যবহারে ক্লিশে, তবু অনায়াসে তক্‌মাখানি লাগিয়ে দেওয়া যায় এই প্রায় সওয়া-শ’ পৃষ্ঠার কেতাবখানির গায়ে। মহীরূহের ছায়ায় থেকে স্বাধীন বেড়ে ওঠা যে কত কঠিন তা তারাদাস-নবকুমারকে দেখে বোঝা যায়, মিমি-রুমিও আরেক। আক্ষেপ, এঁরাও যেন ছায়া থেকে নিজেরাই বেরিয়ে আসতে চাননি, বড় আদরে-শ্রদ্ধায় জড়িয়ে রাখতে চেয়েছেন সেটিকে (ভূমিকায় সেকথা বললেনও লেখিকা)। মীনাক্ষী-দময়ন্তীর ক্ষেত্রে তো আবার একটি নয়, ছায়ার সংখ্যা দুই, কারণ কেবল বুদ্ধদেব নন, প্রতিভা বসু পতিপরিচয় ব্যতিরেক নিজগুণেই এক মহৎ ও মান্য শিল্পী ছিলেন।

গ্রন্থটির নাম দিয়েছেনঃ ‘বুদ্ধদেব বসু ও তাঁর সারস্বত গোষ্ঠী’। সুপ্রযুক্ত। তবু সেই সারস্বতগণের কথা বলার আগে লেখিকার নিজগল্প, তাঁর বেড়ে ওঠা ওই ছায়ায় ও ওই সারস্বত পরিমণ্ডলে, মা-বোন-ভাই-পড়শিদের কথা যে স্বাভাবিকতায় উঠে এসেছে---সেটাই গ্রন্থটির প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সে-কথাই বলি। নৈলে কবি বিষ্ণু দে, সমর সেন বা অমিয় চক্রবর্তীর কর্মকীর্তির আলোচনা বড় একটা দুষ্প্রাপ্য নয়।

যেমনঃ সদ্য এম.এ.-পাশ মীনাক্ষীকে বাড়ি বয়ে লোরেটোয় শিক্ষকতার চাকরির অফার নিয়ে এসেছেন ফাদার ফালঁ। ইন্টারভ্যু দিতে যেতে হবে। কিন্তু একা এক যুবতীর সঙ্গে ট্যাক্সিতে উঠতে কুণ্ঠিত জেসুইট ফাদার! মুশকিল আসানে অবতীর্ণ বুদ্ধদেব, সঙ্গে চললেন ট্যাক্সিতে।

বা, নব্যকবিদল নরেশ-অরুণ-নিরুপম ও প্রতিভার প্রতি তাঁদের মুগ্ধতার গল্প। নিরু চাটুজ্জ্যে তো চাইবাসা বেড়াতে গিয়ে প্রতিদিন পাশের ঘর থেকে তাঁকে ডাকে কবিতা পাঠাতেন। আর শ্রীযুক্তা প্রতিভা বসুকে লেখা কবি অরুণ সরকারের জন্মদিনের নিবেদিতপ্রাণ কবিতাটি তো বু.ব. সসম্মান ঠাঁই দিয়েছেন নামী সংকলনটিতেও (যার ধুয়ার পঙ্‌ক্তিঃ ‘ও-দু’টি চোখের তাৎক্ষণিকের/পাব কি পরশ যৎসামান্য?’)। রাণু সোমের তখনও এই আকর্ষণ? সাধে কি সেকালে ঢাকায় নজরুল-দিলীপ হাবুডুবু খেতেন (মাফ করবেন, গল্পটি আমার নয়, অশোক মিত্র-মশাইয়ের)?

রুমি তখন অনেক ছোট। মিমি তাই বাবার প্রাইভেট সেক্রেটারি হয়ে বসল। বাবার লেখার টেবল গুছিয়ে রাখা---যে-প্রবন্ধটি তখন লিখছেন সেটি হাতের কাছে, ‘কবিতা’-পত্রিকার গ্রাহকদের চাঁদার তাগাদা দেওয়া থেকে ‘তিথিডোর’-এর পাণ্ডুলিপি নকল করা। শুনেই হিংসে হয়, না? সেই মিমিকে বিকাশ রায় যখন সিনেমায় অভিনয়ের অফার দেন, ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন বু.ব.। পরে কনিষ্ঠা রুমির সত্যজিতীয় হাফ-অফারও। গান্ধীজীর মত বুদ্ধদেবও পারিবারিক ক্ষেত্রে অটোক্র্যাট ছিলেন---কন্যার সটান উক্তি।

একই নভে দুই সূর্যসম বুদ্ধদেব-জীবনানন্দের সম্পর্কে টানাপোড়েন ছিল---এ’তথ্য আজ আর গোপন নয়। জীবনানন্দের জীবদ্দশাতেও নানাভাবে-ভাষ্যে এ’তথ্য বেরিয়ে পড়েছিল। বুদ্ধকন্যা অবশ্য বাপের কোলে ঝোল টেনে অনেক লিখেছেন। লিখবেনই। স্বাভাবিক। যদিও তার দরকার ছিল না। বুদ্ধদেব তো জীবদ্দশাতেই স্বীকৃতি-সম্মান-অর্থ-যশ অনেক কিছুই পেয়ে গেছেন। জীবনানন্দের ভাগ্যে ছিল মর্মান্তিক পথমৃত্যু। জীবনানন্দ নিয়ে হৈ চৈ সত্তর-আশির দশকের আগে ছিলই না।

বিতর্ক অন্যত্র। শিলচরের এক বঙ্গকবি-সম্মেলনে কবি আসিফুল্লাহ্‌ বলেছিলেন, বুদ্ধদেব বসু ও তাঁর ‘কবিতা’-পত্রিকা আন্দোলন ছিলো অবশ্যই এক কলকাতা-কেন্দ্রিক উচ্চবর্ণীয়দের আখড়া, বু.বের কোটারি। গ্রামবাঙলা বা বহির্বাঙলা বা বাঙলার অন্য শহরের কোনো কবি সেথায় ঠাঁই পাননি। উচ্চশিক্ষিত, খানদানী হুমায়ুন কবীর ছাড়া কোনো মুসলিম কবি নেই। বেরা-দা ছাড়া নেই কোনো গ্রামের কবি।

কোনো প্রতিবাদ বা প্রত্যুত্তর উঠে আসেনি। গ্রামের বাঙালি, মুসলিম বাঙালি কি কবিতা লিখতে পারে না, না পারত না? সুধী পাঠক কী বলেন?

###

মানুষ হিসেবে বুদ্ধদেবের সারস্বতবলয়ে কিন্ত এসে গিয়েছিলেন অনেক অনেক মানুষজন---তার পরিধি সাহিত্যক্ষেত্র ছাড়িয়েও বহুদূর---সত্যেন্দ্রনাথ বসু, যামিনী রায়, পুলিনবিহারী সেন, ভবতোষ দত্ত, পি সি সরকার, দীপালি নাগ, হিমাংশু দত্ত। এঁদের মধ্যে অনেকেই সেকালে গড়িয়াহাটের আশেপাশে বু.বের পড়শীও ছিলেন বটে । মীনাক্ষীর কলমে এঁদের গল্পপাঠ বড় উপাদেয়। চমৎকার কিছু ফোটো উপরিপ্রাপ্তি, যদিও ছাপাই মামুলি। বু.বের স্বহস্তলিখিত দু’-একটি চিঠি গ্রন্থের মান বাড়িয়েছে। কয়েকটি মুদ্রণপ্রমাদ--‘গুনমুগ্ধ’, ‘বেনিবন্ধন’; পৃঃ ১১৪, ১১৬।

এহ বাহ্য। অনেক পুরনো বইই পুনঃ পুনঃ পাঠে আনন্দ দেয়। এ’লেখাটি পুরনো, বইটি নতুন। আনন্দটি চিরকালীন।



|| রাধানাথ শিকদারঃ বলদীপ্ত গণিতজ্ঞের পান্‌সে জীবনী ||

দ্বি-শতবর্ষে রাধানাথ শিকদার—আশীষ লাহিড়ী; ‘সূত্রধর’ প্রকাশনা, কলকাতা-৩; প্রথম প্রকাশঃ জানু ২০১৩; ISBN নেই

হিন্দু কালেজের প্রাথমিককালে ডিরোজিওর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ছাত্রগণের মধ্যে রাধানাথ শিকদার এক ব্যতিক্রম ছিলেন। ব্যতিক্রমী, কারণ কৃষ্ণমোহন-রসিককৃষ্ণ-রামতনুদলের মত সাহিত্য-ইতিহাস-দর্শনে নয়, বরং রাধানাথের ব্যুৎপত্তি ছিল ফলিত গণিত, তথা ত্রিকোণমিতিতে। আর এতে তাঁর গুরু ছিলেন অধ্যাপক জন টাইটলার, যাঁর কাছে রাধানাথ নিউটনের প্রিন্সিপিয়ার প্রথম পাঠ পান। তবে রাধানাথের প্রতিবাদী চরিত্রের গঠন ডিরোজিওর হাতেই, সন্দেহ নেই। তাঁর এই ভিড় থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ঝোঁক প্রকাশ পেয়েছে নানাভাবে। ত্রিশ বৎসরের যুবক রাধানাথ তখন দেরাদুনে, জিওলজিক্যাল সার্ভের কম্প্যুটর পদে কর্মরত। সাহেব কর্তৃপক্ষের হাতে দেশি কুলিদের নির্যাতন ও বেগার-প্রথার বিরুদ্ধাচারণ করে তাঁদের বিরাগভাজন হলেন, আদালতে অর্থদণ্ডও দিতে হল। দমেন নি। সেবানিবৃত্তির পর বুড়োবয়সে কলকাতায় ফিরে সাথী-ডিরোজিয়ান প্যারীচাঁদের সঙ্গে মিলে মহিলা-শিক্ষায় নিয়োজিত ‘মাসিক-পত্রিকা’ সম্পাদনা শুরু করেন, চলিত বাঙলায়! এ’সবই রাধানাথের প্রবল স্বাধীনচেতনার প্রকাশ, যেটা বারবার তাঁর কর্মজীবনে বৃটিশপ্রভুরা দমিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন---সে-কেবল তিনি জাতে ভারতীয় বলেই---যেমনটা পরবর্তীতে আচার্য জগদীশচন্দ্রকেও সইতে হয়েছিল।

যাই হোক, আম-বাঙালির মনে অবশ্য রাধানাথ “পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের আবিষ্কর্তা” (সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান)-হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন---যে-বিশাল কর্মযজ্ঞের (‘গ্রেট ট্রিগোনোমেট্রিকাল সার্ভে অব ইণ্ডিয়া’) তিনি এক বোল্টুমাত্র ছিলেন, যদিও এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বোল্টু। দেরাদুন থেকে কলকাতায় ফিরে এসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পেলেন আবহাওয়া দফতরের---পথিকৃতের কাজ করেছিলেন সেখানেও । যদিও রাধানাথের এই কৃতিত্ব এভারেস্টে চাপা পড়ে থাকে। যৌবনে সেই যে একবার মায়ের কথায় এক বালিকাবিবাহে অসম্মতি প্রকাশ করেছিলেন, সারাজীবন অকৃতদারই থেকে গেলেন। আজীবন দিলচস্তি ছিল গোমাংস ভক্ষণে---ডিরোজিয়ান হিসেবে সে-কালের নিয়মে যৌবনে যার শুরুয়াৎ। অনেকে বলে, এ’কারণেই শেষবয়সে তাঁর কুষ্ঠ হয়; চন্দননগরের আবাসে প্রয়াণ (১৮৭০), লোকচক্ষুর আড়ালে।

###

এ’হেন রাধানাথ শিকদারের ওপর পূর্ণাঙ্গ জীবনী চোখে পড়েনি, যদিও নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তথ্য পাওয়া যায় বেশ কিছু। আলোচ্য বইখানির সন্ধান পেয়ে তাই অতি উৎসাহে ক্রয় ও হতাশা।

কেন?

এ’গ্রন্থের লেখক মুখবন্ধেই জানিয়ে দিয়েছেন যে ইতোপূর্বে প্রকাশিত তাঁর রাধানাথ-সম্পর্কিত এক অসম্পূর্ণ পুস্তিকাই (‘Radhanath Sikdar: Beyond the Peak’) দেশবিদেশ থেকে প্রশংসা অর্জন করে ফেলেছে। বর্তমান পুস্তকখানিও যদিও অসম্পূর্ণ (বস্তুতঃ, মাত্র ৩৩ পৃষ্ঠার লিখন, কিছু খাবলানো ‘পরিশিষ্ট’ জুড়ে ৭২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে) তবু শিকদারের জন্মদ্বিশতবর্ষের কথা মাথায় রেখে, পড়ুন ব্যবসার কথা ভেবে, ফের আরেক অসম্পূর্ণ পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে।

ল্যামটন-এভ্‌রেস্টের মত বিজ্ঞানীগণের হাতে যে ট্রিগোনোমেট্রিকাল সার্ভে আধা-ইঞ্চির দূরত্ব নিখুঁত মাপতে একমাস সময় ব্যয় করতেও কুন্ঠিত হত না, সেইধারার এক মহান বিজ্ঞানীর জীবনচরিতে এ’হেন আধা-খ্যাচড়া এপ্রোচ মেনে নিতে কেন বাধ্য থাকবো? এ’প্রশ্নের উত্তর নেই।

সারা বই জুড়ে দুর্বল বাক্যগঠন ও অপ্রযুক্ত শব্দের বহুল ব্যবহার বইটির বড় খামতিঃ “কী এক দুর্দৈব বশত আমরা আমাদের ধর্মীয় ও সাহিত্যিক ইতিহাস নিয়ে যতখানি উৎসাহী, আমাদের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাস নিয়ে ততখানি নই.......”: প্রথম বাক্যেই হোঁচট খেতে হয়েছিল! ওইস্থানে ‘দুর্দৈব’ শব্দটি কি সুপ্রযুক্ত? ‘দুর্দৈববশতঃ’ কি সমাসবদ্ধপদ নয়? তবে মাঝে ফাঁকটি কেন? শেষের বিসর্গটি নেই কেন? বইয়ের প্রথমবাক্য বলেই এতোখানি নজর দিয়ে পড়া। এমনই, গ্রন্থ-শিরোনামের হাইফেনটিতেও হালকা আপত্তি রাখলামঃ ‘দ্বি-শত’ কেন? ‘দ্বিশত’ নয় কেন? এইরকম ছড়িয়ে আছে সারা বই জুড়েঃ ‘বিজ্ঞানচর্চা ও সমাজদর্শনের প্রতি অনীহা’ [পৃঃ ১১], ‘হার্ড-সায়েন্সের চর্চা’ [পৃঃ ১৫] ইত্যাদি ইত্যাদি---পড়তে পড়তে ব্যবহারিক অপ্রযুক্ততা বোঝা যায়।

লেখকপ্রদত্ত কিছু তত্ত্ব অদ্ভুত লেগেছেঃ রাধানাথের জীবনের সার্থকতার পিছনে ‘অনুঘটকের’ কাজ করেছিলেন জর্জ এভ্‌রেস্ট! অনুঘটক? কেন? এভ্‌রেস্ট তো ছিলেন কর্মক্ষেত্রে রাধানাথের গুরু ও মেন্টর, অনুঘটক তো নন। “আর জর্জ এভারেস্টের এই ভূমিকার পিছনে কাজ করেছিল ঔপনিবেশিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামরিক স্বার্থের সন্নিপাত।” বাক্যটির অর্থ কিছু উদ্ধার করা গেল, সুধী পাঠিকা ? গেঁটে বাত ঘেঁটে ঘুঁটে সব দেব ঘুলিয়ে!

রাধানাথের সেবানিবৃত্তি ও প্রয়াণের পরে সার্ভের বৃটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁদের ম্যানুয়েলের পরবর্তী সংস্করণ থেকে রাধানাথের নাম সম্পূর্ণ মুছে দিতে ব্রতী হয়। লেঃ কর্নেল ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে তার প্রতিবাদও বড় রূপ পেয়েছিল। আশীষবাবুর এ’ অংশের আলোচনা মনোজ্ঞ হয়েছে। কিন্তু বি টি রোডের ওপর আজও দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক সার্ভে টাওয়ারটির গায়ের ইংরিজি শুদ্ধিকরণের যে পরামর্শ লেখক দিয়েছেন তা মানা গেল না; কারণ আমি তো পড়ে কোনো অশুদ্ধি দেখতে পাইনি। তাছাড়া ঐ ইতিহাসের গায়ে আঁচড় কাটার অধিকার ভাবীকালের আছে নাকি?

রাধানাথ শিকদারের জীবনী আলোচনায় অনিবার্যভাবে উঠে আসা উচিৎ (ক) হিন্দু কালেজে ডিরোজিও-টাইটলারের অধীনে তাঁর ছাত্রজীবন, (খ) জর্জ এভ্‌রেস্টের ছত্রছায়ায় জিটিএস-এ তাঁর পরিমাপ-কার্য ও পরে সর্বোচ্চ শিখর মাপন, (গ) কলকাতায় ফিরে আবহাওয়া দফতরে পথিকৃৎসম কাজ এবং (ঘ) শেষবয়সে বাঙলা সাহিত্যচর্চা---চলতি গদ্যে। এমনটা না করে এখান-ওখান থেকে তোলা কিছু গপ্পের সমাহারে পাঠক-ঠকানো পুস্তিকা প্রকাশ করা অবশ্যই যায়, কিন্তু সেসব কালের আঁচড়ে টেঁকেনা মোটেই। আশীষবাবুর গ্রন্থের প্রতি এই ক্ষোভ আরও বিশেষ করে জাগে কারণ উনি INSA-র মত মান্য সংস্থার ফেলোশিপ নিয়ে রাধানাথ-গবেষণায় নেমেছেন। তাঁর লিখন স্টাইলে বা কনটেন্টে জাত-ঐতিহাসিকের ছাপ কিন্তু খুঁজে পাইনি।

কিছু ফোটো দেখতে পাওয়া গেল, যার মধ্যে চন্দননগরে রাধানাথের পারিবারিক ভদ্রাসনেরটি আগে দেখিনি। প্রচ্ছদচিত্র এক্কেবারে উৎরোয়নি রঙের অপব্যবহারে। ‘সূত্রধর’-এর ছাপাই-বাঁধাই সাধারণ মানের।

সব মিলিয়ে, এই দ্বিশতবর্ষে এসেও রাধানাথ শিকদারের পূর্ণাঙ্গ জীবনীর অপ্রাপ্তি বুকে নিয়েই রয়ে যেতে হল। আশীষ লাহিড়ীর গবেষণা কবে সম্পূর্ণ হবে, তখন যদি সেটি পাওয়া যায় তবে বর্তমানটির দোষস্খালন হয়।

আমরা আশায় থাকব।



|| ফের বিভ্রান্তি ভরা অপ্রাপ্তির ইতিহাসকোষ ||

সংসদ ইতিহাস অভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড (ভারত-উপমহাদেশের ইতিহাস), সুভাষ ভট্টাচার্য; সাহিত্য সংসদ প্রকাশন, কলকাতা-৯; ISBN: 978-81-7955-210-0

কলকাতার ‘সাহিত্য সংসদ’ বাঙলা ভাষায় অভিধান ও কোষগ্রন্থ প্রকাশনের ক্ষেত্রে এক অগ্রণী নাম। এঁদের কাছ থেকে পাঠকের প্রত্যাশার মানটা তাই যথেষ্ট উচ্চে বাঁধা হয়েই আছে, তা থেকে বিচ্যুতি হতাশা আনবে বৈকি? বর্তমান আলোচ্য গ্রন্থে এইটিই ঘটেছে।

পরবাসের ৪৩ সংখ্যায় এঁদের ‘ইতিহাস অভিধান, ১ম খণ্ড’-এর আলোচনায় বিভিন্ন মানদণ্ডে আমাদের আশাভঙ্গের কথা ব্যক্ত করেছিলাম। আজ এই ২য় খণ্ডে (কেবলমাত্র ভারতেতিহাস বিধৃত হয়েছে এতে) এসে তার অপনোদন তো হয়ই নি, বরং তা বেড়েছে।

প্রথমে ‘প্রকাশকের নিবেদন’ পড়তে পড়তেই মনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠল। এই যে প্রকাশক বলছেনঃ “বাংলাভাষায় এই রকম সম্পূর্ণ ইতিহাস অভিধান ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।”---এটা কদ্দূর মেনে নেওয়া যায় ? এ’হেন বই আগে হয়েছে কিনা বা এখনও পাওয়া যায় কিনা জানিনা, কিন্তু কোনো পাঠক আজ, উদা., সুরেন বাঁড়ুয্যের ‘ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন’ নিয়ে বাঙলাভাষায় এক অভিধান-এন্ট্রি পড়তে চাইলে হাতের কাছেই ঢাকা-প্রকাশিত ‘বাংলাপিডিয়া’ (ইংরিজি ও বাংলায়--- সফ্‌ট ও হার্ডকপি) পাবেন, যার পরিধি ও মান আলোচ্য কোষখানির অনেক উপরিস্তরের। যদিও সেটি কোনো এক্সক্লুসিভ ‘ইতিহাস-কোষ’ নয়, আর এই সুভাষবাবুরটি তা-ই, অতএব অনেক উৎসাহ নিয়ে পড়তে বসি।

শেষের ‘নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি’-তে কেন জানিনা, প্রথমেই চোখ চলে গিয়েছিল। এখানে সাতচল্লিশখানি গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে সওয়া-পৃষ্ঠা জুড়ে । সেখানে নীলকান্ত শাস্ত্রী, ডি ডি কোশাম্বি বা নীহাররঞ্জন রায়ের মত গুটিকয় প্রাথমিক সূত্র ছাড়া বেশিরভাগই জাতে টেক্সট বুক ও ভাষ্য। যেমন , সুমিত সরকার মশায়ের ‘Modern India’ এক অসাধারণ পুস্তক, কিন্তু এটা তো একটা ভাষ্য। এক অভিধান লেখার কী সূত্র এ’থেকে পাওয়া যেতে পারে? ঠিক ঠিক স্থানে ক্রস-রেফারেন্স তো দেওয়া নেই এই অভিধানে, তাই বুঝি কী করে যে কোন্‌খানে সুমিতবাবুর বইটি থেকে অভিধানে কোন্‌ তথ্য গৃহীত হল? প্রাচীনপন্থী পণ্ডিতদের মধ্যে না হয় আজকের ‘উইকিপিডিয়া’-র প্রতি এক প্রকার উন্নাসিকতা দেখা যায়, কিন্তু কোনো অভিধান লিখতে যে-কেউই ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’ বা ‘অক্সফোর্ড ডিক্সনারি অব্‌ ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি’-র মত কোষগ্রন্থের সাহায্য নেবেন। সুভাষবাবু নেননি? ‘নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি’-তে নাম তো নেই।

###

প্রথম ভূক্তি (entry): ‘অইহোল লেখ’। প্রশ্নের শুরু এখান থেকেই, কারণ অভিধানকার লিখেছেন, ‘.....এতে উত্তর ও দক্ষিণভারতের মন্দিরশৈলীর সমন্বয় ঘটেছে’। ‘উত্তরভারতীয় মন্দিরশৈলী’ বলে জেনারালাইজ করে দেওয়া যায় এমন কোনো মন্দিরশৈলী হয় নাকি, বিশেষতঃ, প্রাক্‌চালুক্যকালে, সপ্তম শতকের পূর্বে? গ্রীকরীতি বা বৌদ্ধরীতি বললে তবু না হয় মানা যেত। পরের বাক্যেই আবার প্রশ্ন জাগেঃ “কয়েকটি জৈনমন্দিরও পাওয়া গেছে, যেগুলির স্থাপত্যরীতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ”। কেন গুরুত্বপূর্ণ? সেটা না বলে দিলে এমন ভাসা ভাসা বাক্য দিয়ে অভিধান হয়?

অইহোল লেখ পড়তে পড়তে ‘বাঘ গুহা’ বা ‘ভিমবেটকা’ পড়তে ইচ্ছে হল। প্রাচীনত্বে ও সৌন্দর্যে আমাদের মধ্যপ্রদেশের ভিমবেটকা যে স্পেনের আলতামিরা বা ফ্রান্সের লাসকঅ-র সমকক্ষ! কিন্তু এই দুটো ভূক্তিই নেই এই ইতিহাসকোষে।

শেষের দিকে চলে গেলাম, জানা গেল, ডেভিড হেয়ার ছিলেন “উদারপন্থী ইংরেজ, জন্মসূত্রে স্কটিশ”! সোনার পাথরবাটি! ‘ইংরেজ’ ‘স্কটিশ’ ‘আইরিশ’ ‘ওয়েলশ্‌’ এই গুলো যে আলাদা আলাদা সেট---যেগুলো মিলে ‘বৃটিশ’ হয়েছে। তাই যেমন কেউ একইসঙ্গে ‘তামিল’ ও ‘পঞ্জাবি’ হতে পারেন না, তেমনি ‘ইংরেজ’+‘স্কটিশ’-ও নন। পরশুরামের ‘উলটপুরাণ’ স্মরণ করুনঃ বৃটিশদের আত্মম্ভরিতা যেমন টন্‌টনে, কোনো ‘আইরিশ’কে ‘ইংরেজ’ বললে হয়তো আজকের দিনেও সে ডুয়েলে আহ্বান জানিয়ে বসতে পারে। ‘আনন্দ কুমারস্বামী’ ভূক্তিটিতেও এরকম জাতের ভুল চোখে পড়েছেঃ “তদানীন্তন সিংহলের এক বর্ধিষ্ণু তামিল পরিবারের সন্তান। পিতা সিংহলি, মাতা ইংরেজ তনয়া”। বাবা সিংহলি, মা ইংরেজ হলে উনি তামিল হন কোন্‌সূত্রে? শ্রীলঙ্কায় তামিল-সিংহলি বিবাদ কত বড় বিবাদ! তাই না অত বড় জেতের লড়াইখানা হয়ে গেল সেখানে। আনন্দের বাবা ‘সিংহলি’ নন, ‘তামিল’ ছিলেন।

সংস্কৃত কাব্য ‘গীতগোবিন্দ’-র কবি জয়দেবকে বাঙালি বলে চালাতে আমরা বড্ড গর্ববোধ করি ও বীরভূমের কেন্দুলিকে তাঁর জন্মস্থান বলে থাকি। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়ে গেছে যে তাঁর জন্মস্থান ‘কেন্দুবিল্ব’ সমুদ্রকূলবর্তী, ওডিষার পুরীর কাছে। ওডিষা সরকার তার ওপর ডাকটিকিট বের করেছে, গণতন্ত্রদিবসের ট্যাবলো বানিয়েছে। সুভাষবাবু, দেখি, জানেন না (পৃঃ ১৬৯)।

ঋষি অগস্ত্য পৌরাণিক চরিত্র, ঐতিহাসিক নয়। ইতিহাস অভিধানে তাই তাঁর নাম থাকবে কেন (পৃঃ ২)? তাহলে রাম বা কৃষ্ণের নামও কেন থাকবে না? এঁরাও পৌরাণিক চরিত্র হলেও আজও হিন্দু-শিখ ভারতীয়ের জনজীবনে, মনোলোকে ও রাজনীতিতে রাম বা কৃষ্ণের প্রভাব অপরিসীম। তাই এ’ অভিধানে এই দুই ভূক্তি থাকলে মন্দ হত না।

তথ্যের ভুল (বা বিতর্কিত তথ্য) তো বহু বহু। উদাহরণঃ

১. কুতুব মিনারের নামকরণ সুলতান কুতুবুদ্দিন আইবকের নামে---এ’মত সহজগ্রাহ্য নয়; বরং সুফিসাধক খ্বাজা কুতুবুদ্দিন বক্তিয়ার কাকির নামেই এই মিনার নামাঙ্কিত---এই মতই অধিক গ্রাহ্য। ইনি ছিলেন আইবকের জামাতা ইলতুতমিসের গুরুদেব। মিনারটির উপরের তিনটি তল ইলতুতমিসের কালেই গড়া।

২. পৃঃ ২১০. ঠগী। ঠগীদের (কু)কর্মস্থল উত্তর ও মধ্যভারতে ব্যাপ্ত ছিল, জানতাম। উত্তর-কন্নড় প্রদেশেও কিছুটা। কিন্তু সুদূর কেরলের ত্রিবাঙ্কুরেও ঠগীরা ছিল----এ’তথ্যের পুষ্টি কৈ? দুঃখের কথা, প্রথম খণ্ডের মত এই দ্বিতীয় খণ্ডেও কোত্থাও ক্রস-রেফারেন্সের ব্যবস্থা নেই যে তথ্যসূত্রটা দেখে নেব। যেকোনো অভিধানেরই এটা প্রাথমিক শর্ত হয়ে থাকে ও তাই-ই হওয়া উচিৎ।

৩. জালিওয়ালানবাগ হত্যাকাণ্ড আধুনিক ভারত-ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়। তাই অতি উৎসাহ নিয়ে প্রবিষ্টিটি পড়তে বসলাম। কিন্তু তৎকালীন পাঞ্জাবের লেঃ-গভর্নর খাঁটি আইরিশ ICS মাইকেল ও’ডয়ার Michael O’Dwyer (১৮৬৪--১৯৪০) এবং বাগে গুলি চালিয়েছিলেন যে জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ার Reginald Dyer (১৮৬৪--১৯২৭)---এই দু’জন যে ভিন্ন ব্যক্তি---এ’তথ্যটাই পরিষ্কার নয়! ‘জনৈক ডায়ার’ বলে দায় সারা হয়েছে। এর সঙ্গে ২১৩ পৃষ্ঠার ‘জেনারেল ডায়ার’ ভূক্তিটি পড়লে বিভ্রান্তি আরও বাড়বে। জেনারেল ডায়ার ‘ছাড়া’ পেয়ে গেলেও, গভর্নর ও’ডয়ারই তৎকালীন পাঞ্জাবী বিপ্লবীদের অধিকতর ঘৃণার পাত্র হন, বিপ্লবী উধম সিং-এর হাতে যাঁকে প্রাণ দিতে হয়। আর, কেন তৎকালীন বৃটিশ সমাজের চোখে জেনারেল ডায়ার হিরো বনে গিয়েছিলেন (তাঁরা আরেক ১৮৫৭-র দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন যে!) ও রাওলাট আইনবিরোধী আন্দোলনের কোন্‌ পরিপ্রেক্ষিতে বৃটিশ দমননীতি ঐ মাত্রা পেয়ে যায় (নিবেদিতপ্রাণা শেরউড-দিদিমণির সাইকেল-ঘটনা)---এ’-এ’সবের কোন্নো উল্লেখ নেই। উৎসাহী পাঠক নাইজেল কলেটের সাম্প্রতিক গ্রন্থটিতে চোখ বোলাতে পারেন।

ভারতীয় সিভিল সার্ভিস (ICS) ভূক্তিটি পড়ে সবচেয়ে হতাশ হয়েছি। সুভাষবাবু আলোচনা শুরুই করেছেন ১৮৮৬-র এইচিসন কমিশন দিয়ে---যেন এখান থেকেই ICS-এর যাত্রারম্ভ। তাহলে সত্যেন ঠাকুর-রমেশ দত্ত কী ছিলেন? ছোটবেলা থেকে যে জেনে এসেছি রবীন্দ্রনাথের মেজদা ছিলেন প্রথম ভারতীয় ICS (১৮৬৪)? ICS Act 1861-তে তাহলে কী ছিল? তার উল্লেখ এই ভূক্তিতে নেই কেন?

বানান ও শব্দের ব্যবহার আরেক আপত্তির কারণ। ‘ব্যবসা’ বানানটি এতোবার ‘ব্যাবসা’ লেখা হয়েছে যে আমাকে অভিধান হাঁটকাতে হল, আমি নিজেই ভুল জানি কিনা দেখতে। হুন বানানে ঊ এবং ণ মানতে হবে (পৃঃ ৩০৩) কোন্‌ যুক্তিতে?

‘ওমরাহ্‌’ বহুবাচনিক শব্দ, একবচনে ‘আমির’। তাই নুরজাহানের বাবা আকবরের ‘ওমরাহ্‌’ কী করে ছিলেন (পৃঃ২৪৭)?

কিছু কিছু ভূক্তি আদৌ এলো কেন, প্রশ্ন জাগায়, যেমন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড পামারস্টোন (পৃঃ ২৫৬)। হঠাৎ একজন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর নাম কেন? তাহলে তো আরও অনেককে আনতে হয়, বিশেষতঃ ভারতেতিহাসের খলনায়ক হিসেবে উইনস্টন চার্চিলের নাম, কারণ ছেচল্লিশের মন্বন্তরখানা তাঁরই হাতে গড়া ছিল কিনা! রামানন্দ-কবির-চৈতন্য-দাদূ আছেন, আর (আদি) শঙ্করাচার্য থাকবেন না? এই উপেক্ষা বা বিচ্যুতি মানা যায়? সেন্ট টমাস, যিনি প্রথম খৃস্টাব্দে কেরলে এসে ঈশাদেবের বাণী প্রচার করেন তিনিও নেই। আন্তিয়ালকিদাস, আপোলোডোটাস, ডেমিট্রিয়াস, ডিয়োডোরস, প্রভৃতি মধ্যপ্রাচ্য ও গ্রিক ব্যক্তি/ইতিহাস অকারণে বেশি বেশি করে ঠাঁই পেয়েছে ভারত-ইতিহাসের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক সুদূর । যেমন, মধ্যএশিয়ার আমুদরিয়া নদী হঠাৎ করে স্থান পেয়ে গেছে এই ঐতিহাসিক অভিধানে, সেক্ষেত্রে তো গঙ্গা বা নর্মদার নামও থাকতে হয়। তাহলে ‘ভৌগোলিক অভিধান’-টা লেখা হবে কী নিয়ে? ‘আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ’-র অন্তর্ভূক্তিটিও এই কারণে অসমর্থনযোগ্য। ভাবের নৈরাজ্য চলেছে আর কি!

অম্বিকাচরণ মজুমদার, তারকনাথ দাস, কানাইলাল দত্ত, যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, রাজেন্দ্রলাল মিত্র প্রমুখ রাজনীতিঘেঁষা মানুষ, সমগ্র ভারতেতিহাসের নিরীখে যাঁদের গুরুত্ব তত উল্লেখযোগ্য নয় বলেই মনে হয়, সংসদের ‘বাঙালি চরিতাভিধান’ খুললেই যাঁদের নাম পাওয়া যায়---এ’গ্রন্থে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি, অন্যদিকে ক্রীড়া-শিল্প-বাণিজ্য জগতের পর্বততূল্য নাম বাদ যাওয়া মানতে পারলুম না। ভারতবর্ষের এক ইতিহাসকোষ লেখা হচ্ছে, যাতে রঞ্জি সিংজি, ধ্যানচাঁদ, দাদাসাহেব ফালকে, ঘনশ্যামদাস বিড়লা বা ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্কের কোনো প্রবিষ্টি নেই---মেনে নিতে হবে? ইতিহাস তাহলে রাজাগজাদের নিয়েই লেখা হতে থাকবে? আচমকা একটি প্রবিষ্টি ‘কুর্গ’---দক্ষিণভারতের একটি অঞ্চল। হঠাৎ একটি অঞ্চল নিয়ে প্রবিষ্টি কেন? তাহলে তো এমন অনেক অঞ্চল নিয়েই একেকটি প্রবিষ্টি রাখতে হয়, যখন কুর্গের তেমন কোনো ঐতিহাসিক ভূমিকা নেই। ভাবের নৈরাজ্য!

যাহোক্‌, বারবার আর ‘নেই নেই’-গেয়ে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাইনা।

ফের লিখি, ঢাইশো টঙ্কার কেতাবখানি বুকসেলফে জায়গা দখল করে রাখা ছাড়া আর বিশেষ কোনো কাজে আসবে না।



|| দুর্লভ কিংবদন্তীর জীবনকাহিনি: ওস্তাদ আল্লাদিয়া খান ||

My Life: Sangeet Samrat Khansahab Alladiya Khan—translated with an Introduction by Amlan Das Gupta & Urmila Bhirdikar; Thema publication, Kolkata-26; first published 2000, second revised edition 2012; ISBN: 978-93-81703-02-1

ভারতে তখন কোম্পানির আমল, ১৮৫৫ খৃ.। দেশীয় রাজ্য জয়পুরের অধীনে টঙ্ক এক ছোট্ট রিয়াসত (সামন্তরাজ্য)। সেখানকার উনিয়ারা গ্রামের আহমাদ খান দিনে চাকুরি করেন রাজবাড়িতে, রাতে ঘরে ফিরে ধরেন তানপুরা। বিবি ছিলেন তাঁর মৃতবৎসা। পরপর কোলের চারটি ছেলে যাবার পর রইল যেটি নাম তার দেওয়া হল গুলাম আহমাদ খান। কিন্তু যেহেতু আল্লার দেওয়া, আল্লা দিয়েছেন তাই রয়েছে, সকলে তাকে ‘আল্লাদিয়া’ ‘আল্লাদিয়া’ বলেই ডাকতে লাগল। জন্ম হল এক মহীরুহের, এক কিংবদন্তীর।

###

মস্ত মস্ত দুটি দুর্লভ গ্রুপ ফটো। জনসংখ্যা গড়ে পঁচিশ। মধ্যমণি তার ওস্তাদের ওস্তাদ আল্লাদিয়া খান সাহেব, তখন বৃদ্ধ। তাঁর বাঁয়েই বহুমেডেলখচিত ওস্তাদ ফৈয়জ খান সাহেব বসে, ডাইনে তরুণ বিলায়েত হুসেইন খাঁসাহেব (সেতারি বিলায়েত নন, ইনি ছিলেন আগ্রাঘরের প্রতিনিধি-গায়ক)। চারিভিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন সেকালের ও ভাবিকালের সব “এ’-ও’কে-দেখা” গায়কবৃন্দঃ ওস্তাদ তসদ্দুক হুসেইন, গুলাম রসুল, দিল্লির মুজফফর খান, স্বামী বল্লভদাস---কে নন? সনতারিখ দেওয়া নেই, স্থানও। অনুমান, চল্লিশের দশকের গোড়ার দিক হবে, বম্বে। আরেকটি বহু পুরাতন ফোটোয় ওস্তাদজির গালপাট্টা তখনও কুচ্‌কুচে! ওঁর কিংবদন্তী-শিষ্য ভাস্কর বুয়া বাখলের চিত্র আগে দেখেছিলাম, ফোটোগ্রাফ নয়। আছে এ’বইয়ে। উনিয়ারা গ্রামের জন্মভিটের ফোটোও যে কখনও দেখতে পাব, ভাবিনি। এইপ্রকার অনেক প্রাপ্তি ঘটে গেল ‘থীমা’-র এই বিশ্বমানের প্রোডাকশানটি হাতে পেয়ে। যেমন ছাপাই-বাঁধাই, ফোটোর কোয়ালিটি, তেমন অনুবাদ-গবেষণার মান---নবীনদের অনেক কিছু শেখার আছে ‘থীমা’-র কাছ থেকে। ভারতবর্ষের এক সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতবিশারদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ এর চেয়ে ভালোভাবে আর কী করে দেওয়া যেত ?

###

ওস্তাদ-শিরোমণি আল্লাদিয়া খান সাহেব। জন্মের দু’বছরের মধ্যে মিউটিনি ও মহারাণীর আমলের শুরুয়াৎ। আর সে-পথ বেয়েই মধ্যযুগ কেটে আধুনিকতায় উত্তরণ হতে লাগল ভারতবর্ষের। এই উত্তরণ মূর্ত হয়ে উঠেছে রেলপথে, শাসনতন্ত্রে, সমরাস্ত্র থেকে কলের ভোঁ-এ---আর শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীতে হবে না? চার ঘরে (ঘরানা—‘বানি’, যেমন, ‘ডাগরবানি’) বাঁধা বহুশতাব্দীপ্রাচীন ধ্রুপদের একাধিপত্য ভেঙে খেয়ালের জন্ম হচ্ছে---যার এক উল্লেখ্য ভগীরথ ছিলেন আল্লাদিয়া খান সাহেব (১৮৫৫-১৯৪৬)। আল্লাদিয়ার বিচার আজকে এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতেই করতে হবে কারণ তাঁর গায়ন শুনে বিচার করার মত আর্কাইভ্‌ড ফুটেজ অল ইণ্ডিয়া রেডিও বা এস.আর.এ.-র সংরক্ষণাগারে থাকলেও থাকতে পারে, আম-শ্রোতার নাগালে নেই। হ্যাঁ, কিছু অবশ্যই বেঁচে আছে তাঁর ঘরানার কিংবদন্তী গাইয়ে কেশরবাঈ বা মল্লিকার্জুনের রেকর্ড-সিডিতে। মল্লিকার্জুনের শুদ্ধনট শুনে শ্রোতারা হায় হায় করে উঠলে উনি জিভ কেটে বলতেন, ‘গুরুজির গাওনের চার আনাও তো পাইনি!’ আর গুরু আল্লাদিয়া-তনয় ভুর্জি খানসাহেব তাঁর পিতৃপ্রতিভার আধাও ছিলেন না---গুণীজনে বলেন। এ’থেকে আল্লাদিয়াকে মনে মনে মেপে নিতে হবে।

###

সেকালের গাইয়ে-বাজিয়েদের মধ্যে লিখাপড়ার চল বিশেষ ছিলনা। আল্লাদিয়াও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। সেদিক থেকে বর্তমান রচনাটিকে এক ঐতিহাসিক দর্জা দিতে হয়, কারণ লিখনের এই খামতি এখানে মুখেমুখে পুরে গেছে। গণেশ বনেছেন পৌত্র আজিজুদ্দিন, বলে গেছেন বৃদ্ধ আল্লাদিয়া। ভাগ্যিস বলে গিয়েছিলেন, নৈলে কী করে জানতাম রেলওয়ের জাল বিছোবার পূর্বযুগে কী করে এক দেশীয়রাজ্য থেকে আরেকে সুরের-ভাবের আদানপ্রদান হত? মাইক্রোফোন নামক যন্ত্রের স্বপ্ন যখন কেউ দেখার কথাই ভাবতে পারত না, কী করে তখন ভরা রাজসভার পাঁচশ’ শ্রোতার কর্ণে সঙ্গীত পৌঁছত? হদ্দু খান, বড়ে মহম্মদ খাঁ বা আলিয়া-ফত্তুর মত আদিযুগের উদ্গাতারাই বা কে কেমন গাইতেন? যদিও এর অনেকটাই আজ পড়ে-বুঝে-ভেবে নিতে হবে, কারণ মহম্মদ নিসার কত জোরে বল করতেন তার মাপ যেমন আজ আর পাওয়া যাবে না, আল্লাদিয়াও তেমন এক নিরাকার ঈশ্বরের মতই বেঁচে থাকবেন সঙ্গীতপ্রেমীর মনলোকে।

###

গুরু পিতৃব্য চম্মন খানসাহেব-জাহাঙ্গির খানসাহেবের সঙ্গে উত্তর ও পশ্চিমভারতের এ’-রিয়াসত ও’-দরবার ঘুরতে ঘুরতে বছর-পঁচিশ বয়সের মধ্যেই আল্লাদিয়ার এ’ অনুভূতির উদয় হয় যে দিনকাল পাল্টাচ্ছে। আদ্যিকালের ভারি-ভরকম ধ্রুপদ গান আগামী দিনে আর শ্রোতারা নেবে না। অতএব তাঁর গলায় উঠে এলো ‘খেয়াল’---ধ্রুপদের নিগড় ভেঙে যেখানে কল্পনার ডানা আরও উন্মুক্ত, গায়কের স্বাধীনতাও অধিকতর। সেই আদিকালে তাঁকে খেয়াল শেখাবেটা কে? খেয়ালের তালিম তাই, বলতে গেলে, তাঁর ছিলই না। নিজের গায়কী তাই তাঁকে নিজেকেই গড়ে নিতে হয়েছে। সেইজন্যই আল্লাদিয়া এক পথপ্রদর্শক, নিজেই এক ইন্সটিট্যুশন! নটকামোদ, বিহগড়া, নায়কি কানাড়ার মত অসাধারণ কিছু রাগের জন্ম যেমন হয়েছে আল্লাদিয়ার গলায়, তেমনই বহু বহু বন্দিশের সৃষ্টিও তাঁর। পরবর্তীকালের আর-দুই কিংবদন্তী খেয়ালিয়া ওস্তাদ আব্দুল করিম খান (১৮৭২-১৯৩৭) ও ওস্তাদ ফৈয়াজ খানসাহেবের (১৮৮৬-১৯৫০) ঘর আলাদা হলেও তাই তাঁদের আল্লাদিয়ার ভাবশিষ্য বলেই মানতে হবে, কারণ আল্লাদিয়া না এলে আব্দুল করিম বা ফৈয়জ খাঁ আসতে পারেন না। আর পুত্রদ্বয় মঞ্জি খান-ভূর্জি খান তো তাঁদের অসামান্য শিষ্যদলের মধ্যে দিয়ে এই ঘরের (‘জয়পুর-আতরৌলি’) জয়ধ্বজা তুলে ধরে গেছেন---ভাস্করবুয়া, কেশরবাঈ, মল্লিকার্জুন থেকে আজকের শ্রুতি সাদোলিকরের মধ্যে দিয়ে। ‘কালানৌচিত্য দোষ’ লাগলেও, আল্লাদিয়ার তুলনা তাই ভাবীকালের কুন্দললাল সেহ্‌গলের সঙ্গে করা চলে, ঊনিশশ’ ত্রিশের দশকে যাঁর গলায় ভারতীয় ফিল্মসঙ্গীতের জন্ম হয়।

###

থীমার প্রোডাকশন প্রসঙ্গে ‘গবেষণা’র কথা বলেছিলাম। মুখে মুখে বলা এ’জীবনীতে গবেষণার সুযোগ আসছে কোত্থেকে? আছে, আছে। এটি ইংরিজিতে লেখা বই, মূলটা হিন্দোস্তানিতে বলা/লেখা । ‘ফিরৎ’ ‘অন্তরা’ বা ‘মোকাম’ শব্দার্থ ইংরিজি-পাঠকের কাছে পৌঁছুবে কী করে? কখনো ব্যাখ্যা কখনো ‘ট্রান্সলিটারেশন’ করে অনুবাদকদ্বয় চমৎকার উৎরেছেন এ’সমস্যা। ভালো লাগল। আর ছুট্‌কহানি (anecdote)? বইটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে এনিকডোটের পরে এনিকডোটঃ প্রথমদিকে, তাঁর সাঙ্গীতিক ধাঁচ (style) গড়ে ওঠার পিছনে বড়ে মুবারক আলির প্রভাব অসামান্য ছিল---আল্লাদিয়া আজীবন এ’কথা স্বীকার করে গেছেন। এক সন্ধেয় সেখানে ঘগ্‌গে খুদাবক্স, মহম্মদ আলি খান প্রমুখের মত কিংবদন্তির সমাবেশে যুবক আল্লাদিয়াও উপস্থিত। ধ্রুপদিয়ারা সেকালে খেয়ালিয়াদের একটু নিচু-নজরে দেখত। মজা করে খোনা গলায় খেয়ালের এক বন্দিশ গেয়ে বহ্‌রাম খাঁ তাতালেন মুবারক আলিসাহেবকে। আর যায় কোথায়? “কী? খেয়ালিয়ারা তান করতে জানে না? তবে শোনো......”। মুবারক আলির তান-কর্তবে সেদিন সত্যি সত্যি খাটিয়ার পায়া ভেঙে পড়ে ছিল। এ’গপ্প অবশ্য কুমারপ্রসাদও করে গেছেন। গ্রন্থের ‘Singers of the past’ অংশটি এ’হেন এনিকডোটে বড়ই ভরপুর!

তাঁর সঙ্গীতজীবনের একটা বড় অংশ আল্লাদিয়া কাটিয়ে গেছেন দক্ষিণ-মারাঠার দেশীয়রাজ্য কোলহাপুরে, সাহু-মহারাজের অসীম শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায়। কেবল রাগ বা বন্দিশই নয়, রাজ্যচালনা ও প্রজাদের অভিযোগের সুরাহাতেও মহারাজ গুরুর উপদেশ নিতেন। কোলহাপুরের ‘আল্লাদিয়া চক’-এ’ তাঁর আবক্ষমূর্তি আজও সে শ্রদ্ধার নিদর্শন।

পরদাদা (প্রপিতামহ) মন্তোল খানের কথাও শুনিয়েছেন আল্লাদিয়া, যাঁর জন্ম অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে। তাঁদের পরিবার তখন আলিগড়ের কাছে আতরৌলিতে থাকে। আলওয়ারের মহারাজার হুকুম হল, যাও এমন গায়ক ঢুঁড়ে নিয়ে এসো যার গান শুনে চোখে আনন্দাশ্রু এসে পড়ে। আছে এমন গাইয়ে? আছে মহারাজ। কে সে? অতএব মহারাজের পাইক-পেয়াদা ছুটলো মন্তোল খানের ঘর, আতরৌলিতে। সন্তগায়ক তখন দীর্ঘ সাধনায় ডুবে আছেন সঙ্গীতের মধ্যে। অবিশ্বাস্য, মহারাজের দূতদল তিন তিন বচ্ছর অপেক্ষা করল মন্তোলের দ্বারে। শেষটায় যখন ভুলিয়ে-ভালিয়ে তাঁকে তারা নিয়ে যেতে পারল রাজসভায়, সফল হল রাজার দীর্ঘ প্রতীক্ষা। আনন্দাশ্রুতে ভেসে গেল রাজদরবার। এক নিষ্কর গ্রাম রাজা দিতে চাইলে তার বদলে পুরস্কার হিসেবে শীঘ্র ঘরে ফেরার অনুমতি যাচ্ঞা করেন মন্তোল---সেখানে যে তাঁর শিষ্যদল অপেক্ষা করছে। এ’হেন সন্তরক্ত ধমনীতে না বইলে কি আর বংশে এমন ভগীরথ-পুরুষের জন্ম হয়?

চমৎকার বই। মাথায় করে রাখার মত। প্রণিপাত করি।





(পরবাস-৫৫, অক্টোবর, ২০১৩)