জমিন
শ্রাবণের মেঘমুক্ত নীলাকাশ।
সূর্যস্নাত ক্লেদময় হে বিশাল মাঠ, -- বিপুলসম্ভবা!
লাঙলের মুখে স্বর্ণপ্রসবা মাটির কামনা
ঘর্মাক্ত শরীর আর দেহাতীত সৃষ্টির চেতনা।
পৃথিবী আমার কপালের ঘাম লেগে সবুজ
তুমি প্রাণময়, মোহময় জীবন-মালিকা। জমি!
তোমারও স্বীকৃতি আছে, তুমি কোনো এক
আদিতম মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস
আর সভ্যতার স্তরে স্তরে একটি নির্ণয়-সূত্র।
মৃতম্লান কৃষকের সাধনা কঠোর
নিরন্ন, বিমর্ষ আর ক্লান্ত; শ্রান্ত সন্ধ্যায়
দুশ্চিন্তা দুঃসহ হয়ে ওঠে। মহাজনী অর্থনীতিঃ দৈনন্দিন
লাভ আর ক্ষতির গণনা।
পাড় ভেঙে জল আসে।
স্রোতের ফেনায় ফেনায় বাড়ে, নাচে আর হাসে।
ক্রুর স্পর্শ ফেনিল উত্তাল তরঙ্গ-রাজি,
হৃদয়ের সবুজ স্বপ্নটিকে কেড়ে নিয়ে যায়,
বাধা নেই, অবাধেই এলো আর গেলো। তখন
আমি কাঁদি, সে আর মাঠও ইনিয়ে-বিনিয়ে কাঁদে।
বিচিত্র অভিব্যক্তি। সম্মিলিত কৃষকের সমস্বর দৃঢ়কণ্ঠ
সুরে বিদ্রোহের জাগরণ আসে। অভ্যুদয় প্রভাতী চেতনা।
অগ্নিদীক্ষা-দ্রুত অভিযান, অবিরাম! অধিকার
সংগ্রামের মাঠে শ্রমজীবি মানুষের রক্তরাঙা ইতিহাস
লেখা হয়। পরিবর্তন। আর
কোদাল-হাল-দা নিয়ে নতুন যুগের অভিযাত্রী শ্রমিক-কৃষক
পলাতক-উদ্বাস্তু, মহাজন, পুঁজিপতি, সমস্ত শোষকঃ
বানের জল পাড় ভেঙে আর আসতে পারে না।
সবুজ প্রাণের মাঠ
সোনালী রূপালী হয়, জমিতে জাগে বীজ
নতুন আরো নতুন
হে জমিন!
হে সৃষ্টিসম্ভবা বিপুল জমিন
তোমাকে নমস্কার!
(পরবাস-৫৫, অক্টোবর, ২০১৩)