Parabaas Moviestore




Parabaas Musicstore




Subscribe to Magazines





পরবাসে
সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের

লেখা


ISSN 1563-8685




অজাত শব্দের কাছে
(সূচিপত্র)

সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়

চাঁদ আর শ্রমের সম্পর্ক





শ্রমজীবী মানুষেরা সর্বদাই লাইনে দাঁড়ায়
সারিবদ্ধ, তাদের ভিতরে কোন দুষ্কৃতি থাকে না,
তবুও তাদের দেহ হাতড়ে দেখে জলপাই পোষাক।
পারাপার বৈধ, তবু শরীরের আনাচে কানাচে
খুঁজে দেখে, হয় তো অনভিপ্রেত মাটি লেগে আছে
অথবা ফুসফুসে, জমে আছে আকরিক লোহা।

লোহা থেকে অস্ত্র তৈরি হয়, যদি তারা অস্ত্র হতে চায়
সেই ভয়ে প্রহরীরা খুঁজে দেখে আগাপাশতলা।



বিকেলের দীর্ঘ চিমনিতে আলগোছে চাঁদ লেগে আছে
অন্ধকার গাঢ় হলে, গা বেয়ে গড়িয়ে পড়বে জ্যোৎস্না।
শাশ্বত ঘামের গন্ধ, দিনগত বয়লার স্যুট
ছেড়ে রেখে বাসগুলি চলে যাচ্ছে ফেন্সের বাইরে।
ভিড়, আলো, ক্রমাগত হোর্ডিঙের মুখ দেখে ক্লান্ত
পাখিদের বাবা মা’রা অস্থির হয়ে উঠছে, ক’খন
ঘরে গিয়ে দানা দেবে শাবকের খিদে লাগা মুখে।

তাছাড়াও দিনান্তের ঘরে, এক অভিমানী বৃদ্ধ
জেগে থাকে লোকচক্ষুর আড়ালে, অত্যন্ত অসুখে।
জানলা দিয়ে তার বিছানায় এলোমেলো চাঁদ এসে পড়ে।



শ্রমজীবিকার পরও কিছু বিনোদন থাকে।
উদাহরণ স্বরূপ, চিরকাল যেমন উঠেছে
সীমান্তের কাঁটাতার পার হয়ে মেঠো চাঁদ ওঠে।
চাঁদ দেখে, ক্ষেতের আবাদ দেখে, তাদের ভিতরে
কেউ কেউ গান গেয়ে ওঠে। বৃন্দগান ভেসে যায়
খাড়ি-জল পার হয়ে শহরের নদীতে নালায়,
চাঁদ আর শ্রমের সম্পর্ক নিয়ে লুলাবি শুনায়,
সায়ন্তন লোকগাথা।



রাস্তা জ্যোৎস্না-স্নাত, স্মৃতিময়
টুকরো টুকরো কাচ ছড়িয়ে রয়েছে খাড়ির জলেও,
অগোছালো ক’টি নৌকা, সার বেঁধে ধাতব জন্তুরা
যানজট ঠেলে ঠেলে দীর্ঘ ব্রীজ পারাপার করছে।

পেট্রোলের গন্ধ লাগা সোডিয়াম ভেপারের গুঁড়ো
উড়ে এসে বিঁধে যাচ্ছে শরীরের মধ্যে, চোখে, মুখে।

বাসের জানলায় চাঁদমুখ, দৃশ্যত পাপ-তাপহীন
শ্রমজীবী মানুষের থকে যাওয়া চোয়ালে চিবুকে
আলোছায়া মাখামাখি, খুলে রাখা ঠোঁটের দু-পাশে
বিষাদের মায়াখাদ গভীর, গভীরতর হচ্ছে।



শ্রমজীবনের কথা লিপিবদ্ধ করে রেখে যাই
হয় তো কখনও কেউ চিনে ফেলবে হোর্ডিঙের মুখ
শ্রমের প্রকৃত মানে, নিয়মিত ঘরে ফিরে যাওয়া
বুঝে যাবে কাকে বলে কাঁটাতার। চাঁদ ও শ্রমের
সম্পর্কের বৈধতা নিয়ে অহেতুক প্রশ্ন তুলবে না।
শিশু আর বৃদ্ধগুলি কারা, আমার না বুঝলে চলে
আমি তো যাপন করি, প্রতিদিন আমার ভিতরে।
আমি ছাড়া যার এই বোধ হবে, প্রতীকী জীবন
তাকে যেন কখনও না ছোঁয়, তার কোনও দায় নেই
সে যেন ঘুমায় অখণ্ড শান্তির ঘুম... রাত যায়।



(পরবাস-৬৩, ৩০ জুন, ২০১৬)