ISSN 1563-8685




চারটি কবিতা

এই রাতে

এই রাতে হরিণও রাহু হয়ে ওঠে শেষে
অরণ্যে খেলা ভুলে তাকায় চাঁদের মোহে
তারপর কামড়ায় চাঁদের মুক্ত বুক
পান করে জ্যোৎস্নাকে নাতিগাঢ় সম্মোহে

এই রাতে পাঁচ জন বেরিয়েছে দল বেঁধে
এই রাতে পাঁচ জন অন্ধ ভাগ্যহীন
এই রাতে অদৃশ্য কেউ থাকে একা একা
চাঁদের বাহুতে গিয়ে করে মন রঙ্গিন

এই রাতে কায়াহীন ছায়াময় আঁধারেতে
শনশন বয় প্রেম তৃষার্ত চাতকের
বনচারী কিছু জ্ঞানী স্তব্ধ হয়েছে দেখে
এই রাত কবির ও বিষণ্ণ পাতকের!

কাফে

খবরের কাগজ, পুরনো গল্প, বহুদিনের আড্ডা
নিত্য নৈমিত্তিক চলছে আর চলবে,
কয়েকটা কাপ, কয়েকটা গ্লাস
আর কয়েকটা নামিয়ে নিলেই হবে—
শামি কাবাব, রেশমি কাবাব গরম গরম
প্লেটে প্লেটে দেবার অপেক্ষায়,
কেউ কি অর্ডার দেবে কালো কফি?
কেউ কি অর্ডার দেবে ম্যাঙ্গো টি?
কেউ কি অর্ডার দেবে ঠাণ্ডা শরবত?
হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসছে প্রেমের কলিগুলি
গজল-এ-মেহফিল, নাজুক, গুলশন-এ-মেহফিল...

স্রেফ মানুষ গুলো মৃত, স্রেফ বুক গুলো ছেঁড়া ছেঁড়া,
কোপানো মাথা গুলোর পেট গুলো ফালাফালা—
হাতল ভাঙা কাপে গাঢ় কালো শুকনো শুকনো কফিগুঁড়ো দাগ,
বোঝা যায় না, নাকি জমাট রক্ত লেগেছে!

গজল-এ-মেহফিল, নাজুক, গুলশন-এ-মেহফিল...

চক্র

বজ্রপাতের শব্দ ভাসছে হাওয়ায়
কর্জ আছে কি, জানে এ হৃদয়! হল খালি,
শব্দে যাদের ঘুম ভাঙল না তারা, হায়!
স্তব্ধ হলনা, জ্বলেনি মনের তারজালি।

তোমাকে আজকে করুণা করিনা ঈশ্বর
দেমাকে আজকে তোমাকে রাখিনা প্রান্তরে
সকল আঘাত পেরিয়ে এনেছ প্রস্বর
দখল করেছ হৃদয় অনেক দিন পরে।

আবার হারাবে জানি তুমি লুকোচুরি খেলা
বারবার এই খেলা খেলে গেছ আবাল্য
ফুরোবে আবার ব্যথা, ভালবাসা, অবহেলা
হারাবে চক্রে, নাহয় কেউ তা না জানল।

জ্যোৎস্নায় জলাশয়ে

জ্যোৎস্নায় জলাশয়ে সব জল সাদা হয়ে গেল
কচুরিপানার দেশে নেমে এলো মেঘেদের রঙ
কিছু মাছ ভেসে ওঠে পাখিদের মতন সহজে
রাতের আকাশে যেন উড়ুক্কু বাদুড় বরং।

সমস্ত ধূমপায়ী মহাশূন্যের কেদারায়
একে একে বসে এসে, ঠোঁটে জ্বলে বারুদের ভুখ
আর ধীরে ধীরে ধীরে, ফুটে ফুটে উঠছে সকল
বিষণ্ণ, সমাহিত, অলীক নক্ষত্র মুখ।



(পরবাস-৬৪, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬)