Parabaas Moviestore




Parabaas Musicstore




Subscribe to Magazines






পরবাসে
অনুষ্টুপ শেঠের

লেখা


ISSN 1563-8685




তিনটি কবিতা

নদী

নদীর গল্প বলি আজ? সেই জল, সেই ঢেউগুলো
ভ্যাপসা গরমের বেলা, উড়ে আসা রাস্তার ধুলো

একা নৌকো বেঁধে রাখা। ঘাটের চাতাল শুনসান –
অসময়ে কাজ শেষ করে, ক্লান্ত কোন মানুষের স্নান।

ঝুঁকে পড়া অশথের ডাল। ঢেউ তারও পাতায় পাতায়।
ধাপে ধাপে সিঁড়ি নামে জলে। এভাবেও, পৌঁছনো যায়।

বহতা সময়ে আজ, গভীর শীতল খুঁজে, ঝাঁপের বায়না
সামলে সবই ঠিক যায়। চোখে চোখও। কিংবা, যায় না?

ওটুকুই। ব্যাস, ঐ মায়া, শেষবার নীলেতে এঁকে নিই।
এ নদী গল্প জানে না রে! এ নদী সাঁতার শেখেনি।


অনন্ত

সবটুকু উড়ানই তো রয়ে গেছে বাকি!
সবটুকু প্রস্তুতি ভেবে ভেবে সারা -
কখন বা মেঘ আসে, কখন না-মেঘেই
বিদ্যুতে ঝলসায় অমোঘ পাহারা।

এ আকাশে ঝলমলে তারা জ্বলে যত,
ও আকাশে তত রোদ, অথৈ আগুন।
বাতাসেরা কানাকানি করে করে চুপ;
ডানা মেলা তারপরও, আনাড়ি, নিপুণ।

ভুল থাকে। ক্ষয় থাকে। থাকে ভেঙে যাওয়া।
সন্ধ্যার ঝড় যদি আজই নেমে আসে
সাহস তবুও জেতে দিনান্ত শিবিরে।
অবহেলা কে না জানে? প্রেমে, অপ্রেমে?

সবটুকু আদরই তো রয়ে গেছে বাকি –
ভালোবাসা, ভালো থাকা, আদতে একাকী।


সহজ

সহজ হতে জানলে, সবকিছু কি সহজে হয়ে যায়
আলোয় আলো মেশে, অন্ধকারে হেমন্তর গান,
আর বেঁচে থাকা, কি অসম্ভব সত্যি মনে হয়
এ গল্পটাও লেখা যাক তবে, এও তো অরণ্যসন্ধান।

যেখানে মাধবীলতা, সহজ আদর জেনে বাঁচে
যেখানে মাটিও জানে কত তৃষ্ণা মেটায় আষাঢ়
যেমন রবীন্দ্রনাথ, যেমন দিনের শেষ নদী,
স্বপ্নে বিভোর থাক, গল্পটি, পূর্ণসম্ভার,

বটবৃক্ষতলে নত হোক। অধরে তখনো ইচ্ছা
কিছুটা ছিল হয়তো। তবু, নত হোক ঝরাপাতা মেখে।
অরণ্যে কখন কি মায়া জেগে উঠবে কে জানে, বেভুল
শিকড়ে, আলগা কোন স্মৃতি, জেগে উঠলে নষ্টচন্দ্র দেখে?

সহজ হতে জানলে, সবই কিন্তু জ্যোৎস্নায় ধূসর।
বাদুড়ের নিঃশব্দ ওড়া। প্যাঁচাদের প্রহরী ডানায়
রাত্রির অন্তহীন চলা। সবই যেন ক্রীড়াকৌতুক।
বন কেটে অ্যাপার্টমেন্ট ওঠে, তবু গাছ গল্পটি বানায়।

এরকম অশেষ হয় তাই, প্রাক্‌জন্মে মর্মচ্ছিন্ন ক্ষণ
আদুরে হাতের মুঠো জুড়ে, অন্য কারো হৃৎস্পন্দন...




(পরবাস-৬৫, ডিসেম্বর ২০১৬)