ধ্বংস
সত্য তবে পুড়ে যাক ধীরে। তারপরেতে অন্য গল্প হবে।
ধূসর চাঁদের আলো, একা। দেখেছিলে, যে মরু পেরোবে?
নিতান্ত তুচ্ছ কিছু ছোঁয়া। নগণ্য কারো ভীরু কথা।
দাবানল লাগাতে পারে কি? যত সে হোক না গভীরতা।
এক অঙ্কে বেঁচে থাকা শেষ। এক অঙ্কে সদ্য শুরু তার।
নৌকা বলে দ্বীপান্তরে যাই। দ্বীপ হাসে ভাঙনে উদার।
যাচ্ছ যাও, সাবধানেতে যেও। বৃষ্টি আছে মাথায় ছাতা ধরে।
স্বরবর্ণ ব্যস্ত বেজায় আজ। ব্যঞ্জনরাও এ মাহ ভাদরে
ঘিরে বসেছে ভাতের থালার পাশে। ঘিরে বসেছে বায়না মুখে নিয়ে
ঘরে ফেরার গল্পটা তো বাকি। ফিরবে নাকি, নিরুদ্দেশে গিয়েও
বাড়া ভাতে কেউ দেয় না ছাই। ফ্যানও গালে না, শুধুই ভুলে যায়
এক আগুনে কত গল্প জ্বলে? কত দুঃখ সাহসে নিভায়?
সত্য-টত্য পুড়ে যাক তবে। ধ্বংস বড় মোহময় রূপ
বৃষ্টি আসুক টাপুর টুপুর, রাতে, ভস্মশরীর ধোয়াতে নিশ্চুপ।
পিরামিড
নিথর সমাধিগৃহে, কোন মৃত্যু আর ছোঁবে না
অনন্ত প্রতীক্ষা আজ শেষ। অজস্র সুখ সম্ভাবনা
বিস্রস্ত রয়ে গেল। থাক। পারিজাত অকালের দান
নিয়ে যাবে অন্য পসারীরা। নিয়ে যাবে হতভম্ব প্রাণ।
নিথর সমাধিগৃহে, মৃত্যু ছোঁবে না আর কেউ
আয়েসের সরঞ্জামগুলি, তুলে নিক বন্যার ঢেউ।
যদি বন্যা আসতে পারে, যদি, খরায় না জ্বলে যায় দেশ
আমাদের সামান্য এ সাধ, ছোটখাটো অপূর্ণ আবেশ...
নিথর সমাধিগৃহে, মুখোমুখি বসি আরবার
স্বর্ণযুগ কপচে যেতে পারি। কিংবা খুলে প্রস্তর দ্বার
যদি চলে যাই দৃঢ়, উত্তুঙ্গ শৃঙ্গ খুঁজে দূরে
শেষ হয়ে যায় কাব্যভাষা, বিচ্ছেদ, বিদ্বেষে পুড়ে
যদি যাত্রা অর্থহীন মূঢ়, যদি সেই শব্দ অনাদৃত
জাগরণ প্রবাদপ্রতিম, এই মিথ্যা মোহনির্মিত
শেষ হয় প্রথাসিদ্ধভাবে, মেনে নিয়ে নতশির নীতি –
তবু বুকে অমৃত রেখো! অধরোষ্ঠে পূর্বজন্মস্মৃতি।
জাগরী
প্রতিটা বিকেল, সন্ধে, রাত,
মুমূর্ষু শালিকের মত
রোঁয়া ফুলিয়ে, অভিমানে
একা একা ফিরে যায় চোরাকুঠুরিতে
ছাতে, মৃদু বেলফুল থাকে
অনির্দিষ্ট হাঁটাহাঁটি
রূপকথার ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীও।
তাদের নিশ্চিন্ত আলাপে
ভরে ওঠে
মাঠ পাহাড়ের ফাঁকে দৃশ্যমান জাগরী জ্যোৎস্না।
এই শীতে, কেউ কি আগুন জ্বালে আর –
প্রতিটা বিকেল, সন্ধে, রাত,
হিম-পন্থী। শেষমেশ,
রাতপাখিদের অক্লান্ত
শূন্য থেকে শূন্যে উড়ে যাওয়া...
(পরবাস-৬৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭)