১৯১৭ সালের রুশ দেশীয় নভেম্বর বিপ্লব বিংশ শতাব্দীর বিশ্ব-ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিক থেকে দ্রুত শিল্পায়ন, নগরায়ন, পেশাদারিত্ব, শিক্ষাবিস্তার, ১৯০৬-এর স্টোলিপিন ভূমি সংস্কার সৃষ্টি করল দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন কিন্তু এই সঙ্গে যথেষ্ট মাত্রায় রাজনৈতিক, আইনি, ও শাসন ব্যবস্থাগত সংস্কার ঘটল না, যদিও ১৯০৫-এর রুশ বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল। রুশ সমাজের টেনশন বহুগুণিত হল ১ম বিশ্বযুদ্ধের চাপে। রাজকীয় সৈন্যদলের ব্যর্থ নেতা এবং তাঁর স্ত্রী ও পরামর্শদাতা রাসপুটিনের কুখ্যাতিতে এরা জনগণের আস্থার অযোগ্য হয়ে ওঠে। ফেব্রুয়ারী বিপ্লব জেগে ওঠে ৮-ই মার্চ থেকে, যখন পেট্রোগ্রাডের মজুররা ধর্মঘটের ডাক দিল তাদের বাঁচার দুরবস্থার প্রতিবাদে। এই বিক্ষুব্ধ মজুরদের সঙ্গে যোগ দেয় সৈন্য ও অন্যস্থানের মজুরেরা। ২য় নিকোলাস রাষ্ট্রীয় ডুমা বাতিল করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়ে পালাল। র্যাডিকাল কাউন্সিল (সোভিয়েত) গড়ে তোলা হল পেট্রোগ্রাডে, ও তারপর অন্য অন্য স্থানে। তাতে প্রাধান্য পাচ্ছিল মজুর ও সৈন্যরা, র্যাডিকাল ইনটেলেকচুয়ালরা আর (পেট্রোগ্রাড-এর বাইরে) কৃষক প্রতিনিধিরা। রাজনীতির ক্ষেত্রে মুখ্যস্থান নিচ্ছিল সমাজতন্ত্রী বিপ্লবীরা এবং মেনশেভিকরা, প্রথমোক্তদের সংহতি ছিল বিপুল মাত্রায়। ইত্যবসরে ডুমা গড়ে তুলল অস্থায়ী সরকার, প্রথমত: পেট্রোগ্রাড সোভিয়েটের প্রশ্রয়ে। কিন্তু প্রিন্স লভভ-এর অধীন নয়া সরকার যুদ্ধ করছিল এবং শেষত: এল অপমানজনক ব্যর্থতা। সৈন্যদলের মধ্যে পলাতক বাড়ল, কৃষকরা জমি আত্মসাৎ করতে লাগল, মজুদ শস্য, স্থানীয় জমিদারদের সম্পদ লুঠ করতে লাগল ১৯১৭-র গ্রীষ্মে। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে জুলাই ১৯১৭-তে কেরেনিস্কি গড়ে তুলল সরকার। কিন্তু কেরেনিস্কি ছিন্নভিন্নতা কাটিয়ে র্যাডিকাল পথ নিতে ব্যর্থ হল, যুদ্ধশেষের পরিস্থিতি এবং ভূমিসংস্কারে জার আমলের অবস্থা বদলাতে বিফল হল। এই পরিস্থিতিতে র্যাডিকাল হাল ধরলেন লেনিন, যিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন শান্তি ও খাদ্যের এবং সোভিয়েট-এর ক্ষমতা প্রয়োগের।
অক্টোবর বিপ্লব জনপ্রিয় র্যাডিকাল মনস্কতার প্রত্যক্ষ ফসল নয়, পেট্রোগ্রাড ও মস্কো সোভিয়েতের বলশেভিক সমর্থন প্রসূত নয়, কেউ কেউ বলেন লেনিনের সাহায্যে ট্রটস্কির সক্রিয়তায় সংঘটিত হল পৃথিবীর প্রথম আধুনিক পরিকল্পিত সফল বিপ্লব, যাতে বলশেভিক শক্তিসমূহ পেট্রোগ্রাডের জরুরী ও সংঘাত-সম্ভব ব্যাপারগুলিতে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারল। যেমন— টেলিগ্রাফ, টেলিফোন অফিস, রেলওয়ে স্টেশন, সংবাদপত্র অফিসগুলোতে, সরকারি অফিস কাছারিতে অধিকার কায়েম করায়। ন্যূনতম শক্তিপ্রয়োগে রাজনৈতিক বিন্যাসকে হঠিয়ে মার্কসীয়-লেনিনীয় আদর্শে এলিট নেতৃত্বে বিপ্লব সম্ভব করা হল।
নারদনিক (Narodnik)-দের মতামতকে মতাদর্শভাবে চূর্ণবিচূর্ণ করেই মার্কসবাদী শ্রমিক-পার্টি গড়ার রাস্তা করা সম্ভব ছিল। উনিশ শতকের নবম দশকে প্লেখানভ ‘শ্রমিক মুক্তি’ সংঘ গড়ে নারদিজম্কে আঘাত দেন, নারদিজমের পরাজয়কে সম্পূর্ণ করেন লেনিন। নারদনিকদের কথা ছিল কৃষকরাই প্রধান বিপ্লবী শক্তি, মজুররা নয়। তারা আশা করত যে একমাত্র কৃষকবিদ্রোহের দ্বারাই জার ও জমিদারদের শাসনকে বিপর্যস্ত করা যাবে। তারা বুঝতে চাইত না শ্রমিকশ্রেণীই সমাজে সবচেয়ে বিপ্লবী, সবচেয়ে অগ্রসর শ্রেণী। তারা মনে করত চাই কয়েকজন উদ্যোগী বীর -- নিষ্ক্রিয় জনতা তাদের কার্যকলাপের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। এদের জন্যই শ্রমিকশ্রেণীর আলাদা দল গড়ে উঠতে দেরী হয়। তাদের মতে রুশদেশে পুঁজিবাদ এক আকস্মিক ব্যাপার, এর কোনো বিকাশ ঘটবে না। লেনিন বললেন জারতন্ত্র, জমিদার ও বুর্জোয়াদের কর্তৃত্ব বরবাদ করার প্রধান হাতিয়ার শ্রমিক-কৃষকের বিপ্লবী ঐক্য। তিনি দেখালেন অর্থনীতিবাদ শ্রমিকশ্রেণী আন্দোলনে বেশি প্রভাব বিস্তার করলে সর্বহারার বিপ্লবী আন্দোলন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিপ্লবের সময় রুশ সোশাল ডেমোক্রেটিক লেবর পার্টির ভেতর বাদানুবাদ চলছিল। বলশেভিকরা চায় সশস্ত্র বিদ্রোহে জারতন্ত্রের উচ্ছেদ, বুর্জোয়াদের কোনঠাসা করা, শ্রমিক একনায়কত্ব। মেনশেভিক (Menshevik)-রা চাইল সংস্কারের ফলে জারতন্ত্রকে উন্নত করা, সর্বহারা নায়কত্বের বদলে লিবারল বুর্জোয়াদের নেতৃত্ব। মেনশেভিকরা গেল আপসের পথে, বলশেভিকরা হল বিপ্লবী শক্তি।
১৯০৫-এর বিপ্লব পরাজিত হবার পর বিপ্লবী আন্দোলন মন্দা হল, বলশেভিকরা কর্মকৌশল বদলে আইনি সুযোগের সদ্ব্যবহার করল। কিছু বুদ্ধিজীবী পার্টি ত্যাগ করল। বলশেভিকরা মার্কসবাদ সমালোচকদের আক্রমণ হঠাল। মেনশেভিকরা ক্রমেই বিপ্লব থেকে দূরে সরে গেল। ১৯১২ জানুয়ারী প্রাগ কনফারেন্সে মেনশেভিকরা পার্টি থেকে বিতাড়িত হল। সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য বলশেভিক দৈনিক সংবাদপত্র এল--‘প্রাভ্দা’। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারী ও মার্চে একাধিক ধর্মঘট ঘটল। সাম্রাজ্যবাদী ব্যূহভেদ, জারকে পর্যুদস্ত করে, শ্রমিক ও সৈনিক সোভিয়েত কায়েম হবার পর বোঝানো হতে লাগল বিপ্লবের পূর্ণ বিজয় তখনও সুদূর পরাহত। ফেব্রুয়ারী বিপ্লবের পর দেশের অস্থির পরিস্থিতিতে পার্টি প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কাজে লাগল, লেনিন পেট্রোগ্রাডে এলেন, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে উত্তরণ সম্বন্ধে পার্টির কর্মনীতি প্রচারিত হল। অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবের যুগ প্রবর্তন করল। অক্টোবর বিপ্লবের পর জমিদার ও পুঁজিদাররা শ্বেতরক্ষী সেনাপতিদের সঙ্গে মিলে সোভিয়েত দেশের বিরুদ্ধে ঐকবদ্ধ সশস্ত্র আক্রমণে সোভিয়েত সরকারকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করল। পিতৃভূমি রক্ষার সংগ্রামে ডাক শ্রমিক ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। গৃহযুদ্ধ ও বিদেশী হস্তক্ষেপের যুগে প্রতিক্রিয়াশীল পার্টিগুলোর চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটল এবং সোভিয়েত রাশিয়ায় কম্যুনিস্ট পার্টি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করল। পুনর্গঠন-যুগের নানা অসুবিধা, ট্রেড ইউনিয়ন সম্বন্ধে পার্টির আলোচনা, নূতন অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ, লেনিনের সমবায় পরিকল্পনা, লেনিনের পীড়ার সুযোগে ট্রটস্কিবাদীদের কর্মতৎপরতা, লেনিনের মৃত্যু (২১ জানুয়ারী, ১৯২৪) প্রভৃতির মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হল একটা যুগ, ক্ষমতায় এলেন স্ট্যালিন (১৯২৭)।
সম্প্রতি এক চমৎকার প্রবন্ধ পড়েছি। তাতে ১৯১৭-র সোভিয়েত বিপ্লবের অবদানের কথা আছে। সেগুলো হল—
১) নতুন আদর্শে উজ্জীবিত এক শিক্ষাদর্শ ও শিক্ষাব্যবস্থা।
২) আধুনিক ক্রীড়ানীতি ও ক্রীড়া ব্যবস্থা
৩) রাষ্ট্রদায়িত্বে উন্নত স্বাস্থ্যনীতি
৪) জাতি সমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার
৫) দরিদ্র, ভিখারী ও বেকারদের সংকটমোচন
৬) নৃত্য নাটক চলচ্চিত্রে বিপুল বৈপ্লবিক পরিবর্তন
৭) বেশ্যাবৃত্তি বিলোপ
৮) যৌথ খামার
৯) ব্যক্তিমালিকানার অবসান
১০) কমিউন প্রথায় চাষ ও কারখানা
১১) নারী স্বাধীনতা
১২) অনাথ, অথর্ব ও পথ-শিশুদের মুক্তি
১৩) নারী ও পুরুষের সমান বেতন
১৪) শ্রমিক-ছাঁটাই বন্ধ
১৫) রাষ্ট্রকে চার্চ বা ধর্ম থেকে পৃথকীকরণ
১৯২০ থেকে, আমেরিকার পরেই, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। খনিজ ও শিল্পজাত পণ্যে তারা বিপুল শক্তিধর। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্প উৎপাদক। বিদ্যুৎ ব্যবহারে দৃষ্টান্তস্থল। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বই ছাপা হত ২৮-কোটি জনসংখ্যার রাশিয়ায়। রাশিয়াই প্রথম মহাকাশে কুকুর ও মানুষ দুই-ই পাঠায়। নদী পরিকল্পনা, বাঁধ-নির্মাণ, সেচ, শস্য বিপণন, শিক্ষাব্যবস্থা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধার যত্ন, শিশুপাঠাগার। ইচ্ছেমত পড়া ও জীবিকা অর্জনের স্বাধীনতা।
লেখকের মন্তব্য — ‘কমিউনিস্ট ইস্তেহার একটা নতুন স্বপ্ন— ১৯১৭-র সোভিয়েত বিপ্লব সেই স্বপ্নসৌধের সার্থক নির্মাণ’। গোর্বাচভ বলেছিলেন— ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি নবীন রাষ্ট্র যার তুলনা ইতিহাসে বা আধুনিক বিশ্বে নেই।’ [১৯১৭: সোভিয়েত বিপ্লব কী দিয়েছিল দুনিয়াকে? ইমানুল হক, আরেক রকম, ১৬-৩০ নভেম্বর ২০১৭]
Alexander Werth বলতে চেয়েছেন অর্থনৈতিক বিকাশ, গৃহসমস্যার সমাধান, জাতীয় মৈত্রী, বিজ্ঞানের অগ্রগতি প্রভৃতি বিস্ময়করভাবে ঘটলেও শিল্প-সাহিত্য বিকাশে ছিল কর্তৃত্বের ভার। তাঁর মতে সোভিয়েত সাহিত্যের স্বর্ণযুগ গেছে বিশের দশকে — বাবেল, জামিয়াতিন, পিলনিয়াক, পাউস্তোভস্কি, এসেনিন, পাস্তেরনাক প্রভৃতি বিকশিত হচ্ছেন। ১৯৩২-তে যখন লেখক সঙ্ঘ গঠিত হল গোর্কির সভাপতিত্বে, তখন ভাবা গিয়েছিল এবার বুঝি সাহিত্য শিল্পে উদার বিকাশ ঘটবে। এর দু বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৩০-এ র্যাপ বা 'রুশ সর্বহারা লেখক সঙ্ঘ' সাহিত্যে ব্যাপক কর্তৃত্ব আরোপ করতে গিয়েছিল। সে-সময়ের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী ‘লেফ্’(Left Front of Art) মিশে গিয়েছিল ‘র্যাপ’(Russian Association of Proletarian Writers)-এর সঙ্গে। কিন্তু ঘটে গেল মায়াকোভ্স্কির আত্মহত্যা (১৯৩০), জামিয়াতিন পীড়ন আবহে অস্বস্তি বোধ করলে স্টালিনের অনুমতি নিয়েই ফ্রান্সে গেলেন। র্যাপ- অভিঘাত তীব্র হয়ে উঠল যখন লেখকদের বাধ্য করা হল শিল্প-প্ল্যান্টে যেতে এবং সর্বহারা লেখকদের প্রাধান্য দেখা গেল। ‘লেফ্’ পরিকল্পনার অবসান, ট্রটস্কির পরাজয় ‘র্যাপ’-কে ধৃষ্টতর ক'রে তুলল। লেখক সঙ্ঘ গড়া হয়েছিল ‘র্যাপ’-কে সংযত করার লক্ষ্যে, সহযোগী লেখকদের আর একবার নীরবতার বাধ্যতা থেকে বাঁচাতে, গোর্কির সদিচ্ছা ছিল এ-ব্যাপারে যথেষ্ট। কিন্তু ঘটনাচক্রে ঘটে গেল অন্যরকম। লেখাকে করা হতে লাগল রাষ্ট্রযন্ত্রের তাঁবেদার। গোর্কির রহস্যময় মৃত্যু ঘটল ১৯৩৬-এ। সাহিত্য অভীপ্সিত হল উপযোগবাদী হিসেবে, রচিত হল শ্রমজীবন-কেন্দ্রিক উপন্যাস, আদর্শ কম্যুনিস্ট-জীবনের আখ্যান। ডের্থ একথা অবশ্য বলেন স্ট্যালিন জমানা শিল্পসাহিত্যে পুরোপুরি বন্ধ্যা ছিল না, মহিলা ঔপন্যাসিকদের লেখা (যেমন--ভেরা পানোভা) তার দৃষ্টান্ত। যদিও ১৯৪৬-এ ঝাদনভের তীব্র আক্রমণ আখমাতোভা, জোশচেঙ্কো, পাস্তেরনাককে রচনা প্রয়াসে বিষণ্ণ ও ত্রস্ত করে তোলে। (Russia — Hopes and Fears — Alexander Werth, Pg. 285 - 288)।
উনিশ শতকের শেষ দুই দশকে ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতে শিল্প এবং শিল্পীর কর্তব্য নতুন করে ভাবার দরকার হয়ে পড়ল। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চিন্তকদের মতো শিল্পীরাও হয়ে উঠছিলেন হয় পার্টিপন্থী অথবা মতাদর্শবন্ধন-চূর্ণপন্থী। বিংশ শতাব্দীর সূচনায় ন্যাচারালিজম ও সিম্বলিজমের ট্র্যাজিক কনটেস্ট-এ মন, হৃদয়, জীবন হয়ে উঠল উদ্বেল। ১৯০৫ বছরটি হয়ে উঠল পুরোনো রাশিয়া এবং নতুন রাশিয়ার বিভাজন রেখা। এই বছরেই যেসব প্রসঙ্গ ছিল বিতর্কিত সেসব আরও তীক্ষ্ণ দ্বন্দ্বসংকুল হয়ে উঠল।
এই ১৯০৫-এই লেনিন বললেন— অর্ধ-পথোত্তীর্ণ বিপ্লবের দিনে সাহিত্যকে হতে হবে পার্টিসাহিত্য। সাহিত্যকে অবশ্যই হতে হবে সর্বহারা-শ্রেণীর অভিন্ন ভাবাদর্শের অংশ, সমগ্র রাজনীতি সচেতন অগ্রবাহিনীর দ্বারা গতি সঞ্চারিত একটি একক বিরাট সোশ্যাল ডেমোক্রাটিক যন্ত্রের নাট ও বল্টু। সাহিত্যকে হতে হবে সংগঠিত, পরিকল্পিত ও সুসংহত সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি কর্মসূচির একটি উপাদান। (পার্টি অর্গানাইজেশন অ্যান্ড পার্টি লিটারেচর) ক্লারা জেটকিনের সঙ্গে কথাবার্তায় লেনিন বললেন— আমাদের সর্বদাই চোখ রাখতে হবে শ্রমিক ও কৃষকদের উপরে। আমাদের শিখতে হবে তাদেরই স্বার্থে ব্যবস্থাপনা করতে, বিচার বিবেচনা করতে। যাতে শিল্প হতে পারে জনগণের আরও ঘনিষ্ঠ এবং হবে সাধারণ শিক্ষাগত ও সংস্কৃতিগত মানের উন্নতি বিধানের জন্য। জনগণের প্রাপ্য সত্যিকারের মহৎ শিল্প। এ কারণেই ব্যাপকতম আয়তনে জনশিক্ষা ও জনপ্রশিক্ষণকে আমরা স্থান দিই সবার আগে। এটাই সৃষ্টি করে সংস্কৃতির ভিত্তি--অবশ্য খাদ্যসমস্যার সমাধান হয়ে যাবার পরে। লেনিনপন্থীরা ক্লাসিককে বর্জনের কথা বলেননি। ছেলেরা যখন মায়াকোভস্কিকে নিয়ে হৈ চৈ করছে তখন লেনিন পুশকিন পড়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
লেনিন টলস্টয় প্রসঙ্গে একাধিক প্রবন্ধ লেখেন। সেগুলিতে তিনি বলেন টলস্টয়ের রচনায় নানা স্ববিরোধ আছে। কিন্তু তিনি রুশ জীবনের অতুলনীয় চিত্রাবলী এঁকেছেন, অন্যদিকে তিনি এক খৃষ্টীয় আবেশে উদভ্রান্ত জমিদার। তাঁর রচনায় মেলে সামাজিক মিথ্যাচার ও কপটতার বিরুদ্ধে আশ্চর্য শক্তিশালী স্পষ্টবাক্ ও অকপট প্রতিবাদ, কিন্তু তিনিই বলেন আমি মন্দ ও দুর্জন, এখন নৈতিক সিদ্ধিলাভের সাধনা করছি। একদিকে পুঁজিবাদী শোষণের নির্মম সমালোচনা, সরকারি অত্যাচার, প্রহসনমূলক বিচারব্যবস্থা ও রাষ্ট্র প্রশাসনের স্বরূপ উদ্ঘাটন এবং ধন ও সভ্যতার অবদান বৃদ্ধি ও শ্রমজীবী জনতার দারিদ্র্য, অধ:পতন ও দুর্দশা বৃদ্ধির কথা, অন্যদিকে বশ্যতা স্বীকারের উন্মত্ত প্রচার। টলস্টয়ের উন্মোচন আসলে তৎকালীন যুগের স্ববিরোধী অবস্থারই উন্মোচন। কৃষকশ্রেণী সম্পর্কিত অভিজ্ঞতায় টলস্টয় জমিদার ও রাজকর্মচারীকে ঘৃণা করার কথা বলেন কিন্তু জানাতে পারেননি কিভাবে কোন পথে এ অবস্থায় উত্তীর্ণ হওয়া যাবে। অপরিণত স্বপ্নালুতা, রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা ব্যক্ত হয়, যা উত্তরণ চিন্তার প্রতিবন্ধক। অন্য লেখায় বলা হয় টলস্টয় যেহেতু ১৮৬১ থেকে ১৯০৪-এর মানুষ তাই বিস্ময়কর তীক্ষ্ণতায় মূর্ত করেন প্রথম রুশ বিপ্লবের বিশেষ চরিত্রলক্ষণগুলিকে--তার বলিষ্ঠতা ও দুর্বলতা দুটোকেই। ব্যক্ত হয়েছে কৃষক গণআন্দোলনের জোর ও দুর্বলতা, শক্তি ও সীমাবদ্ধতা দু-দিকই। অন্য রচনায় পাই টলস্টয় আত্মপ্রত্যয় ও আন্তরিকতা নিয়ে বলিষ্ঠভাবে উত্থাপন করেন আধুনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। সীমাহীন অভিজ্ঞতায় বর্ণনা করেছেন কৃষকজীবন। পরবর্তী রচনায় সুতীব্র সমালোচনায় আক্রান্ত করেছিলেন সমস্ত সমকালীন রাষ্ট্র, গির্জা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে যাদের ভিত্তি ছিল জনসমুদয়ের কৃতদাসত্বের ওপর, দারিদ্রের ওপর, কৃষক ও ক্ষুদে মালিকদের সর্বনাশের ওপর, বলপ্রয়োগ ও কপাটাচারের ওপর। লেভিন (আনা কারনিনা) চরিত্রটির মারফৎ টলস্টয় অত্যন্ত জীবন্ত ভাবে ব্যক্ত করেন রাশিয়ার ইতিহাসের যুগপরিবর্তনের প্রকৃতিকে, যে পরিবর্তন ঘটেছে অর্ধ শতাব্দী জুড়ে। ‘লুসার্ন’ রচনায় তিনি ঘোষণা করেন সভ্যতাকে আশীর্বাদ হিসেবে মান্য করা এক কাল্পনিক ধারণা, যা ধ্বংস করে দেয় মঙ্গল সাধনায় মানবপ্রকৃতিকে সহজাত প্রবৃত্তিগত, সর্বাপেক্ষা সুখকর আদিম প্রয়োজনকে। টলস্টয়বাদ হল একটি প্রাচ্যদেশীয়, এশীয়-ধারার ভাবাদর্শ। তা থেকেই এসেছে ওর কৃচ্ছ্রতাসাধন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ, গভীর নৈরাশ্যবাদ।
স্ট্যালিন সাহিত্য নয়, ভাষা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লেখেন। সেখানে তাঁর বক্তব্য ভাষা উপরিকাঠামো (রাজনৈতিক, আইন, ধর্ম, নন্দন, দার্শনিকমত) থেকে পুরোপুরি আলাদা। উপরিকাঠামো ভিত্তির একটি উৎপন্ন সামগ্রী। ভাব বিনিময়ের উপায় হিসেবে সবসময়ই ছিল এবং এখনো আছে সমাজের একটি অভিন্ন ভাষা--তার সকল সদস্যের মধ্যে সর্বজনীন। উপভাষা ও বুলি ভাষার উপজাত এবং তারই বশবর্তী। ভাষার কোনো শ্রেণীচরিত্র হয় না। একটি সমাজের উদ্ভব ও বিকাশের সঙ্গে ভাষার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। ভাষাবিকাশের নিয়মকে অনুধাবন করা যায় সমাজের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য সংযোগ হিসেবে। শব্দভাণ্ডার নিজে ভাষা নয়, বরং তা হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী।
ম্যাক্সিম গোর্কি সোভিয়েত লেখক সংঘের প্রথম অধিবেশনে (যাতে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতায় সরকারী শিলমোহর পড়ে, তাতে বক্তৃতা দেন ১৭ আগষ্ট, ১৯৩৪-এ) বলেন--ভগবান হল শ্রমসাফল্যের শৈল্পিক রূপ। ...পুঁজিবাদী সংস্কৃতি বুর্জোয়া শরীরী ও নৈতিক নিয়ম-কানুনের প্রসার ও সংহতির প্রণালী ছাড়া আর কিছু নয়, যা মানুষ-মানুষীদের ওপর, ধরিত্রী সম্পদের ওপর, প্রকৃতির শক্তির ওপর খবরদারি চালায়। ... জন্ম নিল সর্বহারা ও তার বৌদ্ধিক বিকাশ। জনগণের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ তখনই সম্ভব যখন হাত শেখায় মাথাকে, মাথা আবার তার নতুন জ্ঞানকে পাঠায় হাতে, সে আবার মগজের আরো বিকাশে ভূমিকা নেয়। আগে বৌদ্ধিক ও কায়িক কাজও ভাবনার সংঘাত বাধত। লোকসাহিত্যেই কিন্তু দেখা যেত শ্রমজীবী মানুষের সবচেয়ে গরীব, আঘাতক্ষম, শিল্পসম্মত নায়ক। লোকসাহিত্যে হতাশার ভূমিকা নেই। বিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় সাহিত্য বন্ধ্যা হয়ে গেছে, ক্রোধ ও বাগাড়ম্বরকে সায় দিয়ে শিল্পীর স্বাধীনতা সোচ্চার। অগভীর ব্যক্তিমানুষ উনিশ-শতকী ইউরোপীয় সাহিত্যের উপজীব্য। পশ্চিমা বুর্জোয়া সাহিত্যে দু ধরনের লেখক দেখা যেত। ট্রলোপ (Anthony Trollope) প্রভৃতির লেখায় মিলত ভালো বুর্জোয়া। আর এক ধরনের হল বিচারী বাস্তবতা ও বিপ্লবী রোমান্টিকতার স্রষ্টা। দ্বিতীয়োক্তদের লেখা আমাদের কাছে জরুরী। তা টেকনিকাল মডেল, তা বুর্জোয়া অবনমনের বিবরণে তথ্যবহুল। বিচারী বাস্তবতাপূর্ণ লেখা সামন্তরক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে সংগ্রামী, এতে পরিচয় মেলে সংগঠিত হতে থাকা গণতন্ত্রের কথার। গোগল, চেকভ বা বুনিনের লেখা এর উদাহরণ। শাসকরা যতই ছিন্নভিন্ন, নায়করা ততই খেলো হয়ে যায়। লোকসাহিত্য না পড়লে মেহনতি মানুষের পরিচয় মেলে না। ১৯০৭ থেকে ১৯১৭-র মধ্যকার রুশ সাহিত্যে সামগ্রিকভাবে লজ্জাজনক মানুষের ভিড়। আমাদের লালন করতে হবে সর্বহারার বিপ্লবী চেতনার। বুঝতে হবে মজুর-শ্রমই গড়ে তোলে সংস্কৃতি ও যাবতীয় অস্ত্যর্থক চেতনা, যে চেতনা দীর্ঘকাল হয়েছিল শ্রমের তাৎপর্য থেকে বিচ্ছিন্ন। মার্কস, লেনিন, স্ট্যালিনের চেতনা মানুষকে সচেতন করছে, জাগাচ্ছে বিপ্লবী চেতনা, অধিকারবোধ, জমি-চেতনা, গড়ে উঠছে বিজ্ঞান ও শিল্প সৃজনের শক্তি। উনিশ-শতকী রুশ সাহিত্যে ছিল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের কথা, যা সমাজ, রাষ্ট্র, প্রকৃতিচ্যুত। আমাদের চারপাশের জীবন শৈল্পিক সাধারণীকরণের কাঁচা মাল জোগান দিচ্ছে। তার ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে নাটক ও উপন্যাস, যা এখনও প্রত্যাশার সামগ্রী। এক্ষেত্রে সাহিত্যে পার্টি নেতৃত্বের দরকার তবে তা হওয়া উচিত সংস্কৃতি-উদাসীনতা মুক্ত। কর্তব্য হবে ব্যক্তির সৃজনকে তার অব্যাহত বিকাশকে সীমাবদ্ধ না রাখা। সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতা ঘোষণা করছে জীবন হল সক্রিয়তাময়, সৃজনের লক্ষ্য হবে ব্যক্তিমানুষের সামর্থ্যকে শৃঙ্খলমুক্ত বিকাশে নিয়ে আসা, ব্যক্তি জয়ী হবে প্রকৃতিশক্তির ওপর, যাতে তার স্বাস্থ্য, দীর্ঘজীবিত্ব, সুখ গড়ে উঠবে, যাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদায় জোগান দিতে মানবসংহতি হাত লাগাবে। সর্বহারা রাষ্ট্র শিক্ষিত করে তুলবে হাজার হাজার প্রথম শ্রেণীর সংস্কৃতির স্রষ্টা, আত্মার ইঞ্জিনিয়ার। এটা দরকার, তাহলে শ্রমজীবী মানুষ তাদের মনকে, প্রতিভা ও সামর্থ্যকে বিকাশিত করতে পারবে যা এতদিন হয়নি। এই দায়ভাগ এসে পড়েছে আমাদের ওপর, লেখকদের ওপর। গোর্কির এই প্রত্যাশা কতদূর পূর্ণ হয়েছিল তা নিয়ে মতদ্বৈধ আছে। কিন্তু তবু গোর্কির এই ভাবনা পুনর্ভাবনার দাবী রাখে।
বিপ্লব-পরবর্তী সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলনের সবচেয়ে বড়ো প্রসঙ্গ সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ। বাস্তববাদ পুরোনো ব্যাপার, তৃতীয় দশকে প্রথম লেখক-কংগ্রেসে বিধিবদ্ধ হল সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদ। ১৯৩৪-এ এই কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়, নেতৃত্ব দেন ম্যাক্সিম গোর্কি। বলা হচ্ছে ১৯৩৪ থেকে সোভিয়েত সাহিত্যে, শিল্পে যা সৃষ্ট হবে তাতে থাকা চাই শ্রমের নায়ক-যোগ্য রূপ এবং শাসক কম্যুনিস্ট পার্টির গৌরবকথা। লেখক শিল্পীদের কাছে চাওয়া হল বাস্তবের বিপ্লবাত্মক বিকাশের সত্যমূলক চিত্রণ এবং সমাজতন্ত্র অভিমুখী জনমানসিকতার আদর্শগত পুনর্নির্মাণ। লেখক হয়ে উঠবে মানব-আত্মার ইঞ্জিনিয়ার, যেকথা স্ট্যালিন প্রায়ই বলতেন। শিল্প সাহায্য করবে সোভিয়েত মানুষের অবস্থান চিহ্নিত করতে। এক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র সৃজনে মানুষের ঐতিহাসিক লড়াইকে বন্দনা করতে হবে। তাছাড়া শিল্পের বিষয়, রচনার পদ্ধতি হবে সর্বহারা মানুষের কাছে প্রাসঙ্গিক ও অনুধাবনযোগ্য। তাতে থাকা চাই প্রতিনিধিত্বমূলক বাস্তবতা এবং জরুরী হওয়া চাই বিষয়-রূপায়ন যেন রাষ্ট্রের সমর্থনযোগ্য হয়ে ওঠে। ১৯৩৪-এর চৌদ্দবছর পর অর্থাৎ ১৯৪৮-এ আন্দ্রেই ঝানভ, যিনি ছিলেন সোভিয়েত সরকারের এক সিনিয়র আমলা, সমাজতান্ত্রিক মতবাদকে আরও ব্যাখ্যা করলেন, আঁটোসাটো করলেন, লোকে বলতে লাগল তা ঝানভবাদ। বিপ্লব-পূর্ব শিল্পকে দেখা হতে লাগল সন্দেহের চোখে, কারণ তা সৃষ্ট বুর্জোয়া রাজত্বে, তৎকালীন মূল্যবোধে, কাজেই তা আর কার্যকরী নয়। ফলে ১৯১৭-র আগেকার শৈল্পিক স্টাইল আর আকাঙ্ক্ষিত থাকল না। যে ফর্ম স্পষ্ট প্রতিনিধিত্বমূলক নয়, যা বিমূর্ত শিল্প, বলা হল সর্বহারাশ্রেণীর মানুষ তা বুঝতে পারবে না। পশ্চিমা আলোচকরা এই কঠোর অনুশাসন পছন্দ করেননি, যদিও শ্রমজীবী মানুষ-কেন্দ্রিক প্রাত্যহিক জীবনের বেশ কিছু শিল্প উদ্ভাবিত হয়েছিল। এইভাবে সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাতত্ত্ব হয়ে ওঠে সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারি সাহিত্য-শিল্প-নীতি। সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থক অন্যান্য দেশেও এই মত চালু হয়ে গেল। আরাগঁ, বেচার, হাসেক, নেরুদা ভিনদেশী এই সব লেখকরা এই সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতা বিকাশে ভূমিকা নেন, বিচারীতত্ত্বে বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন হাঙ্গেরীয় আলোচক মার্কসিস্ট পণ্ডিত গোর্য়গ লুকাচ। মার্গারেট হার্কনেসকে লেখা এঙ্গেলস-এর একটি চিঠিতে ছিল বাস্তবতা মানে অনুপুঙ্খের সত্য, টিপিকাল পরিস্থিতি প্রসূত টিপিকাল চরিত্রসমূহ চিত্রণ। টিপিকালিটির কথা লুকাচের বাস্তবতা-তত্ত্বে গুরুত্ব পেয়েছে। ১৯৩৭-এ তাঁর প্রবন্ধে পূর্বোক্ত সোভিয়েত-তত্ত্ব সমর্থিত হয়। এই তত্ত্বের আলোকে সাহিত্য কিংবা চিত্রকলার বিশ্লেষণ আমরা পরবর্তীকালে পেয়ে থাকি।
সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার সূত্রে এসে যায় বিচারমূলক বাস্তবতার কথা, যা আর পৃষ্ঠপোষকতা পেল না। বিচারমূলক বাস্তবতায় বাস্তবতা উপস্থাপনার সঙ্গে থাকত লেখকের ব্যক্তিগত বিচার, যাতে রাষ্ট্রীয় বা পার্টির কর্তৃত্ব ছিল না। সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতা হল পৃথক। রাষ্ট্র বা পার্টি বা লেখক-সংঘ শিল্প-সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করবে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর সূচনা-পর্বে রুশসাহিত্যের মূল ধারা দুটি--প্রকৃতিবাদ ও বিচারমূলক বাস্তবতা। প্রথমটির লক্ষ্য প্রকৃতিতে যা যেমন আছে তাকে ঠিক তেমনভাবে প্রকাশ করা, কিন্তু দ্বিতীয়টির লক্ষ্য/ উদ্দেশ্য নমুনাধর্মী ঘটনাবর্ণন ও চরিত্রচিত্রণ। যা আধুনিকতাবাদ নামে চিহ্নিত তা সোভিয়েত সাহিত্য-সমালোচকদের অভিধায় অবক্ষয়বাদ রূপে চিহ্নিত। তাই প্রতীকবাদ, অধ্যাত্মবাদ সবই সমাজের অবক্ষয়-প্রকাশী নানা রূপ, যা চলে ১৮৯০ থেকে ১৯০২ পর্যন্ত। অন্যদিকে কলাকৈবল্যবাদীদের অভিযান তীব্র আকার ধারণ করে বস্তুবাদী নন্দনতত্ত্বের বিরুদ্ধে। ১৯০৭ থেকে অবক্ষয়বাদী শিবিরের রচনায় সমাজের প্রতি ঔদাসীন্য, ব্যক্তিগত সুখের আরাধনা, যৌনতা ও নৈরাশ্যবাদের প্রাচুর্য। আর এল রূপক কাহিনী। ১৯১২ থেকে ১৯১৭-র মধ্যে চালু হয়েছিল নয়াবাস্তবতাবাদ যারা জোর দিত আঞ্চলিকতায়, প্রকৃতিতে। ১৯০০ থেকে ১৯১০-এর মধ্যে কবিতাজগতে রুশ প্রতীকবাদের ব্যাপকতা, যার উৎস ভূমি ফ্রান্স। বিশিষ্টতম প্রতীকবাদী কবি ছিলেন আলেক্সান্দ্র ব্লক। ব্লক একসময় বলেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা বলশেভিকদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন এবং করা উচিতও। প্রতীকবাদ যখন অবসিত তখন এল চূড়ান্তবাদ বা Acmesim, যার জন্ম ১৯১২, প্রাধান্য ১৯১৮ পর্যন্ত। এরা সঙ্গীতধর্মী কৌশল বর্জন করলেন, শব্দের যুক্তিসঙ্গত অর্থ এবং যথাযথ ও সুস্পষ্ট চিত্রকল্পের ওপর গুরুত্ব আরোপ করলেন। চূড়ান্তবাদের প্রবক্তা গরদিয়েৎস্কি অক্টোবর বিপ্লবের পর সোভিয়েত কবিতে পরিণত হন। এঁরা প্রকৃতিকে অতীন্দ্রিয়বাদী সাংকেতিকতা থেকে উদ্ধার করে তার স্বাভাবিক বস্তুরূপে ফিরিয়ে আনতে প্রয়াসী।
ভবিষ্যৎবাদী আন্দোলনের উদ্ভব ১৯০৯-তে ইটালিতে। এরা পূর্বজ সমস্ত শৈল্পিক আদর্শকে বাতিল করে, ব্যাকরণের নিয়মও খারিজ হয়, লক্ষ্য বিংশ শতাব্দীর যন্ত্রযুগের গতি ও জঙ্গমতাকে শিল্পে আনা। এল typographic নিরীক্ষা, অর্থহীন ধ্বনি ব্যবহার। রাশিয়াতে, ভবিষ্যৎবাদের দেখা ১৯১২-তে, মায়াকোভস্কি যার অন্যতম প্রবক্তা। এরা যুদ্ধকে মুক্তির দূত হিসেবে গণ্য করে। ভবিষ্যৎবাদ চলে যায় Constructivism-এ। রাশিয়াতে এর চলন ১৯২০-র শুরুতে, চলে ১৯৩০-র মাঝামাঝি পর্যন্ত, যা মোড় নেয় সমাজতান্ত্রিক বাস্তববাদে। এই মতবাদ রোমান্টিক শিল্পের জন্য শিল্পকে বর্জন করে এবং পরিবর্তে জানায় শিল্পের উচিত সামাজিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করা। প্রধানত: এই মতবাদ প্রযোজ্য হয় দৃশ্যগ্রাহ্য শিল্পে। কম্পোসার ডিমিত্রি সস্তাকোভিচকে বলা যেতে পারে এই মতবাদ অনুসারী, যিনি বিপ্লবের সমর্থনে অনেক পোস্টার রচনা করেন। মুখ্য সংগঠনপন্থী শিল্পী ছিলেন এল লিসিটজকি, মায়াকোভস্কি, ভ্লাদিমির তাতলিন, চলচ্চিত্র-নির্মাতা জিগা ভের্তভকে। প্রলেটকাল্ট হল প্রলেটারিয়ান কালচারের সংক্ষিপ্ত শব্দ যা গৃহীত হয় ১৯১৭-তে বগদানভ কর্তৃক এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব এবং জনপ্রিয় শিক্ষাদান প্রকল্প হিসেবে। এঁরা বলতেন যে তাঁরা প্রবর্তন করতে চান এক নব শ্রমজীবী শ্রেণীর সংস্কৃতি যাতে কোনো রকম বুর্জোয়া শিল্প-ঐতিহ্যের সংশ্রব থাকবে না। তাঁরা প্রলেতারীয় লেখকদের রচনা প্রকাশে তৎপর হন।
মিকলাই গুমিলিয়োভ ১৯১৭-র পর খোলাখুলিভাবে বলশেভিক বিরোধিতা শুরু করেন। তাঁর জীবনযাত্রার ধারা, চালচলন ছিল রোমান্টিক নায়কোচিত। অস্তিত্বের রহস্যসন্ধানে ব্যাকুল তিনি। আভিজাত্য ও বাবুয়ানির গণ্ডি ছাড়তে পারেননি বলে তাঁর পতন ঘটে। তিনি ছিলেন আদমবাদী, বলতেন--আমরা সকলেই কিছু পরিমাণে বন্যপন্থী তবে রচনায় পশুভাব প্রকাশ করেননি। সুস্থ সভ্যতার সন্ধানে যান দূরযাত্রায়। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক ও শেষ দিকে বন্ধুভাবাপন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক। ম্যান্ডেলস্টাম (Mandelshtam) প্রথমে ছিলেন প্রতীকবাদী, নিখুঁত ক্লাসিকপন্থী। পরে একজন চূড়ান্তপন্থী হিসেবে জগৎ ও জীবনের সমস্ত ধ্বনি-প্রতিধ্বনি ও বৈপরীত্য স্বীকারকারী। যখন সমাজতন্ত্র গঠনের কাজ শুরু হল তখন তাতে নিজের স্থান খুঁজতে থাকেন। কিন্তু নিজেকে মনে হয় সময়ের উপেক্ষিত সপত্নীসন্তান। ত্রিশের দশকে ব্যক্তিপূজার বিরোধী তিনি। চূড়ান্তবাদী ধারার বিশিষ্টতম কবি আখমাতোভা। ১৯৪৬-এ সরকারি মহল থেকে তাঁকে অবক্ষয়বাদী সুর প্রচারে অভিযুক্ত করা হয় যদিও ২য় বিশ্বযুদ্ধে দেশাত্মবোধক কবিতা লিখেছেন। আখমাতোভা ও সমকালীন অনেক কবি সেন্সরের দৌরাত্ম্যে অনুবাদকর্মে মনোযোগী হন। আখমাতোভার দেশাত্মবোধক কবিতাগুলি তাঁর স্বাচ্ছন্দ্যগামী প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে।
বিশের দশকের সূচনায় পেত্রোগ্রাদে ‘সেরাপিয়োন ব্রাদার্স’ নামে এক লেখক সমিতি গড়ে যারা মতাদর্শের ওপর শিল্পের প্রাধান্য দাবি করে। কথাসাহিত্যিক ফেদিন টলস্টয়ী আদর্শে এপিক উপন্যাস রচনায় ব্রতী হন। লেখকের উদ্দেশ্য টিপিক্যাল চরিত্র ও ব্যক্তিমানুষের ভাগ্যচিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে সোভিয়েত শাসনক্ষমতা বিকাশের চিত্র তুলে ধরা। অস্ত্রোভস্কি ‘ইস্পাত’ উপন্যাস মারফত সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার স্বাক্ষর রাখলেন। ফুরমান 'চাপায়েভ' উপন্যাসে গৃহযুদ্ধের দলিল-চিত্র রচনা করলেন। অন্যদিকে বাবেল্ ফিরে গেলেন প্রকৃতিবাদী ধারায়। গৃহযুদ্ধের বিষয় নিয়ে ফাদেইয়েভ রচনা করেন ‘ছত্রভঙ্গ’। বিপ্লব ও গৃহযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ ক্লাসিক রচয়িতা শোলকভ। কসাক জীবন, গৃহযুদ্ধ, সোভিয়েত ইতিহাসের আরও দুটি গৌরবময় অধ্যায় শিল্পিত হয় তাঁর গল্পে, উপন্যাসে। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিংশতি পার্টি কংগ্রেসের পর প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা, স্তালিন-বিরোধিতার পুরোধা হলেও এরেনবুর্গ ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন। অবরুদ্ধ প্যারিসে থাকার অভিজ্ঞতাকে শিল্পরূপ দেন, রুশ নবযুগের কিছু বৈশিষ্ট্যও তুলে ধরেন। পাউস্তোভস্কি সাহিত্যে উদারনীতির পক্ষপাতী, মানুষ ও প্রকৃতির যা কিছু ভালো তার কথা বলেন। লেয়োনভ তাঁর ‘রুশ বনভূমি’ উপন্যাসে অর্ধশতাব্দীর রাশিয়ান বনভূমির জীবন, নানা নৈতিক ও সামাজিক সংঘাতের কথা বলেন। সোভিয়েত জনগণের অপরাজেয় মনোবল ও বীরত্বপূর্ণ কীর্তির গাথা গ্রোস্মানের এপিক উপন্যাসে, ফ্যাসিবিরোধী বিষয়বস্তু ও মানবিক সুর তাঁর ছোটগল্পে।
রুশ সাহিত্যে ইমেজিস্ট নয়, ইমাজিনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা এসেনিন, যিনি বলেন--১৯১৯ সালে আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে মিলে ইমাজিনেজিমের ইস্তাহার প্রকাশ করি। তবে তা ছিল ১৯১৯ থেকে ১৯২৩ পর্বে। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু সে বিপ্লবের সামগ্রিক তাৎপর্য তিনি বুঝতে পারেননি। এর পরের মুখ্য ধারা ভবিষ্যৎবাদের, যার তাত্ত্বিক খলেবনিকভ, বুর্ল্যুক, ক্রুচোনিখ। মায়াকভস্কি এই ধারার অন্তর্গত। সোভিয়েত লেখক সংঘ প্রতিষ্ঠিত হবার পর ১৯৩৫ সাল থেকে মায়াকোভস্কিকে মহিমান্বিত করার কাজ নতুন উদ্যমে শুরু হয়। পাস্তেরনাক তৎকালীন কাব্যের বেশ কয়েকটি ধারার সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও বিশেষ কোনো গোষ্ঠীভুক্ত ছিলেন না। এক সময় লেনিনের কন্ঠস্বরকে ইতিহাসের কন্ঠস্বর বলে কবির মনে হয়েছিল।
১৯২৩ সালে ভবিষ্যৎবাদ যখন তুঙ্গে তখন এর ফলক উঠিয়ে দিয়ে স্থাপন করা হয় 'লেফ্' বা বামপন্থী শিল্পফ্রন্ট। এবার বিপ্লবী পরীক্ষা-নিরীক্ষার বদলে এল সংগঠন, শৃঙ্খলা, পার্টির আদর্শ ও নীতির নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ। ইতিমধ্যে লেফ-এর বিরুদ্ধে প্রলেতারীয় লেখকগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটল, সরকারি আমলাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সাহিত্যজগতে তারাই হয়ে উঠল কর্তা। এ হল প্রলেটকালটের যুগ, তার নানা শাখা প্রশাখা গড়ে ওঠে, শিল্প কর্মশালা গড়ে তোলা হয় প্রায় কুড়িটি। ১৯২৫-এ জন্ম নিল ‘র্যাপ’ বা রুশ প্রলেতারীয় লেখক সমিতি। এদের পরিচালকদের অন্যতম হলেন আভেরবাখ, রাজনৈতিক পুলিশ দপ্তরের প্রধান য়াগোদার শ্যালক। এ এক সন্ত্রাসের কাল। যে-সব কবি বা লেখক ভাববাদ বা আঙ্গিক-সর্বস্বতার দোষে দুষ্ট তারা চাপে পড়ে হয় চুপ করে গেল অথবা নতুন সরকারি তত্ত্ব গ্রহণে বাধ্য হল। এ সময়ই আখ্যানকাব্যের ধারা পুনরুদ্ধার বা পুন:প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা নিলেন ত্ভার্দোভ্স্কি। শিশুসাহিত্যের নতুন বিকাশ ঘটল কবিতার ক্ষেত্রে চুকোভস্কি, মার্লাক, মিখাল্কোভ-এর হাতে।
প্রচারধর্মী সোভিয়েত নাটকের সূচনা মায়াকোভস্কির হাতে। এছাড়া ছিলেন ভিশ্নিয়েভস্কি, বেলত্সের্কোভস্কি, কির্শোন, লাভেনিয়োভ্। বিপ্লব ও তার পরিণতি দুই দশকেরও বেশি সোভিয়েত নাটকের মুখ্য বিষয়। নাট্যকাররা সবাই নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা, মানবজীবন পুনর্গঠনক্রমের সক্রিয় অংশীদার। বুলগাকরের নাটক ও প্রহসন ছিল ব্যতিক্রমী। সরকারি উপেক্ষা, অবজ্ঞা, নিন্দা, নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাঁর ‘তুর্বিন’ এর অভিনয় চলেছে, স্টালিন একাধিকবার রঙ্গালয়ে এর অনুষ্ঠান দেখেন। কিছু ‘দলিলনাট্য’-ও রচিত হয়। লোককথা-নির্ভর রূপকথাধর্মী নাটক রচনার জন্য শ্ভার্ত্স খ্যাত, যাতে রাজনৈতিক ও দার্শনিক বিষয় ঈশপীয় ভঙ্গিতে পরিবেশিত।
বিপ্লবোত্তর রাশিয়ার সাহিত্যপ্রসঙ্গের সদর্থক ও নঞর্থক দিকের কিছু কিছু কথা বললাম। কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে তুলনায় আধুনিক কালের রুশ কথাসাহিত্যিক সোলঝেনিৎসিন, যাঁর শতবর্ষ সমাগত। তাঁর One day in the Life of Ivan Denisovich (১৯৬২) আমাদের মনোহরণ করেছিল বিষয়বস্তুর গুণে, শিল্পকুশলতাতেও বটে। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে একটি দিনের বর্ণনা-নির্ভর অনবদ্য এই উপন্যাস। The First Circle এবং The Cancer Ward (১৯৬৮) বা The Gulag Archipelago (১৯৭৩) উপন্যাসগুলি চাঞ্চল্য জাগায়। স্টালিন আমলের নিপীড়ন মুখ্য হয়ে ওঠায় বামপন্থীরা এসব বই পড়তে চায় নি এবং বামপন্থা বিরোধীরা খুব পছন্দ করেছে। তবে এ-সব উপন্যাসের শিল্পগুণ, মহাকাব্যিক ঝোঁক অস্বীকার করাটা মূঢ়তা হবে। সোলঝেনিৎসিনের পর খুব বড়ো মাপের রুশ কথাসাহিত্যিকের নাম আমি অন্তত: জানি না। ইভ্তেশুঙ্কো বা ভোজনেস্নেসকির পর বড়ো মাপের রুশ কবি আর কে আছেন সেটাও আমি জানি না। আসলে সাম্প্রতিক রুশ-সাহিত্যের নির্ভরযোগ্য সংকলন এখানে আসে কম। প্রতিভার আলো-কে চাপা দেওয়া অসম্ভব। সেরকম প্রতিভার আলো কি গত কয়েক দশকে এসেছে? বলতে পারবো না। সব ত্রুটি ও সাফল্য নিয়ে আমরা আজ যখন বিচার করতে বসি তখন এই একটি দেশের সংস্কৃতি থেকে, রাজনীতির থেকে তো বটেই, অনেক ভুল ও সাফল্যের থেকে শিক্ষা নেবার আছে। অন্য দেশের আঙিনায় বসে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হয় এবং মনে হয় সব ক্ষেত্রে সে পথেই ক্রমমুক্তি ঘটতে থাকে।
(পরবাস-৬৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭)