Parabaas Moviestore




Parabaas Musicstore




Subscribe to Magazines






পরবাসে
যশোধরা রায়চৌধুরীর

লেখা

বই




ISSN 1563-8685




হাহুতাশ বেড়ে ওঠে শুধু


উইল চেয়ারে বসা অশক্ত নড়বড়ে শরীর। মাথা ঝুঁকে পড়েছে খাবারের ওপর। এক হাতে ঘাড় ধরে থেকে অন্য হাতে মাখা ভাত খাইয়ে দিতে দিতে সে ভাবে, একবার পুরী যাব আবার।

ওগো সেরে ওঠো তুমি। পুরী যাব আরেকবার। যাবেনা, যাবেনা?

গোঁ গোঁ আওয়াজে ভ্রম হয় উনি বলছেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ।

ও অণিমা, জলের গেলাস ভরে এগিয়ে দাও।



সে বারান্দায় অনেক সময় কাটায়। কাপড় তোলে, ভাঁজ করে। শুকনো কাপড়ের গন্ধ তার ভাল লাগে। সাবান গুঁড়োর গন্ধে মুক্তি মুক্তি লাগে। অনেক সময় ধরে রোদের ট্যারচা অ্যাঙ্গল দেখে দেখে সে কাপড় সরিয়ে সরিয়ে দেয়। এদিক থেকে ওদিক, আধা শুকনো কাপড় উল্টে দেয়। কোণায় কোণায় লাগুক সূর্যের উষ্ণ করস্পর্শ। কোন একটি সেলাইয়ের সুতো, দুপরত কাপড়ের ভেতরের ভাঁজ যেন বঞ্চিত না থাকে আলো থেকে , ওম থেকে, যেভাবে পাখিমা তা দেয় তার সাদাসাদা ডিমগুলিতে সেভাবেই কাঁথাগুলোকে বড় মমতায় উষুম রোদের কুসুম গরমে চোবাতে ইচ্ছে হয়।

অশীতিপরের পেচ্ছাপে ভেজা কাঁথা যেন সদ্যোজাত সন্তানের । জীবন এক বৃত্ত। সূর্য এক গোলাকার স্নেহপিন্ড। মাঝে মাঝে স্নেহ আড়াল হয় মেঘের শীতলতায়। সে বড় কঠোর সময় অশক্ত বৃদ্ধের বারান্দার জন্য।

বারান্দার পাখাটা ছেড়ে দিও ও অণিমা …



মৃত স্বামীর গত পাঁচ, দশ, বছরের, কত কত দিন ঘন্টা মিনিটের অক্ষমতা। রাত জাগা আর পেচ্ছাপের কাঁথা কাচা। সব ইতিহাস মুছে গেছে।

রয়ে গেছে পান চাওয়া ভাত খেয়ে। জল এগিয়ে দেওয়া। আপিস যাবার আগে সাজিয়ে রাখা জোড়া জোড়া সাদা পাঞ্জাবি ধুতি আন্ডার ওয়ার, বিছানার ওপর।

রয়ে গেছে সুন্দর বলিষ্ঠ কর্মঠ । রয়ে গেছে টেবিলের কাঠে কালির ছোপ। ওইখানে উল্টে গেছিল চেলপার্কের বোতল। এভাবেই বাকি জীবন কেটে যাবে। ওঁর তৈরি করা বাড়ি। ওঁর নিজের হাতের পোঁতা ক্যাকটাস। বড় বাজার ঢুঁড়ে নিয়ে আসা আলোর ফিটিং, সেলাইকল বয়ে নিয়ে রিকশায় তোলার স্মৃতি।

আলমারির কোণে ধুতিপাঞ্জাবি জমে থাকা এখন । ও অণিমা তুমি দুটো লেপের ওয়াড় সেলাই করে দিও। সেলাইকলে তেল দিতে হবে। বহুদিন চলেনি। কে আর এখন নিয়ে যাবে সার্ভিসিং।



(পরবাস-৭২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮)