২৬ অক্টোবর; ২০১৮
বিকেল ৫.৫০- রাজধানীতে চড়ে চলেছি রাজধানীতে। স্বামী স্ত্রী দুজনেরই উদ্দেশ্য সাধু — গঢ়ওয়াল ভ্রমণ।
সন্ধ্যা ৭টা- আসানীতে আসানসোল।
সন্ধ্যা ৭.৫৭- ধানবাদ। হবেই তো — রুটিখোরদের দেশ তো।
রাত ৮.৩৪- পারসনাথের আশীর্বাদ নিয়ে শুতে চললাম।
২৭ অক্টোবর; ২০১৮
সকাল ১০.৩৪- সাহিবাবাদে নির্বিবাদে তিন মিনিটের বিরতি।
সকাল ১১.১১- নয়া দিল্লী। এখন পৌনে চারঘন্টা স্টেশনবাস।
বেলা ৩.২০- হরিদ্বারগামী জনশতাব্দী জনতা নিয়ে রওনা দিল।
বেলা ৪.০৬- গাজিয়াবাদ জং।
সন্ধ্যা ৬.৪১- টপরী জং।
সন্ধ্যা ৭.৪৯- হরিদ্বার। গঢ়ওয়ালের প্রবেশদ্বার।
রাত ৮.১০- রাহী মোটেলের কোলে।
২৮ অক্টোবর, ২০১৮
সকাল ৯.৫০- রাহী-র আশ্রয় ছেড়ে মসুরীর রাহী হলাম দু-জনে মনোজের জিম্মায়।
সকাল ১১টা- রমেশ কোঠিয়ালের ভরসা নিয়ে আমরা আবার যাত্রী।
সকাল ১১.৯৫- সাত বাঁকের ‘সাত মোড়’।
সকাল ১১.৪০- রাণীপোখরি। কোথায় বা রাণী, কোথায় বা পুকুর!
দুপুর ১২.১৫- রায়পুর ভরদুপুর।
দুপুর ১২.৪১- দেহরাদুন।
দুপুর ১.০৫- পাতা। এমনও নাম হয় নাকি! যা তা।
বেলা ২.১৫- গঢ়ওয়াল টেরাসের বাসায়। গাছপালায় মোড়া মসুরী মনোহর।
বিকেল ৪.১৫- রিকশা করে লাইব্রেরি চৌক। ছোট্ট চৌরাস্তা গাড়িতে মানুষে গমগমে। কাণ্ড দেখে মহাত্মা গান্ধী স্তব্ধ।
ঘোর সন্ধ্যা ৬.১৫- সাঁঝবাতির মসুরী চোখের আরাম।
২৯ অক্টোবর; ২০১৮
সকাল ১০.২৫- লাইব্রেরী চৌকে মনোজের কাছে নিজেদের সঁপে দিলাম।
সকাল ১১.০৫- তুষারশৃঙ্গের ছবি চোখে মেখে পেরোলাম অতিবিখ্যাত কেম্পটি ফল্স্।
সকাল ১১.৩৮- যমুনাপুলে যমুনাপার।
ভরদুপুর- নয়নবাগ।
দুপুর ১২.৪১- মরোড়।
বেলা ১.৩৭- নওগাঁও। পাহাড়ী নবগ্রাম।
বেলা ১.৪৯- তুনাল্কা। তুনাল কা ক্যায়া?
বেলা ২.০৮- বড়কোট। কোট বড় হওয়াই তো ভাল। বন্দরপুঞ্জের উঁকিঝুঁকি। যমুনোত্রীর পথের হাতছানি এড়িয়ে ডাইনে বাঁক।
বেলা ২.৩৫- ওরছা বেন্ড।
বেলা ২.৪৯- রাঢ়ী টপ (২২২০ মি.)। বাব্বাঃ, এখানেও রাঢ়ী!
বেলা ২.৫২- ২২২০ মিটারে বৌখনাগের ছোট্ট মন্দিরের পাশে ছোট্ট দোকানে ম্যাগির লাঞ্চ — অনবদ্য। নিস্তব্ধতা আর তিনটে আদরখেকো কুকুর আমাদের লাঞ্চের সাক্ষী রইল।
বিকেল ৪.০৮- সবুজমাখা পথ ধরে চলে এলাম ব্রহ্মখাল।
বিকেল ৪.৩২- ধরাসু বেন্ড-য়ে এসে পড়লাম হরিদ্বার থেকে গঙ্গোত্রী ছুটে যাওয়া রাস্তায়। যমুনাকে ছেড়ে এবার ভাগীরথীর সঙ্গ ধরলাম। উন্নয়নের ধাক্কায় পথ আটক। চারধামে যাবার জন্য চার লেনের রাস্তা তৈরি হচ্ছে প্রকৃতির আদ্যশ্রাদ্ধ করে।
বিকেল ৪.৫৫- অনড় গাড়ির সারি নড়তে শুরু করেছে। হেমন্তের রঙে রঙীন প্রকৃতি।
বিকেল ৫.০৬- ডন্ডাগাঁও। আবার ডান্ডা কেন বাবা!
বিকেল ৫.১৯- মাতলী। ইন্দ্রের সারথি এখানে! হতেও পারে; স্বর্গ তো খুব একটা দূর নয়।
শেষ বিকেল ৬.০৬- উত্তরকাশী — উওরের কাশী — শিবের আবাস। ভিড়ে ভিড়াক্কার। সেই ভিড় পেরিয়ে ভাগীরথীর তীরে জি.এম.ভি.এন-য়ের ভাগীরথীর বুকে আশ্রয় নিলাম।
৩০ অক্টোবর; ২০১৮
সকাল ৬টা- শীতের সুড়সুড়ি দিব্যি টের পাচ্ছি। দরজা খুলতেই সাজানো বাগানে সহাস্য আহ্বান জানালো।
সকাল ১০.১০- সকালের রোদ গায়ে মেখে কাশীশ্বরকে দর্শন। মন্দির এখন বড্ড আধুনিক, ঝকঝকে।
সকাল ১০.৪০- ভাগীরথী লঙ্ঘন করে নেতালায় আসি (বা অসসি) গঙ্গার পারে।
সকাল ১১.০৬- মনেরি বাঁধ। বাধা পেয়ে ভাগীরথী এখানে নিস্তরঙ্গ সবুজ সরোবর।
সকাল ১১.৩৬- ভটওয়াড়ি। চট করে চা-টা।
দুপুর ১২.৫০- লোহারিনাগ। বাঁ দিকে ভাগীরথীর ওপারে বন্দরপুঞ্জের নজরদারি।
দপুর ১.০২- পালা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
দুপুর ১.৪৫- সেনানিবাস পার করে হরশিল (২৬২০মি)। হলুদ-সবুজ-কমলার ছড়াছড়ি।
দুপুর ২টো- ৮০০মি: সৌন্দর্যমাখা হাঁটাপথ পেরিয়ে জি.এম.ভি.এন-এর ভাগীরথীর কোলঘেঁষা টুরিস্ট রেস্ট হাউসে।
বিকেল ৪.০৪- ভাগীরথীর ধারে বসে চা — একেই বলে বাঁচা। চতুর্দিকে সবুজে সৈনিকের দল পাহারায় খাড়া পাহাড়ের গায়ে; পান্না সবুজ ভাগীরথী নুড়িপাথরের বিস্তার ভিজিয়ে আপনমনে পাগলপারা; বন্দরপুঞ্জের দিক থেকে শীতল সমীরণ এসে শিহরণ জাগাচ্ছে; নদীর কলস্বর আর পাখিদের কলতান ছাড়া চরাচর নিস্তব্ধ — স্বর্গ কি অন্যরকম কিছু?
সন্ধ্যা ৬.১৬- পশ্চিম আকাশের মেঘগুলোকে রাঙিয়ে দিনপতি বিশ্রামে গেলেন।
৩১ অক্টোবর; ২০১৮
সকাল ৬.১৬- বন্দরপুঞ্জ সোনালী সাজ দেখিয়ে সাদা আচকানটা চাপিয়ে নিল।
সকাল ৯.০৭- গঙ্গোত্রী ভ্রমণের সূত্রপাত, নাকি চক্রপাত — মানে, গাড়ির চাকা গড়ানো।
সকাল ৯.০৭- রূপসী ধরালী বেন্ড। তুষারমণ্ডিত মহাজনদের নজরদারিতে ভাগীরথীর বাঁকের গয়না পরে ছবির মত জনপদ ধরালী।
সকাল ৯.৩৪- লঙ্কা। শীতল সকালে একেবারেই ঝালহীন সৌন্দর্য। একদা এখান থেকেই খাড়া উৎরাই নেমে নদী পেরিয়ে ততোধিক খাড়া চড়াই চড়তে হতো ভৈরোঁঘাটীর পথে। এখন গাড়ির গদিতে হেলান দিয়ে পাকা পুলে পেরিয়ে এলাম।
সকাল ৯.৫০- ভৈরোঁঘাটী। গঙ্গোত্রী মন্দিরে যাওয়ার পুণ্যার্থীদের এখানে ভৈরবের কাছে অনুমতি নিয়ে তবে এগোতে হয়। অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা এই ২৮৫০ মি. উঁচু ভৈরোঁঘাটীতে।
সকাল ১০.১০- গঙ্গোত্রী-র দোরগোড়ায়। সুদর্শনের নজরদারি সত্ত্বেও কংক্রীটের জঙ্গল তার বিস্তার অব্যাহত রেখেছে। মদিরে যাওয়ার পথের ধারে লজ-দোকানের সারি বেড়েছে আরও ২০০ মিটার।
সকাল ১০.২৩- বহুকষ্টে আসা গেল পুরোনো ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে। মন্দির এখনও বহু দূর।
সকাল ১০.২৮- স্থানীয় একজনের অনুরোধে একজন মোটরবাইকের পিছনে বসিয়ে আমার বেটার-হাফকে বেস্ট জায়গায়, মানে মন্দিরের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিল।
সকাল ১০.৩৩- ৩০৫০মি: উঁচু গঙ্গোত্রীতে গঙ্গামন্দিরের আমনে স্ত্রীকে বসিয়ে চললাম পুজোর যোগাড়ে।
সকাল ১১টা- পুজো শেষ হতে পূজারী খুশ, স্ত্রী খুশ, সুদর্শন আর মাতৃশিখর খুশ, ভাগীরথী খুশ, মা গঙ্গাও খুশ। সব দেখে আমিও খুশ। শুধু গোমুখের পথ, আমি সে পথে পা না বাড়ানোয় না-খুশ।
সকাল ১১.০৮- হুইলচেয়ার ঠেলে একজন নেপালী মানুষের আবির্ভাব দেবদূতের মতো।
বেলা ২.১২- হরশিলে প্রত্যাবর্তন।
সন্ধ্যা ৬.১৬- আবার ভাগীরথীর নাচ আর পাখির গানে মনপ্রাণ ভরিয়ে শেষবেলার আলোর ইন্দ্রজাল দেখে শীতের ধাক্কায় ঘরবন্দি হলাম।
০১ নভেম্বর; ২০১৮
সকাল ৯.৩৭- হরশিলের বাংলোকে শেষবারের মতো পিছন ফিরে দেখা।
সকাল ৮.১২- বিদায় হরশিল। আজ রুদ্রপ্রয়াগ।
সকাল ৯.২০- গাঙ্গনানী ঊষ্ণ প্রস্রবণের ধারে বসে ঊষ্ণ চা চাপানো।
সকাল ১০.২৭- লাটাসেরা। সেরা লাট!
সকাল ১১টা- উত্তরকাশী। তার ডাকের উত্তর না দিয়েই দিলাম ছুট।
সকাল ১১.৪৭- জঙ্গল মেখে পাক খেতে খেতে উঠে এলাম চৌরঙ্গী খাল। বাবা চৌরঙ্গীনাথের মন্দিরকে সাক্ষী রেখে চামৃত চাখা। সাক্ষী গোটা বারো মানুষ, গোটা চারেক চারপেয়ে আর বেশ কিছু গান-গাওয়া ডানাওয়ালারা।
দুপুর ১২.৩৬- ভরদুপুরে চাকা গড়িয়ে ধৌতরী। এ কেমন তরী, যার না আছে হাল, না আছে পাল!
দুপুর ১২.৪৪- কেডার পার।
দুপুর ১২.৪৫- ধনোট-এর নামটা নোট করলাম।
দুপুর ১২.৫৭- বড়েথ পেরিয়েই রাতলধার। এখানে রাত কাটালে কি ধার পাওয়া যায়?
দুপুর ১২.৫৯- গড়থাতী। গড় থা? কাঁহা?
বেলা ১.১৫- সেমধার। কত বছর ধরে সেম ধার?
বেলা ১.২৬- ভদুরা। ভদুরা কী করছে?
বেলা ১.৫৫- জসপুর। আর কদ্দুর?
বেলা ১.৫৯- দল্লা। দালালের দেশ নাকি?
বেলা ২.০৪- চঙ্গোরা বেন্ড। বাঁক ঘুরে বুঝলাম নেমে এসেছি অনেকটা (১৪৯০মি: )।
বেলা ২.১৩- নাগেশ্বর সৌড়।
বেলা ২.১৫- দেবলেশ্বর। এ যে শিবের দেশ, বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে।
বেলা ২.২৪- পুল পেরোতেই বাঁদিকে উঁকি দিয়ে গেল বুড়াকেদারের পথ।
বেলা ২.৩০- আলা রে আলা চমিয়ালা। আবার ছোট্ট পুল পেরোনো।
বেলা ২.৪৮- ঘনসালী। ঘন শালী!!
বেলা ২.৫৬- উদরপূর্তির বিরাম। আহ্, কী আরাম!
বেলা ৪.২৫- প্রায় একটি ঘন্টা ধরে ‘খাওয়া’র পর উড়ে এলাম ওড়াধার।
বেলা ৪.৪৪- চিরবাটিয়া। চিরকালের বাড়ি!
বেলা ৪.৪৯- বুড়না। থামব না ভেবেও থমকাতে হলো। আকাশজুড়ে শ্বেতদেবতাদের হাসি।
বেলা ৪.৫৫- দুগড্ডা। তেমন কোন গাড্ডা তো চোখে পড়ছে না!
বিকেল ৫.২০- ময়ালী। ময়াল কেন, বেতআছড়াও চোখে পড়ল না।
বিকেল ৫.৩৭- চলি গো বৈনোলী।
বিকেল ৫.৪২- তুনেটা। নাকি তু নেতা!
বিকেল ৫.৫৫- তিলওয়াড়া।
সন্ধ্যা ৬.১৫- রুদ্রপ্রয়াগে জি.এম.ভি.এন-এর রুদ্র কমপ্লেক্সে। ঘর থেকেই আঁধারমাখা সঙ্গমের কলতানে ভরে যাচ্ছে প্রাণ!
০২ নভেম্বর; ২০১৮
সকাল ৯.৪০- রুদ্রপ্রয়াগ ছেড়ে আউলি-র উদ্দেশে চক্রক্ষেপ অলকানন্দার উজানে।
সকাল ৯.৫৪- রতুড়া। গাড়ির তেল ভোজন।
সকাল ১০.০৫- নগরাসু। নাগরাজুতো?
সকাল ১০.২৪- গৌচর। গৌ-য়ের থেকে মনুষ্য আর গাড়ি চরছে বেশি।
সকাল ১০.৪০- কর্ণপ্রয়াগ। কর্ণপ্রয়াগ বা পিন্ডারগঙ্গা এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অলকানন্দার বুকে।
সকাল ১০.৫৫- কালেশ্বর।
সকাল ১১.০১- লঙ্গাসু। লম্বা জুতো!!
সকাল ১১.১৩- উন্ননয়ের জ্যাম। পথ প্রসারিত হচ্ছে গাড়ির গতি বাড়াতে, তাই গতি স্তব্ধ।
সকাল ১১.৩৮- জ্যামমুক্তি।
সকাল ১১.৫১- নন্দপ্রয়াগ দর্শনে আনন্দলাভ।
সকাল ১১.৫৮- পুড়মাড়ি। এ আবার কেমন নাম — পুড়িয়ে মারি!!
দুপুর ১২.১৫- চমোলি। ওপারে চোপতা উখীমঠের পথের হাতছানি।
দুপুর ১২.৩৮- বিরেহী গঙ্গার পারে বিরেহী। এমন শান্ত জায়গায় বোধহয় বিরহও শান্ত হয়।
দুপুর ১২.৫৫- পীপলকৌঠী। জনসাধারণের বাংলো! হবেও বা।
বেলা ১.০৮- গড়ুরগঙ্গা পেরোলাম উড়ে।
বেলা ১.৩১- হেলং। কল্পেশ্বরের সিংহদ্বার।
বেলা ১.৫৮- পুরো জোশ নিয়ে জোশীমঠের কেবল-কার স্টেশনে।
বেলা ২.২০- কেবল-কারের কার্যক্রম শুরু। তারে ঝুলে পড়সন টপের উদ্দেশে উড়ান।
বেলা ২.২৮- জোশীমঠ এখন ঝুলনের শহর। পায়ের নিচে দ্রুত সরে যাচ্ছে অরণ্য।
বেলা ২.৪০- গড়সন টপ (১০০০০ফুট )।
বেলা ২.৫০- টেবল টপে দাঁড়িয়ে নন্দাদেবীর সঙ্গে আলাপপর্ব চলছে।
বেলা ৩.১২- নন্দাদেবীকে সাক্ষী রেখে কফি আর পকোড়ার উদ্ধারপর্বে মনোনিবেশ করা গেল।
বেলা ৩.২১- দ্রোণাগিরি মাঝেমধ্যে উঁকি দিলেও বাকিরা লাজুকের হদ্দ।
বেলা ৩.৩৫- এবার মর্ত্যে নামার পালা।
বেলা ৩.৩৫- মর্ত্যাগমন।
বিকেল ৪.১৮- লাঞ্চে উদ্ধারকর্তা একমাত্র ম্যাগী। নেইমামার চেয়ে কানামামা ভালো।
শেষ বিকেল ৫.১২- আলি রে আলি — আউলি স্কী রিসির্ট আলি!
সন্ধ্যা ৬.০৬- নিস্তব্ধ চরাচরের মাঝে রাজকীয় আরামে কাটছে সময়।
০৩ নভেম্বর; ২০১৮
সকাল ৬.০১- আকাশের মুখ ভয়ানক গোমড়া। তার দোসর হয়ে শীতও দাঁত খিঁচোচ্ছে।
সকাল ৮.৪৮- মনোজের ফোন — বরফ পড়ছে। বেরিয়ে দেখি, সত্যিই তাই — ঝিরিঝিরি ঝরিছে তুষারকণা।
সকাল ৯.৩৫- তুষারবর্ষণের মাঝেই আউলিকে বিদায় জানালাম। আজ লম্বা পাড়ি গোয়াল দাম।
সকাল ১০.০১- হাজারখানেক ফুট নেমে আসায় তুষারের বদলে দৃষ্টিরোধ করছে বারিধারা।
সকাল ১০.৩৩- হেলং। বৃষ্টির লংমার্চ চলছে।
সকাল ১০.৪৭- এইমাত্র গাড়ির ছাদে লাফিয়ে পড়ে একটা নাতি বৃহৎপাথর নেমে গেল খাদে!
সকাল ১০.৫৮- গড়ুরগঙ্গা। বৃষ্টির বাজনা ননস্টপ।
সকাল ১১.০৮- পীপলকোঠী। বারিধারা সহযোগে চা পকোড়া।
সকাল ১১.৫৮- ভীমতলা। ভীম অর্জুন কিচ্ছু মানছে না বৃষ্টি।
দুপুর ১২.০৪- চমোলী। অবিরাম বৃষ্টির হোলী।
দুপুর ১২.২৮- নন্দপ্রয়াগ। নিরবচ্ছিন্ন মল্লার রাগ।
দুপুর ১২.৪৯- লঙ্গাসু। বর্ষার লং আঁসু।
বেলা ১.০৮- কর্ণপ্রয়াগ। কর্ণগঙ্গা-অলকানন্দার সঙ্গম।
বেলা ১.১১- আমরা এবার নদী পেরিয়ে ভিন্নপন্থী।
বেলা ১.১৫- জখোড়।
বেলা ১.১৭- পাড়ুলী (পাটুলির দিদি?)
বেলা ১.২১- সিমলী। সিমলার ছোট বোন নাকি! এখান থেকে ১২ কি.মি দূরে আদিবদ্রী।
বেলা ১.৪৫- বৃষ্টি শেষমেশ হাল ছাড়ল বগোলীতে।
বেলা ২.০৭- নারায়ণ বগড়। এখান থেকে গড়গড়িয়ে পথ গিয়েছে চোপতায়। আমরা ডাইনে থরালীপন্থী।
বেলা ২.১৮- হংসনগর পন্তী। গাড়ির শরীর পরীক্ষা চলছে। পাশেই ছোট্ট পুরোনো একটা মন্দির।
বেলা ২.৪৪- হরমনী। এখানে কী পাওয়া যায়? হরমোন, না হারমোনিয়াম?
বেলা ২.৫১- কুলসারি। সারি তো দূরের কথা, একটা কুলগাছও চোখে পড়ল না। বরং একটা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট বিরাজমান।
বেলা ৩.০৬- থরালী।
বেলা ৩.৩৬- তলওয়ারী। তলোয়ারের আস্তানা নাকি?
বিকেল ৪.৫১- গোয়ালদামের গোয়ালে।
০৪ নভেম্বর; ২০১৮
সকাল ৭.৪৭- আকাশের কান্নার পালা শেষ হয়েছে ভোররাতেই। নতুন তুষারের চাদর মুড়ি দিয়ে পাহাড়াগুলো সেজেছে। মেঘের চাদর ফেলে মাঝেমধ্যে আড়মোড়া ভাঙছে ত্রিশূল, নন্দাঘুন্টি।
সকাল ৯.২৯- বিদায় গোয়াল দাম, বিদায় গঢ়ওয়াল — এবার কুমাউঁ-র অতিথি হবো। লম্বাপাড়ি আজ।
সকাল ১০.০২- জঙ্গোলী। রঙ্গোলীর কেউ হয় নাকি!
সকাল ১০.১৩- বৈজনাথ। নদীর তীরে মন্দিররাজির ছবি।
সকাল ১০.৩১- গরুড়। গরুড় উপত্যকার সদর।
সকাল ১১টা- পিকচার পোস্টকার্ড কৌসানী।
সকাল ১১.২৬- সোমেশ্বর। ডানহাতি পথ গিয়েছে দ্বারহাট রাণীক্ষেত — সেই পথেরই পথিক, থুড়ি, সওয়ার আমরা।
সকাল ১১.৪০- দোনীগাড়।
সকাল ১.৫৯- পারকোট পার হলাম চা চাপিয়ে। ডান দিকে দ্বারহাটের পথকে টা টা জানিয়ে বামপন্থী হলাম; রাণীক্ষেত আর ৩০কি.মি।
দুপুর ১২.২৭- বগওয়ালীপোখর। বক, পুকুর কিছুই চোখে পড়ল না। বাঁইয়ে বেঁকলেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হতাম — চললাম নাক বরাবর।
দুপুর ১২.৪৩- বাঁদিকে পুল পেরোলাম। রাণীক্ষেত আর ১৬ কি।মি; রামনগর এখনও ১১৩ কি. মি.।
বেলা ১.১০- রাণীক্ষেত।
বেলা ১.৩৬- ডাইনে বাঁয়ে ঘুরে তাড়ীক্ষেত। এখানে বুঝি তাড়ীর চাষ হয়!
বেলা ১.৫০- সোনী।
বেলা ১.৫৪- বাঁয়ে ঘুরে পুল পেরোলাম। সোজা পথ বিনসরের।
বেলা ২.১৭- ভতরৌঞ্জখান। কী নাম রে বাবা!
বেলা ২.৩৯- মছোড়। মা, মাছ, না মাছি কী ছাড়তে হবে?
বেলা ২.৪৪- চওড়ী ঘট্টী। চওড়া ঘাটী! সে যা হোক — বাঁয়ে মুড়।
বেলা ৩.২৮- সামনে ‘পাহাড়ী’- ‘অর্গানিক’ রেস্তোরাঁ। বাপস্, রেস্তোরাঁ না রাজমহল! নিঘ্ঘাত গোলা কাটবে। কিন্তু আমরা নিরুপায় — পেটে গন্ডারেরা দঙ্গল লাগিয়েছে।
বিকেল ৪.১৬- হাজারো কেতায় বানানো হলেও খাবার কিন্তু মন্দ ছিল না। শুধু, বানিয়ে পরিবেশন করতে করতেই আধঘন্টা পার।
বিকেল ৪.২১- টোটাম। নাকি টোটেম?
বিকেল ৪.৫০- মোহান। মহান?
০৫ নভেম্বর; ২০১৮
সকাল ৬টা- এবেলার জঙ্গল সাফারির জন্য বেরোলাম।
সকাল ৬.৩০- হু হু ঠান্ডা হাওয়া সয়ে হাওয়ার গতিতে উড়ে এসে জিম করবেট ন্যশানাল পার্কের বিজরাণী গেট। গাইড চন্দন বিষ্ট।
সকাল ৭.৫৮- অরণ্যচারীদের খোঁজে অরণ্যে বিচরণ। হরিণরা এখানে অকুতোভয়। সকালের অরুণকিরণ স্পর্শে ঊষ্ণ শিহরণ।
সকাল ৮.১১- ধিকালা বনবাংলোর চত্বরে। লোভ দেখানো প্রকৃতি। কফিপানে শরীরে কিঞ্চিৎ ঊষ্ণতার সঞ্চারের চেষ্টা।
সকাল ১০.০২- হরিণের দঙ্গল দেখেই এবেলা সন্তুষ্ট থাকতে হলো।
বেলা ১.৩৫- পেট আর শরীরকে আরাম দিয়ে বিকেলের বিচরণের প্রস্তুতি।
বেলা ২.২৫- রামনগরকে পুরো দর্শন করে ঝরনার ঢেলা গেটে। এবারের গাইড অনিল চৌধুরীর বয়স কম হলেও বিজ্ঞ অভিজ্ঞ।
বেলা ২.৫০- খারা গেট। আগে এটাই ছিল অরণ্যের প্রবেশদ্বার।
বেলা ৩.৩৫- পালে পালে হরিণ — নি:শঙ্ক, এমনকী সতর্ক সম্বরও।
বেলা ৩.৫১- সবুরে মেওয়া ফলে — ছানাসহ বাবা-মায়ের রাস্তা পেরোনো দেখলাম। এতগুলো চার-চাকাওয়ালা জানোয়ারের ভয় কাটিয়ে পড়ি-মড়ি করে পথ পেরিয়ে বাঁচল হাতি-পরিবার।
বিকেল ৪.১১- সন্ত্রস্ত কস্তুরী মৃগের ছবি তোলার সুযোগ পাওয়া গেল।
বিকেল ৪.৪১- অ্যালার্ম কল (ময়ূর, বাঁদর, অন্য পাখির) জানান দিল, বাঘবাবাজি কাছেপিঠেই কোথাও আছেন।
বিকেল ৫.১১- ব্যর্থ অপেক্ষা। বাঘমামা আমাদের ওপর নারাজ হয়ে অন্যদিকে পাড়ি দিলেন।
সন্ধ্যা ৬.২৬- অতুল আশ্রয়ে প্রত্যাবর্তন। অদ্যই শেষ রজনী।
০৬ নভেম্বর; ২০১৮
সকাল ৯.১৮- মনভোলানো রামনগর স্টেশনে। দিল্লীর ট্রেন দাঁড়িয়ে। বিদায় উত্তরাখন্ড। বুকের ভেতর সুখস্মৃতির পাহাড় নিয়ে ফিরছি।
(পরবাস-৭৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮)