একটা প্রকাণ্ড আলোর বল যেন ফেটে গেল কোথায়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো রঙের বিস্ফোরণ--লাল, কমলা একটা রঙের স্রোত বয়ে চলেছে. কি গরম! ঝাপসা হয়ে যাওয়া কিছু মুখ। ভেঙে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে আকারহীন... .. যাচ্ছে নিকষ কালো অন্ধকার একটা সুড়ঙ্গে। কি অচেনা অন্ধকার--কি কালো। গরম হলকা বেরোচ্ছে কোথা থেকে--ওহ নিশ্বাস নিতে পারছি না।
চোখটা খুলতেই সামনের সাদা দেওয়ালে শার্সি ভেদ করে আসা শেষবেলার আলো। রঙিন কাঁচের মধ্যে দিয়ে আসছে, তাই দেওয়ালে একটা একটা রঙিন আল্পনা। পাল্টে যাচ্ছে আকৃতিটা, ভেঙে যাচ্ছে প্রত্যেক মুহূর্তে, কি সুন্দর, কি মায়াবী রং। আঃ কি শান্তি ...তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কতদিন বাদে দেখলাম-- অনেক.. অনেক দিন বাদে, কি যেন বলে এটাকে... কি বলে?
কি গরম লাগছে রে বাবা! তার মধ্যে গায়ে একটা চাদর--চাদর টা কার? এটা কার বিছানা? কার ঘর? ধড়মড় করে উঠে বসলাম। প্রচণ্ড অস্থির অস্থির লাগছে। মাথাটা প্রচণ্ড ভারী, একবার বাথরুমে যেতে হবে।
পা মাটিতে রাখতেই ফিরে এলো সব। আরে এটা তো মেয়েদের ঘর, জানলার বাইরে একটা বারান্দা, বারান্দা পেরিয়ে একটা ছোট রাস্তা আর তার পরেই একটা পুকুর। জলে আলোর প্রতিসরণ ঝলমল করছে, কয়েকটা হাঁস ভেসে আছে জলের নিস্তরঙ্গতায়। কিরকম একটা নির্জন অলীক দুপুর।
বাথরুমে গিয়ে মাথায় মুখে জল দিলাম; অন্যমনস্ক পায়ে বসার ঘরে এসে দাঁড়াতেই দেওয়ালের বড়ো ঘড়িটার দিকে চোখ পড়লো। তিনটে পঁচিশ।
তিনটে পঁচিশ? দুপুর?
কিভাবে?
একটা অপরিচিত শিহরণ ছড়িয়ে পড়লো শিরদাঁড়ায়।
আচ্ছা কখন গেলাম আমি মেয়েদের ঘরে? ওদের বিছানায় শুলাম কেন হঠাৎ? কতক্ষণ ধরে ঘুমোচ্ছিলাম? কখন গেলাম ওদের ঘরে?
হঠাৎ ফিরে এলো সব!
আরে এই মুহূর্তে তো আমার হিন্দুস্থান জিঙ্ক লিমিটেডের মিটিংটাতে থাকার কথা, ওদের পুরো লিগ্যাল টিমের এসে পৌঁছনোর কথা...গতকাল..আজ কি বার? বুধবার?
হ্যাঁ গেছিলাম তো! আমার এয়ারপোর্টে যাবার কথা ছিল, তারপরেই হোটেলে একটা মিটিঙ.. লিগাল টার্মস নিয়ে। পরিস্থিতি বেশ জটিল, আমাদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য, আমাদেরই ইন্টারনাল প্রব্লেমস এর জন্য...এতো বছরের পার্টনার্সরা হাতছাড়া হতে বসেছে।
চশমা পরা ভদ্রলোক, কি যেন নামটা, হ্যাঁ মিস্টার. নারায়ণমূর্তি, একটু বিরক্ত ছিলেন। ওনার সামনে একটা অ্যাশট্রে, নীল রঙের, আর একটা জলের বোতল। একি কিছু মনে পড়ছে না তো...কি যেন বলছিলো অনেকক্ষণ ধরে সুবিনয় ?
হে ভগবান! আমি বাড়িতে কেন?
দরজার চাবিটা ঠিক কাজ করছে না। উফ! কতদিন ধরে লকটা ঠিক করে ঘোরে না...কতদিন ধরে যে মাকে বলছি এটা ঠিক করাতে। আজ বাসটা পেতে দেরি হলো, এতো বাথরুম পেয়েছে! ঝালমুড়িতে লঙ্কা খেলাম কেন যে বোকার মতো..তারপর জল গিলতে হলো একগাদা। কোনোদিন এরকম করিনা। শুধু বাথরুম যাবার ভয়ে. পাগল না হলে কলেজের বাথরুম? নাইটমেয়ার পুরো।
ধুর দিনটাই বাজে আজ।
এ কি? বাবা এই সময়?
এইভাবে দাঁড়িয়ে আছে ঘরের মাঝখানে...
"কি হয়েছে বাবা, তুমি বাড়িতে? এরকম দাঁড়িয়ে আছো কেন ঘরের মাঝখানে একা? শরীর খারাপ?"
কপালে হাত দিতেই কেমন সরে গেল..
"তুই আজ কখন কলেজ বেরিয়েছিস রে?" বাবা জিজ্ঞাসা করে উঠলো।
"এই এরাউন্ড সেভেন থার্টি। আজ টিউশন ছিল তো, কেন তুমি তো জেগে ছিলে, বিছানায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলে। আমি তো তোমাকে বলে গেলাম বাবা। কেন বলো তো?"
"না কিছু না...শোন তুই কি এখন কিছু খাবি?"
"ওহ তুমি বুঝি কিছু খাও নি? তুমি কিগো! মালতীকে বলতে পারতে তো তোমাকে খেতে দিতে। দাঁড়াও দেখি রান্নাঘরে কি আছে।"
"না শোন এতো বেলায় ভাত খাবো না..দেখ না যদি ব্রেড ট্রেড কিছু থাকে। আর একটু চা করে দিবি?"
"উফ শুধু চা আর চা! সকাল থেকে কত কাপ হলো মিস্টার রায়? আর এক প্যাকেট সিগারেট হয়ে গেছে? বেরিয়েছিলে নাকি কিনতে? কবে যে কমাবে। আর পারা যায় না তোমাকে নিয়ে।"
বলছে কি টুম্পা? এতো সিগেরেট খাই আমি?
মনে পড়ছে না তো....
"আর একটু ঢ্যাঁড়শভাজা দেব? একটু খাও..ঝোল এক্ষুনি দিচ্ছি।"
কড়াই থেকে একটু মাছ আর আলু তুলে নি। সাদা বাটিটা আবার কোথায় রাখলাম? ইশ যথারীতি ঠিক করে পরিষ্কার করেনি মালতী-- না দেখলে একটা কাজ যদি ঠিক করে করে...
"দাঁড়াও এক মিনিটে আসছি।"
"এ কিগো, কি করছো? ডাল ভাতের মধ্যেই মাছের ঝোল তা ঢেলে দিলে! কি হয়েছে কি তোমার? কি করছো?"
কিরকম ভাবে তাকিয়ে আছে দেখো টুম্পার বাবা থালাটার দিকে..যেন কোনো কথা শুনতেই পাচ্ছে না..
কি নিয়ে যে সংসার করি!!
একটা রিক্সাওয়ালা ডাকছে। আমাকে? হ্যাঁ, আমাকেই তো ডাকছে দেখছি।
"ও কাকু এদিকে কেন? আপনার গাড়ি তো বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়ায়। আপনি উল্টো দিকে কোথায় চললেন? চলুন আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি। দেরি হবে না..."
"দেরি? না তা হবে না।"
"আরে ওই তো আপনার বুলু অ্যাম্বাসেডর দাঁড়িয়ে। দেখি ড্রাইভার কোথায়, যান আপনি গিয়ে ভেতরে বসুন।"
"ইয়ে অনেক ধন্যবাদ ভাই, তোমার নামটা কি গো?"
হাঁ করে তাকিয়ে আছে ছেলেটা।
"কাকু ইয়ার্কি দিচ্ছেন?" পাঁচ বছর ধরে দুই বেলা দেখছেন, এখন জিজ্ঞাসা করছেন তোমার নাম কি কানাই? হাহাহাহা "
কাল বিকেল থেকে দেখছি প্রবীর কে, কি হলো কি ওর?
এতো চুপচাপ। মিটিংয়ের এর দিন এলো না...আজকের মিটিং-এ একবারও মুখ খুললো না।
কি সব ক্লজ বার করেছিল। কি ইন্টেলিজেন্টলি তৈরী করছিলো পুরো ডিল টা ...কি হয়েছে কি ওর? পুরো মিটিংটা মিত্র খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চালালো, প্রবীরের পার্টিসিপেশন ছাড়াই।
"সাইন কর প্রবীর; কি হলো?"
এ কি বসে আছে? পেনটা খুলে। চোখটা কেমন যেন ঘোলাটে।...চশমাটা খুলে আসছে।
প্রবীর, কি রে সই কর? সকলে সশঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সই? কিভাবে? মাথাটা ঝুঁকে আসছে।
ফোন বাজছে।
"হ্যালো রনো কাকু? তোমাকেই এক্ষুনি কল করতে যাচ্ছিলাম। কেন? কাকু বাবার শরীরটা খুব খারাপ করেছে। শরীর মানে, না জ্বর নেই, কিন্তু চোখ দুটো খুব লাল। কাল অফিস থেকে আসার পর থেকেই কিরকম যেন ব্যবহার করছে। কথা বলছে না, প্রশ্ন করলে রেসপন্স করছ না। সকাল থেকে শুয়ে আছে। খাচ্ছেও না...উঠলেও কিরকম যেন বুঝতে পারছে না কোন দিকে যাবে। মনে হচ্ছে কোনো অচেনা বাড়িতে।
তাই? অফিসেও? তুমি নামিয়ে দিয়ে গেছিলে কাল..ফোন করতে বলেছিলে? না কিচ্ছু বলে নি।
আমার খুব চিন্তা হচ্ছে কাকু। হ্যাঁ, প্লিজ তুমি ডক্টর বোসের এর সাথে একটা এপয়েন্টমেন্ট করো সে তুমি যা ভালো বুঝবে... আমি বা মা তো তেমন কাউকে চিনি না, নিউরোলজিস্ট তো ভালো অপশন মনে হচ্ছে।
কি? প্রচণ্ড অ্যাচিভমেন্ট। বাবার জন্য? হ্যাঁ হ্যাঁ হিন্দুস্তান জিঙ্কের এর কথা জানি তো, ওদের সাথে ডিল তা নিয়ে বাবা খুব দুশ্চিন্তায় ছিল।
তাই? তোমরা আবার প্যাচ আপ করে নিয়েছো। বাবার স্ট্র্যাটেজি গুলো দারুন কাজ দিয়েছে? বাবার ক্লজগুলো?
দাঁড়াও দাঁড়াও বাবাকে বলছি। বাবা ও বাবা, দ্যাখো তুমি কি কাণ্ড করেছ। কি দারুন নিউজ।
না কাকু, বাবা টিভির দিকে তাকিয়ে আছে; দৃষ্টি খুব আনফোকাসড ...শুধু একটু হাসলো। তুমি ডক্টরের এপয়েন্টমেন্টটা যত তাড়াতাড়ি পারো নাও। আমার খুব ভয় করছে। কি হলো বাবার?"
"আমার একটা আন্দাজ আছে, ..কিন্তু আমি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে MRI রিপোর্টটা দেখতে চাই। আমি একটা মেডিসিন শুরু করছি। আপনারা ডেফিনিটলি ওনাকে ভেলোরে নিয়ে যেতে পারেন বা এখানেও ট্রিটমেন্ট করতে পারেন।
"মিস্টার রয়...মিস্টার রয়..."
লোকটা ডাকছে আমাকে... এতো কথা বলছে, বুঝতে পারছি না, মাথায় এতো লাগছে!l কি অন্তহীন কথা বলে!
"আপনার অফিস কোথায়? কোথায় কাজ করেন আপনি?"
..............................
"এটা কে মিস্টার রয়?" ........................................
পাশের চেয়ার থেকে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে... বড়ো বড়ো চোখে। একদম চুপ। মনে হচ্ছে ভালো মেয়ে, অন্ততঃ কিছু কথা বলছে না কিন্তু কি হলো? ওর চোখ দুটো জলে ভরে উঠেছে, ঠোঁট কাঁপছে। একটু হাসি, হাসলে দেখছি অনেক কিছু বলতে হয় না...
"ঠিক আছে মিস্টার রয়, এটা পড়ুন তো...এই নিন এই..ইন্ডিয়া টুডেটা নিন...এই যে এই লাইনটা পড়ুন তো-- "
'Sharad Pawar exuded characteristic confidence and energy when he returned to Bombay and was sworn in for the fourth time as the chief minister of Maharashtra.'
এই ওয়ার্ডটা কি... ch দেখছি স্টার্টিং এ মনে হচ্ছে চ্যালেঞ্জ, থাক কিছু বলবো না..
"আচ্ছা মিস্টার রয় এটা কোন সাল?"
...................................
"নীল আর্মস্ট্রং কোন বছরে চাঁদে গেছিলেন মনে আছে আপনার?...."
"নাইনটিন সিক্সটি নাইন।"
কে বললো কথাটা। আমি? ঘরটা একদম চুপ!
“ওয়েল আমার ডায়াগনসিস হলো খুব সম্ভবতঃ ওনার একটা বা একাধিক স্ট্রোক হয়েছে, যার ফলে ওনার লেফট ব্রেইনটা এফেক্টেড হয়েছে। যে কারণে ওনার স্পিচ বা ল্যাঙ্গুয়েজে সমস্যা হচ্ছে আর এই সমস্ত বিহেভিরিয়াল চেঞ্জ। উনি খুব সাবধানে কথা বলছেন..কারণ উনি খুব সম্ভবত বুঝতে পারছেন না ওনাকে কি বলা হচ্ছে -- এটা এক ধরনের ডিফেন্স মেকানিজম। আমার মনে হয় ওনার শরীরের রাইট সাইডটা এফেক্টেড হবে আস্তে আস্তে। তবে হ্যাঁ, চিকিৎসা আছে, আর উন্নতির আশাও।" কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলেন ডক্টর বোস। "আসলে কি জানো হিউম্যান ব্রেইন খুব কমপ্লিকেটেড যন্ত্র, বুঝলে টুম্পা...তোমাদের কম্পিউটারের থেকেও অনেক বেশি।"
"মা বললো আজ ভালোই আছে...হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ভয় কেটে গেছে। খাচ্ছে নর্মাল ফুড। রাইট সাইডে সাড় ফিরে আসছে আস্তে আস্তে। নেক্সট সপ্তাহে শুরু হবে স্পিচ থেরাপি।
ঠিকই ভেলোরে নিয়ে যাওয়াটা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত, হ্যাঁ তুমিই তো বলেছিলে।
না, জিজ্ঞাসা করে না কিছু ...আমাদের কথা। হ্যাঁ আমরা ঠিক আছি।"
ওহ...কতক্ষন ধরে ভাট বকছে শান্তা কাকী। একবার ফোন করলে আর ছাড়তে চায় না লোকজন এরকম স্টুপিড প্রশ্ন যে কেন করে..এতো ইনসেন্সেটিভ!
বোন ঘুমিয়ে পড়েছে। পড়তে হবে, আজ ইকোনমিক্সটা নিয়ে বসা খুব দরকার। জলে এসে পড়েছে আলো... ল্যাম্পপোস্টগুলোর ছায়া ..থির থির করে কাঁপছে।। ভেঙে যাচ্ছে। হাওয়ায় কেমন যেন একটা অচেনা মন কেমন করা গন্ধ।
কি করছো তুমি বাবা.... ঘুমিয়ে পড়েছো?
একটার পর একটা ছবি ভেসে আসছে। ..স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবার অফিস, সন্ধেবেলা একসাথে বাসস্টপ থেকে হেঁটে আসা, বাবার কাজের গল্প। অন্য সব বিখ্যাত মামলার গল্প। প্রায় হেরে যাওয়া কমপ্লিকেটেড কেস-এর কোথায় একটা চুল ফাঁক ছিলো, কিভাবে খুঁজে বার করতে হয় ওই এক চুল দুর্বলতা একটা নিশ্ছিদ্র কেস থেকে....
আরো ছোটবেলা। রামেসিসের গল্প-- পিরামিড, কত অভিশাপ, মহাভারত ছিল বাবার একটা দুর্বলতা কোন জায়গায় কৃষ্ণ....একবার মাত্র অস্ত্র ধরেছিলেন। কেন?
বড় হবার পর কারোর সাথে ঝগড়া হলে বা রাগ হলে তার বিষয়ে নালিশ করতে গেলে, অন্যের জায়গায় গিয়ে..তার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা...
বাবার দুষ্টুমি, ক্ষুরধার বুদ্ধি, অবাক করা স্মৃতিশক্তি..আলসেমি, ছেলেমানুষি...
এক অসমবয়স্ক বন্ধুত্ব, যা শিখেছি সবই তো বাবার থেকে। কোনো সংকটে পড়লে আজ যে আওয়াজটা ভেতর থেকে ঠিক রাস্তাটা বেছে দেয়, সেও তো বাবার।
সেই বাবা আর চিনতে পারবে না তাকে?
বাবার আর কি থাকবে তার ইন্টেলেক্ট না থাকলে?
নিঃশব্দ চোখের জলে ঝাপসা হয়ে যায় সবকিছু।... আমি থাকবো কি ভাবে বাবা?
বসে আছি পাশাপাশি আমরা আমার ঘরে...
এই সময়ে একটু হাওয়া আসে পুকুরের দিক থেকে, আমার সামনে একটা খোলা অ্যালবাম। ডাক্তার বলেছেন নিয়মিত দেখাতে--একটু একটু করে ফিরে আসছে বাবার স্মৃতি। চিনতে পারে কাউকে কখনো - কিন্তু ধারাবাহিকতা কম...টিভিতে খবর, খেলার দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু দৃষ্টি আনফোকাসড। নতুন একটা অদ্ভুত দুষ্টুমি মাখানো হাসি এসেছে বাবার মুখে--আমি তখনই বুঝি, খুব একাগ্রতা দিয়ে মনে করার চেষ্টা করছে মানুষটা, কিন্তু পারছে না...
আমাকেও তৈরী করতে হচ্ছে নতুন সম্পর্ক, কে জানতো সম্পর্কের পরিভাষা এভাবে বদলে যেতে পারে।
হ্যাঁ বাবা জানে আমি টুম্পা, তার মেয়ে। কিন্তু সন্তান শব্দটা কোনো অভিঘাত তোলে কি তার মনে? শুনেছি আমাদের ব্রেনে এমিগডেলা বলে একটা ছোট্ট জায়গায় আছে ভালোবাসা, রাগ এই সব অনুভূতিগুলো। আর হিপ্পোক্যাম্পাসে থাকে স্মৃতি আর ..অনুষঙ্গ। সন্তানদের স্মৃতিই হারিয়ে গেলে অপত্য স্নেহের অনুভূতি কি জাগতে পারে? আর তার বার্তা কি ছড়িয়ে পড়তে পারে মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোতে?
না....আমি জানি না।
শুধু জানি আমি নতুন সম্পর্ক তৈরী করছি, আমাদের ভূমিকা বদল হয়ে গেছে। এই জটিল ভুলভুলাইয়াতে এইবার বাবার হাত ধরে আছি আমি..আলো আঁধারির খেলা চলবে...আমি হাত ধরে থাকবো,নতুন মেমরি তৈরী হবে।
হঠাৎ শুনি বাবা বিড়বিড় করে কি বলছে।.....দেওয়ালের দিকে আঙুল দেখিয়ে--
সামনের দেওয়ালে রঙিন কাঁচের মধ্যে দিয়ে রোদ্দুরের রিফ্লেকশন-
"হ্যাঁ বাবা, কি সুন্দর, মনে হচ্ছে যেন ক্যালাইডোস্কোপ দিয়ে দেখছি। তুমি ছোটবেলায় বলতে--মনে আছে?
(পরবাস-৭৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮)