রবীন্দ্রনাথ কি চোদ্দটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে পড়ে
রাত বারোটায় লাফিয়ে উঠল রক্ত
হাড়ের মধ্যে ঝড়ের অট্টহাস্য
হঠাত স্মৃতিতে একটি গভীর পংক্তি
জীবনবোধের দিয়েছে নতুন ভাষ্য।
টেলিপ্রিন্টারে উস্কোনো পাতা যেন
একটি পংক্তি হঠাত তুলেছে মাথা
বিবর্ণ দিন ঢলে পড়েছিল গায়ে
সঞ্জীবনী পংক্তি পরিত্রাতা।
গ্রাম ও নগর ঘিরে কাঁটাতার বসে
ভুখার ফৌজ ফেঁদে আছে গড়খাই
মুদ্রাস্ফীতি ও বিদেশী ঋণের পিচ্ছিল
পথে পদে পদে হড়কাই।
যুঁইফুলি ভাতে ছেয়ে আছে রাত
অনাহারী দেখে রাশি রাশি নক্ষত্র
মধ্যরাত্রে অথচ লাফায় রক্ত
মনে পড়ে গেলে একটি নিখাকী ছত্র।
রোমান্টিকতাকে পরাবাস্তববাদী হুঁশিয়ারি
কে আমাকে স্বপ্নের মধ্যে জর্জরিত করছ
চোখের মধ্যে গেঁথে দিচ্ছ নতুন নিশানা
শিরায় ফোটাচ্ছ দ্বিজিহ্ব সুচ
রক্তের মধ্যে যে জেটের জ্বালানি ভরে দিচ্ছে
আর আকাঙ্ক্ষকে দিচ্ছে গতির মন্ত্রণা?
কে হাতে তুলে নিচ্ছ স্বরগ্রন্থি
মেলে ধরছ আকাশের দিকে
তারপর চালাচ্ছ সুদক্ষ ছড়
মস্তিষ্কের কোষের অন্তরে
প্রোথিত করছ শব্দের ইন্দ্রজাল
আর ছিন্ন করছ বাক্যের অভ্যস্ত মানচিত্র
কে তুমি আমার রক্তের অভ্যন্তর থেকে
ফুসলাচ্ছ,খ্যাপাচ্ছ,ভাবাচ্ছ বারবার?
যেন বাগানে রোপণ করেছে কেউ
অসংখ্য বাক্যের ভ্রূণ
যেন সুদক্ষ অপেরাটর তার যন্ত্রের মধ্যে
রোপণ করেছে মোর্স-এর নিগূঢ় সঙ্কেতে
এমনভাবে কে আমার রক্তের মধ্যে প্রবিষ্ট করাচ্ছ বিষ
যাতে আমার সমস্ত শরীর
উৎকীর্ণ শিলালিপির রোমাঞ্চে ভরে যাচ্ছে?
কে আমার শোল্ডার ব্লেড-এর উপর
ঘুরিয়ে ধরছ ওয়েল্ডিং গান
তারপর ইকারুস-এর ডানার প্রতিশ্রুতির মত
সেই কাঁধের উপরে লাগানো ওয়েল্ডিং গান
আমাকে জোর করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সূর্যের দিকে
তারপর নিশ্চিত পতনের মুহূর্তে
হাওয়ার শীৎকার আর সমুদ্রের ফেনার মুখে ছাই দিয়ে
বন্ডের আশ্চর্য যান্ত্রিক যানের মত
আমাকে বানাচ্ছে নিমেষে ভোল বদলানো সাবমেরিন
প্রবাল আর শৈবালের সড়ক ভ্রমণ সেরে
সপ্রতিভ ট্যুরিস্ট গাইডের মত
টেনে তুলছ ধনীদের ব্যক্তিগত মহার্ঘ সৈকতে?
উঁচনো বেয়নেট আর শূন্য অন্নপাত্র তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে
কাঁটাতার আর ভূখ হরতাল তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে
মুদ্রাস্ফীতি আর নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রোধ তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে
পরিকল্পিত অশিক্ষা আর কম্যুনিস্ট ইস্তাহার তোমার জন্যে অপেক্ষা করছে
শুঁড়িখানা আর খনিশ্রমিকদের জটলা
খালাসীটোলা আর পলাতক রাজবন্দী
চেম্বার অভ কমার্স আর সঙ্গঠিত সন্ত্রাস
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর বহুজাতিক কর্পোরেশন
খবরের কাগজের হেডলাইন আর মানুষের গভীরতম স্বপ্ন
তোমার জন্যে ওত পেতে রয়েছে---
তোমার নাকের ডগাটকুও দেখা গেলে
তোমাকে তারা ছিঁড়ে খাবে।
(পরবাস-৭৩, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮)