Parabaas Moviestore




Parabaas Moviestore




Subscribe to Magazines



পরবাসে
অংকুর সাহার

লেখা


ISSN 1563-8685




ট্যুরিস্টদের জন্যে পরামর্শ

হুলিও কোর্তাসার

অন্ধকারে
     পাথরের মেঝেয় বসে
তারা গু খায়।
একপেয়ে প্রাণী, লাফানো গরুর দল
     খোঁড়া কুত্তারা অন্ধ বেড়ালগুলো

বাজারে জঞ্জাল চিবোয়
     ভাঙা আঙুল
     রাস্তায় পড়ে থাকা
     বাঁধাকপির
শিশুসুলভ কচি মুখ।

     গর্তের মতন চোখজোড়া
গরুর গাড়ি আর মানুষজনের ফাঁকে
কাঁপে তার শায়িত মাথা
     পথচারীদের পায়ের দাপটে
মাটিতে উপচায় কালো বিচিদুটো
দুই ঊরু পথ দেখায় পুরুষাঙ্গকে
      ধড়টা
সূর্যের সঙ্গে সঙ্গে ঘোরে

স্ত্রীর জন্যে অপেক্ষা করতে করতে আমি
গঙ্গার তীরে বাজারে এসেছিলাম
একছড়া কলা কিনবো বলে
                        —মার্কিন কবি গ্যারি স্নাইডার (১৯৩০-) এর “বাজার” কবিতার অংশ।

ত্বরের টালিপাথরে বসে ছিলো বাচ্চা মেয়েটা, খেলছিলো অন্য শিশুদের সঙ্গে — একজন অন্যজনের হাতে দিচ্ছিল এক টুকরো সুতো, পোড়া দেশলাই কাঠি — নানান যোগ বিয়োগের মাধ্যমে রহস্যময় তাদের আদান-প্রদান। মেয়েটি ন্যাংটো, তার নাকে কয়েকটি সোনার রঙের মাকড়ি আর একটা নথ, যার ফলে নাকের এক দিকটায় গোলাপি রঙের আভা — দুটো কালো রোগা পায়ের ফাঁকে চাঁদের কলার মতন তার খুদে যৌনাঙ্গ। মেয়েটির ডানদিকে উবু হয়ে বসা বালকটিও ন্যাংটো, যখন সে খেলার ছলে সোল্লাসে নড়ে চড়ে, পাথরে ঘষটায় তার ছুঁচোলো নিতম্ব। অন্যেরা বয়েসে খানিকটা বড়ো, নয় কিংবা দশ — তাদের কংকালসার শরীর ঢাকা অনেক হাত ঘোরা প্রাচীন, ছেঁড়া খোঁড়া পোষাকে। বালিকা খেলে যায় একমনে — ছোট্ট কাঠিটা দেওয়া নেওয়ার ফাঁকে সে একটা কিছু বলে, অন্যেরা হেসে হেসে পুনরাবৃত্তি করে তার — এইভাবে এগিয়ে চলে খেলা। আদ্যিকালের লাইন ধরে পার হয়ে যায় ট্রামগাড়ি — বাতাস এবং মাটি, কেঁপে ওঠে দুটোই, কিন্তু তাকায়ও না ক্রীড়ারত শিশুরা; যেখানে তারা বসে সেখানে থেকে ট্রামলাইনের দূরত্ব দু ফুটের কম, ট্রামগাড়ি চলে যায় তাদের এবং চত্বরে শুয়ে বসে থাকা অন্য বয়স্ক মানুষ ও বালক-বালিকার ফাঁক দিয়ে। কেউ ভ্রূক্ষেপও করে না — দু তিন মিনিট অন্তর অন্তর ট্রামগাড়ি যায় ঘন্টা বাজিয়ে, তার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় ঠেলে ওঠানামা করা যাত্রীদলের প্রবল চিৎকার। ন্যাংটো মেয়েটি তার ডানদিকে উবু হয়ে বসা ছেলেটির দিকে তাকায়, তার হাতে দেয় একটা ছেঁড়া কাগজ আর বিড়বিড় করে কিছু বলে, ছেলেটি কাগজটা চালান করে তার পাশের শিশুকে। কাছেই এক থুত্থুড়ে বুড়ি, যার বয়েস অথবা লিঙ্গ কোনোটাই বুঝতে পারা মুশকিল, জঞ্জাল-পোড়ানো উনুনে বসানো এক লোহার পাত্রে খুন্তি নাড়ে; এক তাল ময়দার একটা মণ্ড তুলে নিয়ে দু হাতে ঠাসে আর চটকায়; তার খানিকটা সে দেয় একটু দূরে বসে থাকা বুড়োটাকে — সে চাতালে বসে, তার পা দুটো প্রায় ট্রামলাইন ছোঁয়। বুড়ো সেই লেচিটা তার দাঁতহীন মুখে ভ’রে মাড়ি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে গিলে ফেলে — বুড়ি তাকিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে; বুড়ি তখন ঘুরে তাকায় একটি মেয়ের দিকে, সে তার শিশুকে মাই খাওয়াতে ব্যস্ত — তাকে দেয় একটা লেচি আর তৃতীয়টা রেখে দেয় নিজের জন্যে। তারপর কাঠি দিয়ে যে ধৈর্য সহকারে পাত্রটা খালি করে এবং উনুনে আরো কাঠকয়লা ভরে, যাতে তা নিভে না যায়। উবু হয়ে বসা কথাবার্তায় রত দুটো লোক মিলে তাদের দলটি সম্পূর্ণ — একজন অন্যজনকে একটা কাগজ দেখায়, অন্যজন আঙুল তুলে দেখায় স্টেশনের দরজার দিকে, চত্বরের অন্য প্রান্তে; প্রথম জন মাথা নাড়ে তার পিচকারির মতন করে জমকালো এবং অরুচিকর পানের পিক ফ্যালে — সেটা গিয়ে পড়ে বুড়ির পায়ের থেকে অল্প একটু দূরে মাটিতে। বৃত্তের মতন দুটো ন্যাংটাপুটো বাচ্চা ছুটে বেড়ায়, হোঁচট খেয়ে পড়ে এক বুড়োর পায়ে, বুড়ো তাকে দুহাতে তুলে ধরে হাসে, মৃদুস্বরে কিছু বলে অধৈর্য না হয়ে; বাচ্চা দুটোকে শাসায় বৃত্তের মধ্যে থাকতে এবং ট্রামলাইনের কাছাকাছি না যেতে। এই শহরে এখন ছায়াতেই পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং চত্বরে এক বিন্দু ছায়া নেই।

পুরো ব্যাপারটা বেশ কৌতূহল উদ্দীপক, সন্দেহ নেই, আপনি প্লেনে চড়ে কলকাতায় আসেন, কারণ এই প্রচণ্ড গরমে কারুরই প্রাণ চাইবে না ট্রেনে চড়ে সেখানে আসেন, আর ট্রেন নাকি অসম্ভব দেরিতেও চলে; আপনার থাকার ব্যবস্থা হয় শহরের বাণিজ্যকেন্দ্রে অভিজাত এক হোটেলে — সেখানে কেবল ইউরোপীয়দের অথবা ধনী ভারতীয়দের উপস্থিতি কাম্য। আপনার লাগেজপত্তর ট্যাক্সির দরজা থেকে যাত্রা শুরু করে পৌঁছে যায় আপনার বিছানার পাশে একের পর এক মানবের হাতে অথবা মাথায় — এক অন্তহীন মানবশৃঙ্খল, প্রত্যেকের মুখে চওড়া, উদ্‌বিগ্ন হাসি বকশিসের আশায়; বিবেকপরায়ণ আপনি চেষ্টা করেন তাদের কাউকেই বিমুখ না করতে — তারপর আপনি চান একলা হতে; তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নিয়ে শীতল একটা পানীয় চাইই। এইভাবে আপনি বিমানে আসেন আর হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে শহরটাকে আবিষ্কার করতে বেরিয়ে পড়েন; কোনো এক সময় ‘মারে’জ গাইড’-এর পাতা উল্টে দেখেন এবং চার-পাঁচটা দ্রষ্টব্য স্থানের মধ্যে বেছে নিয়ে ঠিক করেন, হাওড়া স্টেশানে যাবেন। হাওড়া স্টেশানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত করেন, যদিও আপনি এসেছেন বিমানে, ট্রেনে আপনার আগ্রহও নেই বিশেষ — এমন এক দেশে যেখানে সারা বছর চলে দাবদাহ আর টাইম টেবল দেখাও অর্থহীন।

কিন্তু এসব সত্ত্বেও আপনি মন স্থির করেছেন যে হাওড়া স্টেশান দেখতে যাবেন, সেটা কেবলমাত্র এই কারণেই নয় যে আপনার গাইডবুক বলেছে যে একটা দৃষ্টিনন্দন চরিত্র রয়েছে সেই স্থানের; এ ছাড়াও দিল্লি অথবা বোম্বাই শহরে বসবাসকারী আপনার কোনো বন্ধু আপনাকে বলেছেন যে ভারতবর্ষকে ভালো করে জানতে হ’লে অন্তত: কিছু সময় কাটাতে হবে হাওড়া স্টেশানে; তাই আপনি নিজের জামাকাপড়ের মধ্যে বেছে বেছে পাতলা ফিনফিনে একটা কিছু পরেন এবং চেষ্টা করেন সকাল দশটা অথবা সন্ধে সাতটা নাগাদ সেখানে পৌঁছে যেতে। আপনি ট্যাক্সি ডাকেন একটা, কিন্তু ড্রাইভার অবাক হয়ে তাকায় — সে বুঝতেই পারে না একজন ইয়োরোপিয়ান গোরা কেন হোটেল থেকে বেরিয়ে কোনো রকম লটবহর ছাড়াই হাওড়া স্টেশানের দিকে চলেছে; আপনি কিছু অতিরিক্ত টাকা গুঁজে দেন ড্রাইভারের হাতে এবং অন্য সব বাড়ানো হাতে ট্যুরিস্টরা যেমন করেন ট্যাক্সির দরজা থেকে শুরু করে বারাণসী অথবা মাদ্রাজের ট্রেনের নম্বর লাগানো আসন পর্যন্ত। আপনি ড্রাইভারকে বলেন ট্রেন ধরার কোনো পরিকল্পনা নেই আপনার, কেবল স্টেশানটা একটু ঘুরে দেখতে চান; ড্রাইভার হেসে মাথা নাড়ে এবং রাজি হয় যেতে, কারণ এমন একটা আজগুবি কথা বোঝার চেষ্টা করেও লাভ নেই। তার পরে আপনার সামনে ছড়ানো “শহর”, যার ট্রাফিক আপনার মনে ট্রাফিক সম্পর্কে যে কোনো প্রত্যাশা অথবা ধ্যানধারণাকে ভুল প্রমাণিত করবে; সূর্যদেবের আগুনঝরা কিরণ, চটচটে ঘাম আপনার বগল থেকে গড়াতে শুরু করে, তারপর কপাল থেকে এবং ঊরু থেকে, অথচ ড্রাইভারের মুখে অথবা কালো চাপদাড়িতে একবিন্দু ঘাম নেই; এমন এক যাত্রা যাকে আপনার মনে হবে অন্তহীন, কিন্তু ঘড়িতে দেখবেন কয়েক মিনিট পার হয়েছে মাত্র, যেন রাস্তায় ঘন হয়ে দাঁড়ানো মানব সম্প্রদায়; তার সঙ্গে গরুর গাড়ি, ট্রাম এবং ট্রাকের সারি; বাজারগুলো ছায়া ছায়া, অস্পষ্ট, রহস্যময় গর্ভগৃহ, যাদের মধ্যে পিঁপড়ের সারির মতন বেরিয়ে আসে মানুষ সেই একই রাস্তায়, যেখানে চিৎকার, প্রতিবাদ, হাসিঠাট্টার ঢেউ — সব যেন ঘটে চলেছে অন্য এক কালের সীমায়, যা আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন — এক অনিশ্চিত, চিত্তাকর্ষক অথচ বিরক্তিকর বাস্তবতার স্থগিতকরণ — তারপরে হঠাৎ যেন এক সময় চকিতে আপনি পৌঁছে যান নদীর সীমানায় — গুদামঘর আর কারখানার গন্ধ, বাঁক নেওয়া এক রাজপথ; আর হঠাৎ আপনার সামনে প্রলম্বিত হাওড়া ব্রিজ — বাইবেলে বর্ণিত মহাপ্লাবনের আগেকার এক প্রাগৈতিহাসিক দানব, তার ওপরে অসংখ্য ছাদ, সাইনবোর্ড, পুরানো জামাকাপড়ের দোকান, টেলিগ্রাফের তার — যেখানে তার যতটুকু খালি জায়গা, কেউ যেন পাগলের গতিতে ছুটে এসে তার দখল নিতে চায়; ইস্পাতের এক বিপুলায়তন কাঠামো — দানবের বিশালাকার মৃতদেহের পরনে লৌহনির্মিত রশি, দানবটা পা পিছলে পড়েছিল নদীতে; সেই সময় ড্রাইভার আপনার দিকে ঘুরে তাকায় আর বলে যে স্টেশনটা নদীর ওপারে, ব্রিজ পেরোলেই সেখানে পৌঁছে যাবেন — দেখবেন সামনেই স্টেশান; তার পরে যদি সাহেব কোনো মন্দির দেখতে চান অথবা বোটানিকাল গার্ডেন, সে নিয়ে যেতে প্রস্তুত — খুব কম ভাড়ায় সাহেব সারা দিনের জন্যে তার ট্যাক্সিটা ব্যবহার করতে পারেন — যদি সাহেবের সেরকম ইচ্ছে করে। সেতুর নিচে জল দেখা যায়, অবশ্য যদি তাকে জল বলতে চান — থকথকে গাঢ় ধূসর এক তরল, উত্তাপ আর পচা গন্ধ ঘিরে থাকে তাকে কুয়াশার মতন, কয়েকটা জাহাজের ধোঁয়া তার সঙ্গে মেশে। ব্রিজের ওপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই যেন সবেগে আক্রমণ করে ট্রাম, বাস আর ট্রাকের সারি — তীব্র বেগে সবাই ছোটে কে লাইনের আগে স্থান পাবে — ব্রিজে ওঠার ঠিক আগে সরু হয়ে যায় রাস্তাটা, গতি কমাতেই হয় ট্যাক্সিকে আর জানলার কাচের মধ্যে দিয়ে অনুভব করা যায় আপনার ওপরে পথচারীদের দৃষ্টি — রেলিং আর রাস্তার ফাঁকে বহুবর্ণের এক সাপ, যে লোকগুলো প্রতিটি ট্রাফিক আলোতে ভিক্ষে চাইতে আসে, আপনি অনেক ভেবেচিন্তে আগেই গাড়ির জানলার কাচ তুলে দিয়েছেন — তারা জানলায় ধাক্কা দেয়, ভিক্ষে চাওয়া ছাড়াও বিক্রি করতে চায় শাকসব্জি অথবা ফলমূল — যেন এক সুসজ্জিত শ্বেতকায় ইয়োরোপীয় মানুষ ব্রিজের মাঝখানে গাড়িতে বসে সব্জি বাজার করবেন; তারা এক দুর্বোধ্য ভাষায় তাদের বিক্রয়কর্ম চালিয়ে যায় যাতে অনধিগম্য শব্দাবলীর মধ্যে বার বার শোনা যায় — “রুপি প্লিজ, আমি খুব গরীব, দয়া করুন সাহেব, বকশিস সাহেব, রুপি সাহেব” এর মতন শব্দবন্ধ। কোনো হুঁশিয়ারি ছাড়াই ড্রাইভার একবার থামলে দরজার ঠিক বাইরে দেখা যায় একটা হাত, তারপরে একটা শরীর ছিটকে যায় গাড়ির থেকে দূরে — গাড়ি চলে যেতে যেতে পেছনে শুনি সমবেত হাসি এবং সম্ভবত: টিটকিরি; ব্রিজের ওপরে যানবাহন এগোয় যেন বিশাল এক ডাইনোসর আস্তে আস্তে গিলতে থাকে থকথকে আঠার মতন দৈত্যাকার এক মণ্ড, যার মধ্যে আমাদের ট্যাক্সি, অসংখ্য ট্রাক, ট্রামগাড়ির সারি — সবাই যেন জনতার সমুদ্রে ভাসমান নিরেট বস্তুসমূহ, আর জনসমুদ্র — পুরুষ, নারী ও শিশু — দুদিকে ভরে রয়েছে সেতুর প্রান্ত পর্যন্ত, হেঁটে চলেছে গাড়ি ঘোড়ার ফাঁকে ফাঁকে অন্তহীন আঁকাবাঁকা পথে; তারপর ডাইনোসর আমাদের হজম করে ফেলে এবং তার উন্মুক্ত মলদ্বার দিয়ে নির্গত হই আমরা সামনের অ্যাভিনিউতে — সেতু অসংখ্য ভাঙাচোরা জঞ্জালে পূর্ণ; সেখানে হাওড়া স্টেশানের জনাকীর্ণ চত্বর, আপনার যাত্রাপথের এখানেই সমাপ্তি, সাহেব।

সেই আগেকার দেখা ন্যাংটো মেয়েটা — এমন অসংখ্য ন্যাংটো মেয়ে রয়েছে সামনের চত্বরে এবং স্টেশানের অন্যান্য দরদালানে — এখন সে সরে গিয়ে বসেছে তার মায়ের পাশে; তার মা ছেঁড়া কাপড় ও কাঁথাকানির বড়ো একটা বোঝাকে বাঁধতে আর খুলতে ব্যস্ত। তাঁর ছোটো ছেলেটা এতক্ষণ মাটিতে বসে বসে কাঁদছিলো, তিনি তাকে দুহাতে তুলে নিলেন, অতিকষ্টে তাকে কাঁখে নিয়ে কোমরে জড়ানো বন্ধনীর মধ্যে ঢোকালেন শিশুর খালি পা দুটো; তারপর সদ্য থামা ট্রাম থেকে নেমে আসা মানুষজন দেখে ছুটলেন ভিক্ষা চাইতে; কিন্তু সেখানে যেতে হ’লে অনেক বাধাবন্ধ পার হতে হবে — মাটিতে বসে থাকা অসংখ্য পরিবারের গোলকধাঁধা, নাকের কাছে জ্বলন্ত উনানে বসানো হাঁড়ি-কড়াই, বিষয়সম্পত্তির ভাঙা অংশ — নোংরা ছেঁড়া মাদুর, যেটা এক পরিবারের এলাকার সীমানা — তার ওপরে স্তূপাকার থালা বাটি, ভাঙা আরশি, টিনের পাত্রে ভরা পেরেক আর তার, কখনও কখনও, অভাবনীয়, রাস্তা থেকে কুড়ানো ফুল একটা রাখা হয়েছে সেখানে সুন্দর বলে, পুজোর জন্যে পবিত্র বলে অথবা কেবলমাত্র ফুল বলেই। আপনি স্টেশানের প্রবেশদ্বারে পৌঁছানোর আগেই ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিয়েছেন, সামনের চত্বরটুকু পায়ে হেঁটে পার হবেন বলে; ট্যাক্সিওলা ছাড়তে চায় না, আপনার পেছন পেছন আসে, অপেক্ষা করতে চেয়ে মিনতি ও তর্ক চালিয়ে যায়; আপনি চত্বরের মানুষজনকে দেখবেন, বুঝবেন কলকাতার প্রথা ও রীতিনীতিকে, তার পর স্টেশানের মধ্যে ঢুকে তার ভেতরটাকে পর্যবেক্ষণ করবেন। ওই পলিতকেশ মহিলা দীপদণ্ডে হেলান দিয়ে গভীর নিদ্রায় মগ্ন, তার মুখ দেখা যায় না, ট্রামের লাইন থেকে দুগজও দূরে নয়, তাকে দেখে মনে হয় মৃত; অথচ তা হতেই পারে না, হয়ত তার ঘুম খুবই গাঢ়, কারণ মাছিগুলো গোল হয়ে ওড়ে তার মুখের সামনে, তাদের একটা বোধহয় ঢুকেই যায় তার আধখোলা চোখের মধ্যে। শিশুরা খেলে যায় তাকে ঘিরে, পচা আম আর পেঁপের টুকরো ছোঁড়ে একে অন্যের দিকে, তারা সেগুলো হাত দিয়ে লুফে নেয় অথবা শরীর দিয়ে আটকায়, হাসে আর ছোটে, কিন্তু বৃদ্ধার তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই, তাই শিশুরা থামার কথা চিন্তাও করে না; আপনারও থামার কোনো কারণই নেই, তা ছাড়া কোনো একটা ঘটনা অথবা বস্তুকে আপনি যদি মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন, তা সঙ্গে সঙ্গেই অন্যদেরও চোখে পড়ে, যারা কাছাকাছি হাঁটছে অথবা চত্বরের পাথরের ওপরে বসে অথবা শুয়ে; এবং তেমন হ’লে তাদেরকে আর এড়িয়ে যাবার উপায় নেই — তারা এসে ঘিরে ধরবে আপনাকে, শিশুরা আঙুল বাড়িয়ে ধরবে আপনার প্যান্ট, তাদের হাত হয়ত আপনার হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছাবে, তারা ভয়ে ভয়ে আপনার প্যান্টের কাছাকাছি দাঁড়াবে আর ক্রমাগত “বকশিস সাহেব, বকশিস সাহেব” আওড়াবে, অন্য শিশুরা দুহাত বোলাবে তাদের চোপসানো পেটে অথবা দীনভাবে হাতদুটো সামনে বাড়াবে খালি ভিক্ষাপাত্রের মতন। আপনি সেই শায়িত, মুখখোলা শরীরের থেকে চোখ সরিয়ে নেন নি দ্রুতগতিতে, কোনো কিছুই আপনার চোখে পড়েনি এমন ভান করে হেঁটে এগিয়ে যান নি সোজা — অন্যের চোখে ধরা না পড়তে এটাই একমাত্র উপায়; আপনার মনে হয়েছে এটা অস্বাভাবিক যে এক বৃদ্ধা ঘুমিয়ে থাকবেন চোখ আধখোলা অবস্থায় — সূর্যের আলো আর মাছিরা নড়াচড়া করে তার মুখের ওপরে; আপনি এক মুহূর্তের ইতস্তত: চিন্তায় নিশ্চিত হয়ে নিতে চান যে সে সত্যিসত্যিই ঘুমিয়ে; এখন তারা আঁকড়ে ধরেছে আপনার প্যান্ট, শতচ্ছিন্ন শাড়ি পরা এক মহিলা তার নগ্ন শিশুকে তুলে ধরছে আপনার সামনে — তার মুখভরা দগদগে ঘা, এক ফেরিওলা তার বাকসেভরা খেলো গয়না দেখিয়ে তাদের গুণপনা ব্যাখ্যা করতে ব্যস্ত; বছর দশেকের একটা ছেলে আপনার কন্টাফ্লেক্স ঘড়ির ব্যান্ডে হাত ঘষে দেখে আর আপনি রাগ না করে তার হাত সরিয়ে দেন বন্ধুতার সঙ্গে, পকেটে হাত দিয়ে খুচরো পয়সা খোঁজেন, পয়সা বের করে দেন সবচেয়ে কুচোগুলোর হাতে, যাতে তারা হাত সরায় আপনার প্যান্ট থেকে; শেষ পর্যন্ত আপনি সফল তাদের গণ্ডী ভেদ করে বেরোতে এবং আপনি এগিয়ে যান চত্বর ধরে স্টেশানের দিকে; আর সেই মুহূর্তে আপনার খেয়াল হয় যে এই কয়েক হাজার পরিবার, এই হেঁটেচলা আর শুয়ে থাকা জনতা — তার সঙ্গে আপনার অথবা আপনার মতন অন্য কারুর তাঁর দেশের এক উন্মুক্ত চত্বরে চলাফেরা করার সঙ্গে এখানকার পরিস্থিতির এক মৌলিক তফাৎ — এরা এই চত্বরে বাস করে, এরা এই চত্বরের অধিবাসী; এরা এই চত্বরে জেগে থাকে, ঘুমোয়, খায়, অসুখে ভোগে এবং মারা যায় — সব কিছু ঘটে এই চত্বরে, ওই নির্লিপ্ত, মেঘশূন্য আকশের নীচে; এই মুহূর্তে তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, কারণ তাদের মনে কোনো আশা নেই। আপনি এই নরকে প্রবেশ করেছেন পকেটে পাঁচ টাকা নিয়ে, এখন আপনার সন্দেহ হয় বুড়ি মারা গেছে এবং যখন কারুর খেয়াল হবে চত্বরের সামনে রাস্তায় দাঁড়ানো ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পুলিসকে খবর দিতে, তখন শহর থেকে মুদ্দাফরাসের ট্রাক এসে তাকে তুলে নিয়ে যাবে। আম আর পেঁপের টুকরো হাতে ক্রীড়ারত শিশুরা জানে যে বৃদ্ধা বেঁচে নেই, কিন্তু তাদের খেলা থামে না। ‘মারে’জ গাইড’ ঠিক কথাই লিখেছে — দৃশ্যটা সত্যিই ছবির মতন।

যে মেয়েটি তার পাঁচ সন্তানের কনিষ্ঠটিকে এতক্ষণ মাই খাওয়াচ্ছিল, সে এখন সব্জি কাটতে শুরু করে — যে সব সব্জি স্বামী দুটো ওয়াগনের ফাঁকে নেমে কুড়িয়ে এনেছিল। ন্যাংটো মেয়েটা তার ভাইকে কোলে নিয়ে ভিক্ষে করতে বেরিয়েছিল — সে ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে মায়ের পাশে বসে; সে এখন অল্প কিছু মুখে দিয়েই শুয়ে পড়তে চায়; আজকে তার কোনো আয় হয়নি, কিন্তু সে জানে যে তার মা সেজন্যে তাকে বকবে না, কারণ বেশিরভাগ দিনই সে ফেরে খালি হাতে; সে কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আকৃষ্ট হয় তার ভায়েদের খেলায় — গোল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে নানা বাসনপত্তর আর জ্বলন্ত উনানের ফাঁকে ফাঁকে। এই পারিবারিক বৃত্ত অল্প সময়ের জন্যে ভাঙে যখন কাউকে কোনো সামগ্রীর লেনদেন বা ভিক্ষায় বেরুতে হয়, অথবা অর্থের বিনিময়ে কারুর ফাইফরমায়েস খাটতে — কিন্তু কয়েকজন সেখানে থেকেই যায় — কারণ জায়গাটা কিছুক্ষণের জন্যে খালি রাখলেও অন্য কেউ এসে তার দখল নিয়ে বসবে — তাই এই দিনরাতের পাহারা। কয়েক মুহূর্তেই অন্য এক পরিবারের বৃত্ত ভেঙে হবে দুটো বৃত্ত — এক তরুণ দম্পতি তাদের মা বাবার সংসার থেকে বেরিয়ে নতুন সংসার পেতে বসবে — তাড়াতাড়ি পেতে বসবে তাদের হাঁড়িকুড়ি, বাসনকোসন আর শতচ্ছিন্ন জামাকাপড়ের স্তূপ। তাই এদের মধ্যে যারা সবচেয়ে দুর্বল তারা বাস করতে বাধ্য হয় ট্রামলাইনের গায়ে যেখানে প্রতি দু-তিন মিনিট বাদ দিয়ে দিয়ে মৃত্যু চলে যায় তাদের গা ঘেঁষে; অথবা চত্বরের অন্য সীমান্তে যেখানে নিয়মিত ট্রেনযাত্রীর চলাচল এবং পাশেই রাস্তা দিয়ে চলে ব্রিজের সমস্ত ট্রাফিক, ভারীভারী ট্রাক এবং বাস সমেত। আপনি গুণে দেখার চেষ্টা করতে পারেন এই বিস্তীর্ণ হাওড়া স্টেশান চত্বরে এই মুহূর্তে কতজন মানুষ নানাভাবে শুয়ে বসে রয়েছে, তা খুবই মুশকিল কারণ চোখ ঝাপসা হয়ে আসে রৌদ্রের এই প্রখর তাপে, আর বিভিন্ন দিক থেকে ধেয়ে আসে শিশুরা আপনার সামনে ভিক্ষে চাইবে বলে আর আপনি ভাবতে বসবেন, এভাবে মানুষ বাঁচে ... তার থেকে অনেক সুবিধের হবে বড়ো দলগুলোকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা, মৃদু হেসে পার হয়ে যাওয়া; যে পেট-ফোলা বাচ্চাটির বড়ো বড়ো কালো চোখ বিষণ্ণ, দীনতাময় দৃষ্টিতে আপনার দিকে তাকিয়ে, তার দিকেও এক অনির্দিষ্ট হাসি, এবং এইভাবে সোজা হেঁটে পৌঁছে যাবেন সেই রাজকীয় স্টেশানের প্রবেশদ্বারে, ভেতরে ঢুকে সূর্যের প্রখর তাপ থেকে বাঁচবেন, হারিয়ে যাবেন তার থমথমে, ছায়াঘন, বিশাল হলঘরে; কিন্তু তার পরেই ভুল ভাঙবে যখন আপনার জুতোর পরবর্তী পদক্ষেপ থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে এক শায়িত নারীর হাত — আপনি বুঝে যাবেন যে কোনো কিছু পাল্টায়নি — স্টেশানের ছাদের নীচেও সেই বাইরের চত্বরে জগত, মেঝে জুড়ে রয়েছে নীরব অথবা উচ্চকন্ঠ জনতা, বাইরের থেকেও ভেতরে যার ঘনত্ব বেশি — অসংখ্য নারী ও পুরুষ বয়ে নিয়ে চলেছে বাক্স-প্যাঁটরা, বোঁচকাবুচকি অথবা অন্য যে-কোনো বোঝা — বসে অথবা শুয়ে থাকা জনতার মধ্যে দিয়ে তারা প্রবহমান; কোনোমতেই জানা সম্ভব নয় তাদের মধ্যে কারা ট্রেনের জন্যে অপেক্ষমান যাত্রী আর কারা, মানে এই অন্যেরা, নরকের সুবিধাভোগী মানুষদের বৃত্তে, বাইরের চত্বরের গনগনে রোদের থেকে রক্ষা পেয়ে, এখানকার মেঝেতে বসে বসে এক অনির্দিষ্ট এবং কর্দমাক্ত নির্লিপ্তি নিয়ে ট্রেনের যাওয়া আসা দেখে। সেই মুহূর্তে আপনার মনে পড়বে এয়ার ইন্‌ডিয়ার বোয়িং বিমানে পাওয়া পর্যটন বিভাগের ট্যুরিস্ট প্রচারপত্রগুলোর কথা এবং অবশ্যই “মারে’জ গাইড”-এর বর্ণনা; অথবা দিল্লিতে লোকসভার এক আলোচনাচক্রে আপনি বিশেষভাবে নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর যে বক্তৃতা শুনতে, তার কথা। সম্ভবত, ঠিক সেইখানে আপনার জুতো এক শায়িত নারীর বাড়ানো হাতের ঠিক পাশে, ঘন সবুজ পাতার এক মোড়ক থেকে সে খায় কয়েকটা বীজ, আপনি উপলব্ধি করবেন যে একমাত্র পাগলামির অনুরূপ কোনো প্রক্রিয়া এবং তার পরবর্তী কর্মপদ্ধতিই (কারণ এয়ার ইন্ডিয়ার প্রচারপত্র, মারে’জ গাইড এবং ইন্দিরা গান্ধী — সকলের চিন্তাতেই রাষ্ট্রবিপ্লব এক অচিন্তনীয় পাগলামি) পারে আপনার পায়ের কাছে ঘটমান সমস্যার সমাধান করতে; সেখানে একটা কুকুর বমি করে ফেলেছে কালো থকথকে পদার্থ — অর্ধেক হজম করা একটা ব্যাঙ হবে হয়তো, অদূরে শায়িত এক শিশু যেই ঘুমের ঘোরে হাত বাড়িয়ে সেই বমিটাকে ছোঁবে, সেই মুহূর্তের মধ্যে আপনি উল্টোদিকে ঘোরেন এবং পা চালান বর্হিদ্বারের দিকে; এবং সন্ধে হবার আগেই আপনার পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয় পুরো ঘটনাটা, যখন শহরের তীব্র দাবদাহ থেকে গা বাঁচিয়ে আপনি স্নান করেন হোটেলের রাজকীয় বাথটবে; কিন্তু ঘটনাগুলো ঘটে চলে ঠিক যেদিন থেকে হাওড়া স্টেশান তার দরজা খুলেছে, সেইদিন থেকে শুরু করে প্রতি দিন ও প্রতি রাত এবং এই শহরের এবং বাকী দেশের অন্যত্র, ইংরেজরা হাওড়া স্টেশান বানানোর অনেক বছর আগে থেকেই; যে নরক ছেড়ে আপনি দৌড়ে পালালেন এবং খুব সুবিধে হ’ল কারণ আপনার আগের ড্রাইভার অপেক্ষা করে ছিল আপনার জন্যে স্টেশানের ঠিক বাইরেই; সে নরক দূর থেকে আপনাকে নিরাসক্ত চোখে দ্যাখে, তার হাসিমুখ, বান্ধবসদৃশ দরজা সবার জন্যে সবসময় খোলা — তার কর্মপদ্ধতি দক্ষ এবং বিশ্বস্ত পরিষেবার পরিচায়ক; এ এমন এক নরক যার বাসিন্দারা কোনো পাপ করেনি এবং তাদের জানাও নেই কেন তারা সেখানে পরিত্যক্ত — কেবল তারা বাঁচে, জীবনযাপন ও সংখ্যাবৃদ্ধি করে যায় চিরকাল; তাদের মধ্যে কয়েকজন হয়তো জাতিভেদ ও দূরত্বের বাধা অতিক্রম করতে পারে, জয় করতে পারে শোষণ এবং ব্যাধিকে; তারা পারিবারিক বৃত্তটিকে অটুট রাখে, খেয়াল করে বাচ্চারা যাতে দূরে না যায় — ট্রাকের ধাক্কায় অথবা মাতালের আক্রমণে না পড়ে; এ নরক এমনই এক স্থান যেখানে চিৎকার, হট্টগোল, ক্রীড়া এবং অশ্রুপাত ঘটে চলে, কিন্তু সকলে ভান করে যে সেগুলো ঘটেনি। ঘটনাগুলো এক বিশেষ সময়ে ঘটে না, কারণ অন্তহীন তার সময়হীন পুনরাবৃত্তি — কলকাতার হাওড়া স্টেশানে, যে কোনো দিন, যে কোনো মাস, যে কোনো বছর — আপনার যখনই ইচ্ছে করবে, গিয়ে দেখে আসুন; যখন আপনারা এই প্রতিবেদন পড়বেন তখনও মানুষগুলো রয়েছে সেখানে এবং বর্ণিত ঘটনাগুলো ঘটছে, সেখানে এবং এখানে এবং অন্যত্র, যেটা আমি, এবং আমার চোখ দিয়ে আপনি, নিজেই দেখেছি। দৃশ্যটি সত্যিই চিত্ররূপময় এবং অবিস্মরণীয়। যান গিয়ে দেখে আসুন, আপনি হতাশ হবেন না, বিশ্বাস করুন।



অনুবাদকের কথা — কোর্তাসারের এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয় ইয়োরোপের দুটি অভিজাত সাময়িকপত্রে ফরাসি ও স্পেনিয় ভাষায়, লুই মাল-এর তোলা ছ’টি আলোকচিত্র সমেত। পরে রচনাটি সংকলিত হয় ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত “লা বুয়েল্‌তা আল দিয়া এন অচেন্‌তা মুন্‌দোস” (জুল্‌স্‌ ভার্নের বিশ্ববিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান কাহিনির শিরোনামটি সম্পূর্ণ উল্টে দিয়ে এই গ্রন্থের নামকরণ— “একই দিনে আশিটি পৃথিবীর প্রদক্ষিণ”)। ১৯৮৬ সালে রচনাটির ইংরেজি অনুবাদ করেন টমাস ক্রিশ্চেনসেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে কোর্তাসারের খ্যাতি, কিন্তু তাঁর রচিত নন-ফিকশানের সংখ্যাও প্রচুর। তাদের বেশিরভাগেরই এখনও ইংরেজিতে অনুবাদ হয় নি।


টীকা:

১) অন্য বিট কবিদের মতন গ্যারি স্নাইডারও কলকাতায় এসেছিলেন ১৯৬০-এর দশাব্দে। “বাজার” কবিতাটি তাঁর “অন্তহীন পাহাড় আর নদীর থেকে ছয়পর্ব” (প্রকাশ ১৯৬৫) কাব্যগ্রন্থে সংকলিত। কোর্তাসারের নিবন্ধটি প্রকশিত হয়েছিল ফরাসি এবং স্পেনিয় ভাষায়, কিন্তু উদ্ধৃত কবিতাটি ছিলো ইংরেজিতে।

২) Murray’s Guide — জন মারে ইংল্যান্ডের এক প্রসিদ্ধ ও অভিজাত প্রকাশক। জন মারে প্রকাশনা সংস্থা স্থাপিত হয় ১৭৬৮ সালে। জেন অস্টেন, লর্ড বায়রন, স্যার আর্থার কোনান ডয়েল প্রমুখের গ্রন্থের প্রথম প্রকাশক তাঁরা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজরা ভাগ্যান্বেষণে ভারতবর্ষে আসা শুরু করলে তাঁদের সুবিধার্থে তাঁরা ১৮৫৯ সালে প্রথম প্রকাশ করেন “অ্যা হ্যান্ডবুক ফর ইন্ডিয়া। কলকাতা বিষয়ক গ্রন্থের প্রথম প্রকাশ ১৮৮২ সাল। ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশাব্দে কলকাতায় বেড়াতে আসা বিদেশিদের হাতে হাতে ফিরতো “মারে’জ গাইড”।




(পরবাস-৭৪, ৩১ মার্চ ২০১৯)