ISSN 1563-8685




জোংগুমহলে

রাহুল মজুমদার


জোংগু, পাসিংডং, মায়াল মালোক লী হোমস্টে গেস্ট হাউস থেকে

১৯ মার্চ ২০১৯

দুপুর ২.০৮ — নিউজলপাইগুড়ি শতাব্দী এক্সপ্রেসে বসে আছি দুজনে। চলেছি জোংগু। উঁহু, পশ্চিম সিকিমের জোংরি নয়, উত্তর সিকিমে জোংগু উপত্যকায়। সিকিমের আদি অধিবাসী লেপচাদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা জোংগু বহুদিন বহিরাগতদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। একবিংশ শতাব্দীতে তার দরজা খুললেও শর্তাবলী ছিল কড়া। ইদানিং সে সব বেশ খানিকটা শিথিল হয়েছে। তাই ...

২০ মার্চ ২০১৯

সকাল ৭.৪৮ — রাতটা যথারীতি তিরুপতিতে কাটল। কথামতো সঞ্জয় তার বাহন নিয়ে হাজির। ও-ই আমাদের পৌঁছে দেবে জোংগুর দোরগোড়ায়।

সকাল ৮.২৬ — বাড়ির জন্য বেশ কিছু কেনাকাটা সেরে সঞ্জয় শিলিগুড়ি ছাড়বার উদ্দেশ্যে গাড়িতে স্টার্ট দিল।

সকাল ৯টা — অর্ধমৃত তিস্তার নিস্তরঙ্গ শরীর দেখতে দেখতে করোনেশন ব্রিজ পার করলাম। তিস্তার দুঃখেই বোধহয়, আকাশের মুখ থমথমে।

সকাল ১০.২৪ — ভুখা পেটের টানে মল্লিতে থামল গাড়ি।

সকাল ১০.৫৪ — উপবাস ভঙ্গ করে আবার পথের টানে। তিস্তা এখানে খানিক গতিশীল।

সকাল ১১.২৯ — রংপোয় পোঁ করে সিকিমে ঢুকে পড়লাম।

সকাল ১১.৫৬ — সিংতাম। এবার গ্যাংটক এড়িয়ে নর্থ সিকিমে যাওয়া।

দুপুর ১২.২৬ — সবুজে মাখামাখি হয়ে মাখা। পথ চড়ছে। আকাশ হুমকি দিচ্ছে। দূরে মঙ্গলের দিকটা বর্ষায় ঝাপসা।

দুপুর ১২.৪৩ — সামদং। দম নেবার উপায় নেই। নিচ থেকে তিস্তা, ওপর থেকে আকাশ ধমকাচ্ছে।

দুপুর ১২.৫২ — পথের ধার থেকে এক রূপসী ঝরনা এক ঝলক হাসি উপহার দিল।

দুপুর ১টা — দ্বিতীয় রূপসীর হাসি উপহার। ফিরতি হাসি দেওয়ার আগেই ডিকচু পথে উড়ান ছু গাড়ি।

দুপুর ১.১৮ — লম্‌বা গাড়ির লাইন — ঢিকিস ঢিকিস গতি আছে যদিও।

দুপুর ১.২০ — চিকচু বাজার চোখের নাগালে — কিন্তু লাগালেন বাইরে — সিকিমে নির্বাচন ঘাড়ের ওপর, তারই অলংকার রাজনৈতিক মিছিল। SDF-এর নির্বাচনী সভা।

দুপুর ১.৩৪ — বক্তৃতা এখনও চলছে। কুড়িজন আঁটতে পারে, এমন জায়গায় দুশো জনের জমায়েত। আকাশের মতো আমাদেরও মুখ গোমড়া।

দুপুর ১.৪৩ — অবশেষে সভাস্থল ত্যাগ করার সুযোগ মিলল।

বেলা ১.৫৬ — সঙ্গ নিলো বৃষ্টি টুপটাপ ছন্দে।

বেলা ১.৫৯ — রালাক। লাক-ই তো ভরসা।

বেলা ২.০৩ — কালচে ভেজা ফিতেটা ধরে মাহুশিলা-তিবুক-এর চিবুক নেড়ে দিয়ে তেড়ে ছুট।

বেলা ২.০৮ — জিরো। জিরোবার সময় কোথা!

বেলা ২.১৪ — রংবং চেকপোস্ট পেরিয়ে রং বং। এবার ডানদিকের চড়াই পথ ধরল সঞ্জয় সারথি।

বেলা ২.৪১ — আগরওয়ালদের পেট্রলপাম্পে এসে হাঁফ ছাড়ল গাড়ি। বৃষ্টির কিন্তু হাঁফ ছাড়ার লক্ষণ নেই। সামনে বড় তোরণ। তার দুটো ভাগ। ডানদিকের পথে ৮কি.মি. মঙ্গল। বাঁদিকের পথ ঢুকেছে জোংগুমহলে। সে পথের ধারে ছোট গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় সি.ডি. লেপচা সাহেব, আমাদের আগামী দুদিনের অভিভাবক।

বেলা ২.৪৯ — ভিজে ভিজেই গাড়িবদল, পথ বদল। ধারাসিক্ত অরণ্য অভ্যর্থনা জানালো। বাঁদিকে অদৃশ্য নদী তার উপস্থিতি প্রবলভাবে জানান দিচ্ছে।

বেলা ৩টে — গর্জন ক্রমশই বাড়ছিল, গাড়িও নামছিল। বাঁদিকে একটা বাঁক নিতেই দেখা দিলেন তিনি — ভীমগর্জনে বয়ে চলেছেন তিনি — একটা প্রাচীন কাঠের পুল দু-পারকে জুড়ে সন্ত্রস্তভাবে ঝুলছে। বর্ষা নেই-আঁকড়ের মতো লেগে রয়েছে। সাবধানে পুল পেরিয়ে সি.ডি. সাহেব আমাদের জোংগু-প্রবেশের ছাড়পত্র নিয়ে চেকপোস্টে ঘুরে এলেন। তারপর আলাপ করিয়ে দিলেন কানাকাচু-র সঙ্গে। কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে বেরিয়ে আসা রংনিঞ আসা রংজম নদী এসে পরস্পরের গলা জড়াজড়ি করে নাম পাল্টে কানাকা হয়ে বইছে সেই আবহমান কাল থেকে। প্রাচীনকালে আরও খানিক উজানে হাতে-বোনা দড়ির পুল ছিল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে সেই পুল পেরিয়ে বিপজ্জনক পাহাড়ী গা বেয়ে প্রাণ হাতে করে উপত্যকায় যাতায়াত করতে হতো। প্রায় ফি বছরই নতুন করে বাঁধতে হতো পুল। ১৭শ শতাব্দী থেকে ১৯শ শতাব্দী এমনটাই চলে আসছিল। বিংশ শতাব্দীতে তৈরি হলো পাকা পুল। সে-ও মাঝেমধ্যে ভেসে যেত। ১৯৭৫ সালে এই পাকাপোক্ত পুলটা তৈরি হয় — এখনও তিনি বিরাজমান, যদিও শরীর স্বাস্থ্য একেবারে টনকো বলা যাবে না। নিচে কানাকা উন্মত্ত উল্লাসে সারাক্ষণ ভয় দেখাচ্ছে।

বেলা ৩.১১ — বাঁকের পর বাঁকে গাড়ি যত উঠছে, ধারাপাতের নামতা তত কমছে।


পাসিংডং
বেলা ৩.১৮ — এসে গেল পাসিংডং — বৃষ্টিভেজা এক নিঃশব্দ গ্রাম। মায়াল মালোকলী হোম স্টের ফুলে ভরা উঠোনে এসে থামল গাড়ি। সি.ডি. নিজে দরজা খুলে আমাদের নিয়ে গেলেন মন ভালো করে দেওয়া ঘরে। জানালা দিয়েই মেঘামাখা প্রকৃতি ফুলেভরা সবুজ নিয়ে অভ্যর্থনা জানালো। সঙ্গের ছোট্ট বারান্দায় অর্কিডের শুভ্র হাসি।

বেলা ৩.২৮ — ১০ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে খানিক বাড়াতে দু কাপ চা নিয়ে হাজির স্বয়ং সি.ডি.। তাঁর পিছনে ছোট মেয়ে কুসং, যে এই হোম স্টে-টা চালায়। ওঁর অন্য মেয়েরা সব মঙ্গনে, শ্বশুরবাড়িতে। সারাদিনের ক্লান্তি গরম চা-বিস্কুট আর অনাবিল হাসিতে কেটে গেল।

২১ মার্চ ২০১৯

সকাল ৬.৪৫ — রাতভর ঝরেও মেঘের গতরে কোনও কমতি নেই। ঠান্ডাও দিব্যি - ৭.৪ ডিগ্রি। এত সকালেই বাড়িময় কর্মচঞ্চলতা। মনে হচ্ছে বড়সড় কোনও অনুষ্ঠান হবে আজ বাড়িতে।

সকাল ৯.৪৮ — প্রাণ ভরে ব্রেকফাস্টের পর সি.ডি. আমাদের নিয়ে চললেন লিংতেম মনাস্ট্রি দেখাতে।

সকাল ১০.০১ — পাসিংডং পেরিয়ে পথ পাকে পাকে চড়তে থাকল। স্পষ্ট হয়ে উঠল উলটোদিকের পাহাড়ের গায়ের বিশাল ক্ষত। সি.ডি. জানালেন, সাত আট বছর আগে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে পাহাড়ের একটা বিশাল অংশ নেমে এসে খোলুং চু-র গতিপথ রুদ্ধ করে দেয় নেমে আসা ধ্বস; তিরিশ ফুট মাটি পাথরের নিচে চাপা পড়ে যায় গ্রামের অনেক বাড়িঘর। গতিপথ রুদ্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় জলাভূমির — মানতাম লেক। সি.ডি. আরও জানালেন, আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে তাঁদের আরাধ্য দেবতা কাঞ্চনজঙ্ঘার আশীর্বাদ পাওয়া যেত এখান থেকে।

বলতে বলতে আমরা লিংতেমের পেমা চোলিং গুম্‌বার পাদদেশে এসে হাজির হলাম। বাঁদিকে কাঁচা মেটে পথ উঠে গেছে গুম্‌বাপানে আর ডানদিকে প্রাচীন চোর্তেনদের পাশ ঘেঁষে নেমে গেছে পাথুরে পরিক্রমাপথ।

সকাল ১০.১১ — গিন্নীকে পরলোকগত আত্মাদের নিরাপদ হেফাজতে রেখে (মানে চোর্তেনগুলোর পাশে বসিয়ে) সি.ডি.কে অনুসরণ করে উঠে এলাম গুম্‌বার চত্বরে। ১৭শ শতাব্দীতে তৈরি বাঁশ-কাঠের মূল গুম্‌বা প্রকৃতির রোশের শিকার হলে ১৮শ শতাব্দীতে গড়ে ওঠে এই পাথরের গুম্‌বা। সংরক্ষণের দৌলতে গুম্‌বা আজও সুদর্শন। রক্ষাকর্তা দেবতা কাঞ্চনজঙ্ঘার আশীর্বাদ শীতল বাতাসের রূপ নিয়ে সতত সঞ্চরমান। লেপচাদের আদি রাজার মূর্তি এই গুম্‌বার অনন্য সম্পদ। পাহাড়ের আরও ওপরে তাঁর একটি বড় মূর্তি স্থাপনের কাজ চলছে। তার কাছেই সি.ডি. সাহেবের আরেকটি বাড়ি আছে — সেখানেও তিনি গড়ে তুলেছেন হোম স্টে। এখন ঘরে বসেই কাঞ্চনদর্শন সম্ভব হবে।

সকাল ১১.০৩ — গুম্‌বা দর্শন সেরে পুণ্যাত্মবেষ্টিত গিন্নীরও খানিক পুণ্যলাভে সামিল হলাম। সি.ডি. সাহেব নিজে হাতে ধরে তাকে পরিক্রমা করালেন। দর্শন করলাম প্রথম রাজার সাধনবেদী। স্বয়ং রিমপোচের সঙ্গে বসে নাকি তপস্যা করতেন রাজা থ্যুকুং মনসলং।

সকাল ১১.২৭ — ফিরে এলাম বাড়িতে। এসে দেখি বাড়ি সরগরম। সি.ডি. সাহেবের মেয়ে জামাইরা আর সাত নাতি নাতনীতে ঘর ভর্তি। বাড়িময় আনন্দযজ্ঞের আয়োজন। গৃহবন্ধন পূজা হবে। দুষ্ট আত্মাদের প্রভাব দূর করার জন্য হাজির গুম্‌বার লামারা। তারই প্রস্তুতি চলছে। সবাই ব্যস্ত।

দুপুর ১২.৪৩ — এত ব্যস্ততার মধ্যেও সাজিয়ে গুছিয়ে অতিথি আপ্যায়নের কোনও ফাঁকি নেই। ফলে ভরপেটে এখন বিছানায় কাত। বাইরে বড়দের ব্যস্ততা, ছোটদের হুটোপাটি আর গাছের ডালে ডালে পাখিদের ডাকাডাকি নাচানাচি।

বেলা ৩.৩৩ — সি.ডি. জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ বেলা আমরা মানতাম যাব। অবশ্য মানতাম লেকে বোটিং-এর আশার গুড়ে বালি — গতবছর ‘বাঁধ’ ভেঙে লেকের জল বেরিয়ে গিয়ে আবার পুনর্মূষিক ভব — মানতাম লেক আবার থোলুং চু। এবারে আমাদের অভিভাবক সি.ডি.-র বড় জামাই। আরও তিনজন খুদে অভিভাবকও চলেছেন সঙ্গে — সি.ডি.-র তিন নাতি নাতনী। নদী যত কাছে আসতে লাগল, পথ তত বিপথ হবার লক্ষণ প্রকাশ করতে লাগল। এই পথই আপার জোংগুর তিংভং পর্যন্ত গিয়েছে। পুরোনো পাকা রাস্তা তো ধ্বসের তলায়, নতুন পথ এখনও হামাগুড়ির পর্যায়ে।

বেলা ৩.৫১ — নদী যখন লাফের নাগালে, তিংভংয়ের পথ ছেড়ে গাড়ি মানতামের পথে খানিক গড়িয়েই থমকে গেল — সামনে কাদা পাথরের দধিকর্মা — এই সৌখীন গাড়ির সেখানে প্রবেশ নিষেধ। বেচারি গিন্নী, ঠোঁটের কাছে ট্যান্টালাস কাপের মত থোলুং চু-র অববাহিকা নিয়ে বসে রইল; বেহায়া বুড়ো লাফাতে লাফাতে চলল থোলুং চু-র রূপদর্শনে।


থোলুং চু (কানাকা নদী)
বেলা ৪.০৮ — সাবধানে আছাড় না খেয়ে মানতাম স্কুলের সামনে আসতে চোখে পড়ল নদীর ওপর অস্থায়ী পুল। লেক খালি হয়ে নদীরূপ ফিরে পেয়ে থোলুং চু ত্রিধারা হয়ে বইছে। এপারের মানুষেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও, ওপারের মানুষদের দুর্দশা শতগুণ বেড়ে গেল। আগে তবু নৌকো বেয়ে এপারে আসা যাচ্ছিল, এখন তা-ও বন্ধ। তিরিশ ফুট পাথর পলি বালির আস্তরণ বড়ই অস্থির। যতবারই পুল বানানো হয়, বসে যায়। বর্তমান পুলেরও একটা দিক বসে যাচ্ছে।

পুল পেরিয়ে নদীতটে নেমে এককথায় হাঁ হয়ে গেলাম। মানতাম লেকের জল সরে গিয়ে দিগন্তবিস্তৃত নদীচরে এখন মন পাগলকরা দৃশ্য। আমি তো মুগ্ধই, দুই খুদে অভিভাবকও আত্মহারা, একজন বেচারি আমার গিন্নীর পাহারাদার হয়ে রয়ে গেছে।

বিকেল ৪.৪১ — সময় কোথা দিয়ে যে উড়ে গেল টেরই পাইনি। আলো কমে এসে টোকা মেরে জানিয়ে দিলো, এবার ফেরা উচিত।

বিকেল ৪.৫৩ — গাড়ির কাছে এসে দেখি একটা সওয়ারি গাড়ির সঙ্গে কাদামাটির গজকচ্ছপ যুদ্ধ চলছে। তাদের মহারণের মাঝে রেখে আমরা ফেরার পথ ধরলাম।

শেষ বিকেল ৫.১৫ — ফিরে এসে বুঝলাম, পুজোর আয়োজন প্রায় শেষ।

সন্ধ্যা ৬.৩১ — সি.ডি. নিজে এসে পারিবারিক পুজোয় যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানালেন। এই পুজোতে সামিল হয় শুধু পরিবারের লোকজন। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া মানে, পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতিলাভ। এ এক অনন্য সম্মান।

সন্ধ্যা ৬.৪৩ — দোতলায় পুজোর ঘরে এসে বসেছি। পারিবারিক পুজোর আসনের সামনে নানারকম মূর্তি — আটা আর কাগজ দিয়ে তৈরি। নানারকম নিশান, মোমবাতি। অনিষ্টকারী অপদেবতাদের লোভ দেখিয়ে বন্দী করে বাড়ি থেকে দূর করে দেওয়াই পুজোর উদ্দেশ্য। লেপচারা মূলতঃ প্রকৃতির পূজারী, কালক্রমে বৌদ্ধধর্মের প্রভাবও পড়েছে তাদের ওপর। পুজোর মূল প্রক্রিয়া বৌদ্ধধর্মরীতি অনুযায়ী, কিন্তু তার আগে কুলদেবতার অনুমতি নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। পুজোর প্রস্তুতিতে লাগে ঘন্টাচারেক, পুজো করতেও তাই।

রাত ৯.৪৩ — চারজন লামার তিনজন ধর্মগ্রন্থ আর আনুষঙ্গিক বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তৈরি ও চতুর্থজন ঘুরে ঘুরে ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত। কয়েকটা অদ্ভুতদর্শন মূর্তির (অপদেবতার প্রতীক) সামনে বিভিন্ন উপাচার — চাল, আটা, ফল, মিষ্টি ছাড়াও নানান কিছু। তিনজনের অবিরাম মন্ত্রপাঠের সঙ্গে ধাপে ধাপে চলল নানা প্রক্রিয়া — দিকবন্ধন, শুদ্ধিকরণ, নৈবেদ্য অনেকটা আমাদের মতোই। অপদেবতাদের ‘বন্দী’ করে ফেলার পর ‘টেনে হিঁচড়ে’ তাদের ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। এবার তাদের ‘বিসর্জন’ দেওয়া হবে কোনও ঝরনার ধারে। প্রকৃতি আর পশুপাখিরা তাদের সদগতি করবে। বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে আমরাও অংশ নিলাম। সব শেষ হলে, সবাই একসঙ্গে খেতে বসা হলো। দু-দিনের সঙ্গ কখন আত্মীয়তায় বদলে গেল, বুঝতেই পারলাম না। আগামীকালই চলে যাব। এখন থেকেই মন খারাপ।

২২ মার্চ ২০১৯


সিংভিক
সকাল ৭টা — প্রায় সবাই গতকাল রাতেই ফিরে গেছে মঙ্গনে, বাকিরা আজ ভোরেই রওনা হয়ে গেছে — আজই অফিস, স্কুলে হাজিরা দিতে হবে।

সকাল ৯.৫০ — মেঘের অসভ্যতায় লিংতেম মানতাম কোনো জায়গা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা হলো না — সি.ডি. জানালেন, শীতে এলে কাঞ্চনজঙ্ঘা কমলালেবু দুইই দেখিয়ে দেবেন। এবারের মতো জোংগুমহল ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে ভারী মন নিয়ে।

আসব, আবার আসব।


(পরবাস-৭৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯)