উনিশ শতকে নবজাগরণঃ স্বরূপ সন্ধান—অলোক রায়; অক্ষর প্রকাশনী, কলকাতা-৯; প্রথম প্রকাশঃ জানুয়ারি ২০১৯; ISBN: 978-93-82041-96-2
ইতালীয় রেনেশাঁসের এক প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞা, মার্কিন ইতিহাসবেত্তা শ্রীমতি জোন কেলী (১৯২৮-১৯৮২)-র ১৯৭৭-এ প্রকাশিত যুগান্তকারী প্রবন্ধ “Did Women Have a Renaissance?"-টি তো এখন নেটে ফ্রি পড়তে পাওয়া যায়। অধ্যাপক অলোক রায়ের বর্তমান বইখানি পড়তে পড়তে ছাত্রাবস্থায় পড়া ঐ প্রবন্ধখানির কথা মনে পড়ে গেল। নেট ঢুঁড়ে ফের পড়ি। আর, অতিবামপন্থী যে অধ্যাপক মশায় আমাদের ক্লাসে বলেছিলেন যে ঊনবিংশ শতকের বঙ্গীয় নবজাগরণ আসলে ছিল শহর কলিকেতার মুষ্টিমেয় উচ্চবর্ণীয় হিন্দু পুরুষমানুষের আদিখ্যেতা--তাঁর কথাটা মনে পড়ে গেল। না, মনে এই কারণে পড়েনি যে তাঁর সে-কথায় (পুরোপুরি) বিশ্বাস করি; মনে এই কারণে পড়ল যে তখন অলোকবাবুর এই বইখানির ‘সূচিপত্র’ পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখছিলাম। পড়ছিলাম।
ফিরে আসছি সে-কথায়।
*
১৮৬৩ খৃষ্টাব্দের বারোই অগাস্ট নবাব আব্দুল লতিফের ১৬ নং তালতলা স্ট্রিটের বাসভবনে এসেছেন মহীশূরের প্রিন্স মুহম্মদ রহিমুদ্দীন, অযোধ্যার প্রিন্স মির্জা জাহান কাদের বাহাদুর প্রমুখ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সেদিন ওখানে “মহমেডান লিটারেরি সোসাইটি”-র প্রথম অধিবেশন বসেছিল যে! সেই শুরু। এ’ ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কারণ ‘দার-উল-হরব’-এর তত্ত্ব মেনে ইংরেজের সঙ্গে সম্মুখসমর নয়, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে চললেই ভারতীয় মুসলমানের যে আখেরে উন্নতি--এই ‘আলিগড়ী স্কুলে’র শুরুয়াৎ এখান থেকেই। [এখানে অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলি, ঐ বাড়ি থেকে কয়েকটি মকান পরেই ডাঃ দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পঞ্চদশবর্ষীয় পুত্র সুরেন্দ্রনাথ তখন বিলেতে আই সি এস পরীক্ষা দিতে যাবে বলে পড়তে বসেছে!] শুরুর দু’বছরের মধ্যেই এই সোসাইটির বাৎসরিক অধিবেশন নিয়মিত বসতো কলকাতার ‘টাউন হলে’। মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটির বিভিন্ন সভায় ইন্দোরের মহারাজা, ভূপালের বেগম এবং জয়পুর, পাতিয়ালা ও কুচবিহারের রাজারা সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। না, ধর্মীয় সংকীর্ণতা এখানে ছিল না, কিন্তু অলোকবাবুর এই বইয়ে আছে। কারণ এর পঞ্চাশটি অধ্যায়ে অ-হিন্দু অনুচ্চবর্ণীয় কোন ব্যক্তি/বিষয়ের ছোঁয়া মাত্র নাই। তাই আমাদের কলেজের ঐ অতিবামপন্থী শিক্ষকের কথা মনে পড়ে গেলঃ রেনেশাঁস কার? কার জাগরণ (বা, নবজাগরণ)?
*
উইলিয়ম জোনস, হেনরি টমাস কোলব্রুক, উইলিয়ম কেরী, হোরেস হেম্যান উইলসন, জেমস প্রিন্সেপ... তালিকাটি নাতিদীর্ঘ নয়। বাঙলা তথা ভারতীয় নবজাগরণের ইতিহাস এইসকল ক্রিশ্চান মহাপুরুষগণ ব্যতিরেক লেখা সম্ভব? কিন্তু অলোকবাবুর এই পৃথুলা কেতাবে ডিরোজিয়ান কৃষ্ণমোহন বাঁড়ুয্যে তিন অধ্যায় ব্যেপে আছেন, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর উপরে দুইখানি চ্যাপ্টার, এমন কি ‘গিরিশ দারোগার আত্মকথা’-ও রয়েছে, কিন্তু জোনস-কোলব্রুক তো নেইই, বেগম রোকেয়ার-ও নামোল্লেখ নেই, সৈয়দ আমীর আলিরও নেই। ভাবো!
কার নবজাগরণ??
*
গ্রন্থশীর্ষনামে লেখক ‘উনিশ শতকে’--বলে দাগিয়ে দিয়েছেন তাঁর ‘নবজাগরণ’ গ্রন্থটিকে। ঊনিশশ’ দশের দশকে বেগম রোকেয়া তাই মুসলিম মহিলাদের আলাপ-আলোচনার জন্যে যে “অঞ্জুমান-এ-খাওয়াতীন-এ-ইসলাম” গড়ে তুলেছিলেন সার্কুলার রোডের বাড়িতে--তারও উল্লেখ হতে পারবে না এই বইয়ে। [কিন্তু, কী আশ্চর্য, অধ্যাপক সুশোভন সরকার ও শিবনারায়ণ রায়ের রেনেশাঁস ভাবনার উপরে দুইখানি অধ্যায় বেমালুম রয়েছে এ’ বইয়ে। দু’জনেই যে বিংশ শতাব্দীর!] বেশ। ক্রীড়াক্ষেত্রে যে নবজাগরণ মোহনবাগান এনেছিল ১৯১১তে সে না-হয় বিদ্বজ্জনের চোখে ব্রাত্য, কিন্তু উনিশশতকেই নাট্যাচার্য গিরীশ ঘোষের নেতৃত্বে বাঙলার মঞ্চে যে নবজাগরণ, তার আলোচনা কৈ? শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের উপরেও কোনো নির্দিষ্ট অধ্যায় নাই! রামমোহন-দেবেন্দ্রনাথের ব্রাহ্ম আন্দোলন থাকলে ফরায়েজী আন্দোলন/তরিকা-ই-মুহম্মদিয়া-র নামোল্লেখমাত্র থাকবে না কেন? তিতুমীরের লড়াই কি জাগরণ ছিল না? আপাদমস্তক সাম্প্রদায়িক ঈশ্বর গুপ্ত ও তাঁর উন্নাসিক ‘সংবাদ প্রভাকর’ নিয়ে লেখক নালেঝোলে হয়েছেন, তবু কাঙাল হরিনাথ ও তাঁর ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’-র নামোল্লেখ নেই। রাসসুন্দরী দেবী আছেন। বেশ। কিন্তু ফয়জুন্নেসা চৌধুরীও কি বাংলার নারীজাগরণের এক কাণ্ডারী ছিলেন না?
অধ্যাপক অলোক রায়ের আজীবন গবেষণাপ্রসূত পৌনে ছ’শো পাতার আলোচ্য গ্রন্থটি তাই ‘স্বরূপের সন্ধানে’ ব্যর্থ, এটির নামে ‘অমনিবাস’ শব্দটি থাকলে মন্দ হতো না।
*
এ’তো গেল ‘নেই নেই’-এর ফিরিস্তি।
এবার যা আছে, যা পড়তে পেলুম সে সম্বন্ধে বলি (যদিও গুনে গুনে ষাটখানি অধ্যায় নিয়ে বলার ইচ্ছে বা প্রয়োজন দুটোই নেই।)
আঠাশতম অধ্যায়ে কবি রঙ্গলাল প্রসঙ্গে অলোকবাবু স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে কে বাঁচিতে চায়...’ দিয়ে শুরু করেছেন। কিন্তু এটা তো কৈ বললেন না যে ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’-এর এই গীত ইংরেজ শাসকবর্গের বিরুদ্ধে গাওয়া নহে, নাটকে রাজপুতরা গাইছে মুসলিম শাসন ভেঙে ফেলার ডাক দিয়ে। তাহলে, কোন্ যুক্তিতে এ’গান বৃটিশবিরোধী সংগ্রামে বাঙালীর/ভারতীয়ের শিকলভাঙার গান হয়? [এখানে ‘কাব্যোৎকর্ষতা’-র মতো ভুল শব্দও পড়তে পেলুম, পৃ ২৮৩]
লেখক যেহেতু প্রথমত বাঙলাসাহিত্যের মানুষ, পরে নবজাগরণের ইতিহাসকার, তাই সাহিত্যগন্ধী অধ্যায় বেশি বেশি করে এসেছে---‘বীরাঙ্গনা কাব্য’, ‘নবীনচন্দ্র সেনের কবিতা’, ‘কামিনী রায়ের অগ্রন্থিত গদ্যরচনা’, বঙ্কিমযুগের প্রবন্ধকার চন্দ্রনাথ বসু-র ‘পশুপতি-সম্বাদ’ ইত্যাদি ইত্যাদি (এ’সবের আলোচনা কী করে বাঙলার নবজাগরণের ইতিহাসের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত, সেটা বোঝা গেল না)। কিন্তু এ’মত সাহিত্যবাসরে ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’-এর কবি নজরুলকে এক্কেবারে বাদ দেওয়া অমার্জনীয় অপরাধ। অমার্জনীয় অপরাধ!
এতো সবের মধ্যে অবশ্য রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের উপর লিখিত ‘নির্বিকল্প সমাধি বনাম স্বদেশোদ্ধার’ অধ্যায়টি মুগ্ধ করেছে।
*
এ’হেন একখানি গ্রন্থশেষে বর্ণানুক্রমিক পরিচিতি/সূচিপত্র থাকা অত্যন্ত জরুরি ছিল। নেই। প্রকাশক শর্টে মেরেছেন।
দাম-ভার-মানের নিরিখে তাই এই ঢাউস কেতাব পাঁচে ডেড়ের বেশি পায় না, যদিও বইটি নিয়ে ঢক্কানিনাদ বেশি হয়েছে, হচ্ছে।
হাফ সেঞ্চুরি প্লাস---আ কলেকশন অব মিনি সাগা-জ ইন বেঙ্গলি--সংহিতা মুখার্জি; প্রকাশকঃ লেখিকা, কৃষ্ণপুর,নউঃ চব্বিশ পরগণা, প্রথম প্রকাশ ২০১৬; ISBN: 978-81-9344556-0-9
ঊনিশশ’ ষাটের দশকে আমাদের বাল্যকালে ‘বাংলা-মিডিয়াম’ ছাত্রদের জন্যে বিশ্বসাহিত্যের উঠোনে এসে ওঠার এক দ্বার ছিল ‘দেব সাহিত্য কুটীর’-এর ‘অনুবাদ সিরিজ’! ‘রব রয়’, ‘কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো’, ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’, ‘রবিনসন ক্রুসো’....। আজকের এই নেটের যুগের বালকবালিকারা এতে নাক-সিঁটকোতে পারে, কিন্তু সুধীন্দ্রনাথ রাহা মহাশয় যে কী মুন্সীয়ানায় অতি স্বল্প পরিসরের মধ্যে ‘বিন্দুতে সিন্ধু’ ধরে এনে দিতেন, সে সব বই যে না পড়েছে তারা তার অনুমান করতে পারবে না তা, আর যারা পড়েছিলেন, তাঁরা তো স্মৃতিঅশ্রুতে ভাসবেন, যেমন এই বুড়ো এখন ভাসছে।
ক্লাস ফোরে পড়া এক বালক জন্মদিনে এমনই এক ভুরিভোজের উপহার পেয়েছিল, ‘বিশ্বের সেরা বিদেশি সাহিত্য’ (একটু ভুল বললাম বোধহয় নামটা)! সমারসেট মম, পার্ল এস বাক, লিও তলস্তয়... এমন সব বাঘা বাঘা নামের সঙ্গে সেই-ই পরিচয়। সেখানেই ছিল জন গলসওয়ার্দির ‘ফরসাইট সাগা’!
‘স্যর, সাগা মানে কী?’ বালকের অবোধ প্রশ্ন।
‘দাঁড়া, তোকে কাল এসে বলবো,’ নিরীহ গণিতশিক্ষকের আত্মসমর্পণ।
*
‘সাগা’ হলো ‘গদ্যে রচিত মহাকাব্য, মূলতঃ বীরকাহিনী’। পরের দিন জানা গেল।
যদিও, কালক্রমে ‘সাগা’ কিন্তু প্রাচীন আইসল্যান্ডীয় ভাষায় লিখিত ভাইকিং-দের লড়াকু গাথা হয়েই আটকে থাকেনি; ‘গ্রিম ভাইদের গল্প’-ও তো ছিল এক ‘সাগা’, যেগুলি কিনা জার্মান উপকথার মনোজ্ঞ সংকলন। তাই ১৯৯৯-তে লন্ডনের বনেদী সংবাদপত্র-হাউজ ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা যখন ঠিক পঞ্চাশ শব্দের ‘মিনি সাগা’-প্রতিযোগিতার আয়োজন করল---অচিরেই এক নব্য জঁরের জন্ম দিল তা। সাই-ফি-র কিংবদন্তীপুরুষ ব্রায়ান এলডিস সাহেব ছিলেন এর প্রধান হোতা, সেটা এখন নেট ঘেঁটে জানতে পারি।
*
কী বলেন, সুধী পাঠক, উপরের এই ‘শিবের গীত’-টুকুর প্রয়োজন ছিল না বর্তমান অসামান্য বইটির কথা বলতে? নৈলে, ‘অণুগল্প’ তো বঙ্গভাষায় এসে গেছেই, প্রতিযোগিতাও হচ্ছে-টচ্ছে, কিন্তু আজ থেকে সাত-আট বছর আগেই এই মানের ‘অণুগল্প’ বা, ‘মিনি সাগা’ যে বঙ্গভাষায় লেখা হয়ে গেছে, সেটা ‘পরবাস’-এর পাঠকদের বলতে ইচ্ছে করবে না? (যদিও, অনেকেই নিশ্চয়ই আগেই পড়ে নিয়েছেন, আমিই পরে এসে হাঁকুপাঁকু করছি বলবার জন্যে...)
*
ফিকশনের গ্রন্থ-সমালোচনা করার সীমাবদ্ধতার কথা আগেও অনেকবার বলেছি; মিনি-সাগার গ্র-স তো আরও অনেক অনেক কঠিন দেখছি, কারণ সেখানে গল্পের অঙ্গছোঁয়া হয়ে গেলে এখানে তো দেখি একেবারে বে-আব্রু হয়ে পড়া! তবু, অন্ততঃ দু’একখানি পঞ্চাশলাইনি-কে এই র্যাম্পে না হাঁটালে আর পারছি না যে! (কপিরাইট-ভঙ্গ মার্জনীয়)
কোট
'লেখক ও প্রকৃতি'আনকোট
ঋদ্ধ সান্যালের অহঙ্কার ডুয়ার্সের এই কোণটুকুর মালিকানা নয় প্রেমিকানা একলা তাঁর।
যন্ত্রণা দিচ্ছে তাঁকে গতরাতের প্রত্যাখ্যান।
ব্যাখ্যা চাইতে নিজেই গেলেন প্রকৃতির অফিসে। অভ্যর্থনায় অভিভূত লেখক কষ্টে বললেন, 'আমি ভীষণ রাগ করেছি। কাল রাতে তোমরা কেউ গেলে না...'
মেয়ে বলল, 'আপশোশ। অজানাই রয়ে গেল, চুমুটা আপনি দাঁত পরে খান, না খুলে।'
বা,
কোট
‘কল্পকথা’আনকোট
একটা দেশে একটা লোক থাকে। তার চারটে কাক আছে। সকাল হলেই সে কাক চারটেকে ছেড়ে দেয়। কাকগুলো দুনিয়া চষে লোকটার চারবেলার খোরাক আনে।
লোকটা সারাদিন ইন্টারনেটে যাবতীয় চেতনায় মগ্ন থাকে। তাছাড়া মাঝে মাঝে সাতাশ লিটার ভুঁড়িতে হাত বোলায়, টোকা দেয় টুকটাকঃ আর ট্যুইট করে, 'কাক ছড়ালে ভাতের অভাব হয় না।'
*
না, এর চেয়ে বেশি বলে দেওয়াটা অসমীচিন হবে।
*
সত্যিকথা বলতে কি, অণুগল্প যে ঢের পড়েছি-টড়েছি--তা তো নয়, বরঞ্চ এই নব্যজঁরের প্রতি প্রাচীনপন্থীদের কথঞ্চিৎ উন্নাসিকতা থাকাটা হয়তো অস্বাভাবিক নয়; যতক্ষণ না সংহিতা দেবীর এতোগুলো অণুগল্প গোগ্রাসে পড়ে ফেলা গেল এখনই। ওঁকে তাই এই ধারার ভগীরথ বলতে ইচ্ছে করছে। [ঊনপঞ্চাশ সংখ্যায় প্রথম ভারতীয় গ্রাফিক-নভেলের রূপকার বঙ্গসন্তান সারনাথ ব্যানার্জীর কথা বলতে গিয়ে এমনই নালেঝোলে হয়েছিলাম, মনে পড়ে যাচ্ছে।]
'মিনি সাগা'ঃ অস্যার্থ, পঞ্চাশটি শব্দের মধ্যে শিল্পিকভাবে মনের কথাটি বলে দেওয়া। তাই প্রথমেই একটা প্রশ্ন জাগছে মনে, 'মিনি-সাগা কবিতা নয় কেন?' কী পার্থক্য এর সঙ্গে গদ্যকবিতার? দেখলাম গ্রন্থশেষে সংহিতা নিজেই এই আলোচনাটি করে দিয়েছেন। ওঁর চাইতে এ'প্রশ্নের উত্তর তো আমি আর বেশি ভালোভাবে দিতে পারতাম না, তাই ওঁর লেখাটিকেই তুলে দিলাম এখানেঃ
".....কবিতায় শব্দ শুধু অর্থের সাযুজ্যে সাজানো থাকে না। কবিতার শব্দসজ্জা একটা গতিময়তার রূপ। নিয়মমাফিক মাত্রায়, পর্বে নির্ধারিত সেই শব্দসজ্জা ছন্দানুগ। সে শব্দসজ্জায় অন্ত্যমিল বা মধ্যমিল থাকুক বা না থাকুক, সে শব্দসজ্জায় ছন্দানুগ গতিময়তা থাকে।
"সংস্কৃত কাব্যের ছন্দ বা অন্যান্য গদ্যছন্দের সাথে তুলনা করলেও দেখা যাবে, মিনি সাগায় গল্পের গতিময়তা বা গতিহীনতা রয়েছে, শব্দের গতিময়তা নেই। অর্থাৎ, ছন্দও নেই। বেশ কিছু গদ্যকবিতা ছত্রে ছত্রে সাজিয়ে দিলেও ছন্দ ধরা পড়ে তাতে। আবার কিছু কবিতা টানা গদ্যে লেখা হলেও তার অস্বচ্ছতায় ধরা পড়ে তার কবিতার গঠন। কিন্তু মিনি সাগার গদ্যে কাব্যধর্ম নেই তার অকপট কথকতায়। ...."
*
তত্ত্বকথা ছেড়ে ফের ফিরে আসতে সাধ জাগছে মিনি-সাগার গায়ে গায়ে। লেখিকার আর কোনো লেখা পূর্বে পড়েছি বলে মনে পড়ে না, তাই 'ফুলটুসি লেখে কারণ', 'রেলিং', 'শ্রান্ত পান্থের বৃক্ষনিবাস' বা, 'প্রবচনকার'-এর মতো সাগা-গুলি পড়লে মনে হয় উনি প্রবীণা, ভূয়োদর্শী। আবার 'দ্বিধা' বা, 'দাদাকাহিনী'-তে নবীন কলম স্পষ্ট চিনতে পারা যায়। নবীনা হোন্ বা প্রবীণা, বাড়ি তাঁর রামরাজাতলায় না চন্নননগরে--তাতে যায় আসে না কিছুই। নব্যজঁরের পঞ্চাশখানি মিনি-রচনায় তিনি মনে দাগ কেটে রেখে গেলেন--এটাই ধরা থাক।
*
প্রচ্ছদ মনমতো হয়নি। বহু বানান ভুলও রয়েছে অনেক অনেক স্থানে।
অন্য গদ্যঃ যেখানে কোনো গল্পকথা নেই--সম্পাদনাঃ সোমা মুখোপাধ্যায় ও প্রকল্প ভট্টাচার্য; গায়ত্রী প্রকাশনী (সম্পূর্ণ ঠিকানা নেই); ISBN: নেই
'গদ্য' কাহাকে বলে?
আর 'গল্প'?
'প্রবন্ধ', 'রম্যরচনা', 'ভ্রমণকাহিনী' থেকে মায় এই 'গ্রন্থ-সমালোচনা'?
অভিধান বলছেন, ‘ছন্দ বা অন্ত্যমিল দ্বারা সীমাবদ্ধ নয় এমন রচনা’ হলো 'গদ্য'। আর গল্প হলো 'কাহিনী, উপকথা'। 'প্রবন্ধ' আর 'নিবন্ধে'র মধ্যে পার্থক্যটা তো আজ পর্যন্তও বুঝে উঠতে পারলেম নাকো। অভিধানে দেখুন, কেমন গোঁজামিলের সংজ্ঞা দেওয়া রয়েছে। সেটাও দেখে নিতে হলো, কারণ বর্তমান গ্রন্থের রচনাগুলি এই শ্রেণীরই অন্তর্ভুক্ত; আর সম্পাদকদ্বয় মুখবন্ধে সে-কথা বেশ যৌক্তিকভাবেই ফেঁদেছেন। শীর্ষনামে 'যেখানে কোনো গল্পকথা নেই'-বলে ঘোষিয়ে দেওয়াটাতে পাঠক যেমন আকর্ষিত হন, তেমনি তার আশা বা প্রশ্নটাও জাগরূক হয় বেশ। যাক্, এটিকে চমৎকার মার্কেটিং টেকনিক বলে মেনে নিলাম, এবারে অন্দরে প্রবেশ করি।
*
বর্ষীয়ান রামকৃষ্ণ সান্যাল-স্বপ্নময় চক্রবর্তী মশায় থেকে নবীন প্রকল্প ভশ্চাজ, অনুষ্টুপ শেঠ....অমিতাভ প্রামাণিক....কে নেই? কাকে ছেড়ে কাকে ধরি আগে? এঁদের মধ্যে অনেকেই আমাদের এই 'পরবাস'-পত্রিকার নিয়মিত লেখক বটেন, যাঁদের লেখালেখির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত পরিচয়। তবে, যাঁর লেখা এই সংকলনে পড়ে সবচেয়ে মুগ্ধ হলাম তিনি অনামী সোমা মুখোপাধ্যায়। পুরান থেকে মঙ্গলকাব্য থেকে পুরনো কলকেতার গপ্প থেকে ছেনে আনা এঁর 'হারানো খাবারের সন্ধানে'--একটি ক্লাস-এপার্ট লেখা, এতো কম পরিধির মধ্যে। আর, শুধু খানা নয়, তার উপচার হিসেবে কাঁটাল-কাঠের পিঁড়ি বা খুঞ্চেপোষ দেওয়া জলের গেলাস স্মৃতিমেদুর করে তোলে মন। খাদ্যেতিহাস তো বেশ কিছু লেখা হয়েছে, সোমা-দি, এবার বাঙালী-খানার অনুষঙ্গ নিয়ে এক পূর্ণ প্রবন্ধ লিখুন, পড়তে চাই--তাতে পরিবেশনের আগে মাটিতে জল ছিটিয়ে 'শুদ্ধু' করে নেওয়া থেকে গণ্ডূষে আচমন থেকে পাশে 'পাখা-নাড়ানো শাঁখাপরা হাতটিও' থাকবে। হায় রে, কল্যাণী দত্তের মতো লেখিকা হারিয়ে গেছেন, কে আর লিখবে এ'সব?
বর্ষীয়ান সুমিত রায় মহাশয়ের 'একটি কিশোরের আকাশবাণী' সুখপাঠ্য ও তথ্যবহ লেখা বাঙালীর 'রেডিও শোনা' নিয়ে, যদিও ওঁর দেওয়া এই তথ্যটি পুনরায় পরখ করে দেখে -নেওয়া উচিতঃ বৃটিশ সুরকার জন হারবার্ট ফাউল্ডস্-কে (১৮৮০-১৯৩৯ খৃ.) উনি 'আকাশবাণী'-র সিগ্নেচার টিউনটির প্রণেতা লিখেছেন, আমাদের তথ্যমতো এটা বম্বেতে শরণার্থী ইহুদী সুরকার ওয়ালটার কফমান হবেন [https://en.wikipedia.org/wiki/Walter_Kaufmann_(composer)]
নবীন প্রকল্প ভট্টাচার্যকে 'আধুনিক শিব্রাম' বলেন কেউ কেউ তাঁর অদম্য 'পাণাসক্তি'-র জন্যে, যার স্বাদ পাঠক অহরহ পেয়ে থাকেন ফেসবুকের পাতায়। এখানে কিন্তু উনি রস-পরিবেশন না করে বীরবলী-ঢঙে রস-নিবন্ধ লিখেছেন এক। বেশ। তবে, এইপ্রকার এক এক জন করে লেখক ধরে ধরে পরিচিতি করিয়ে দেবার পরিসর এখানে নেই তো, তাই নূতন এই প্রকাশনালয়ের প্রোডাকশনটি সম্বন্ধে সামগ্রিকভাবে বলিঃ
প্রথম ঊর্দ্ধকমাটি বহু বহু স্থানে উল্টো পড়েছে, অনেক অনেক স্থানে নেই-ই, যেমন, 'সব্বোনাশ', 'ডমরু চরিত' [পৃ-২৩২-৩]
মজবুত বাঁধাই, কিন্তু তৌসিফ হকের কাছ থেকে এর চেয়ে উন্নততর অনেক অনেক প্রচ্ছদ আমরা পেয়েছি আগে।
আড়াইশ'+ পৃষ্ঠার বইয়ের অনেক জায়গায় ছাপার কালি হালকা পড়েছে কেন?
গ্রন্থশেষের 'লেখক-পরিচিতি'-গুলি সুখপাঠ্য হয়েছে বেশ---ছোট ছোট লেখা, কিন্তু চমৎকার।
আরও কয়েকটি লেখার উপরে দু'এক কথা বলার ইচ্ছে করছে, কিন্তু স্থানাভাব! কাশ্মীরি ঋষি নুরুদ্দীন ওয়ালি উর্ফ নন্দঋষির উপরে রাজীব চক্রবর্তীর নিবন্ধখানি যেমন। চমৎকার লেখা। প্রাসঙ্গিক লেখা ৬৩-সংখ্যা পরবাসে পাওয়া যাবে, কাশ্মীরি কবয়িত্রী হব্বা খাতুন প্রসঙ্গে
*
সবশেষে লিখি (সর্বাগ্রে হওয়া উচিত ছিল) মালদহের রামকৃষ্ণবাবুকে তো আমরা খাদ্য-ইতিহাসকার হিসেবেই জানতাম [জনপ্রিয় 'নুনেতে ভাতেতে'-র সম্পাদক]। কিন্তু এখানে তাঁর Paleobiology-র উপরে লেখাজোকা পড়ে অবাক হলাম, গৌড়ের অন্যনাম যে 'জান্নাতাবাদ' ছিল (নবাব নাসিরুদ্দিন মামুদ শাহের দেওয়া) সেটাও তো জানতাম না!
নূতন প্রকাশনালয়ের কাজকে স্বাগত জানাই। ভবিষ্যতেও এরকম আরও সংকলন পড়তে চাই।
Under the Banyan Tree: The Forgotten Story of Barrackpore Park--Monabi Mitra & Soumen Mitra; Aakar Books, Delhi-110091; First published 2019; ISBN: 978-93-5002-621-2 শিশুভোগ্য উদ্ভট-রসসাহিত্যিক-তথা-চিত্রী হিসেবেই ইংরেজ শিল্পী এডওয়ার্ড লীয়র (১৮১২-১৮৮৮ খৃ.)-সাহেবকে আমরা (বেশি) চিনি-জানি, না? এবং ‘লিমেরিক’-এর স্রষ্টা হিসেবে। সে দিক থেকে উনি আমাদের নিজস্ব সুকুমার রায়ের মন্ত্রগুরু ছিলেন বটে। কিন্তু লীয়র-সাহেব প্রকৃতিবিজ্ঞানী-চিত্রকর হিসেবেও যে কত বড় ছিলেন সে-কথা শুনেছিলাম; তাঁর সে-হেন চিত্ররাজির সঙ্গে হাতে-গরম পরিচয় হয়ে গেল বর্তমান পিকটোরিয়াল-বুকখানি হাতে নিয়ে--প্রথম প্রচ্ছদখানি অবলোকনমাত্র। কারণ, এ’খানি তাঁর ১৮৭৩-৭৪এ’ কলকাতা-ভ্রমণকালে আঁকা ব্যারাকপুরের বটবৃক্ষটি, বয়সে যে শিবপুরেরটির চাইতেও জ্যেষ্ঠ, আজ তিনশত বৎসর হলো। বলা বাহুল্য, এমন একখানি প্রাণ বিবিধ শিল্পীর আকর্ষণের বস্তু হবে। লীয়রের চাইতে দেড় দশক পূর্বে ভাইসরয়জায়া শার্লট ক্যানিং [হ্যাঁ, ইনিই ‘লেডিকেনি’-খ্যাতা !] সাহিবাও এঁকেছিলেন গাছটির ছবি। দেখতে পেলাম পৃ ৭৪-এ’।
বস্তুতঃ, এই বইখানি ছবির না (আঞ্চলিক) ইতিহাসের--ধন্দে পড়তে হয়। বলতে দ্বিধা নেই, চিত্র এবং লিখনের এমন সুপটু ও সুষম ভারসাম্য বহুদিন কোনো ভারতীয় প্রোডাকশনে দেখিনি (গতসংখ্যায় ভূমধ্যসাগরীয় ইতিহাসের উপরে যে পিকটোরিয়াল বুকটির কথা বলেছিলাম, সেটি লন্ডনীয়, হে পাঠিকা। যদিও বর্তমানেরটি তার চাইতে গুণে-মানে কোনো অংশে কম নয়।)
*
মানছি, প্রিয় লীয়র-সাহেবের ছবি দেখে একটু ‘শিবের গীত’ গেয়ে ফেলেছি। ‘পরবাস ৫৭'- সংখ্যায় পানিহাটি-ব্যারাকপুরের বাসিন্দে ‘যম দত্ত’-মশায়ের ডাইরিটি রিভিউ করতে গিয়ে লিখেছিলাম, “...‘আঞ্চলিক ইতিহাস’-এর কথা আজকাল তো কত শোনা যায়। পশ্চিমে তো রীতিমত স্কলাসটিক গবেষণা চলে, ভারতেও এখন আইসিএইচআর-এর উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে...”....আর, আজ বর্তমান বইখানির কথা লিখতে গিয়ে আরও তন্নিষ্ঠ হয়ে OPS (One Place Study)-র কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, কারণ এখানে ইংরেজদের Barrack-শহর ব্যারাকপুরের কথা নয়, গঙ্গার ধারের চমৎকার সবুজে-সবুজ ‘ব্যারাকপুর পার্ক’-এর গল্প শুনিয়েছেন লেখকদ্বয়। আর শুনিয়েছেন কী মুন্সীয়ানায়, ... আর কী কী সব দুষ্প্রাপ্য ছবির পসরা সাজিয়ে!! ‘Unputdownable’ শব্দটি আজকে ক্লিশে হয়ে গেছে বটে বহুব্যবহারে, তবু হে পাঠক, আপনাকে এ’বই হাতে নিয়ে দেখতেই হবে শব্দটির দ্যোতনা পুনঃ সমঝে নিতে।
*
ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিক থেকেই নগর কলিকাতার জনবাহুল্য ও ব্যস্ততা থেকে বাঁচতে ইংরেজ শাসকগণ শহরের উত্তরে গঙ্গাতীরের ‘চানক’ গ্রামের শান্তসবুজ পরিবেশে পালিয়ে যেতেন সপ্তাহান্তে। ক্রমে সেখানে তৈরি হলো মস্ত সৈন্য-ব্যারাক--যা থেকে আজকের ‘ব্যারাকপুর’ নামটি এসেছেঃ এই মতটিই সমধিক প্রচলিত। সিমলা বা দার্জিলিঙের সামার-ক্যাপিটাল বনবার আগে পর্যন্ত বেশি রমরমা ছিল ব্যারাকপুরের, বড় বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট হয়েছে এখানে---সে-সব আজ ইতিহাস---যেটাকে এই পৌনে-দুশো পৃষ্ঠার ‘ডাইজেস্ট সাইজ’ [14 সেমি × 21 সেমি (5 1⁄2 by 8 1⁄4 ইঞ্চি)] পুস্তকে ধরে রেখেছেন লেখকদ্বয়। অসংখ্য ছবিগুলি উপরি-পাওনা নয়, পুস্তকের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেখানে যেমন এডওয়ার্ড লীয়রের আঁকা প্ল্যান্টস্ এন্ড লাইভস রয়েছে, তেমনি লস এঞ্জেলসের ‘পল গেটি ম্যুজিয়ম’, সিডনি লিভিং ম্যুজিয়মের ‘ক্যারোলিন সিম্পসন কালেকশন’, বা, ‘ভিক্টোরিয়া এন্ড এলবার্ট ম্যুজিইয়ম’-এর সৌজন্যে প্রাপ্ত বহু বহু চিত্র রয়েছে, প্রায় সবগুলিই রঙীন। বহু চিত্র দুষ্প্রাপ্য, যেগুলি দেখতে হলে আপনাকে চার মহাদেশ এক করতে হতো। দুই মলাটের মধ্যে এগুলি দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যের, তাই বধাঈ দেই লেখকদ্বয়কে। এবং, একারণেই বইটির মূল্য অত্যধিক বলা যাবে না।
*
লিখনপ্রসঙ্গে আসি।
ষোলখানি অধ্যায়ে বিভক্ত বইটি। কয়েকটির নাম দেখলেই পাঠক ধারণা করতে পারবেন এর লিখনগতি--‘A Really Pretty Place’, ‘The Eye of the Storm’, ‘Hawks and Kites’, ‘Ruin and Renewal’ ইত্যাদি ইত্যাদি। যেভাবে মানুষ ও পরিবেশ ও অট্টালিকা ও নদী নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বইটি---সেটিই এক অনবদ্য নির্মাণ। এই বই এর মূল কৃতিত্ব, তাই, যায় তার এডিটরের দিকে। কোনো এডিটরের নাম নেই, এখানে। তাই লেখককেই ধরে নিলাম এ’গ্রন্থের নির্মাতা, যিনি ছিলেন কলিকাতানগরীর প্রাক্তন পুলিশ-কমিশনার। এক কিংবদন্তী--‘দেশ’ পত্রিকা যে একমাত্র কমিশনারকে নিয়ে প্রচ্ছদচিত্র করেছিল ২০১৬তে।
*
বলতে বসলে তো কপাট খুলে যায়। তবু শেষ অধ্যায় ‘Ruin & Renewal’ সম্বন্ধে দু’কথা বিশেষ করে না বললে অন্যায় হয়ে যাবে। স্বাধীনতার পরে ভারত সরকার এই ব্যারাকপুর পার্ক ও গভর্নমেন্ট হাউজের মালিকানা ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারে’র হাতে তুলে দেয়, যে দায়িত্ব ‘পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে’র হাতে এসে পড়ে। প্রায় সাত দশক অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকবার পরে বর্তমান প্রশাসকের বিশেষ উদ্যোগে তার লাউঞ্জ থেকে শস্ত্র–কক্ষ থেকে মিন্টো ফাউন্টেন কেমন কেমন রূপ পেয়েছে পূর্ব ও বর্তমান চিত্র দিয়ে দিয়ে সাজিয়ে দেখিয়েছেন তিনি। অতীব রোমাঞ্চকর। ইতিহাসটা শাসকের না শাসিতের সেটা তো আর বড় কথা নয়, বড় কথা হলো ‘ইতিহাস’-ই! নৈর্ব্যক্তিক, নির্মোহ, কিন্তু আবার অতীতকে ভালোবাসার ইতিহাস! সেই আবেদনের নিরিখে এই চিত্র-গ্রন্থ দশে দশ পায় গো!
*
হেলা ফেলা সারা বেলা, একি খেলা আপন সনে....না, এই বইটির সনে। সারাদিন একটা কেটে যায় এমন এক বইয়ের পাতা উল্টোতে উল্টোতে। শুধু যে ইংরাজ রাজপুরুষগণের গল্প আর ছবি--তা তো নয়। তাদের জীবনচিত্র, মানুষজন--সহিস, আয়া আরও নানান দেশীয় মানুষজনের ছবি আর গল্প উঠে উঠে এসেছে এখানে।
ইতিহাস তো আর শুধুমাত্র রাজাগজাদেরই গপ্পো নয়, আবার তাদের ছাড়াও নয়। সবকিছু নিয়েই ইতিহাস.....ছবি...জীবন...চালচিত্র...
‘শাসক’--বলে দূরে সরিয়ে রাখবে?
ইতিহাস থেকে সরিয়ে দিতে পারবে?
(পরবাস-৭৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯)