জেদ ধরে মায়ের নিষেধ অগ্রাহ্য করেই জুলেখা আজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে। মেয়েটাকে মা নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল। সে কথা কানে তুলেনি। কি এক দুর্দমনীয় ক্রোধ জুলেখার হিতাহিতজ্ঞান গিলে নিয়েছিল। স্টেশনে আসবার পর ভেতরের ক্রোধ খানিকটা থিতু হয়ে এলে একবার ভেবেছিল ফিরে গিয়ে মেয়েটাকে বরং মায়ের কাছেই রেখে আসবে। কিন্তু ততক্ষণে ট্রেন প্লাটফর্মে এসে গেছে। আগুপিছু আর ভাববার সময় পায়নি জুলেখা। অন্যান্য যাত্রীদের সাথে হুড়মুড়িয়ে তিন বছরের মেয়ে আফসানাকে প্রায় বগলদাবা করে ট্রেনে উঠে পড়েছে। আজ পৃথিবী উল্টে গেলেও সে ঢাকা যাবেই। মা কতবার ছোটো ভাই জুলহাসকে অনুনয় বিনয় করেছে একবার গিয়ে দুলাভাইয়ের খোঁজ খবর নিয়ে আসুক। জুলেখাও তাই চেয়েছিল। কিন্তু মা-বোনের চাওয়ার ধার নেশাখোর ভাইটা ধারেনি। সে আছে তার নিজের ধান্ধা নিয়ে। যাবো যাচ্ছি করে করে এগারো মাস পার করেছে, আর কত! ভাইয়ের আশা বাদ দিয়ে জুলেখা নিজেই ঢাকা যাবে ঠিক করে। গতকাল সন্ধ্যার পরই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে সে।
ট্রেনে উঠে ভাগ্যক্রমে জুলেখা বসবার জায়গাও পেয়ে যায়। পাশের চোয়াড়ে চেহারার লোকটা এক পলক তাদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে জানালার দিকে সেই যে মুখ ঘুরিয়ে বসেছে, এতটা পথ পেরিয়ে আসবার পরও তাকে খুব একটা এদিক সেদিক তাকাতে দেখেনি জুলেখা। এর ভেতর মোবাইলে বার কয়েক কথাও বলেছে ওপাশে মুখ ঘুরিয়েই। লোকটা বেশ জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে ওদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে। প্রথমে ওরকম একটা চোয়াড়ে চেহারার লোকের পাশে বসেছে ভেবে জুলেখার কেমন একটু অস্বস্তিমাখা ভয় ধরেছিল। কোনো অজুহাতে লোকটা যদি তার শরীর ঘেঁষে বসে বা হাতটাত রাখার ছুতো খোঁজে। পরে লোকটার নির্লিপ্ত ভঙ্গি আর জড়োসড়ো হয়ে বসবার স্থায়ী আয়োজন দেখে অস্বস্তিটা চাপা পড়ে গেছে।
মেয়েটা মায়ের কোলে মুখ গুঁজে নিঃসাড়ে ঘুমাচ্ছে। ঘুম ভাঙলেই ক্ষিদে পাবে, আর খাওয়ার জন্য কান্না জুড়ে দিবে। সঙ্গে কোনো খাবারও নেয়া হয়নি মেয়েটার জন্য। এতটা জেদ না করলেই পারতো। আস্তে ধীরে গুছিয়ে রওনা দেয়া যেত। পাশের বাড়ির পিনু খালা গতকাল সন্ধ্যায় বাড়ি বয়ে এসে গুরুতর একটা খবরের সাথে গুচ্ছের কথা না শোনালে, আর তাতে মা অতটা সঙ্গত দেয়ার আগ্রহ না দেখালে, জুলেখা আজ এভাবে বের হতো না হয়ত। প্রায় এগারো মাস তো গড়িয়ে গেছে ইতিমধ্যে, আর এক দুদিনে কি এমন ক্ষতি হতো। আবার পাশের লোকটার মোবাইলটা বাজতে শুনলো জুলেখা। নীচু গলায় কথা বললেও জুলেখা এবার কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করলো; কাউকে অভয় দিচ্ছে বলে মনে হলো ওর। লোকটার কথাবার্তায় কেমন এক ধরনের মায়া জড়ানো। আফসানার বাবাও এমন মায়া জড়ানো ভঙ্গিতে কথা বলে। আহা আজ কতদিন তার কন্ঠটা পর্যন্ত শুনতে পায় না! মানুষটার কোনো খোঁজ খবর নাই। জুলেখার চোখে অবাধ্য জলেরা সুযোগ বুঝে প্লাবিত হওয়ার পথ খুঁজে নিতে চাইল বুঝি। এক দঙ্গল মানুষের ভিড়বাট্টার ট্রেনে বাচ্চা কোলে একজন তরুণী কাঁদছে, ব্যাপারটা ট্রেন যাত্রীদের জন্য আগ্রহোদ্দীপক দৃশ্যের সৃষ্টি করলেও তার জন্য লজ্জার। প্রাণপণ চেষ্টায় জুলেখা চোখের পানি আটকায়।
পিনুখালা কীভাবে ওরকম রূঢ় কথা বলতে পারলো ভেবে অবাক লাগছে জুলেখার। মানুষটার অসুখ বিসুখও তো হতে পারে। সাড়ে তিন বছরের বিবাহিত জীবনে এমনটা তো আগে করেনি তার স্বামী। গফুর চাচা নাকি ঢাকায় গিয়ে তার স্বামী রহমত আলীকে মিরপুরের কাছে অন্য আরেক মেয়ের সাথে রিকশায় দেখেছে। সে খবরটা নিয়ে মহা উত্তেজিত পিনু খালা গতকাল সন্ধ্যায় তাদের বাড়ি এসে মেলা কথা বলে গেছে। মুখের আগল নাই পিনু খালার। জুলেখার মুখের উপর বলে গেছে তার মজা নাকি ফুরিয়েছে, তাই অন্য মেয়েতে মজেছে স্বামী। খোঁজ খবর করছে না মানেই আরেকটা বিয়ে করেছে তার কোনো মানে আছে! আর এক মানুষের সাথে অন্য মানুষের মিল তো থাকতেই পারে। গফুর চাচা কাকে দেখতে কাকে দেখেছে ঠিক নাই।
হয়ত চাকরির জায়গায় কোনো সমস্যা হয়েছে। কত কিছুই তো হতে পারে। স্বামী দূরে থাকা মেয়েদের এমন মুখ নাড়া শুনতে হয়, তাছাড়া পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস কি! খোলা খাবারের মাছির মতো স্বভাব হইল পুরুষ জাতটার। গজর গজর করতে করতে মা রান্না ঘরের দিকে চলে যেতেই জুলেখা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পৃথিবী উল্টে গেলেও সকালে সে ঢাকা যাবেই যাবে। গিয়ে নিজ চোখে দেখে আসবে তার স্বামী জনি গার্মেন্টসের এসিসট্যান্ট সুপারভাইজার রহমত আলী কোন সুখাদ্যের আশেপাশে ভনভনাচ্ছে।
জুলেখা একটু উশখুশ করে। রাগের মাথায় পেচ্ছাব করে আসা হয়নি। এখন চাপ অনুভব করছে। তার বরাবরের অভ্যাস বাইরে বের হবার আগে পেচ্ছাব করে বেরুনো। সকালে মা যেরকম কাওমাও শুরু করলো সে ঢাকা যাবে শুনে, জুলেখাও একরোখার মতো জেদ ধরলো সে আজ এই এক্ষুনি বের হবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। চাপান উতোরে অধিক মনোযোগী হওয়ায় আর শেষ মুহূর্তে পায়খানায় যাওয়ার কথা মনে ছিল না। একেই ঘুমন্ত মেয়েটা কখন উঠে কান্না জুড়ে দেয় সে চিন্তায় অস্হির, তার উপর যোগ হয়েছে পেচ্ছাবের চাপ, জুলেখা একটু অসহায় বোধ করে। এসব লোকাল ট্রেনে বাথরুম থাকে না। সঙ্গে স্বামী থাকলে এমন উটকো বিপদে সহায় হওয়ার সঙ্গী হতো। বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস সঙ্গোপনে বাতাসের বুকে সঁপে দিয়ে জুলেখা সামনে আখাউড়া জংশনে নেমে চাপমুক্ত হয়ে মেয়ের জন্য খাবারের বন্দোবস্তের আশা নিয়ে বসে থাকলো।
আমিনুলের মনে হলো ট্রেনটা বড় মন্থর গতিতে এগোচ্ছে। তারচে দৌঁড়ে ঢাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যেত এতক্ষণে। ভেতরে ভেতরে ছটফট করলেও বাইরে অদ্ভূত রকম নির্লিপ্ত থাকাটা আমিনুলের মজ্জাগত। গত রাতেই টেলিফোনে খবরটা পেয়েছে সে। মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু রাতে ঢাকা যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। গত কয়েক মাস ধরে মা ঢাকায় আছে বোনের বাসায়। ভালোই তো ছিল। হঠাৎ কী হলো? মনটা খারাপ হয়ে আছে আমিনুলের।
লাকসাম এসে ট্রেনটা থামার পর এক মহিলা তার বাচ্চাকে নিয়ে উঠলো। ভিড় ঠেলে সামনে চলে এলো। মহিলাকে দেখে সে একটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো। পাশের জন একটু চেপে বসাতে মহিলার বসার জায়গা হয়ে গেল। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে গেল। বাচ্চাটার পবিত্র সুন্দর মুখশ্রী দেখে আমিনুলের মনের মেঘ একটু যেন কাটলো। শিশুদের মধ্যে কেমন একটা অলৌকিক আভা থাকে। ভালো করে না তাকিয়েও আমিনুল বুঝতে পারছিল মহিলা কিছু একটা নিয়ে অস্থিরতায় ভুগছে। বাচ্চাটা তার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিনুল বাইরের ধানক্ষেতের দৃশ্য দেখতে দেখতে ঝিমাতে শুরু করে।
আখাউড়া স্টেশন আসতেই মহিলা হঠাৎ করে তাকে ডেকে বললো, ভাই বাচ্চাটারে একটু দেখবেন, আমি ওর জন্য দুটা কলা আর বিস্কুট কিনা আনি।
আমিনুলের সম্মতির অপেক্ষা না করেই মহিলা তড়িঘড়ি করে নেমে গেল ভিড় ঠেলে। আমিনুল বাচ্চাটাকে ধরে রেখে জানালা দিয়ে দেখছে মহিলা নেমে দোকানের দিকে না গিয়ে প্ল্যাটফর্মের ভেতরে ঢুকে পড়লো। ব্যাপারটা কী? কয়েক মিনিট পর ট্রেন চলতে শুরু করলো। কিন্তু মহিলা ট্রেনে ফিরে আসেনি। আমিনুল জানালা দিয়ে তাকিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছে মহিলাকে। কী মুসিবত। এই বাচ্চা রেখে মহিলা ভাগলো নাকি। দুনিয়াতে কত কিসিমের মানুষ আছে। সে এখন কীভাবে সামলাবে এটাকে? ট্রেনের গতি বাড়তে বাড়তে স্টেশন ছাড়িয়ে চলে এলো। আশেপাশের যাত্রীরাও এ নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেল। আমিনুলকে শান্ত্বনা দিয়ে বললো, নিশ্চয়ই ভুল বগিতে উঠে পড়েছে। পরের স্টেশনে চলে আসবে। কিন্তু একের পর এক স্টেশন পার হয় মহিলার দেখা নাই। বাচ্চাটা তখনো ঘুমোচ্ছে। সে এক হাতে বাচ্চাটাকে ধরে রেখেছে। নতুন চিন্তায় মাথা অস্থির হয়ে উঠলো তার। ঢাকা পৌঁছে হাসপাতালে ছুটবে নাকি এই বাচ্চা সামলাবে। যদি ওখানে নেমেও মহিলাকে পাওয়া না যায়!
ট্রেনটা ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে তিনটা বেজে গেল। বাচ্চাটা ইতিমধ্যে জেগে উঠেছে। উঠেই মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। সে বললো, মা আছে পাশের বগিতে। বাচ্চাটা বললো, আমি মায়ের কাছে যামু। আমিনুল আশ্বাস দিলো শীঘ্রই মায়ের কাছে নেবে।
কমলাপুর স্টেশনে ভীষণ ভিড়। চারপাশে হৈচৈ করছে যাত্রীরা। কুলির দল মাথায় বোঝা নিয়ে ছুটছে এদিক সেদিক। আমিনুল শক্ত হাতে বাচ্চাটাকে ধরে রেখেছে। বাচ্চাটা ভয়ে চুপ হয়ে আছে। এত লোক সে জীবনেও দেখে নাই। ছোট মানুষ। মা আশেপাশে নাই। অচেনা এক লোক তার হাত ধরে কোথায় নিচ্ছে সে কিছু বুঝতে পারছে না।
আমিনুল ভিড় ঠেলে সেই মহিলাকে খুঁজছে। এত লোকের মধ্যে কেমনে খোঁজ পায়। ভিড়ের ধাক্কায় এগিয়ে চলছে গেটের দিকে। হঠাৎ, বাচ্চাটা একটা চিৎকার দিলো — মাআআআআআআ। মাগোওওওওওও।
আমিনুল ভাবলো সে বুঝি মাকে দেখতে পেয়েছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো। না সেরকম কেউ নাই। বাচ্চাটা কান্না শুরু করেছে। চিৎকার করে মাকে ডাকছে। আমিনুল তাকে বোঝাবার চেষ্টা করছে। শান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। চারপাশে কৌতূহলী লোক জড়ো হয়ে গেল। প্রশ্ন করছে কী হয়েছে। মা কোথায় বাচ্চাটার। আপনি কেডা? ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব দিতে হিমশিম খায় আমিনুল।
বোঝাবার চেষ্টা করলো যে সে বাচ্চাটার কেউ না, তার কাছে রেখে মা কোথাও চলে গেছে। কিন্তু উপস্থিত জনতা সেটা মানতে নারাজ। তারা সন্দেহ করলো অন্য কেস। একজন এসে কলার চেপে ধরলো তার। আরেকজন পেছন থেকে ঘুষি মারলো ছেলেধরা বলে। এই শুরু হয় গেল জনতার উৎসব। বাচ্চাটা ছিটকে পড়ে কাঁদতে শুরু করলো; আমিনুল মার খেতে খেতে প্ল্যাটফর্মে গড়িয়ে পড়লো। বোঝাবার চেষ্টা করেও এখন আর লাভ হবে না। জনগণ ধরেই নিয়েছে সে ছেলেধরা। চুপচাপ মার খেতে থাকে আমিনুল।
উপস্হিত জনতার ভেতর থেকে কেউ একজন মারধোর বন্ধ করে পুলিশে খবর দেবার কথা বলতেই সমস্বরে চেঁচিয়ে অনেকগুলো কণ্ঠ জানালো পুলিশ ব্যাটাদের বিশ্বাস নাই এর কাছ থেকে টাকা খেয়ে ঠিক ছেড়ে দেবে। তার আগে আমরাই বরং ব্যাটাকে জন্মের শিক্ষা দিয়ে দেই ভবিষ্যতে অন্যের বাচ্চা চুরি করার আগে দশবার ভাববে। শিক্ষাপর্ব সামান্য সময়ের জন্য থমকে গেলেও আবার পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। আফসানার তারস্বরের কান্না আর অনেক মানুষের সম্মিলিত শোরগোলের আওয়াজ শুনে কেউ একজন ছুটে আসে ভিড়টা লক্ষ্য করে। দুহাতে ভিড় ঠেলে আলুথালু বেশে এক মহিলা তীরের মতো ছুটে এসে কান্নারত বাচ্চাটাকে বুকে তুলে নেয়। মা মেয়ের সম্মিলিত কান্নায় হকচকিয়ে যায় আমিনুলকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে থাকা উৎসাহী জনতা। দুজন কনস্টেবল এগিয়ে আসে এত মানুষের ভিড়বাট্টা দেখে।
পুলিশের জেরার মুখে পড়ে জুলেখা সবিস্তারে ঘটনা খুলে বলে। আমিনুলের কোনো দোষ নাই, সে নিরাপরাধী। বাচ্চাটাকে তার কাছে রেখে আখাউড়া জংশনে নেমেছিল সে। পেচ্ছাব পাওয়ায় প্রথমে পাবলিক টয়লেটে যায়। পরে কলা আর বিস্কুট কিনে ফিরতে ফিরতে ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। প্রাণপণ ছুটে কোনো মতে সে একটা বগিতে উঠে পড়ে। তার মন বলছিল ঢাকার স্টেশনে সে মেয়ে আর এই ভাইটার দেখা পাবে।
এতক্ষণ বিপুল বিক্রমে আমিনুলকে পিটিয়ে তক্তা বানাতে আগ্রহী জনতা বাতাস বেরিয়ে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে যায়। তারা একে একে অকুস্হল থেকে সরে পড়তে থাকে।
আমিনুলের সারা শরীরে ব্যথা। চোখের কোণটা কেটে গিয়ে রক্তে মাখামাখি গালের একপাশ। জুলেখা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই আমিনুলের মাথার কাছে বসে পড়ে একটু বিব্রত হয়ে। কী করবে বুঝতে পারে না। অচেনা অজানা মানুষ, তবু তার মেয়েটাকে আগলে রেখেছিল। সে কোনোমতে বলে, ভাই আমার জন্য আপনের এমন দশা হইল। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখের রক্ত মুছিয়ে দেবার চেষ্টা করে বিব্রত মানুষটার।
মার খেয়েও আমিনুলের বিরাট স্বস্তি বাচ্চাটার মা ফিরে এসেছে। এখন নিশ্চিন্তে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়া যাবে। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে টলে যায় খানিকটা। জুলেখা চট করে ধরে ফেললো। এবার একটুও সংকোচ লাগলো না, যেন তার আপনা ভাই।
আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো ইতিমধ্যে নিজেদের মতো করে গল্প তৈরি করে নিয়েছে। মামার ধারে বাচ্চা রাখি মা গেছিলো মুততে তারপর ট্রেন ছাড়ে মা দৌঁড়ায়...ট্রেন ছুটে…’ শুনতে শুনতে কেটে যাওয়া ঠোঁটে চিলতে হাসি ফুটে ওঠে আমিনুলের..জুলেখা অবাক হয়ে ভাবে ভাইটা মানুষ না বুঝি ফেরেশতা। চেহারাই সব না দুনিয়ায়।
এতসব হৈ চৈ কাণ্ডে জুলেখার পক্ষে খেয়াল করা সম্ভব হয়নি তাদের কয়েক ফুট দূর দিয়ে পার হয়ে গেল সদ্য বিবাহিত রঙিন ঝলমলে শাড়ি পরা গোলগাল চেহারার সুন্দরী এক তরুণী। তার হাত ধরে উত্তরবঙ্গমুখী একটা ট্রেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে জনি গার্মেন্টসের এসিসটেন্ট সুপারভাইজার অপারেটর রহমত আলী।
(পরবাস-৭৮, ৮ই এপ্রিল, ২০২০)