Subscribe to Magazines



পরবাসে ভবভূতি ভট্টাচার্যের লেখা



ISSN 1563-8685




গ্রন্থ-সমালোচনা

|| স্বয়ংপ্রভ, স্বপ্রকাশিত সহজ ব্যাকরণপাঠ ||

অকারণ ব্যাকরণ--ভাষা নিয়ে সরস কথা---স্বরোচিষ সরকার; কথাপ্রকাশ প্রকাশনী, বাংলা বাজার, ঢাকা-১১০০; ISBN: 984 70120 0818 8

বাংলাভাষাচর্চায় সুনীতিকুমার-শাহীদুল্লাহ্‌-সুকুমার-আনিসুজ্জমানের ধারায় আজকের স্বরোচিষ সরকার মহাশয় এক উল্লেখযোগ্য নাম। রাজশাহীর সুসন্তান, তাঁর প্রতিভার সুবাস কিন্তু সেখানেই আবদ্ধ থেকে যায়নি। দীর্ঘকাল ঢাকা বাংলা একাডেমি-র উচ্চপদে বৃত ছিলেন। সর্বাধিক প্রচারিত ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এর সহ-সম্পাদক হিসাবে দেশ-বিদেশের বঙ্গভাষীর নিকট তিনি এক পরিচিত নাম।

এ’হেন হস্তী যখন খেলাচ্ছলে বাংলা ব্যাকরণ পড়াতে তাঁর কেতাবের নাম “অকারণ ব্যাকরণ” দেন, সহজেই তা কলকাতার বাংলাদেশ-বইমেলার অজস্র বইয়ের ভিড়ের মাঝে নজর কেড়ে নেয় (প্রচ্ছদের ক্যালিগ্রাফিটিও চমৎকার বটে)।

পাতা উল্টিয়ে দ্বিতীয় প্রচ্ছদের ব্লার্বে গোটা বিশেক প্রশ্ন পেলাম। এমন ব্লার্ব আগে কখনও পড়েছেন? তবে, এতোগুলি র‍্যাপিড ফায়ার কোয়েশ্চেনও কিন্তু ‘বোর’ করেনি, অনুসন্ধিৎসা জাগিয়েছে।

দু’একটি নমুনা শুনুনঃ (১) বিচ্ছিন্ন দুটো শব্দকে সমাসবদ্ধ মনে করা যায় কখন? (২) বাংলা যুক্তবর্ণ স্বচ্ছ করায় কী ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে? (৩) ‘সম্মানীয়’ বা ‘সুধি’ লিখলে কতোটা ভুল হয়? (৪) লগ্নক আর বলক বলতে কী বোঝায়? ইত্যাদি ইত্যাদি…


***

‘কাকে বলে দুন্দুভি, কাকে বলে অরণি…’ জানতে তো নোটবুক পড়েছি (হেঁ হেঁ), এখন ‘লগ্নক’ ‘বলক’ চিনতে এ’গ্রন্থের ক্রয়... এবং… আ গুড ইনভেস্টমেন্ট!


***

গল্পচ্ছলে ছাব্বিশটি অনুচ্ছেদে যেমন সমাসের ‘ফাঁক’ বুঝিয়েছেন, তেমনই উঠে এসেছে ‘ইন্‌ - ভাগান্ত শব্দের কথা’, এজমালি শব্দ, ককারাদ্য প্রশ্ন থেকে ক্রিয়ার ওঠানামা। অতি সুখপাঠ। পঁচাত্তর সংখ্যায় এমনই একখানি চমৎকার কেতাবের কথা পড়া গিয়েছিল-- ‘বাংলা বানানঃ রস ও রহস্য’, সেটা মনে পড়ে গেল। এটা বিশেষ আনন্দের যে ব্যাকরণ-হেন ‘নীরস’ একটি বিষয়ের উপরে এখন বাংলাভাষায়, দেখুন, কেমন সুন্দর সুন্দর কেতাব লেখা হচ্ছে--পাঠসুখতায় যেগুলি হয়ত ফিকশনকেও হার মানায়। যেমন, এ’খানি।


***

একটা নমুনা নিন নাঃ ষোড়শ অধ্যায়টি অতি মনোগ্রাহী---“বানান-ভুল কেন হয়”!

এটিই হয়তো যে-কোনো ব্যাকরণপাঠের আদিতম প্রশ্ন। চমৎকার বুলেট-পয়েন্ট এসেছে গল্পচ্ছলেঃ (i) অসতর্কতার কারণে (ii) অজ্ঞানতার কারণে ও (iii) হালনাগাদ (uptodate) না হওয়ার কারণে।

তৃতীয়টিকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি--নিজেকে সাম্প্রতিক বানান-কানুনের নিয়ম/অধিনিয়মের সঙ্গে পরিচিত না রাখা। বেশ। তার মানে, ‘সূর্য্য’ ‘শর্ম্মা’ ‘বাঙ্গালা’ এখনকার দিনে আর লিখবো না, মানলেম; কিন্তু ‘কাহিনী’, ‘মতো’, ‘পাঠান/পাঠানো’, পুরান/পুরানো? কী হাল হবে এই সব বানানের?


***

বঙ্গভাষার অভিভাবক তিন-চারিটিঃ ‘ঢাকা বাংলা একাডেমি’, ‘পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি’, ক.বি./ঢা.বি./বিশ্বভারতী, ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ (কলিকাতা)। এছাড়া কলকাতার দুই বড় প্রকাশনালয় ‘আনন্দ পাবলিশার্স’ ও ‘সাহিত্য সংসদ’-ও কম যান না। এবং এঁদের পরস্পরের মধ্যেও কোনো মতের মিলন নাই। আমার হাতেই এখন রয়েছে ঢাকার ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’ যেখানে বানান লেখা রয়েছে ‘একাডেমী’, কিন্তু স্বরোচিষবাবু তাঁর এই বইয়ে ‘একাডেমি’ লিখেছেন সর্বত্র। তাই ওঁদের ওয়েবসাইটে এইমাত্র গিয়ে দেখি তাঁরা এখন হ্রস্ব-ই লিখছেন। তাহলে ‘একাডেমী’ কি এখন ভুল বানান বলে গণ্য হয়ে গেল? কোনো একটা ফরমান বলে এবং ঠিক কোনো একটা সময় থেকে নিশ্চয়ই ইহা নির্ধারিত হইয়াছে, না? তাহলে, সেটা জানতে আপনাকে তক্কে-তক্কে থাকতে হবে, নইলেই বাতিলের দরে পড়ে যাবেন। কী দিক্‌! এক Academy বানানটিই তো ‘আকাদেমি’ ‘অকাদেমী’ ‘অ্যাকাদেমি (অফ ফাইন আর্টস, কলকাতা)’ ইত্যাদি ইত্যাদি নানান ভাবে লেখা হচ্ছে। লতিফ মাস্টারের সুকুমারমতি ছাত্রছাত্রীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে না কি?

হ্যাঁ, প্রতিবর্ণীকরণের (Transliteration) সমস্যার কথাও ত্রয়োদশ অধ্যায়ে চমৎকার বলেছেন লেখক মহাশয়। এবং অন্ত্য-অ/ও এর সমস্যার কথাও [উদা. মত না মতো, করল না করলো; গাড়ল না গাড়লো]


***

‘লগ্নক’ ও ‘বলক’ দুটি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত শব্দ, ব্যাকরণের আঙিনায় তো বটেই। অধ্যায়টি পড়বার আগে অভিধান খুঁজে নিয়েও অর্থ খুঁজে পাই না। বিভ্রান্ত! এই বুড়া বয়সে এসে কি নূতন বাংলা শব্দ প্রথম জানবো? চমৎকার লিখেছেন স্বরোচিষবাবু বাইশতম অধ্যায়ে এই দুইটি প্রসঙ্গে। বলে দেবো না, কারণ পাঠকের প্রথম পাঠানন্দ স্পয়েল করতে চাইনে। তবে বর্ষীয়ান ভাষাবিদ্‌ অর্বাচীন ফেসবুক থেকে প্রথম কোনো বাংলা শব্দ/বর্ণ/ব্যাকরণ ‘শিখে’/‘জেনে’ নিচ্ছেন এটা আনন্দের, কারণ এতে তাঁর নবীনতা ও অনুসন্ধিৎসা প্রমাণিত হয়।


***

পঞ্চদশ অধ্যায়ে ছাপাবইয়ের ‘ফ্লাই-লিফ’, ‘ব্লার্ব’, ‘ভারসো/রেকটো’, ‘টাইটেল পেজ’ ইত্যাদি যেমন প্রাঞ্জল বুঝিয়ে দিয়েছেন সরকার-সাহেব--পড়ে বড়ো আনন্দ পেলেম তা।


***

একটি স্পর্শকাতর বিষয়----লেখক সরাসরি উল্লেখ করেননি বটে, কিন্তু ভাষা বা বানানের সঙ্গে দেশপ্রেমের প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে (পৃ. ৭৭-৭৮)। যে দেশে মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে জব্বার-রফিকুদ্দিন-রা প্রাণ দেন সেখানে এ’ প্রসঙ্গটি ওঠা অস্বাভাবিক নয়। ‘বিতর্ক’ বোঝাতে ‘বাহাস’ [পৃ ২৮], বা ‘অখুশি’ বোঝাতে ‘নাখোশ’ [পৃ ১৩] ব্যবহার করেছেন বর্তমান লেখক। বেশ করেছেন। ডানা-পাখনা মেলা তো জীয়ন্ত ভাষার ধর্ম। বাংলাদেশে এখনও, শুনি, মাসী-কে খালা ও জামাইবাবু-কে দুলাভাই না বললে লোকের ভ্রূকুঞ্চন হয়, পানি-কে জল বললে তো হয়ই। ১৯৫০-৬০-এর দশকে ‘ইসলামীয় বঙ্গভাষা’-র প্রচার-প্রয়াসের প্রসঙ্গটা তাই মনে পড়ে গেল এ শিশুপাঠ্য বইখানি পড়তে পড়তে। দেশভাগের পরে পরেই জনাব আবুল মনসুর আহমেদ সাহেবের মতো মান্য সাহিত্যিক-সাংবাদিক ও মুসলিম লীগের মন্ত্রীমহোদয় ‘পূর্ব পাকিস্তান রেনেশাঁস সোসাইটি’-র সভায় ঘোষণা করেছিলেন যে “…সংস্কৃতঘেঁষা বিদ্যাসাগর-বঙ্কিম-রবীন্দ্র-শরৎ-এর বঙ্গসাহিত্য বঙ্গীয়-মুসলমানের সাহিত্য হতে পারে না…. আমাদের সাহিত্য তৈরি হবে আমাদের মুখের ভাষায়… সে-ভাষা সংস্কৃত তথা বাংলা ব্যাকরণের কোনো তোয়াক্কা করবে না। আর বাংলা হরফ? ঐ তিনটে ‘স’ বা দুইটা ‘ই’/‘উ’ বা দুইটা ‘র’-এর আবর্জনা আমরা রাখবো ভেবেছেন?” [মনসুর আহমেদ সাহেব ১৯৬০এ ঢাকা বাংলা একাডেমীর সাহিত্যপুরষ্কারে ভূষিত হন; ১৯৭৯এ’ স্বাধীনতা পুরস্কারে!]

ভাবতে ভালো লাগে যে আজকের বাংলাদেশে লতিফ মাস্টাররা এই ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধে উঠে বাংলা বানান-ব্যাকরণের চর্চা করছেন, এবং আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে চালিত করছেন।

সে ভাষাটা উর্দু হোক্‌ বা বাংলা বা সংস্কৃত--কোনো এক ধর্মের কালিতে তাকে দাগড়া করে দেওয়াটা অশালীনতা। ভাষাচার্য মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সাহেবের গ্রাজুয়েশনে অনার্স ছিল সংস্কৃত ভাষায়।


|| বলো না, বলো না, মিছে বলো না ||

ব্রহ্মদেশে শরৎচন্দ্র--‘ভূ-পর্যটক’ শ্রীগিরীন্দ্রনাথ সরকার; প্রকাশকঃ বাণীশিল্প, কলকাতা-৯; বর্তমান প্রকাশকালঃ জানুয়ারি ২০২০; ISBN: 978-81-938424-9-2

কৃশ এ’কেতাবের শীর্ষনাম বা তার বিষয়বস্তুতে যত না, গ্রন্থকারের ঐ বিশেষণটিতে অধিকতর আকৃষ্ট হয়ে এর ক্রয়, কারণ উমেশ ভটচাজ্যি বা বিমল মুখার্জী ব্যতীত তৃতীয় বাঙালি ‘ভূপর্যটক’-এর নামও তো কৈ ইতোপূর্বে শুনি নাই [আর, এঁরাও বাস্তবে কতটা ‘ভূ’ সত্য সত্যই পর্যটন করিয়া আসিয়াছিলেন তাহা মস্ত প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখে]. তাই, বঙ্গালী এক ভূপর্যটক লিকচেন, ঝাঁপিয়ে পড়ে সে-বই কিনবো না, পড়বো না?

কিন্তু কী পাইলাম?

ছাব্বিশ বছর বয়সের এক চালচুলোহীন বাঙালি যুবক নগণ্য চাকুরি নিয়ে প্রতিবেশী ম্লেচ্ছ দেশে ঠেলে গিয়ে উঠলেন কালাপানি পার হয়ে। বিংশ শতাব্দী তখন সবে শুরু হচ্ছে। ১৯০২ খৃ.। চৌদ্দ বছর পরে তিনি যখন বঙ্গদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন তখনই ‘সাহিত্যসম্রাট’ হয়ে গেছেন প্রায়, নয়তো আর কয়েক বছরের মধ্যেই হয়ে যাবেন। আর, আজও, শতাধিক বৎসর পরে শরৎচন্দ্রের সেই আসনটি আর কেউ তেমনভাবে কেউ টলাতে পারলো কৈ? অত্যাশ্চর্য ঘটনা নয়? নামমাত্র ম্যাট্রিক-পাশ (বা হয়ত না-পাশ) শরতের এই উত্তরণের ভিত্তিটা হয়তো তাঁর ব্রহ্মদেশ বসবাসকালেই গড়ে উঠেছিল--এমন অনুমান তাই ভিত্তিহীন নয়। সেটা জানতেই এ’গ্রন্থের ক্রয়, এবং ….এখানে তিনটি ক্রন্দনের ইমোজি!

***

বর্তমানের এই ‘বাণীশিল্প শোভন সংস্করণে’ একটি ‘গ্রন্থকারের নিবেদন’ রয়েছে, রয়েছে লেখকের শ্রদ্ধেয় বন্ধু কবিশেখর কালিদাস রায়ের এক ‘পরিচায়িকা’-ও। কিন্তু থাকার দরকার ছিল বর্তমান গ্রন্থের প্রকাশকের এক ‘মুখবন্ধ’, যেটা নেই। এ’কারণে একাধিক প্রশ্নের নিরসন হলো না। যেমন, ১৯৩৯-এ প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থখানির কি হুবহু ক্লোন করেছেন বর্তমান প্রকাশক? নৈলে, প্রচ্ছদশিল্পী ‘বনফুল’ কে [ছবিটা অপূর্ব]? বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়? প্রচ্ছদ-পরিকল্পনা আবার অন্য একজন করেছেন এ’বইয়ের, নাম রয়েচে।

যা হোক্‌, এ’সব অযাচিত আলোচনা ছেড়ে বইটির বিষয়-আশয়ে আসা যাক্‌।

রবিঠাকুরের মতো শরৎও রঙ-তুলি ধরেছিলেন এবং তাঁর তৈলচিত্রের প্রদর্শনী ও প্রচার হয়েছিল (উদা. ‘মহাশ্বেতা’)--এ’সব অজানা তথ্য নয়। জানা মতে, ব্রহ্মদেশে থাকাকালীনই একাকী ঘরে বসে বসে শরতের চিত্রচর্চার শুরু। তাই, এ’সংক্রান্ত কিছু জানবার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু গিরীন্দ্রবাবুর এই কেতাবে ‘শিকারী শরৎচন্দ্র’ থেকে ‘ব্যর্থ-প্রণয়ী শরৎচন্দ্র’ হয়ে ‘পরলোকে শরৎচন্দ্রে’র মতো আগডুম বাগডুম নানান কিসিমের গপ্পোগাছা থাকলেও চিত্রশিল্পী শরৎচন্দ্র নিয়ে একটি বাক্যও নেই, নেই (আসল যা পাঠোদ্দেশ্য, সেই) সাহিত্যিক শরৎ-কে নিয়েও! বরঞ্চ, গায়ক শরৎচন্দ্রের অসাধারণ পারফর্মেন্স নিয়ে নালেঝোলে হয়েছেন লেখক একাধিক অধ্যায় জুড়ে, শরতের যে প্রতিভা আদৌ ছিল কিনা অন্যত্র কোথাও তার কোনো হদিশ পাইনি কক্ষণো। বরঞ্চ কালোয়াতি গানের প্রতি তাঁর বিরক্তির ছুটকাহানীটি (anecdote) বহুচর্চিত।

***

সেকালের বৃটিশ-কলোনি বর্মার মানুষজন, বাজারহাট, রেলযাত্রা ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে অবশ্য বেশ কিছু মনোজ্ঞ লেখাজোকা রয়েছে এই বইয়ে; তবে এ’-বিষয়ে জর্জ অরওয়েলের লেখা পড়া থাকলেই যথেষ্ট হয়।

‘শরতদার গল্প করতে গিয়ে আত্মকথনই অধিক হয়ে গেছে’--মুখবন্ধেই লেখক এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যেটা সত্যিই বইটির মস্ত এক দোষ। ১৯৩৮-এ শরৎচন্দ্রের প্রয়াণের পরপরই ‘মাসিক বসুমতী’ পত্রিকায় ধারাবাহিক বেরোতে থাকে এ’ স্মৃতিচারণা, কারণ সম্পাদক সঠিকই মনে করেছিলেন যে ব্রহ্মদেশ-পর্ব উন্মোচিত না হলে ‘কথাসাহিত্যসম্রাট’ শরতচন্দ্রকে চেনা যাবে না, কারণ সেখান থেকেই পাঠানো ‘রামের সুমতি’, ‘বিন্দুর ছেলে’ প্রভৃতি উপন্যাস কলকেতার কাগজে ছেপে বেরোনো শুরু হতেই শোরগোল পড়ে যায়, এবং ‘এই মেগদারের এক লেখক সুদূর বর্মা মুলুকে কেন পড়ে আছেন’—এই চর্চা শুরু হয়। তখন শুধুমাত্র প্রকাশক হরিদাস চটোপাধ্যায়ের ভরোসাতেই চৌদ্দ বছরের বর্মার পাট চুকিয়ে বাংলায় ফিরে আসেন শরৎ। যদিও এই বই শরতের বার্মা-পর্বের রহস্য উদ্ঘাটনে কোনোরূপ বিশেষ আলোকপাত করে না।

**

ভূ-পর্যটকের ইস্যুটা বাদ রয়ে গেল।

লেখকের ঘোষণামতই উনি আবাল্য বর্মাবাসী (পৃ ৪৯), প্রৌঢ় বয়সে কলকাতায় ফিরে আসেন। তাই, শুধোই, ভূ-পর্যটনটা উনি করলেন কখন? কবিশেখর কালিদাস রায় পর্যন্ত না-যেচেই গিরীন্দ্রকে “সমগ্র বিশ্বের পর্যটনকারী” বলে ঢালাও সাট্টিফিকেট দিয়ে দেছেন মুখবন্ধে।

এ’সব মিথ্যা কথার প্রচার করে ডেড়শ’ পাতার বই উচ্চমূল্যে বেচার ব্যবসা অতি নিন্দনীয়।

পাঁচে একের বেশি পায় না এ বই।



|| শ্যাম্পুগাথা, বা এক কাফেরের গপ্পো ||

ভারত ভ্রমণ--দীন মহম্মদ [‘The Travels of Dean Mahmet’ (1794)]--মূল ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদঃ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়; ‘সুচেতনা’ প্রকাশনা, কলকাতা-৯; ২০১৯; ISBN: 978-81-939633-2-6

পলাশীর যুদ্ধে ততদিনে জিতে গেছে ইংরেজ, কিন্তু পূর্বভারতে তার খুঁটিটা ভালো করে গাড়ল বক্সার যুদ্ধ জিতে (১৭৬৪ খৃ)।

শেখ কাসেম নামের আদতে নদীয়াবাসী এক প্রৌঢ় বাঙালি ছিলেন বৃটিশ সেনাদলে পাচক (কোনো সূত্র বলে ‘নায়’, অর্থাৎ নাপিত)। সিরাজদ্দৌল্লার তুতো ভাই শৌকত জঙের খিদমতগারে তাঁর বাবা আদিনিবাস ছেড়ে উত্তরবিহারের পূর্ণিয়া/দারভাঙা [= দ্বারবঙ্গ] অঞ্চলে চলে যান। কাসেমের সপ্তম পুত্র দীন মহম্মদের জন্মও সেখানেই হয় (মতান্তরে, পাটনা)। বাপের ন্যাওটা কনিষ্ঠতম পুত্রটি তাঁর সাথে সাথেই সেনা-ব্যারাকে ঘুরতো, থাকতো। বক্সার যুদ্ধকালে কাসেমের নিধন হলে পাঁচ বছরের বালকটিকে বস্তুতঃ দত্তক নিয়ে ফেলেন তাঁর প্রভু ক্যাপ্টেন গডফ্রে বেকার, যাঁর সঙ্গে সঙ্গে সে তার পরের প্রায় বিশ বছর ধরে ভারতের নানান স্থানে সামরিক ও প্রশাসনিক কাজের খিদমত খেটে খেটে বেড়িয়েছেঃ সুদূর দক্ষিণের মহীশূরে হায়দার আলির দেশে যেমন, তেমনি কলকাতার পাশেই বজবজেও (যেখান থেকে জাহাজ ধরে সে পরে বিলেত যাবে)।

দরিদ্র ভৃত্যটির সুযোগ হয়নি রীতিমাফিক পড়াশুনো করবার, কিন্তু স্বীয় প্রচেষ্টায় বিদেশী ইংরিজি ভাষাটাও সে ভালোমতোই শিখে ফেলে। এরপর কোম্পানীর চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে ক্যাপ্টেন বেকার দেশে ফিরে গেলে নৌকর দীন মহম্মদও আয়ারল্যাণ্ডে গিয়ে উঠলো তাঁর সঙ্গে সঙ্গে (১৭৮৪ খৃ.)।

এরপর কতভাবে কত রকম মোড় যে ঘুরেছে দীনের জীবনে (ব্যবসা ফেল করে একবার দেউলিয়াও ঘোষিত হয়ে গিয়েছিল সে) ! ১৮১০-এ’ লন্ডনে গিয়ে কী কাণ্ডটাই না যে সে ফেঁদে বসেছিল---সে তো গল্পকথা আরেক!! বলছি। তার আগে সবচেয়ে জরুরী তথ্যটা দেওয়া যাক্‌:

বিলেতে পৌঁছবার এক দশকের মধ্যেই তিনি ইঙ্গভাষায় এমনই দড় হয়ে উঠলেন যে বিগত দেড়-দশক ধরে একটু একটু করে লিখে রাখা তাঁর ডায়েরিটি ছেপে বের করে ফেললেন। নিজ নামে। মস্ত শীর্ষনাম বইটিরঃ ‘The Travels of Dean Mahomet, a Native of Patna in Bengal, Through Several Parts of India, While in the Service of the Honourable the East India Company.’ রাজা রামমোহন রায় বিলেত যাবার (১৮৩১ খৃ.) সাড়ে তিন দশক আগে সেটাই ছিল প্রথম কোনো ভারতীয়ের (ঘটনাচক্রে, তিনিও বঙ্গসন্তান) ইংরিজিভাষায় লিখিত প্রিন্টেড এন্ড পাবলিশড কেতাব!

একটু অপ্রাসঙ্গিকতার গন্ধ এসে গেলেও আরেকটি তথ্য এখানে উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না যে দীনের বিলেত ভ্রমণেরও তিন দশক আগে আরেক ভারতীয় (সমাপতনে তিনিও নদীয়াবাসী বঙ্গসন্তান), নাম মীর্জা শেখ এহ্‌তেশামউদ্দীন, বিলাইতে যান এবং লেখেন ভ্রমণের কাহিনীঃ ‘‘শিগুর্ফনামা-ই-বিলাইত’’ । এটি ফার্সি ভাষায় লিখিত, প্রথম প্রকাশ ১৭৮৫ খৃ.। ঢাকা বাংলা একাডেমি এ’বইয়েরও বঙ্গানুবাদ বের করেছে।

**

শিবের গীত শেষ হলো।

না, আরেকটু বাকি আছেঃ

২০০৪এ’ বৃটিশ-পাকিস্তানী লেখক ‘স্যর’ খিজর হুমায়ূঁ আনসারী সাহেব এক ইয়া মোটকা কিতাব লেখেন, The Infidel Within: The History of Muslims in Britain, 1800 to the Present, যেখান থেকেই আমাদের এই লেখক দীন মহম্মদ (১৭৫৯-১৮৫১ খৃ.) সম্বন্ধে বিস্তৃত জানা যায়। বইয়ের শীর্ষনামটি লক্ষ্য করুন, প্রিয় পাঠক। একদম অন্তর থেকে ‘কাফির’ [infidel] বলে দেগে দেওয়া হয়েছে, কারণ ধর্মত্যাগ করে কৃশ্চান হয়ে গিয়েছিলেন দীন সাহেব (এক আইরিশ অভিজাতা-কে বিবাহ করবার উদ্দেশ্যে)। লন্ডন শহরে প্রথম ভারতীয় খানার রেস্টুর‍্যান্ট তিনিই খুলেছিলেন ( ১৮১০ খৃ.)। তার চেয়েও মস্ত বড় কৃতিত্ব, দুই হাত দিয়ে চেপে চেপে ভারতে যে মাথা-টিপে-দেওয়া বা দেহ-মালিশ করবার রেওয়াজ আজও চালু আছে, সেই ‘চাপো’ বা ‘চাঁপো’ (ইংলিশ বানানে champo থেকে shampo হয়ে আজকের দিনে বহুল প্রচলিত shampoo--মাথার চুল পরিষ্কার করবার তরল সাবুন) পদ্ধতিকে হট ও হার্বাল বাথের সঙ্গে মিলিয়ে লন্ডনে এতোবড় ‘হম্মাম’ খুলে বসেন যে বড় বড় হাসপাতালগুলি পক্ষাঘাত থেকে গেঁটে বাতের রুগীকে চিকিৎসার জন্যে দীন সাহেবের কাছে পাঠাতো। পর পর দুই সম্রাট চতুর্থ জর্জ ও চতুর্থ উইলিয়ম তাঁর রুগী ছিলেন, যাঁদের বদান্যতায় দীন মহম্মদের ‘ডাঃ’ ও ‘সার্জেন’ উপাধিলাভ ঘটে!! ভাবা যায়? এ’ সেই সময়কার ঘটনা যখন জাহাজ-ছুট ‘ছোটলোক’ লস্কর ছাড়া লন্ডনের রাস্তায় আর কোনো ভারতীয় দেখতে অভ্যস্ত ছিল না বৃটেন; রামমোহন-দ্বারকানাথ তার ত্রিশ-চল্লিশ বছর পরে বিলেতে আসবেন।

*

এ’হেন দীন মহম্মদের ভ্রমণকাহিনীখানি আজকের পাঠক ব্যাপকভাবে পড়বেন, এটাই তো আশা করা যায়। ঢাকা থেকে ওঁর ভ্রমণকাহিনীর বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে; বর্তমান আলোচ্য অনুবাদটি কলকাতার এক নবীন প্রকাশনালয়ের উদ্যোগে। চমৎকার প্রচেষ্টা অতি উত্তম উপস্থাপনা, এবং অনুবাদের মান অনবদ্য।

কী করে বললাম?

দীন মহম্মদের ঐ ইঙ্গ-পুস্তকখানি আজকাল ওপেন লাইব্রেরীতে স্বচ্ছন্দে পাওয়া যায়, যে কেউ পিডিএফ নামিয়ে পড়ে নিতে পারে। শান্তনুও সেই মূল লেখাটিকেই ধরে ধরে অনুবাদ করেছেন, আশা করি [এই বইয়ে সঠিক উল্লেখ নেই।]

সুধী পাঠক তো মহতী মার্কিন লেখিকা জীন ওয়েবস্টারের বিখ্যাত ড্যাডি লং লেগস উপন্যাসটি পড়েছেন। আমাদের এই দীন মহম্মদ সাহেবও তেমনই চিঠির ঢঙে তাঁর ভারতভ্রমণ কাহিনীটি লিখেছিলেন। বড় ঘনিষ্ঠ স্টাইলটি লিখনের, যদিও, বলা বাহুল্য, ভাষার ঢঙ পুরানো। আজকের পাঠকের পড়তে হোঁচট লাগে। বর্তমান বঙ্গানুবাদক সেই বাধা কাটিয়ে অতি প্রাঞ্জল আধুনিক বাংলায় তরতরে অনুবাদ করেছেন। পড়ে ভালো লাগল। অনুবাদকের তাই ডিস্টিংশন মার্ক প্রাপ্য। শেষে একটি তথ্যসূত্রের গ্রন্থপঞ্জী রয়েছে। কাজের। রয়েছে কয়েকটি সাদাকালো ছবি ও ম্যাপ। বেশ। প্রচ্ছদ পরিকল্পনা মনোলোভা। কে করেছেন? নাম নেই। কয়েকটি বানান ভুল চোখে পড়েছেঃ ব্যবসায়ীক (পৃ ৯), মূখ্য (পৃ ১৭৩)। ‘ভালোতর’ আবার কী ধরনের বাঙলা হলো (পৃ ১৩)? বইয়ের ‘ভূমিকা’-খানি বেশ খেটেখুটে লিখেছেন অনুবাদক, যদিও তাঁর কয়েকটি মতে একটু ‘কিন্তু’ ‘কিন্তু’ রাখলামঃ যেমন, বৃটিশামলে কলকাতার টাঁকশালে ছাপা মুদ্রায় বাংলা হরফ থাকতো (পৃ ১১), বা ভারতে ব্যবসায়ের স্থানাধিকার নিয়ে বৃটিশদের সঙ্গে ফরাসী ও ড্যানিশদের লড়াই (পৃ ৯) ইত্যাদি ইত্যাদি। দীনের মেমসাহেব বিয়ে করার কথা লিখেছেন, কিন্তু তিনি যে, ইন ফ্যাক্ট, তাকে ফুঁসলিয়ে এনে বে’ করেছিলেন, কৈ, সেটা লিকলেন না ত! হেঁ হেঁ!!

যা হোক্‌, বঙ্গানুবাদের নিরিখে এটি একটি উল্লেখযোগ্য কাজ, জরুরি সংযোজন। এটার দরকার ছিল।


|| স্বপ্ন অপছন্দ হলে পুনরায় দেখাবার নিয়ম হয়েছে ||

Take-2: 50 films that deserve a new audience---Deepa Gahlot; Hay House Publishers, New Delhi 110070; First published 2015; ISBN: 978-93-84544-82-9

শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এমনটা প্রায়ই হয়, অনেক উদাহরণ পাওয়া গেছে।

আব্দুল করিম খান-সাহেবের জীবৎকালে বড়ে গোলাম আলি খান সাহেবকে কতকটা অলক্ষ্যেই রয়ে যেতে হতো। ও পি নাইয়ারের মতো সুরকার দু দু’বার বম্বে থেকে ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরে গিয়ে তৃতীয়বারে এসে সফল হয়েছিলেন। এমনকি ভিনসেন্ট ভ্যান গো বা ফ্রানৎস কাফকার মতো শিল্পীকে সারাজীবন পেরিয়ে অপেক্ষা করে যেতে হয়েছিল স্বীকৃতি পেতে।

নামী চলচ্চিত্র-সমালোচিকা দীপা গেহ্‌লত আলোচ্য কেতাবটিতে হিন্দি ফিল্মজগতের এমন পঞ্চাশটি সিনেমাকে চুনে এনেছেন যেগুলি প্রাপ্য স্বীকৃতি পায়নি। তাই, এদের একবার ফিরে দেখলে বড় ভালো হয় । এই মমতা বইটিকে বিশেষ উচ্চতা দিয়েছে। সাফল্যের পূজারী তো সকলেই, অসাফল্যকে মনে রাখে কয়জন? ‘নাথিং সাকসীডস লাইক সাকসেস’-র বিপরীতটা তাই ‘নাথিং ফেইলস লাইক ফেইলিওর’ হতে হবে! বক্স অফিসে ধূলিসাৎ হয়ে পড়লে সে ফিল্মে অভিনেতার কেরামতি বা সিনেমাটোগ্রাফারের কীর্তি বা আর্ট ডিরক্টরের মুন্সীয়ানা মনে রাখে কে?


***

যেমন, তনুজা-নূতনের মাসী নলিনী জয়াওন্ত। এককালে অশোককুমার-শাম্মী কাপুরের হিরোইন, ‘সমাধি’, ‘কালাপানি’-র মতো হিট ছবির নায়িকা নলিনীর মৃতদেহ তিনদিন ঘরে পড়ে ছিল, মারা গিয়েছিলেন বিনা চিকিৎসায়; একাকিনী। তখন বয়স তাঁর ৮৪, শেষ ত্রিশ বছর একাকীই থাকতেন।

আলোর জগত বলিউড হেরো-কে মনে রাখে না।

‘শোলে’-র ইমাম সাহেবকে কে ভুলতে পারে? সেই অভিনেতা এ কে হাঙ্গল শেষ বয়সে হাসপাতালে যখন ভর্তি হলেন বিল মেটানোর পয়সা ছিল না তাঁর। এ’সব অশ্রুজলে লেখা কাহিনী।

লেখিকা, অবশ্য, এ’-কেতাবে ‘হেরো’ মানুষের কথা যত না লিখেছেন, হেরো (বা, ততটা না-বিজয়ী) ছায়াছবিগুলির কথাই সাতকাহন বিশ্লেষণ করেছেন, আর তুলে ধরেছেন তাদের অসাফল্যের খতিয়ান।

যেমন, দিলীপকুমার-নার্গিস জুটিতে অনেক অনেক সফল ছবি হয়েছে, কিন্তু উনি এখানে ওঁদের ‘যোগন’ ছবিটির কথাই তুলে এনেছেন, আর ব্যর্থতার কারণ হিসেবে সময়-থেকে-অনেক-এগিয়ে থাকা স্টোরিলাইনের কথা বলেছেন, যেখানে এক সরলমতি হিন্দু যুবকের এক খ্রিস্টান নানের প্রেমে পড়ার গল্প বলা হয়েছিল। পনেরোটি গান ছিল ছবিটিতে---অনবদ্য ভজন গেয়েছিলেন গীতা দত্ত। কিন্তু ছবিটি চলেনি। এমন এক চমৎকার ছবির ব্যর্থতা বেদনা দিয়েছে লেখিকাকে (ব্লার্বে ওঁকে রদ্দি-ফিল্মেরও কদরদান বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে)--তুলে নিয়েছেন কলম।

এমন এমন আরও আরও ছবির কথা পড়তে পাই এখানে।

‘রং দে বাসন্তী’, ‘গঙ্গাজল’ বা, ‘শূল’-এর মতো দুর্নীতি-বিরোধী ফিল্ম বলিউডকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে বহুবার, বক্সে অতিসফল হয়েছে, কিন্তু দীপা এখানে এ’গোত্রের প্রথম ফিল্ম ‘নিউ ডেলহী টাইমস’ (১৯৮৬)-এর কথা বলেছেন, যেখানে অভিনেতা শশী কাপুর ও সিনেমাটোগ্রাফার সুব্রত মিত্র জাতীয় পুরস্কার পেলেও পরিচালক রমেশ শর্মা আর দ্বিতীয় ফিচার ফিল্ম বানাবার সুযোগই পাননি, ছবিটিও বিশেষ বাণিজ্যসফল হয়নি।


***

তথ্যের ভাণ্ডার এই নাতিপৃথুলা কেতাব! সেকালের নং ওয়ান নায়িকা দুর্গা খোটে (ফালকে পু. ১৯৮৩) যে বিশের দশকে সেন্ট জেভিয়ার্সের গ্রাজুয়েট ছিলেন, বা তুমুল বাণিজ্যসফল হবার আগে মনমোহন দেশাই যে আর্টফিল্ম করতেই বম্বে এসেছিলেন, বা সেকালে ফিল্মজগত এতো ব্রাত্য ছিল যে নৌশাদ সাহেবকে বিয়ের বাজারে নিজেকে এক দর্জি বলে পরিচয় দিতে হয়েছিল--এ’সব ট্রিভিয়া পড়তে পাওয়াটা বেশ মজার।

অনেক অনেক পুরনো দিনের ছবি রয়েছে বইটিতে। সবই সাদাকালো। যথেষ্ট দৃষ্টিনন্দন। শেষে একটি বর্ণানুক্রমিক সূচি থাকার দরকার ছিল বড্ড, কারণ এতো এতো তথ্য রয়েছে--পরে ফের খুঁজে পাওয়াটা বেশ মুশকিলের।

তবে, ‘রতন’, ‘জাল’, বা, ‘অনুপমা’-র মতো ছবিগুলিকে এই লিস্টে রাখবার উদ্দেশ্যটা বুঝতে পারলেম না, কারণ না এগুলি বাণিজ্যিক অসফল, না বিস্মৃত।


***

ছায়াছবির শ্যুটিং-এ যতক্ষণ না শট ও.কে. হচ্ছে ততক্ষণ তো টেক-১,২,৩… চলতেই থাকে… বাজতেই থাকে ক্লাপস্টিক। তাই ঘুরে দেখার আরেক নাম ‘টেক-২’.

আর, কোন্‌ সেই সত্যদ্রষ্টা কবি লিখে গিয়েছিলেন না, “স্বপ্ন অপছন্দ হলে পুনরায় দেখাবার নিয়ম হয়েছে।”

কে জানে, আমরা হয়তো আজও বেঁচে আছি ভুল স্বপ্নে!





(পরবাস-৭৯, ৯ জুলাই, ২০২০)