অপ্রত্যাশিত
সোমবারের ব্যস্ত সকালে ডোরবেলের শব্দে তুহীন জুতোর ফিতে বাঁধা ছেড়ে ম্যাজিক আই-তে চোখ রাখে এবং বেশ ঘাবড়ে যায়, বাইরে ইউনিফর্মধারী পুলিশ। তৎক্ষণাৎ দরজা খোলে সে, চোখের অপার বিস্ময় পুলিশ অফিসারটির দৃষ্টি এড়ায় না। আই কার্ডটি বাড়িয়ে ধরে তিনি জানান,
--লোকাল পুলিশ ডিপার্টমেণ্ট থেকে আসছি, দুঃখিত মিঃ সেন, আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব, মিনিট পাঁচ-সাত লাগবে।
বেজায় থতমত খেয়ে তুহীন অফিসারকে যথাসম্ভব আপ্যায়ন করে ঘরের ভিতরে ডাকে, পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা জুনিয়র অফিসার রজারকে সঙ্গে নিয়ে অফিসার স্মিথ ভিতরে ঢোকেন।
একটা ফটো বের করে চটপট তুহীনের দিকে বাড়িয়ে বলেন--দেখুন তো এদের চেনেন কি?
তুহীন চমকে ওঠে-–হ্যাঁ, ইভান আর মেলিসা, চিনি ... মানে...একদিনের আলাপ।
--আপনি ও আপনার স্ত্রী দুজনেই এদের ফেসবুকে খুঁজছেন কয়েকদিন ধরে, তাই তো?
--হ্যাঁ তা ঠিক, কিন্তু বিশ্বাস করুন ওদের সম্পর্কে আমরা কিছুই প্রায় জানি না, ওরা বলেছিল ফেসবুকে যোগাযোগ রাখা সম্ভব তাই…। তড়বড় করে বলতে যায় তুহীন।
--কতদিন আগে ওদের সাথে আলাপ হয়?
--এই তো গত জুন মাসে, দিনক্ষণ সব বলে দেব, বেড়াতে গিয়েছিলাম ওই ‘লস্ট রিভার স্টেট পার্ক’, ওখানে। তুহীন বেশ ভয়ে ভয়ে জানায়।
--আপনারা দিন তিনেকের জন্যে জুন মাসের মাঝামাঝি ওদের খুঁজেছেন ফেসবুকে, মাঝখানে আবার বেশ কিছুদিন খোঁজেননি, গত ২৮শে জুন থেকে আবার ইন্টারনেটে অনেক চেষ্টা করেছেন খুঁজতে, এরকম কেন? জিজ্ঞেস করলেন অফিসার।
তুহীন বলল-–এক মিনিট অফিসার, এই আমার স্ত্রী অনুশ্রী, কেন সাতদিন ধরে বেশি খোঁজার চেষ্টা করছি সেটা ওর কাছে শুনে এবং দেখেও নিন।
অনুশ্রী কাছাকাছি দাঁড়িয়েই ছিল চিন্তিত মুখে।
সে বলল---একটা গিফট্, খুব ক্যাজুয়ালি দিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা, সেটার কারণেই আবার যোগাযোগ করতে চাইছিলাম আমরা, আমি কি নিয়ে আসব?
--অবশ্যই। স্মিথ বলল।
অনুশ্রী ঘরের দিকে যেতে একটু ফাঁক পেয়ে তুহীন আর কৌতূহল চাপতে পারল না।
--অফিসার কী ঘটেছে একটু বলবেন কি? প্লিজ।
--অবশ্যই বলব, আর একটু অপেক্ষা করুন। স্মিথ মুচকি হেসে জানাল ও পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকা অপর অফিসারের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করল।
--আপনাদের ছেলেকে দেখছি না?
--স্কুলে গিয়েছে। তুহীন উত্তর দিল। স্মিথ ছেলের নাম ও বয়স জেনে নিল।
অনুশ্রী হাতে একটা ছোটো জিনিস নিয়ে ফিরে এল ও স্মিথকে দিল।
একটা রিস্টলেট, হোয়াইট মেটালের ওপরে নীল ও সাদা স্টোন বসানো, দেখতে বেশ সুন্দর।
--বলেছিলেন এটা থাকলে আমাদেরও মনে থাকবে, সবাই ব্যস্ত আজকাল। তোমরা বাড়ি ফিরে আমাদের কথা ভুলে যাবে তাই এটা রাখো। ফিরে এসেই ফেসবুকে অনেক খুঁজেছিলাম; খুব আশ্চর্য হই ওদের কোনো প্রোফাইল না পেয়ে, তারপর কিছুদিন আবার খুঁজিনি, তবে মনে ছিল ওদের কথা এমনকী ফল-এর সময় একটা মাউন্টেন ট্রেন রাইড হয়, আপনি জানেন নিশ্চয়ই, তখন ওদের সাথেই যাব ঠিক করেও ফেলেছিলাম আমরা।-- একটানা বলে গেল অনুশ্রী।
--হুঁ, ওনারা বলেছিলেন যাবেন?
--হ্যাঁ, মানে আমাদের ওই রাইডটা করতে বারবার সাজেস্ট করেছিলেন, আর ওনারা প্রতি বছর যান সেটাও বলেছিলেন।
--আচ্চ্ছা তারপর ওদের সন্ধান ফের উঠে পড়ে শুরু করলেন গত সপ্তাহ থেকে?
--আমি কিছুদিন আগে ওর একটা অফিস পার্টিতে যাই, সেখানে একজন বললেন রিস্টলেটটার অনেক দাম হবে, ওটা নাকি এন্টিক। এমন দামি জিনিস প্রায় অপরিচিত লোকের কাছ থেকে নেওয়াটা আমাদের ঠিক মনে হল না। ফেরত দেব ভেবে ওনাদের খুঁজছিলাম। অনুশ্রী বলে।
--এটা তাহলে আমি রাখছি। বলে স্মিথ অফিসার রজারের দিকে সেটা চালান করে দিলেন।
--এবারে আসার কারণটা বলি। মেলিসা ও ইভান দুজনের দেহ কিছুদিন আগে লস্ট রিভার পার্কে পাওয়া গিয়েছে, আপাতত জলে ডুবে মৃত্যুই মনে হচ্ছে। পোস্ট মর্টেমের জন্যে পাঠানো হয়েছে। আমার ওপরে ইনভেস্টিগেশন-এর দায়িত্ব পড়েছে। আপনাদের ইন্টারনেটে খোঁজ খবরের চেষ্টা দেখে আশ্চর্য লাগল। আপনারা এখানে এসেছেন খুব বেশি দিন হয়নি দেখছি, আগে আমেরিকার তিন চারটি শহরে থেকেছেন, সব মিলিয়ে বছর আট এবং আপনারা ইনডিয়ান সিটিজেন। তাই তো? স্মিথ অনুশ্রী ও তুহীনকে প্রশ্ন করে।
তারা দুজনেই মাথা নাড়ে।
--আপনাদের সাথে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী আমেরিকান কাপেলের বন্ধুত্ব বেশ অদ্ভুত, তাই না? ওদের বাড়িও আপনাদের থেকে অনেক দূরে ও বেশ রিমোট এরিয়ায়। স্মিথ স্বামী স্ত্রীর মুখের রেখার পরিবর্তন দেখার জন্যে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
তুহীন ও অনুশ্রী দুজনেই একসাথে চাকরির পোস্টিং ও বেড়ানোর শখ নিয়ে কলকল করে অনেক কথা বলে ফেলে। তাদের থামিয়ে স্মিথ বলে,
--কুল ডাউন মিঃ অ্যান্ড মিসেস সেন। আমি বলছি না যে অসম্ভব, তবে আমাদের চোখে পড়ার মতো। এবারে কিচ্ছুটি বাদ না দিয়ে সেদিনের ঘটনাটা বলে ফেলুন।
সপ্তাহান্তের ভ্রমণ
--এই যে পেয়েছি অনু, ঘন্টা তিনেক ড্রাইভে একটা স্টেট পার্ক আছে ‘লস্ট রিভার’ নামে, চলো চলো বেরিয়ে পড়ি, গরমের দিন এখানে একেবারে হাতে গোনা কিন্তু। তুহীন শনিবারের দুপুর সরগরম করে তোলে।
--তিন ঘন্টা ড্রাইভ করে পৌঁছোতে তো বিকেল হয়ে যাবে, কী দেখবে জঙ্গলে তখন?
--আরে আজকে একটা ট্রাই মারি, পরে আরেকদিন যাব ভালো লাগলে।
তুহীন বরাবর এরকমই, ঘুরে বেড়ানোই তার প্রধান শখ, নতুন কোথাও পোস্টিং হলে সপ্তাহ শেষে তার শুধু ঘুরে বেড়ানো আর ছবি তোলা, সে ও অনু দুজনেই আবার প্রকৃতিপ্রেমী, শহর তাদের বড়ো একটা টানে না, জল জঙ্গল পাহাড় এসবে যত কষ্টই হোক তাদের মহা উৎসাহ, ছয় বছরের ছেলে টুবলুকেও বেশ তৈরি করে ফেলেছে তারা যখন খুশি ব্যাকপ্যাক কাঁধে বেরিয়ে পড়তে।
--হারানো নদী, নামটাই কী রোমাণ্টিক, বলো? তুহীন বলল ড্রাইভ করতে করতে।
আধঘণ্টা ড্রাইভের পর পাহাড়ি রাস্তা শুরু হল, প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে এবছর গরমে, তাই ঘন সবুজ পাইন ও রকমারি গাছপালা ভিড় করে আছে দুপাশে, অসংখ্য ছোটো ছোটো ঝরনার উপর সেতু পার হল তারা।
--একদম নর্থ সিকিমের মত লাগছে না? অনু মুগ্ধ স্বরে বলল।
--হিমালয়ের উচ্চতা পাবে কোথায় তুমি?
--তা না হোক, ছবির মত সুন্দর জায়গাটা আমার তো দারুণ লাগছে।
চারপাশ পাহাড়ের প্রাচীরে ঘেরা অনাড়ম্বর ছোট্ট কার পার্কিং, দু-চারটে গাড়ি আছে, ছোট একটা ভিসিটার সেন্টার, কফিশপ ও টয়লেট তারই সঙ্গে। সূর্যাস্তের অনেক দেরি তখনো, কিন্তু পাহাড়ের জন্যে সমস্ত এলাকাটা ছায়াচ্ছন্ন। টিকিট কাউন্টারের ছেলেটি জানালো দু-ঘণ্টা পরে এই সেন্টার বন্ধ হয়ে যাবে, তবে পাশের গেট খোলা থাকবে যেখান দিয়ে তারা পার্কিং-এ ফিরে আসতে পারবে। টিকিটের সাথে একটা ম্যাপ ধরিয়ে দিয়ে সে বলল--পুরো পার্ক দেখার পক্ষে দেরি করে এসেছেন, ছোটো লুপটা বড়ো জোর আজকে কভার করতে পারবেন। ম্যাপে দাগ দিয়ে দেখিয়েও দিল সে।
অনু ভয়ে ভয়ে জানতে চাইল--ভিতরে ট্যুরিস্ট কতজন আছে?
--গাড়ি দেখে তো মনে হচ্ছে তিন-চারটে ফ্যামিলি এখনো আছে। ও হ্যাঁ ইদানীং সন্ধ্যের দিকে প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে, আজকেও হতে পারে বলেছে, পাহাড়ে বৃষ্টির ব্যাপারে আপনাদের অভিজ্ঞতা আছে কি? জিগ্যেস করল ছেলেটি।
একটু থতমত খেয়ে বলল তুহীন--না, মানে ঠিক সেরকম পরিস্থিতি হয়নি।
ছেলেটি উঠে এসে কিছু ফোটো ও তথ্য লেখা একটা বোর্ড দেখিয়ে জানালো,
--তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন তাহলে, নদী কোনো কোনো জায়গায় খুব সরু খাদের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে, তাই হঠাৎ বৃষ্টি হলে জল সেসব জায়গা দিয়ে ভীষণ জোরে বয়ে যায়, সঙ্গে থাকে গাছ পাথর ইত্যাদি। সাঁতার কোনো কাজে আসবে না মনে রাখবেন। উঁচু জায়গায় উঠে যেতে হবে। আজকে ভারি বৃষ্টির ফোরকাস্ট নেই, তবু বিপদে পড়লে এমার্জেন্সি নাম্বার ডায়াল করবেন।
জল জঙ্গল ও আঁধার
পাথরের ফাঁকে ফাঁকে কুলকুল শব্দে জল ছুটে চলেছে, কোথাও ধারা দেখা যাচ্ছে কোথাও অদৃশ্য, শুধু শব্দেই বোঝা যায় নদীটি আছে তোমার চারপাশে, এ-যেন নদীর লুকোচুরি খেলা। প্রচুর হাইকিং করতে হচ্ছে, কখনো সমতলে নেমে আসা, আবার কখনো সঙ্কীর্ণ নদীখাতের পাশে সিঁড়ির ধাপে ধাপে অনেক উচুতে উঠে যাওয়া। কাঠের সিঁড়ি বানানো আছে বেশিরভাগ জায়গায়, আবার পাথরের চাতালের মতো প্রকৃতিদত্ত ধাপও আছে। নদীকে নিচে ফেলে অনেকটা উপরে উঠে এল তারা। নিচের দিকে আঁধার ঘনিয়ে এসেছে, পাহাড়ের উপরে গাছের ফাঁক গলে সূর্যের কিরণ কখনোসখনো দেখা দিচ্ছে। এরকমই একফালি রোদ হঠাৎ স্পটলাইটের মত এসে পড়েছে তীব্র কমলা রংয়ের একটা মাশরুম-এর উপর। তুহীন তো মন্ত্রমুগ্ধ। তড়িঘড়ি ক্যামেরা তাক করে নানা এঙ্গেলে ফোটো তুলছে। তার পাশেই অনু একটা ছোটো আকারের গাছের গায়ে হেমলক ট্যাগ লাগানো দেখে মহা উত্তেজিত, ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা সেই বিষ, আগে সে কখনো দেখেনি, তুহীনকে বলতে যাবে ঠিক সেই সময় এক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা জঙ্গল ফুঁড়ে যেন এসে উপস্থিত হলেন।
--বাঃ, আপনার তো বেশ চোখ আছে দেখছি, মাশরুমটা দারুণ খুঁজে পেয়েছেন। ভদ্রলোক বললেন।
--আমাদেরও ফটোগ্রাফির শখ। জানালেন ভদ্রমহিলা।
তুহীন বিগলিত হেসে হ্যান্ডশেক করে আলাপ জমালো।
মেলিসা ও ইভান এক্কেবারে এই অঞ্চলেরই লোক, এই জল জঙ্গলের মধ্যেই নাকি তাদের বাড়ি, কুকুরের শখ, থাকেন তিনটে কুকুর নিয়ে। একটি এসেছে সাথে, নাম জুনিপার, মিষ্টি চেহারার ল্যাব্রাডর রিট্রিভার। টুবলু প্রথমে একটু ভয় পেলেও একটু পরেই তার সাথে দারুণ আলাপ জমে গেল।
অনুশ্রী যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, জায়গাটা ছায়াচ্ছন্ন বিকেলে বড্ড ধোঁয়াটে আর গা ছমছমে লাগছিল তার, দু-চারজন লোকের যাও বা দেখা পেয়েছিল তারা সব ফিরে গেল। সে উৎসাহিত হয়ে অনেক বকবক করে ফেলল মেলিসার সাথে। মেলিসা ও ইভান অনেক জরুরি তথ্য দিল এই অঞ্চল সম্পর্কে। বছরের একটুখানি সময় সামার ও 'ফল' এই অঞ্চল বেড়ানোর সময়,, ভীষণ শীত পড়ে ছ-টি মাস, তখন প্রায় ঘরে বসে থাকা, কিছুই দেখা যাবে না। দেখার কত স্পট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সেসব নিয়েও অনেক কথা হল। মেলিসা জানালো--এই পুরো পাহাড়ি এলাকা পাতাঝরার মরসুমে রঙিন হয়ে ওঠে, সেই সময়ে একটা ট্রেন রাইড হয়, অনেক ট্যুরিস্ট আসে, আমরাও প্রতি বছরই যাই।
--এবারে আমাদেরও নেবেন সঙ্গে, এখানে এখনো আমরা কাওকে চিনি না। বলল অনুশ্রী।
এহেন কথা মার্কিন মুলুকে নতুন আলাপে বলা এটিকেট বিরুদ্ধ, তাই তুহীন কটমট করে তাকালো অনুর দিকে। অনু পাত্তা দিল না।
মেলিসা কিন্তু বেশ খুশি মনেই বলল--নিশ্চয়ই, তোমরা ফেসবুকে আছো তো, সেখানেই যোগাযোগ রাখা যাবে।
ফোনের কথা কিন্তু বলল না সে, অনু সেটা লক্ষ্য করল।
ইভান বলল--নদীটার একটা দারুণ ভিউ পাওয়া যায় যদি ওই সামনের পাহাড়টার মাথায় চড়তে পারো, যাবে?
অনু ভয়ে ভয়ে বলল--কিন্তু ফেরার রাস্তা তো অনেক নিচে, ভিসিটার সেন্টার বন্ধ হয়ে যাবে আর অন্ধকারও হয়ে যাবে।
ইভান ও তুহীন দুজনেই হেসে বলে উঠল--সেটা অলরেডি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
অনু একটু চমকে উঠল, কথায় কথায় ভুলেই গিয়েছে ছোটো লুপ-টা ঘুরে ফিরে যেতে বলেছিল ছেলেটা। এই পাহাড় ও জঙ্গল সীমাহীন মনে হচ্ছিল তার, আমেরিকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে সে জানে কী প্রকাণ্ড ন্যাশনাল পার্কগুলো, স্টেট পার্কগুলোও কম যায় না আয়তনে।
তুহীনকে বারণ করার উপায় নেই। সে ইভানের সাথে মহা উৎসাহে এগিয়ে চলেছে দ্রুত আঁধার নেমে আসা বনপথে, তাদের আগে আগে চলেছে জুনিপার।
পাহাড়ের চূড়ায় উঠে অনু প্রথমেই দেখল মিশ কালো রঙ চারদিকে, ভয়ংকর কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে, দ্রুত গিলে ফেলছে সামনের চূড়াগুলোকে, ভয়ে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এল।
তুহীন উত্তেজিত ভাবে টুবলুকে নিচের দিকে কী যেন দেখাচ্ছে, পাশে ইভান।
--অনু, দেখে যাও কী অপূর্ব দৃশ্য।
এটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল, খাদের ধারে দাঁড়াতে অনুশ্রী দেখল অনেক নিচে খরস্রোতা নদীর ধার ঘেঁষে কয়েকটা ছবির মতো সুন্দর বাড়ি। কচি সবুজ ঘাসের গালিচা আঁধারেও চকচক করছে।
অনুশ্রী মেলিসাকে বলল--নদীর এত কাছে বাড়ি করে থাকে কারা? ভয় করে না? নদীটা কী খরস্রোতা!
--এখান থেকে বুঝতে পারছো না, নদীর খাত রয়েছে, বাড়ি অনেকটা উপরে আছে। তবে হ্যাঁ, বৃষ্টিতে একটু ভয় থাকে বইকী। ওই যে সামনের পাহাড়ের পিছনে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে এখন, ওদিকটাতে আমাদের বাড়ি, এইরকমই নদীর ধারে।
--তোমরা তো খুব সাহসী, বেড়াতে ভালো লাগলেও আমার আবার এত নির্জনে থাকতে ভয় লাগে, এসব জায়গায় প্রতিবেশী পাও? অনুশ্রী জানতে চাইল।
--আমাদের বাড়ি একটু নির্জনেই, তবে দশ মিনিট ড্রাইভে একটা পাড়া আছে, সেখানেই মেলামেশা। তাছাড়া গাছপালা, পাখি, হরিণ আমাদের পোষা কুকুরেরা, এরা কম কী?
বলতে বলতে একটা বাজ পড়ল কাছেই, জুনিপার দৌড় লাগাল ফেরত পথের দিকে। ইভান বলল--কোনো ভয় নেই, আমরা এই অঞ্চল হাতের রেখার মত জানি, আধঘন্টায় নিচে পৌঁছে যাব, একটা শেল্টার আছে বৃষ্টি বেশি হলে একটু দাঁড়াতে হবে।
শুধু টুবলুর জন্যেই রেন জ্যাকেট ছিল। অনু সেটা পরিয়ে দিল।
যত তারা নিচে নামল ততই চারপাশে অন্ধকার ঘনিয়ে এল, নদীর পাশাপাশি সমতলে নেমে আসতেই বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়ল তাদের উপর। মেলিসা ও ইভান তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে ঢুকল একটা শেল্টারে। মোটা গাছের গুঁড়ি ও নানা সাইজের লগ দিয়ে বানানো শেল্টার, নদী দেখতে দেখতে ফুলে উঠতে লাগল। অনু ভীষণ ভয় পেয়ে বলল--ভিজে তো এখানেও যাব, যা ছাঁট আসছে, ফিরে যাই তার থেকে, যদি বান আসে?
--আজ তেমন হবে না, থেমে যাবে একটু পরেই। ইভান বলল।
অনু খুব একটা ভরসা পেল না তার কথায়, তুহীনের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ তখন।
জুনিপার ও টুবলু বেশ খেলছে এর মধ্যেও, কোনো চিন্তা নেই।
মেলিসা টুবলুর কাছে এগিয়ে বলল--আমাদের আরো দুটো কুকুর আছে, জসুয়া আর সাইপ্রেস, তাদের তুমি নেবে নাকি? কুকুর পুষবে?
বড়ো বড়ো চোখ করে টুবলু বলল--তুমি ওদের দিয়ে দেবে আমাকে?
--হ্যাঁ দিতেই পারি যদি তুমি খুব খুব ভালোবাসো ওদের।
টুবলু বলল--তুমি এমনি বলছ, ওদের দিয়ে দিলে তোমার খুব কষ্ট হবে আমি জানি।
--বাঃ তোমার কত বুদ্ধি। মেলিসা হাসল।
--এই কুকুর পোষা নিয়ে অনেকদিন ধরে জেদ করছে জানেন, এখন বাধ্য হয়ে আমাকে কথা দিতে হয়েছে যেখানেই একটু বেশিদিন থাকব ওকে একটা কুকুর কিনে দিতে হবে, আমাদেরও খুব ইচ্ছে, কিন্ত এই চাকরির জন্যে বড্ড জায়গা বদল করতে হয়। বলল তুহীন।
অনুশ্রী একটু সঙ্কোচের সাথেই একটা চিরকুটে ওর ফোন নাম্বার লিখে দিল। ওরা বলল ফোন করে নেবে। এখন কারো সাথে মোবাইল নেই, ফেসবুকের জন্যে ওদের নাম লিখে নিল অনু।
এইসব কথাবার্তার মধ্যে বৃষ্টিও কমে এল, মেলিসা ও ইভান ওদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল পার্কিং-এর জায়গায়। ওরা ছাড়া জনপ্রাণী নেই কোত্থাও, বুনো গাছপালার বৃষ্টিভেজা গন্ধ সাথে নিয়ে অচেনা বন পাহাড়ে আঁধার নেমেছে। তুহীন আর অনুশ্রীর মনে হল ওরা না থাকলে আজ বাচ্চা নিয়ে অন্ধকার জল জঙ্গলে তারা ঘুরেই মরত। সেকথা জানিয়ে অনেক ধন্যবাদ জানাল তারা মেলিসা ও ইভানকে।
সৌজন্যমূলক বিদায় নেবার পালা শেষ হলে ওরা গাড়িতে উঠে বসল, মেলিসা ইভান ও জুনিপার তখনো দাঁড়িয়ে, অনুশ্রী বুঝতে পারল না ওদের গাড়ি কোথায়। সে জিগ্যেস করলে ওরা বলল--অন্যদিকে আছে, চিন্তা কোরো না, এসব আমাদের নিজের জায়গা।
হঠাৎ মেলিসা গাড়ির জানলার কাছে এসে অনুকে একটা কিছু দিতে চাইল, অনু দেখল ওর হাত থেকে রিস্টলেট-টা খুলে তাকে দিতে চাইছে মেলিসা। সে খুব অবাক হল--
মেলিসা বলল--ব্যস্ত সময়ে কেউ কাউকে মনে রাখে না। এটা রাখো আমাদের ভুলে যাবে না।
--আমি ফেসবুকে তোমাদের রিকোয়েস্ট পাঠাব অবশ্যই, আর তুমি ফোন করবে তো, এটার দরকার নেই। অনু বলল।
--আমি খুশি হব তুমি এটা রাখলে।
সে অনুর হাতে রিস্টলেটটা ধরিয়ে দিয়ে একটু অদ্ভুতভাবেই হঠাৎ ঘুরে হাঁটা লাগালো।
তথ্য ও ধোঁয়াশা
টেবিলের উপরে পা দুখানা তুলে, অলস দুপুরের ঢুলুনি অগ্রাহ্য করে, অফিসার স্মিথ মাথার মধ্যকার জট পাকানো তথ্যসমূহ ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল, হাতে একটা খাতা ও পেন--
মেলিসা ও ইভান থাকত স্টেট পার্কের উত্তর সীমানার বাইরে, নদী যেদিক দিয়ে পার্কে ঢুকেছে। তাদের বাড়ির দেড়-দু মাইলের মধ্যে বাড়ি থাকলেও সবসময় মানুষ বাস করে না। মিস্টার ও মিসেস ব্রাউন ওদের নিকটতম প্রতিবেশী। মাঝে মাঝে ছুটিতে রিল্যাক্স করতে আসতেন, তারা তখন বস্টনের বাড়িতে ছিলেন। মেলিসা ও ইভানের কোনো আত্মীয় ছিল না, দুজনেই অনাথ, পোষ্যরাই ওদের সব। বন্ধু কিছু ছিল, তারা মাঝেসাঝে আসা-যাওয়াও করত ওদের বাড়িতে। সকলের বয়ান নেওয়া হয়েছে, কেউই সেন পরিবারের সাথে ওদের আলাপের কথা জানে না।
ওদের বাড়ি অক্ষত অবস্থায় ছিল, সেখানে ফ্ল্যাশ ফ্লাডের প্রমাণ নেই। পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট থেকে মৃত্যুর সময়কাল ১১ই জুন, জলে ডুবে ও পাথরের আঘাতে মৃত্যু সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই, বডি ড্যামেজের জন্যে সময়টা সঠিক বলা যাচ্ছে না। বডি পাওয়া গিয়েছে লস্ট রিভারের গভীর একটা খাঁজে আটকানো অবস্থায়, জলে অনেকটা পথ ভেসে ওখানে আটকেছে বলা বাহুল্য। ওদের বাড়ির অনেকটা উত্তরে ফ্ল্যাশ ফ্লাডের চিহ্ন আছ। দেহ উদ্ধার হয়েছে মৃত্যুর সাত দিনের মধ্যে, এতদিন পরে পাহাড়ে কোথায় বান এসেছিল বোঝা মুশকিল।
১৩ই জুন পার্কের রেজিস্টার বুকে সেন ফ্যামিলির পার্ক এন্ট্রির তথ্য আছে। তখন তাদের সাথে কীভাবে দেখা হওয়া সম্ভব? মেলিসা ও ইভানের পার্কে ঢোকার কোন তথ্য রেজিস্টারে নেই। তাহলে ধরে নিতে হয় ওরা আগে দেখা করেছিল এবং সেনরা মিথ্যে কথা বলছে। হাতের কাগজ কলমে তারিখ ও ক্লু লিখতে লিখতে স্মিথ ভেবে চলল--
ফেসবুক আইডি ভুল দিয়েছিল মেলিসারা, হয়ত ভুল করেই। রিস্টলেটটা দামি, এত দামিও নয় যে তার জন্যে কেউ মানুষ খুন করবে। জুনিপার-এর দেহ ওদের কাছেই মিলেছে, বাড়িতে ছিল যে বাকি দুটো কুকুর তাদের পাওয়া গিয়েছে তিনদিন আগে, জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, আপাতত অ্যানিম্যাল শেল্টারে আছে। সদ্য এই অঞ্চলে বাস করতে আসা এক সাধারণ মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি সম্ভবত তাদের শেষ জীবিত অবস্থায় দেখেছিল, যদি ১১ তারিখটা পোস্ট-মর্টেম-এ ভুল হয়ে থাকে।
ওদের সন্দেহ করার মতো কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না, তবু অফিসার স্মিথ ওদের বাড়ি সার্চ করেছেন ও স্টেশন লিভ করতে নিষেধ করেছেন। সারা পৃথিবীর তথ্যভাণ্ডার খুঁজেও সেনদের কোনো ক্রিমিন্যাল রেকর্ড পাওয়া যায়নি। দীর্ঘদেহী সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দু-জন মানুষের কোনো ক্ষতি করা প্রাক্টিক্যালি অসম্ভব এদের দ্বারা, তা আবার ছয় বছরের বাচ্চা সমেত। স্মিথ অনেক ভেবেও কোনো মোটিভ খুঁজে পেল না, ওরা মেলিসা ইভানের সাথে আগে কোনো দিন দেখা করেছিল এমন কোনো প্রমাণ সে খুঁজে পায়নি।
এমন হতেই পারে যে সেনদের পার্কিং-এ পৌঁছে দেবার পর মেলিসা ও ইভান ফ্ল্যাশ ফ্লাডের সম্মুখীন হয় বাড়ি ফেরার পথে, তাহলে আবার ধরে নিতে হয় উঁচু পাহাড়ে আবার বৃষ্টি হয়েছিল, বা আগের বৃষ্টির দরুন ফ্লাড নেমেছিল কিছু পরে। হ্যাঁ, এটা সম্ভব বটে, তবু অনেক প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, গাড়ি নিয়ে যায়নি, না কি গিয়েছিল? ফেরত পথে নদী কোথায় পেরোতে হল যে বিপদে পড়বে? অনেক উত্তরের জঙ্গলে ফ্লাডের কবলে পড়লে ধরে নিতে হয় সেটা ১৩ই জুন বা তার পর ঘটেছে। তারিখ নিয়ে মহা জট পাকিয়ে যাচ্ছে স্মিথের মাথায়, সে ভারী বিরক্ত হয়ে উঠল, একে তো এই রাজ্যটাতেই লোক থাকে কম, তায় আরো দুর্গম শুনশান অঞ্চলে কেন যে এই সব মানুষের থাকার ইচ্ছে জাগে, যত্ত সব আধপাগল, মনে মনে ভাবল স্মিথ। সে স্থির করল সেন ফ্যামিলিকে রেহাই দেবে, যেহেতু কোনো সাস্পেক্টেড মার্ডার কেস রজু হয়নি।
এইসময় হাতে দুটো লিশ ট্যাকেল করতে করতে তার ঘরে প্রবেশ করল জুনিয়র অফিসার রজার।
--স্যার, এই যে দুটোকে শেল্টার থেকে তুলে ওদের পাড়াটা ঘুরিয়ে আনলাম, লোকাল পাবলিক বলল কালোটা জসুয়া আর সাদাটা সাইপ্রেস।
দুটো নোংরা কাদামাখা কুকুর রজারের সাথে।
স্মিথ লাফ দিয়ে উঠল--তাই তো! এদুটোর কথা তো ভাবিনি, এক কাজ করো, দুটোকে কিছু খাইয়ে স্নান করিয়ে নাও। তারপর সেন-বাড়িতে দুটোকে নিয়ে হানা দেব, দেখি যদি এদুটোর আচরণ দেখে কিছু জানা যায়।
রজার মুখ ব্যাজার করে ওদের টানতে টানতে চলে গেল, এসব কাজ তার পোষায় না।
জসুয়া ও সাইপ্রেস
অনুশ্রী দরজা খুলল, পুলিশ দেখে দেখে এই ক-দিনে ওরা বেশ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে, যদিও রোজ রাত্তিরে ঠাকুরের কাছে মাথা ঠুকছে 'এযাত্রা পার করে দাও' বলে, 'জীবনে চেনা অচেনা কারো থেকে আর উপহার নিচ্ছি নে, যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে।'
কুকুর দেখে টুবলুর চোখমুখে খুশি ধরা পড়ল, কুকুর দুটো প্রথমে একটু লেজ নাড়ল, তারপর রজারের হাতে ধরা দড়িতে টান দিয়ে এগিয়ে যেতে চাইল। স্মিথ নির্দেশ দিল ওদের সাবধানে একটু করে এগোতে দিতে।
ওরা টুবলুর কাছে গিয়ে সামনের পা ভাঁজ করে কুঁ কুঁ আওয়াজ করতে করতে প্রবলভাবে লেজ নাড়তে থাকল। অনুশ্রী ভয়ে ছেলেকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। তুহীনও এসে দাঁড়াল হতভম্ভের মতো।
স্মিথ বলল--ওরা তো মনে হচ্ছে, আপনাদের চেনে মিসেস সেন, কিন্তু আপনারা বলেছেন একটাই কুকুর ছিল তার নাম জুনিপার।
--হ্যাঁ এদের তো দেখিনি, সে ছিল হলদেটে রঙের, কী যেন ব্রীড বলেছিল? অনুশ্রী তুহীনের দিকে তাকাল।
--ল্যাব্রাডর রিট্রিভার। তুহীন বলল।
--আশ্চর্য, বলল স্মিথ। --ওদের একটু ছেড়ে দিয়ে দেখা যাক কী করে। আপনি কম্ফোর্টেবেল মিসেস সেন?
অনুশ্রীর মনে হল না ওরা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে, তাই সে হ্যাঁ বলল।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে কুকুর দুটো ওদের বাড়ির দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল।
তারপর স্মিথ ও রজার শত চেষ্টাতেও ওদের নিয়ে যেতে পারল না, ওরা টুবলুর খাটের নিচে সেঁধিয়ে গেল, আর অফিসার দু-জনকে দেখলেই রাগে গরগর করতে থাকল।
টুবলুকে ওরা কেউই মেলিসা ও ইভানের করুণ পরিণতির কথা জানায়নি। টুবলু খুব উত্তেজিত ভাবে বলে উঠল--
--মেলিসা-ইভান ওদের পাঠিয়ে দিয়েছে মা, ওরা আমাকে দিয়েছে, আমরা ওদের খুব ভালোবাসব, তাই না?
এই সরল কথাটা স্মিথ সহ উপস্থিত সকলের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা অদ্ভুত ঠান্ডা শিহরন ছড়িয়ে দিল।
তুহীন স্মিথকে বলল--আমরা এই তদন্তে আপনাকে সম্পূর্ণ সাহায্য করব, এই কুকুর দুটোকে ওরা আমার ছেলেকে দিতে চেয়েছিল, এই ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা আমিও জানি না, ওরা আমাদের কাছে থাকতে চায়। প্লিজ ওদের থাকতে দিন।
কুকুরের সেবা আর করতে হবে না জেনে অফিসার রজার বেজায় খুশি হয়ে ঘটঘট করে উপর নিচে মাথা নাড়লেন।
স্মিথ কটমট করে তাকাল তার দিকে। তারপর সেন ফ্যামিলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল--
--আমার মনে হয় না আর তদন্তের কোনো দরকার আছে। ব্যাখ্যা আমরা কাছেও নেই, ফরেন্সিকের কাছেও নেই, আপনারাই জানেন আপনারা কী দেখেছিলেন, যখন দেখেছেন রিপোর্ট অনুযায়ী তখন--। টুবলুর দিকে চেয়ে স্মিথ কথাটা আর শেষ করল না। --তথ্য ও স্যাম্পেলসহ আমি ফাইলটা সযত্নে রেখে দেব, যদি কখনও কেউ এ রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারে। দুঃখিত মিসেস সেন। আপনাকে উপহার দেওয়া রিস্টলেটাও সেখানে রাখতে হবে।
(পরবাস-৭৯, ৯ জুলাই, ২০২০)