|| যদিবা... ||
যদি বা চুম্বন করো, সহিষ্ণু হয়ে যাব গাছের মতন। শান্ত স্থির।
যেন আর কিছু নেই পাবার
চাইবার। দিন থেকে শেষ যাম, পরজীবী লতা
যেন, ছোঁবে আলগোছে; জড়াবে না সেভাবে
কখনো। শরীর ছড়িয়ে শুধু ফুল আর ফুলের
পরাগ, শীতকে অবজ্ঞা করে ফুটবে তখনই।
জীবনের মাটি থেকে টেনে নেব ভুলে যাওয়া
বাঁচার রসদ। চন্দ্ররেণু উল্লসিত, মিঠে সুখ
বিভায় উজ্জ্বল। অনন্ত দোহন কালে
বিন্দু বিন্দু অমৃত ক্ষরণ।
যদিবা চুম্বন কর দ্বিধাহীন, পারিজাত বৈজয়ন্তী হব।।
|| বিরহের কাল ||
নিভু নিভু বিকেলের আঁচে, জ্বরতপ্ত
বসে থাকি বিরহের চাদর জড়িয়ে,
আলগোছে ধরে থাকে প্রথম শীতের ক্লান্ত
করুণ বাতাস; চোখ মিশে থাকে পথে যেখানে
গড়িয়ে গেছে রথের আওয়াজ। লুটোনো আঁধার পৃথিবীকে
ছুঁয়ে দিলে হেমন্ত প্রদোষে, শোক ও দুঃখের
চিহ্ন বিভঙ্গে ছড়িয়ে, নতমুখী ক্রন্দসী একাকী...
হঠাৎ তাহাকে মনে পড়ে।
|| নিঃশব্দ শব্দ ||
যদি বলি--'ভালোবাসি,' তুমি কি
বলবে--'আমিও'?
আদরে আহ্লাদে মাথা
টানবে কি বুকে?
'কতদিন হয়ে গেল দেখিনি তোমায়,
চোখ ছুঁয়ে দ্যাখো এসে, শিশির জমেছে।'--
এ কথা বললে কি তুমি, মনের গবাক্ষ
খুলে দিতে?
মগ্ন নেশার মত সেই প্রেম, মহুয়া
ফলের সুখে টুপটাপ ঝরত কী
বুকেতে দুর্বার?
'মিস্ করি, মিস্ করি তোমায় ভীষণ'--
কখনো বলতো যদি এই ঠোঁট, স্বাদে
গন্ধে চুমুর মতন;
সমুদ্র শঙ্খের শব্দে, ছাপিয়ে আওয়াজ
মারমুখী অশান্ত ঢেউয়ের, বলতে কি
অকপট--
'ও আমার মেঘলা বৈশাখ! সঙ্গে নিয়ে
মেঘের টুকরি--
বিবাগী হয়েছি জনস্থানে'?
জানাতে
কি অপঙ্কিল তীব্র সততায়,
সকলের মাঝখানে কেবল আমাকে?!
শব্দ-অক্ষর যদি ফুটে উঠত
ঠোঁটের ছোঁয়ায়,
ছুটে
গিয়ে মিশে যেত রুদ্ধ পাগল ঝোড়ো
হাওয়া, দরজা থেকে অন্য দরজায়।
বিদ্যুৎ চিরে দিত--মিশে যেত...।
...জীবনের সে কী পাল্টে যাওয়া!
ঝড়ের মুখের তাস, উড়ে যেত
খড়কুটো বাধা।
নিশ্চুপ বৈখরী, তবু সত্যি কি কিছুই বলিনি?
(পরবাস-৭৯, ৯ জুলাই, ২০২০)