Subscribe to Magazines





পরবাসে
নিরুপম চক্রবর্তীর

আরো লেখা

বই


ISSN 1563-8685




তিনটি কবিতা



ফেয়ারিটেল ভিলানেল

বাবুদের বাগানেতে শিস দিয়ে বয়ে যায় হাওয়া
আমাদের ভিলানেলে হঠাৎ এসেছে এক পরী
ডানায় ঝরেছে রক্ত: আজ তার স্বর্গে ফিরে যাওয়া।

কিছুই বলেনি সে তো, টলমল কান্না চোখে ছাওয়া
ঘাসের সবুজে শুধু বয়ে গেছে রক্তিম লহরী
বাবুদের বাগানেতে শিস দিয়ে বয়ে যায় হাওয়া।

বাবুরা হেসেছে খুব, আমাদের ওইটুকু পাওয়া।
আমরাও হাসি তাই, কে জানে কালকে যদি মরি?
ডানায় ঝরেছে রক্ত: আজ তার স্বর্গে ফিরে যাওয়া।

বাবুদের বাগানেতে থামেনি পরীর গান গাওয়া
থমথমে ফাঁপা সুর: ভয়ে কাঁপে পেয়াদা প্রহরী
বাবুদের বাগানেতে শিস দিয়ে বয়ে যায় হাওয়া।

সেদিন নেশার ঝোঁকে বাবুরা দেখেছে, আরে বাওয়া
পরীর ডানার রক্তে জ্বলে ওঠে আগুনের জরি!
ডানায় ঝরেছে রক্ত: আজ তার স্বর্গে ফিরে যাওয়া।

পরী-ত্রাসে বাবুদের এদিকে ঘুচেছে নাওয়া খাওয়া!
বাবুদের নুন খাই, কীভাবে পরীর গুণ ধরি?
বাবুদের বাগানেতে শিস দিয়ে বয়ে যায় হাওয়া
ডানায় ঝরেছে রক্ত: আজ তার স্বর্গে ফিরে যাওয়া।


ডিস্টোপিয়ান ভিলানেল

বুভুক্ষু সাপেরা তবু উঠে আসে অন্ধকার থেকে
একটি বীভৎস পাখি উড়ে গেলে দিকচক্রবালে
বিষণ্ণ প্রদোষে কে যে হেঁটে যায় দীর্ঘ ছায়া এঁকে।

এই রাত্রি কালরাত্রি যামঘোষ জানিয়েছে হেঁকে
আমরা নির্ভয়ে আছি বিড়ি ফুঁকে, পান ঠুসে গালে
বুভুক্ষু সাপেরা তবু উঠে আসে অন্ধকার থেকে।

সুরম্য স্বর্গীয় পথ গিয়াছে মৃত্যুর দিকে বেঁকে
জন্মিলে মরিতে হয়, কেই বা অমর এই কালে,
বিষণ্ণ প্রদোষে কে যে হেঁটে যায় দীর্ঘ ছায়া এঁকে।

প্যানডেমিক, অতিমারী আমরা জানিনা ঠিক সে কে
আমরা আনন্দে আছি, মৎস্য উঠে আমাদের জালে
বুভুক্ষু সাপেরা তবু উঠে আসে অন্ধকার থেকে।

মৃত কবি লিখে যায় ভিলানেল কবিতার ঠেকে
যে রূপ সে লিখিয়াছে আলোকিত সেই গত সালে
বিষণ্ণ প্রদোষে কে যে হেঁটে যায় দীর্ঘ ছায়া এঁকে।

বীভৎস পাখিটি জানে ফলগুলি উঠিয়াছে পেকে
বাগানের ফুলগুলি ছিঁড়িতেছে মরু-পঙ্গপালে
বুভুক্ষু সাপেরা তবু উঠে আসে অন্ধকার থেকে
বিষণ্ণ প্রদোষে কে যে হেঁটে যায় দীর্ঘ ছায়া এঁকে।


ভিলানেল নকটার্ন

ভীত ভিলানেলগুলি সারারাত আর্তনাদ করে
চাঁদের শরীরে বিদ্ধ অন্ধকার তারকার ছুরি
মৃত ভিলানেলগুলি জাগে তবু রক্তের ভেতরে।

হে কালপুরুষ তুমি আমাদের অসুস্থ শহরে
একক প্রহরী হয়ে এনেছ অশ্লীল কোজাগরী
ভীত ভিলানেলগুলি সারারাত আর্তনাদ করে।

মৃত্যুভয় ভুলে গেছি, শবদেহ খেলেছে লহরে
আমাদের আলিঙ্গনে হেসে ওঠে করোনা-সুন্দরী
মৃত ভিলানেলগুলি জাগে তবু রক্তের ভেতরে।

তবু কার ক্লান্ত-স্বর আমাদের অবরুদ্ধ ঘরে?
তবু যেন কাকে খুঁজে আমরা অন্ধের মতো ঘুরি
ভীত ভিলানেলগুলি সারারাত আর্তনাদ করে।

অলৌকিক পিউকাঁহা ডেকে যায় সারারাত ধরে
ভৌতিক বাতাসে বাজে গমগমে সময়ের ঘড়ি
মৃত ভিলানেলগুলি জাগে তবু রক্তের ভেতরে।

তবুও তো আলো হবো কোনো এক নিষিদ্ধ প্রহরে
সব জেনে, সব জেনে এ রাতে কেন যে ভুল করি
ভীত ভিলানেলগুলি সারারাত আর্তনাদ করে
মৃত ভিলানেলগুলি জেগে থাকে রক্তের ভেতরে।



(পরবাস-৭৯, ৯ জুলাই, ২০২০)