Subscribe to Magazine



পরবাসে হীরক সেনগুপ্তর
আরো লেখা



ISSN 1563-8685




টুনি


টুনি জেগে। অপেক্ষায়। বেল বাজলে নিঃশব্দে দরজা খুলবে।


জোজি বলল, 'এনেছি।'

টুনির চোখ চকচকে, 'ঠিকাছে?'

'হুঁ।' জোজি ঘাড় নাড়ল।

আবার টুনি জিজ্ঞাসা করল, 'বুঝেছিস?'

জোজি বলল, 'শোন না। একটা দুটো বুঝিনি।'

'সেটা তুই পরিষ্কার করে বলেছিস?'

'হ্যাঁ, বলেছি।'

টুনি বলে, ‘আজ ক্লাস আছে। দেখি বলব।'

দরজা বন্ধ। টুনি সোজা বিছানায়। এখন সাড়ে সাতটা অবধি । ন'টায় ক্লাস।


নানান কথা মাথায় ঘুরছে। ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমের জগতে টুনি। সাতটাও বাজেনি । ডাকাডাকি শুরু। আগের জন্মে নির্ঘাৎ কাক ছিল--'টুনি এখনও শুয়ে? শুনতে পাচ্ছিস না?'


টুনি সব শোনে। যা বলা হয়. হয় না। কতদিন ইস্কুল বন্ধ। মন খুলে গল্প নেই। হাহা হিহি। বন্ধ।

মোবাইল। অ্যাসাইনমেন্ট। আপলোড, জি-মিট। ধেৎ !


এই কথাটা টুনির মধ্যে ঘুরপাক খায়। কাকে বলবে?

এই লেখাপড়ায় মজা আছে? বাসের হুল্লোড়। লেটলাইনে কানধরা। ব্ল্যাক-বোর্ডের হাতছানি। ক্লাসরুমের দেওয়ালে মুচকি-হাসি। নখে লেখা টুকলিবার্তা! দরজা রঙচটে ল্যাব্রাডোর। লেজ নাড়ছে।


টুনির সেভেন। শোলাকিয়া হাইস্কুল। নতুন খাতাবইয়ের রাজা গন্ধ। করোনার ফ্যাচাং। রাস্তা লোকশূন্য। মহানন্দে ডিস্ট্যান্সিং। রাস্তায় আরামে নেড়িরা । চমৎকার দৃশ্য। ইচ্ছে হয় জাপটে আনে। সব গুবলেট।


'টুনি, উঠলি না?'

ক্রমশ হেঁড়ে। ঘড়িতে সাতটা। ঢের দেরি।

কী যে রাগ হচ্ছে। বললেই হাউমাউ। ওমা মুখেমুখে কথা। ষোলোআনা পাকামি।

ব্যস ইঞ্জিন কর্ডে। এঃ নিজে ঘুমোবে না। কেউ ঘুমালেও অশান্তি। শেষমেশ উঠেই পড়ে।


দাঁত মাজতে গিয়ে মনে পড়ল। জিনিসটা! শাঁ ছুটল। ভাগ্গিস। বিছানা তোলা হয়নি।

টুনি বোঝে না। হিজিবিজি কাজ। মা কেন করে? বিছানা তোলার দরকার কি? রাতেই তো শোব।

'যেমন বাপ। তেমন মেয়ে। বলে বাসি-বিছানা আবার কি?'


টুনি মনে মনে হাসে। আয়নায় নিজেকে দেখল। বলে, ‘আচ্ছা। বিছানা কি পান্তাভাত? বাসি হবে? পান্তাস্বাদ জানে? বলে ওসব বাঙালদের ! বাঙাল খাবার হয় ? টিভিতে ঘটিবাঙাল দেখে মাথা গেছে।’


মার চিৎকার কানে আসছে, 'তাড়াতাড়ি করো। ক্লাস…'

আয়নায় ঘড়িতে দেখল। মাত্র সাড়ে চারটে একথা বললেই হয়েছে।

বাড়ি মাথায়। কে বোঝাবে? ঘড়িতে তো সাড়ে চারটেই দেখায়। মা তুমি জানো না। ঘড়িতে সময় উল্টো? থাক বাবা।


১০

টুনির আক্ষেপ। যদি সত্যি সময়টা উল্টে যেত, ইস্‌!


১১

জোজির জিনিসটা চালান হয়েছে। টুনির মুঠো থেকে থ্রি-কোয়ার্টারের পকেটে। ওঁ শান্তি। জোজির কেসটা কেঁচে যাচ্ছিল। একটুপরেই পিড়িং। মেসেজ ঢুকবে।


১২

ইংরেজি দিদিমনির গলা, 'গার্লস…'

অমনি লাফ দেয় মা। 'এইই দ্যাখ! লিঙ্কটা। শিগ্গির--'

এঃ এমন করবে। আকাশে রামধনু উঠেছে।


বাড়িতে ইস্কুল এলে চিত্তির। দিনটাই লস। গুনে রেখেছে। লম্বা লস। চড়াই। হজমিগুলি। ফাউ আমপাচক। ইস সব লস। আর মেকাপ হবে?


১৪

টুনি দেখত। মুখোশ ইউজ করতেন ইতিহাস স্যার। খুব অসুখ। জাবদা মুখোশ। পুরোটাই ঢাকা। জ্বলজ্বল চোখের হাসি। এসেই বলবেন, 'আমার ছবি আঁকো।'

হি হি কী ভালো। এখন মুখোশে পৃথিবী।


১৫

এটাই ঠিক। এতদিনে মানিয়েছে। বড়রা মিথ্যে কথা বলে। মুখোশ তো ছিলই। এখন সামনে।


১৬

মার ক্লান্তি নেই, 'টুনি--রোলকল হচ্ছে।'

'ওফ । আমি তো আছিই। ইয়ার-ফোনটা আটকাতে দাও।'

স্কুলের শার্টটা পরে।

মা অবাক, ‘কিরে স্কার্ট?'

'দরকার কী?'


১৭

এখন চলবে। ঘ্যানর ঘ্যানর। মাইক্রোফোন অফ। ঠিক দেখেছে।

'ফুল্লরা। অনলাইন?'

ভাগ্গিস অ্যালার্ট ছিল। অন করে।

বলে, 'ইয়েস ম্যাম। ফোনটা ডিস্টার্ব।'

'আর ইয়ার-ফোন নেই?'

রাগ হয়। ইচ্ছে হল বলে, “বাবার ইয়ার-ফোনের দোকান। নেবেন একটা?”

'না ম্যাম।'

'কিনে নিও।'

'ম্যাম ভিডিওটাও মাঝে মাঝে ডিস্টার্ব করে। অফ হয়।'

'ও।'


১৮

আগে হত আধঘণ্টার ক্লাস। এখন পঁয়তাল্লিশ মিনিট। পনেরো মিনিট ক্লাস নিয়েই। হাইফাই তুলে একসা।

ঘুমিয়ে পড়ে আর কী।

রুটিনও বেতালা। কোনদিন ফার্স্টে ভূগোল। লাস্টে অঙ্ক। মাঝে বাংলা। ইতিহাস। বিজ্ঞান। প্রথমে ইংরেজি হলে লেকচার শুনেই কাটে। আজ ইংরেজি আন্টির মুখের নিচটা বেগুনের মতো লাগে।


১৯

সেকেন্ড পিরিয়ডটা টুনি মিস করবে না। বিজ্ঞানে অনেকগুলো প্রশ্ন। আটকে গেছে। অঙ্কের ক্লাস। আজ জিওমেট্রি। হোটাসঅ্যাপে অ্যাসাইনমেন্ট সাবমিট করবে। একটা রাইডার আটকে আছে। রাইডার বললে বন্ধুরা হাসে।

বাবা বলেছে, 'জিওমেট্রির এক্সট্রা বলে কিছু নেই। রাইডার বা তুমি থিওরেম রিলেটেড প্রব্লেম বলতে পারো।'

অঙ্ক করান প্রদীপস্যার। বেশি পড়ান না। অল্প অল্প করে এগোন।

স্যারের ক্লাস ভালো লাগে। ঝটপট বুঝে নিল রাইডার।


২০

মা যাই বলুক টুনি ফাঁকি দেয় না। তবে সময় মতো সব কাজ করেও না। পরে পরে সাবমিট করে। আসলে মার মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

বাবা বিকচ বসু। কাগজের অফিসের চাকরি নট। এখন অনলাইন ইউটিউবের চ্যানেলে 'লকডাউন মোমোরিজ' আপলোড করে। বিক্রিও হয়। শাটারস্টকে। বাবা স্ট্রাগলিং। আপসেট নয়।


২১

বাবাই বলে, 'দৈত্যটা মানুষ গিলছে। ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ। আমাদের তবু চলছে। অনেকের অবস্থা খুব খারাপ।’

'কবে ঠিক হবে?'

'বিজ্ঞানীরা ভাবছেন। হবে তো নিশ্চয়ই। গবেষণাও জোরদার। ঠিক হয়ে যাবে।'

মা বলে, ‘চাকরি না পেলে কী যে হবে? চিকিৎসার অনেক খরচ।’

বাবার পঁয়তাল্লিশ। হাইসুগার। চিন্তার।


২৩

বাবা অনেক বারণ করে। 'টিভি দেখা ছাড়ো। ওসব ভয় দেখায়। অসুখ ছড়িয়েছে ঠিকই। সুস্থতাই তো বেশি।'

মা শোনে না। 'জিনিসপত্রের এত দাম । খাবে কি?'

বাবা তো ভাল কথাই বলে, 'চিন্তা করলেই দাম কমবে? বরং জি-মিটে গান শেখাও। ভালো লাগবে।'

মা শুনলে তো?

টুনির মনটা কেন যে খারাপ হয়। মার চমৎকার গানের গলা। কত ছাত্রছাত্রী। তবু কেমন ভয়ে জবুথবু।

রাত্রিবেলা মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে শোয়। টের পায় মা কাঁদছে। ভেবেছিল বলবে। দশ তারিখ থেকে পরীক্ষা। বলা হল না।


২৪

জোজি ওর বন্ধু। মায়ের সঙ্গে আসে। ভোর ভোর ময়লা নেয়। টুনি ওকে সাবধান করে।

'মাস্কটা কেন নাকের নিচে?'

জোজি হাসল।

'ও-- খেয়াল নেই। ঝাড়ু দিচ্ছিলাম তো। হাঁপ-ধরে।'

মাস্ক ঠিক করল। জোজির মায়ের নাম নাদিরা। বাবারও এই কাজ। বাড়ি খাল ধারে। করোনায় কয়েকদিন কামাই করেছিল। কী রাগ!

জোজিরা কি মানুষ নয়? আবাসনের নাম 'সৌজন্য'। ব্যাঙের মাথা। সৌজন্য।


২৫

টুনির বাবা সেক্রেটারি। বলেছিল, 'ওদের নিয়ে ভাবছেন? হেল্থহ্যাজার্ড তো অনেক বেশি। আমরা পিপিই দিতে পারি না?'

আপত্তি ছিল। 'ক-জনকে পিপিই দেবেন?'

'গা বাঁচানো কথা। আমরা উদ্যোগ নিলে কিছুই না। মেনটেনেন্স বাড়বে। হার্ডলি পারহেড ফিফটি…'

কথা শেষ হয়নি; কাকুরা বলল, 'আপনি গুড স্যামারিটান। এক্সপেন্সটা বিয়ার করুন।'

শুধু বলেছিল, 'ওরা কাজ বন্ধ করলে আপনাকেও ঐ কাজ করতে হবে।'

'আপনি কি ওদের উস্কানি দিচ্ছেন?' মুখার্জি কাকুর প্রশ্ন।

'না। ভাবতে বললাম। কাউকে বিয়ার করতে হবে না। আমিই দেব।'

অবশ্য সাতজন শেয়ার করেছিল।


২৬

টুনি বলল, 'মাস্ক পরিস?'

'হুঁ। মা-বাবাকেও বলি।’

'তোদের ওখানে অসুস্থ হয়েছে?'

জোজি উত্তর দিল, 'একজনের। সেরে গেছে। রোগ আমাদের সারেই। নাহলে খাব কী! ছাড়। পরীক্ষা কবে?'

'সাত থেকে এগারো।'

'কীভাবে দিবি?'

'বলেনি। এটা রাখ।'

জোজি নিয়ে সালোয়ারের পকেটে রাখল। 'টুনি তোর মনে আছে তো? কাল আসব না।’

'ইদ?'

জোজি ম্লান মুখ, 'ওই যা হোক।'


২৭

কথাটা মাথায় ঘুরছে জোজির। মন বসছে না। কর্পোরেশনের স্কুল। খোলেনি। টুনিকে বলে, 'ইস্কুলবন্ধে মুশকিল হল। লেখাপড়া গেলই। খাবারও।’

'শুনেছি লকডাউনেও মিড-ডে-মিল দিচ্ছে?' টুনি জানতে চাইল।

জোজি মুখ বেঁকায়, 'ও গরুছাগলেও খাবে না। পোকা। পচা। ছিঃ!'


২৮

জোজি খুব শার্প। পটাপট গুন মুখেমুখে। ও আন্দাজে বর্গমূল শিখিয়েছে। বেশ মজার। টুনির অসুবিধাই হয়নি।

লকডাউনেও কিছু চায় নি। দিলেও নেয় না।

মা জোর করে খাবার দেয়। কাজ সেরে যাবার সময়। একটা দেড়টায়।


২৯

টুং।

টুনি লাফিয়ে ওঠে, 'কীরে এত ভোরে?'

জোজি টঝপট বলল, 'আজ একা। অনেকগুলো বাড়ি।'

'সবার শরীর ভালো?'

'হুঁ।'

টুনির গলায় উদ্বেগ, 'মা আসেনি কেন?'

জোজি এবার হাসে। 'ঝড়ে প্লাস্টিক গেছে। মা-বাবা লাগাচ্ছে। পরীক্ষা বলেছে?'

'বলেছে। অনলাইনে।’ আমি বলেছি, ‘নেটওয়ার্ক খারাপ। ফোন বিগড়োয় আরেকজন বলল, “খুব কারেন্ট যায়।”'

'কী বললেন?'

স্যার বলেছেন, 'ভেবে বলবেন।'

জোজি ঘাড় নাড়ল, 'ও।'


৩০

জোজির পরীক্ষার জন্য কৌতূহলী টুনি, 'তোর পড়া হয়েছে সব?'

'ধুর। হয়েছে না ছাই। খাঁচায় থাকলে কাজ হয়?'

'তা ঠিক।'

জোজির মুখটা কেমন শুকনো লাগে। 'তবে মজা দেখ। আমি তো বাইরে। আমার মতো অনেকেই বাইরে। তবুও লেখাপড়া গেল। সবার মনে ভয় ঢুকিয়েছে।'


৩১

জোজি কাঁদে না। গলায় কষ্ট খেলছে। 'জানিস না। আমাদের দেখলেই ছুটে পালায়। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং। কথাটাই ভণ্ডুল করল। অসুখ ছোঁয়াচে । ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং। হোয়াই সোশ্যাল?

‘এজন্যই দূর থেকে ময়লা ছোঁড়ে। আমাদের গায়ে মাথায়ও পড়ে। এসব নিয়ে একটুও ভাবে না।'


৩২

টুনির ভেতরটায় কেউ বালি-কাগজ ঘষছে। জোজি যেন জোর করে নেভানো, উল্টানো প্রদীপ। ও হাসছে। বলল, 'বাদ দে। ওসব ভাবলে চলবে না।’

টুনির মনটা তোলপাড় হয়। শুধু বলল, 'যা বলেছিলাম তোকে। করছিস?'

'করছি।'

'কেউ দেখেছে?'

জোজি এক ঝিলিক দাঁত, 'ও দেখার অত সময় নেই। মাস্কটা পরি। সত্যি বলছি মাঝে মাঝে খুলি। এত হাঁপ ধরে।'

'সাবধানে থাকিস।'

জোজির আগ্রহ পরীক্ষা নিয়ে। 'পরীক্ষা কটা থেকে?'

টুনি উত্তর দিল, 'দুটো থেকে চারটে।'

'বাঁচিয়েছে, বল?'

দুজনেই হাসছে। একসঙ্গেই হাসল। মুখ টিপে।

'হুম। সে তো বটেই।'

জোজি চলে যাচ্ছিল।

টুনি চাপা গলায় বলে, 'দিলি না?'

জোজি জিভ কাটে, ‘মা কালী! ভুলেই যাচ্ছিলাম--'

'টুনি… '

এইরে! মা।

জোজি, 'এখন টা টা'

মা'কে উত্তর দেয় টুনি, 'যাচ্ছি।'

টুনির হাত পকেটে। ঝাঁটার শব্দ।


৩৩

আজ টুনির পরীক্ষা। নার্ভাস লাগছে। ঠিকঠাক পারবে তো?

এই ভয়টাই করছিল। ফোন হ্যাং! দৌড়ে বাবার কাছে আসে। 'শিগগিরই ফোন করো।'

টুনির মা আরও অস্থির। 'কী হবে! পরীক্ষা দিবি কী করে?'

'মা, প্রব্লেমটা অনেকেরই হবে। হেডস্যার তো বলেছেন। অনলাইনে না হলে অফলাইনে।'

'তাহলেও…'

'কিচ্ছু হবে না।'

বাবা বলল, 'হেডস্যার বললেন অফলাইনে প্রশ্ন পাঠাচ্ছেন। আধঘণ্টা এক্সট্রা।'

টুনি মা'কে আশ্বস্ত করতে বলল, 'আচ্ছা। অনেক টাইম।’


৩৪

প্রথমবার অ্যানুয়াল বাড়ি বসে। টুনির ভেতরটা ধুকপুক করে; কী হবে? এইট হবে তো?


৩৫

টুনি অ্যালার্ট ছিল। গেটের ঠং হতেই নিঃশব্দে বারান্দায়।


৩৬

জোজির মুখে আশ্চর্য হাসি।


৩৭

টুনিও হাসল। 'হাসছিস? খবর কী?’

'ভালো।' জোজি ইঙ্গিতপূর্ণ উত্তর দেয়। পাল্টা জানতে চাইল, 'টুনি, তোর! সব ঠিকঠাক?'

'হুঁ।'

'তোর পরীক্ষা হয়ে গেছে না?'

'হুঁ।'

'কেমন হল?'

টুনি অম্লান মুখ, 'ওই হল। ফ্যাচাং। অফলাইনে।'

'এইটে উঠে যাবি বল?'

টুনি ঘাড় নাড়ল। 'হুঁ।'

জোজি হাত বাড়িয়ে বলল, 'এইটা নে।'

টুনি এক ঝটকায় হাত বের করে । 'দে।' জোজিকে বলল, ‘তোদের কারেন্টের সমস্যা ছিল না তো?'

'আমাদের তো হুকিং। কারেন্ট যায়ই না। ওই মাঝে মধ্যে হল্লা আসে। তখন অসুবিধা। অন্য কিছু না।'

টুনির বুক ঢিপঢিপ করে, 'বাইশে রেজাল্ট। ভয় ভয় করছে।’

'ভয় করলেই ভয়। চলি।'


৩৮

জোজির কথা। কেমন আলাদা সুন্দর। ভয় করলেই ভয়। টুনির মন থেকে ভয় উড়ে গেল।


৩৯

রেজাল্টের মেসেজ এল। রোলনাম্বার দিতেই ডাউনলোডিং। ঘুরেই যাচ্ছে। টুনির মুখ শুকনো।

বাবা ফোন করল।

'হ্যালো, হেডস্যার?'

'বলছি।'

'ফুল্লরার বাবা বলছি।'

'নমস্ক…'

'ফুল্লরার রেজাল্টটা ডাউনলোড হচ্ছে না স্যার!'


৪০

হেডস্যার। মা'র ইশারা, 'স্পিকার।'

বাবা শুনছে। বলল, ‘করছি।'

ভিডিও অন।


৪১

ফুল্লরা কোথায়?

'স্যার। এই যে…'

মা ফস করে জিগ্যেস করে বসল, 'স্যার ও পাশ করেছে?'

'হুঁ… করেছে। ফুল্লরা?’

'ইয়েস স্যার--'

'ক-বার পরীক্ষা দিয়েছ?' হেডস্যার বলেন।

'কেন স্যার, একবার।'

'রেজাল্টে দেখছি তুমি ফার্স্ট। আবার সেভেন্থ।'

'নাম দু-রকম। ফুল্লরা বসু। কাজল।' হেডস্যার জিজ্ঞেস করলেন, 'কাজল কি তোমার ডাকনাম?'

মা পাশ থেকে ফস করে উত্তর দেয়, 'না স্যার। ওর ডাকনাম টুনি।'

'তাহলে কাজল কে? যে ফার্স্ট হয়েছে?’

মা বলল, 'কাজল বলে তো কেউ ... '

টুনি বাধা দেয়. 'না স্যার। আছে।'

'আছে মানে?'

'জোজি।'

হেডস্যার অবাক। 'জোজি! সে কে?'


৪২

বাবা বলছে, 'আমাদের হাউসকিপারের মেয়ে।’

হেডস্যারের বিস্ময়, 'পরীক্ষা দিল কীভাবে?'


৪৩

বাবার গলা।

স্যার আপনাকে খুলেই বলছি। ওটা আমার মেয়ের প্ল্যান। কাজলের স্কুল বন্ধ। ও অনলাইনে। ফুল্লরা অফলাইনে।

'স্টাডি-মেটিরিয়াল?’

'ফুল্লরা মোবাইলটা শেয়ার করত।’


৪৪

'স্ট্রেঞ্জ!'

'মানছি। আদারওয়াইজ বছরটা নষ্ট।’

'সরকার তো প্রোমোশন দিত।’

'দিত। বিনা ক্লাসে প্রমোশন? আপনাদের সমস্ত ক্লাস ও করেছে। ফুল্লরার রেকর্ডিংয়ে।'


৪৫

স্যার, 'জোজি, পাশ না ফেল?'



(পরবাস-৮০, ১২ অক্টোবর, ২০২০)