|| ১ ||
“হাঁড়ির মধ্যে অনেক ভাতঅমিতাভ চৌধুরী এই ছড়াটি লিখেছিলেন বেশ কয়েক দশক আগে। সত্যি সত্যিই সি.আই.এ.-র ফাঁদ পাতা ভুবনে—সংস্থাটির স্থাপনা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কিছুদিন পরে—জুলাই ২৬, ১৯৪৭। পার্ল হারবারে জাপানি বিমান আক্রমণের পর থেকেই মার্কিন সরকার একটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা ও গুপ্তচর সংস্থার প্রয়োজন বোধ করেন; সংস্থাটির প্রথম কাজ হয় ইয়োরোপে সোভিয়েত প্রভাব বিস্তারে বাধা দেওয়া—উৎকোচ এবং নাশকতামূলক কর্মের মাধ্যমে। ১৯৪৮ সালে ইতালির নির্বাচনে বামপন্থীদের পরাজিত করে দক্ষিণপন্থীদের জয়ের ব্যবস্থা করা এই সংস্থার প্রথম সাফল্য। তাতে খরচ হয়েছিল কুড়ি কোটি মার্কিন ডলার।
তার একটি টিপিয়াই;
কোনটি আসল সি.আই.এর
বলতে পারেন সি.পি.আই?”
তারপর থেকে সংস্থাটির রমরমা—সন্ত্রাস ও অপপ্রচারের মাধ্যমে বামপন্থী ও সমাজতন্ত্রী সরকারের পতন ঘটানো এবং তার ফলে লক্ষ লক্ষ নির্দোষ মানুষের মৃত্যু—সি.আই.এ.-র বিশেষ দক্ষতা। ইরানে মহম্মদ মোসাদেগ (১৯৫৩), গুয়াতেমেলায় হাকোবো আরবেনস (১৯৫৪), কংগোতে পাট্রিস লুমুম্বা (১৯৬০), ইন্দোনেশিয়ায় সুকর্ন (১৯৬৭), চিলেতে সালভাদর আইয়েন্দে (১৯৭১)—সকলেই সি.আই.এ.-র ষড়যন্ত্রে ক্ষমতা অথবা প্রাণ হারিয়েছেন। ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসের পর এই সংস্থার হাতে বিপুল বিপুল ক্ষমতা এবং বাজেট—প্রায় বাইশ হাজার কর্মী তাঁদের আনুমানিক (কেউই সঠিক জানেন না আসল সংখ্যাটা) এবং প্রায় ২০০০ কোটি ডলার তাঁদের আনুমানিক বাৎসরিক বাজেট। কিন্তু রাজনীতি ও যুদ্ধ সন্ত্রাসের জগৎ ছাড়াও যে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল শিল্প ও সাহিত্যের জগতে, তা এতদিন ছিল সাধারণ পাঠকের অজ্ঞাতে—গত কয়েক বছরে তার পরিবর্তন ঘটেছে। আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল সমরের টানাপোড়েনে অংশ হয়েছেন এক মহান কবি ও সাহিত্যিক এবং তাঁর কালজয়ী উপন্যাস। ঘটনাটি প্রায় ছয় দশক আগেকার।
|| ২ ||
“Your health is bound to be affected if, day after day, you say the opposite of what you feel.”
সোভিয়েত শাসনে অনেক লেখক, কবি, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীর জীবনের করুণ কাহিনি আমরা শুনেছি—ওপরের উদ্ধৃতি তেমনই এক বহুল প্রচলিত কবির—বরিস লিওনিদোভিচ পাস্তেরনাক (১৮৯০-১৯৬০)-এর। যদিও তাঁর জীবন কেটেছে গ্যেটে (১৭৪৯-১৮৩২), শেকসপিঅর (১৫৬৪-১৬১৬), ফ্রিডরিখ শিলার (১৭৫৯-১৮০৫), পেডো কালদেরোন দে লা বারকা (১৬০০-১৬৮১) প্রমুখের জনপ্রিয় নাটকগুলি রুশ ভাষায় মঞ্চে অভিনয়ের জন্যে অনুবাদ করে, আদতে তিনি বিংশ শতাব্দীর এক প্রধান কবি।
কবির জন্ম মস্কো শহরে ফেব্রুয়ারি ১০, ১৮৯০ (গ্রেগোরিয়ান ক্যালেনডার অনুযায়ী, জুলিয়ান ক্যালেনডারে হবে জানুয়ারি ২৯) মস্কোর এক বর্ধিষ্ণু ইহুদি পরিবারে, যদিও গোঁড়ামি ছিল না ধর্মবিশ্বাসে। বাবা লিওনিদ মস্কো স্কুল অফ পেইনটিং, স্কালপচার অ্যানড আরকিটেকচারের নামকরা অধ্যাপক এবং খ্যাতনামা উত্তর-প্রতিচ্ছায়াবাদী চিত্রশিল্পী। মা রোসা কফম্যান কনসার্ট পিয়ানোবাদক। দাদু ইসাডোরে কফম্যান অডেসা শহরের ধনী ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি। পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু লেভ তলস্তয় (১৮২৮-১৯১০)—তাঁর অনেক বইএর প্রচ্ছদ আর অলংকরণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন লিওনিদ। বাবার সঙ্গে বেশ কয়েকবার ইয়াসনায়া পলিয়্যানাতে তলস্তয়ের বাড়িতেও গিয়েছেন বরিস। তাঁর শৈশবের প্রথম স্মৃতি বর্ণনা করেছেন তিনি—সান্ত পিতারবুর্গ শহরের বিখ্যাত সাময়িক পত্র, ফিওদর মার্কস (১৮৩৮-১৯০৪) সম্পাদিত “নিয়েভা”য় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তলস্তয়ের উপন্যাস “পুনরুত্থান” (“রেসারেক্সান”) এবং তার জন্যে প্রতি সংখ্যায় ছবি আঁকছেন লিওনিদ। তখন কবির বয়েস সাত কি আট। ১৯১০ সালের নভেম্বর মাসে বাবার কাছে টেলিগ্রাম আসে—আস্তাপোভো রেলস্টেশানে স্টেশানমাস্টারের কক্ষে মৃত্যু হয়েছে তলস্তয়ের—বরিসকে সঙ্গে নিয়ে অবিলম্বে সেখানে যান লিওনিদ এবং মৃত্যুশয্যায় মহান লেখকের অন্তিম প্রতিকৃতিটি আঁকেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই করুণ দৃশ্যটি ভুলতে পারেননি কবি। তাঁদের বাড়িতে আরেক অনিয়মিত অতিথি ছিলেন রাইনার মারিয়া রিলকে, পরবর্তীকালে তাঁর অন্যতম প্রিয় কবি।
খুব অল্পবয়েসেই শুরু হয় তাঁর সঙ্গীতচর্চা, তিনি স্থির করেন মায়ের মতন পিয়ানো বাজাবেন এবং সঙ্গীতকার হবেন; স্কুলের পড়া শেষ করে যোগ দেন মস্কো কনজারভেটরির ছাত্র হিসেবে, কিন্তু কুড়ি বছর বয়েসে গানবাজনার সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে তাঁর দর্শনশাস্ত্র পাঠের সূচনা। উচ্চশিক্ষার জন্যে যান জার্মানির মারবার্গ শহরের ফিলিপ বিশ্ববিদ্যালয়ে—তখনই শিক্ষায়তনটি প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন—সেখানে বিখ্যাত ইহুদি দার্শনিক হারমান কোহেন (১৮৪২-১৯১৮)-এর কাছে শিক্ষা নেন কান্ট-এর দর্শনে। জার্মানিতে বসবাসকালেই তাঁর কবিতায় মনোনিবেশ। কোহেন তাঁকে উৎসাহ দেন দর্শনশাস্ত্রে ডক্টরেট করার জন্যে, কিন্তু তিনি প্রথম মহাযুদ্ধের প্রাক্কালে মস্কো ফিরে আসেন এবং নিয়মিত কবিতা লেখার কাজে হাত দেন।
পায়ে চোট পাবার জন্যে তাঁকে জারের সেনাবাহিনীতে নাম লেখাতে হয় নি, তবে উরাল পর্বতমালা অঞ্চলে একটি অস্ত্রশস্ত্রের কারখানায় দুবছর চাকরি করেন। এই সময় পরপর দুটি কাব্যগ্রন্থ—১৯১৪ সালে প্রকাশিত “যমজ ভাসে মেঘমালায়” এবং ১৯১৬ সালে “সব বাধাবন্ধন পেরিয়ে” তাঁকে কবিতার জগতে প্রতিষ্ঠিত অরে। যদিও রিলকে, লেরমন্তফ আর পুশকিনের প্রভাব তাঁর রচনায়, তাঁর নিজস্ব কাব্যভাবনা ও কন্ঠস্বরের প্রকাশ ঘটে সেখানে। ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের পর অন্যান্য অনেক লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী দেশ ছেড়ে গেলেও তিনি রাশিয়ায় থেকে যান—তিনি ভেবেছিলেন জারের অপশাসনের পরে দেশে ফিরে আসবে গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচার; এবং তিনি শ্রদ্ধা করতেন লেনিনের ব্যক্তিত্বের। গৃহযুদ্ধ, দারিদ্র্য, খাদ্য এবং জ্বালানির অভাব তখন দেশের সর্বত্র—তাঁর মধ্যেই চলে তাঁর মহতী কাব্যরচনা। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় এবং খুব সম্ভবত শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ “আমার ভগিনী, জীবন”। পালটে যায় রুশ কবিতার ইতিহাস, প্রভাবিত হন অনুজ এবং সতীর্থ কবিরা।
|| ৩ ||
“How wonderful to be alive, he thought, but why does it always hurt?”—বরিস পাস্তেরনাক
খুব অল্প বয়েস থেকেই পাস্তেরনাক ভাবতে শুরু করেন বিংশ শতাব্দীর রাশিয়াকে বিষয় করে একটি দীর্ঘ, মহতী উপন্যাস লিখবেন দস্তয়েফস্কি অথবা লেভ তলস্তয়ের আদলে। তার প্রধান চরিত্র ইউরি আন্দ্রেইএভিচ জিভাগো কবি এবং চিকিৎসক—কাহিনির সূচনা ঘটবে জারের আমলে, ১৯০৫ সালের সশস্ত্র বিপ্লবের প্রাক্কালে। ১৯১০ এবং ১৯২০-র দশাব্দে তিনি উপন্যাসের কিছু কিছু অংশ লিখেছিলেন, কিন্তু তারপরে অন্য গদ্য, পদ্য ও অনুবাদের কাজের চাপে লেখাটি অসমাপ্তই থেকে যায়।
লেখক বিয়ে করেছেন দুবার—১৯২২ সালে ইয়েভগেনিয়া লুরি নামে আর্ট স্কুলের এক ছাত্রীকে। ইয়েভগেনি নামে একটি পুত্রসন্তান হয় তাঁদের এবং দশ বছর পরে বিবাহবিচ্ছেদ। ১৯৩৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ জিনেইদা নাইগাউজের সঙ্গে। কিন্তু ১৯৪৬ সালে নভিমির সাহিত্যপত্রের আপিসে এক তরুণী সম্পাদক ও অনুবাদককে দেখে তাঁর প্রেমে পড়েন—ওলগা ভ্সেভলডোভনা ইভিনস্কায়া (১৯২২-১৯৯৫), বয়েসে তাঁর থেকে বাইশ বছরের ছোটো—দুবার বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জননী (প্রথম স্বামী আত্মহত্যা করেন, দ্বিতীয় স্বামী যুদ্ধে নিহত)। ওলগাকে দেখে তার সৌন্দর্যে এবং ইন্দ্রিয়-উদ্দীপক সংবেদনে আকৃষ্ট হন ৫৬ বছর বয়েসি মহান কবি। তিনি মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত, অনুরক্ত, কামনাময় ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর—সবচেয়ে বড়ো কথা—তিনি কবিতাপ্রেমী, সেখানে জিনেইদার সঙ্গে তাঁর প্রবল পার্থক্য। প্রিয় কবি এবং রুশ সাহিত্যের এক প্রধান তারকার সঙ্গ পেয়ে ধন্য হলেন ওলগা। পরে তিনি স্মৃতিকথায় লিখবেন—‘তাঁর সান্নিধ্য পাওয়া ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়ার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।’
প্রথমে কাফেতে দীর্ঘ আলাপ, তারপর পথে, পার্কে এবং অরণ্যে সুদীর্ঘ পদচারণা, অবশেষে শয্যায়—কবি যেন ফিরে পেলেন তাঁর যৌবন—নতুন উদ্যমে শুরু করলেন ফেলে রাখা উপন্যাসের কাজ—প্রধান নারী চরিত্র লারিসা গুইচার্ড ওরফে লারাকে নবজীবন দান করলেন ওলগার আদলে—৫৬ আর ৩৪-এর প্রেম থেকে জন্ম নিল এক কালজয়ী উপন্যাস। ওলগার স্মৃতিকথায়, “He phoned almost every day, and instinctively afraid of me meeting or talking to him, yet dying of happiness inside…Almost every afternoon, toward the end of working hours, he came in person to the office and often walked with me through the streets, boulevards and squares, all the way home to Potapov street.”
পাস্তেরনাক তখন হাংগেরির জাতীয় কবি সান্দর পেতোফি (১৮২৩-১৮৪৯)-র কবিতা অনুবাদ করছেন—ওলগা সহায়তা করেন সেই অনুবাদ কর্মে—কবি তাঁকে উপহার দেন অনুবাদ গ্রন্থের প্রথম কপিটি—পেতোফির প্রেমের কবিতাগুলির অনুবাদ ওলগার প্রতি তাঁর প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। বইটি উৎসর্গের তারিখ মে ১৩, ১৯৪৮। একই সময় তিনি নভিমির-এর চাকড়ি ছেড়ে দিয়ে কবির সেক্রেটারি এবং ব্যক্তিগত সচিবের পদে কাজ করতে শুরু করেন। পরের বছর, ১৯৪৯ সালে, যখন তাঁরা দুজনে কোরিয়ার কবি ওয়ান তু সনের কবিতার রুশভাষায় অনুবাদে রত, সেই বছরের অক্টোবর ৬, সোভিয়েত-বিরোধী কার্যকলাপের অপরাধে স্তালিনের পুলিস গ্রেফতার করে তাঁকে—তাঁর গর্ভে তখন কবির সন্তান। প্রথমে মস্কোর কুখ্যাত লুবিয়াংকা কারাগারে দুঃসহ পুলিসি জেরা, তারপর লোক দেখানো বিচারে পাঁচ বছরের গুলাগবাস। সেখানে জন্মের আগেই শিশুটির অকালমৃত্যু। ১৯৫৩ সালে স্তালিনের মৃত্যুর পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ওলগা নির্বাসনে যাওয়ার পরে সকলেই ভেবেছিলেন তাঁদের প্রেমেরও অকালমৃত্যু ঘটবে, কিন্তু পাস্তেরনাক জানতেন ওলগার গর্ভে রয়েছে তাঁর সন্তান এবং তাঁর নির্যাতনের প্রধান কারণ তিনি কবির বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেন নি—কেজিবি-র দীর্ঘ, বিশদ জেরার পরেও বিশ্বাসঘাতকতা করেন নি কবির সঙ্গে। তিনি যে স্বাধীন জীবনযাপন করতে পারছেন সেটা অনেকটাই ওলগার আত্মত্যাগের জন্যে। কবি তাঁর প্রেম ও কৃতজ্ঞতা উজাড় করে দিলেন উপন্যাসটির পাতায় পাতায় এবং তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ২৬টি কবিতার বেশিরভাগই ওলগাকে নিবেদিত।
১৯৫৪ সালে উপন্যাসটির প্রথম খসড়া সমাপ্ত হল—পনেরোটি পর্বে বিভক্ত অসংখ্য চরিত্রের এই কাহিনির প্রধান উপজীব্য তরুণ, আদর্শবাদী ডাক্তার ইউরি জিভাগোর সঙ্গে তরুণী নার্স ল্যারিসা গুইচার্ডের প্রেম—যদিও দুজনেই তার আগে বিবাহিত। পটভূমিতে ১৯০৫ এর বিপ্লব, প্রথম মহাযুদ্ধ, ১৯১৭ এর বিপ্লব, শ্বেত সন্ত্রাস, গৃহ-যুদ্ধ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। ইউরির মৃত্যু হয় হৃদরোগে, তাঁর শেষকৃত্যে যোগদান করতে গিয়ে লারার গ্রেফতার এবং গুলাগে নির্বাসন। উপন্যাসের পরিশিষ্টে দুজন পারিবারিক বন্ধু ধোবিখানায় কর্মরত এক অনাথ বালিকার চেহারা দেখে অনুমান করেন সে ইউরি ও লারার কন্যা। প্রকাশিত হয় মরণোত্তর জিভাগোর প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
|| ৪ ||
“As for the men in power, they are so anxious to establish the myth of their infallibility, that they do their utmost to ignore truth.”—বরিস পাস্তেরনাক।
১৯৩০-এর দশাব্দে তাঁকে অনুবাদ কর্ম ছাড়া অন্য সব সাহিত্যচর্চা স্থগিত রাখতে হয়েছিল স্তালিনের ভয়ে। ১৯৩৪ সালে এপ্রিল মাসে কবি অসিপ ম্যানডেলস্টাম (১৮৯১-১৯৩৮) স্তালিনকে ব্যঙ্গ করে ১৬ পঙ্ক্তির একটি কবিতা লিখে পড়ে শোনান ঘনিষ্ঠ কবিবন্ধুদের—পাস্তেরনাক কবিতাটি শুনে ভয়ে কাতর হন তাঁদের দুজনেরই নিরাপত্তার কথা ভেবে—তিনি বলেন, “আমি এই কবিতা শুনি নি, তুমি এটা আবৃত্তি করো নি; তুমি তো জানো কীসব বিচিত্র আর ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে চলেছে, মাঝরাতে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মানুষজনকে। আমার ভয় লাগে যে দেয়ালেরও কান আছে, এমনকী রাস্তার ধারের বেঞ্চিগুলোও শুনেছে তোমার কবিতা এবং পরে অন্যকে বলবে। এখনই বলে রাখছি আমি কিছুই শুনি নি।” ওই বছরের মে ১৪, ম্যানডেলস্টাম গ্রেফতার হন এবং খবর পেয়েই পাস্তেরনাক ইজভেসতিয়া কাগজের আপিসে গিয়ে সম্পাদক ও স্তালিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নিকোলাই বুখারিনকে (১৮৮৮-১৯৩৮) বার বার সনির্বন্ধ অনুরোধ করেন, কবির হয়ে স্তালিনের সঙ্গে কথা বলতে।
এর কয়েকদিন পরে স্তালিনের ফোন আসে পাস্তেরনাকের অ্যাাপার্টমেন্টে; স্তালিন কোনও রকম সৌজন্য বিনিময় ছাড়াই তাঁকে প্রশ্ন করেন, “ম্যানডেলস্টামের গ্রেফতার নিয়ে সাহিত্যিক মহলে কী আলাপ আলোচনা চলেছে?” তিনি কবিকে “আপনি”র বদলে “তুমি” সম্বোধন করেন এবং নানা ভাবে হেনস্থা করেন। প্রশ্নের কোনও সদুত্তর না পেয়ে স্তালিন তাঁকে বিদ্রুপ করে বলেন, “নিজের কমরেডকে সমর্থন করার এতটুকু সৎসাহসও তোমার নেই।” এবং ফোন রেখে দেন। এই ফোন সংলাপের কথা জানাজানি হলে কবি লেখকেরা অনেকে পাস্তেরনাককে কাপুরুষ বলে নিন্দা করেন, কিন্তু ম্যানডেলস্টাম নিজে অথবা তাঁর স্ত্রী নাদেঝ্দা কোনও দিন তা করেন নি।
এর পরে “বিশাল শুদ্ধিকরণ” অথবা “গ্রেট পার্জ”-এর সময় যখন ভুয়ো বিচারের মাধ্যমে অবাঞ্ছিত মানুষজনকে হত্যা করার তালিকা তৈরি হচ্ছে, তখন স্তালিন নাকি নিজের হাতে সেই তালিকা থেকে পাস্তেরনাকের নাম কেটে দেন, আর বলেন, “এ বাস করে মেঘের ওপর—একে খতম করে লাভ নেই।”
কিন্তু ১৯৫৪ সালে যখন উপন্যাসটির কাজ সমাপ্ত হল তখন স্তালিনের মৃত্যু ঘটেছে এবং খুব অল্প হলেও মুক্ত হাওয়া বইছে সাহিত্যের জগতে। ইসাক বাবেল (১৮৬৪-১৯৪০)-কে গুলি করে মারা হয়েছে ১৯৪০ সালে, সাইবেরিয়ার পূর্ব প্রান্তের ট্রানজিট ক্যাম্পে শৈত্য ও খিদের তাড়নায় মৃত্যু হয়েছে অসিপ ম্যানডেলস্টামের ১৯৩৮ সালে, মিহাইল বুলগাকভ মারা গিয়েছেন কিডনির অসুখে—তাঁর কালজয়ী উপন্যাস তখনও অপ্রকাশিত—১৯৪০ সালে, আনা আখমাতোভার (১৮৮৯-১৯৬৬) কবিতার প্রকাশ নিষেধ। কিন্তু লেখকের আশা, এবার স্বাভাবিকতা, কিছুটা হলেও আসবে সাহিত্যের জগতে। তা অবশ্য হবার নয়। যখন তিনি পরম মমতায় ডক্টর জিভাগোর পরিমার্জনায় ব্যস্ত, ওদিকে সোভিয়েত বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে হাংগেরি, রোমেনিয়া, পোল্যান্ড এবং পূর্ব ইয়োরোপের অন্যান্য দেশে। পার্টি নেতা নিকিতা ক্রুশচেভ (১৮৯৪-১৯৭১) কেবল যে সেই আন্দোলনগুলোকেই কঠোর হাতে দমন করলেন, তাই নয়, নিজের দেশেও দেখতে থাকলেন প্রতিবিপ্লবের ভূত—তার ছায়া পড়ল সাহিত্যের জগতেও।
১৯৫৬ সালের সূচনায় লেখক উপন্যাসটি জমা দিলেন ‘নভিমির’ প্রকাশনা সংস্থায় এবং “জ্নামিয়া” (“কেতন”) নামিক মাসিক সাহিত্যপত্রে। রচনাটির গুণগত বিচারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা লেখকের নাম পাঠালেন কেজিবি-র কাছে—তাঁর মধ্যে প্রতিবিপ্লবী চিন্তাভাবনা আছে কিনা খতিয়ে দেখার জন্যে; পাণ্ডুলিপির কপি পৌঁছে গেল পার্টির সেন্ট্রাল কমিটিতে—তাঁরা রায় দিলেন লেখাটিকে “বিদ্বেষপ্রসূত কুৎসা” বলে। সেপ্টেম্বর মাসে উত্তর পেলেন লেখক—নভিমির-এর সম্পাদকমণ্ডলীর পাঁচ জনের স্বাক্ষর করা দীর্ঘ চিঠি—প্লটের বিশদ আলোচনা আর ত্রুটিবিচ্যুতির তালিকা—লেখক তাঁর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাঁর রাজনৈতিক মতামত সোভিয়েত-বিরোধী; সামাজিক অগ্রগতি এবং সর্বহারার উন্নতির বদলে তিনি চরিত্রগুলির ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধের দিকে তাঁর নজর বেশি; পাঠকের মনে কমিউনিজম বিরোধী বিষবৃক্ষের বীজ বপন করতে পারে এই উপন্যাস; এছাড়া রয়েছে স্তালিন, ‘বিশাল শুদ্ধিকরণ’, ‘উৎপাদনের যৌথীকরণ’ এবং গুলাগের সমালোচনা; উপন্যাসটি প্রকাশের প্রশ্নই নেই, বরং লেখকের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
|| ৫ ||
“Art belongs to the people. It should be understood and loved by the masses. It must unite and elevate their feelings, thought and will.”—ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন (১৮৭০-১৯২৪)
ইতোমধ্যে এই উপন্যাসটির সংবাদ ছড়িয়েছে রাশিয়া পেরিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম ইয়োরোপের অনেক দেশে। ইতালিয় সাংবাদিক সার্জিও ডিঅ্যানজেলো (১৯২২- ) তখন রেডিও মস্কোতে কাজ করেন। তিনি ঘোর বামপন্থী এবং ইতালির কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য—মস্কোর সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক মহলে তাঁর নিয়মিত চলাফেরা। ১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে তিনি লেখকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিমে পেরেদেলকিনো গ্রামে তাঁর দাচা অথবা খামারবাড়িতে। ইতালির মিলান শহরের প্রকাশক জান্জিয়াকোমো ফেল্ত্রিনেলি (১৯২৬-১৯৭২) নিজেও কমিউনিস্ট এবং পশ্চিমে সোভিয়েত রাশিয়ার আধুনিক সাহিত্য প্রকাশ করতে আগ্রহী। ডিঅ্যানজেলো লেখককে বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করলেন দেশে যখন বইটি প্রকাশের পথে বাধা, ইতালির কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন প্রকাশককে দিয়ে প্রকাশ করতে ক্ষতি কী? শেষ পর্যন্ত ওই বছরের মে মাসের ২০ তারিখে পাস্তেরনাক নতুন উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিটি দিলেন তরুণ সাংবাদিকের হাতে এবং করুণ হাসি হেসে বললেন, “আমার ফাঁসি চড়ার অনুষ্ঠানে নেমন্তন্ন রইলো।”
সোভিয়েত লেখকদের রচনা পশ্চিমের দেশে প্রকাশের প্রচেষ্টায় ছিল ভীষণ ঝুঁকি। সোভিয়েত বিপ্লবের পরবর্তী দশকে দুজন লেখক তার চেষ্টা করেছিলেন। একজন বরিস পিলনিয়াক (১৮৯৪-১৯৩৪), তাঁর মৃত্যু হয় রুশ পুলিসের হাতে; দ্বিতীয়জন ইয়েভগেনি জামিয়াতিন (১৮৮৪-১৯৩৭)--তিনি নির্বাসিত হন ফ্রানসে। পাস্তেরনাকের একমাত্র আশা যেহেতু তাঁর প্রকাশক কমিউনিস্ট সমর্থক, হয়ত সোভিয়েত সরকার সদয় হবেন। এর পরে অনেক মাস ধরে নানা মধ্যবর্তীর মাধ্যমে লেখক ও প্রকাশকের মধ্যে পত্রবিনিময় চলে, তাতে ওলগা-ও সক্রিয় অংশ নেন। চিঠিপত্রের বেশিরভাগই পৌঁছে যায় কেজিবি-র দপ্তরে। মস্কোর লেখক ইউনিয়ন পাস্তেরনাকের ওপরে প্রবল চাপ সৃষ্টি করেন উপন্যাসটি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যে। সোভিয়েত প্রভাবিত ইতালির কমিউনিস্ট পার্টি প্রকাশককে ভয় দেখায় প্রকাশনা বন্ধ করার জন্যে। লোভও দেখানো হয় যে গ্রন্থটির একটি পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হবে মস্কো থেকে। সরকারের চাপে লেখক প্রকাশককে টেলিগ্রাম পাঠান উপন্যাসটি ফেরত দেবার জন্যে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে দূতের মাধ্যমে গোপন বার্তা পাঠান টেলিগ্রামটি অগ্রাহ্য করতে। ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে ইতালির মিলান শহরে “ডক্টর জিভাগো” গ্রন্থের প্রথম প্রকাশ ঘটে অনুবাদে, ইতালিয় ভাষায়। এর আগের দেড় বছরের চিঠিপত্র, আলাপ আলোচনা এবং সেই সঙ্গে লেখক ও তাঁর প্রেমিকার উদ্বেগ, মনোবেদনার আকর্ষণীয় পরিচয় রয়েছে সার্জিভ ডিঅ্যানজেলো (প্রকাশ ২০০৭) এবং পাওলো মানকসু (প্রকাশ ২০১৪) এর গ্রন্থদুটিতে। বইটি প্রকাশ হবার আগেই তার সুনাম ছড়িয়েছে ইয়োরোপে এবং প্রকাশক ফেলত্রিনেলি ১৮টি ভাষায় অনুবাদের জন্যে লাইসেনস মঞ্জুর করেছেন। খুব দ্রুতগতিতে গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ করে ফেললেন ম্যাক্স হেওয়ার্ড (১৯২৪-১৯৭৯) যাঁকে বলা হয় কনসট্যানস গারনেট (১৮৬১-১৯৪৬)-এর পরে রুশ ভাষার দ্বিতীয় সেরা ইংরেজি অনুবাদক এবং মানিয়া হারারি (১৯০৫-১৯৬৯)। দুই ব্রিটিশ লেখকের যুগ্ম অনুবাদ কর্ম প্রকাশিত হল ১৯৫৮ সালের আগস্ট মাসে—পরবর্তী এক বছরের মধ্যে গ্রন্থটি বেস্টসেলারের তালিকায় স্থান পেল ২৬ সপ্তাহ ধরে। পরবর্তী ৫০ বছরে এই একটি অনুবাদই পাওয়া যেত গ্রন্থটির—২০১০ সালে দ্বিতীয় অনুবাদটি প্রকাশিত হয়েছে—অনুবাদক রিচার্ড পিভিয়ার (১৯৪৩—) এবং লারিসা ভলোখন্স্কি দম্পতি। একই সঙ্গে ফরাসি, জার্মান ও স্প্যানিশ ভাষার অনুবাদও প্রকাশিত হ’ল।
এখানে বলে রাখা ভালো যে পাস্তেরনাক যে কোনও ভাষায় বিংশ শতাব্দীর এক প্রধান কবি, কিন্তু কথাসাহিত্যে তাঁর প্রতিভা ও দক্ষতা সীমিত। বেশ কয়েক দশক ধরে তিনি এই উপন্যাসটি রচনা করেছেন, তরুণী ওলগার অনুপ্রেরণায় তা সমাপ্ত হয়েছে—উপন্যাসে রয়েছে নাটকীয় মালমশলা—বিপ্লব, মহাযুদ্ধ, শান্তি, গৃহযুদ্ধ, সরকারি পীড়ন; রয়েছে রাশিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য; অসংখ্য নানা মাপের চরিত্র; ঠিক যেমন লেখকের গুরু লেভ তলস্তয়ের রচনা। তার সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত প্রেম ও অবৈধ সন্তান—পাঠকরা বইটিকে জনপ্রিয় করেছেন, কিন্তু বিদেশি সমালোচকেরা ধন্দে পড়েছেন বইটি রিভিউ করতে গিয়ে। রাশিয়ায় কিন্তু চিত্রটি সম্পূর্ণ আলাদা; আখমাতোভা উপন্যাসটির টাইপ করা কপি পড়ে জানালেন, “It is my time, my society. But I do not recognize it. It is a failure of genius.” তাঁর সঙ্গে একমত হলেন নবোকভ—তাঁর মতে রচনাটি, “A sorry thing, clumsy, trite and melodramatic, with stock situation, voluptuous lawyers, unbelievable girls, romantic robbers and trite coincidences.”
নবোকভ সঠিক বলেছেন, কিন্তু পশ্চিমে উপন্যাসটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আর ঐতিহাসিক কারণে এবং সমাজব্যবস্থার এক প্রতীক হিসেবেও। এই প্রথম বিপ্লব-পরবর্তী রাশিয়ার সাধারণ মানুষের অবস্থা প্রতিফলিত হল কথাসাহিত্যে—সোভিয়েত শাসনে বাস করে এক খ্যাতনামা কবি তা লিখেছেন, নানা নির্যাতন সহ্য করেও লেখাটি দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন প্রকাশের জন্যে এবং তিনি এখনও সশরীরে বেঁচে—সোভিয়েত রাজনীতি এবং সোভিয়েত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রচারের এমন সুযোগ পশ্চিমের দেশগুলি পায়নি এর আগে। মার্কিন প্রবন্ধকার এডমান্ড উইলসন (১৮৯৫-১৯৭২) গ্রন্থটির সম্বন্ধে লিখলেন, “Doctor Zhivago will, I believe, come to stand as one of the great events in man’s literacy and moral history. Nobody could have written it in a totalitarian state and turned it loose on the world who did not have the courage of genius.” কেবল পশ্চিমের বুদ্ধিজীবীরাই নন, রাজনীতিকরাও খেয়াল করলেন এই “সোভিয়েত-বিরোধী” লেখকের কথা। মাঠে নামলো সি.আই.এ.-র গুপ্তচরেরা।
|| ৬ ||
“Revolutions are made by fanatical men of action with one-track minds, men who are narrow-minded to the point of genius.”--লারার প্রতি জিভাগোর উক্তি
১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে ইতালিয় ভাষায় বইটি প্রকাশের কিছুদিন আগেই টনক নড়েছিল সিআইএ-র—ম্যাক্সিম গোর্কি বলেছেন, ‘বইগুলো হল সমাজতন্ত্রের পক্ষে শক্তিশালী অস্ত্র।‘ এখন তারা একটি বইয়ের সন্ধান পেয়েছেন যা সমাজতন্ত্রের বিরোধী অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। সোভিয়েত রাশিয়াকে বেইজ্জত করার এমন সুবর্ণ সুযোগ ছাড়া যায় না। এই বিষয়ে সিআইএ-র নেতৃত্বের প্রথম প্রতিবেদনেই লেখা হয়েছিল যে গ্রন্থটিকে প্রচারের অস্ত্র করে তুলতে হবে, কিন্তু এমনভাবে, যাতে লেখকের কোনও ক্ষতি না হয়। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে রাশিয়ার অন্তর্গত ব্রিটিশ গুপ্তচরদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা গেল দুটি মাইক্রোফিল্মে পুরো রুশ ভাষার গ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি। পরবর্তী কর্মসূচি কী হতে পারে সেই নিয়ে পরামর্শ করা হল শীতল সমরের বৌদ্ধিক গুরু জর্জ কিনান (১৯০৪-২০০৫)-এর সঙ্গে।
কিনানের ভাবনা অনুযায়ী “সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার কংগ্রেস” গঠিত হয়েছে ১৯৫০ সালে—তাঁরা মার্কিন বই ও পত্রপত্রিকার রুশ অনুবাদ পাচার করে চলেছেন রাশিয়ার অভ্যন্তরে—কিন্তু এইসব কাজের জন্যে খোলাখুলি অর্থ অনুদানের সুযোগ নেই—তাই সিআইএ তাঁদের গোপন ভাণ্ডার থেকে সেই সব কার্যকলাপ চালাতেন। সিদ্ধান্ত হল যেহেতু বইটির প্রচার মূল্য অসাধারণ, তাই হাজার হাজার কপি গোপনে ছেপে, সেগুলি পাচার করা হবে সোভিয়েত রাশিয়ায়। কিন্তু প্রথমে একজন প্রকাশকের প্রয়োজন—ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করলেন বইটি যেন আমেরিকায় ছাপা না হয়—তাতে লেখকের ওপরে নির্যাতন বাড়তে পারে আর পাস্তেরনাক গোপনে নানা হাত ঘুরে তাঁদের জানালেন যেন প্রকাশের কাজে কোনও রুশ অভিবাসীর সাহায্য না নেওয়া হয়, তাতে দেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা মুশকিলে পড়বেন। তাই প্রকাশক খুঁজতে একটু সময় লাগল।
কয়েক মাস পরে প্রকাশক পাওয়া গেল—ন্যু ইয়র্কের ফেলিক্স মরো—(১৯০৬-১৯৮৮), ট্রটস্কিপন্থী কমিউনিস্ট, কিন্তু ঘোর সোভিয়েত-বিরোধী। জুন ২৩, ১৯৫৮ তিনি মার্কিন সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে সই করলেন যে রুশ ভাষায় তিনি বইটির টাইপসেট করে দেবেন এবং ৩১ জুলাই-এর মধ্যে দুই সেট ফোটো অফসেট প্রুফ নির্মাণ করবেন—তারপর সেগুলো ইয়োরোপের এক অজানা দেশে পাঠানো হবে প্রকাশনার জন্যে। সেপ্টেম্বর মাসে ব্রাসেলস শহরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা—সেখানে বইটির উদ্বোধন এবং বিনামূল্যে বিলি করা হবে। সেই সংগে ইয়োরোপের বিভিন্ন বন্দরে রাশিয়াগামী বাণিজ্যপোতের নাবিকদেরও দেওয়া হবে গ্রন্থটির কপি।
মরো মোটা টাকা দক্ষিণা নিলেন, হম্বিতম্বি করলেন প্রচুর, কিন্তু ইয়োরোপের কোনও ছাপাখানা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে রাজি হল না। শেষ পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করে ওলন্দাজ প্রকাশনা সংস্থা মৌতোঁর সঙ্গে চুক্তি হল ১১৬০ কপি বই প্রকাশের—যথা সময়ে তার এক তৃতীয়াংশ পৌঁছাল ব্রাসেলসে এবং বিলি করা হল মূলত ভ্যাটিকান সিটির প্যাভিলিয়নে। মেলা শেষ হওয়ার পরে দেখা গেল চত্বরে পড়ে রয়েছে শতাধিক কপি ডক্টর জিভাগোর নীল মলাট—যাঁরা বইটি পেয়েছেন তাঁরা সঙ্গে সঙ্গেই মলাটটি ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন আর বইএর পাতাগুলি খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করে মালপত্র আর জামাকাপড়ের মধ্যে পাচার করেছেন।
২৩ অক্টোবর ১৯৫৮, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন লেখক—“For his important achievement both in contemporary lyrical poetry and the field of the great Russian epic tradition.” পাস্তেরনাক সোভিয়েত রাশিয়ার প্রথম সাহিত্যে নোবেল—এর আগে যদিও ইভান বুনিন (১৮৭০-১৯৫৩) নোবেল পেয়েছেন ১৯৩৩ সালে, তিনি বাস করতেন ফ্রানসে; দেশ ছেড়েছিলেন নভেম্বর বিপ্লবের পরে, আর কোনওদিন ফিরে আসেননি। ১৯৪৬ সালে প্রথম নোবেল পুরস্কারের সম্ভাব্য তালিকায় তাঁর নাম ওঠে—তাঁর কবিতার বিষয়, “The most secret movements of the spirit.” এবং তাঁর গদ্যের তুলনা করা হয় মার্সেল প্রুস্তের সঙ্গে। তার পর থেকে প্রতি বছরই নোবেল কমিটি বিবেচনা করেছেন তাঁর নাম। ১৯৫৪ সালে তিনি তালিকার শীর্ষে ছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুরস্কারটি পান আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। ১৯৫৭ সালেও তাই, কিন্তু সেবার শিকে ছিঁড়ে আলব্যের কামুর ভাগ্যে। ডক্টর জিভাগো উপন্যাসটি প্রকাশের পরে আরও জোরদার হয় তাঁর দাবী। নোবেল কমিটির সদস্য হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনাতো পোজ্জিওলি (১৯০৭-১৯৬৩) ইতালিয় অনুবাদে উপন্যাসটি পড়ে মন্তব্য করেন, “It is modeled on ‘War and Peace’, and unquestionably one of the greatest work written in the Soviet Union where it cannot appear for that reason.” কমিটির আর এক সদস্য কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্নেস্ট সিমনস (১৯০৩-১৯৭২) জানান, “Feeling and thought are wonderfully blended in his verse that reveals a passionately intense but always personal vision of life.” তিনি পাস্তেরনাককে বর্ণনা করেন ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের টি.এস. এলিঅট’ হিসেবে।
অক্টোবর ২২, ১৯৫৮: মস্কো শহরে অবস্থিত ন্যু ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রের তরুণ সাংবাদিক ম্যাকস ফ্রাংকেল (১৯৩০-) খবর পেলেন পাস্তেরনাকের নোবেল পুরস্কার জয় প্রায় নিশ্চিত এবং সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনে চড়ে গেলেন পেরেদেলকিনো গ্রামে লেখকের দাচায় তাঁকে সংবাদটি দিতে। সেখানে কবির সঙ্গে তখন এক ডজন গুণগ্রাহী—খবর পেয়েই তাঁরা আনন্দে আত্মহারা, কিন্তু কবি নিজে চিন্তিত এর পরে কী ঘটবে—“Oh, of course, I am extremely happy, but you must understand that I will move immediately into this new lonely role as though it has always been that way.” তাঁর এতদিনের আশা সফল হয়েছে, কিন্তু তাঁর বাকি জীবন হয়ে উঠবে নরক।
|| ৭ ||
“I won the Nobel prize for literature. What was your crime?”—১৯৫৮ সালে প্রকাশিত বল মলডিন (১৯২১-২০০৩)-এর কার্টুনে গুলাগে কাঠ চেরাই-এর কর্মে রত দুই বন্দির কথোপকথন
পরের দিন অক্টোবর ২৩, ১৯৫৮— বিকেলে পাস্তেরনাক ওভারকোট আর টুপি সমেত হাঁটছেন অরণ্যের পথে, এমন সময় আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টি নামল এবং মস্কো থেকে আসা একদল সাংবাদিক তাঁকে খুঁজে পেয়ে শুভ সংবাদটি দিলেন। তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন, তিনি খুশি হয়েছেন, কিন্তু এখন তিনি একা থাকতে চান, স্টকহোম থেকে সরকারিভাবে খবর পেলে তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন। হাঁটা থামালেন না তিনি। সন্ধেবেলা স্ত্রী জিনাইদা মস্কো থেকে ফিরলেন, সেখানে অনেকেই বিদেশের রেডিওতে শুনেছেন একই সংবাদ—তিনি ভীত, বিপর্যস্ত, বিহ্বল—সমূহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। সোভিয়েত সরকারের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় তীব্রতা ছিল না, বরং কবির প্রতি অনুগ্রহই ছিল বেশি। সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী নিকোলাই মিখাইলভের বক্তব্যে রাগের থেকে বিস্ময় ছিল বেশি—‘হ্যাঁ উনি একজন বড় কবি, কিন্তু ওনার শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো লিখেছেন কয়েক দশক আগে। এতদিন পরে এই পুরস্কার কেন?’ সুইডেনের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর তিনি জানালেন—লেখকের ইউনিয়ন সিদ্ধান্ত নেবে পাস্তেরনাককে পুরস্কার গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কি না। তাই পরের দিনই সেন্ট্রাল কমিটি থেকে নির্দেশ এল তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে পুরস্কার। অনেক আলোচনার পরে লেখক টেলিগ্রাম পাঠালেন নোবেল কমিটিকে, কেবল মাত্র তাঁর আনন্দের কথা জানিয়ে—“Immensely grateful, touched, proud, astonished, abashed. Pasternak.”
সেদিন থেকে কবির ওপরে আক্রমণের সূচনা: মস্কো থেকে লিটেরারি ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের বাধ্য করা হল পাস্তেরনাকের সমালোচনা ও নিন্দা সহ একটি চিঠি স্বাক্ষর করতে। তারপর তাদের পাঠানো হল পথে, এক “স্বতঃস্ফুর্ত” বিক্ষোভ মিছিলে কবিকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবার দাবী জানিয়ে। “লিতারেতুরনাইয়া গেজেতা” সাহিত্যপত্রে (প্রচার ৯ লক্ষ) ছাপা হল ১৯৫৬ সালে নভিমিরের প্রত্যাখ্যানপত্র—তার সঙ্গে একটি দীর্ঘ সম্পাদকীয়—তাতে লেখা হল কবি “an internal immigrant”, “faint-hearted”, “base in his small-mindedness”, “malicions literary snob”. ইত্যাদি ইত্যাদি; কয়েক ঘন্টায় বিক্রি হয়ে গেল সব কপি।
প্রাভদা সংবাদপত্রে তাঁকে আক্রমণের ভার দেওয়া হল ডেভিড জাসলাভস্কি (১৮৮০-১৯৬৫)-কে—তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম—“সাহিত্যের আগাছাকে কেন্দ্র করে প্রতিবিপ্লবী তুলকালাম”। আর শেষ হল এইভাবে, “By all his activity, Pasternak confirms that in our socialist country, gripped by enthusiasm for the building of the radiant communist society, he is a weed”. রবিবার বিকেলে মস্কো রেডিওতে পাঠ করা হল প্রবন্ধটি। পরের দিন লেখক ইউনিয়নের বিশেষ সভা—পাস্তেরনাক নিজে গেলেন না, তাঁর বক্তব্য পাঠালেন চিঠিতে লিখে। ২৯ জন লেখক ভাষণ দিলেন তাঁকে কঠোর নিন্দা করে। সর্বসম্মতি ক্রমে তাঁকে বহিষ্কার করা হল লেখক ইউনিয়ন থেকে। এর পরের দিন মঙ্গলবার লেখক টেলিগ্রাম পাঠালেন নোবেল কমিটিকে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে।
ভারতবর্ষ সোভিয়েত রাশিয়ার বন্ধু রাষ্ট্র, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জবাহরলাল নেহেরু প্রতিবাদ জানালেন এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে—“A noted writer, even if he expresses an opinion opposed to the dominating opinion, according to us should be respected and it should be given a free play.” কবির পুত্র ইয়েভগেনি পাস্তেরনাক তাঁর ১৯৯০ সালে প্রকাশিত স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন তাঁর পিতাকে যে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি তার প্রধান কৃতিত্ব নেহেরুর, কারণ তিনি এই সময় ক্রশচেভকে ফোন করে বলেছিলেন—পাস্তেরনাককে নির্বাসন দেওয়া হলে তিনি তাঁর নিরাপত্তার জন্যে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করবেন এবং তিনি নিজের তার নেতৃত্ব দেবেন। তাঁকে দেশ ছাড়তে হল না, অন্য অনেক লেখকের মতন জেলেও যেতে হল না কিন্তু বাকি জীবন কাটলো বিষাদে; তাঁর লেখার রয়ালটি লক্ষ লক্ষ ডলার, কিন্তু তিনি এক পয়সাও পেলেন না। দেড় বছরের মধ্যে ঘনিয়ে আসবে তাঁর মৃত্যু।
তিনি ফিরে গেলেন তাঁর প্রথম প্রেম, কবিতায়—মৃত্যু, বিষাদ, অমরত্ব আর ঈশ্বরের সঙ্গে নিয়মিত কথোপকথন; ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হবে তাঁর অন্তিম কাব্যগ্রন্থে, “যখন আবহাওয়া পরিষ্কার হবে”। সেই গ্রীষ্মে তিনি স্থির করলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর রাশিয়াকে পটভূমি করে নাটকের ট্রিলজি রচনা করবেন। প্যারিস রিভিউতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে তিনি ওলগা কার্লাইল (১৯৩০-)-কে সবিস্তারে জানালেন তাঁর পরিকল্পনার কথা, সেই সঙ্গে নাটকের প্লট ও চরিত্রদের বিবরণ। “অন্ধ সুন্দরী” তিনি লিখতে শুরু করলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেন নি প্রথম পর্বটিও। মৃত্যুর আগে কেবল তিন দশক আগে রুশ ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলির পরিমার্জনা করলেন আবার।
মে ৩০, ১৯৬০ ফুসফুসের ক্যানসারে তাঁর মৃত্যু। সন্ধেবেলা তিনি ছেলেমেয়েদের ডাকলেন তাঁর শয্যার পাশে—“কিছু শুনতে পাচ্ছি না; আমার চোখের সামনে কুয়াশা, হয়ত সরে যাবে একটু পরে। কাল সকালে জানলাগুলো খুলতে ভুলো না।”—তাঁর শেষ কথা। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে এলেন অসংখ্য গুণগ্রাহী, দেশ-বিদেশের লেখক ও সাংবাদিক আর প্রায় এক হাজার পুলিস আর কেজিবি-র গোয়েন্দা। কিন্তু তার মধ্যেই এক সাহসী তরুণ উদাত্ত কন্ঠে আবৃত্তি করলেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা “হ্যামলেট”—
“ঘটবে যা কিছু সব পূর্বনির্ধারিত
সমাপ্তিও আগে থেকে জানা;
একা আমি; চারপাশে মিথ্যা বিস্তারিত
জীবন সে নয় মাঠে পদচারণার”।
আমেরিকার ভার্জিনিয়া রাজ্যের ল্যাংগলি নামে এক মফস্বল শহরে সি.আই.এ.-র প্রধান অফিস। বিশেষ অনুমতি ছাড়া তার সীমানার মধ্যে প্রবশ নিষেধ। ভিতরে রয়েছে একটি বিশেষ মিউজিয়াম—সংস্থার ওয়েবসাইটে গেলে জানা যাবে যে এই মিউজিয়ামের উদ্দেশ্যে সি.আই.এ.-র সদস্যদের “inform, instruct and inspire” করা যাতে তাঁরা চতুর গোয়েন্দা এবং গুপ্তচর হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ হন এবং “craft of intelligence”-এ দক্ষ হয়ে ওঠেন। সেখানে রয়েছে নানান রকমের মারণাস্ত্র, ছদ্মবেশ, “এনিগ্মা” নামক বিখ্যাত কমপিউটার, একটি স্বনামধন্য সাবমেরিন, এমনকী ওসামার নিজস্ব একে৪৭ মেসিনগান। কয়েকবছর আগে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খুবই নিরীহদর্শন একটি পেপারব্যাক বই—দৈর্ঘ্যে সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি, প্রস্থে সাড়ে তিন ইঞ্চি আর উচ্চতা এক ইঞ্চি—খুব সহজেই ভরে ফেলা যাবে কোটের পকেটে। বইটি রুশ ভাষায় প্রকাশিত বরিস পাস্তেরনাক রচিত “ডক্টর জিভাগো” গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ—৬০০ পাতার গ্রন্থ, যে রকম কাগজে ইয়োরোপে বাইবেল-এর প্রকাশনা হয়, সেই একই রকম কাগজে ছাপা যাতে পাচার করার সুবিধে হয় এবং পুলিসের সন্দেহ না জাগে। বইটি কাচের বাক্সে রক্ষিত তাই উলটেপালটে দেখার সুযোগ নেই; বাক্সের গায়ে ইংরেজিতে ক্যাপশান—“Copy of the original Russian-language edition of Doctor Zhivago, covertly published by CIA. The front cover and the binding identifies the book in Russian; the back of the book states that it was printed in France.”
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন! তবে সি.আই.এ.-র অন্য অনেক কুকর্মের মতন এতেও ভুলভ্রান্তি রয়েছে—প্রদর্শিত গ্রন্থটি “ডক্টর জিভাগো”-র প্রথম রুশ সংস্করণ নয়, তার প্রকাশকও আলাদা এবং সেই গ্রন্থটি পেপারব্যাক নয়, হার্ডকভার!
তথ্যসূত্র:
The Zhivago Affair: The Kremlin, the CIA, and the Battle Over a Forbidden Book—by Peter Finn and Petra Couvee; pantheon Books; 2014
Inside the Zhivago storm: The Editorial Adventures of Pasternak’s Masterpiece—by Paolo Mancosu; Fettrinelli Milan; 2014
The Laundered Novel: Doctor Zhivago between the KGB and the CIA—by Ivan Tolstoy; 2009
The CIA’s Zhivago-- by Michael Scammel; The New York Review of books; July 2014
A Captive of Time: My Years with Pasternak--by Olga Ivinskaya; Translated by Max Hayward; 1979
The Pasternak Affair--by Sergio D’Angelo; 2007
Boris Pasternak: the Tragic Years (1930-1960)--by Evgeny Pasternak; Translated by Michael Duncan; 1990.
Meetings with Pasternak: A Memoir--by Alexander Gladkof; Translated by Max Hayward; 1978.
(পরবাস-৮১, ১২ জানুয়ারি, ২০২১)