এটা আপনার পকেটের ক্ষমতার প্রতি বাঁকা মন্তব্য কিনা ভাবতে ভাবতেই মাছ কিনে ফেলতে হবে কারণ রান্নার দিদি সাড় আটটার মধ্যে চলে যাবেন। বিমর্ষ হয়ে সুবলের দোকানের চা নিয়ে হয়ত বেজার মুখে বলেছেন সুবল, আমারে তিতা চা খাওাইস না, সে ব্যাটা চিনির বয়াম আর চামচ হাতে হাজির হবে। আরে হতভাগা, নিজের হাতে করা চা-টা ডিফেন্ড করবি না? আসলে বাঙাল না হলে আত্মসম্মান নিয়ে লোকে সেন্সিটিভ হয় না। সে যাক গে, এই আঁতে ঘা লেগেই সেবার চির, চিরঞ্জিতের সঙ্গে বাইক নিয়ে রওয়ানা হলাম স্পিতি-র উদ্দেশে।
আমাদের বাইক নিয়ে বেড়ানোর দল বেশ বড়। সে দলে আবার প্রচুর পাহাড়িয়া। সর্বক্ষণ তারা মতলব আঁটছে ঝাঁ করে কোথায় একটা পাহাড় চড়ে ফেলা যায় বা নিদেন পক্ষে একটা উঁচু গিরিবর্ত্ম দাবড়ে আসা যায় এইসব। তো নানা কথার মধ্যে চির জানালো সে বাইক নিয়ে কল্পা-কিন্নর পেরিয়ে একটু ঘুরে আসতে চায়। সঙ্গে কেউ গেলে ভালো নয় একাই যাবে। অন্য সবার তখন অন্য বেড়ানো, খালি আমি হাত তুললাম স্পিতি-র জন্যে। সব কটা ভুরু ধনুকের মতো হয়ে গেল। আসলে এই দলে আমি বয়সে সবথেকে বড় হলেও দক্ষতায় আমি সব থেকে খাটো। আমায় তাই সবাই খুব আগলে রাখে কি পাহাড়ে কি বাইকে। আর চির দ্রুতগতির কাছে বাগদত্ত। ২০০৫ সালে আমরা মিলাম হিমবাহ অঞ্চলে ট্রেক করতে গেছিলাম। ট্রেন ছাড়ো ছাড়ো তবু চির আসছে না। শেষমেশ এলোই না। যথারীতি দেরি করে বেরিয়ে বড়বাজারের জ্যামে ফেঁসে এই বিপত্তি। কিন্তু আমরা যেদিন মুন্সিয়ারি পৌঁছলাম খানিক পরে চির বাইকে সেখানে হাজির। এহেন চির-র সঙ্গে আমি জুড়ে গেলে কি কি দুর্ঘট হবে সে ভেবেই দল চিন্তিত। আমাদের রোজকার বাঙাল-প্রধান ঠেক নির্মম, নির্মোহ স্পষ্টবাদিতার জন্যে মশহুর। তারা বললে, পোলারে কইস বাঁইচ্যা থাকলে তুই বাবা। তবে মইরলে বডি আমাগো। এইসব কুবাক্য শুনে আমারও জেদ চেপে গেল। বেরিয়ে পড়লাম চির-র সঙ্গে।
বাইক নিয়ে বেরোলে কিছু প্রস্তুতি দরকার। যেমন একটা স্যাডল ব্যাগ দরকার। কাউবয়রা যেমন ঘোড়ায় চড়ার সময় নিত। এ ছাড়া গ্লাভস দুই জোড়া, ভালো হেলমেট, চোখ ঢাকা চশমা, ভারি আর হালকা উইন্ডচিটার, শক্তপোক্ত জুতো, বর্ষাতি এ তো লাগবেই। নিতে হবে বাড়তি টিউব, স্পার্ক প্লাগ, ক্লাচের তার, ব্রেকের তার, ক্লাচ আর ব্রেকের বাড়তি হাতল। মেরামতির যন্ত্রপাতি অবিশ্যি চিরই নেবে। আগে আমরা হাঁটু আর হাতের বর্ম-ও নিতাম। কিন্তু একটু জবড়জং হয়ে যায় বলে আমরা ওগুলো ত্যাগ করেছি। আর ট্রেনে করে বাইক নিয়ে যাব কালকা অবধি। তার আগে তাকে সার্ভিস করে তরতাজা করে নিতে হবে। তারপর সক্কাল সক্কাল যেতে হবে হাওড়া স্টেশনের মালখানায়। সেখানে নিঃশেষে বের করে নিতে হবে তার তেল। তারপর তার টিকিট করে প্যাকারদের দিয়ে তাকে বাঁধাছাঁদা করে সকালের কাজ শেষ। বিকেলে আবার একটু আগে আগে এসে দেখতে হবে যারা দায়িত্বে আছে তারা গুদাম থেকে ওই আপাদমস্তক মোড়া বাইকগুলোকে সন্তানস্নেহে ট্রেনে তুলে দিচ্ছে কিনা। তারপর যাত্রা শুরু।
কালকা মেল কালকা এসে পৌঁছয় রাত থাকতে। সবাই স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে গেল আমরা সে জনশূন্য অন্ধকার স্টেশনে অপেক্ষা করছি কখন আমাদের বাইক নামানো হয়। হল। তারপরে কটা কঠিন কাজ। মালবাবুর কাছে পৌঁছে রসিদ না দেখানো অবধি বাইকের মোড়ক খোলা যাবে না। কাঁধে স্যাডল ব্যাগ নিয়ে বাইকের হাতলের যে ইঞ্চি পরিমাণ বেরিয়ে আছে তাই ধরে তাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে হবে প্রায় এক কিলোমিটার। ভাগ্যিস প্ল্যাটফর্ম শুনশান। রসিদ পরীক্ষা হয়ে গেল। কিন্তু মালবাবু জানালেন সেই ঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হওয়ার দরজা খুলবেন যিনি তিনি এখনও পৌঁছননি। আমাদের সুতরাং বসতে হবে। আমরা বিনীত ভাবে বললাম দরজা আমরাই খুলে নিতে পারি। এই অর্বাচীন প্রস্তাবে তিনি সম্পূর্ণ হতবাক হয়ে গেলেন। তারপর বুঝিয়ে বললেন যে যে-কাজ করার জন্যে মাইনে পায় তাকে সে-কাজ করতে না দিলে তো এই ঐতিহ্যময় ভারতীয় গণতন্ত্র একেবারে ধসে পড়বে। অতএব আমরা আরও একটু বসলাম। তিনি এলেন, দরজা খোলা হল, আমরা বেরিয়ে যতক্ষণে বাইকের অবগুন্ঠন মোচন করলাম ততক্ষণে আলো ফুটছে। কাছের পেট্রল পাম্প থেকে খালি ঠান্ডা পানীয়র বোতল করে তেল নিয়ে বাইকে ভরা হল। বাইক সচল হল। এবার পাম্পে গিয়ে ট্যাঙ্ক ভর্তি করে বেরিয়ে পড়ার পালা।
চণ্ডীগড় থেকে সিমলা যাওয়ার রাস্তা যেখানে মিশেছে সেই মোড় পেরিয়ে বুঝলাম মাঝ-রাত্তির থেকে উঠে ঝাঁপাঝাঁপি করার ফলে বেশ খিদে পেয়ে গেছে। কিন্তু হাইওয়ের ধারের ধাবাগুলোর ঘড়ির সঙ্গে আমাদের শরীরের ঘড়ি মিলছে না। তাদের এখনও চুল্লিতে আঁচ পড়েনি। শেষমেশ একজন বললে একটু বসলে সে আলু-পরোটা বানিয়ে দেবে। এই রাস্তায় আমরা যত আলু-পরোটা খেয়েছি তা জোড়া দিলে আমরা যে পথ পার হয়েছি তার থেকেও লম্বা হবে বলে আমার বিশ্বাস। এই অপেক্ষাগুলো আমরা দেখেছি অন্তত ঘন্টাখানেক হয়। কিন্তু আমাদেরও তাড়া নেই। খেতে খেতে টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। আমরা ধরাচূড়া পরে নিলাম। রামনগর এই রাস্তায় একটা বেশ জনবহুল মোড়। আমরা একটা নিরিবিলি দোকানে যখন দুপুরের খাওয়া সারছি ঝেঁপে বর্ষা এল।
আমাদের আজ পথ খুব দূর নয়। চেল-এ রাত কাটানো ঠিক করেছি আমরা। বুদ্ধিমান লোকেরা বৃষ্টির তোড় কমার জন্যে অপেক্ষা করত। কিন্তু আমরা তো বোকা বলেই এই পথে বেরিয়েছি। দুজনের-ই মত এর মধ্যে বাইক চালিয়ে দেখে নেওয়া উচিত আমাদের বৃষ্টিনিরোধক ব্যবস্থা কত মজবুত। তাই একটু স্যাঁতসেঁতে হয়ে চেল পৌঁছলাম। বিশেষত স্যাডল ব্যাগের ঢাকনার মধ্যে দিয়ে একটু জল চোঁয়াচ্ছে। নিশ্চিন্ত হওয়া গেল আমাদের সফরে বৃষ্টি কোনো বাধা হবে না।
পরের মঞ্জিল নারকান্ডা। রাস্তা গেছে, কুফরি-র আগে পর্যন্ত, নির্জন পাহাড়ি ছোট ছোট জনবসতির আর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। মাঝে মাঝে ব্লু ম্যাগপাই ওড়াউড়ি করছে। কুফরির কাছে রাস্তায় ইঞ্চি দশেক জায়গা জুড়ে একটু বরফ আর কাদা। তাকে ঘিরে এক উল্লাসময় ভিড়। আমরা না থেমে দ্রুত নারকান্ডা চললাম। নারকান্ডার বনবিভাগের ক্যাম্পটি ভারি মনোরম। পাহাড়ের ওপর আর নিচের ঢালে ছড়ানো-ছিটানো তাঁবু আর কটেজ। মাঝখান দিয়ে রাস্তা চলে গেছে কল্পা-র দিকে। বনবিভাগের কর্মীরাও আলাপি এবং সহৃদয়। খাওয়ার ঘর রাস্তার ঠিক ওপরে। সেখানে বসে এটা-ওটা খেয়ে আর কাঁচের বড় জানালা দিয়ে দূর পাহাড়ে কেমন সন্ধে নামছে দেখতে দেখতে আমাদের দিন ঢলে পড়ল।
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে বাইক চালানোয় উড়ে যাওয়ার আনন্দ। উড়তে উড়তে আমরা চলে এলাম রেকং পিও। সদর শহর। নামটা এত মিষ্টি আমরা এখানে রাত কাটাবো ভেবেছিলাম কিন্তু দেখা গেল বেশ ঘিঞ্জি। আমাদের বাতিক নির্জনতা। তাই আমরা চলে গেলাম কল্পা-র শেষ প্রান্তে। সেখানে তরুণ হোটেল মালিকও বাইকবাজ। সে সামনের রাস্তার হাল-হকিকত বাতলে দিল। বলে দিল কাজা-র আগে শেষ কোথায় পেট্রল পাম্প আছে। সেখান থেকে আমরা অবশ্যই যেন ট্যাঙ্ক ভর্তি করে নিই।
ছিটকুলের পথ খারাপ ঠিক নয়, কাঁচা। দুয়েকটা ঝরনা পেরোতে হয় বটে তবে জল গভীর নয়। ছিটকুল পৌঁছে আমরা বুঝলাম সেদিনই সাংলা ফিরে যাব ভেবে আমাদের জিনিসপত্র রেখে আসাটা বোকামি হয়েছে। বরফ পড়ে থাকা পাহাড় চূড়ায় ঘেরা একটা বাটির মতো এই গ্রামে—এটা নাকি তিব্বত সীমান্তের আগে শেষ ভারতীয় গ্রাম—আমাদের অন্তত একরাত কাটানো উচিত ছিল। যতক্ষণ পারি আমরা নদীটার স্রোত ধরে ঘুরে বেড়ালাম। ছিটকুল সেদিন পর্যটকহীন। ঝাঁপ টেনে দেওয়া গ্রাম খুঁজে খুঁজে এক খাওয়ার দোকান পেয়ে সেখানে চাউ চচ্চড়ি দিয়ে পেট ভরিয়ে আমরা সাঁঝের ঝোঁকে সাংলা ফিরে এলাম।
পথে যেসব অচিন্ত্যপূর্ব ঝামেলা অপেক্ষা করে থাকে তার সাক্ষাৎ মিলল আমাদের পরের দিন। যেখানে চেকপোস্টটা তার দেড় কিলোমিটার মতো আগে একটা মালবোঝাই ট্রাক রাস্তা জুড়ে কুরুকুল চাপা দিয়ে পড়ে আছে। তার ট্যাঙ্কটা ফেটে গিয়ে পিচ্ছিল হয়ে আছে রাস্তা। বেশ কিছু পুলিশ ভিড় সামলাচ্ছে। বোধকরি বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের জওয়ানরা ট্রাকটি সরিয়ে নড়িয়ে রাস্তা করার চেষ্টায় ব্যাপৃত আছেন। সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি এবং লরির চালকেরা দর্শনের বিভিন্ন প্রশ্ন সমাধান করছেন। আমরা অবস্থা যাচাই করার জন্যে সেই উলটে পড়া ঘটোৎকচের সামনে যেতেই পুলিশের লোকেরা হাঁ হাঁ করে উঠলেন। পড়ে থাকা পেট্রল থেকে নাকি যে কোন মুহূর্তে আগুন ধরে যেতে পারে। আমরা জানি ভারতীয় পুলিশ ব্যূহরক্ষায় এবং সন্ত্রাসবাদি খুঁজে পেতে খুবই দক্ষ। আমরা তাই পিছিয়ে এসে বি-আর-ও-র যে অফিসার অনেক দূরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন তাঁকে নানা প্রশ্নবাণে উত্যক্ত করলাম। তিনি আমাদের হাতে ধরা শিরস্ত্রাণের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বললেন ঘন্টাখানেক বাদে পাশ দিয়ে বাইক যাওয়ার মতো একটা জায়গা বেরোতে পারে। তবে খানিকটা আগে থেকে খানিকটা পরে পর্যন্ত বাইক হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে স্পার্ক প্লাগ থেকে আগুন না ধরে যায় আর যদি আমরা কথাটা পাঁচকান না করি। লাগল দেড় ঘন্টা। তারপর অফিসারের ইশারা পেয়ে যেই আমরা গুটি গুটি এগিয়েছি আবার আমাদের পথ জুড়ে দাঁড়ালো ভারতীয় পুলিশ। কিন্তু সহৃদয় অফিসারও পিছনে এসেছিলেন। তিনি বলায় অত্যন্ত বেজারভাবে পুলিশ আমাদের রাস্তা ছেড়ে দিল। ট্রাকটা পড়ে রাস্তার মাঝখানটা এমনিতেই বসে গেছে তদুপরি রাস্তা এখানেই উপরপানে উঠেছে। চির-র তুলনায় হালকা বাইক দুজনে টেনে হিঁচড়ে ওপরে তুললাম। কিন্তু আমার স্যাডল ব্যাগ সহ বুলেটের ওজন গুরুতর। আমরা ওজন কমাবার জন্যে সেই ব্যাগ খুলবার আয়োজন করছি অপেক্ষারত চালকদের জনা পাঁচেক লাফিয়ে এসে টেনে ঠেলে সেই জগদ্দল ওপরে তুলে দিলেন। তারপর এই একঘেয়ে অপেক্ষার মধ্যে আমরা যে ওঁদের কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে পেরেছি সেজন্যে আমাদের ধন্যবাদ দিয়ে আবার দর্শনচর্চায় ফিরে গেলেন। ভারতীয় জনতা সবসময়েই ভারতীয় পুলিশের থেকে আলাদা।
চেকপোস্টে নামমাত্র পরীক্ষা হল আমাদের পরিচয়পত্রের। এর পর রাস্তা খারাপ। ওপরের দিকে বঙ্কিম গতিতে যাচ্ছে যে রাস্তা তার ছালচামড়া একেবারে উঠে গেছে। গুঁড়ি গুঁড়ি পাথরে ছেয়ে আছে। খড়মড় খড়মড় করে বেশি জোরে গেলেও চাকা পিছলোতে পারে আবার খুব আস্তে গেলেও একই ভয়। পিছন থেকে এখুনি কোনো গাড়ি আসার সম্ভাবনা নেই কিন্তু উল্টোদিক থেকে দু-চারটে আসছে। তাদের চাকা থেকে ছিটকে আসা নুড়ি কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল কয়েকটা। অবশেষে দুটো নদীর সঙ্গমস্থলে এসে সেই দুঃস্বপ্নের পথ শেষ হল। ব্রিজ পেরিয়ে বাঁ-দিকে উঠে গেলেই দেখা যাচ্ছে সেই আকাশ পর্যন্ত অসংখ্য লম্বা লম্বা বাঁকে উঠে গেছে রাস্তা। এখানে পাহাড় একদম ন্যড়া বলে যতদূর চোখ যায় দেখা যাচ্ছে। আর কী আনন্দ ভুবনে, সেই রাস্তা উপলব্যথিত নয়, ধুলোময়। এবার রাতের বিশ্রাম নাকো এসে। সেখান থেকে টাবো অল্প একটুখানি। তাও আমরা নাকো, টাবো দু জায়গায়তেই থাকব ঠিক করেছি।
ভাগ্যিস করেছিলাম। সকাল বেলায় বেরিয়ে একটা বাঁকে দাঁড়িয়েছিলাম দুজন, বহু নিচ অবধি দেখা যাচ্ছে। গভীর গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে বয়ে আসছে নদী। রওয়ানা হতেই মনে হল হাতল একটু কেঁপে গেল। তাকিয়ে দেখলাম পিছনের চাকা বসে গেছে। চাকা খোলার পর দেখা গেল চির-ও একটা ভুল করেছে। চাকার রিম থেকে টায়ার আলগা করার জন্যে একটা মাথা চ্যাপ্টা লিভার লাগে। সেটা ভুলেছে। নানা সাইজের স্ক্রুড্রাইভার ইত্যাদি দিয়ে আধ ঘন্টাটাক গলদঘর্ম প্রচেষ্টায় বোঝা গেল হবার নয়। অতএব আমি মাথায় স্যাডল ব্যাগ বালিশ করে রাস্তার পাশের ছায়াটায় একটা বই খুলে বসলাম। চির চলল তিন চার কিলোমিটার পিছনে এক মেকানিকের কাছে। তিনি অতঃপর একসময়ে চিরর বাইকে চড়ে এলেন, চাকা তুলে আবার তাঁর গ্যারেজে ফেরত নিয়ে গেল চির। সেখানে টিউবের ছ্যাঁদা মেরামত হল। নতুন টিউব চাকায় ভরে হাওয়া দেওয়া হল। এবার তিনি ফের চির-বাহিত হয়ে এসে সেই চাকা লাগিয়ে, মেরামত করা টিউব আমার হাতে দিলেন। তারপর চির তাঁকে আবার পৌঁছে যখন ফেরত এল আমাদের জীবন থেকে চলে গেছে ঘন্টা চারেক। টাবো গুম্ফার পাশেই আশ্রয় নিলাম আমরা।
ডাঙ্খার-এ আমরা ছিলাম ডাঙ্খার গুম্ফার অতিথিশালায়। এক অল্পবয়েসি নবিশ লামা আমাদের পথ দেখিয়ে ডাঙ্খার হ্রদ-এ নিয়ে গেছিলেন। সেই আলাপের সূত্রে বিকেলে লামাদের ফুটবল খেলায় আমরা ডাক পেলাম। কিন্তু চির এত বাজে খেলে কে জানত, অনেক গোলে হারল আমাদের দল। তারপর ঘন্টা বেজে উঠতেই কলরবলর করা বাচ্চা লামারা প্রশান্তহাস্য প্রবীণ লামাদের পিছু পিছু উপাসনাগৃহের দিকে সারি বেঁধে চলে গেল, আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।
পারলাম কিনা জিজ্ঞেস করছেন? আরে তা না হলে এই গল্প আপনাদের বললাম কী করে?
(পরবাস-৮৩, ১০ জুলাই, ২০২১)