Subscribe to Magazines






পরবাসে বাসব রায়ের
লেখা


ISSN 1563-8685




তিনটি কবিতা

নষ্ট চাঁদের গল্প

আমার পরিপাটি ভদ্রতার মাঝেও বস্ত্রহীন কামনারা ওত পেতে আছে
শরীর আমার যমুনার ভাঙনে উজানভাটির সন্ধিক্ষণে
নিয়ন্ত্রণহীন শ্বাসপ্রশ্বাসে বিগত যৌবনের উচ্ছৃঙ্খলতা স্পষ্ট
চোখের আলোর বৈরিতা নিয়েই পথচলা৷

আমার ভালোবাসা আসে চুপিচাপি ধীর পায়ে
ভিড়ের শেষপ্রান্তে সজল দৃষ্টির আড়ালে নির্বোধ প্রার্থনা
অন্তিমশয়ানে এসেও নষ্টচাঁদের গল্পে শৃঙ্গার ধ্বনি ফিরে পায় তার তারুণ্য
মিলনের গানে গানে তখন ক্লান্তির আমেজ
উদোম বসন্ত হঠাৎ কালবৈশাখীর কবলে৷


অন্ধ আমি

একদিনে আমি অন্ধ হইনি
হাজারবছর ধরে একটু একটু করে আলো সরিয়ে দিয়েছি
পৃথিবীর কোনো চিকিৎসক আমার চোখের আলো ফিরায়ে দিতে পারেনি
সেজন্য আমি গর্ব বোধ করি
লালন করি অমাবস্যার থেকেও ঘোর অন্ধকার আমার দৃষ্টিকে৷

আমার উত্তর প্রজন্মকে আলোর মুখোমুখি করিনি কখনও
ওরা চিরঅন্ধ হয়ে আমার সত্তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে
আলোতে আমার ভয়
আলোতে আমার প্রজন্মের ভয়
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভয় --

আমি বসন্ত দেখিনি
দেখিনি সবুজের সারি
দেখিনি বলাকার মুগ্ধ উড়ে চলা
আকাশ দেখিনি
সবচেয়ে বড় কথা আমি মানুষ দেখিনি
দেখিনি তোমাদের পৃথিবী৷

আমি অন্ধ হয়েই স্বর্গে যেতে চাই
স্বর্গের উর্বশীরা অপেক্ষায় আমার৷


খরার শিকড় গাঁথা

বাউল মনটাকে নিয়ে বিপাকে পড়ি
আকাশ জানে মুগ্ধতার রেশ কতখানি
বাতাসের আঁচলে শেষ চৈত্রের সঙ্গীত
উন্মনা মনে সুদূরের পিপাসা৷

বিব্রত আমিটাকে নিয়ে ঘুরছি অনবরত
শরীর আটকে আছে বিড়ম্বনার জাঁতাকলে
অদৃশ্য একটি শক্ত সুতো ধরেছে জন্মের মতো৷

শিমুলের ঝরে যাওয়া দেখেছি
সেখানে সবুজের কচিপাতা নতুন মৌসুমের খবর জানায়
মৌলের ঠোঁটে ভ্রমরের উল্লাস
মরা নদীর পাড়ঘেঁষে স্বর্গের সিঁড়ি হয়ে শ্মশানটা পড়ে আছে একাই৷

ছাইচাপা দহনে অভ্যস্ত আমি
পথে নেমেও পথ হারানোর সাধ জাগে বারবারো--
ফিরে আসি কোলাহলে
প্রতিমুহূর্তের চেনা এক মাটির ঠিকানায়
যেখানে আমার খরার শিকড় গাঁথা৷





(পরবাস-৮৩, ১০ জুলাই, ২০২১)