ISSN 1563-8685
অহরহ শূন্যতার গান
|| ১ ||
আমি এখন মেনে নিয়েছি যে জোয়ালের ভারে মুখ থুবড়ে না পড়ে, শেষ দাগ অবধি যেতে পারাটুকুই আমার বিজয়। মেনে নিয়েছি, এটুকুই শেষ কথা।
কতদিন হল?
দাঁড়াও, হিসেব করে দেখি। কবে থেকে আর যেন তোমায় চিঠি লিখি না? সে কি দোমড়ানো-মোচড়ানো চিঠিগুলো ময়লা ফেলার ঠেলাগাড়িটায় দেখার পর?
নাঃ! তাই বা হয় কী করে!
আসলে তো চিঠি পাঠানোর ঠিকানাটাই কখনো ঠিকঠাক জেনে ওঠা হয়নি...
|| ২ ||
জীবন রুখো চুলের মতো উড়ে উড়ে বারবার চোখে মুখে এসে পড়ছিল৷ তুমি তাই সেগুলোকে তিনগুছিতে ধরে টেনে একটা বিনুনি বাঁধলে, আর খাঁজে খাঁজে গুঁজে দিলে ঝুটোমোতির কাঁটা। চাপা পড়ে গেল মিথ্যাচার, অসততা, সমুদ্রস্নানের নামে ঢেউয়ের মধ্যে হাত ছেড়ে দেওয়া৷
তুমি চেয়ে দেখলে, আসলে তো ছিলই না কখনো কিছু, অথচ সেই শূন্যস্থানে কখন টলটলে হ্রদখানি ভরে উঠেছে--
তুমি যে ডুব দিলে, সে ডুবে নিঃশ্বাস বয়ে গেল তেপান্তরের ঝড়ের মতো, আর জলের রঙ হল নীল, ধূসর, কালো।
তুমি উঠে এসেছ, এবার বেণী খুলে চুল শুকোতে হবে, হাওয়ায়, চরাচর জুড়ে আবার ছড়িয়ে যাবে সেইসব প্রতারণার পোড়া গন্ধ…
|| ৩ ||
এই যে, পাতা খসে যাচ্ছে
শীত আসছে বলে
এই যে দিন গুনে মাস, মাস গুনে বছর ফুরোচ্ছে
এই যে হাতের শিরায় যন্ত্রণা, আর পায়ে শিকলের ভার
অথচ দুঃখবিলাসীদের ভিড়ে তার শুধু হাসিই পায়।
তার কোনও দুঃখ নেই, অভাব নেই
তার
কোথাও কিছু কমে যায় না, কিছু ফুরোয় না
নিঃশ্বাসে যতই ভাঙচুর হোক, তার সেই পরিপূর্ণ নিটোল চাঁদের মত উজ্জ্বল অসীম শূন্যতা
তেমনই অক্ষয় থাকে।
তেমনই অর্থবহ, অর্থহীন, অনতিক্রম্য।
|| ৪ ||
জানো, আজকাল খুব ক্লান্ত লাগে।
আসলে, এখন তো
প্রতিদিন
মৃত্যুর আরেক পা কাছাকাছি হয়ে ওঠা...
তাতে অসুবিধা নেই। শুধু
বড্ড অনেককিছু
না-জানা, না-করা,
না-পাওয়া
রয়ে গেল। সেইটেই।
জানো তো, চাইলেও ইচ্ছেগুলো একটুও ফিকে হচ্ছে না।
আসলে,
কখনওই কি আমি মৃত্যু থেকে খুব দূরে ছিলাম? থেকেছি?
না-থাকার মধ্যেই তো চলে যাচ্ছিলাম দিব্যি, কিন্তু,
ওই যে তুমি বললে, থাকবে!
সব অভ্যাস এলোমেলো করে দিল।
না-চাওয়ায় আর ফিরতে পারছি না।
এরকম অসমাপ্ত গল্প নিয়ে
তুমিই বা কী করবে,
আর
মৃত্যুই বা কোন সাহসে সামনে এসে দাঁড়াবে এত শূন্যের!