ISSN 1563-8685




দুটি একাঙ্ক নাটক

বজ্রকীট

(একাঙ্ক নাটিকা)

পাত্রপাত্রী

অভীক
সুচেতা
ডঃ আয়াজ
কর্নেল স্যাম
রোশনি
ঝুম্পা


(মঞ্চের ওপর টেবিল চেয়ার ও ল্যাপটপ কম্পিউটার। অভীক পুরো মনোযোগ দিয়ে খেলায় মত্ত)

অভীক: পোকাগুলো পালাচ্ছে। কিন্তু পালাবে কোথায়। ওদের পেছনে লেগে রয়েছে বাজপাখির চোখ। এইবার তোদের এক এক করে পুড়িয়ে মারব।
(সুচেতা ও আয়াজ ঢোকে। দুজনে অভীকের কাণ্ডকারখানা দেখছে)

সুচেতা: ওই দেখুন আয়াজভাই। সারাদিন পাগলের মতো এই সৃষ্টিছাড়া খেলা নিয়ে বসে আছে। আমাদের যেন চেনেই না, খাওয়াদাওয়াও করতে চায়না। একেবারে অন্য মানুষ। সবসময় যেন একটা নেশার ঘোরে রয়েছে।

আয়াজ: তাই তো। ওর অফিসের লোকজন কি বলছে? আর তোমাদের সেই মিলিটারি ডাক্তার।

সুচেতা: পুরো ব্যাপারটাই কেমন যেন। আয়াজভাই আমি জানি ও ডিফেন্স ল্যাবে কাজ করে, ওর অফিস ঠিক আর পাঁচটা অফিসের মতো নয়। কিন্তু এখন রোজ নতুন নতুন সব লোক বাড়িতে আসছে, কেমন যেন একটা নজরদারির পরিবেশ। আর ওই ডাক্তারটি, কর্নেল স্যাম লোকটা মোটেই সুবিধার নয়। আয়াজভাই আপনি ওকে দেখতে পারেন না।

আয়াজ: বন্ধু হিসাবে দেখতেই পারি কিন্তু ও নিজে না চাইলে -

সুচেতা: আপনি দাঁড়ান আমি ওর সাথে কথা বলছি। (অভীকের কাছে গিয়ে) শুনছো? খেলাটা একটু বন্ধ করো না।

অভীক: এখন বিরক্ত কর না, পোকাগুলোকে বাগে পেয়েছি। এবারে গুষ্টিশুদ্ধ পুড়িয়ে মারবো।

সুচেতা: আমার কথাটা শোনো। আয়াজভাই এসেছেন।

অভীক: আঃ আমার সময় নেই। (হঠাৎ চমকে ওঠে) কে? কে এসেছে বললে?

সুচেতা: আয়াজভাই এসেছেন। তোমার অসুখটা নিয়ে একটু কথা বলি ওর সঙ্গে?

অভীক: না, না ওর বাড়িতেও পোকা আছে। ওকে কেন ডেকে আনলে তুমি! তাড়াও, এক্ষুনি তাড়াও।

সুচেতা: কি আবোলতাবোল বকছো। আয়াজভাই আমাদের বন্ধু।

অভীক: (আয়াজের দিকে ফেরে) এত সাহস যে এখানে ঢুকেছো। তুমি জাননা যে তোমার ছেলেমেয়েরাও পোকার কবলে পড়েছে। ভাবছো ওদের লুকিয়ে রাখবে।

সুচেতা: অভি কি বলছ! আলম আর রোশনির কি হয়েছে? রোশনি তো কালকেও এসেছিল ঝুম্পাকে বেবিসিট করতে।

আয়াজ: অভীক তুমি কি বলছো ঠিক করে বল। আমি লক্ষ্য করেছি আলম আজকাল সারাদিন কি একটা ভিডিও গেম নিয়ে বসে থাকে। দেখি তোমার ল্যাপটপ।

অভীক: খবরদার আমার ল্যাপটপ ছোঁবে না। তোমরা ঝুম্পার থেকে দূরে থাক। তোমাদের কাছে থাকলেও। ওষুধটা কোথায় গেল (ল্যাপটপ নিয়ে পাগলের মতো কিসব করে, তারপর এক ছুটে বেরিয়ে যায়)

সুচেতা: আয়াজভাই ও কোথায় গেল? কি যেন একটা দুঃস্বপ্নের ঘোরে রয়েছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে ও এইরকম প্রেজুডিসড কথাবার্তা -

আয়াজ: না না এর মধ্যে কিছু একটা রহস্য আছে। আমি বাড়ি গিয়ে আলমের সাথে কথা বলছি।
(আয়াজ বেরিয়ে যায়। রোশনি ঢোকে।)

রোশনি: আন্টি ঝুম্পাকে পিক আপ করতে এলাম। বার্থডে পার্টি আছে।

সুচেতা: (চমকে ওঠে) রোশনি এক মিনিট বোস। আলম কেমন আছে রে। আজ কোথায় পার্টি ওদের?

রোশনি: আর বোলোনা আজকাল সারাদিন কি একটা ভিডিও গেম নিয়ে থাকে। থাণ্ডার বাগ না কি একটা নাম, যত্ত মারপিট আর রক্তারক্তি, আমার একটুও ভালো লাগেনা। আজকে মনোজের বাড়িতে পার্টি।

সুচেতা: আমাকে দেখাতে পারিস কিরকম খেলাটা

রোশনি: তুমি জানোনা? এটা তো এখন মোস্ট পপুলার, বিশেষ করে ছেলেদের মধ্যে। আইফোনেও খেলা যায়, দেখবে (ফোন দেখায়) অ্যাকচুয়ালি ঝুম্পা খেলাটা জানে, ও তোমাকে শিখিয়ে দেবে। মজার কথা এত পপুলার খেলা কিন্তু এক্কেবারে ফ্রি। জাস্ট ডাউনলোড অ্যাণ্ড প্লে।

সুচেতা: তুই বোস আমি এক্ষুনি আসছি। ঝুম্পা-
(বেরিয়ে যায়। রোশনি এক কোনায় বসে আইফোনে খেলছে। অন্যদিক দিয়ে অভীক ও কর্নেল স্যাম ঢোকে)

স্যাম: সব ঠিক চলছে, তোমার কোনো চিন্তা নেই। তুমি শুধু এইখানে বসে প্রোগ্রামটা আপডেট কর। আর ওষুধটা ঠিক সময় খাবে, নইলে হাসপাতালে বন্ধ করে রাখব।

অভীক: কিন্তু আমার মাথা কাজ করছে না। আর মাঝে মাঝে ভীষণ ভয় করছে, আই অ্যাম হ্যাভিং প্যানিক অ্যাটাকস।

স্যাম: মনে রেখো আমরা যা করছি সব আমাদের ছেলেমেয়েদেরই ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা ভেবে।

অভীক: জানি কর্নেল। চারদিকে এত অজস্র পোকা, আমি বুঝতে পারছি না, কাকে রাখবো, কাকে মারবো।

স্যাম: ওটা আমাদের ওপর ছেড়ে দাও।
(আয়াজ ঢোকে)

আয়াজ: এই তো অভীক ফিরে এসেছে। (কর্নেলের দিকে তাকিয়ে) আপনি কে?

স্যাম: আমি স্যাম ফার্নাণ্ডেজ, অভীকের ডাক্তার, উনি কোনো কারণে উত্তেজিত হয়ে আমার ক্লিনিকে এসেছিলেন। আপনি?

রোশনি: (হঠাৎ উঠে এসে ব্যস্ত স্বরে) ড্যাডি, মাম ফোন করছে, পার্টিতে সবাই এসে গেছে, সুচেতা আন্টি আসছে না। আমাকে যেতে হবে, তুমি ওদের বলে দিয়ো প্লীজ।
(বেরিয়ে যায়। সুচেতা ও ঝুম্পা ঢোকে)

সুচেতা: অভীক তুমি কোথায় গিয়েছিলে। আয়াজভাই ওই পার্টিতে আমাদের যাওয়া দরকার। আমি জানতে চাই এই ভিডিও গেমের ব্যাপারটা আসলে কি?

অভীক: না না তুমি আর ঝুম্পা কোথাও যাবে না। পোকা লেগে যাবে। তারপর পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সবাই।

স্যাম: আরে রোগী দেখছি আবার উত্তেজিত হয়ে উঠছে। দেখি একটা ইঞ্জেকশন দি। (ইঞ্জেকশন বার করে দেয়)। নাঃ মনে হচ্ছে হাসপাতালেই নিয়ে যেতে হবে। (ফোন বার কয়ে)

আয়াজ: কিন্তু আপনি পরিবারের সম্মতি না নিয়ে ওকে হসপিটালাইজড করতে পারেননা। আমিও ডাক্তার, নিয়মকানুনগুলো আমিও কিছুটা জানি। আপনি ওকে কি ইঞ্জেকশন দিলেন সেটা আমরা দেখতে চাই?

স্যাম: আমরা? আপনাকে দেখেই না রোগী উত্তেজিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আপনার মতলবটা কি বলুন তো? রোগীর সঙ্গে আপনার সম্পর্কটাই বা কি?

সুচেতা: উনি আমাদের পারিবারিক বন্ধু। মাপ করবেন, আমি ওনার কেয়ারেই রোগীকে ভর্তি করতে চাই।
(অভীক হঠাৎ জ্ঞান ফিরে উঠে বসে)

অভীক: আরে আয়াজভাই তুমি কখন এলে। বসো বসো। আরে কর্নেল সাহেব এখানে কি করছেন। আঃ মাথাটায় বড্ড ব্যথা করছে।

সুচেতা: অভীক! আয়াজভাই ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে।

স্যাম: তাইতো, তাহলে হয়তো আর হাসপাতালে নেওয়ার দরকার নেই। দেখবেন বন্ধুর ডাক্তারি করতে গিয়ে আবার যেন হিতে বিপরীত হয়ে না যায়। আচ্ছা ম্যাডাম আমি তবে আসি।

সুচেতা: একি। ওর কম্পিউটারটা নিয়ে যাচ্ছেন কেন?

স্যাম: (হেসে) তাইতো, ভুলেই গিয়েছিলাম। এই নাও অভীক (ল্যাপটপটা অভীকের হাতে দিয়ে বেরিয়ে যায়)

আয়াজ: অভীক তুমি এখন কেমন বোধ করছ?

সুচেতা: কি সব আবোলতাবোল বকছিলে অভীক। আর ওই কর্নেল লোকটাই বা কে?

অভীক: বুঝতে পারছি না। কি একটা যেন করছিলাম, ল্যাপটপটা নিয়ে। কোথায় যেন একটা লড়াই হচ্ছিল, বোমার আওয়াজ, আগুন, বাচ্চাদের কান্না। (বিভ্রান্তের মতো ল্যাপটপটা খোলে) এই খেলাটা খেলছিলাম না - দি থাণ্ডার বাগস। থাণ্ডার বাগস। বজ্রকীট। তাইতো।

সুচেতা: বজ্রকীট। তাই তুমি পোকা পোকা বলে-। দেখি কি খেলা হচ্ছে তোমাদের
(সুচেতা ল্যাপটপটা চালু করে। সঙ্গে সঙ্গে অভীকের চোখমুখ বদলে পাগলের মতো হয়ে গেছে। জড়ানো গলায় চিৎকার করতে থাকে। আয়াজ ওর কাছে এসে ল্যাপটপটা দেখতে চায় কিন্তু অভীক আয়াজকে দুহাতে ধরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তারপর টেবিলের ড্রয়ার থেকে পিস্তল বার করে।)

সুচেতা: অভীক, কি করছো? তুমি পিস্তল কোথায় পেলে?

অভীক: পোকাগুলো বাড়িতে এসে জুটেছে। তোমাদের সবাইকে একটু একটু করে খেয়ে ফেলবে। বেরোও এক্ষুনি বেরোও নয়তো গুলি করবো
(সুচেতা আয়াজকে আড়াল করে দাঁড়ায়। ঝুম্পা ছুটে এসে মা কে জড়িয়ে ধরে। কাঁদছে)

সুচেতা: থামো। ভগবানের দোহাই গুলি কর না। ও চলে যাচ্ছে।

ঝুম্পা: বাবা আই অ্যাম সো স্কেয়ারড। প্লীজ পুট দা গান ডাউন বাবা।

অভীক: ঝুম্পা তুই পালিয়ে যা। পোকাগুলো তোর শরীরে ঢুকে যাবে। আঃ আমি আর পারছি না।

আয়াজ: আমি যাচ্ছি নাহলে ও শান্ত হবে না। সুচেতা তোমায় একটা কথা বলে যাই। অসম্ভব শোনালেও আমার মনে হচ্ছে কেউ অভীকের মাইণ্ড কন্ট্রোল করছে। হি ইজ বিয়িং প্রোগ্রামড। কিন্তু তা সত্ত্বেও ও তোমাকে আর ঝুম্পাকে ঠিক চিনতে পারছে, তোমাদের প্রতি দায়িত্ববোধটা ওর মন থেকে মুছে যায়নি।

সুচেতা: কি বলছেন আয়াজভাই

আয়াজ: সময় খুব কম সুচেতা। আমি যাচ্ছি ওদের পার্টিতে, তুমি এখানেই থাক, টক টু হিম, ওকে মনে করিয়ে দাও।

সুচেতা: কি বলব। ও তো কিছুই শুনছে না।

আয়াজ: তোমরা কলেজ থেকে দুজনে দুজনকে চেনো, ভালোবাসো। তক অ্যাবাউট দোজ মেমরিস। ওকে পুরনো ছবি দেখাও। এই বিভ্রান্তির মধ্যে স্মৃতিই আমাদের কম্পাস, ওনলি মেমরিস ক্যান ব্রেক দিস ইভল স্পেল। (বেরিয়ে যায়। উদভ্রান্ত সুচেতা কতগুলো পারিবারিক অ্যালবাম বার করে)

ঝুম্পা: রিমেম্বার বাবা? ঠাম্মা গেভ মি দিস ব্রেসলেট।

সুচেতা: অভি অভি এই আংটিটা তুমি আমার আঙুলে পরিয়ে দিয়েছিলে। তোমার প্রথম মাইনের টাকা দিয়ে কেনা। সেটা ছিল অষ্টমীর সকাল, বাড়িতে লুকিয়ে আমরা বেলুড়-দক্ষিণেশ্বর গেছিলাম, তারপর হিড়ে আটকে দেরি হয়ে সে কি ভয় দুজনের! মনে আছে অভি?

অভীক: (দুহাতে মাথা চেপে ধরে) আমি বুঝতে পারছিনা। বুঝতে পারছিনা। তোমরা কোথায় ছিলে এতদিন? পোকাগুলো যে পৃথিবী ছেয়ে ফেললো।

ঝুম্পা: লুক বাবা। লুক অ্যাট মাই বেবি পিকচারস।

সুচেতা: আমার পুরনো টেলিফোন নম্বরটা মনে আছে অভি - 460626। খালি খারাপ থাকতো, রং নাম্বার আর ক্রস কানেকশন হয়ে যেত তাও তুমি রোজ ফোন করতে।
(রোশনি ঢোকে)

রোশনি: আন্টি ড্যাডি কোথায়? আলম পার্টিতে নেই। ওকে পাওয়া যাচ্ছেনা।

সুচেতা: পাওয়া যাচ্ছেনা মানে?

রোশনি: এই দেখো একটা নোট রেখে গেছে - উই আর গোয়িং ফর আ সিক্রেট সেশন অফ দি থাণ্ডার বাগ। উই উইল ক্যাচ আপ উইথ ইউ লেটার।

সুচেতা: পার্টি থেকে আর কেউ মিসিং?

রোশনি: আলম, তনভির, রুষা আর ঝুম্পা। তার মধ্যে ঝুম্পা তো এখানে।

সুচেতা: ঝুম্পা তুই কিছু জানিস?

ঝুম্পা: মাম্মি তুমি কাউকে বলবে না তো। উই ওয়্যার সাপোজড টু মিট অ্যাট তনভির'স বেসমেন্ট। আমরা থাণ্ডারবাগ খেলতাম।

অভীক: ওদের আটকাও। প্লীজ। ওদের খেলতে দিও না। আমার মাথাটা ওঃ ওঃ (মাথা চেপে বসে পড়ে)

সুচেতা: (টেলিফোন করে) হ্যালো আয়াজ, তুমি তনভিরের বাড়ি চলে যাও। বাচ্চারা ওখানে আছে। ওদের সঙ্গে করে নিয়ে এসো অ্যাণ্ড গ্র্যাব দেয়ার ব্লাডি ল্যাপটপস।
(কর্নেল স্যাম ঢোকেন)

স্যাম: সরে যান সরে যান। রোগীর এপিলেপ্টিক ফিট হয়েছে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

সুচেতা: আপনি কোত্থেকে খবর পেলেন। আমি তো ফোন করিনি। রোশনি তুই ঝুম্পাকে নিয়ে ওপরে যা, দরজা বন্ধ করে দে। (স্যামকে) যতক্ষণ না আমি পুরো ব্যাপারটা না জানতে পারবো এখান থেকে কেউ বেরোচ্ছে না। দিস ইজ মাই হোম। কথা বলতে বলতে অভীকের ড্রয়ার থেকে পিস্তল বার করে।

স্যাম: বন্দুক নামান ম্যাডাম, অন্ততঃ ট্রিগার থেকে আঙুলটা সরান নয়তো গুলি ছুটে যাবে।
(সেলফোন বেজে ওঠে)

আয়াজ: সুচেতা, আয়াজ বলছি। তনভিরের বাড়িতে সাংঘাতিকি কাণ্ড। বেসমেন্টে আগুন লেগে গোটা বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভাগ্যিস আমি ঠিক সময় বাচ্চাদের বার করে এনেছিলাম।

সুচেতা: (পিস্তল স্যামের দিকে ওঠায়) মুখ খুলুন কর্নেল সাহেব। অভীক তুমি বুঝতে পারছো আমি আজ সকালে আয়াজকে না ডাকলে এই মুহূর্তে তোমার মেয়েও ওই জ্বলন্ত বাড়িতে থাকতো। ইউ বেটার এক্সপ্লেইন।

অভীক: প্রজেক্ট থাণ্ডার বাগ। নিউরোকগনিটিভ ভিডিও গেম যার মাধ্যমে ইট উইল বি পসিবল টু প্রোফাইল অ্যাণ্ড ডেস্ট্রয় পোটেনশিয়াল টেররিস্টস অর স্কুল স্যুটারস।

স্যাম: অভীক চুপ কর। ইউ আর ডিসক্লোসিং স্টেট সিক্রেট।

অভীক: ইউসলেস। আমাদের এতদিনের কাজ সব ব্যর্থ। দি প্রোগ্রাম কুড নট প্রপারলি ইন্টিগ্রেট উইথ হিউম্যান মাইণ্ড অ্যাজ উই থট। দোজ ড্যাম মেমরিজ, মনের মধ্যে রাশি রাশি স্মৃতির গোলকধাঁধা - প্রেম, কলকাতা শহর, মেয়ের শৈশব, বাবা-মা, পাড়ার বন্ধুরা। মাকড়শার জালের মতো সেইসব স্মৃতির অলিগলির মধ্যে আমাদের প্রোগ্রাম বার বার ক্র্যাশ করেছে। উই আর নট ল্যাব র‍্যাটস কর্নেল।

স্যাম: বোস্টন ম্যারাথনে ওই বম্বিংটা হবার পর আমরা চেয়েছিলাম সোস্যাল মিডিয়া আর ভিডিও গেমের মাধ্যমে একটা স্পাই প্রোগ্রাম সারা পৃথিবীর টিন এজারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। এই গেমটা ডাউনলোড করার সাথে সাথে পুরো সিস্টেম আমাদের কন্ট্রোলে চলে আসতো। এইভাবে আমরা ভবিষ্যৎ টেররিস্টদের প্রোফাইল বানাতে চেয়েছিলাম।

সুচেতা: কি সাংঘাতিক।

অভীক: কিন্তু শুধু সেখানেই শেষ নয়। দিস গেম ক্যান ইউজ ডিজিট্যাল সাইকোসাজেশন। এই খেলাটা আসলে জীবন্ত, একটা মানুষের মতই সে আরেকজনকে চিনতে পারে। আস্তে আস্তে খেলুড়ে যত বেশি খেলাটার মধ্যে ঢুকে যাবে ততই তার মানসিকতা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আলটিমেটলি উই ক্যান কন্ট্রোল দেয়ার থট অ্যাণ্ড অ্যাকশন। মুশকিল হয়ে গেল যখন কন্ট্রোলার নিজেই তার র‍্যাশনালিটি হারিয়ে ফেলতে শুরু করল।

সুচেতা: (পিস্তল নামিয়ে) বুঝতে পেরেছি। বিবেক, স্মৃতি, দায়বদ্ধতা - এইসব দুর্বোধ্য নন-বায়োলজিক্যাল এনটিটিগুলো সব গুবলেট করে দিলে তো। কুড়ি বছর ধরে রিসার্চ করে এটুকু বুঝলে না যে মানুষ আর ইঁদুরের ব্রেন এক জিনিস নয়।
(আয়াজ ঢোকে)

আয়াজ: (হাততালি দিয়ে) অসাধারণ আইডিয়া কর্নেল। ভবিষ্যতের আতঙ্কবাদীরা আপনাদের সাইকোসাজেশনের পাল্লায় পড়ে যদি নিজেরাই নিজেদের শেষ করে দেয় তবে যুদ্ধবিগ্রহ, ড্রোন স্ট্রাইক কিছুরই দরকার পড়বে না। শুধু কিছু নিষ্পাপ শিশু কোল্যাটারাল ড্যামেজ হয়ে যাবে। তাতে অবশ্য সরকারকে কেউ দোষ দেবে না।

সুচেতা: অভীক তুমি জানতে এসব। এইরকম ভয়ানক দাসত্বের দুঃস্বপ্নে ভরা সমাজ বানাতে চেয়েছিলে তুমি?

অভীক: সে প্রশ্নের উত্তর নেই। কিন্তু সোজা কথায় এই এক্সপেরিমেন্ট ডাহা ফেলিওর, এবার নিজের তৈরি আপদকে নিজেই সাবাড় করতে হবে। (ল্যাপটপটা বন্ধ করে উঠে পড়ে। সুচেতার দিকে গিয়ে আস্তে আস্তে পিস্তলটা নিয়ে নেয়। সুচেতা কাঁদছে) চিন্তা নেই পুরো প্রোগ্রামটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বজ্রকীটের খেলা শেষ। সুচেতা তোমার অনেক প্রশ্ন আছে জানি কিন্তু আজ বড্ড ক্লান্ত। ঘুমোতে যাবো। ডাক্তার এইবেলা ইঞ্জেকশনটা দিয়ে দিন।

(যবনিকা)

(অন্য নাটক চিকিৎসা সঙ্কট)



(পরবাস-৫৭, জুলাই ২০১৪)