হিয়েরোগ্লিফিক
শীর্ণ নদীটির তীরে শিলাপট্টে উৎকীর্ণ লিপি
ছলাকলা, বাসি ভালবাসাবাসি, হিয়েরোগ্লিফিক
এতদিন পড়ে পড়ে বুঝে গেছি, আমি নই
অন্য কেউ তোমার প্রেমিক।
অনাদরে তাকে রাখা বোতলের ছিপি
কোনকালে হারিয়ে গিয়েছে, তাতে জল ভরে
মানিপ্ল্যান্ট লাগিয়েছো, আমি সেই সৌম্য মানিপ্ল্যান্ট
যত্ন করে লিভিংরুমের শোভা বাড়াতে রেখেছো।
বড় ইচ্ছে করে আরো মনোলোভা হই
বলি সই, আর জন্মে তুই আর আমি বাল্যপ্রেমী হব।
এ জন্মের প্রেমিককে বলিস, সে যেন
গাছ হয় বাইরে বাগানে, আমাদের ঘরেতে না ঢোকে।
হেরো মানুষের দিকে
উষ্ণ জল, সুদৃশ্য টাইলস লাগানো বাথরুম
শীতের দুপুরে ভাতঘুম, অ্যাকোয়ারিয়ামে
লাল নীল মাছেদের ব্রাউনীয় খেই ছাড়া ভাবও
ছেড়ে চলে যাব, একদিন ঠিক যাব।
স্পষ্টতঃ দুভাগ হলে, সুখ রেখে আমি অনায়াসে
হেরো মানুষের দিকে চলে যাব
তারা দুঃখ ভাগ করে নেয়, তাদের স্বভাবও
জিতে যাওয়া মানুষের মত নয়, তাদের নিশ্বাসে
কাঁচা রসুনের গন্ধ নেই।
হেরোদের অন্তত
নিজস্ব জায়গা থাকে রুখে দাঁড়ানোর মত
রাতের আঁধারে মরা নদী পার হতে হয় ব’লে
হাওয়া দেয়, বনজ সুবাস আসে নাকে
জিন্সের ফোল্ডে দেদার
টুকরো পাথর ও ঝুরো বালি জমে থাকে
জিতে যাওয়া মানুষেরা ট্যুর থেকে ফিরে
লন্ড্রিতে ফেডেড ডেনিম, ঘাম-শার্ট ধুতে দেয়
জিতে যাওয়া মানুষেরা শুধু মেনে নেয় ...
সহজ
সকলেই মনে মনে গাছ হতে চায়
আঁতিপাঁতি খোঁজে গাছ হবার উপায়।
বরষায় কচি পাতা বেরোবার ঝোঁকে
বেমালুম জলে ভেজে বুড়ো বুড়ো লোকে।
দু-হাত ছড়িয়ে রাখে, ঠিক যেন কাল
ফুলে ফুলে ভরে যাবে উদ্বাহু ডাল।
পাখি এসে বসে যদি নুয়ে পড়া কাঁধে
চুলের ঝুপসি ভিড়ে ভীরু বাসা বাঁধে
গান গায়, অজ গাঁয় ঋজু এক গাছ
হয়ে যদি থাকা যায়... মানুষ-সমাজ
ছেড়ে-ছুড়ে যাওয়া যায়... হাওয়া কানে কানে
চুপি চুপি বলে যায় জীবনের মানে
রাত্তিরে জোনাকিরা নিয়ে যায় খোঁজ...
কংক্রিট ছেড়ে যাওয়া এতই সহজ?
কে বোঝাবে, একা ছাতে খাড়া থাকে ঠায়
জলে ভিজে রোদে পুড়ে গাছ হতে চায়...
'শিশুবিভাগে' লেখকের আরো দু'টি কবিতা এখানে
(পরবাস-৬০, অগস্ট ২০১৫)