Parabaas Moviestore




Parabaas Musicstore




Subscribe to Magazines





পরবাসে
এমদাদ উল বারীর

লেখা


ISSN 1563-8685




তিনটি কবিতা

আবার জমবে দেখো

আবার জমবে দেখো বটতলে মুরলীর হাট
দু’কূল ছাপবে ফের আধমরা হাঁটুভাঙা নদী
অভিমানী ঢেউগুলো ছুঁয়ে যাবে উদাসীন তট
বুনোহাঁস উল্লাসে পার হবে রাতের পরিধি
এখানে আবাদ ছিল একদিন এই জনপদ
বেদের মন্ত্র ভুলে তুলে নিলো কালের গরল
প্রতিবাদে পুড়ে গেল শাশ্বত প্রাণের সম্পদ
পয়মন্ত জল হল নরকের অপয়া অনল
প্রপতনে কেটে গেছে সিদ্ধিহীন অজস্র সময়
সামন্তপ্রভুর মত হেঁটে গেছে লঘিষ্ঠ আচার
আবার মূর্ত হলে শুদ্ধাচারী প্রেম-বরাভয়
জীবনের ধৃষ্টতায় ক্ষান্তি হবে শাপভ্রষ্টতার
নিথর প্রান্তর জুড়ে জরাহারী বৃষ্টির ধারা
বন্ধ্যা মাটির ভিতে বুনে দেবে সবুজের মূল
শ্যামল জোয়ারে ফের ভেসে যাবে দাবদাহী খরা
আবার ফুটবে দেখো দেবঘাটে কদমের ফুল
সত্যদহের বাঁকে ফিরে এসে দেশত্যাগী নাও
মনপোড়া বাতাসে ভরে তুলে ঘরমুখী পাল
উজান ভাঙছে দেখে শ্লাঘাময়ী আহত নারীও
নতুন চরের মত খুলে দেবে বুকের আগল
আবার স্পর্ধাভরে ছুঁড়ে ফেলে আদিম অসুখ
আঁধার গলির মোড়ে খুঁজে পেতে নিলাজ প্রভাত
পাতকিনী চুমু খাবে ধুলিমাখা সন্তানের মুখ
শ্মশানের খুলি ফুঁড়ে উঁকি দেবে শিশু পারিজাত
আবার জ্বালবো এই জতুগৃহে ধ্রুপদী উনুন
দ্বিধাহীন ক্ষমা দিয়ে লেপে নেবো বিবাগী চাতাল
নিরলস কর্ষণে নিংড়াবো শস্য নিপুণ
তোমার কপালে ফের এঁকে দেবো হিঙ্গুলের লাল


নুন নেই বলে

নুন নেই বলে সবকিছু
বড্ড আলুনি লাগে আজকাল:

মাগুর মাছের ঝোল, পাঙ্গাসের পেটি,
সীম, করলা, ইচ্ছে, উচ্ছে, স্বপ্নের পাতু্রি;
দোতলার ভাবীর অলিন্দে মেলে দেয়া কাশ্মিরী আম,
রসুনের গন্ধভরা আরব্যরজনী;

বনারণ্য, জনারণ্য, প্রিয় সুহৃদ;
বোনাসের মাসোহারা, ‘সাগুফতা’র ঠাঁই;
সকাল-দুপুর-রাত, জ্যোৎস্না, বকুল;
মলিয়ের, ভিভালদি, ভীমসেন যোশী,
অভিমানী আশ্রম কবিতার খাতা;
নুন নেই বলে সব স্বাদহীন ফিকা।

শুধু তোমার চোখের কোলে সমুদ্রের জল
একফোঁটা স্বেদবিন্দু ঠোঁটের ওপর ...

একটু লবন হবে?


বেলাশেষে

সব রাত ভোর হয়, সব দিনও হয়ে আসে ফিকে,
রাত্রি প্রসন্ন হলেও একপল থামে না সকাল;
ভোজশেষে মেজভর এঁটোকাঁটা, পিঁপড়ের সারি,
পেয়ালার তলানিতে জমে থাকে উৎসবের রেশ।

জলের চিহ্ন রেখে উবে যাওয়া কর্পূরের মত
বাসি বকুলের ঘ্রাণ মুমূর্ষের শিথানে পৈথানে
ভার করে গতিহীন বাতাসের বুক;
সব সাধ শেষ হলে জীবনের অপার সম্ভার
একান্ত আকাশে প্রিয় নক্ষত্রের মত
অধরা সুদূর থেকে হৃদয়ের বেদনা জাগায়।

সব মেলা ভেঙে যায়, অবশেষে থেমে যায় সব পাখোয়াজ,
নদীর শিকস্তি থেকে জনান্তিক ভেসে আসে চেনা কিছু সুর;
নবান্ন ঠোঁটে বিঁধে অচিন দ্বীপাঞ্চলে উড়ে যায় পাখি,
বালুচরে পড়ে থাকে পরিযায়ী কয়েকটি পাখির পালক।



(পরবাস-৬১, ডিসেম্বর ২০১৫)