Parabaas Moviestore




Parabaas Musicstore




Subscribe to Magazines



পরবাসে তাপসকিরণ রায়ের
লেখা




ISSN 1563-8685




পাশের জানালা

মৈনাকের প্রেম জমে উঠেছিল। দূরের দেখা হাসি হাসি মুখ, হাত নাড়া, আরও গাঢ় চোখে দেখে নেবার প্রচেষ্টা—এ সব চলছিল। সামনা-সামনি দেখা নেই, পরিচয় নেই, কথা নেই, বার্তা নেই।

কলেজ থেকে এসে কোন মতে হাত-পা ধুয়ে সামান্য নাস্তা করে মৈনাক রোজ এসে দাঁড়ায় তার ঘরের জানালার সামনে। তার চোখ চলে যায় রাস্তার ওপারের কোনাকুনি তিন নম্বর ঘরের জানালায়। সেখানেই মেয়েটি রোজ এসে দাঁড়িয়ে থাকে। দূরত্ব একটু বেশি, তবু মেয়েটিকে দেখা যায়। স্পষ্টত দেখা না গেলেও কিছু আসে যায় না—প্রেমের ক্ষেত্রে এটুকু বাধা তুচ্ছাতিতুচ্ছ !

এক মাসের ওপর এভাবে কেটে গেল। চক্ষু বিনিময়, রকমফের হাসি, কখনো-সখনো হাত নাড়া, ইশারা আর বাকিটা মনে মনে এগিয়ে যাওয়া। স্বপ্নে-স্মৃতিতে প্রীতিলতায় বেঁধে নিয়ে প্রেমের ঘর তৈরি হয়ে গিয়ে ছিল।

মৈনাক জানে না ওই তৃতীয় ঘরের বাসিন্দা কারা। নৈকট্যের কথা, জেনে নিতে কতটুকু আর সময় লাগে। অজানা, তবু নিবিড় বন্ধন, এখন অনামী, কিন্তু শত-সহস্র বার যেন সে নাম ধ্বনিত রণিত হয়ে চলেছে মৈনাকের বুকের ভেতর!

একদিন মনে হল যে আর পারা যায় না—এ ভাবে ছায়া হয়ে, অস্পষ্ট কায়ার মাঝে তার প্রেমিকাকে ফেলে রাখা যায় না। এবার নেমে আসতে হবে—মুখোমুখি হতে হবে। আজ আর জানলার পাশে দাঁড়ালো না, মৈনাক রাস্তায় নেমে এলো।

ওই তো মেয়েটি। জানালায় দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে চেয়ে আছে। এগিয়ে গেল মৈনাক। একেবারে জানালার পাশটিতে। এবার হঠাৎ তার নজর পড়ল, মেয়েটি হাসছে, হাতের ইশারায় ডাকছে, চোখ দুটো তার স্থির হয়ে আছে। কিন্তু না, তা মৈনাকের দিকে না—অন্য আর এক দিকে...

মৈনাক স্পষ্ট চোখ নিয়ে তাকাল, অন্য আর এক দিকে, দেখল ওদের পাশের বাড়ির জানালায় দাঁড়িয়ে আছে অজিতেশ!

চমকে গেল মৈনাক। মনে হল, সে যেন হাজার বছর ধরে এখানে এমনি ভাবে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!



(পরবাস-৬৩, ৩০ জুন, ২০১৬)