Parabaas Moviestore




Parabaas Musicstore




Subscribe to Magazines





পরবাসে
তিলোত্তমা মজুমদার-এর

লেখা


বই


Parabaas Bookstore



ISSN 1563-8685




গুচ্ছকবিতা


|| ১ ||

আমার মনখারাপ এজন্য নয় যে তুমি আমাকে
                                           ছোঁওনা কতকাল!
এজন্যও নয় যে এই নির্বাসনে আমি একছিটেও তামাক
                                                     খেতে পাইনি।
তামাক। মানে তো সবুজ ভাঙগাছ।
আমাদের পেছনের বাগানে আগাছার মর্যাদায় কাটা
                     পড়ত মালির ধারালো হাঁসুয়ায়।
সে-ও বুঝি ছিল সম্মাননীয় হত্যা! দ্য অনার কিলিং!
তখন বুঝিনি, মুখভর্তি ধোঁয়ার অনর্গল নিষ্কৃতি
                                      চুমুর মতো লাগে।
জানতে পারলে আমার কৈশোরের ভাঁজে ভাঁজে রেখে
                     দিতাম ভাঙপাতা আর ভাঙফুলের রেণু।
আমার মনখারাপ এজন্যও নয়।
মনখারাপের কারণ যারা খুঁজে পায় তারা ভারী বুদ্ধিধর!
আমাকে দলে নেয় না।
ভীষণ বোকা তো —
তাই এমন তীব্র ভালবাসি ...
তাই এমন ভালবাসতে ভালবাসি ...
তোমার ঠোঁট থেকে এল বলেই ধোঁয়ার চুম্বনে আমি
                                                     আবিষ্ট।
ওই ওরা। তোমার দুই ঠোঁট।
আমার মনখারাপ এজন্যও নয় যে কয়েকজন তরতাজা
        খরগোশ দেখার পরেই বিরাট এক মাছের
               মরদেহ দেখেছি আমি। কে যেন তার
                     লেজের দিকের মাংস খুবলে নিয়েছে।
নদীর কিনারে জলজ গাছের জটাজুটে আটকে পড়া
                                                     মৃত মাছ।
আমার মনখারাপ।
আমি! এই আমি!
আমার ভীষণ মনখারাপ!


|| ২ ||

একটি মুখ চাঁদের থেকে
নেমে আসছে জ্যোৎস্নায়
যখন এক শিশুর মতো
জড়িয়ে ধরে গলা
সেই মুখ তো নিবিড়
            হাসে ঘুমে
তাকে ভালবাসতে বাসতে
কষ্ট যত ভুলে যাচ্ছি ক্রমে


|| ৩ ||

ভালবাসা মানে গাঢ় ধোঁয়া
যে কখনও আদর জানেনি
যে কখনও জানত না
কাকে বলে বিশুদ্ধ তামাক
তার ঠোঁটে আগুনের ছোঁয়া


|| ৪ ||

তোমাকে সর্বস্ব দেয়া গেল ভেবে
দু'হাতের পাতায় দেখি
লেগে আছে উগ্র গাঢ় রং
রক্তপায়ী প্রাণীর মতন
                আমার অহং
নদীতে গেলাম সেই আমিত্ব
                  ধুতে চেয়ে
শুকনো নদীতে প্রেমের কঙ্কাল
যায় বালির অলীক নৌকা বেয়ে
আমি কঙ্কাল নেয়ের দিকে
                হাতছানি দিই
ডাকি তাকে। বলতে চাই —
চলো, তোমাকে আবার সুন্দর
                   করে গড়ি
সে খনখনে হেসে বলে
আহা মরি মরি
কী দিয়ে গড়বে
প্রেমে লেগেছে মড়ক
দুই পারে রোজ মরছে অগণিত
            প্রেমতৃষ্ণ লোক
জানো ...
আমি একটুও বিচলিত নই
বড় অহঙ্কারে চেঁচিয়ে বলব
          আমি তোমার কে হই


|| ৫ ||

যখন ঘুম আসে চোখে
যখন ক্লান্ত লাগে, বালিশে
            এলিয়ে পড়ে মুখ
যখন এলোমেলো হাওয়ায় হাওয়ায়
উড়ে আসে কিছু ভুল, কিছু
                      দুঃখ ভরা ছবি
তখন তোমাকে ডাকতে গিয়ে
                 থেমে গেছি কতবার
তখন তোমাকে বলতে চেয়েছি
এ জীবনে একটি জলপদ্মও
                দিতে কি পারো না?
মুখ ফুটে বলাও হল না
ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে এল
ক্লান্তি শিথিল করে দিল
            আদরের বাহুর বন্ধন
তোমাকে দেখতে পাই
                    জেগে আছ
তোমাকে দেখতে পাই পদ্মফুল হাতে
অন্য কোনও মেয়েকে দেবে?
কাকে ভালবাসো?
ভাবতে ভাবতে দেখি কবে থেকে বসে আছি
                               তোমার দরজায়
ঘরে নেবে?
একটিবার?
আমার ঘুমের আগে জড়িয়ে নেবে কি
               এই দুটি ঠান্ডা হাত
               তোমার উষ্ণতর বুকে?


|| ৬ ||

ঝাড়গ্রামে সন্ধ্যা নামে
কত অগণিত সন্ধ্যা ধরে
হেঁটে যাচ্ছি গ্রাম থেকে গ্রামে
লোকে বলে, এই তো এইখানে
কিছু আগে ছিল উজ্জ্বলতা
আমি খানিক জিরোই
আঁধার ঘনিয়ে এলে
নীরবে বলি দুটি কথা
গাছে গাছে পাখিরা
          ডানায় শব্দ তোলে
নিঃশব্দে ফোটে কত ফুল
যার যার সময় হলেই
আমি ফের উঠি
চলতে থাকি যেমন বেতো ঘোড়া
গভীর দুঃখে হেঁটে যায়
ছন্নছাড়ার মতো হাঁটে
একদিন যাত্রা ফুরোবে
কিছু লোক তুলে নেবে নড়বড়ে খাটে
ঝাড়গ্রামে তখন মাটি খুঁড়ে
          তুমি একটা গাছ পুঁতে দিও
জল দিও
একটু জল দিও অনুজ্জ্বল পড়ন্ত বেলায়


|| ৭ ||

অন্ধকারে জেগে থাকে
আলো আর আলো সম্ভাবনা
তুমি যদি কাছে থাকে
আলো পায় আদরের কণা


|| ৮ ||

মাঝে মাঝে খুব কষ্ট দাও
মাটিতে মিশিয়ে দাও ঘন লজ্জায়
আমি কেঁদে ফেলি একদম একা
খটখটে শুকনো দুই চোখ
দুঃখের গাঢ় রসে চটচটে পৃথিবী
                              ঢাকা
মাঝে মাঝে খুব কষ্ট দাও
এমন তাকাও মনে হয় তীব্র ঘৃণায়
আমি কেঁদে ফেলি একদম একা
হৃদয় ফাটিয়ে হাওয়া নামে
কালো পিঁপড়েরা থিকথিকে
তোমার কথায় কান্নার বদলে
আমি চাই রক্তসমুদ্রের জল
একা
দুঃখের গাঢ় রঙে পৃথিবী দেখা



(পরবাস-৬৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭)