এর মধ্যে হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলের এক কোনায় তাতিন এসে বসল। ও অমন এসে বসে মাঝে মাঝেই, তাই সেটাকে বিশেষ গুরুত্ব দিল না ওর মাম। আজ ওর স্কুল নেই। খুকুদিকে পারমিতা তাই বলে দিয়েছে ওকে একটু সঙ্গ দিতে। নাহয় ওকে বাজার থেকে আনা আলু পেঁয়াজগুলো আলাদা ঝুড়িতে তুলতে বসিয়ে দেয় রান্নাঘরে, একটু যেন বকবক করে ওর সাথে। সেই আধা-শহুরে চাকদহে খুকুদির বাড়ি—সেখানকার গল্প শুনতে তাতিন ভারি ভালবাসে। খুকুদি বিয়ের আগে সেই কোন ছোট্ট বেলায় তাঁতে গামছা বুনতে শিখেছিল, সারাদিনে সতেরো আঠারোটা গামছা বুনে সপ্তাহে পেত দুশো কি আড়াইশো টাকা। সে গল্পও তাতিনের কণ্ঠস্থ তবু বার বার শোনা চাই-ই। মামকে বলে রেখেছে একবার তাঁত দেখতে খুকুদির বাড়ি যাবেই যাবে। পারমিতা ওর এই ঝোঁকে না করে না। সারা দিন কার্টুন আঁকড়ে পড়ে থাকাটাও পারমিতা একেবারেই পছন্দ করে না, যদিও কার্টুন তৈরির পদ্ধতি ওকে সব সময় টানে। ‘টম এন জেরি’র মত সুন্দর অথচ সুপরিকল্পিত একটা ভাবনার রূপায়ণ ওকে অবাক করে দেয়। আবার বাইরের জগতের শব্দ-গন্ধও যেন হারিয়ে না যায় সে দিকেও তো খেয়াল করতে হবে—এতসব ভাবতে ভাবতে পারমিতা খুকুদির জন্য একটা স্লিপ লিখে ফ্রিজের গায়ে আটকে দিল-- ‘সময় পেলে তাতিনকে ভাতের সাথে আলু মোটা মোটা করে কেটে ভেজে দিও গরম গরম’। লিখেই হেসে ফেলল নিজের মনে, সময় আবার পাবে না তাতিনের জন্য! ওর কাজে খুকুদি তো সব সময়ই এক পায়ে খাড়া--তাতিনের জন্মের সেই কুড়ি দিনের পর থেকে ওদের বলতে গেলে ব্যাটিং জুটি। কাবার্ড থেকে অল্প খানিক অরেগ্যানোও বার করে রাখল পারমিতা ভাজায় ছড়ানোর জন্য।
সব ব্যবস্থা করে বেশ শান্তি শান্তি লাগছিল। হঠাৎ ছেলের এমন করে এসে বেশ খানিকক্ষণ বসে থাকাটায় মনটা খচখচ করে উঠল পারমিতার। মাথার চুলগুলো নেড়ে দিয়ে বললে ‘কি রে, কিছু বলবি?’ প্রথমেই ‘না না পরে বলব, এখন তুমি স্কুলে যাচ্ছ’ বলেই চুপ করে মুখের দিকে তাকিয়ে রইল তাতিন। যেন কি বলতে চাইছে ও মাম তখনই শুনে নিলে ভাল।
মোবাইলে সময়টা দেখে নিয়ে পারমিতা বললে ‘বল না তাতু কি ভাবছিস? নইলে তো স্কুলে আমার মনই বসবে না।’ মায়ের এমন উতলা হওয়াটা তাতিনের মনে মনে খুব ভাল লাগে। তবুও সেটা না দেখিয়ে উদাস গলায় বললে ‘আচ্ছা মা কলকাতায় যদি বরফ পড়ত? বল না মা পড়তেও তো পারে--?’
পারমিতা এবার নড়ে চড়ে বসল, ‘হঠাৎ এমন ভাবলি কেন রে তুই?’ ‘নাহ, এমনিই---জানো তো মা লাট্টুরা এবার প্রিন্সটন গিয়েছিল শীতে, বরফ নিয়ে কত খেলেছে--বাড়ির সামনে পড়া বরফও ওরা নিজেরাই তুলেছে। বেশ মজা, তাই না মা?’
এবার তো সব পরিষ্কার হয়ে গেল। পারমিতা সব সময় যুক্তির পথে হাঁটে না। তাই বোঝানোর ধার দিয়েই গেল না। ওতো গুগল খুলে সার্চ দিলেই ছেলে জেনে যাবে কেন কলকাতায় বরফ পড়তে পারে না কোনোদিনই। কিন্তু বিশ্বাস—সে তো অন্য ব্যাপার। হয়ত শ্রীরামকৃষ্ণে বিশ্বাস ছিল বলেই দেখতে চাওয়ার ঠিক পরের দিনই ভক্তরা একই ডালে লাল আর সাদা জবা দেখেছিল। আবার ব্যালকনিতে রাখা টবে একদিন পারমিতা গোলাপী জবা গাছের ডালে লাল জবা দেখেছিল, এমন পরিবর্তন প্রজাপতিরই কাণ্ড কিন্তু এই মুহূর্তে দুটো বিপরীতধর্মী ভাবনা সরিয়ে রাখলে পারমিতা। বিশ্বাস ভাঙ্গার এই যুগে একটু বিশ্বাস গড়ে উঠুক না। সাইড টেবিলে রাখা ঠাকুরের কল্পতরু ভঙ্গির যে ছবিটি ছিল তা তাতিনকে দিয়ে বললে, ‘জানিস উনি একদিন গাছের একই ডালে সাদা আর লাল জবা ফুটিয়ে ছিলেন---ওঁর ইচ্ছেশক্তি তো অপার।’
ইচ্ছেশক্তি অপার মানে যে ঠিক কী অত না বুঝেও মাথা হেলিয়ে সায় দিয়ে ছবিটা বুকে ধরে তাতিন চলে গেল নিজের ঘরে।
বিকেলে আবহাওয়া দপ্তর থেকে কিছু সূচনা ছিল ঝোড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি কালবৈশাখীর ইঙ্গিত দিয়ে। যেমন পয়লা বৈশাখের আশেপাশে থেকে থাকে, তাই কেউ দেখেছিল কেউ দেখে নি। কেউ আবার দেখেও মনে রাখে নি।
পর দিন পয়লা বৈশাখ--আমবেদকারের জন্মদিবসও, স্কুল অফিস তো ছুটি ছিলই। কিন্তু সে ছুটির দিন যে এমন হবে হাজার কল্পনা করেও ভাবা যায় নি। সে এক অভূতপূর্ব সাদা ঠান্ডা বৈশাখের সকাল। পারমিতা আর অঞ্জন বেশ খানিক দেরি করে উঠে ব্যালকনিতে চায়ের কাপ হাতে বেরিয়ে এসে থ! ফ্ল্যাটের সব পর্দা টানা থাকায় এতক্ষণ বোঝা যায় নি। বেডরুমের এ সি যেন একান্ত অবান্তর। আর কালিঝুলি মাখা কলকাতা যেন আর্কটিক দেশের সাদা হাঁস! কথায় কথায় টেনিদার মত ‘মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক’ বলা অঞ্জনের হাঁ যেন আর বন্ধ হতে চায় না।
প্রথমেই এক ছুটে গিয়ে ঘুমন্ত তাতিনকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে এল অঞ্জন। ঘুম চোখে ওর বিস্ময় বলে বোঝানোর নয়। ঘুমটি যার সহজে ভাঙে না (অঞ্জন তো ওকে ডাকে কুম্ভকর্ণ ওরফে কুভো বলে) সে-ই দশ টাকা দামের রাজভোগ রসগোল্লার মত বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইল বে-এ-শ খানিক্ষন, অঞ্জন ওকে ছুঁয়ে ছিল তাই বুঝল ওর গায়ে উঠেছে পদ্মকাঁটা। তারপর জড়ানো জড়ানো গলায় তাতু বলল ‘মাম—কাল আমি না সারাটা দিনই ঠাকুরের ছবির দিকে তাকিয়েছিলাম--বরফ পড়ার কথা ভেবে--তাই কি এমন হল?’ কথা তো সবারই হারিয়ে গিয়েছিল, নির্বাক, নির্ণিমেষ ওরা তাকিয়েছিল। চায়ের স্টলের তেলচিটে বেঞ্চি, পেট শপ, ফারমেসি, কালিমাখা, চার দিক থেকে ঘিরে ফেলা আগেকার পেট্রোল পাম্প, গোল ট্র্যাফিক আইল্যান্ড, ফুটপাত বাজারে আগের দিনের পড়ে থাকা ইতিউতি পচা সব্জি, কুমড়ো-বোঁটা, ফাটা আলু, বাঁধাকপির পাতার সাথে মাখামাখি হওয়া চিকেনের রক্ত মাখা পালক—সব, সওব ঢাকা পড়ে গেছে যেন নামী কোনো ব্র্যান্ডের সাদা বেডশীটে। বেঙ্গল কেমিক্যালের কারখানা পাশে রেখে যে রাস্তাটা কাঁকুড়গাছির মোড়ে এসে পড়ে তার দু পাশেই ফুটপাত বাজার, কোথাও সস্তা প্ল্যাস্টিকের গোলাপি, ক্যাটক্যাটে সবুজ-রঙ্গা জুতোর দোকান কোথাও চায়ের ঝুপড়ি, সব্জি বাজার, তা ছাড়িয়ে কাঁকুড়গাছির মোড়। ওখানেই পারমিতাদের ফ্ল্যাট। রোজ স্কুল সেরে অটো ড্রাইভারের পাশের ছ ইঞ্চি সীটের থেকে নেমে অভ্যস্ত পায়ে খানাখন্দ এড়িয়ে অনেকটা ঠিক ড্রিবল করতে করতে পারমিতা ঠিক বাড়ি ঢুকে পড়ে। তাতিনকেও ওই ড্রিবলিং শিখিয়েছে ও, স্কুলবাস থেকে নেমে ওকেও একটু হাঁটতে হয়, যদিও খুকুদিই ওকে বাস থেকে নামিয়ে নেয়। শৌখিন চটি তো পারমিতা এড়িয়েই যায়, পাছে কোথাও ফুটপাতে সিমেন্ট থেকে উঠে আসা লোহার শিকে নখ উপড়ে যায়, সে ভয়ে পা-ঢাকা জুতোই পরে ও, তাতে ফ্যাশন কতটা হল, তার ধার ধারে না পারমিতা। নখ উপড়োলে তো টেটেনাস ইনজেকশন দিয়ে শুরু। হয়ত রক্ত বন্ধ হল না, ডাক্তার রেফার করবেন তাঁর চেনা ক্লিনিকে, পাড়ার ফার্মেসীতে চলবে না। কপাল আরো খারাপ হলে ই সি জি থেকে হরমোন, থাইরয়েড টেস্ট অবধি গড়াতে পারে। মাঝে মাঝে পারমিতা এ এক অদ্ভুত বিপন্নতায় ভোগে। এ যে কলকাতা, পঞ্চ কালী, পঞ্চ দুর্গার মত পঞ্চ ডাক্তার দর্শনও হয়ে যায় কথায় কথায়। ব্যালকনি থেকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এমনি সব এলোমেলো ছবি পারমিতার মনের পর্দায় আসছিল, ও ভাবছিল আহা রোজের এই সব পথঘাট যদি আজকের মত সাদা আস্তরণে ঢাকা থাকত!
খানিক বাদে পারমিতার খেয়াল হল খুকুদির আজ আসা হয়তো সম্ভব নয়, এমন দিনে পথঘাট চালু রাখার আপৎকালীন ব্যবস্থা পুরসভায় আছে কিনা ওর জানা নেই। তা না থাকুক, না আসুক খুকদি, আজ যেন কিছু যায় আসে না। ঘটনার এই চরম আকস্মিকতা যেন সব হিসেবনিকেশের সাধারণ বুদ্ধিকে নিজের সাদা আস্তরণে লুকিয়ে ফেলেছে।
খুকুদি, শ্যামলের মা-রা ল্যোকাল ট্রেন থেকে উল্টোডাঙ্গায় নেমে ফুটপাত ধরে বা বড় রাস্তা অতি অভ্যস্ত পায়ে পেরিয়ে যে যার কাজের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ওরা ওঠে সেই কোন কাকভোরে। বস্তির চট টাঙানো শৌচালয়ে শৌচ সারতে বেরিয়ে সেদিন ওরা অবাক বল্লে কম-ই বলা হবে। তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি ওজনের শব্দ লাগবে ওদের মনের অবস্থা বোঝাতে। কিন্তু সব অবস্থায় মানিয়ে নেওয়ার মন্ত্র ওদের শেখা আছে। তাই প্রথম ঢাক্কা কাটিয়ে গঙ্গাদিই বললে ‘দ্যাখরে বৌদিগুলানের কষ্ট হবেক-ই, তবে আজ ওদের ছুটি--চালিয়ে নেবেখন। এমন সাদা কলকেতায় আমাদের কালো চটির দাগ কাটতে মন চাইছে না রে। আজ চল যে যার ঘরেই চা সারি আর দাওয়ায় বসে থাকি। টিভিটা চালা তো, খবরে কি বলে শুনিনি। এমন দেশ্য কি এ জন্মে আর দেখতি পাব।’ তবু মা কাকিরা আড়াল হতেই পোলাগুলো এদিক ওদিক চেয়ে সদ্য পড়া বরফে টায়ার কাটা টানা গাড়ি, ভাঙ্গা ব্যাটের দাগ ফেলে খানিক কালো করেই ফেললে।
মুস্কিল হল অঞ্জুকে নিয়ে—ভরা ন’ মাস, রাত থেকেই ব্যথা উঠেছে। রক্ষে এই যে মনোহর আজ রড বাঁকানোর কাজে যায় নি। ছুটি আছে, তবে ছুটি মানেই তো মজুরী বাদ=- কেন যে ছু্টি আসে! তার ওপর এমন কস্মিনকালে না দেখা বরফ! কোথা থেকে যে একটা অটো বা সাইকেল রিকশা জোগাড় করবে পোয়াতির জন্য ভেবে দিশেহারা মনোহর। একে তাকে বলাতে কে যেন বললে বাচ্চু অটো ড্রাইভারের কথা। বস্তিতেই থাকে ও, ভারি রগচটা, বেপরোয়া, অগুনতি কেস খেয়েও পরম ব্রহ্ম, মাল টেনে সেই তাঁর মতোই চক্ষু রক্তবর্ণ। তা কপালে যা আছে থাক ভেবে তাকেই ডাকতে গেল মনোহর। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে মেজাজ চিত্তির হলেও বাচ্চু খানিক হাড়-হিম-করা তাকানো ছুঁড়ে বল্লে, ‘ঠিক আছে’।
রাজহাঁসের শুভ্র পিঠের মত সেদিনকার রাস্তা তিনটে কালো রেখা দিয়ে চিরে অটো গিয়ে থামল হাসপাতালের গেটে। নার্স অন ডিউটির মুখে সেদিন কেমন যেন বিহ্বল ভাব। স্বভাবসুলভ খিঁচুনির ধার দিয়ে না গিয়ে প্রসূতি ওয়ার্ডের মেঝেতেই ব্যবস্থা করে দিলেন। খেটে খাওয়া মানুষের ছা—মাকে মিনিট পনের কষ্ট দিয়ে মুঠি পাকিয়ে মাটিতে নামলে।
সারা দিন ধরেই চ্যানেল রিপোর্টাররা সাদা কলকাতার ধারাবিবরণী দিতে ব্যস্ত ছিল। সেদিন ওদের ক্লান্তি ছিল না। এমন বিষয় যে এই প্রথম, হয়ত বা শেষও, কে জানে। তোলাবাজ, পুলিশি অকর্মণ্যতা, নারীনিগ্রহ--সব থেকে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচা গেল কিছুক্ষণের জন্য। নূতন বিষয় পরিবেশনায় কে কতটা চমকে দিতে পারবে শ্রোতা-দর্শকদের তার রেষারেষি ভাষা চয়নে তো ফুটে উঠেছিলই, কিন্তু তাদের নিজেদের হকচকিয়ে যাওয়াটাও লুকোনো যাচ্ছিল না।
কেমন করে এক অটো ড্রাইভার স্বভাবসুলভ ‘না’ ছেড়ে এমন দিনে এক প্রসূতিকে নির্দ্বিধায় হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে, সে খবরও রিপোর্টারদের কাছে পৌঁছে যাওয়াতে তার সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থাও হয়ে গেল বিভিন্ন চ্যানেলে। বাচ্চু তার বিবরণের মাঝে কেবলই বলতে লাগল ‘সেই আমি--এক অটোওয়ালাই এমন সুন্দর সাদা পথে কালো চাকার দাগ ফেল্লাম। আবার অটো-ড্রাইভারদের বদনাম করলাম।’ ও বোঝেনি সেদিনের সাদা কলকাতায় ও-ই প্রথম যে অটো চালকদের স্বভাববিরুদ্ধ কালিমাবিহীন একটা কাজ করে ফেলেছে।
টি ভি খুললেই স্ক্রীনে দেখা যাচ্ছে সাদা ফাঁকা রাস্তায় আপাদমস্তক শীত পোশাকে ঢাকা রিপোর্টারদের, চোখে তাদের বিস্ময়, ধারাবিবরণী দিতে হয় তাই দেওয়া; নইলে এতো শুধু চুপ করে বিভোর হয়ে থাকার দিন। কলকাতা যেন ওই কখনো না-পড়া সাদা বরফ রক্ষা করতে রুদ্ধশ্বাস হয়ে আছে, ভয় পাচ্ছে এতটুকু দাগ যদি লেগে যায়। তাতে ঘরে যা আছে তাই দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছেন শহরবাসী। যা হোক কিছু খেলেই হল। সাদা যে মনে এত মেনে নেওয়া এনে দিতে পারে জানা ছিল না।
রাত আটটায় ‘ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন’-শোয়ের জন্য সবে রিটায়ার করা ভূদেববাবু, বড়বাজারের গদি-ফেরত গলদঘর্ম শ্যামল ঘোষ দস্তিদার, অঙ্কের মাষ্টারমশাই মধু চকোত্তি উদগ্রীব হয়ে থাকেন। তুখোড় যুক্তি, পয়েন্ট ধরে ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাজে ও বক্তব্যে অমিল খোঁজার এই টক শো যেন ওদের চায়ের সঙ্গে টায়ের মত কাজ করে। আজ তাদের জন্যও বিস্ময় ছিল। নিরলস, অতন্দ্র, দুঁদে সাংবাদিক সেদিন কালো স্যুটের বদলে সাদা সাফারি পরিহিত--হয়ত দিনের সাথে মিল রেখেই, মুখে চোখে এক অপার প্রশান্তি। স্ক্রীনের চৌখুপির মধ্যে নানান রাজনীতিক কইয়ে-বলিয়েরা অনুপস্থিত। সুমন মৃদু হেসে বললেন—‘কার্যকারণে না গিয়ে আজ শুধু এটুকুই বলবো আমাদের আগামী দিনের পরিবর্তন যেন এমনই শ্বেতশুভ্র কালিমাবিহীন হয়—নমস্কার।’
(পরবাস-৭১, ৩০ জুন ২০১৮)