ISSN 1563-8685




ভুল

পাত্রপাত্রী

পৃথা চৌধুরী (দিদিমা)
উপমা চৌধুরী (পৃথার নাতনি)
সায়ক বসু (উপমার প্রেমিক)
আদিত্য চৌধুরী (পৃথার স্বামী)
শ্রেয়া মজুমদার (উপমার মা, পৃথা ও আদিত্যের বড়ো মেয়ে)
ভাস্কর মজুমদার (শ্রেয়ার স্বামী)
দিয়া চৌধুরী (শ্রেয়ার বোন, পৃথা ও আদিত্যের ছোটো মেয়ে)
যুধাজিৎ সামন্ত (আদিত্য ও পৃথার বন্ধু)
অতিথি এবং অভ্যাগতরা (দিয়ার বিবাহে নিমন্ত্রিত)
ডাক্তার অসীম দাশগুপ্ত (পৃথার ডাক্তার)

(গান--তরী আমার হঠাৎ ডুবে যায়। পর্দা উঠবে )

(স্টেজের ডানদিকে একটা রকিং চেয়ার ধীরে ধীরে দুলছে। একপাশে একটা বিছানা, ছোট টেবিল এবং চেয়ার। পৃথা চৌধুরী একলা চেয়ারে বসে আছেন। ডাক্তার অসীম দাশগুপ্তের প্রবেশ।)

ডঃ দাশগুপ্ত--কেমন আছেন আজকে মিসেস চৌধুরী?

পৃথা--চুপ! মিসেস চৌধুরী বলে এখানে কেউ নেই। তোমাকে বলেছি না ডাক্তার ওই অদ্ভুত নামটা ধরে আমাকে ডাকবেনা। এই চেয়ারে বসে আছে শুধু পৃথা। যার পদবী নেই পরিচয় নেই।

ডঃ দাশগুপ্ত--আবার মন খারাপ করেছেন। এই দেখুন আপনার নাতনি এসেছে দেখা করতে। একটা ভালো খবরও আছে।

(উপমা ও সায়ক ঢোকে)

উপমা--কেমন আছো দিদান?

পৃথা--পম এসেছিস। বোস মা। এতদিন বাদে পাগলি দিদানকে মনে পড়লো।

উপমা--দিদান! এই তো কয়েক দিন আগেই এলাম, তোমার পছন্দের রজনীগন্ধা নিয়ে। ওই দেখো তোমার ফুলদানিতে এখনো দিব্যি আছে।

পৃথা--তাইতো। আজ সকালেও ওদের গন্ধ পেলাম। মনে হলো বাড়ির বারান্দায় বসে আছি। সব ভুলে যাই তো আজকাল। (সায়কের দিকে তাকায়, তারপর ডঃ দাশগুপ্তের দিকে) ডাক্তার এ ছেলেটি কে, তোমার অ্যাসিসট্যান্ট নাকি?

পৃথা--না দিদান, ডাক্তার নয় ও আমার বন্ধু, সায়ক।

(সায়ক এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করতে চেষ্টা করে কিন্তু পৃথা খুব অস্বস্তির সঙ্গে পা সরিয়ে নেন।)

পৃথা--থাক থাক, আপনি বসুন। অবশ্য বসবেনই বা কোথায়। আরেকটা চেয়ার যদি থাকতো (অস্থির হয়ে এদিকে ওদিকে তাকান)

ডঃ দাশগুপ্ত--আমি এখুনি আরেকটা চেয়ার পাঠিয়ে দিচ্ছি। (উপমার কানে ফিসফিস করে কিছু কথা বলে, উপমা ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানায়। ডঃ দাশগুপ্ত বেরিয়ে যান।)

উপমা--দিদান শোনো, এই ছেলেটাকে দেখো না একটু। পছন্দ হয়?

পৃথা--পছন্দ? মানে?

উপমা--(পৃথাকে জড়িয়ে ধরে) দিদান আমি ওকে বিয়ে করবো ঠিক করেছি, আমরা তোমার আশীর্বাদ চাই।

পৃথা--(একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে) বিয়ে করবে? কিন্তু ওকে তো আমি চিনি না। ওর বাড়ির লোক কোথায়? আর তোমার মা? তোমার মা, মাসিমণি, এরা সব কোথায় গেলো? (উদ্‌ভ্রান্ত চোখে চারদিকে তাকায়) শ্রেয়া, দিয়া কোথায় গেলি, দেখ তো এই মেয়েটা কি বলছে।

উপমা--মা কেমন করে আসবে দিদান। তাছাড়া আমি তো তোমার সঙ্গেই কথা বলতে এসেছি।

পৃথা--তাই তো, সে কি করে আসবে। সে তো চলে গেছে। স্বার্থপর মেয়ে আমাদের কথা একবারও না ভেবে চলে গেল, আমাদের এই অন্ধকারে ফেলে রেখে। ছেলেমেয়েরা এমনই নেমকহারাম হয়।

উপমা--দিদান, বাবা ছাড়া আমার পরিবারের লোক বলতে শুধু তুমি আর মাসিমণি। আমি চাই পুরনো কথা ভুলে গিয়ে আমার বিয়েতে তোমরা সবাই থাকো।

পৃথা--(শিউরে ওঠে) না না, আমি কোনো বিয়েতে থাকবো না। আমার ওপর অভিশাপ আছে, আমি থাকলে তোর সর্বনাশ হবে। আর তোর বাবা! সে তো একটা মাতাল আর চরিত্রহীন, ওর মুখ দেখলেও গঙ্গাস্নান করতে হয়। তোকে বারবার করে বলেছিনা, ওই লোকটার ছায়া মাড়াবি না কোনোদিন। আর আমার ছোট মেয়ে? আমি ওরও মুখ দেখতে চাইনা!! আর তুমি। (সায়কের দিকে তাকিয়ে) তুমি, তুমি কেন আমার নাতনির সর্বনাশ করতে এসেছ?

উপমা--দিদান আমার সামনে বাবাকে খারাপ কথা বোলোনা প্লীজ, আমার কষ্ট হয়। সায়ক আমার সহপাঠী, অনেক দিনের বন্ধু, আমরা একসঙ্গে বড়ো হয়েছি। তুমি শান্ত হয়ে বসে আমার কথাগুলো একবার শুনবে তো।

পৃথা--না, না আমি কোন কথা শুনতে চাইনা। কেউ কাউকে চেনে না। অল্পবয়েসে সবাই সুন্দর সুন্দর মুখোস পরে ঘুরে বেরায়। তোকে বলছি শোন, পুরুষমানুষের প্রেমের গল্পে যে বিশ্বাস করবে সেই পস্তাবে।

উপমা--(হেসে ফেলে) তা হলে তো বিয়ে করার আশাই ছাড়তে হয়।

পৃথা--বিয়ে করবি না কেন? আমি যে এদিকে তোর জন্য রোজ এতো ভালো ভালো পাত্র দেখছি। ভালো পরিবারের সব ছেলে, নিজের জায়গায় নিজের ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত, কোন ভুঁইফোঁড় মেয়ে পটানো রোমিও নয়। তোরই তো কাউকে পছন্দ হয়না।

উপমা--তোমাকে বলেছিনা আমি অচেনা লোককে বিয়ে করবোনা।

(সায়ক কি একটা বলতে যায় কিন্তু তার আগেই পৃথা ফেটে পড়েন)

পৃথা--তোকেও ওই এক অভিশাপে ধরেছে। আমার মায়ের অভিশাপ, এই বাড়ির মেয়েরা মা-বাবার অমতে বিয়ে করলে তারপর সারা জীবন জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাবে। না না কিছুতেই না। (হাঁপাতে থাকে) ওঃ আমার বুকে ব্যথা করছে। ডাক্তার, ডাক্তার কোথায় গেলে। আমি যে শ্বাস নিতে পারছিনা?

(ডাক্তার দাশগুপ্ত ঢোকেন)

পৃথা--ডাক্তার আমাকে ওই ঘুমের ওষুধটা দিতে পারো? আমার খুব ঘুমিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে।

ডঃ দাশগুপ্ত--দেবো, আপনি একটু শান্ত হোন, আমি ওষুধটা নিয়ে আসছি। আপনারাও একটু এদিকে আসুন তো। (তিনজনে স্টেজের একধারে সরে যায়) আপনাদের আগেই বলেছিলাম উনি শুনবেন না। শুধু শুধু উত্যক্ত হবেন, অসুখটা আবার খারাপের দিকে চলে যাবে।

উপমা--ডঃ দাশগুপ্ত, আপনিই তো বলেন এই একটা অবসেশন ছাড়া দিদান ভালোই আছে। অন্যান্য মেন্টাল ফ্যাকাল্টি একটুও কমেনি। কি দারুণ গান করেন, ছবি আঁকেন, বাংলা বই পড়েন সারাদিন।

ডঃ দাশগুপ্ত--আপনারা বুঝতে পারছেন না, উনি এই কন্ট্রোলড পরিবেশে ওষুধের ওপর আছেন বলে ভালো আছেন। শি হ্যাজ সাইকোটিক ডিপ্রেশন, যে কোন সময়ে রিল্যাপস করতে পারে।

সায়ক--সাইকোটিক ডিপ্রেশন কাকে বলে আমি জানিনা, তাও মনে হচ্ছে আজকের জন্য যথেষ্ট হয়েছে। হয়তো বিয়েটা হয়ে গেলে উনি শেষ অবধি মেনে নেবেন।

উপমা--ডঃ দাশগুপ্ত, আপনারও কি তাই মত।

ডঃ দাশগুপ্ত--(চিন্তিত গলায়) হ্যাঁ বলতে পারলে খুশি হতাম কিন্তু আনফরচুনেটলি এইটাই ওঁর পুরো অসুস্থতার কেন্দ্রবিন্দু। সারাদিন উনি নানান কাগজের ম্যাট্রিমনিয়াল কলাম দেখেন, আজকাল ইন্টারনেট ব্যবহার করতেও শিখে গেছেন। নাতনির জন্য পৃথিবীর এক নম্বর এলিজিবল ব্যাচেলরটিকে খুঁজে বার করাই ওনার বেঁচে থাকার একমাত্র সুখ। উপমা যে পত্রপাঠ তাকে রিজেক্ট করে দেবে উনি তা জানেন কিন্তু তাতেও আপত্তি নেই। এই অচ্ছেদ্য চক্রটি বন্ধ হয়ে গেলে, অর্থাৎ উপমা একবার বিয়ে করে ফেললে, উনি আবার ডিপ্রেশনের কুয়োর মধ্যে নেমে যাবেন।

সায়ক--কি সাংঘাতিক ব্যপার। উনি কি চান সময় থেমে থাকবে, সম্বন্ধ দেখাও শেষ হবেনা, ওঁর নাতনির বিয়েও হবেনা।

(চেয়ার থেকে পৃথার গান ভেসে আসে--লাজে রাঙ্গা হল কনে বউ গো।)

ডঃ দাশগুপ্ত--সায়কবাবু সমস্যাটা আপনাকে বুঝিয়ে বলছি। পৃথা দেবীর বদ্ধমূল ধারণা যে ওঁর পরিবারের কোনো মেয়ে যদি বাড়ির অমতে নিজের পছন্দমতন ছেলেকে বিয়ে করে, তাহলে তারা কিছুতেই সুখী হবেনা, তাদের সংসারের ওপরে ওপর দুর্ভাগ্য নেমে আসবেই আসবে। এইটাকে আমরা প্যারানয়েড ডিলিউশন বলি। এখন বছরের পর বছর ধরে উনি নাতনির জন্য ছেলে খুঁজে যাচ্ছেন, তার মধ্যে নাতনি কলেজ, ইউনিভার্সিটি শেষ করে পি-এইচ-ডিও প্রায় শেষ করে আনলো। এর মধ্যে উনি একটা কাল্পনিক ঘরোয়া পরিবেশ বানিয়ে ফেলেছেন, সেখানে ওঁর স্বামী আর স্বামীর বন্ধু রয়েছে, উপমার মা রয়েছে, যারা সকলেই অনুপস্থিত। তাদের সঙ্গে উনি কথা বলেন, ঝগড়া করেন, শলাপরামর্শ করেন, যাকে আমরা বলি হ্যালুসিনেশন। এইসব নিয়ে নিজের তৈরি করা ভুবনে উনি মোটামুটি ভালোই থাকেন। কিন্তু কেউ যদি কোনোভাবে ওঁর ভুল ভাঙিয়ে দিতে চায়, কন্ট্রাডিক্ট করে, যদি বাস্তব কোন উপায়ে ওঁর সামনে এসে যায়, প্রথমে উনি প্রচণ্ডভাবে রিয়াক্ট করেন। তারপরেই শুরু হয় সারাদিন ধরে কান্নাকাটি, খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, আত্মহত্যার চেষ্টা--মোটকথা গভীর ডিপ্রেশন, যা থেকে রোগীর প্রাণসংশয় হতে পারে। ওই অবস্থা থেকে ওঁকে বার করে আনতে আমাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।

সায়ক--(হতাশভাবে) আমি বুঝতে পারছিনা ডাক্তারবাবু। এর কি কোন চিকিৎসা আছে?

ডঃ দাশগুপ্ত--অনেক চেষ্টা হয়েছিল, লাভ হয়নি।

উপমা--(হতাশ গলায়) আমার ধারণা, একটু ধৈর্য্য আর সহানুভূতি নিয়ে আস্তে আস্তে এগোলে দিদান বুঝবে, কিন্তু কেউ হয়তো আমাকে বিশ্বাস করবেনা। ঠিক আছে চল। দিদান আমি পরে আসবো।

(ওরা একে একে বেরিয়ে যাচ্ছে। ডঃ দাশগুপ্ত ওষুধ দিলেন।)

ডঃ দাশগুপ্ত--পৃথাদি আমি আসছি। কোনো দরকার হলেই নার্সকে ডাকবেন।

(ডঃ দাশগুপ্ত বেরিয়ে যান। পৃথা নিজের মনে কথা বলছেন। মঞ্চ ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসবে)

পৃথা--সেই উৎসবের দিন আর দুঃস্বপ্নের রাত্রি। যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙলো ঝড়ে। কেউ তো আসেনি, আমি একাই শুধু সেই ভাঙা দরজার টুকরোগুলোকে দুহাতে আঁকড়ে ধরে বসে আছি।

(গান--জানি নাই তো তুমি এলে আমার ঘরে। যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙলো ঝড়ে)



(বিয়েবাড়ির পরিবেশ। সুসজ্জিত একটি বসার ঘর। নেপথ্যে সানাই। পৃথা, আদিত্য আর যুধাজিৎ ঢোকেন। আদিত্য হুইলচেয়ারে।)

যুধাজিৎ--বউদি কেমন বুঝছেন? মনের মতন হয়েছে তো সব?

পৃথা--কি বলবো বলুন ঠাকুরপো, আপনি আর আপনার বন্ধু দুজনেই যেরকম পারফেকশনিস্ট। তাছাড়া হিসাবের খাতার দিকে কারোরই কোনো নজর নেই। তবে মানতেই হবে অপূর্ব লাগছে।

আদিত্য--আমাদের বাড়িতে কতদিন বাদে এই উৎসব পৃথা। এ কি হিসাব করার সময়!

পৃথা--(হেসে) হিসাব করার সময় তোমার কি কোনোদিন ছিল? না কি কোনোদিন হবে। (যুধাজিতের দিকে তাকিয়ে) আমি জানি না যুধাজিৎদা কোথা থেকে টাকা আসছে, কি হচ্ছে, তবে আজ এসব কথা ভাবতে চাইনা। আজ আমার বড়ো আনন্দের দিন, আমি প্রাণ ভরে আনন্দ করতে চাই।

(দিয়া ঢোকে। বধূবেশ)

দিয়া--মা, দেখো তো সব ঠিক আছে কিনা?

(দুজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শাড়ি, খোঁপা, গয়না ইত্যাদি নিয়ে মেয়েলি আলাপ কিছুক্ষণ। আস্তে আস্তে ওরা স্টেজের বাইরে চলে যায়।)

যুধাজিৎ--(স্টেজের এক কোণায় সরে এসে) তোর মনে পড়ে আদিত্য, বৌদিকে নিয়ে যখন পালিয়ে এসেছিলি? তোদের বিয়েতে আমি সাক্ষী দিয়েছিলাম। কোথা দিয়ে সময় বয়ে যায় বলতো?

আদিত্য--ওই সব কথা মুখেও আনিসনা। তোর বৌদি এখন ভয়ংকর রকম অর্থোডক্স, আদি শঙ্করাচার্যের নিজের বোন বললেও হয়। দেখে, শুনে, কুষ্ঠী মিলিয়ে, রিলায়েবল বনেদী পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে ভাব, ভালোবাসা, ইলোপমেন্ট ইত্যাদি হৃদয়ঘটিত কেলেঙ্কারির কথা তুলেছিস কি মরেছিস।

যুধাজিৎ--আশ্চর্য না রে, মানুষ কিভাবে বদলে যায়। একসময় তোর ওই ডিফায়েন্ট, উস্কোখুস্কো, বিপ্লবী বিপ্লবী ভাবটাই বউদির কাছে অ্যাট্রাকটিভ ছিল।

আদিত্য--মানুষ বদলায় বলেই বাঁচে। আমাকে দ্যাখ, বদলাতে পারলাম না, সারাজীবন তোর বৌদির ওপরে বোঝা হয়েই রইলাম।

যুধাজিৎ--সেটা তোর দোষ নয়। অসুস্থতার ওপরে কারো হাত নেই। তাছাড়া আজকের দিনে তুই এইসব ডিপ্রেসিং কথাবার্তা এক্কেবারে বলবিনা।

(শ্রেয়া আর ভাস্কর ঢোকে। শ্রেয়া যুধাজিৎকে প্রণাম করে)

শ্রেয়া--কাকাবাবু ভালো আছেন আপনি? কতদিন পরে দেখা।

যুধাজিৎ--কেমন আছিস শ্রেয়া। বোসো ভাস্কর, শুনলাম তোমার নাকি এখন যাকে বলে তুঙ্গে বৃহস্পতি। বাবা হয়েছো, কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হয়েছো, নতুন ফ্ল্যাটে মুভ করেছো (আদিত্যকে) কি আমি বলেছিলাম কিনা, এই ছেলেকে নিয়ে তোমরাই একদিন গর্ব করবে।

ভাস্কর--হ্যাঁ, মনে আছে সেই সময় একমাত্র আপনিই আমার ওপর ভরসা করেছিলেন।

শ্রেয়া--আঃ, ভাস্কর, তুমি আবার ওইসব পুরনো কোথা তুলছো কেন। বাবা, কাকাবাবু, তোমরা একটু ভেতরের ঘরে যাও, মা ডাকছে। ওদের বাড়ি থেকে তত্ত্ব এসে পড়লো বলে, আমি আর ভাস্কর ওঁদের এঘরে বসাচ্ছি।

যুধাজিৎ--বেশ বেশ। এসো আদিত্য আমরা তোমার ঘরে গিয়ে বসি বরং ( আদিত্যের হুইলচেয়ার ঠেলে বেরিয়ে যান)।

শ্রেয়া--কি হয়েছে বলতো তোমার, সকাল থেকে আপসেট হয়ে আছো, ব্যপারটা কি?

ভাস্কর--আপসেট হবো কেন? যা সত্যি তাই বললাম। আমাদের বিয়ের সময় একমাত্র প্রফেসর সামন্তই আমাদের সাপোর্ট করেছিলেন, তোমার বাবা-মা তো আমাকে একটা লোফার ছাড়া কিছুই ভাবতেন না। এখন সাকসেসফুল হয়েছি বলে সবার মুখ বন্ধ হয়েছে, এখন এমন জামাই আর হয়না।

শ্রেয়া--ভাস্কর ইউ আর সাচ আ লায়ার! বাবা কোনোদিন তোমাকে অপছন্দ করেনি। মানছি যে মায়ের একটা অবশেসন আছে, কিন্তু আজকের দিনে সেসব কথা কি না তুললেই নয়? তোমার কাছে এইটুকু সেন্সিটিভিটি আশা করেছিলাম।

ভাস্কর--অবশ্যই অবশ্যই, আজকে তো তোমাদের মহা আনন্দের দিন। শেষ অবধি ঠিকুজি কুষ্ঠি মিলিয়ে, সম্বন্ধ করে, নামজাদা পরিবারের রাজযোটক জামাই পাওয়া গেছে। তোমার মা এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন।

শ্রেয়া--আমি মাঝে মাঝে তোমাকে চিনতে পারিনা ভাস্কর। তখন মনে হয় মায়ের কথা শুনলেই পারতাম।

ভাস্কর--ওই সেই তাই নাকি? তাহলে ভুলটা শুধরে নিলেই হয়। দেরি কিসের?

শ্রেয়া--দেরি মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে। তুমি বুঝবে না ভাস্কর। তোমার পায়ে পড়ি, আজকের দিনটার মতন রেহাই দাও, চেষ্টা করে একটু ভদ্র ব্যবহার করো সকলের সঙ্গে। ভাস্কর! (কাছে এগিয়ে গিয়ে গন্ধ শোঁকে) মাই গড, আজকেও তুমি সকালবেলায় ড্রিংক করেছো!

ভাস্কর--বেশ করেছি। আমি নিজের পয়সায় মদ খাই। বিয়ের সময় টাকা, সম্পত্তি জিনিসপত্রের লেনদেন করিনা। আই অ্যাম টায়ার্ড অফ দিস প্রিটেনশন। ভেতরের সম্পর্ক যতোই ক্ষয়ে যাক বাইরের চেহারাটা ভালো করে সাজিয়ে রাখতে হবে। নাহলে লোকে বলবে কি? তোমার ফ্যামিলির বদনাম হয়ে যাবে যে। (বেরিয়ে যায়)

শ্রেয়া--অনেকে ডিসেন্সি বজায় রাখতে চায়। তোমাদের ফ্যামিলিতে অবশ্য ওসবের বালাই নেই কারণ সবাই তো তোমারি মতন অ্যালকোহলিক, তাইনা?

(দিয়া ঢোকে। তাড়াতাড়ি সামলে নেয় শ্রেয়া) বাঃ তোকে কি সুন্দর লাগছে রে দিয়া।

দিয়া--দিদি, কি হয়েছে রে। তোর চোখে জল, মুখটা লাল হয়ে গেছে। আবার ঝগড়া করেছিস ভাস্করদার সঙ্গে?

শ্রেয়া--না না, ও কিছু না, রোজকার ব্যাপার। তুই এখানে একটু বোস না দিয়া। আমি দেখি ওবাড়ি থেকে কেউ এলো কিনা। তোর হবু দেওর ফোন করে বলেছিল পাঁচ মিনিট দূরে, এ তো প্রায় পনেরো মিনিট হতে চললো।

দিয়া--আমাকে বলল রাস্তায় নাকি একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তাই ট্র্যাফিক জ্যাম।

শ্রেয়া--তাই হবে। আমাদের গলির মুখে বড়োরাস্তাটায় যেমন বিচ্ছিরি ট্র্যাফিক। বাসগুলো যেমন ইচ্ছে চালায়। রোজ দুবেলা যে অ্যাক্সিডেন্ট হয়না এই যথেষ্ট।

(খুব ব্যস্তভাবে শ্রেয়া বেরিয়ে যায়। দিয়ার হাতের ফোনটা বেজে উঠেছে। চাপা গলায় এদিকওদিক তাকিয়ে দিয়া উত্তর দেয়, ওর হাবভাবে অস্বস্তি।)

দিয়া--ভাস্করদা তুমি কথা দিয়েছিলে এই সময়টা ঝগড়াঝাঁটি, অশান্তি করবেনা, সোবার থাকবে।

(কয়েক মিনিটের নীরবতা। দিয়া ফোনে টেক্সট করতে করতে একবার বসছে, একবার উঠে পায়চারি করছে। ভাস্কর ঢুকল)

ভাস্কর--বাঃ, দারুণ সেজেছ দেখছি। গায়ে হলুদের সময় থেকেই দেখছি মুখে আর হাসি ধরছেনা। অবশ্য বড়লোকের বাড়ির বউ হতে চলেছ, আনন্দ তো হওয়ারই কথা।

দিয়া--ভাস্করদা তোমাদের মধ্যে কি হচ্ছে আমি জানিনা। কিন্তু আজকের দিনে তোমার সুস্থ, স্বাভাবিক থাকাটা ভীষণ দরকার। ফর মাই সেক। তুমি তোমার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছো। তোমার কাছে এটা আশা করিনি ভাস্করদা।

ভাস্কর--(হিসহিস করে) ফর ইয়োর সেক। তোমরা মেয়েরা অদ্ভুত সত্যি। ফ্লার্ট করার সময় বিপ্লবী চাই কিন্তু বিয়ে করার সময় ভেড়ুয়া। বিয়ের আগে মীরাবাঈ, বিয়ের পরে হিটলার। যেমন তোমার মা আর দিদি তেমন তুমি। ফেক, কনফরমিস্ট, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলার একদল। তুমি কি করে সম্বন্ধ করে অপরিচিত লোককে বিয়ে করতে রাজি হলে দিয়া।

দিয়া--যেমনভাবে তুমি অ্যালকোহলিক হয়ে উঠলে, বড়ো চাকরি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যারোগ্যান্ট হয়ে উঠলে, এমনকি তোমার পলিটিক্যাল মতামতও বদলে গেল। তোমাকেও তো আজকাল অপরিচিত মনে হয় ভাস্করদা।

ভাস্কর--আমি অ্যারোগ্যান্ট হলে তোমরা অপ্রেসর ছাড়া কিছু নও। একটা সময় ছিল যখন তুমি আমাকে বুঝতে, আমার সঙ্গে সময় কাটাতে। তোমরা দুজনেই বদলে গেলে। সব মেয়েরাই বদলে যায়। সুশীল সমাজের মুখপাত্র হয়ে ওঠে সবাই।

দিয়া--দ্যাটস অ্যালকোহল স্পিকিং ভাস্করদা। অ্যালকোহলিক হয়ে উঠলে তুমি শুধু নিজের কষ্টই বাড়াবে না, তার সঙ্গে সঙ্গে আরো অনেক লোকের কষ্টের কারণ হবে। ইউ উইল নট ডেন্ট দা সোসাইটি ইভন আ লিটল বিট।

ভাস্কর--(দিয়াকে কাছে টেনে নিয়ে অস্বাভাবিক গলায়) ওকে ওকে আই উইল সোবার আপ। হোয়াট অ্যাবাউট আ ফেয়ারওয়েল কিস, দিয়া। দ্যাট উডনট হার্ট।

দিয়া--তুমি কি পাগল হয়ে গেছো। নাকি ড্রাঙ্ক (জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ভাস্করকে জোরে ধাক্কা মারে। ব্যালেন্স হারিয়ে ভাস্কর পড়ে যায়। উল্টোদিক থেকে শ্রেয়া ঢুকছে।)

শ্রেয়া--এ কি হচ্ছে এখানে? ভাস্কর কি করছিলে তুমি দিয়াকে!! তুমি, তুমি এতো নীচে নেমেছ! আমি ভাবতে পারছিনা, আজকে মেয়েটার বিয়ের দিনে তুমি!

(দিয়া দিদিকে জড়িয়ে ধরে)

দিয়া--ওঃ দিদি।

শ্রেয়া--ভাস্কর তুমি এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও, নাহলে আমি পুলিসে খবর দেবো। মা আগাগোড়াই ঠিক ছিল, আমিই বোকার মতন তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। লম্পট, বেহায়া, জানোয়ারের অধম!

ভাস্কর--সে কি গো। আমি বেরিয়ে গেলে লোকে বলবে কি? কুটুমদের কাছে তোমার মানসম্মান থাকবে কোথায়? হাজার হোক ঘোমটার আড়ালে খ্যামটা নাচাই তো তোমাদের ফ্যামিলি ট্র্যাডিশন। তোমার বোন যে এখন সতী সেজে বিয়ে করে চলেছে, ওকেই জিগ্যেস করোনা আমার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলগোছে কতো রকম ফ্লার্ট করেছে এতদিন। বিশ্বাস না হয় ওর ফোনটা একটু নেড়েচেড়ে দেখোনা।

(দিয়া চমকে উঠে সরে দাঁড়ায়।)

শ্রেয়া--দিয়া!!! কি বলছে ও।

দিয়া--দিদি দোজ ওয়্যার ইনোসেন্ট জোকস। জামাইবাবু আর শালীর মধ্যে ইয়ার্কি। ও পুরোপুরি ড্রাঙ্ক, তুই ওর কথা বিশ্বাস করছিস।

শ্রেয়া--তোর ফোন দে আমায়।

দিয়া--দিস ইজ টু মাচ দিদি।

(ঘরের মধ্যে নিস্তব্ধতা। ভাস্কর উঠে শ্রেয়ার কাছে যায়)

ভাস্কর--শ্রেয়া শোনো, আই অ্যাম সরি, আমার মাথার ঠিক ছিলোনা।

শ্রেয়া--না আ আ আ--

(বিকট একটা চিৎকার করে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। দিয়া আর ভাস্কর ওর পিছনে পিছনে। অন্যদিক থেকে হুইলচেয়ার চালিয়ে আদিত্য ঢোকেন, তাঁর পিছনে পিছনে পৃথা আর যুধাজিৎ। প্রচণ্ড হট্টগোল। নেপথ্যে ভাস্করের গলা শোনা যায়--শ্রেয়া থামো, ওরকম ভাবে ছুটোনা, পড়ে যাবে।)

নেপথ্যে দিয়া--দিদি আমার কথাটা একটু শোন।

(টানা হর্ন আর ব্রেক কষার শব্দ। ওঃ মা গো বলে একটা চিৎকার। উল্টোদিক থেকে তত্ত্বের থালা নিয়ে অপরিচিত একজন ঢোকে, তার হাত থেকে থালাটা মাটিতে পড়ে যায়।)

যুধাজিৎ--গলির মোড়ে শ্রেয়া গাড়ী চাপা পড়েছে। হায় ভগবান।

(আলো নিভে যাবে। যন্ত্রসঙ্গীত)


(স্টেজে টেবিল ও তিনটি চেয়ার। উপমা ও সায়ক)

উপমা--মানুষ একটা ভুলের ফয়সালা করতে গিয়ে তিনটে ভুল বানিয়ে বসে। কেন বলতো?

সায়ক--কারণ মানুষ নিজেকে অভ্রান্ত মনে করে। অন্যের সমালোচনা করে আকাশ ফাটায় কিন্তু নিজের একটা দোষ স্বীকার করার আগে তিনটে অজুহাত খাড়া করে।

উপমা--কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের পরিবারটা যাকে বলে ছারখার হয়ে গেল। মা সঙ্গে সঙ্গে মারা যায়নি, হাসপাতালে কার সঙ্গে কি কথা হয়েছিল আমি জানিনা, কিন্তু মাসিমণি বিয়ে তো ভেঙে দিলোই, কিছুদিনের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। প্রথমে দিল্লী, তারপর সেখান থেকে ইংল্যান্ড। ওখানেই বিয়ে, সংসার সবকিছু।

সায়ক--উনি দেশে আসেন না কখনো? মানে তোর দিদিমার সাথে দেখা করতে।

উপমা--নোপ। দাদুন মারা যাবার সময় এসেছিল, তাও তো প্রায় দশ বছর হতে চলল।

সায়ক--কি আশ্চর্য। নিজের মা কে এভাবে একলা ফেলে রেখে।

উপমা--ওইটাই তো। আই থিংক শী ইস টেরিফায়েড টু ফেস হার। কলকাতার স্মৃতি মাসিমণির কাছে এতটাই ট্রম্যাটিক যে জীবনের ওই অংশটা ও যেন জোর করে ভুলে যেতে চায়।

সায়ক--দেখ পম, আমার মনে হয় তুই এই পারিবারিক ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশনের প্ল্যানটা ছেড়ে দিলেই পারিস। ব্যাপারটা এতই ঘেঁটে গেছে যে ভালো করতে গিয়ে বেমক্কা আরো খারাপ করে ফেলবি। তুই একটা নতুন পরিবারে আসতে চলেছিস, সেখানে কেউ তোর অতীত ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামায়না।

উপমা--বাবাও তাই বলছে। সায়ক তুই অন্ততঃ আমার পাশে থাক। কতগুলো ভালো মানুষ শুধু একটা ভুল বোঝাবুঝি, একটা দুর্বলতার জন্য সারাজীবন সাফার করে যাবে এটা আমি সহ্য করতে পারিনা রে। শুধু স্বার্থপরের মতন নিজেরটুকু গুছিয়ে নিয়ে সরে পড়তে আমার ভালো লাগে না।

(ভাস্কর ঢুকলেন। বয়স্ক চেহারা)

উপমা--বাবা এসো। মাসিমণিও এসে পড়লো বলে। আমরা সবাই একসঙ্গে দিদানের কাছে যাবো।

ভাস্কর--পম, আশা করি তোরা ভেবেচিন্তে কাজটা করছিস। আমার কিন্তু খুব অস্বস্তি হচ্ছে। শেষে হিতে বিপরীত না হয়ে যায়।

সায়ক--আমিও সেই কথাই ওকে বলছিলাম। উনি মানসিকভাবে সুস্থ নন, কি দরকার ওঁকে নিয়ে টানাটানি করে।

উপমা--সায়ক আমাদের বিয়ে করারই বা কি দরকার বলতে পারিস।

সায়ক--তার মানে?

উপমা--মানে আমরা তো যেমন থাকছিলাম তেমনি থাকতে পারতাম। যতদিন ভালো লাগতো থাকতাম, তারপর যে যার রাস্তায় চলে যেতাম।

সায়ক--যাচ্চলে। এ দেখি বেমক্কা ক্ষেপে যায়। সাবধান থাকতে হবে।

ভাস্কর--হয়তো সেটাই ঠিক কিন্তু এর মধ্যে একটা প্রশ্ন আছে। আমি তোর মা বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিলাম, আমার শ্বশুর শাশুড়িও তাই। সকলের শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদ নিয়ে আমরা জীবন শুরু করিনি। করলে কি অন্যরকম কিছু হতো? কে জানে?

উপমা--জানিনা বাবা কিন্তু আমি সকলের শুভেচ্ছা আর আশীর্বাদ নিয়েই জীবন শুরু করতে চাই। নয়তো এক গাদা পয়সা খরচ করে এই অনুষ্ঠান করার কোন লজিক খুঁজে পাইনা আমি। একসময় ছেলেমেয়েদের একসাথে থাকার জন্য এটা জরুরী ছিল, কিন্তু আজকে তো আর সেটা নেই।

সায়ক--মাঝে মাঝে তোর কথাবার্তার কোন মাথামুণ্ডু বুঝতে পারিনা পম। সামাজিকভাবেই হোক আর অসামাজিক ভাবেই হোক আমি তোকে আমার স্ত্রী হিসাবে দেখতে চাই। আমার তো কোনো হিডেন অ্যাজেন্ডা নেই। আমার কাছে বিয়ে মানে একটা লিগ্যাল চুক্তি আর সেলিব্রেশন। তার চেয়ে বেশিও না কমও না।

ভাস্কর--সায়ক, পম, তোমাদের দুজনকেই বলছি। একটা সময় আমি বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে রীতিমতন ঘৃণা করতে শুরু করেছিলাম। মনে হয়েছিল ব্যপারটা শুধু জমি দখলের লড়াই, একজনের ওপরে অন্যজনের নিরঙ্কুশ মালিকানা কায়েম করার চক্রান্ত। আমার মনে হয়েছিল বিয়ে মানেই প্রেমের মৃত্যু। আজকে অনেক ঘা খাবার পরে আমি জানি যে সেটা সত্যি নয়। কিন্তু সত্যিটা যে কি আমি তাও জানিনা। তোমাদের পথ দেখাবার সামর্থ্য আমার নেই তবে এইটুকু বলতে পারি যে সব সময় তোমাদের সঙ্গে থাকবো।

উপমা--সেটাই যথেষ্ট বাবা। একটা কথা বলতো, তুমি আমাকে একলা বড়ো করে তুললে কেন। কেন আমার বাবা, মা, শিক্ষক, বন্ধু সব একসঙ্গে হলে? তুমি তো আবার বিয়ে করে নতুন সংসার পাততে পারতে। কে আটকাল তোমায়?

ভাস্কর--হয়তো গিল্ট কিংবা অনুতাপ, প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য একটা অযৌক্তিক ইচ্ছা। হয়তো অসহায় ছোট মেয়েটার প্রতি প্রোটেকটিভ ইন্সটিংক্ট। সব ভাসিয়ে দেওয়া একরকমের গভীর এমপ্যাথি, দায়িত্ববোধ। জানিনা রে মা, বোঝাতে পারবোনা আমি নিজেই এখনো বুঝতে পারিনি।

উপমা--কিন্তু এই যে সব অপোজিং হিউম্যান ফীলিংস--একদিকে লোভ, ঘৃণা, অ্যাগ্রেশন, অন্যদিকে অনুতাপ, কমপ্যাশন, ক্ষমা। এগুলো আছে বলেই তো আমরা মানুষ। এই ফীলিংসগুলোর জন্যেই মানুষ ভুল করে, ভুল শোধরায়, লড়াই করে, স্যাক্রিফাইস করে। অন্যদিকে সায়ক যা বলছে সেটা প্র্যাকটিক্যাল হলেও ইমোশন্যালি স্টেরাইল। আমি সব জেনেও ওটা মেনে নিতে পারিনা।

সায়ক--এই গেল যা। শেষ অবধি আমার দিকেই বন্দুকের নলটা ঘুরে গেল। দেখ পম, আমার পার্সোনাল মতামত যাই হোক না কেন, উই আর ইন দিস টুগেদার। বিয়ে কিংবা নো বিয়ে, আমার বন্ধুত্বের হাত তোর জন্য সব সময় বাড়ানো আছে।

(নেপথ্যে গান শোনা যাবে। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ )

“হাতখানি ওই বাড়িয়ে আনো

দাও গো আমার হাতে

ধরবো তারে, ভরবো তারে, রাখবো তারে সাথে

একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়”

(দিয়াকে নিয়ে যুধাজিৎ ঢোকে। দুজনেরই বয়েস বেড়েছে।)

যুধাজিৎ--পম, তোর মাসিমণিকে মুম্বাই এয়ারপোর্ট থেকে পাকড়াও করে নিয়ে এলাম। আসতে চাইছিল না তাই জোর করেই আনতে হল। কি বলো দিয়া।

উপমা--মাসিমণি!

দিয়া--পম! আমাদের সেই ছোট্ট মেয়েটা!

(দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। ভাস্কর বেরিয়ে যেতে চাইছিল, যুধাজিৎ তাকে আটকায়। একটু বাদে ভাস্করের দিকে চোখ ফেরায় দিয়া।)

দিয়া--কেমন আছো ভাস্করদা?

ভাস্কর--ভালো, তুমি?

দিয়া--ভালো।

(সায়ক এসে উপমার পাশে দাঁড়ায়। ওরা দুজনে দুজনের হাত ধরবে। যুধাজিৎ চশমা খুলে চোখ মোছেন। ভাস্কর আর দিয়া নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছেন। নেপথ্যে গান চলছে-

এ আঁধার যে পূর্ণ তোমায় সে কথা বলিও

মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিয়ো

শুধু তোমার বাণী নয় গো হে বন্ধু হে প্রিয়।

ধীরে ধীরে আলো নিভে আসবে)


(পৃথার নার্সিং হোমের ঘর। রকিং চেয়ারে বসে পৃথা, পাশের চেয়ারে ডক্টর দাশগুপ্ত। উপমা ঢোকে)

উপমা--এখন কেমন আছো দিদান। নমস্কার ডঃ দাশগুপ্ত। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে আর ছোট করবোনা।

পৃথা--ভালো আছি রে। ডাক্তার এমন ওষুধ খাইয়েছে, সারাদিন খালি ঘুম পায়।

ডঃ দাশগুপ্ত--(উপমার দিকে ফিসফিস করে) প্রেশার কন্ট্রোলে, ঘুম হচ্ছে, হ্যালুসিনেটরি সিম্পটমগুলোও দেখছিনা। এখনই আবার ওই কথা না তুললেই নয়।

উপমা--ডাক্তারবাবু দিদানের ছোটমেয়ে লন্ডন থেকে এসেছে, আমার দাদুনের এক ছোটবেলার বন্ধু এসেছেন মুম্বাই থেকে। আমাদের বিয়ের তারিখও ঠিক, সায়ক বেচারা অনেক দিন অপেক্ষা করেছে। আমাকে শুধু আরেকবার চেষ্টা করে দেখতে দিন। কথা দিচ্ছি এরপরে আর জেদ করবোনা।

ডঃ দাশগুপ্ত--করুন, কিন্তু আমি ধারেকাছেই থাকবো। গোলমাল বুঝলে সাথে সাথে সিডেট করতে হবে। বড্ড আনস্টেবল রুগী, কি থেকে কি হয়ে যায়। (বেরিয়ে যান)

পৃথা--পম, এদিকে আয়, আমার পাশে বোস। তোর জন্য চমৎকার একটি ছেলে দেখেছি। চেনা পরিবার, যাকে বলে একদম পালটি ঘর।

(উপমা পাশের চেয়ারে বসে পৃথার হাতটা টেনে নেয়।)

উপমা--দিদান তুমি আমায় ভালোবাসো?

পৃথা--তুই ছাড়া এই পৃথিবীতে ভালোবাসার জন আর কে আছে আমার বল?

উপমা--আজকে আমার জন্মদিন। আজ আমি যা বলবো তুমি তাই শুনবে।

পৃথা--(ব্যস্ত হয়ে) তাইতো। দেখ দেখি একেবারে ভুলে গেছিলাম। কি যে সব ওষুধ দেয়, কিচ্ছু আর মনে রাখতে পারিনা জানিস। দাঁড়া কাউকে একটা দোকানে পাঠাই। ও ডাক্তার শুনছো, আজকে মেয়েটার জন্মদিন, কি করি বলো তো।

উপমা--কিছু করবে না, আজকে আমি তোমার জন্য সারপ্রাইজ এনেছি। দেখো তো এই লোকটিকে চিনতে পারো কিনা। (যুধাজিৎ ঢোকেন)

যুধাজিৎ--বৌদি।

পৃথা--ঠাকুরপো দেখছি। আপনার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনারা সবাই একসঙ্গে আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। পুরনো রুমালের মতন ফেলে দিলেন এই জঞ্জালের গাদায়। তা বেশ তো মানিয়ে নিয়েছিলাম এখানেই, কারো কাছে নালিশ তো করিনি। আজকে নতুন করে আবার আমার খোঁজ পড়লো কেন জানতে পারি?

যুধাজিৎ--বৌদি, এমনিতেই আমার লজ্জা রাখার জায়গা নেই, আর নতুন করে আমাকে লজ্জা দেবেন না। আদিত্য চলে গেল, দিয়াও নেই আর আপনি--

পৃথা--পাগল হয়ে গেছিলাম। জানি।

যুধাজিৎ--বউদি প্লীজ। সেদিনের তুলনায় আজ আপনাকে কতো সুস্থ দেখাচ্ছে। মানছি আমি নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম, ছেলে-বউমা মুম্বাইতে চাকরি নিলো, আমাকে বলল সঙ্গে আসতে। না করতে পারলাম না। কিন্তু আপনাকে ঠিক লোকের হাতেই দিয়ে গেছিলাম। অসীম উচ্চ মাধ্যমিকে আমার বায়োলজি ক্লাসের ছাত্র ছিল, ও আমাকে কথা দিয়েছিল যে আপনার দেখাশুনোয় কোন ত্রুটি হবেনা।

পৃথা--ডাক্তার সে কথা রেখেছে। বোসো ঠাকুরপো, আয়াকে বলছি চা শিঙাড়া এনে দেবে। কতদিন বাদে কেউ বৌদি বলে ডাকল।

উপমা--আমি আনছি। (বেরিয়ে যায়)

যুধাজিৎ--শুধু বৌদি বলে নয়, মা বলে ডাকার জন্যও একজন এসেছে। মিনতি করছি তাকে ফিরিয়ে দেবেন না, চা শিঙাড়া একটু বেশি করেই আনান।

পৃথা--কে এসেছে? দিয়া। না না আমি ওর মুখ দেখতে চাইনা। এতদিন হয়ে গেল, হপ্তায় একটা করে দেড় মিনিটের ফোন। গুণে গুণে দেড় মিনিট। সত্যিই তো কিইবা হবে এক আধা পাগল বুড়ির খবর নিয়ে? সেই এক পুরনো কথার ঘ্যানঘ্যানানি কার ভালো লাগে বলো। ও, ওর বিলেতি সংসার নিয়ে সুখে থাক।

যুধাজিৎ--বউদি তোমার মতন দিয়াও ট্রমাটাইজড। ওকে আরেকটা সুযোগ দাও। অতীত বদলানো যায়না কিন্তু বর্তমানকে সহনীয় করে তোলা যায় বৌদি। হয়তো ভবিষ্যতে এমন আনন্দ তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে, যা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা। (পকেট থেকে ছবি বার করে) এই দেখো আমার নাতি নাতনির ছবি, দুজনেই ইউনিভার্সিটিতে, উপমার মতন ওরা দুজনেও উজ্জ্বল, আত্মবিশ্বাসী আর আধুনিক তরুণ-তরুণী। ওদের ফিরিয়ে দিওনা বৌদি, ওদের কথা শুধু একবার শোনো। (দিয়া ঢোকে)

দিয়া (ধরা গলায়)--মা!

পৃথা--দিয়া!

(দুজনেই খানিকক্ষণ চুপচাপ। তারপরে দিয়া পৃথার কাছে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। দুজনেই কাঁদছে।)

(যুধাজিৎ স্টেজের অন্যদিকে হেঁটে যান। ডাক্তার দাশগুপ্ত ঢুকে প্রণাম করবেন।)

যুধাজিৎ--তোকে আশীর্বাদ করি এমন সাধ্য আমার নেই। তাও বলছি তুই যেন চিরকাল এমন করেই অন্ধজনে আলো আর মৃতজনে প্রাণ দিতে পারিস।

ডঃ দাশগুপ্ত--স্যার আপনার শেখানো রাস্তাতেই চলেছি। যাই হোক উনি এখন অবধি খুব ভালোভাবে ব্যপারটা নিচ্ছেন। ওদের একটুখানি কাঁদতে দিন, তারপরে উপমা আর সায়ক ঢুকবে। সবার শেষে ভাস্করবাবু।

যুধাজিৎ--ওইটা নিয়েই চিন্তা। কিন্তু পম জেদ ধরে বসে আছে। অল অর নান।

ডঃ দাশগুপ্ত--আপনাদের এই মেয়েটি কিন্তু খুব স্পিরিটেড।

যুধাজিৎ--হবে না কেন? শী ইজ লাইক হার গ্র্যান্ডফাদার। মৃত হলেই কেউ অবান্তর হয়ে যায় না রে। ডি-এন-এ তার রহস্যময় সংকেত বয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সেই হিসাবে আমরা সকলেই মৃত্যুহীন।

ডঃ দাশগুপ্ত--আপনি ক্লাসে ঠিক এইভাবেই কথা বলতেন স্যার। কি ভালো লাগছে শুনে।

যুধাজিৎ--ডাক্তার হলেও সবার আগে তুই বায়োলজির ছাত্র। তুই জানিস ডি-এন-এ রেপ্লিকেশনে অসংখ্য ভুল হয়, বাইরে থেকে আসা প্রভাবের ফলে মিউটেশন হয় অজস্র। ডি-এন-এ সেগুলো সারিয়ে নেয়, রিপেয়ার করে। এই রিপেয়ার যতো এফিসিয়েন্ট, সারভাইভালের সম্ভাবনা ততোই বেশি। আজ আমরা একটা এক্সপেরিমেন্টের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছিরে। চল দেখি কি হয়।

(উপমা আর সায়ক ঢোকে। উপমার হাতে খাবারের ট্রে। সায়ক প্রণাম করে। এবারে কিন্তু পৃথা পা সরিয়ে নেননা)

উপমা--দিদান কাল সকালে সায়কের বাবা-মা তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। তুমি শুধু এইটুকু অনুমতি দাও।

পৃথা--(অস্বস্তির সঙ্গে) না না ওঁরা কেন শুধু শুধু কষ্ট করবেন। দেখ দেখি কি ঝামেলা করিস তোরা। মেয়ের বাড়ি হিসাবে আমারই তো যাওয়া উচিত।

ডঃ দাশগুপ্ত--না, একেবারেই না। ডাক্তার হিসাবে আমি রেকমেন্ড করেছি যে ওঁরাই এখানে আসবেন।

পৃথা--(হঠৎ হেসে ওঠেন। সবাই হতবাক) না না তার দরকার নেই। আমিই যাবো, বাইরে বেরোতে পারলে আমি বাঁচি। তোরা ভালো থাক। আমার বালাই যেন তোদের গায়ে না লাগে। (সকলে হাততালি দেয়। পৃথা একবার হাসছেন আরেকবার কাঁদছেন।) শুধু সেই মানুষটা যদি দেখে যেতে পারতো।

যুধাজিৎ--বউদি, আরেকটা কথা বলার আছে।

পৃথা--বলে ফেলুন। আপনারা দেখছি রহস্যের খাসমহল বানিয়ে বসে আছেন দেখছি। তা এই বুড়ির জন্য আর কি সারপ্রাইজ বাকি আছে শুনি?

যুধাজিৎ--বৌদি, সব কিছু সত্ত্বেও ভাস্কর পমের বাবা। বাবার দায়িত্ব সে ষোলো আনার ওপর আঠেরো আনা বহন করেছে। ওকে ছাড়া এই আনন্দ অনুষ্ঠান সম্পুর্ণ হয়না। তাও যদি তুমি বলো ও বিয়ের অনুষ্ঠানে আসবে না, সেক্ষেত্রে কন্যাদান আমি করবো।

পৃথা--(কাঁপতে থাকেন, চোখের দৃষ্টি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। বিছানা ছেড়ে উঠতে যান, আবার বসে পড়েন। ডাক্তার দাশগুপ্ত কোটের পকেট থেকে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বার করে তৈরি। সবাই চুপচাপ)

পৃথা--নাঃ, মেয়ের বাবা থাকতে অন্য লোকে কন্যাদান করবে কেন? যা গেছে তো গেছেই। আর ক্ষমা তো শুধু তিনিই করতে পারেন, তিনিই ওর বিচার করবেন। ওকে আসতে বল। সেই যে কতদিন আগে শ্রেয়া ওকে নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। মনে আছে একদম গরুচোরের মতন মুখ করে। তখন যদি অতটা কঠোর না হতাম তাহলে হয়তো। আদিত্য বলেছিল, শুনিনি। (ভাস্কর ঢোকে)

ভাস্কর--মামণি, যে ক্ষমা অনেকদিন আগে চাওয়ার ছিল, আজ তা চাইতে এসেছি।

পৃথা--কে কাকে ক্ষমা করে ভাস্কর। যা হয়েছে তা তো আর বদলানোর নয়। তুমি বোসো।

(ঘরের মধ্যে একটা কোলাহল ওঠে। ডাক্তার দাশগুপ্ত ইঞ্জেকশন পকেটে পুরে ফেলেছেন। সবাই হাসছে, সবাই একে একে পৃথার কাছে। হাত ধরাধরি করে সবাই একসময় বেরিয়ে যায়।)

যুধাজিৎ--কলকাতায় আমাদের বাড়িটা মাঝে মাঝে ভাড়া দেওয়া হয় কিন্তু আপাততঃ ফাঁকাই আছে। আমরা বৌদিকে ওখানেই মুভ করবো, ওটাই হবে আমাদের বিয়েবাড়ি। সবাই রাজি? (ডাক্তার দাশগুপ্ত ছাড়া সকলেই হই হই করে সম্মতি দেয়)

ডাক্তার দাশগুপ্ত--আমি কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে বারণ করছি। অল দিস অ্যাট আ টাইম মে বি টু ওভারহোয়েলিং ফর হার।

যুধাজিৎ--আরে এ তো ওনার জন্য সবচেয়ে আনন্দের সময়। তাছাড়া আমরা সবাই ওঁকে ঘিরে থাকবো, কিচ্ছু হবেনা। (বাকিরা হই হই করে সায় দেয়)

ডা: দাশগুপ্ত--ঠিক আছে স্যার, আপনি যখন বলছেন।

(আবার একটা কোলাহল ওঠে। স্টেজ অন্ধকার। পৃথা ছাড়া সবাই বেরিয়ে যাবে। গান--লাগবে তরী কুসুমবনে ছিলাম সে আশায়)


(স্টেজের মাঝখানে একটা আলোর বৃত্ত। পৃথা রকিং চেয়ারে একা বসে বসে দুলছেন।)

সবাই চলে গেছে। অভিশাপের ভার মাথায় নিয়ে এই অন্ধকারে বসে কেবল আমি। কি গো শুনতে পাচ্ছো? এই শুভ অনুষ্ঠান আমার নজর লেগে আবার নষ্ট হয়ে যাবে না তো। তার থেকে আমি তোমার কাছে চলে যাই। এইটুকুর জন্যেই তো বসে ছিলাম, সবাইকে ক্ষমা করে বুকের ভেতর টেনে নেবো বলে। এখন আমি আমার অভিশাপ মাথায় করে বিদায় নিই, ওদের গায়ে যেন তার তাপ না লাগে। কি বলো?

(পৃথা ড্রয়ার খুলে একটা ওষুধের কৌটো বার করে আনেন। উল্টেপাল্টে দেখেন, মুখে একটা অস্বাভাবিক হাসি।)

পৃথা--ডাক্তারের নজর এড়িয়ে লুকিয়ে রেখেছি। তাহলে এখন যাবো? না থাকবো? যাবো? না থাকবো, যাবো? না থাকবো?

(কথার মধ্যে আলোর বৃত্তটি আস্তে আস্তে ছোটো হতে হতে মিলিয়ে যাবে। যবনিকা)



(পরবাস-৭৪, ৩১ মার্চ ২০১৯)