Parabaas Moviestore




Parabaas Moviestore




Subscribe to Magazines



পরবাসে সংহিতা মুখোপাধ্যায়ের লেখা



ISSN 1563-8685




গ্রন্থ-সমালোচনা

|| দুর্দান্ত কল্পনার দুঃসাহসিক ছবি ||

পংখিলালের গুহা—দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য; সুচেতনা, কলকাতা-০৯; প্রথম প্রকাশ: কলকাতা বইমেলা ২০১৬

বইয়ের বর্ণনায় ছবির কথা খাপছাড়া ঠেকে। কিন্তু পংখিলালের গুহা একটি চলচ্চিত্র যেন। চলচ্চিত্রের থেকেও বেশি দৃশ্যময়, দ্রুততর। এই দৃশ্যময়তার বুনিয়াদ কিছু দুর্দান্ত কল্পনায়। যে কল্পনার ভিত্তি বাস্তবে গাঁথা। বাস্তব ছড়িয়ে আছে ভূগোলে, ইতিহাসে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, চিরাচরিত চর্চায়, হিংসায়, হিংসার উপশমে।

“পংখিলালের গুহা” বইটি একবার হাতে ধরলে নামিয়ে রাখার উপায় নেই। রুদ্ধশ্বাসে ঊর্ধশ্বাসে পর পর পাতা উলটে শেষ করে ফেলতে হয়। তবে সে শুধু “পংখিলালের গুহা”-ই নয়, নীতুর কাকা সনাতনের সমস্ত অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীর ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে। শুরু সেই “বিষবৈদ্য” থেকে। তারপর “আবলুশ”, “মৃত্যুদূত”, “দোর্দোবুরুর বাক্স”, “নিবাত কবচ অভিযান” - কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়া যায়!

প্রত্যেকটা গল্পেই শহর কলকাতার এক ক্লাবঘরে বসে চা ফুলুরির সাথে সনাতন গল্প বলেন। তাঁর শ্রোতাদের সাথে পাঠকও গোগ্রাসে গিলতে থাকে তাঁর স্মৃতিচারণের প্রত্যেক কণা। গল্প কলকাতার কানাগলি ছেড়ে পাড়ি দেয় জলে, জঙ্গলে, পাহাড়ে, আকাশে, পাতালে, পাহাড়ে। কল্পিত ও কল্পনাতীত নানান চারণভূমিতে। শতাব্দীর থেকে গল্প পিছিয়ে যায় খ্রীষ্ট-পূর্বাব্দে কিংবা প্রাগৈতিহাসিক দিনের গহ্বরে। তার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকে অবাক করা ভেষজের বিবরণ। পরিচিত অস্ত্রের অকল্পনীয় বিবর্তন। উল্লেখ থাকে ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ভূবিদ্যা, জীববিদ্যার প্রামাণ্য তথ্যের। অথচ তাতেও গল্প ভারি হয়ে ওঠে না কখনও। গল্প চলতে থাকে কল্পনার ভিয়ানে, দৃশ্যময়তার রসে মজিয়ে।

“পংখিলালের গুহা”-তেও তার ব্যত্যয় ঘটে নি। নিপুণ আঙুলে লেখক পটভূমি সাজিয়েছেন। তাঁর কৌশলে পাঠক কখনও উনিশ শতকের মধ্যভারতের মালভূমিতে। তো কখনও বিশ শতকের ব্রিটিশ ভারতের গঙ্গার বুকে। আবার কখনও আজকের ছত্তিশগড়ের কার্স্ট টোপোগ্রাফির গহ্বরে, অন্তঃসলিলা ফল্গুতে। শুকনো নদীখাতে জ্যোৎস্না স্নাত কিংবা জলপ্রপাতের গর্জনে বধির। এই পরিস্থিতির বুনোটে প্লটের চাপান-উতোর আর টান টান উত্তেজনা। চরিত্ররা কে কী করে। কী হয় কী হয় ভাবতে ভাবতে গা ছমছমিয়ে গড়গড়িয়ে পড়া হয়ে যায় এক মলাট থেকে আরেক মলাটের মধ্যবর্তী গল্প।

সনাতনের নানান অ্যাডভেঞ্চারগুলোর মতোই “পংখিলালের গুহা”-কেও নেহাৎ অ্যাডভেঞ্চার বললে নেহাতই কম বলা হয়। এটা একটা দূর্ধর্ষ ক্রাইম থ্রিলারও বটে। আবার এটা ঐতিহাসিকও বটে। মানে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজকুমারী বিদ্যুন্মালা আর সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সী যদি একই উপন্যাসে চরিত্র হতেন তাহলে সেই গল্পের মাত্রাগুলো খানিকটা “পংখিলালের গুহা”-র মতো হতে পারতো। সময়ের নানান স্থাণাঙ্কে বিচরণের বিষয়টা “পংখিলালের গুহা” গল্পে অবাধ। মানুষের আগেকার কাল থেকে বিশ শতকের শেষ অবধি বিস্তৃত। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্য স্থল, জল, পাহাড়, নদী, গাছপালা, জীবজন্তু, মানুষের বদলে যাওয়া, প্রত্যেকটির পারস্পরিক সম্পর্ক বদলে যাওয়া বা না যাওয়া অতি প্রচ্ছন্নতায় গল্পের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে। সেই প্রচ্ছন্ন উপস্থিতিও গল্পের টান টান বুনটের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।

কল্পনা ও দৃশ্যময়তায় ঝকঝকে “পংখিলালের গুহা”। হয়তো এটা বাংলায় লেখা বলেই বইটার পিছু পিছু ব্লকব্লাস্টার সিনেমাটি বানানো হলো না। যে শিশু কিশোর এইসব হাড়হিম করা রোম খাড়া করা গল্প পড়ে বড়ো হচ্ছেন, তাঁরা তাঁদের পূর্ণ যৌবনে হয়তো “পংখিলালের গুহা”-র দ্রুতগামী দৃশ্যময়তাকে চলচ্চিত্রের রূপ দেবেন, তিন দশক পরে। তাই অঙ্গে “হ্যারি পটার”-এর মতো ভূষণ নিয়েও, “পংখিলালের গুহা” রয়ে যাবে বইয়ের তাকে। উদ্যম ও প্রচারের অভাবে তার আলোকিত মঞ্চে, অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে উপস্থাপিত হতে কেটে যাবে যুগ। নিশ্চল অক্ষরে বাধা “পংখিলালের গুহা”-র যে গতি ও মানসপটে ছবি আঁকার শক্তি, তার থেকে বঞ্চিত রয়ে যাবে বাংলা সিনেমার ভাঁড়ার।

“পংখিলালের গুহা” বইতে বাড়তি পাওনা শ্রী শাম্বর প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ। যথার্থ প্রচ্ছদটি বেধে দিয়েছে প্রত্যাশার যথাযথ মাত্রা। অলঙ্করণও গল্পের অন্তরাত্মার সাথে একাত্ম।

সব মিলিয়ে “পংখিলালের গুহা” এক দুর্ধর্ষ পরিবেশনা।



|| যেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ঠান্ডা হয় না ||

সীমান্তের অন্তরালে--সমরেন্দ্র লাহিড়ী; জয়ঢাক প্রকাশন, কলকাতা-১২৩; প্রথম প্রকাশ: নভেম্বর ২০১৭; ISBN 978-81-93697559

আফগানিস্তান শুনলেই প্রথমে মনে পড়ে “কাবুলিওয়ালা”। তারপর “দেশে বিদেশে”। তারপর “কাবুলিওয়ালার বাঙালীবউ”।

রহমতের গল্প রবীন্দ্রনাথ বাংলায় লিখেছিলেন। পটভূমি কলকাতা। তাই হয়তো এই গল্পের কোথাও স্বয়ং লেখকের প্রাণ সংশয় হয়নি। কিন্তু আফাগানিস্তানস্থ রহমত কন্যাকে মারা পড়তে হয়েছে এবং কাবুলিওয়ালা রহমতের সন্তান বাৎসল্য তার রক্তপিপাসু ব্যক্তিত্বকে আড়াল করেনি।

সৈয়দ মুজতবা আলী “দেশে বিদেশে” লিখেছিলেন পেশোয়ার, জালালাবাদ, কাবুল এবং কাবুলের উপকন্ঠের গ্রামে বৎসরাধিককাল বাস করার পরে। রাষ্ট্রবিপ্লবে উদ্‌ভ্রান্ত, উপবাসে সঙীন হালে তিনি কোনো মতে ভারতে ফিরে এসেছিলেন। আর “কাবুলিওয়ালার বাঙালীবউ” বা “এস্কেপ ফ্রম তালিবান”-এর লেখক সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো মারাই গেছেন তালিবানের গুলিতে।

তাছাড়া মনে পড়ে ২০০৭ এর দুটি সৃষ্টি। একটি অস্ট্রেলিয়ান পরিচালক বেঞ্জামিন গিলমৌরের বানানো সিনেমা “সন অফ আ লায়ন”। অন্যটি খালেদ হোসেইনির লেখা বই “আ থাউস্যান্ড স্‌প্লেনডিড সান”। এক্ষেত্রে এখনও কোনো হতাহতের খবর নেই। কিন্তু এই শেষ দুটি সৃষ্টি একই সময়ের কথা বলে, সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকে। প্রথমটি তিন বাঙালি স্রষ্টার আফগান-দর্শনের সাথে মেলে। দ্বিতীয়টি মেলার পরেও এমন কিছু জানায় যা তাকে অন্য মেরুতে দাঁড় করায়।

বর্তমানে আলোচ্য বইটিও সংখ্যাগুরুর দিকেই যায়। এর রচনাকাল তালিবান বা মুজাহিদিন-দের কালের অনেক বছর আগে। অভিজ্ঞতাটি প্রায় এক শতক আগেকার। লেখক ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসে কাজ করতেন। সেই কাজের সূত্রেই তিনি তখনকার উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত-প্রদেশে পৌঁছেছিলেন। পেশোয়ার থেকে কাজ নিয়ে তিনি নানান দিকে কয়েকশো কিলোমিটার যেতেন। নিঃশ্বাস ফেলতেন ডুরান্ড লাইনের ঘাড়ে।

কর্মজীবনের তাঁর অভিজ্ঞতার কথা ইংরেজিতে “Pakhtoonistan” নাম দিয়ে The Statesman পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল পাঁচের দশকের শুরুতে। ষাটের দশকের শুরুতে সেই লেখারই বাংলা তর্জমা দাঁড়ালো “সীমান্তরের অন্তরালে”।

বইটির শুরুতেই প্রকাশক জানিয়েছেন যে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় লেখককন্যার কাছে প্রকাশক লেখকের কর্মজীবন সম্বন্ধে কৌতুহল প্রকাশ করেছিলেন। সেই কৌতুহল নিবৃত্ত করতে লেখককন্যা প্রকাশকের হাতে তুলে দেন “সীমান্তের অন্তরালে”-র পাণ্ডুলিপি। কয়েক কিস্তিতে “আকস্মিক জয়ঢাক” বা “জয়ঢাক”-এ লেখাটি প্রকাশ হওয়ার পর বই আকারে প্রকাশিত হয়।

বইটি পড়তে শুরু করলে থামা যায় না। ভাষা এতো প্রাঞ্জল, বর্ণনা এতো সুদৃশ্য যে পড়তে পড়তে পাঠক গাড়ি চালাতে পারেন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ব্রিটিশের বানানো রাজপথে, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার কালে। এই ভ্রমণ কিন্তু সবসময় নির্বিঘ্নে শেষ হয় না। কখনও চলন্ত গাড়ির সামনে লাফিয়ে পড়ে পাখতুন। তাকে নিরুপায় সওয়ারি ভেবে গাড়ির গতি কমালে...। সে বর্ণনা বইটিতেই পড়ে নেওয়া ভালো। না হলে জমে ক্ষীর একটা অধ্যায় কাঁচা দুধে চিনি ঢেলে কাটানো দুধের মতো হয়ে যাবে, জমবে না।

নানা ভাবে গোলাগুলির মোকাবিলা করতে করতে লেখক যখন পেশার দাবিদাওয়া মেটাচ্ছিলেন তখন থেকে থেকেই ‘ন যযৌ ন তস্থৌ’ হয়ে পড়তেন। তিনি একবার একটা পাম্প সারাতে গিয়েছিলেন, বাদামায়। পাম্পটি একটি পাহাড়ি নদী থেকে জল সরবারহ করত মিলিশিয়া পোস্টে। কিন্তু কোনো এক মূহুর্তে মিলিশিয়া পোস্ট কার দখলে আছে সেটা বোঝা দুষ্কর। আফ্রিদি পাখতুন আর ব্রিটিশ সেনার মধ্যে মিলিশিয়া পোস্টের দখলদারি তখন ভীষণ প্রতিদ্বন্দিতামূলক। এর মধ্যে যে একটা গা-গরম করা উত্তেজনা আছে, সেটা লেখকের বর্ণনায় প্রকাশ পায় নি। প্রকাশ পেয়েছে এই সব প্রতিদ্বন্দীতাকে নিয়ে পাখতুনদের নিরুদ্বেগ ঔদাসীন্য। আর লেখকের রসবোধ। তিনি লিখেছেন, “আমি বললাম, ‘তাহলে ওদিকে গিয়ে আর কাজ নেই। পাম্প যখন ঠিক চলছে, তখন জলও ওখানে ঠিকই পৌঁছোচ্ছে ধরে নিতে হবে। সে জলটা কারা খাচ্ছে তা না হয় নাই বা দেখলাম।’......।” এভাবে প্রচ্ছন্ন কৌতুকে লেখক, রক্তারক্তি হানাহানি স্বজন বিয়োগের ব্যাথাকে প্রতিশোধের কঠিন তপস্যাকে জয় করেছেন। নেহাতই পেটের দায়ে নিত্য অশান্তির আবহাওয়াকে মেনে নেন নি।

উনিশ শতকে ব্রিটিশ আফগান যুদ্ধের শুরু থেকে, শতকের শেষ দশকে ডুরান্ড লাইন টেনে আফগানিস্তান আর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার মধ্যে দিয়েও পাখতুনিস্তানে ব্রিটিশ আধিপত্য কায়েম হয় নি। পাখতুন জাতি স্বাধীনতা চেয়েছে। ব্রিটিশের এবং কাবুলের বাদশাহের বশ্যতা অস্বীকার করে।

এই স্বাধীনতার সাধনা পাখতুনদের বারবার ঝগরুটে রক্তপিপাসু হিসেবে বর্ণিত করেছে। কিন্তু জাতি হিসেবে পাখতুন প্রজ্ঞা ও দক্ষতারও প্রমাণ রেখেছে প্রচুর। রুশ জারের দরবার থেকে শুরু করে যোসেফ স্টালিন ও তাঁর উত্তরসুরীদের ইউএসএসআর - সবাই চেয়েছে আফগানিস্থান দিয়ে দক্ষিণে আর পুবে ক্রমশ এগিয়ে ভারতমহাসাগর ছুঁয়ে ফেলতে। এই অভীষ্ট সিদ্ধ করার জন্য রাশিয়া কাবুলের শাহ কিংবা ইউএসএসআর কাবুলের জননেতার দরবারকে প্রভাবিত করতে চেয়েছে। ভারতের উপনিবেশ ও পরে সাম্রাজ্যকে রাশিয়ার থাবা থেকে বাঁচাতে ব্রিটিশও পাঞ্জা কষে গেছে সমানে। কিন্তু দুপক্ষকেই নাস্তানাবুদ করেছে স্বাধীনতা প্রেমী ও যুদ্ধকুশলী পাখতুনরা। অথচ এই বহিঃশত্রুর মোকাবিলার দিনগুলোতেও তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘উপযুক্ত কারণে’ অস্ত্রধারণ থেমে থাকেনি। আফ্রিদি, ইউসুফজাই, কাবুলখেল ওয়াজিরি, কুরম, জাকাখেল, জোয়াকি আর নানান উপজাতি ও তাদের নানা গোষ্ঠী, উপগোষ্ঠীগুলি কখনও কুরম নদীর উপত্যকার একটা ঘাসে ঢাকা জমির দখল নিয়ে রক্তাক্ত হয়েছে, কখনও রক্তাক্ত হয়েছে এক উপজাতির পুরুষ অন্য উপজাতীয় নারীকে প্রেমনিবেদন করলে।

এইভাবে, বিশ্বরাজনীতি থেকে পাখতুনিস্তানের উঠোনের হাঁড়ির খবর, লেখক অক্লেশে নানান গালগল্পে বলেছেন। বলেছেন পাখতুনের কৌশলী দ্বিচারিতার কথাও। পাখতুনের জ্ঞানপিপাসার কথাও। এইখানে এই বই বাৎসল্যময় “কাবুলিওয়ালা”-র স্ব সম্মান রক্ষায় ঘাতক হয়ে ওঠার গল্প থেকে একদম আলাদা হয়ে যায়। এই বই পাখতুনের বয়ানে তার ইতিহাস, ভূগোল, সমাজের কথা বলেছে। সেই কারণে এই বই আলাদা হয়ে গেছে “দেশে বিদেশে”-র লেখকের চোখে আফগানিস্তান দর্শনের যে অভিজ্ঞতা তার থেকে। এই বই স্বাধীনতাকামী পাখতুনের ছবি এঁকেছে। তাই এই বই তালিবানের মতো গোঁড়া আর জঙ্গী ইসলামানুসরণের বর্ণনা নয়। বরং এই বই “সন অফ আ লায়ন”-এর মতো তীব্র নিরপেক্ষ। এই বই ব্রিটিশ ভারতের পাখতুনিস্তান ঠিক কেমন সেই ছবিটাই নির্বিকার ভঙ্গীতে জানিয়েছে। যার মধ্যে প্রচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে মোটরগাড়ি, মোটরচলা রাস্তা, হাইড্রলিক পাম্প, টেলিগ্রাফ প্রভৃতি শিল্পবিপ্লবজাত যাপণের সুবিধাগুলি যা ব্রিটিশের সঙ্গেই পৌঁছেছিল শীতল মরুময় ন্যাড়া ন্যাড়া পাথুরে পাহাড়ে মোড়া উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে। তবে এই বই পড়লে মনে হয় যে খালেদ হোসেইনি “আ থাউস্যান্ড স্‌প্লেনডিড সান” বইতে যে আফগান জাতীয়তাবাদের ধারণা প্রতিষ্টা করতে চেষ্টা করেছেন তা আরোপিত। বরং ঘাসজমির মতো সামান্যাসামান্য রসদের জন্য উপজাতীয় দ্বন্দটাই এই এলাকায় সনাতন। হয়তো সেটাই পাশ্চাত্য শক্তি এই এলাকার মানুষের, সমাজের দুর্বলতা বলে মনে করে; আর সেই উপজাতীয় দ্বন্দের জেরে এই অঞ্চলে বাইরে থেকে আসা নিয়ন্তারা নিজেরাই জেরবার হয়ে যায়; এই এলাকা অজেয় রয়ে যায়।

বইটি প্রথম পাঠে রোমাঞ্চ কাহিনীর মতো লাগে। দ্বিতীয় পাঠে ইতিহাসের নিপুণ ভাঁড়ার মনে হয়। তৃতীয় পাঠে মনে অজস্র তর্ক তৈরি করে। আর এভাবেই ফিরে ফিরে বইটি নানান কারণে পড়ে ফেলতে হয়।





(পরবাস-৭৫, ৩০ জুন ২০১৯)