মহাদেব—উঃ, আর তো পারা যাচ্ছেনা। একদিকে বস, অন্যদিকে ক্লায়েন্ট এই দুই অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে বসে আছি মশাই। কোত্থেকে এক দক্ষিণ ভারতীয় ম্যানেজার এয়েছে, সে আবার মুখে কথা বলেনা, গালমন্দ দিতে হলে ফটাং করে টেক্সট করে দেয়। টেক্সট তো নয় যেন মৌমাছির হুল। অফিসে সারাদিন মারধোর খেয়ে বাড়ি এসে যে দুদণ্ড স্বস্তি পাবো, ভগবান কি সে উপায় রেখেছেন? কেবল অশান্তি আর অশান্তি।
(খুব ব্যস্ত হয়ে অন্নপূর্ণা ঢোকেন। হাতে মোবাইল ফোন। মহাদেব চা গিলতে গিয়ে বিষম খান)
অন্নপূর্ণা—বাবা লক্ষণ গ্যাসের সিলিন্ডারটা তাড়াতাড়ি বাড়িতে পৌঁছে দিও বাবা। রান্নাবান্না আছে। (মহাদেবকে) এই যে শুনছো! বলি অফিস ফেরত যে জিনিষগুলো আনতে বলেছিলাম, এনেছো?
মহাদেব—কোন জিনিষগুলো? মানে অফিসে বড্ড দেরি হয়ে গেলো কিনা তাই-
অন্নপূর্ণা—বা বা! জানতাম এই রকমটাই হবে। আজকেই তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলাম যে! আচ্ছা বেরোনোর সময় লিস্টি বানিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে দিলাম, তা সে বুঝি পকেটেই থেকে গেল।
মহাদেব—পকেট? মানে কোন পকেট?
অন্নপূর্ণা—বুকপকেট (বুকপকেটে হাত ঢুকিয়ে এক টুকরো কাগজ বার করেন)। এই দ্যাখো পষ্ট লেখা আছে। সামান্য কয়েকটা জিনিষ।
মহাদেব—এই, এই পকেটে হাত ঢোকাচ্ছ কেন?
অন্নপুর্ণা—কেন? পকেটে কার চিঠি আছে।
মহাদেব—আজকাল চিঠি পকেটে থাকেনা, ফোনে থাকে। দাও, এক্ষুনি নিয়ে আসছি।
অন্নপূর্ণা—রক্ষা করো আমায়। এখন বেরোলেই তো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে রাত দশটায় ফিরবে। তারপরে আমাকে এক কাঁড়ি মিথ্যে কথা শুনতে হবে। (যেতে যেতে হঠাৎ ফিরে দাঁড়ায়, সন্দিগ্ধ চোখে চারদিকে তাকিয়ে দেখে) শোনো, জামাই আসবে, খবর্দার যদি ওই সব ছাইপাঁশ গিলতে বসেছ তো তোমারি একদিন কি আমারই এক দিন।
মহাদেব—(অসহায় গলায়) ছাইপাঁশ কি কোথাও আছে যে খাবো। সব তো ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছো।
অন্নপূর্ণা—চুপ করো নেশাখোর কোথাকার, ভাবছো আমি কিছু জানিনা। তোমার চোখ দেখলেই আমি বুঝতে পারি ওই কখন তুমি ঢুকু ঢুকু গিলেছ। বুঝলে?
মহাদেব—বুঝবো না? এমন জাঁদরেল মা না হলে কি কর্পোরেট লইয়ার কন্যা আর পুলিস অফিসার জামাই হয়।
অন্নপূর্ণা—আবার ঠেস দিয়ে কথা বলা হচ্ছে। বলি বিক্রমের মতন স্মার্ট আর করিৎকর্মা ছেলে আরেকটা খুঁজে বার করো দেখি। আর আমার মেয়ে? নিজের মেয়ের প্রশংসা নিজের মুখে আর কি করে করি।
(অনসূয়া ঢোকে—অফিসের পোষাক)
অনসূয়া—মা আমি বেরোচ্ছি। ক্লায়েন্টের সঙ্গে ডিনার মিটিং আছে, দেরি হবে। তোমরা খেয়ে নিও।
অন্নপূর্ণা—ডিনার মিটিং মানে। আজকের দিনটা একসাথে সবাই বসে খাই চল। কি ব্যাপার, মুখ থমথমে কেন? আবার ঝগড়া করেছিস বিক্রমের সঙ্গে?
অনসূয়া—মা এটা খুব ইমপর্ট্যান্ট মিটিং। সরি এটা মিস করতে পারবোনা।
অন্নপূর্ণা—অনু শোন। বলছি কি আজকে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আয়। ওয়েদারটাও খারাপ, টিভিতে বললো ঝড় জল হবে। সবাই মিলে বসে একটু কথা বলি।
(বাজের আওয়াজ)
অনসূয়া—কথা? কথা বলে কি হবে মা? তুমি তো জানো আমি ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি।
মহাদেব—শোন, তোরা একটু নিজেদের জন্য সময় দে, কথাবার্তা বল। এটা একটা মস্ত বড়ো ডিসিশন। গোঁয়ার্তুমি করিসনা। তোদের ব্যাপারস্যাপার কিছু বুঝতে পারিনা আজকাল।
অন্নপূর্ণা—আঃ তুমি চুপ করোনা। শোন অনু, আমি জানি তোর ডিসিশন তোরই আর আমরা সবসময় তোর পিছনে আছি। কিন্তু বিক্রমকে ভুল বুঝিসনা, ওর প্রবলেমগুলোও বোঝার চেষ্টা কর। জানি তোরা দুজনেই ব্যস্ত দুজনেই ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরিস, তারপর হয়তো—
অনসূয়া—মা বিয়ের আগে আমি ওকে পরিষ্কার বলেছিলাম যে কাজটা কিন্তু আমার কাছে প্রায়োরিটি।
মহাদেব—কিন্তু অনু, বিক্রম তো ঠিকই বলছে, তোর একটু স্লো ডাউন করা উচিৎ।
অন্নপূর্ণা—সবসময় মেয়েদের স্লো ডাউন করতে হবে কেন। সেদিন যে খুব শকুন্তলার গপ্পো বলা হচ্ছিল। বলি, মিথ্যুক রাজাটার মুখে ঝ্যাঁটা মেরে চলে গেছিল না সেই মেয়ে।
মহাদেব—আরে ওই গপ্পোটার দুটো ভার্সন আছে। শোনো তো—
(অনসূয়া বেরিয়ে যায়)
অন্নপূর্ণা—থাক থাক আবার আরেকটা লেকচার না দিলেও চলবে। অনু, দাঁড়া আমি তোর সঙ্গে যাচ্ছি। উঃ চাবিটা আবার কোথায় গেলো? আর শোনো, খাবার ঢাকা দিয়ে রাখলাম, দয়া করে খেয়ে নিও।
(অন্নপূর্ণা তাড়াতাড়িতে ব্যাগ থেকে চাবি বের করে বেরিয়ে যান কিন্তু কতগুলো কাগজ টেবিলের ওপরেই থেকে যায়। মহাদেব কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ। গাড়ি স্টার্ট দেবার শব্দ। সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে উঠে উনি আলমারির ভেতর থেকে কাপড় জড়ানো একটি বোতল বার করে আনেন)
মহাদেব—যাক বাবা আজ সন্ধ্যার মতন শান্তি।এই ছেলেমেয়েদের ব্যপার বুঝিনে বাপু। দুদিনের জন্য বাপের বাড়ি এসেছিস, কোথায় একটু বিশ্রাম নিবি, নিজেদের সঙ্গে সময় কাটাবি, তা না। সারাদিন কাজ আর কাজ, ভাব-ভালোবাসা সব ওই ফোনের সঙ্গে। হায়রে কখন চলে গেছে কালিদাসের কাল। (গ্লাসে ঢেলে বিরাট একটা চুমুক দেয়, তারপর বেসুরে গান ধরে- নানান জ্বালায় জ্বলে মরি, তাইতো একটু নেশা করি। গাইতে গাইতে কাগজগুলো তুলে পড়তে শুরু করে।) আরে এটা আবার কোত্থেকে এলো। ওরই ব্যাগ থেকে বেরোলো না? (পাতা ওলটায়) হুঁ হুঁ ইন্টারেস্টিং
(যন্ত্রসঙ্গীত। স্টেজের মধ্যে কুয়াশা, আলো জ্বলতে নিভছে—একটি মেয়ে দৌড়ে এসে প্রায় মহাদেববাবুর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে)
মহাদেব—আরে আরে এ কি হচ্ছে? আপনি কে?
মেয়েটি—রক্ষা করুন। হে আর্যপুত্র আমাকে রক্ষা করুন। আমি মহর্ষি কণ্বের পালিতা কন্যা, রাজচক্রবর্তী সম্রাট দুষ্ম্যন্তের ধর্মপত্নী শকুন্তলা।
মহাদেব—কি সর্বনাশ। আপনি কোথা থেকে এসে হাজির হলেন।
শকুন্তলা—মহারাজ আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাত কণ্বের শিষ্য আর্য শার্ঙ্গরব আমাকে সঙ্গে করে এই নগরীতে এনেছিলেন। তিনি এখন নগরীর এক পানশালায় আকণ্ঠ মাধ্বী পান করে ওখানেই কোনো এক বারবণিতায় কক্ষে নিদ্রামগ্ন। মদ্যপের দল আমাকেও তাড়া করেছিল, আমি কোনরকমে পালিয়ে এসেছি (কান্না চেপে দুই হাত জোড় করে নমস্কার জানায়)। আর্যপুত্র আপনার ভবনে আমি আজ রাত্রের মতন আশ্রয়প্রার্থী।
মহাদেব—আমি নির্ঘাৎ স্বপ্ন দেখছি। এমন কিছু নেশাও তো করিনি। দ্বাপরযুগের জনগণ এই সন্তোষপুরের ফ্ল্যাটে এসে হাজির হলো কেমন করে?
শকুন্তলা—মহাশয় আপনি কি বিবাহিত?
মহাদেব—হ্যাঁ কিন্তু আমার স্ত্রী বাড়িতে নেই।
শকুন্তলা—অহো কি সৌভাগ্য। আপনার কাছে সামান্য কিছু খাদ্য ভিক্ষা করতে পারি কি? সকাল থেকে আমি অন্নগ্রহণ করিনি।
মহাদেব—আরে আরে, আগে বলবেন তো। গিন্নী বেরোবার আগে জলখাবার ঢাকা দিয়ে রেখে গেছে, এই দেখুন। (ঢাকনা খোলে)। মটরশুঁটির কচুরি আর ছোলার ডাল। অনেক আছে, আসুন ভাগ করে খাই। আর এইটা একঢোঁক খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।
শকুন্তলা—(এক ঢোঁক খেয়ে মুখ বিকৃত করে) এই বুঝি মাধ্বী। ক্ষমা করবেন আমি আগে কখনো খাইনি।
মহাদেব—হ্যাঁ প্রথমবার খেলে উৎকট লাগে বটে। ভাববেন না অভ্যেস হয়ে যাবে।
শকুন্তলা (খেতে খেতে)—মহাশয় আপনি ধন্য। আপনার স্ত্রী কিন্তু রন্ধনে দ্রৌপদী।
মহাদেব—হ্যাঁ, রান্নাটা ভালোই করে, সংসারের সব দিকে নজর আছে, আমাকে কিছুই ভাবতে হয়না কিন্তু—
শকুন্তলা—উনি অবশ্যই শৃঙ্গার কলায় পারঙ্গমা। হায়, কেউ যদি আমায় শিখিয়ে দিতো। আজন্ম আমি তপস্বী ব্রহ্মচারীদের সংসর্গে কাটিয়েছি, কামকলার কিছুই জানিনা। তাই বুঝি মহারাজ আমাকে প্রত্যাখ্যান করলেন। উনি প্রমাণ চান, এদিকে আংটিটাও যে আমি হারিয়ে ফেলেছি। (কান্নায় ভেঙে পড়ে)
মহাদেব—প্লীজ কাঁদবেন না, বিশ্বাস করুন শৃঙ্গার কথাটার বানান, মানে সবই আমি অনেককাল হলো ভুলে গিয়েছি। তাছাড়া আমার গিন্নীর সঙ্গে আপনার কোন তুলনা হয়? আপনি মহাকাব্যের নায়িকা, আপনার মধুর কণ্ঠস্বর যেন পাখির কাকলি, আপনার সরল সুন্দর মুখশ্রী, যেন ভোরবেলাকার শিশিরে ধোয়া ফুল।
শকুন্তলা—মহারাজও ঠিক এইসব কথা বলেছিলেন, তারপর তো আর চিনতেই পারলেন না।
(নেপথ্যে জড়িতকণ্ঠে ডাক) শকুন্তলে। ভো ভো শকুন্তলে!
শকুন্তলা—কি সর্বনাশ। সেই দগ্ধানন ঋষি শার্ঙ্গরব ঠিক আমার পিছু পিছু এসেছে। আচ্ছা আপনার এই ঘরে লুকোবার কোন জায়গা আছে?
মহাদেব—লুকোবার জায়গা। মানে ওই আলমারিটা। যদিও জামা কাপড়ে ঠাসা। প্রতি বছর সেলের সময়—
(কথা শেষ হয়না শকুন্তলা এক দৌড়ে আলমারির মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। স্টেজে আবার কুয়াশা। টলতে টলতে শার্ঙ্গরব ঢোকেন।)
শার্ঙ্গরব—শকুন্তলে। হে সুন্দরী তুমি কোথায়। এই অনার্য পাপপুরীতে কে তোমাকে রক্ষা করবে?
মহাদেব—ভর সন্ধ্যায় হল্লা করছেন কেন বলুন দেখি? কে আপনি?
শার্ঙ্গরব—আমি শার্ঙ্গরব ব্রহ্মচারী, মহর্ষি কণ্বের চরণাশ্রিত শিষ্য। এই দেশের পাষণ্ড রাজা দুষ্মন্ত আমার গুরুকন্যা শকুন্তলাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে অন্তঃসত্ত্বা, স্ত্রীর স্বীকৃতি না পেলে অবৈধ পুত্রের জননী হবে, আশ্রমে আর তার স্থান হবেনা। আমিও সেই অশুভ সংবাদ নিয়ে গুরুগৃহে ফিরতে পারবোনা, তার চেয়ে আমার মৃত্যুই ভালো। কিন্তু মেয়েটা গেলো কোথায়।
মহাদেব—আপনার তো দেখছি বেশ চড়ে গিয়েছে। বসুন, এক গ্লাস জল খান।
শার্ঙ্গরব—ঠিক আছে আপনি যা খাচ্ছেন তাই একটু দিন না হয়।
মহাদেব—দূর মশায়, আপনার তো এখনও নেশা করার মতলব। এখানে বসে এই জলের গ্লাসটা ধরুন। তারপর বলুন দেখি আপনার ওই লম্পট রাজা তো শকুন্তলাকে ডিচ করেছে, এখন প্ল্যান বি বলে কিছু আছে কি?
শার্ঙ্গরব—(ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে) আপনার বক্তব্যের শেষ অংশটি তো বোধগম্য হলোনা।
মহাদেব—শকুন্তলাকে পাওয়া গেলে কি করবেন?
শার্ঙ্গরব—স্বামী পরিত্যক্ত কন্যাকে কোনো দুর্গম জায়গায় লুকিয়ে রাখতে হবে। তারপর—
মহাদেব—থাক থাক বুঝতে পেরেছি। শুনুন এ যুগে ওসব না করলেও চলে। তাছাড়া এখানে কেউ নেই, আমি শান্তিতে বসে একটু মাল খাচ্ছি, আজ বরং আপনি আসুন।
শার্ঙ্গরব—কিন্তু আমি যে তার অঙ্গের সুবাস পাচ্ছি। আমি নিশ্চিন্ত যে সে ধারেকাছেই আছে। হে মহাত্মন, অন্ততঃ আজ রাত্রের মতন এই দরিদ্র ব্রাহ্মণকে আশ্রয় দিন।
মহাদেব—এ তো ভারি মুশকিলে ফেললো। দেখুন আমার স্ত্রী বাড়ি নেই, আমি এখুনি কিছু বলতে পারছিনা। তাছাড়া আপনাকে দেখে ঠিক দরিদ্র বলেও মনে হচ্ছেনা। আপনি বরং ওই বসার ঘরে একটু অপেক্ষা করুন।
শার্ঙ্গরব—বুঝতে পেরেছি। মহাশয় একান্তই স্ত্রৈণ।
মহাদেব—স্ত্রৈণ মানে? রেগুলার লাইফে এক পিস অ-স্ত্রৈণ পুরুষমানুষ খুঁজে বার করুন দেখি, আমি আপনার চ্যালা বনে যাবো। তাছাড়া আপনি তো ভারি অদ্ভুত লোক মশাই! বাড়ি বয়ে গাল দিতে এসেছেন। বেরোন বেরোন।
শার্ঙ্গরব—না না ক্রুদ্ধ হবেন না। গুরুদেব বলেছিলেন বটে, কলিযুগে নারীশক্তিই প্রবল। তা আমি নাহয় আপনার বহির্গৃহে বসেই দেবীর আগমনের অপেক্ষা করি (বেরিয়ে যায়। শকুন্তলা সঙ্গে সঙ্গে আলমারি থেকে বেরিয়ে আসে)
শকুন্তলা—আপনি ওঁকে আশ্রয় দিলেন কেন? আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার পক্ষে।
মহাদেব—দেখুন, আমি নিশ্চিন্ত যে আমার মাথা খারাপ হয়েছে কিন্তু আপনার বিপক্ষে কোন কাজটা করলাম বলুন তো।
শকুন্তলা—শুনলেন না, মুনিবর আমাকে কোন দুর্গম জায়গায় নিয়ে গিয়ে লুকিয়ে রাখতে চান। পিতারও নাকি তাই মত। কিন্তু আমি কেন চোরের মতন লুকিয়ে থাকবো। আমি তো কোন অন্যায় করিনি। রাজা দুষ্মন্ত রীতিমতন গান্ধর্ব বিবাহ করে তবেই আমাকে গ্রহণ করেছিলেন।
মহাদেব—হ্যাঁ ওই সব সুবিধাজনক ব্যবস্থা পুরাকালে ছিল বটে—গান্ধর্ব বিবাহ, রাক্ষস বিবাহ। দুঃখের বিষয় এই যুগে ওসব অচল। আপনি চিন্তা করবেন না। কালিদাস লিখেছেন আংটি খুঁজে পাওয়া যাবে, রাজা আপনাকে চিনতে পারবেন, আপনার পুত্র ভরত সসাগরা ধরিত্রীর সম্রাট হবেন, তাঁরই নামে এই দেশের নাম হবে ভারতবর্ষ।
শকুন্তলা—আবার সেই আংটি! কালিদাসের লেখা একটা কথাও আপনি বিশ্বাস করেন? মানুষ মেঘের সঙ্গে কথা বলতে পারে?
মহাদেব—কিছু মনে করবেন না ম্যাডাম আজকাল কিন্তু সবাই মেঘের সঙ্গে কথা বলে। সত্যি বলতে কি তারা মেঘে মেঘেই ভেসে বেড়ায়। সে যাকগে, আসল সমস্যাটা এইখানে যে আমার গৃহিণী যে কোন সময়ে ফিরে আসতে পারেন, তখন পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে, আমার কোন ধারণা নেই। তার আগে আপনারা দুজন ভালোয় ভালোয় এখান থেকে বিদায় হলেই মঙ্গল।
শকুন্তলা—আর্যপুত্র আপনার শুভনামটি তো জানা হলোনা।
মহাদেব—শুভ, অশুভ জানিনা, আমার নাম মহাদেব। এই মান্ধাতার আমলের পৌরাণিক নামটির জন্য আমাকে ইস্কুল থেকে বাসরঘর অবধি প্যাঁক খেতে হয়েছে।
শকুন্তলা—কি সুন্দর নাম (দুই হাত জোড় করে আবৃত্তি করে) রণ নির্জিত দুর্জয় দৈত্যপুরং। প্রণমামি শিবম শিব কল্পতরুম।
মহাদেব (আপ্লুত হয়ে)—এ আপনি কি বললেন ম্যাডাম। আমার সঙ্গে জীবনে কেউ এইভাবে কথা বলেনি।
শকুন্তলা—আপনি আমাকে এই উৎকট যাবনিক ভাষায় সম্বোধন করছেন কেন বলুন তো ভদ্র মহাদেব?
মহাদেব—তাহলে কি বলে ডাকবো? ভদ্রিনী বলে কোন কথা আছে কি?
শকুন্তলা (খিলখিল করে হেসে ওঠে)— ভদ্রিণী! না তার চাইতে আপনি ভদ্রে বলতে পারেন, দেবী বললেও আপত্তি নেই। অবশ্য আমি চাই আপনি আমার শুকু বলে ডাকুন।
মহাদেব—সর্বনাশ। শেষ অবধি শুকু।
শকুন্তলা—হ্যাঁ, তাত কণ্ব আর মাতা গৌতমী আমাকে ওই নামেই ডাকেন।
মহাদেব—শুকু আপনার জন্য কি করতে পারি বলুন। আপনাকে দেখার সাথে সাথে আমার মনের মধ্যে যেন একের পর এক বন্ধ দরজা দুহাট হয়ে খুলে যাচ্ছে, চোখ ধাঁধানো আলোর রশ্মিরা ছুটে বেড়াচ্ছে দিকবিদিকে। হাজার হাজার না বলা কথা সেই আলোর স্রোতে ডানা মেলেছে। এত কথা কোথায় ছিল এতদিন?
(বিক্রম ঢোকে, পরনে পুলিশের ইউনিফর্ম, হাতে একটা বাজারের ব্যাগ। শকুন্তলা এক ছুটে আলমারির মধ্যে ঢুকে যায়। কিন্তু তার আগেই বিক্রম দেখে ফেলেছে।)
বিক্রম—বাবা। এ সব কি হচ্ছে শুনি?
মহাদেব—বিক্রম, তুমি কখন এলে বাবা? বোসো, বোসো, তোমার মা আর বউ এসে পড়লো বলে।
বিক্রম—এই মেয়েটা কে। সিনেমা স্টার নাকি র্যাম্পে হাঁটা মডেল। বাবা আপনার এরকম লুজ ক্যারেকটার কবে থেকে হলো?
মহাদেব—আরে বোসো তো আগে। বিশ্বাস কর তুমি যা ভাবছো তা নয়। ও হচ্ছে শকুন্তলা, ওর আংটি হারিয়ে গেছে। সে অনেক কেলোর কীর্তি, তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। বিশ্বাস না হয়, দেখে আসও পাশের ঘরে ওর বডিগার্ড বসে আছে।
বিক্রম—দাঁড়ান এইটাকে আগে ফ্রীজে রেখে আসি। মামণির হুকুম (বাইরে যায়, তারপরেই উত্তেজিতভাবে শার্ঙ্গরবের গলার কাপড় ধরে ভেতরে ঢোকে)। এই লোকটা আমাদের ঘরে কি করছে? তোর কি মতলব? অ্যাঁ? তুই কি ওই মেয়েটার দালাল নাকি?
শার্ঙ্গরব—রে রে পাষণ্ড রাক্ষস, এই মুহূর্তে নিবৃত্ত হ, নাহলে ব্রহ্মশাপে তোকে দগ্ধ করবো। হে মহারাজ দুষ্মন্ত আপনি কোথায়? আপনার রাজত্বে যদি ব্রহ্মহত্যা হয়, তাহলে কিন্তু আপনি রাজধর্মে পতিত হবেন।
বিক্রম—আরে, তোর মতন কতজন এ অবধি আমাকে দগ্ধ করলো রে পাগল। এখানে চুপ করে বস এবার ওই আলমারির মধ্যে মেয়েটাকে বাজিয়ে দেখি। (শার্ঙ্গরবকে হাতকড়া লাগিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়। এর মধ্যে মহাদেব এসে আলমারির সামনে দাঁড়িয়েছে) আরে শ্বশুরমশায় আপনি আমাকে আটকাচ্ছেন কেন? যা করেছেন করেছেন, এখন তাড়াতাড়ি এদের এখান থেকে বার করতে না পারলে বউরা এসে যাবে, তখন আপনি তো মরবেনই, আপনাকে বাঁচাতে গিয়ে আমিও মারা পড়তে পারি।
মহাদেব—দাঁড়াও দাঁড়াও। বিশ্বাস করো ব্যপারটা—
বিক্রম—সব মদনই ওকথা বলে। এখন সরুন দেখি।
(স্টেজে আবার ধোঁয়া। রাজা দুষ্মন্তের প্রবেশ)
দুষ্মন্ত—অয়ং অহম ভো।
বিক্রম—তুমি কে বাবা? পি সি সরকারের মতন উদয় হলে।
দুষ্মন্ত—অহো আস্পর্ধা। অনার্য দুষ্কৃতকারীর দল, দেশের রাজার সঙ্গে কি করে কথা বলতে হয় জানিসনা। (কোমর থেকে তরোয়াল বার করে) তোরা যথোচিত শাস্তি পাবি।
বিক্রম (নিজের পিস্তল বার করে)—হা হা, এ তো যাত্রা পার্টির গুণ্ডা রে। কার সঙ্গে কথা বলছিস জানিস। দাঁড়া দাঁড়া, বুঝেছি। তোরা দুজনে আর ওই আলমারির মধ্যে মেয়েটা মিলে গ্যাং বানিয়েছিস না। আমার নিরীহ শ্বশুরমশায়কে ফাঁসাবার মতলব। বুড়ো শাঁসালো মাল, ছবিটবি তুলে পরে ব্ল্যাকমেল করবি তাইতো? আজকাল এসব কেস খুব হচ্ছে।
দুষ্মন্ত—মেয়ে! মানে নারী। এখানে তো কোন নারীকে দেখছি না। লুকিয়ে রেখেছিস নাকি। মনে রাখিস আমার রাজত্বে নারীহরণের শাস্তি নপুংসককরণ। আর তুই কেমন রাক্ষস রে, ওইটুকু একটা গদা নিয়ে ঘুরিস।
(বিক্রম হকচকিয়ে যায়। পিস্তলটা একবার নাড়িয়ে দেখে।)
বিক্রম—চোপ! এটা দেখে তোর যাত্রাদলের গদা মনে হয়। আর নারীহরণের শাস্তি কি করণ বললি?
মহাদেব—ওর মানে খোজাকরণ অর্থাৎ হিজড়ে বানানো।
শার্ঙ্গরব—মহারাজের জয় হোক। মহারাজ আমি খুব কৌশল করে শকুন্তলাকে আপনার কাননগৃহের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। অর্ধপথে আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সে পালিয়ে যায়। মহারাজ এই লোকগুলো শকুন্তলাকে জোর করে আটকে রেখেছে। ওদের যমালয়ে পাঠিয়ে আপনি ওকে হরণ করে নিয়ে যান।
(কালিদাস ঢোকেন।)
কালিদাস—স্বস্তি স্বস্তি।
বিক্রম—এই পুরুতমশায় আবার কোত্থেকে এসে হাজির হলেন?
কালিদাস—এখানে দেখছি বেশ একটা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। মহারাজ আপনি অস্ত্র সম্বরণ করুন। এইসব ক্ষুদ্র মানবসন্তান আপনার ক্রোধের যোগ্য নয়।
দুষ্মন্ত—প্রণাম বিপ্রবর। আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।
কালিদাস—আমার নাম ভট্ট কালিদাস, আমি সামান্য একজন কবি ও নাট্যকার। আমার প্রিয় চরিত্রেরা বিপাকে পড়েছেন দেখে আসতেই হলো।
মহাদেব—এই যে শুনুন টাইম আউট। আপনারা যে যাই হোন না কেন, এটা আমার বাড়ি, এবং আপনারা সকলে ট্রেসপাসার। আচ্ছা আপনারা কারা বলুন তো, ভরসন্ধ্যায় শুধু শুধু নরক গুলজার করছেন কেন।
দুষ্মন্ত—আমি এই দেশের রাজা, মহারাজ দুষ্মন্ত!
(হঠাৎ দরজার পাল্লা খুলে শকুন্তলা বেরিয়ে আসে। সকলে চমকে উঠবে)
শকুন্তলা—মহারাজ আমাকে উন্মুক্ত সভায়, সকলের সাক্ষাতে স্বীকার না করলে আমি মহারাজের উপপত্নী হয়ে থাকতে চাইনা। আমাদের সন্তানকে আমি একাই মানুষ করবো।
বিক্রম—আলবাৎ করবেন। আর এই লোকগুলো আপনাকে জ্বালাতন করলে শুধু থানায় একটা ফোন করে দিলেই হবে। আমি নিজে চলে আসবো।
শকুন্তলা (কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা কালিদাসের সামনে এসে দাঁড়ায়)—কবিবর, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি? দুর্বাসার শাপের গল্পটা আপনি বানিয়ে বানিয়ে লিখলেন কেন? যাতে মহারাজকে খুব খারাপ না দেখায় তাইতো?
কালিদাস—শুনুন, অভিশাপ, বিস্মৃতি আর অভিজ্ঞান মিলিয়ে এমন একটা সাত অঙ্কের মিলনান্তক কাহিনি বানিয়েছি বলেই তো সে নাটক অমরত্ব পেয়েছে। বলি শিল্পের কথাটাও তো ভাবতে হবে।
শকুন্তলা—ধিক!
দুষ্মন্ত—আর আমার কথাটা কে ভাববে শুনি? পাশে মহারানী বসে আছেন, চারদিকে শ্বশুরকুল আর শ্যালকের দল, তার মধ্যে শকুন্তলাকে এককথায় স্বীকার করে নিলে কেউ আমাকে আস্ত রাখবে ভেবেছ?
শকুন্তলা—কেন, সেদিন সেই লতাবিতানে মুগ্ধা বালিকার পাণিগ্রহণ করার সময় এই সব কথা মনে হয়নি মহারাজের।
(দুষ্মন্ত মাথা নিচু করে। বিক্রম এগিয়ে গিয়ে দুজনের মধ্যে দাঁড়ায়)
বিক্রম—দেখুন একটা কথা বলি। পৌরাণিক ভাষা তো আমার জানা নেই, কিন্তু সাদা বাংলায় বলতে পারি যে মানে শকুন্তলা দেবী, আপনার মতন একটা মা- মা- মাল, মানে মহিলাকে না হঠাৎ করে সামনে দেখলে, বুদ্ধিশুদ্ধিগুলো একটু গুলিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। মানে পুরুষমানুষ তো, জন্ম থেকেই দুর্বল। তখন যা মনে আসে লোকজন তাই বলে দেয়, তারপর বাকি জীবন ধরে পস্তাতে থাকে। মাইরি বলছি।
মহাদেব—তার মানে? তুমি কি আমার মেয়েকে বিয়ে করে পস্তাচ্ছো নাকি?
বিক্রম—শ্বশুরমশাই চেপে যান। দিল্লীকা লাড্ডুর কেস, সেই মহাভারতের যুগ থেকে সবাই পস্তাচ্ছে।
অন্নপূর্ণা (নেপথ্যে)—শুনছো। দরজার বাইরে এতগুলো জুতো এলো কোত্থেকে?
মহাদেব—সর্বনাশ। গিন্নী এসে গেছে।
(এক মুহূর্তের জন্য সবাই চুপ। অন্নপূর্ণা ঘরে ঢুকে চারদিকে বেশ করে একবার দেখে নিলেন। সবাই নার্ভাস।)
বিক্রম—মামণি, আপনার জিনিস এসে গেছে। কথামতন আস্তই ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখেছি।
মহাদেব—আস্ত ঢুকিয়ে রেখেছো? কি জিনিস?
অন্নপূর্ণা—তাতে তোমার কি দরকার? তুমি তো আবার আমাকে লুকিয়ে নাটকের রিহার্সাল দিচ্ছ। তা কি নাটক হচ্ছে শুনি?
মহাদেব—মানে, আমি জানিনা। পাত্রপাত্রীরা নিজে থেকেই এসে হাজির হয়েছেন।
অন্নপূর্ণা—হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি। নাটকের নামটা আগে বলো দিকিনি?
কালিদাস—অভিজ্ঞানশকুন্তলম। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নাটক।
অন্নপূর্ণা—আমার মাথা। হ্যাঁ গো তুমি আগে তো এতো মিথ্যে কথা বলতে না। এই যে সেদিন বললে কালিদাসের শকুন্তলা নাটকটা প্রচুর রং চড়ানো, আসল গল্পটা নাকি অন্যরকম। তারপরেই রিহার্সাল করতে বসেছ যে? বলি ব্যপারটা কি?
দুষ্মন্ত—তার মানে? কোন গল্পটা গাঁজাখুরি?
অন্নপূর্ণা—ওই যে বললে আসল মহাভারতে দুষ্মন্ত-শকুন্তলার গল্পটা নাকি একেবারে আলাদা।
মহাদেব—হ্যাঁ, দুর্বাসার শাপ, মহারাজের স্মৃতিভ্রংশ আর শকুন্তলার আংটি হারানোর গল্পটা এই ভদ্রলোক বানিয়ে বানিয়ে লিখেছেন। ইনি কালিদাস।
কালিদাস—আমি মহাকবি। আমার শৈল্পিক স্বাধীনতা আছে।
বিক্রম—কিরকম স্বাধীনতা?
মহাদেব—আর্টিস্টিক লাইসেন্স। শিল্পের খাতিরে সত্যের ওপরে রং চড়ানো। কিন্তু মহাকবি তার থেকে কিছু বেশিই করেছেন। মহাভারতে আছে দুষ্মন্ত দৈববাণী শুনে শকুন্তলাকে গ্রহণ করেছিলেন।
শকুন্তলা—কিমাশ্চর্য্যমতঃপরম!! মুখ দেখে যে চিনল না সে আংটি দেখে আর দৈববাণী শুনে চিনবে? মহারাজ জেনে শুনে আমাকে অস্বীকার করলেন, খোলা সভায় কুলটা, মিথ্যেবাদী বলে গালি দিলেন। হায়, পুরুষমানুষ এমন তঞ্চক হয়। আর আপনি। আপনি নাকি মহাকবি যিনি এই মিথ্যাচারের গল্প ফেনিয়ে ফাঁপিয়ে নাটক লিখেছেন। সেই নাটক যুগ যুগ ধরে লোকে পড়ছে, অভিনয় করছে।
দুষ্মন্ত—কিন্তু আংটি তো একটা সত্যিই ছিল।
শকুন্তলা—মহারাজ আপনার কি লজ্জা বলে কিছু নেই! ঠিক আছে আংটি ছিল, আমি হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু সভার মধ্যে ওই আংটি বার করলে কি হতো বলুন তো? আমার বদলে আপনি মিথ্যাবাদী প্রমাণ হতেন, বাকি সকলে হাসত। সত্যি করে বলুন আপনি কি সেটা সহ্য করতেন পারতেন মহারাজ।
অন্নপূর্ণা—ঠিক বলেছ মেয়ে, এই সব কটা অকৃতজ্ঞ। কিন্তু তোমার মুখটা তো শুকিয়ে গেছে, সকাল থেকে বোধহয় এক ফোঁটা জলও মুখে পড়েনি। চল দেখি আমার সঙ্গে, তোমায় একটু যত্ন আত্তি করি, ভালো মন্দ খেতে দিই।
বিক্রম—মামণি এ কিন্তু ভারি অন্যায়। ও একা খাবে কেন? আমি কিনা নিজের জামাইষষ্ঠীর ইলিশমাছ নিজেই কিনে নিয়ে এলাম।
মহাদেব—কি? আজ বুঝি জামাইযষ্ঠী। খেয়াল ছিল না তো।
অন্নপূর্ণা—খেয়াল কবে থাকে তোমার। শোনো বাবা বিক্রম, খাবারটা এখনো ঠিক তৈরি হয়নি। এদিকে আমার এই মহাদেবটি তো স্বর্গ মর্ত্য ভুলে খালি নাটক আর নাটক। আর মেয়েটা তো এখনও বাড়ি ফিরলোনা।
শকুন্তলা—আপনার মেয়ে?
অন্নপূর্ণা—ও আমার মেয়ে? ওর নাম অনসূয়া, খুব ভালো অ্যাডভোকেট, তুমি চাইলে ও তোমার পক্ষ নিয়ে লড়বে। ও হচ্ছে যাকে বলে ফেমিনিস্ট।
শকুন্তলা—অনসূয়া। আমার প্রিয়সখী। আমরা তিনজন, আমি, অনসূয়া আর প্রিয়ংবদা, তিন সখী মিলে অনেকগুলো হরিণশিশু পুষেছিলাম। তাদের কি অবস্থা হয়েছে কে জানে?
অন্নপূর্ণা—ঠিক আছে কনসারভেশনিস্ট, চলো তোমাকে একটু কিছু খাওয়াই। অনসূয়া এই এসে পড়লো বলে।
(দুজনে বেরিয়ে যায়। ছেলেরা অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে।)
বিক্রম—ব্যপারটা ক্রমশঃ ঘেঁটে যাচ্ছে দেখছি। বাবা, আপনার ওই রামের বোতলটায় কি কিছু বাকি আছে? আসুন না ভাগ করে খাই।
শার্ঙ্গরব—কলিযুগের কি মহিমা। মদের নাম নাকি রাম।
কালিদাস—না না, উত্তম প্রস্তাব। কলিযুগের মাধ্বী পান করার এই সুযোগ ছাড়া যায়না। আসুন মহারাজ। (সবাই হাতে হাতে মদ ঢালে।)
দুষ্মন্ত—আচ্ছা কলিযুগে কি সকলেই শ্রীরামচন্দ্র?
বিক্রম—না, অনেকেই পিসীর ভাইপো, ভক্ত হনুমান, কিংবা গৌ মাতার দুষ্টু বাছুর। কিন্তু আপনার বক্তব্যটা কি?
মহাদেব—উনি জিজ্ঞাসা করছেন, সকলেই একদারনিষ্ঠ অর্থাৎ মনোগ্যামাস কিনা। মহারাজ এই তল্লাটে আপাতত তাই। এই যে আমি মহাদেব, আমার একটিই স্ত্রী, অন্নপূর্ণা।
কালিদাস—সাধু সাধু। মহাদেব ও অন্নপূর্ণা। আমার কুমারসম্ভব কাব্যেও আমি আপনাদের একদারনিষ্ঠার গুণগান করেছি।
শার্ঙ্গরব—শুনেছি ওই কাব্য অতীব অশ্লীল। শিব-পার্বতীর প্রণয়কাহিনি নিয়ে লেখা। যাবনিক ভাষায় যাকে বলে পর্নোগ্রাফি।
বিক্রম—চোপ! তাতে তোর কি রে। তা পণ্ডিতমশাই ওই কাব্যটি বাংলা করে একটু বলুন না, আমরাও সবাই শুনি।
(অন্নপূর্ণা ঢোকেন। পিছনে একটা থালা হাতে শকুন্তলা, থালার ওপরে রান্না করা আস্ত ইলিশ মাছ।)
অন্নপূর্ণা—আরে কুমারসম্ভবের কথা তোমরা কি জানো। ফুলশয্যার রাত্তিরে মহাদেব আমাকে পড়ে শুনিয়েছিল, দেবদেবীদের নিয়ে কি সব অসভ্য অসভ্য কথা।
মহাদেব—কই, তখন তো অসভ্য অসভ্য লাগেনি।
অন্নপূর্ণা—আর তুমিও তো হাঁ করে আমার গান শুনছিলে। এখন শোনো?
কালিদাস—দেখুন আপনারা যে এতদিন বাদে বাসরশয্যায় আমার কাব্য পাঠ করছেন, একজন কবির জন্য সেই তো পরম প্রাপ্তি। সত্য না মিথ্যা, শ্লীল না অশ্লীল তার বিচার করবেন মহাকাল।
অন্নপূর্ণা—শোনো সবাই, আজ জামাইষষ্ঠীর দিন ভেবেছিলাম জামাই বাবাজীকে আস্ত ইলিশ মাছ রোস্ট করে খাওয়াবো। ওদিকে আমাদের মেয়েটার দেখা নেই, আর এদিকে বাড়িতে নাটকের রিহার্সাল চলেছে। যা আমার কপাল! তা বাবা বিক্রম তোমার জন্য রান্না, তুমিই আগে টেস্ট করে দেখো।
দুষ্মন্ত—দাঁড়ান দাঁড়ান, আমি একে অতিথি, তারপর রাজা। আস্বাদ করার দায়িত্ব আমিও নিতে পারি।
শার্ঙ্গরব (জেগে উঠে)—কি অপূর্ব সুবাস। বহুক্ষণ হয়ে গেলো ক্ষুধিত হয়ে আছি। দেখি দেখি, এই দিকে নিয়ে আসুন।
বিক্রম—ক্ষুধিত হয়েই থাকো। আজ জামাইষষ্ঠীর দিন, আমি আগে খাবো। (মাছ থেকে টুকরো মুখে দেয়, তারপরই আর্তনাদ করে ওঠে) উঃ দাঁতটা ভাঙলো।
মহাদেব ও দুষ্মন্ত (একসঙ্গে)—আরে আরে এটা দেখছি আংটি—
বিক্রম—তাই তো দেখছি। হীরের আংটি। তাহলে কি?
দুষ্মন্ত—হ্যাঁ হ্যাঁ এই তো আংটি পাওয়া গেছে। আমার রাজঅঙ্গুরীয়! আমার অভিজ্ঞান! শকুন্তলা আমার সব মনে পড়ে গেছে। এই দুই ব্রাহ্মণকে সাক্ষী রেখে আমি তোমাকে গ্রহণ করলাম। আজ থেকে তুমি আমার পাটরানী, তোমার পুত্র যুবরাজ হবে, সেই আমার পরে রাজ্যশাসন করবে।
কালিদাস—দেখুন। বলেছিলাম না মাছের পেটে আংটি পাওয়া যাবে।
মহাদেব—কিন্তু আংটিটা যেন চেনা চেনা লাগছে।
অন্নপূর্ণা—উঃ! চুপ করে থাকতে পারোনা এক মিনিট।
শকুন্তলা—দৈববাণী কিংবা মাছের পেটে আংটি। কিছু একটা অলৌকিক ঘটনা দরকার, তবেই উনি আমাকে স্বীকার করতে পারবেন। নাহলে লোকে বলবে কি? মহারাজ, লোকনিন্দার যদি এতই ভয় থাকে, তাহলে কান খুলে শুনে রাখুন। সব নারীই সীতাদেবী নয়। আমি কিন্নর দেশে মাতা মেনকার কাছে যাচ্ছি। যদি ফিরিয়ে আনতে হয় তো নিজে গিয়ে সসন্মানে ফিরিয়ে আনবেন।
শার্ঙ্গরব—সাধু সাধু। এই আশ্রমকন্যার তেজ দেখুন সকলে। শকুন্তলা তুমি চিন্তা কোরোনা, এই মহারাজ আসুন কি নাই আসুন, আমি ঠিক তোমার সঙ্গে সঙ্গে যাবো। ছোটবেলা থেকেই তোমায় আমার বড্ড ভালো লাগে। (দুষ্মন্তকে) না মানে গুরুদেবের আদেশ কিনা।
বিক্রম—শখ কত। আয়নায় নিজের মুখটা দেখেছিস?
দুষ্মন্ত—কি, আমাকে প্রত্যাখ্যান করা! এতো অহংকার! আর ভণ্ড তপস্বী তুই আগাগোড়াই এই মতলবে আছিস, না রে? দাঁড়া, আগে তোকে মারবো তারপর শকুন্তলাকে হরণ করে নিয়ে যাবো। (তরোয়াল বার করে। শার্ঙ্গরব বিকট স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে। কোলাহল। বিক্রম পিস্তল বার করে শূন্যে গুলি ছোঁড়ে। সবাই সন্ত্রস্ত হয়ে চুপ করে যায়)
কালিদাস—আপনি কে? বেতালসিদ্ধ মহারাজ বিক্রমাদিত্য নাকি?
বিক্রম—দূর মশাই বোতলে সিদ্ধ হতে আমার বয়ে গেছে। এমনিতেই সংসারের সসপ্যানে সিদ্ধ হয়ে চলেছি। জামাইষষ্ঠীর দিনে বউয়ের দেখা নেই, আর আপনারা শ্বশুরবাড়িতে এসে হল্লা করছেন। এই যে মহারাজ এদিকে আসুন তো। আপনি কিন্তু এতগুলো লোকের সামনে এই মহিলাকে আপনার স্ত্রী বলে স্বীকার করেছেন। এর পরে ট্যাঁ ফোঁ করলে জোচ্চুরি আর মেয়ে পটানোর দায়ে আপনাকে গ্রেফতার করে হাজতে চালান করবো। (এক হাতে পিস্তল ধরে অন্য হাতে পকেট থেকে সেলফোন বার করে।) হ্যাঁ দত্ত, তুমি দুজন সিপাইকে নিয়ে এখুনি হাজির হও দেখি। হ্যাঁ। আরে বলছি তো হ্যাঁ, আমার শ্বশুরবাড়িতে।
মহাদেব—হ্যাঁ, ধরে নিয়ে যাও দেখি বাবা। বাচ্চা মেয়েটাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করে তারপর আবার ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের ভয় দেখানো হচ্ছে। দেবো ধরে—(দুষ্মন্তকে মারার ভঙ্গি করে কিন্তু ওর তরোয়াল দেখে পিছিয়ে গিয়ে বিক্রমের পেছনে দাঁড়ায়)
কালিদাস—অহো ভাগ্য, সর্বত্রই শুধু হিংসা হানাহানির কথা কেন? আংটি পাওয়া গেছে, মহারাজ শকুন্তলাকে স্বীকার করেছেন, কিন্তু শকুন্তলার অভিমান ভঙ্গ হয়নি। আমাদের কি উচিত নয় যে ওঁদের কিছুটা সময় দিই। তার মধ্যে কুমার ভরতের জন্ম হোক, যাঁর নামে এই ভারতবর্ষ।
বিক্রম—মামনি, আমার কিন্তু এই মহারাজ, মহাকবি আর ব্রহ্মচারী, সব কটাকেই জালি মনে হচ্ছে। আমি তো বলবো শকুন্তলার উচিত ডিভোর্স নিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করা। হ্যাঁ!
দুষ্মন্ত—দাঁড়াও দাঁড়াও। সবাই মিলে আমাকে খলনায়ক বানিয়ে ফেলার আগে একটু ভেবে দেখো। মহাভারত, আদিপর্বে ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদে শকুন্তলা আমাকে কি বলেছিল কেউ মনে করতে পারেন কি?
মহাদেব—শকুন্তলা বলেছিলেন যে মহারাজ আপনি প্রতিজ্ঞা করুন, আমার পুত্র যুবরাজ হবে এবং আপনার পরে সেই পুত্রই রাজা হবে। মহারাজ আপনি কিন্তু পরিষ্কার বলেছিলেন যে তুমি যা চাও তাই হবে।
বিক্রম—এটা কিন্তু আমার বেশ গোলমেলে মনে হচ্ছে। টোপের মধ্যে বঁড়শি।
দুষ্মন্ত—এই তো, এমন কি এই রাক্ষস ব্যাটাও আমার সমস্যাটা বুঝতে পারছে। আমি বিবাহিত, বাচ্চাকাচ্চাও রয়েছে, এইরকম শর্তে রাজি হওয়া কি সম্ভব। তাই একটু কৌশল করে।
শার্ঙ্গরব—তা অসম্ভব হলে মহারাজ বিদায় নিলেই পারতেন। শকুন্তলাকে নিয়ে লতাবিতানে প্রবেশ করার কি দরকার ছিল? কৌশল করে!!! যাকগে, আমার প্রণয়ের শখ মিটে গেছে। এখন কেউ তো একটা আমার এই লৌহবলয় খুলে দাও, আমি আশ্রমে প্রত্যাবর্তন করি, বাকি জীবন তপস্যা আর ব্রহ্মচর্যেই কাটিয়ে দেবো।
বিক্রম—এ শালা দেখছি হতাশ প্রেমিক। দালালের থেকেও খারাপ।
অন্নপূর্ণা—যেতে দাও বিক্রম, নিরীহ লোক, ওদের ওপর অত্যাচার করে লাভ নেই (বিক্রম খুলে দেয়)। জেলে দিতে হলে তো সবকটাকেই দিতে হয়। তার চেয়ে সবাই ভালোয় ভালোয় বিদায় হও। আমি মেয়ে জামাইকে নিয়ে একটু খেতে বসি। (স্টেজে আবার কুয়াশা, পৌরাণিক চরিত্ররা একে একে বেরিয়ে যায়। বাইরে বৃষ্টির শব্দ)
বিক্রম—একসাথে খেতে বসবে? তোমার মেয়ে কি এখনও ফিরেছে? স্লো ডাউন করতে বলতেই তো কুরুক্ষেত্র। মামণি, আমি আর নিতে পারছিনা।
অন্নপূর্ণা—অনু কি তাহলে ওর সন্তানকে একলা মানুষ করবে? তোমরা যে একটা নতুন জীবন আনতে চলেছ এই পৃথিবীতে।
(বাইরে বাজের শব্দ। বিক্রম চমকে ওঠে। অনসূয়া ঢোকে। জামাকাপড় ভেজা, হাতে খোলা ছাতা আর ব্যাগ)
অনসূয়া—সরি, সরি বড্ড দেরি হয়ে গেলো।
বিক্রম—আরে এ কি? একদম ভিজে গেছো। দেখি দেখি (অনসূয়ার হাত থেকে ছাতা আর ব্যাগটা নেয়) বোসো এখানে। মামণি একটা টাওয়েল দাওনা।
অন্নপূর্ণা—(আলমারি থেকে তোয়ালে বার করে) এই নাও বাবা।
বিক্রম—(তোয়ালেটা অনসূয়ার গায়ে জড়িয়ে দেয়) বাঃ, ভিজে কাক হয়ে বেশ দেখাচ্ছে তো তোমাকে।
অনসূয়া (লজ্জিত ভাবে)—তোমাকেও ইউনিফর্মে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে বিক্রম। আজ তো তোমার স্পেশাল ডে। (চারিদিকে তাকিয়ে) আচ্ছা তোমাদের কেমন যেন অন্যরকম দেখছি। সব ঠিক আছে তো?
অন্নপূর্ণা—সব ঠিক আছে রে মা, সুযোগ পেয়ে শ্বশুর-জামাই মিলে আচ্ছাসে নেশা করেছে। থাক গে আজকের দিনে আর বকাবকি করিস না। আয় সবাই খাবার ঘরে আয়। (বেরিয়ে যায়)
অনসূয়া—না না বকুনি তো আমার খাওয়া উচিত (বিক্রমের কাছে গিয়ে) আমি তোমার ফেভারিট ডেসার্ট কিনে এনেছি। অবশ্য মায়ের রান্না খাবার পরেও পেটে যদি কোনো জায়গা বাকি থাকে তোমার।
বিক্রম—না না অনেক জায়গা থাকবে। খুব খিদে পেয়েছে তো।
অনসূয়া—জানো বিক্রম, বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় লবিতে একটি মেয়ের সঙ্গে দেখা হলো। আমারই বয়েসী হবে, খুব সুন্দর দেখতে। ওকে দেখে মনে হলো ও যেন আমার অনেক দিনের চেনা। ডেকে কথা বলতে যাবো কিন্তু তার আগেই মেয়েটা যেন হাওয়ায় মিশে গেল।
বিক্রম—তোমারও কি মাথা খারাপ হলো নাকি?
অনসূয়া– এত সব পুরনো কথা মনে পড়ছে হঠাৎ। কলেজের কথা, বিয়ের আগের কথা। ইস দেখো দেখি আজকাল কাজে কাজে আর দেখাই হয়না আমাদের। এই, চলো না, ছুটি নিয়ে বেশ একটা পাহাড়ি জায়গায় বেড়াতে যাই। জানো হিমালয়ের সাংলা ভ্যালিতে সেই ইন্ডো-টিবেটান বর্ডারের কাছে কিন্নর দেশ বলে একটা জায়গা আছে। সে নাকি একেবারে স্বর্গ।
বিক্রম—আচ্ছা আমি যে সেদিন বললাম—চলো, একটা উইকএন্ড নিয়ে দুজনে মন্দারমনি থেকে ঘুরে আসি। তখন তো এক বকুনি দিয়ে বললে যে তোমার নাকি মরারও সময় নেই।
অনসূয়া—সরি, আর বকুনি দেবো না। যাবে?
বিক্রম—মানে একেবারে তিব্বত? অতদিন ছুটি।
অনসূয়া—আঃ, চলো না।
(বিক্রমের হাত ধরে বেরিয়ে যায়। স্টেজে মহাদেব ও অন্নপূর্ণা)
মহাদেব—যাক বাবা বরফ গলছে বলে মনে হচ্ছে। এই শোনো, ওই আংটিটা একবার দেখাও তো। আরে, এতো আমাদের সেই পুরনো পাকা দেখার আংটি! হারিয়ে গেছিল না?
অন্নপূর্ণা—গেছিল তো। মাসখানেক আগে অনু যখন কথাটা বলল তখন একদিন বাক্স ঘাঁটতে ঘাঁটতে খুঁজে পেলাম। বাবার গুরুদেবের দেওয়া আংটি, খুব পয়মন্ত। দেখলাম, এতদিনে তোমার চোখে পড়লো।
মহাদেব (লজ্জিত গলায়)—না মানে, ওই নানান হাঙ্গামায় তোমার আঙুলের দিকে তাকানো হয়ে ওঠেনি এই আর কি ।
অন্নপূর্ণা—হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝেছি। হাতটা একবার ধরলে তবে তো আংটি দেখবে।
মহাদেব—তা তোমার কি মনে হয়? শকুন্তলার আংটি ছিল কি ছিলোনা।
অন্নপূর্ণা—কি এসে যায়। এই যে আমরাই তো আংটি হারিয়ে ফেলেছিলাম, আবার খুঁজে পেয়েছি। আংটি কোথায় গেছিল, এই ঝামেলার সময় কোথা থেকে ফিরে এলো কে জানে। তা স্ক্রিপ্টটা কেমন লাগলো বললে না তো?
মহাদেব—মানে? মানে এটা তোমার লেখা? ইট ইস ফ্যাবুলাস। এই পুজোতেই নামিয়ে দেবো।
অন্নপূর্ণা—আজ্ঞে হ্যাঁ কবিমশাই। গপ্পো বুঝি তুমি একাই লিখতে পারো? শোনো আমরা দাদু-দিদিমা হতে চলেছি, এখন থেকে নেশাভাং করা একদম বন্ধ। বুঝেছো?
মহাদেব—যথা আজ্ঞা। তাহলে আজ শেষবারের মতন খেয়ে নিই।
(বোতল তুলে নেয়, অন্নপূর্ণা ওর হাত থেকে কেড়ে নিতে যাচ্ছে। নেপথ্যে গান—নেশা লাগিল রে। খুব উত্তেজিতভাবে কথা বলতে বলতে বিক্রম আর অনসূয়া ঢোকে, দুজনেই হাসছে। কোলাহল। পৌরাণিক চরিত্রেরা একে একে ঢুকে ওদের ঘিরে দাঁড়ায়।)
(যবনিকা)
(পরবাস-৭৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯)