Subscribe to Magazines




পরবাসে ছন্দার বিউট্রার
আরো লেখা
অনূদিত বই





ISSN 1563-8685




বুড়ো হওয়া সহজ কর্ম নয়!

রাত্তির দুটো বাজে। মিসেস বি আধোঘুমে এপাশ-ওপাশ করছেন। কোনো উপায়ে শরীরের যাবতীয় ব্যথার উপশম খুঁজছেন।

বাঁদিকের হিপ—উঁহু, উঁহু! বাঁদিকে নয়, বাঁদিকে নয়। অন্যদিকে ফেরো। আমি এইতো সবে ইমপ্ল্যান্ট হলাম। একটু সবুর দাও।

কোমর—হ্যালো হিপ, তোমার পূর্বসূরীও খুব কাতরাতো। বেচারা, ওর জন্ম থেকেই ওই রোগ। তখনকার দিনে তো এক্স-রে-টেক্স-রে ছিল না। আর মেয়েদের জন্য কে-ই বা অতসব করে? বলবে, ‘ও তো একটা মেয়ে। ওর জন্য আবার এত আদিখ্যেতা কেন?’ বা, ‘ও কি আর অলিম্পিকে মেডেল জিতবে?’ তাই যখন বুড়ো বয়সে ইমপ্ল্যান্ট-টা করাতেই হল, ওটার অবস্থা যা হয়েছিল, দেখে চেনা যায় না।

ডান গোড়ালি--- হ্যাঁ দেখেছি। মনে আছে আমি যখন আট বছর বয়সে মচকেছিলাম? আমি তো বেলুনের মতো ফুলে উঠেছিলাম। তা ওরা কী করল? একটু চুন-হলুদ লাগিয়ে একটা পট্টি বেঁধে দিল। ব্যস, আমি আর কখনো আগের মতো স্লিম হতে পারলাম না।

বাঁ কাঁধ---ব্যস, ব্যস বন্ধুগণ, ওসব পুরোনো কথা ভেবে কী হবে? তখন থাকতাম তো এক অজ পাড়াগাঁয়ে। চুন-হলুদ ছাড়া ওরা আর কীই বা করতে পারত?

ডান হাঁটু---এই যে, মাডাম থামুন, থামুন। ডানদিকে ফিরবেন না। আমি এখনো ব্যথায় টনটন করছি, আপনার ওই আইসল্যান্ড হন্টনের জন্য। আইসল্যান্ড! সত্যি, এই বুড়ো বয়সে কেউ আইসল্যান্ড বেড়াতে যায়? দেখেছন না, আমরা সবাই বুড়ো হচ্ছি? যৌবনের সেই শক্তি আর মসৃণতা কি আছে? এখন আমরা সবাই ক্ষয়িত, জীর্ণ। কী আর করতে পারি?

বাঁ হিপ---বিদায় দাও, বিদায় দাও। নিয়ে এসো নবীন ইমপ্ল্যান্ট!

কোমর---আমার অবস্থাও তোমাদের মতোই, কিন্তু আমার আর ইমপ্ল্যান্ট কোথায়? এখনো আবিষ্কারই হয়নি। ...ভালো কথা, কাঁধ? কনুই? কবজি? তোমরা সবাই কেমন আছো? তোমাদের ভাগ্যি ভালো, এই মুটকির ওজন সারাদিন বয়ে বেড়াতে হয় না।

ডান কবজি---আর ভাগ্যি? আমার কপালে নেই ভাই। তোমরা যখন ব্যথায় কাতরাও, গিন্নি কী করেন? আরামচেয়ারে পা তুলে বসে কাঁথা সেলাই করেন! সোয়েটার বোনেন! তাঁর আদরের নাতি, নাতনিদের জন্য। (সবাই তো আদর পেয়ে পেয়ে মাথায় উঠেছে।) কবজির যে কী অবস্থা তার খেয়াল নেই। আমারও তো বয়েস হয়েছে তোমাদের মতোই। আমার যখন ব্যথা ওঠে উনি কী করেন? একটা বড়ি গিলে সেলাই চালিয়ে যান। একদিন ভাবলাম, খুব হয়েছে, এমন ব্যথা দিলাম যে সারা হাতটাই কাঁপতে শুরু করল। সেইদিন আমি একটু রেস্ট পেয়েছিলাম।

ডান কাঁধ--- ম্যাডামের সেই ক্যান্সার সার্জারির পর থেকে আমি একটু ছাড়া পেয়েছি। ভারী ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক আর বইতে হয় না---

বাঁ কাঁধ---তুমি পারো না, তাই আমায় ওই সব বইতে হয়। ওই ব্যাগে যে কী ভারি ভারি জিনিস জমিয়ে রাখেন।

ডান কাঁধ--- এই, আমাকে বলতে দাও তো--জানো, সার্জারির পর থেকেই আমার এই ফুলে ওঠার রোগ হয়েছে। তার ওপর আমার এই প্রতিবেশীর (ঘাড়ের দিকে আঙুল দেখিয়ে) অত্যাচার—

ঘাড়---(লজ্জিত স্বরে), হ্যাঁ, সত্যি ভাই। আমারই দোষ। মনে আছে, অনেক বছর আগে অ্যাকসিডেন্টে আমার চারটে হাড় ভেঙেছিল? সেই জোড়া তো লাগল কিন্তু মাঝখানে একটা নার্ভ-এ চাপ পড়ে সারা হাতে ব্যথা ছড়িয়ে যায়। জানি এটা কোনো হেলাখেলার ব্যাপার নয়। কিন্তু কী করি? আমি তো নিরুপায়।

বাঁ হাতের কড়ে আঙুল---তোমরা আমায় ভুলে যাচ্ছ।

পিঠ---তোমার আবার কী হল?

কড়ে আঙুল---উনি যে সবসময় আঙুল মটকান। ভীষণ বদভ্যাস!

বাঁ কাঁধ---ওতে তো কোনো দোষ নেই, আমি পড়েছি কোথাও—

কড়ে আঙুল (ঠোঁট ফুলিয়ে)---আমি জানি না, আমারও তো একটু খাতির চাই। ভাবছি এবার আমিও ব্যথায় ফুলে উঠব। তবে হয়তো অভ্যেসটা ছাড়বেন।

বাঁ কাঁধ--- বেশ, তাই করো। সত্যিই তো, তুমিই বা বাদ যাবে কেন?

পিঠ--একটা জিনিস খেয়াল করেছো? আমরা সবাই তখন থেকে কিছু না কিছু নিয়ে আহা-উহু করে যাচ্ছি। বেচারা মিসেস বি, তাই তো সারারাত একটুও ঘুমোতে পারেন না। আমার সত্যি কষ্ট হয় ওঁর জন্য।

ডান হিপ---এক্কেবারে ঠিক বলেছ! জানি না আমাদের নিয়ে কী করে দিন কাটান। লোকে ঠিকই বলে, বুড়ো হওয়াটা সত্যিই সহজ কর্ম নয়।

অনেকক্ষণ ছটফট করার পর বেচারা মিসেস বি শেষ রাতে একটু ঘুমোতে পারলেন।





(পরবাস-৭৯, ৯ জুলাই, ২০২০)