কাঁটাবন
সময়ের ঘড়িঘরে বসে বসে কল্পনায় বোনা
অলস দুপুরে, জোড়া কাঁটা দিয়ে রঙিন পশমে,
স্মৃতিছবি। খুঁজে-আনা অবিন্যস্ত সুতোগুলো ক্রমে
জট খুলে জোট বাঁধে। কাঁটা বোনে বিস্রস্ত আলপনা।
হঠাৎ খেয়াল হয়, ঘরের গুন্তিতে মিলছে না,
কোথাও বেতালা বাজছে ঘড়ি ঘড়ি কাঁটা-পেন্ডুলামে।
চেয়ে দেখি, বহু আগে ঘর পড়ে গেছে। এক দমে
নীচে নেমে ছুঁয়েছে সে জীবনের ভিতের বঞ্চনা।
এখন কী করি বলো, সময়ের কাঁটাকে ফিরিয়ে
আর কি সারানো যাবে ফেঁসে-যাওয়া জামার বুনট?
কাঁটা দিয়ে ঘর গেঁথে গা-এলাবো কণ্টকশয্যায়?
ঘর পড়ে রয়ে গেছে শুধু ওঠা-নাবার সিঁড়ি এ,
তাই বেয়ে উঠি নাবি, জামা করি ওলট-পালট,
সারাই করতে গেলে মেলে না যে কাঁটায় কাঁটায়।
অশ্বত্থ-কথা
বইয়ের ভাঁজেতে শুকনো অশ্বত্থপাতার মতো আজ
খসলে হাওয়ায়, যেন প্রসঙ্গবিহীনভাবে ভেসে
পাতার জালিকা কন্যা, পতঞ্জলি পত্রের নীরসে
দ্রষ্টা সেজে জীর্ণ হয়ে গেছ। আর স্মরণে কী কাজ?
কালের দামামা বাজে, আহ্বান মানে না স্মৃতিসেনা
বর্তমান ঘূর্ণিঝড় পাক দেয় ভূতভবিষ্যতে
স্ফিংক্সের মতন থাকো নির্বিকার মরুর আঁধিতে
তুমি যে জালিকা, তাই তা তোমাকে বিস্রস্ত করে না।
আবার সে জালিকাই ফুটে ওঠে রাতের আকাশে,
তারার হীরকজাল ফুঁড়ে আসে অনন্ত তিমির
আগামী সে মৃত মূক চেয়ে থাকে দৃষ্টিহীন স্থির
যে-চাহনি আগাগোড়া বলে দেয় নিঃসীম কথা সে।
কালের হিসেব মিশে একাকার হয়ে যায়। খালি
মাঝখানে ভেসে থাকে অসত্যকথার সেই জালি।
ঠিকানা
ম্যাপ ঘেঁটে যত ইচ্ছে খোঁজো তুমি, ঠিকানা পাবে না—
যতো কেন স্ট্রেচ্ করো মুঠে ধরা গুগুল-টুগুলে।
কী করে আসবে তবে আমার ঘরেতে? পথ ভুলে?
কপালে ভরসা করে সেখানে তো পৌঁছনো যাবে না!
তিনভাগ জল আর স্থল তুমি দেখেছ তো গ্লোবে।
কোন্ স্থান-কালে আছি? বর্তমানে? কাছে না সুদূরে?
কিছু বোঝা যায় নাকি? দ্রাঘিমা পাল্টায়, মরে ঘুরে
নির্বোধ গোলক। সূর্য নিরুপায় ওঠে আর ডোবে।
সূর্যেরই সংসারে আছি নিশ্চয়। খোঁজো তো খুঁটিয়ে
পৃথিবীর পিনকোড! ছায়াপথে সূর্য বা কোথায়?
গ্যালাক্সির ঠাসাঠাসি ভিড়ে কি খেয়াল রাখা যায়
কোন্ খানে কোন্ সূর্য কোন্ ধূলিকণায় লুকিয়ে?
প্রেমের ঠিকানা চাও, রাতের আকাশে খুঁজে নাও
সেই প্রেম, সে-ঠিকানা মহাশূন্যে কোথায় উধাও।
(পরবাস-৮০, ১২ অক্টোবর, ২০২০)