Subscribe to Magazines




পরবাসে সংগ্রামী লাহিড়ীর
লেখা




ISSN 1563-8685




বার্লিন ওয়ালের গ্রাফিটি

সংগ্রামী লাহিড়ী


বার্লিন ওয়ালের স্ল্যাবের ওপর গ্রাফিটি

হাঁটতে হাঁটতে ক্রিস বললেন, "দেওয়ালের দুদিকে প্রায় দুশো মিটার জায়গা ছিল নো-ম্যানস-ল্যান্ড। সেখানে শুধুই গার্ডদের টহলদারি। ধরা পড়লে আর রক্ষে নেই।"

কথা হচ্ছিল গ্রীষ্মের এক মনোরম বিকেলে। বার্লিনে সূর্য ডুবতে দেরি আছে। সেদিনই সকালে সুইস এয়ার আমাদের জুরিখ থেকে তুলে নামিয়ে দিয়েছে বার্লিনে। নেমে কোনোমতে লাগেজ জমা করে দিয়েই আমরা বেরিয়ে পড়েছি। গন্তব্য বার্লিন ওয়াল।

বার্লিনে আসা নিয়ে কম ঝামেলা? ইউরোপ ভ্রমণদলের চার সদস্য ভিন্নমত পোষণ করেন। জুরিখ থেকে কেউ যেতে চান প্রকৃতির কোলে, মিউনিখে। কারোর পছন্দ প্রাগের রূপকথার রাজ্য। শেষে আমার ইচ্ছেটাই পাকেচক্রে মেজরিটি ভোটে পাশ করে গেল। আমরা মহাযুদ্ধের ইতিহাসের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। চালাও পানসি বেলঘরিয়া, থুড়ি, চালাও প্লেন বার্লিনে।

দু-দু'টো মহাযুদ্ধ দেখেছে এই শহর। জার্মান শক্তির ভরকেন্দ্র বার্লিন, গর্বিত প্রাশান সাম্রাজ্যের রাজধানী বার্লিন উনিশশো সালে গোটা ইউরোপে বিখ্যাত। বিজ্ঞান, কলা, সংগীত, উচ্চশিক্ষা, স্থাপত্য - সর্বত্র তার জয়ধ্বজা। সেই শহর গুঁড়িয়ে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। কোনো বাড়ী আর অক্ষত ছিল না, কার্পেট বম্বিংএ সর্বত্র শুধু ধ্বংসস্তূপ। মিউজিয়াম, চার্চ, স্কুল-কলেজ মাটিতে মিশে গেছে। পরাভূত বার্লিন শহরকে বিজয়ী পক্ষ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়ে শেষ করে দিতে চাইল। কেমন করে সে শহর ফিনিক্স পাখীর মতো ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসেছে, দেওয়ালের বিভেদ জয় করে এক হয়েছে - একবার নিজের চোখে দেখার বড় সাধ ছিল। তাই বার্লিনে নেমেই প্রথম গন্তব্য - বার্লিন ওয়াল।

বার্লিন ট্রেন স্টেশন থেকে আমরা মেরুনরঙা দোতলা টুরিস্ট বাসে চড়ে বসেছি, হপ-অন-হপ-অফ ট্যুর। অর্থাৎ বাস সারা শহর ঘুরবে, তোমার যেখানে ইচ্ছে নেমে দেখেশুনে আবার পরের বাসে উঠে পড়ো। বেশিরভাগ শহরেই এই ব্যবস্থা চালু।

এই ফাঁকে বলে রাখি, উনিশশো উননব্বই সালে বার্লিন ওয়াল ভেঙে দুই বার্লিন এক হয়ে যায়। ঐতিহাসিক একশো চল্লিশ কিলোমিটার লম্বা বার্লিন ওয়ালের আজ খুব সামান্য অংশই দাঁড়িয়ে আছে পর্যটকের আকর্ষণ হয়ে। সেই অংশগুলি দেখতেই আমাদের আসা।

মেরুনরঙা বাস নামিয়ে দিল ফ্রেডরিকস্ট্রাসে রাস্তায়। এখানেই বার্লিনে ওয়ালের বিখ্যাত চেকপয়েন্ট চার্লি। আমেরিকান সৈনিকদের ঘাঁটি ছিল। পুব-পশ্চিমের যাতায়াত কড়া হাতে আটকানো হত। ক্যাপিটালিজম-কমুনিজমএর ঠান্ডা লড়াইয়ের চিহ্ন। বার্লিন ওয়ালের একটুকরো অংশ আছে এখানে। সঙ্গে একটি মিউজিয়াম, ফ্রেডরিকস্ট্রাসে আর শুটজেনস্ট্রাসে রাস্তাদুটির মোড়ে। চট করে দেখে নিয়েই আবার পরের বাসে উঠে সোজা পৌঁছলাম শহরের মাঝামাঝি Ostbahnhof রেলওয়ে স্টেশনের কাছে। সেখান থেকে শুরু হচ্ছে বার্লিন ওয়ালের সবচেয়ে বিখ্যাত অংশ - ইস্ট সাইড গ্যালারি।


বার্লিনের দেওয়াল - ইস্ট সাইড গ্যালারি

ইস্ট সাইড গ্যালারি অংশটি প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা। পাশ দিয়ে ছলছল করে বয়ে গেছে স্প্রী নদী। নদীতে বোটিং চলছে, বার্লিন শহরের রূপ নদীর বুক থেকে দেখা এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। আপাতত আমরা বোটিংএর প্রলোভন জয় করেছি। হাঁটছি ভাঙা দেওয়াল বরাবর। কংক্রিটের স্ল্যাব সার বেঁধে দাঁড়িয়ে, ঐতিহাসিক বার্লিন ওয়ালের অংশ। সেই ইতিহাসের পুব দিকের দেওয়াল জুড়ে অসংখ্য চিত্রবিচিত্র ছবি। ছবিতে ধরা আছে জার্মানির ইতিহাস, দেওয়াল তুলে পুব-পশ্চিম বিভাজন আর মানুষের যন্ত্রণার কথা, দুঃখ পেরিয়ে আলোয় আসার কথা। বিশ্বের একুশটি দেশ থেকে প্রায় দেড়শো জন চিত্রকর ছবিগুলি এঁকেছেন। ইস্ট সাইড গ্যালারি আজ খোলা আকাশের নিচে পৃথিবীর বৃহত্তম আর্ট গ্যালারি।


স্প্রী (Spree) নদী

হাঁটতে হাঁটতে ক্রিসের সঙ্গে দেখা। ক্রিস বার্লিনেরই লোক, এখন বেলজিয়াম-বাসী। প্রতি বছর একবার করে বার্লিন আসেন, সেই দেওয়ালের কাছে, যা এখন শুধুই অনস্তিত্ব। চোখের সামনে পড়ে আছে ইতিহাসের টুকরো।

দেখে নিলাম 'ফ্রেটার্নাল কিস', দিমিত্রি ভ্রুবেলএর আঁকা বিখ্যাত ছবি। ছবিতে আছেন প্রাতঃস্মরণীয় জার্মানরা। শিলার, গ্যেটে, আইনস্টাইন। ছবি তোলার লোভ সামলানো গেল না। আইনস্টাইনের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি ছবি নেওয়ার চেষ্টা করছি, প্রৌঢ় ক্রিস এগিয়ে এলেন, "দাও আমি তুলে দিই।"


শিলার, গ্যেটে, আইনস্টাইন - ইস্ট সাইড গ্যালারিতে ছবি

সেই আলাপ। জিজ্ঞেস করলেন, "ইন্ডিয়া?"

হ্যাঁ, হ্যাঁ সে তো বটেই। আমিই শুধু আটলান্টিক টপকে ফেলেছি। বাকিরা খাস কলকাতার লোক।

"ক্যালকাটা? মানে টেগোর? মাদার টেরেসা?" চোখ সরু করলেন।

জার্মানরা সব্বাই ইন্ডোলজিস্ট। জার্মানি ভ্রমণকালে বিলক্ষণ বুঝেছি। তার প্রথম পরিচয় পাওয়া ক্রিসের কাছে। আমাদের কারোর মুখ খুলতেই হল না। পাঁচমিনিটেই বুঝিয়ে দিলেন টেগোর ঠিক কতবার জার্মানিতে এসেছেন ও কী কী কথা তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন। শুনে আমরা বিমোহিত। এত জানতাম না, সত্যি।

শেষ তথ্যটি পরিবেশন করলেন, "টেগোরের মূর্তি বসিয়েছি আমরা, হামবোল্ট ইউনিভার্সিটিতে। ওখানেই তিনি বক্তৃতা দিয়েছেন। দেখে এস। কদ্দিন আছো বার্লিনে?"

দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বার্লিনের মেয়াদ দু’দিনের। তারমধ্যেই একটি দিন বার্লিনে ওয়ালের জন্যে রাখা।

ঘাড় নাড়লেন, "ঠিকই করেছো। ইতিহাসের এমন জীবন্ত সাক্ষী আর হয় না।"

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি চার ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল, বার্লিনও তাই। চার বিজয়ী দেশ এক এক টুকরো নিজেদের ভাগে নিয়ে জার্মানিকে শিক্ষা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরেই ব্যাপারটা দাঁড়াল অন্যরকম। কমিউনিজম আর ডেমোক্রেসির লড়াই। ফ্রান্স, গ্রেট ব্রিটেন আর আমেরিকার তিন অংশ এক করে তৈরী হল পশ্চিম জার্মানি আর সোভিয়েত অংশে পূর্ব জার্মানি। সেইসঙ্গে বার্লিন ওয়াল শহরটাকে দুটুকরো করে দুটি দেশের সীমানা নির্ধারণ করে দিল। দেওয়ালের একদিক থেকে অন্যদিকে যেতে ভিসা লাগে। অনেকদিন ধরে এ দেওয়ালের কাজ চলেছিল, বোধহয় তৃতীয় বা চতুর্থ দফার কাজ । আরো, আরো শক্তপোক্ত দেওয়াল যাতে মানুষ কিছুতেই পূর্ব থেকে পশ্চিমে না যেতে পারে। দেড়শো কিলোমিটার লম্বা এক সার কংক্রিটের স্ল্যাব একটা গোটা শহরকে দুটো ভাগে ভাগ করে দিচ্ছে। আমরা তখন ছোট। কাগজের পাতায় পড়ি এসব খবর।

ইতিহাসের চাকা আজ উল্টোদিকে ঘুরেছে, মানুষই সে দেওয়াল ভেঙে দিল।

দুই দেশের মধ্যে প্রথম প্রথম ভিসা নিয়ে যাতায়াত ছিল। কয়েকবছরের মধ্যেই কিন্তু ভিসা দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। দেওয়ালের পুবদিকে 'ডেথ স্ট্রিপ', কত লোক যে দেওয়াল টপকাতে গিয়ে সেই ডেথ স্ট্রিপে মরেছিল তার ইয়ত্তা নেই।


দেওয়াল টপকাবার মরিয়া চেষ্টা
ছবিতেই ধরা আছে দেওয়াল পেরোবার অবিশ্বাস্য সব চেষ্টা। পূর্ব জার্মানির মানুষ সেসময় মরিয়া। কী না কী সব দুঃসাহসী উপায়ে কোনোমতে একবার পশ্চিমে পৌঁছতেই হবে। কেউ দেওয়ালের নিচ দিয়ে গর্ত খুঁড়েছে, রাতের অন্ধকারে সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে চলে যাবে। গর্ত খুঁড়তে গিয়ে ধরা পড়লে সে আর দিনের আলো দেখবে না। কেউ বা রাতের অন্ধকারে বেলুনে চেপে চেষ্টা করেছে। উঁচু বাড়ীর উপরতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টাও বিরল নয়। যদিও তাতে বেশিরভাগ সময়েই হাত-পা ভেঙেছে, কিন্তু একবার যদি পশ্চিমদিকে পৌঁছনো যায়, তাহলে চিকিৎসা মিলবে, আশ্রয় মিলবে। মিলবে স্বাধীন জীবন। তাই জীবনকেই তুচ্ছ করে পালাবার চেষ্টা, স্বাধীনতার এমনই টান।


No Man’s Land - ইস্ট সাইড গ্যালারিতে ছবি
পলায়নকারী প্রায়ই ধরা পড়ে যেত। দেওয়ালের পাশে নো ম্যান্স ল্যান্ডে টহল দিত পূর্ব জার্মানির কুখ্যাত সিক্রেট পুলিশ 'স্টাজি' (Stasi)। অনেকসময় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে পলাতককে শিক্ষা দেওয়া হত। উনিশশো বাষট্টি সালে আঠেরো বছরের Peter Fechter মরিয়া হয়ে দেওয়ালের দিকে দৌড়েছিল, গার্ডের গুলিতে আহত হয়েও কোনোমতে পৌঁছে যায় দেওয়ালের ওপর। তারপর জীবনীশক্তি যায় ফুরিয়ে। স্তম্ভিত বিশ্ববাসীর চোখের সামনে তাজা তরুণটি পড়ে যায় পূর্বদিকে, যেদিক থেকে সে পালাতে চেয়েছিল। একঘন্টা ধরে রক্তবন্যায় ভেসে পড়ে থাকে পাঁচিলের ধারে যতক্ষণ না সব জ্বালা জুড়িয়ে যায় মৃত্যুতে।

দেওয়ালে আঁকা আছে যন্ত্রণার ইতিহাস, দেখতে দেখতে হাঁটছি। ক্রিস বললেন, "ফ্লাচথিলফার' (Fluchthilfer) কথাটা শুনেছ কখনো?"

অজ্ঞতা স্বীকার করলাম, শুনিনি।


ইস্ট সাইড গ্যালারিতে দেওয়ালে ধরা আছে যন্ত্রণার ইতিহাস
“‘ফ্লাচথিলফার' মানে যারা পয়সা নিয়ে মানুষকে দেওয়াল পার করে দিত। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেওয়ালের নিচে টানেল খুঁড়ত ওরা। কখনো গাড়ির ট্রাঙ্কে শুইয়ে চেকপয়েন্ট পার করে দিত। অনেক সময় ধরাও পড়ে যেত। একবার ধরা পড়লে আর খুঁজে পাওয়া যেত না।"

শিউরে উঠলাম আমরা।

মানুষের ক্ষোভ বাড়তে বাড়তে একসময় বিদ্রোহের চেহারা নিল। অনেক হয়েছে, আর নয়। গণতন্ত্র চেয়ে জনতা রাস্তায় নামল। সেটা উনিশশো উননব্বই সাল। ততদিনে রাশিয়ায় পট পরিবর্তন হয়েছে। ‘পেরেস্ত্রৈকা’ আর ‘গ্লাসনস্ত’এর হাত ধরে খুলে গেছে অর্থনীতি। মুক্তিকামী মানুষের পালে হাওয়া লাগল। দেওয়াল ভাঙ্গার আন্দোলন জোরদার। শেষে জনমতের চাপে শিথিল করা হল দেওয়ালের কড়াকড়ি।

৯ই নভেম্বরের রাতে খবর র'টে গেল বার্লিন দেওয়াল খুলে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বার্লিন থেকে হাজার হাজার মানুষ দেওয়ালের চেকপয়েন্টগুলোতে ভিড় করলেন। সিকিউরিটি গার্ড দিশাহারা। বিশাল জনতার তরঙ্গ রোধ করে সাধ্য কী? চেকপয়েন্ট পেরিয়ে মানুষের ঢল চলে এল পশ্চিমে। পশ্চিম বার্লিনের মানুষ তাঁদের অভ্যর্থনা করলেন, শ্যাম্পেন, গানবাজনা আর চোখে জল নিয়ে। মিলনের আনন্দাশ্রু। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ তখন দেওয়ালের ওপর উঠে পড়েছে। কোদাল, শাবল, গাঁইতি - যে যা পেয়েছে নিয়ে এসে দেওয়াল ভাঙতে শুরু করেছে। পুলিশ অসহায়।

একমাসেরও কম সময়ে দেওয়াল সম্পূর্ণ ভেঙে গেল। দুই জার্মানি আবার মিলে গেল, সৃষ্টি হল ইতিহাস।

পূর্ব-পশ্চিম জার্মানির রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক বিভেদ, বার্লিনের দেওয়াল তৈরী আর তার পতন - এ সবই যুদ্ধোত্তর ইউরোপে খুব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । ক্রিস তাই বার বার আসেন সমসাময়িক ইতিহাসের মুখোমুখি হতে। তাঁর ভাষায়, “we lived through that era."


দেওয়াল পেরোবার সালতামামি ধরা আছে এখানে
দূরে মেরুনরঙা বাস দেখা যাচ্ছে, আমাদের তুলে নেবে ইস্ট সাইড গ্যালারি থেকে। ক্রিসের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। পরের গন্তব্য ‘মাওয়ার পার্ক’। জার্মান ভাষায় ‘মাওয়ার’ কথাটির মানে দেওয়াল। এই অংশেই ছিল একসময়ের ভয়াবহ নো-ম্যান্স-ল্যান্ড, ক্রিস যার গল্প শুনিয়েছিলেন। উনিশশো একষট্টি থেকে উননব্বই পর্যন্ত এখানে মানুষের পা পড়েনি, শুধুই গার্ডের টহলদারি। সেই জায়গা জুড়ে এখন বার্লিন শহরের অন্যতম উচ্ছল, প্রাণবন্ত পার্ক। দেওয়ালের একটি টুকরো আছে পার্কের মধ্যে, এখনো গ্রাফিটি আঁকা চলছে সে অংশে। শিল্পীদের খুব পছন্দের ক্যানভাস। পার্ক জুড়ে বাজার, অগুনতি দোকান রংবেরঙের পসরা সাজিয়েছে। দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে এক মেয়ে, কালো চুল, চোখে কাজল, রংবেরঙের জামা। পাশে সঙ্গী, সামনে কাগজের ওপর রাখা আদিবাসী ধরনের গয়না। মেয়ে নিজেই তৈরী করছে আর সাজিয়ে সাজিয়ে রাখছে। খোলা আকাশের তলায় চলছে গানবাজনা। কোথাও কারাওকে নিয়ে, কোথাও গিটার বাজিয়ে। বাচ্চারা ছোটাছুটি করছে। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ, জগিং করছেন, সাইক্লিং করছেন। একধারে আবার ছোট্ট একটি ফার্মহাউস, টাটকা সবজি বিক্রি করছে। গ্রীষ্মের সন্ধ্যা নামছে পায়ে পায়ে। একটি দুটি আলো জ্বলে উঠছে। অবিভক্ত বার্লিনের মানুষের প্রাণখোলা কলধ্বনি ঢেকে দিচ্ছে ভাঙা দেওয়ালের দীর্ঘশ্বাস।


বার্লিন ওয়ালের ভাঙা স্ল্যাবের ওপর গ্রাফিটি


(পরবাস-৮২, ১৪ এপ্রিল, ২০২১)