Subscribe to Magazines






পরবাসে সমরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের
লেখা

এবং বই



ISSN 1563-8685




মধুপুরের পাঁচালি

কৈফিয়ত




দুষ্টু ওরে, ওরে পাজি, ওরে অর্বাচীন
লেখাপড়ার নামটুকু নেই কেবল সারা দিন
পদ্য লিখিস ভবিষ্যৎ যে তোর দেখি আঁধার
ধর কান তুই এক্ষুনি কর বই খাতা সব বার

রাজার ভাষা দেবের ভাষা চর্চা দুটোই করি
অঙ্ক তো সব সোজাই লাগে যখন সেটা ধরি
তবু কেন বকো আমায় এ সব লিখি বলে
খাতায় আমি লিখতে বসি পড়াটা শেষ হলে

এই যে দেখো মাঠ জঙ্গল এই যে পাহাড় নদী
কি করে আর জানবে লোকে লিখিই নাকো যদি
থাকবে না তো চিরটা কাল, পাল্টে যাবে ক্রমে
পরের যুগে এদের কথা ভাববে কি কেউ ভ্রমে

এই ছড়ানো ফলের বাগান হো মুন্ডাদের গ্ৰাম
এই সাঁওতাল বন্ধুরা পায়ে ফেলছে মাথার ঘাম
ছেলে মেয়ে বাংলা বিহার হিন্দু মুসলমান
এক সাথে যে হচ্ছি মানুষ কে রাখবে প্রমাণ

রেল জংশন ইস্টিশন আর এই যে বাজার হাট
এই ডাকঘর ওই ওদিকে তেপান্তরের মাঠ
ভাঙাচোরা এক্কা টাঙ্গা আর এই গোরুর গাড়ি
পরে তো আর দেবে না কেউ এসব চেপে পাড়ি

সারা বছর ঠান্ডা গরম এই যে কুয়োর জল
ইচ্ছে মতন পেড়ে খাওয়া টাটকা গাছের ফল
গরমে লু শীতের হাওয়ার হাড়-কাঁপানো মার
নিজেই যাব হয়তো ভুলে তাই লেখা দরকার

কাপড়খানার কোঁচড় খুলে বাঁওড়ে ধরা মাছ
নজর দূরে ফেলতে হলে লাফিয়ে চড়া গাছ
কানটি গিয়ে লাইনে পেতে রেলের আওয়াজ শোনা
রাখলে লিখে এসব কথা কেউ আর ভুলব না

বাড়ির উঠোন থেকে তুলে এই যে আনাজ খাওয়া
পাখপাখালি জীবজন্তুর এই যে আসা যাওয়া
এই যে যারা ছুটি কাটায় শহর থেকে এসে
সব কিছু কি রাখবে মনে তারাই ভালোবেসে

তাই বলি দাও লিখতে আমায় দিই না আমি ফাঁকি
লেখাপড়া কাজকর্ম রাখব না কো বাকি
বহু যুগের পরে যখন দেখবো ফাঁকা মাথা
পড়িয়ে দেবে মনে এসব গল্প ছেঁড়া খাতা



(পরবাস-৮৩, ১০ জুলাই, ২০২১)