Subscribe to Magazines






পরবাসে
গোগোল মুখোপাধ্যায়ের

আরো লেখা


ISSN 1563-8685




দ্রঁ

প্রথম পরিচ্ছেদ

…সালে প্রথম সাধারণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তদানীন্তন বর্বর ধনিক সম্প্রদায়ভুক্ত অঞ্চলগুলিতে … এর নেতৃত্বে গঠনমূলক বিদ্রোহের মাধ্যমে এটি শ্রেষ্ঠ সমাজ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। …সালে সাধারণ সম্পাদক… এর তত্ত্বাবধানে প্রাদেশিক অশিক্ষিত জাতি-গোষ্ঠীগুলিকে সংঘবদ্ধ করে একটি পরিপূর্ণ সমাজ কাঠামো গঠনের উদ্দেশ্যে ব্যাপকতর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

—সাধারণ সমাজের অভ্যুত্থান ও বিবর্তনের ইতিহাস, ‘সাধারণ বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী’ মুদ্রণালয়।


দ্বিতীয়বার সাইরেন বাজল। সাদা পোশাকের তদারকেরা প্রত্যেকটি কক্ষের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তৃতীয়বার সাইরেন বাজলে ওরা কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে দরজায় তিনটে টোকা মারবে। এরপরও যদি কেউ বেরিয়ে না আসে, তাহলে ওদের আর কিছু করার নেই। সাধারণ পিতাকে খবর দিতে হবে।

দ্রঁ বেশ মেহনতি করে নামল বিছানা থেকে। ওর এসময়টায় একটু গা এলিয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, কিন্তু সেটা আর কোনোদিনই হয়ে ওঠে না। না, এখানে কাউকে জোর করা হয় না, তবু ওর কেমন যেন একটা লাগে। সাধারণ পিতা বলেন, “দেখো, এটা তোমাদের ভাবার সময়। কেউই তোমাদের জোর করে ‘সামাজিক ভাবনা কেন্দ্রে’ নিয়ে যাবে না, কিন্তু এটা তোমার নিজের সমাজের প্রতি, নিজের ভাইয়েদের প্রতি দায়বদ্ধতা…।” দ্রঁ-এর কোনোকালেই ভাবতে ভালো লাগে নি, বাকি দ্রঁদেরও না, তবে, রঙচঙে পোশাক পরতে ওর বেশ ভালো লাগে। সাধারণ কক্ষ ও কক্ষ সংলগ্ন এলাকায় থাকার সময় সাদা পোশাক পরাটাই দস্তুর। না, না পরলে সাধারণ পিতা ছাড়া হয়তো কেউই কিছু বলবে না, সাধারণ পিতাও হয়তো মৃদু ভর্ৎসনাই করবেন, কিন্তু সকল ভাই যেখানে সাদা পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেখানে রঙিন পোশাক পরে বর্বর আমিত্বের প্রদর্শনী দ্রঁ-এর পোষায় না। তার থেকে এই ভালো, রঙচঙে পোশাক পরে সামাজিক ভাবনা কেন্দ্রে, চরিত্রের ব্যায়াম!

সামাজিক ভাবনা কেন্দ্রে আর সবই ভালো। ভালো খাবার, গদিওয়ালা আরামকেদারা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পেল্লায় সব ঘর আর বড় বড় প্রজেক্টার। খারাপের মধ্যে কেবল ওই ভারী ভারী বইগুলো আর ক্যাপ্টেন। বইগুলোকে তাও রঙিন ছবি দেখতে কাজে লাগানো যায়, কিন্তু ক্যাপ্টেন! ও কোনো কম্মের নয়। লোকটা খালি বাজে বকে। বলে, এখানে আসার আগে সে নাকি এক কেউকেটা ছিল আর এখনো নাকি তাই আছে, শুধু নিয়ম ভঙ্গ হবে বলে সে তার আসল পরিচয়টা কাউকে জানায় না, জানালেই নাকি হুলুস্থুল পড়ে যাবে। ধুস! এরকম কিছু হলে সাধারণ পিতা জানতে পারতেন না! উনি জানেন না এমন কিছু আছে নাকি! আচ্ছা! এমন কিছু থাকতেও তো পারে! কে জানে? থাকলে থাকবে, তাতে দ্রঁ-দের কী? তারা তো সারা জীবন দ্রঁ-ই থেকে যাবে।

তবে দ্রঁ কোনোদিনই কেউকেটা কেউ ছিল না আর হয়ে থাকলেও জানতে পারেনি এতকাল। তবু প্রথম প্রথম বেশ কিছু মানুষ ওর সাথে দেখা করতে আসত। তাদের চেহারা-চরিত্তির দেখে যে কেউ বলে দিতে পারত, দুনিয়ার যত দ্রঁদের সাথেই তাদের কাজ কারবার। তারা রাতের আড়ালে লুকিয়ে-চুরিয়ে আসত আর ভোরের আলো হামজুজুর দরজায় কড়া নাড়ার আগেই কী সব মন্ত্র পড়ে উধাও হয়ে যেত। লোক তারা খারাপ ছিল না মোটে, তবে দোষ ছিল একটাই। একবার এলে ভোর হবার আগে আর যাবার নামটি করত না। মাঝরাতে হাবিজাবি সেজে ঘুরে বেড়াত এদিক-সেদিক। এমনিতে টের পাওয়ার জো নেই, কিন্তু খাঁটি দ্রঁ-এর মতো চোখ যাদের পাকা তারা ঠিকই ধরতে পারত। ধরা যদিও তারা পড়েনি কখনো, তেমন স্বভাব তাদের ছিল না, তবে একদিন হুট করে আসা বন্ধ করে দিল। দ্রঁ-এর তখন বেশ কিছুদিন মন খারাপ করেছিল, হাজার হোক সে তো একজন দ্রঁ!

দ্রঁ-এর এখন আর ভালো করে কিছু মনে থাকে না। সেদিন তো, একটা বুড়ো মাফলার গায়ে জড়িয়ে চলে গেছিল পাথুরে ফুল খুঁজতে। সাধারণ পিতা শুনে বলেছিলেন, “এখানে আবার পাথুরে ফুল কোথায় পাবে? এসব জায়গায় ওসব বুনো ফুলের চাষ হয় না …।” দ্রঁ তাও গেছিল। বেশি হাঁটলে ওর পা বেঁকে যায়, মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা ওঠে, সবই ও জানত, তবুও হেঁটেছিল। অনেক অনেক পথ। কী করবে, ওরা যে ওকে টানে! নেশা বড় বিষম টান। আদিম টান। খালি ডাকে, “আয়, আয়, আয়…”

আচ্ছা, দ্রঁ-এর ঠাকুমা কি এখনো বেঁচে আছে? সেইবার যখন খরা হলো, ছেলে, বুড়ো সবাই মিলে পাহাড় থেকে নামিয়ে আনল ওজানাইকে-কে। ওঝা ওজানাইকে চকমকি পাথর নিয়ে গাঁয়ে ডাইনি খুঁজতে বেরুলো। সেই রাতেই গ্রামের সবাই মিলে দ্রঁ-এর ঠাকুমাকে নিয়ে গেল চ্যাংদোলা করে। তারপর আগুনের সে কী তেজ। রাতের বেলায় দ্রঁ-এর একা শুতে ভয় করত। ঠাকুমা কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলত, “ভয় কী দাদু ভাই! একা কোথায় আমরা? এই যে এতসব এনারা, ওনারা, দত্যি–দানো এরা তো আমাদের কাছের লোক। আলো বড় খারাপ। আলো নিভলে হামজুজু বের হন, কত ভালোবাসেন উনি আমাদের…।” কিন্তু ঠাকুমাও ভয় পেত। মাঠের আল বরাবর হাতে মশাল আর ঘোর লাগা চোখ নিয়ে যারা দৌড়ে আসে রাতবিরেতে, তাদের। তবে, ঠাকুমা অনেক কিছু শিখতে পেরেছিল। সারাদিন আপন মনে সেইসব বিড়বিড় করত। সন্ধ্যে হলে গোয়াল ঘর থেকে লোহার বড় ঝুড়ি নিয়ে আসা হত। প্রদীপের তেল হাতে মেখে ঠায় বসে থাকতে হত আলো নেভা অবধি। সলতেপোড়া ছাই আর রসুনের কোয়া রাখতে হত দরজায় গোড়ায়। ওরা পাথুরে ফুলের গন্ধে মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে, তাই পাথুরে ফুল বেটে লেপে দিতে হত দেওয়ালে। রাত বাড়লেই ওরা টুপটাপ করে খসে পড়ত দেওয়ালের গা থেকে আর তখনি চটপট ঝুড়ি চাপা দিতে হত। ওরা ছিল বেজায় ঠ্যাঁটা, ঘুম ভাঙলেই আঁচড়ে কামড়ে একসা করত। দ্রঁ সে কামড় খায়নি কোনোদিন, তবে ঠাকমার হাতের ডুমো ডুমো লাল দাগগুলো দেখে যে-কেউ এসব কথা আন্দাজ করতে পারত। দ্রঁ-কে মাথায় করে নিয়ে যেতে হত সেই সব ভারী ঝুড়ি। বেচতে হত পাহাড়ের উলটোদিকের গ্রামে। সেখানে ওদের চাষ করা হয়। ওদেরকে দিয়ে আরো অনেক কিছুই করানো হত। তবে ঠাকুমা দ্রঁ-কে কখনো সেসব কথা বলত না, সেসব কথা কোনো দ্রঁ-ই কোনোদিন জেনে উঠতে পারে না।


দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
নিয়ম ভালো লাগার জন্যেও নয়, খারাপ লাগার জন্যেও নয়, কেবল মেনে চলার জন্যে। সাধারণ সমাজ নিয়ম তৈরি করে সকলের ভালোর জন্যে …নিয়মহীন সমাজ বর্বর ও … ‘আমরা’ ই একমাত্র অস্তিত্বময় সত্য।
— সাধারণ সমাজচেতনা, তৃতীয় অধ্যায়, বোধবিধি-৩


এই জায়গাটার রাস্তাগুলো যেন কেমনধারা। চওড়া, সোজাসাপ্টা। কোনো অলিগলি নেই। এতে সুবিধা হয় তাদের, যারা দিনরাত টহল দেয়। তাদের চোখ কিছুই এড়ায় না। কেউ তাদের দেখেনি, কিন্তু সবাই জানে তারা আছে। তাদের থাকতে হয়। কেউ যদি দল পাকিয়ে গোল বাধায়, তারা জানতে পারে। তারা খবর দেয় সাধারণ পিতাকে। সাধারণ পিতার নির্দেশে সাদা পোশাকের তদারকেরা চলে আসে দৌড়ে। তবে পাঁচ হাত দূরে ওদের দাঁড়াতে হয়। ওরা কাউকে হুকুম করতে পারে না, তারা পারে। সেই খেজুরে দল স্বেচ্ছায় চলে ওদের সাথে। সকলকে নিয়ে যাওয়া হয় সাধারণ বিচারালয়ে। তিন জন পরামর্শদাতা (দ্বিতীয় সাধারণ আইনসভায় ‘বিচারপতি’ শব্দটি পরিমার্জিত করা হয়েছে… ) সেখানে তাদের সাথে আইনসংক্রান্ত খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করেন। তারপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্লেষণকক্ষে। সেখানে নির্দিষ্ট চিন্তকদের সাথে তাদের আলাপ করানো হয়। দীর্ঘক্ষণ তারা মানব সভ্যতার ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’ হয়ে ওঠার ইতিহাস নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। তাদের শেখানো হয় মানুষের “ব্যক্তিগত” ব্যাপারটা একটা কালান্তক বিভ্রম। একদম শেষে তাদের পাঠানো হয় সামাজিক ভাবনা কেন্দ্রে। সেখানে তাদের তিন দিন শুয়ে বসে ভাবতে হয়। এসব যদিও শোনা কথা, তবু শুনেই দ্রঁ-এর গায়ে জ্বর আসে। চিন্তা-ভাবনা জাতীয় পদার্থগুলোকে তার ভারী অপাংক্তেয় বলেই বোধ হয়। তাই সে কখনও কোনো সভার মাঝে হাই তোলে না, একা একা খাবার খায় না, সাধারণ ভাইদের অসম্মান করে না, অহেতুক প্রশ্ন করে না, প্রতিদিন ঘুমোবার আগে সাধারণ পিতাকে পরের দিনের কাজকর্মের তালিকা দিয়ে আসে এবং আর যা যা সব নিয়মকানুন বইয়ে লেখা আছে সব কিছু মেনে চলে। এতসব নিয়ম মানতেও ওর ভালো লাগে না কিন্তু বইতে তো আর হাবিজাবি লেখে না। “নিয়ম ভালো লাগার জন্যেও নয়…সাধারণ সমাজ নিয়ম তৈরি করে সকলের ভালোর জন্যে…”

রাস্তাঘাট একটু বিদঘুটে হলেও, এ জায়গাটা যে খারাপ একথা কেউই বলবে না, ডুঁপও না। না! ডুঁপ বলতেও পারে! ডুঁপের বাবার কীসের যেন একটা ব্যবসা ছিল। দ্বিতীয় সাধারণ সমাজ তৈরি হবার পর সে ব্যবসার দায়িত্ব নেয় সাধারণ সমাজমণ্ডলী। ডুঁপের বাবাও চুপ করে থাকে নি। আশপাশের কিছু বর্বর ধর্ষকামীদের নিয়ে পীড়নমূলক বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে। পরে এদের কাউকেই আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। দ্রঁরা যদিও কোনোদিনই বিশ্বাস করেনি এদের অস্তিত্বে, ব্যাপারটা নেহাতই গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তবে ডুঁপ বোধহয় করত। দ্রঁ নিজের কানে ডুঁপ-কে এ-বিষয়ে মারাত্মক কিছু একটা বলতে শুনেছিল, সাধারণ পিতার সামনে, সবার সামনে। সেই মারাত্মক কথার মানেটা যে ঠিক কী, দ্রঁ সেটা ঠাওর করতে পারেনি তবে সাধারণ পিতার থমথমে মুখ-চোখ দেখে দ্রঁ-সুলভ কিছু একটা আন্দাজ করে সে ভালোমতো চমকিত হয়েছিল। কে জানে, হয়তো সেও এরকমই মারাত্মক কিছু একটা বলতে চেয়েছিল কোনো একদিন!

সে যাই হোক, দ্রঁ-দের জায়গার থেকে এ জায়গাটা ঢের ভালো, সে কেউ বলুক আর নাই বলুক। কিন্তু, দ্রঁ-দের তো কোনো জায়গা নেই! দ্রঁ-এর ছিল। একটা নরম গ্রাম ছিল। ঠাকুমা ছিল, দাঙ্গা ছিল, অর্বাচীন আবোলতাবোল ছিল, রাতের মানুষরা ছিল, হামজুজু ছিল, জটাবুড়ি কালের খবর বলতে পারত, মিশুক পাখিরা মায়ের গলা নকল করে বাচ্ছা ছেলেদের নিয়ে গিয়ে ভিড়িয়ে দিত বাসা বানাবার কাজে, পাহাড়ের ওপাশের লোকেরা বৃষ্টির রাতে ভোজ খেতে আসত দল বেঁধে, রঙিন মেলা বসত গাহন মাসের শেষ দিনে … কিন্তু এখন সেসব আর নেই। মনে হয় কোনো কালেই ছিল না। সবটাই দ্রঁ-এর আজগুবি কল্পনা।


তৃতীয় পরিচ্ছেদ

প্রতিভা বলে কিছু হয় না …সমাজ যা লিখবে, তাই শিখবে ।

- সাধারণ সমাজ দর্শন, ভূমিকা, পৃষ্ঠা- ৩


“ঠাকুমা, গাহন মাসের শেষে মেলা হয় কেন?”

“গাহন মাসের শেষে যে আমাদের গাঁয়ে বাস্তব তৈরি হয়েছিল, দাদুভাই।”

“বাস্তব তৈরি হবার আগে তোমরা কী করতে?”

“বাস্তব তৈরি হবার আগে আমরা সারা দিন স্বপন দেখতুম, কেউ ঘুমুতো নি, কাজকম্ম কিচ্ছুটি করতো নি, দিনের পর দিন উপোস করে খালি স্বপন দেখতুম, রঙিন অসম্ভব সব স্বপন। কেউও গ্রামের বাইরে যেতে চাইতো নি।”

“কেন, গ্রামের বাইরে যেতে চাইত না কেন?”

“বারে! গাঁয়ের বাইরে গেলেই তো সব ফক্কা! সেখেনে আর স্বপন কোতা? আর গ্রামের বাইরে যাবার দরকারটাই বা কী ছিল? অমন টুকটুকে সুখ কি হেথায়-হোথায় মেলে?”

“তাহলে বাস্তব তৈরি হলো কেন?”

“শুনলে পেত্যয় যাবে না দাদু! অত সুখেও মানুষগুলোর আশ মিটল না। পাহাড়ে ছুটল ওজানাইকে নচ্ছারটার প্রেপিতেমহের কাছে। বললে, ‘খুড়ো! সবই যে বড় একঘেয়ে ঠেকচে। শরীল-মন সব অসাড় হয়ে আসচে। এই বার যে আরো কড়া কিছু চাই …।’ ওঝাবুড়ো, শুনে কিচ্ছুটি বললে না, শুধু শুধু মিটিমিটি হাসলে।”

“ওঝা বুড়ো তারপর কী করল? বাস্তব তৈরি করল?”

“আরে, না! অত মুরোদ ওর ছিল নাকি! ও খালি রফা করে দিলে।”

“কীসের রফা?”

“বাস্তব কেনার রফা। পাহাড়ের ওপারের লোকেদের কাছে ঢের বাস্তব ছিল কিন্তু তারা স্বপন দেখতে জানতো নি, হয়তো চাইতোও নি। বুড়ো করলে কী, একমুঠো স্বপন নিয়ে ছুটলে তাদের কাছে। ঝরনার জলে, সেই স্বপন ফুটিয়ে রেঁধেবেড়ে খাওয়ালে তাদের। তারপর আর যায় কোতা? তাদের মধ্যে হুলোহুলি পড়ে গেল। স্বপন ছাড়া তাদের তখন আর এক মুহূর্ত চলে নি। বুড়ো কিন্তু চুপটি করে রইল। তারাই ছুটে এল বুড়োর কাছে।”

“তারপর?”

“তারপর পাহাড়ের মাতায় সভা ডাকা হলো। এপার-ওপার দুপারের লোকেরাই জমায়েত হলো। তিন দিন পেরিয়ে গেল, কিন্তু কোনো লাব হলো নি। একপক্ষ রফা করতে চাইলে, অপর পক্ষ গোল বাঁধাল। হাতাহাতি বাকি থাকে খালি। সব দেখে শুনে বুড়ো রেগে গিয়ে মুখ খুললে, “দেখ বাপু, তোমরা মেলা কোন্দোল কোরো নি, তা হলি কিন্তু আমি সকলকে ত্যাজ্য করব, অ্যাঁ।” সেই শুনে সকলে থমকে গেল। কেঁদেকেটে বললে, “হাঁই খুড়ো! ওমন কতা বোলো নি। আর গোল করবো নি। তুমি রফা করে দাও। তুমি যা বলবে তাই সই। কেউ পতিবাদ করবে নি।”

“বুড়ো তখন কী রফা করল?”

“সে তো তুমি জানো দাদু।”

দ্রঁ-এর মন আজ ভালো নেই। কাল রাতে ভালো ঘুম হয় নি। আজ কুয়াশামাখা ভোরের আলোয়, জানলার ওপাশের বাস্তব দেখার চেষ্টা করেছিল, কোনো লাভ হয় নি। রাতের উদ্ভট স্বপ্নগুলোর, এক-আধ সিকি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল, রাস্তায়, ল্যাম্পপোস্টের গায়ে, সাদা বহুতলগুলোর চোখে মুখে কিন্তু এক ছটাক বাস্তব কোত্থাও চোখে পড়ে নি। কে জানে কেন আজ হঠাৎ আঁচড়ে-কামড়ে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করছে বাস্তবকে। অতীতের জন্য কি?

কাল ছিল সাক্ষ্য দেবার দিন। দ্রঁকেও সাক্ষ্য দিতে যেতে হয়েছিল। প্রথমে, সাদা বহুতলগুলো থেকে দ্রঁ সহ অনান্য সাধারণ ভাইয়েদের সার বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সামাজিক ভাবনা কেন্দ্রে। সেখানে ধারালো চেহারার সাদা দাড়িওয়ালা একজন সফেদ মানুষ তাদের সাথে নব মানব বিবর্তনে সাধারণ সমাজের প্রভাব নিয়ে সুগভীর আলোচনা করেন। এরপর সওয়া এক ঘণ্টার একটা প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে। সফেদ মানুষটি হাসিমুখে সকল প্রশ্নের উত্তর দেন এবং সব শেষে “সাক্ষ্য” দেবার বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করেন ।

“আমি জানি, আমার ভাইয়েদের অন্তরে, আজকের এই জমায়েত ঘিরে প্রশ্নের প্লাবন বইছে এবং আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো সুশিক্ষিত চিন্তকের অন্তরের এ-ঝঞ্ঝা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু আমি এও জানি যে আমার দৃঢ়চেতা ভাইয়েরা বিশ্বাস করে যে সাধারণ সমাজ কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান নয়, এবং দু-একজনের স্বার্থের কোনো মূল্য এর কাছে নেই। আমরা কাজ করি ব্যাপকতর সত্তার স্বার্থে। আপনারা হয়তো আমাকে প্রশ্ন করবেন যে কমরেড, সাধারণ সমাজ কি সর্বদা অভিধানগতভাবে নৈতিক কাজকর্ম করে? প্রত্যুত্তরে আমি বলব, “হয়তো না! কিন্তু সাধারণ সমাজ বৃহত্তর স্বার্থের ও বর্বরতাহীন ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে সর্বদা বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। … আমি সাধারণ বুদ্ধিজীবী সংগঠনের বেশ কিছু বলিষ্ঠ মননের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আমাদের সকলের মতে ‘সাক্ষ্য’ শব্দটি কাঠামোগত ভাবে বর্বর এবং আদর্শগত ভাবে সাধারণ সমাজের ভাবধারার পরিপন্থী। সাধারণ সমাজ কারুর ওপর জুলুম করে না, কাউকে সাধারণ নিয়ম মানতে বাধ্য করে না। সাধারণ সমাজ শুধু আশা করে, আপনারা, আমার সুহৃদ, আমার ভাইয়েরা, আত্ম অন্বেষণের মধ্য দিয়ে বর্বরতাবিমুখ হয়ে উঠবেন এবং আমি জানি আপনারা আমাদের আশাহত করবেন না … দুঃখের বিষয় এই যে কিছু প্ররোচিত ভাই আমাদের এই মহান আদর্শে আস্থা হারিয়ে… সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে, আপনাদের সকলের সহায়তায় তাদের আবার মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে পারব, এই আশা রাখি।”

দ্রঁ যদিও বিষয়গুলি খুব ভালো বুঝতে পারছিল না এবং ক্যপ্টেনের অবাঞ্ছিত প্রশ্নটা শুনে মনে হয়েছিল, তিনিও কিছুই বুঝতে পারেননি, তবুও তার ভালো লাগছিল। বক্তার গলায় কোনো জড়তা ছিল না, কোনো অবিশ্বাসের গ্লানি ছিল না, ছিল দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়। মনে হচ্ছিল, ইনি যেটা বলছেন সেটা যদি সত্যি না হয়, তবে সত্যি জিনিসটা তেমন কাজের কিছু নয়। সকল দ্রঁদের চোখ জলে ভিজে গেছিল, বুকে জ্বলছিল আগুন। রাগ হচ্ছিল ৪৩ নম্বর সাধারণ কক্ষের পলায়নকারী ভাইদের ওপর। আদর্শচ্যুত আহাম্মকের দল। অবশ্য তেমন কোনো ক্ষতি ওরা করতে পারে নি। নামহীন তারা, ওদের ধরে ফেলে। সাধারণ পিতা গিয়ে নিয়ে আসেন সকলকে। না, না, সবাই নয়, একজন আসেনি। মনে হয় যেন আসেনি। ডুঁপ।

ডুঁপ যেন প্রথম থেকেই কেমন, বেখেয়ালি বোম্বেটে ধরনের একজন ছিল। কারোর সাথে কথা বলত না, সাধারণ নিয়ম মানত না, সামাজিক ভাবনা কেন্দ্রে যেত না, সাধারণ ভাইয়েদের সম্মান করত না এবং আরো অনেক অনেক কিছু, যেগুলো করাটা একজন সাধারণ ভাইয়ের নৈতিক কর্তব্য, কিছুই সে করত না। তবে সে করত টা কী? সেটা বলা ভারি শক্ত। সে যে একেবারে কিচ্ছুটি করত না একথা জোর দিয়ে বলা যায় না, তবে কী যে ঠিক করত সেটাও বুঝে ওঠা যেত না। মাঝে মাঝে আপনমনে হেসে উঠত উদ্ভ্রান্তের মতো, গরম চোখে তাকিয়ে থাকত সাধারণ পিতার দিকে, সাধারণ ভাইয়েদের দিকে। শুধু দ্রঁ-কে হয়তো খানিকটা পছন্দ করত। একবার একটা গান শুনিয়েছিল দ্রঁকে। যে সাধারণ সংগীত দ্রঁ-দের গাইতে হয় সেরকম গান নয়। আরো সতেজ, শান্ত, মধুর কিছু একটা … সাধারণ পিতা শুনে বেজায় চটে গিয়েছিলেন, দ্রঁ-এর ওপর নয়, ডুঁপের ওপর। । দ্রঁ গান গাইতে পারে না। এখানকার বেশিরভাগ লোকই পারে না। সাধারণ পিতা তাই সকলকেই গান গাইতে নিষেধ করে দিয়েছেন। “সকলেই সমান। কেউ বেশি কিছু নিয়ে জন্মায় না। প্রতিভা বলে কিছু হয় না। প্রত্যেকটি মানুষের মন হচ্ছে খালি স্লেটের মতন। সমাজ যা লিখবে, তাই শিখবে।”

তবে, কেউ ঠিক করে কিছু বলতে পারছে না। কেউ বলছে দ্রঁ ছাড়া ওরকম বিদঘুটে নামের এখানে আর কেউ থাকে না, কেউ বলছে তারা ডুঁপ নামটা শুনেছে বটে, কিন্তু সেটা যে ঠিক কি তা চোখে দেখেনি। আর কিছু জন যাদের নাম বলা বারণ তারা কোথায় একটা যেন ফিসফিস করে বলছিল, ডুঁপ-কে তারা মাঝে মধ্যে দেখেছে এটা সত্যি কিন্তু তার যে সত্যিই অস্তিত্ব ছিল সেটা সাধারণ বৈঠক হওয়ার আগে জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। দ্রঁ-এরও সন্দেহ হচ্ছে; ডুঁপ বলে বোধহয় কেউই ছিল না কোনোকালে। আসলে ওর তো এখন আর তেমন ভালো করে কিছু মনে থাকে না।


চতুর্থ পরিচ্ছেদ

মানুষের সাধারণ একটা ঝোঁকই থাকে বর্বরতার প্রতি…

                  — সাধারণ পিতা, সাধারণ সভাকক্ষ, দুপুর ৩টে


“দ্রঁ! ও দ্রঁ! ওঠো! আর কতো ঘুমুবে?”

“কে?”

“আমরা।”

“কে তোমরা?”

“তুমি আমাদের চেনো তো, দ্রঁ।”

“ও…”

“তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো দ্রঁ, এবার তো আমাদের যেতে হবে।”

“কোথায় যাব?”

“সে তো তুমি জানোই। জানো না?”

“হ্যাঁ জানি তো।”

দ্রঁ-এর কানে যন্ত্রণা করছে। রক্ত পড়ছে নাকি ? নাকের সামনে তুড়ি মেরে দেখেছে। শুনতে পাচ্ছে। দরজায় কাছে বুড়ো মাফলার গায়ে ছায়াময় লোকটা নির্লজ্জের মতন হাসছে কেন? হাতে আবার কী ওটা? ফুলের তোড়া? পাথুরে ফুল নাকি? দ্রঁ-এর পাথুরে ফুল ভালো লাগে না। কোনো ফুলই ভালো লাগে না। খালি ভাবতে ভালো লাগে। শক্ত শক্ত ভাবনা। উফফ, কী গরম করছে! শরীরের শিরা-উপশিরায় যেন রক্তের বাষ্প ছুটছে, দেহটা পরিণত হচ্ছে একটা জীবন্ত স্টিম ইঞ্জিনে। সবকিছু জ্বলে পুড়ে, উবে যাবার আগে, নিজেকে, খুব কাছ থেকে একবার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু তার আর জো নেই। আয়নাটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

একজন বৃদ্ধা মহিলা ঠোঁটে স্বপ্ন মেখে বসে আছে সাদা চেয়ারটায়। তাড়িয়ে দিলেও যাচ্ছে না, ফিরে ফিরে আসছে। দ্রঁ যদিও চাইছে না তবুও ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ফিসফিস করে কীসব বকে চলেছে। দ্রঁ যতবার সেই বিরক্তিকর বকবকানি শুনতে চাইছে ততবার কানে একটা ভোঁতা যন্ত্রণা হচ্ছে। একটা গানও হচ্ছে মনে হয়। কে গাইছে? ডুঁপ? গানের কথাগুলো কেমন যেন শোনা শোনা। “ভয় কী দাদুভাই, একা কোথায় আমরা…।” দ্রঁ-এর এসব শুনতে ভালো লাগছে না। ‘ভালোবাসা’, ‘ভালোলাগা’ জাতীয় ব্যাপারগুলো মানুষের বর্বর বিভ্রম। সাধারণ পিতা বলেছেন, “মানুষের সাধারণ একটা ঝোঁকই থাকে বর্বরতার প্রতি, স্বার্থান্বেষী আমিত্বের প্রতি…এখানে দেখো, সব কিছুই ‘আমাদের’ …এটা যদি শ্রেষ্ঠত্ব না হয়, তবে সেটা কী …” দ্রঁ-এর খুব তেষ্টা পাচ্ছে। সাধারণ পিতাকে ওর এখন খুব দরকার। দরজায় টোকা মারছে কে? সাদা পোশাকের তদারক? ওদেরকে ডাকলেও চলবে। এটা গা এলিয়ে শুয়ে থাকবার সময় নয়।


পঞ্চম পরিচ্ছেদ

“শপথ গ্রহণের মাধ্যমে একজন সাধারণ ভাই, সাধারণ সভ্যে পরিণত হন…একজন সাধারণ সভ্য সর্বদা ব্যক্তিগত স্বার্থের থেকে সাধারণ সমাজের স্বার্থকে এবং ব্যক্তিগত আদর্শের থেকে সাধারণ সমাজের আদর্শকে অগ্রাধিকার দেন…প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ট্রফে লি যোগ্যই বলেছেন যে, শপথ গ্রহণ ও সাধারণ সমাজে আত্তীকরণের মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র (যা কিনা বর্বরও বটে) ব্যক্তিসত্তার মৃত্যু হয়…”

                         — সাধারণ সভ্যের শপথনামা। তৃতীয় মুদ্রণ।


“ঠাকুমা, বাস্তব কেমন জিনিস?”

“বাস্তব বড় নেশার জিনিস গো দাদু। মনের মাঝে নেশার আগুন জ্বেলে, নিজে চুপটি করে বসে থাকে… যত ওর সুমুখ পানে আসবে, তত উল্টো পানে ঠেলবে …দৌড় করিয়ে মারবে …ছুটতে ছুটতে হাঁটু বেঁকে যাবে, মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠবে তবু ছুটবে আর বলবে, ‘কই গেলি রে? আমার সোনার স্বপন, বাপধন আমার কই গেলি?’”

আজ চমৎকার একটি দিন। দিন যদিও এর কাব্যহীনতার জন্য খুব একটা চমৎকার হয় না, সাধারণত। তবুও আজকের দিনটি চমৎকার। চারদিক আলোয় ঝলমলে করছে। দ্রঁ-এর ঘরের কাঁচের জানালার ওপারে চকচকে বাস্তব, মুড়িমুড়কির মতো বিলি করা হচ্ছে। নোংরা জামাকাপড় পরা বুভুক্ষ অসংখ্য আজগুবি বর্বর মানুষ অলিগলিহীন চওড়া রাস্তায় ভিড় জমিয়েছে, লম্বা সোজা লাইনে। অনেক দূর থেকেই আসছে সব। শুকনো ঘুম ঘুম চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। ক্লান্ত বাচ্ছারা কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে মায়েদের কোলে। মহিলারা কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর তেল চপচপে চুল স্পর্শ করে, খোঁপায় গোঁজা বুনো ফুলের হালহকিকত জানতে চাইছে। পুরুষরা মাঝে মধ্যে লাইন ভেঙে নিজেদের মধ্যে কীসব বলাবলি করছে, উঁকি মারছে ইতিউতি, তবে রাস্তায় কোনো সাধারণ ভাইয়ের দেখা পেলে সন্ত্রস্ত ভঙ্গিতে ফিরে যাচ্ছে, নিজের জায়গায়। সাধারণ ভাইয়েরা কেমন নাক সিঁটকে, গা বাঁচিয়ে হাঁটছে। ভাবছে বুঝি, ‘সংস্পর্শে এলেই সব মাটি করবে, আপদ যত তাড়াতাড়ি বিদেয় হয় তত ভালো!’ …ওরা চলে যাবে, ঠিকই চলে যাবে। ওরা থাকার জন্য আসে নি, ওরা থাকার জন্য আসে না। তবু ওদের মধ্যে কেউ কেউ, যাদের সাথে দ্রঁ-দের খুব মিলমিশ, তারা থেকে যায়। তাদের থেকে যেতে হয়, হ্যাঁ নিজেদের মর্জিতেই থেকে যেতে হয়।

দ্রঁ-এর ত্রিকোনা টেবিলের ওপর ডাঁই করে রাখা বইপত্তর ও কালির দোয়াতের পাশে তিন পাতার বাস্তব সাঁটা আছে। আজকের সভায় সবটা ভালোমতো প্রয়োগ করতে পারলে দ্রঁকে আর কেউ তৃতীয় সাধারণ সমাজের সাধারণ সভ্য হবার থেকে আটকাতে পারবে না। নতুন দু-তিনটে জিনিস যোগ করা যেতে পারে। আচ্ছা, আদিম সমাজের বিবরণটা কি মানানসই হবে? উঁউউ, না, না ওটা বড় ক্লিশে। বরং মানব মস্তিস্কের ক্রমবিকাশে সাধারণ সমাজের অবদান নিয়ে কিছু একটা … উফফ! দরজায় টোকা মারছে কে? এক-দুই; এক-দুই; এক-দুই; না কোনো তদারক নয়। একজন সফেদ মানুষ সম্ভবত। ঠিক! একজন সফেদ মানুষকেই দরকার এখন!

আয়নাটার ডানায় আর কোনো স্বপ্নের কুয়াশা নেই। পরিচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে। দ্রঁ দিগন্ত দেখতে পাচ্ছে। হাল্কা বাদামী একটা তারা জ্বলজ্বল করছে, আকাশের মাঝখানে। এখন যাবার পালা। দরজাটা হাল্কা করে বন্ধ করে সামনের লম্বা প্যাসেজটার দিকে পা বাড়াল দ্রঁ।



(পরবাস-৮২, ১৪ এপ্রিল, ২০২১)