--অণুগল্প চাই, অথচ পাচ্ছেন না, তাই না?
কি আশ্চর্য! প্লটের খোঁজেই তো ভূতনাথবাবুর এভারগ্রিন মলে আসা। সারাদিন কলম হাতে চেয়ারে বসে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিলো, কোনো প্লট আসছিলো না মাথায়। তাই সন্ধ্যার সময় ভাবলেন এভারগ্রিন মল থেকে একটু ঘুরে আসবেন। মল মানেই লোকের মেলা আর যত লোক তত গল্প! কিন্তু তিনি যে গল্পের সন্ধানে আছেন, এ লোকটা জানলো কি করে?
কি জ্বলজ্বলে চোখ লোকটার, যেন এক্স-রে বসানো ভিতরে!
-- আমার কাছে মেশিন আছে অণুগল্প লেখার, কিনবেন?
বলে কি? পাগল নাকি?
লোকটা যেন ভূতনাথবাবুর মনের কথাটা পড়ে ফেললো:
-- ভয় পাবেন না! পাগল নই আমি! আমাদের মার্কেট রিসার্চ বলছে অণুগল্প আপনার এখন খুব দরকার!
দরকার তো বটেই! মাসে একটা অন্তত অণুগল্প না লিখলে ডম্বরুর সম্পাদক ধ্রুবজ্যোতি আদক কান মলে অর্ধচন্দ্র দেবে লেখকদের গ্রুপ থেকে ...
তাই বলে এই পাগলের উৎপাত? কি করবেন? চ্যাঁচাবেন?
ভূতনাথবাবু এবার চিন্তিত হয়ে লক্ষ্য করলেন তাঁর আশেপাশে কেউ নেই। রাত সাড়ে দশটা বাজে। বেসমেন্ট পার্কিং এখন প্রায় ফাঁকা।
-- এই দেখুন। এই হলো মেশিন, নাম অণুগল্পগ্রাফ।
-- ধুস, এ তো ক্যাশ কাউন্টারের POS মেশিন মশাই!
হ্যা হ্যা করে হাসলো লোকটা।
-- POS মেশিন? ভালো করে দেখুন! সব অটোমেটিক। আপনার জন্য স্পেশাল বাংলাভাষার মডেল । এটা শব্দসংখ্যার বাটন, পাঁচশ শব্দের আপার লিমিট। আর এটা বিষয়ের বাটন।
-- বিষয়?
-- হ্যাঁ, বিষয়! শুনুন, চার ধরনের গল্প খুব জমে: প্রেমের, চোরের, বাঘের আর ভূতের (*)। আমরা অবশ্য হাসি, দুঃখ আর মৃত্যু-- আরো তিনটে চেকবক্স রেখেছি। শব্দ আর চেকবক্স সেট করে শুধু এই লাল বোতামটা টিপবেন, ব্যাস, নতুন নতুন গল্প ছাপা হয়ে বেরিয়ে আসবে!
-- এত সোজা?
-- হবে না কেন? AI মানে আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স এখন কোন লেভেলে গেছে জানেন? এতে অবশ্য শুধু AI নয়, পৃথিবীর সেরা গল্প লেখকদের ব্রেনের 3D প্রিন্টেড মিনিয়েচার ভার্সান-ও ভরে দেওয়া!
-- ব্রেন? কি যা তা বলছেন?
লোকটা হো হো করে হাসলো।
-- এ কি আপনাদের পৃথিবীর টেকনোলজি নাকি? ব্রেনিয়াস গ্রহের নাম শুনেছেন? আমরা সেখানকার বাসিন্দা ল্যাং। পৃথিবী নতুন মার্কেট -- তাই সস্তায় দিচ্ছি। নেবেন? পাঁচশ টাকা মাত্র!
এ লোভ এড়ানো বড় শক্ত। মানিব্যাগ থেকে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে এগিয়ে দিলেন ভূতনাথবাবু।
-- থ্যাঙ্ক ইউ। আসি তাহলে।
ব্যাস! টাকা পেয়েই ল্যাং উধাও, একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল!
যাঃ, তাড়াহুড়োয় মেশিনটা তো পরীক্ষা করে নেন নি ভূতনাথবাবু!
দেখা যাক কেমন মেশিন ...
লাল বোতামটা টিপতেই খুটখুট করে ছাপা বাংলা লেখা বেরোতে লাগলো মেশিন থেকে। অধীর আগ্রহে পড়া শুরু করলেন ভূতনাথবাবু।
"চোরের মা আর ভূতের বাবা জঙ্গলে প্রেম করতে গিয়ে বাঘের হাতে মরেছে।
পৃথিবীতে এত দুঃখ, তবু লোকের হাসি পায় কেন?"
সবগুলো চেকবক্স অন ছিলো বোধহয়, তাই কি নেই এই গল্পে? চোর, বাঘ, ভূত, পরকীয়া প্রেম, হাসি, দুঃখ, মৃত্যু সব এক কড়াইয়ে দু লাইনের মধ্যে সেদ্ধ হয়ে টগবগ টগবগ করে ফুটছে!
নাঃ, এ গল্প গ্রুপে আপলোড করলে আর দেখতে হবে না!
ব্রেনিয়াসের ল্যাং-গুলো এত জোচ্চোর, এইভাবে লোক ঠকায়!
ভাগ্যিস ডিমনিটাইজেশনের আগের ব্যাঙ্কে-জমা দিতে-ভুলে-যাওয়া পাঁচশ টাকার নোটটা মানিব্যাগেই ছিলো।
(*) কৃতজ্ঞতা স্বীকার: লীলা মজুমদার, "খেরোর খাতা"।