আগের সংখ্যায় প্রস্তাবিত কবিতা রবার্ট ফ্রস্ট-এর Stopping by Woods on a Snowy Evening. উপর বেশ কয়েকটি অনুবাদ এসেছে। তারও আগের সংখ্যাতে প্রস্তাবিত কবিতা Joseph Samuel-এর O What is the News?-এর উপরেও কয়েকটি অনুবাদ এসেছে। সবাইকেই অসংখ্য ধন্যবাদ। এবারেও সব কটি অনুবাদই প্রকাশিত হল। কিন্তু 'অনুবাদের কাজ কখনো শেষ হয় না'--এই কথা মনে রেখে জানানো হচ্ছে যে এখন থেকে মাস ছয়েক পরে চাইলে আপনারা, অনুবাদকেরা, বর্তমানে প্রকাশিত অনুবাদের কিছু পরিবর্তন করে পাঠাতে পারেন। তখন সেগুলিই আমাদের স্থায়ী সূচির অন্তর্গত করা হবে।পরের সংখ্যাতে অনুবাদের জন্যে প্রস্তাব করা হচ্ছে গালিব-এর jahan tera naqsh-e-qadam dekhte hain. এই আন্তর্স্থলে অনেক শব্দেরই মানে পাওয়া যাবে, হয়তো সবগুলির নয়, কিন্তু অনুবাদের জন্যে প্রয়োজনীয় গবেষণার দরকার থাকলে করতে হবে।
রবার্ট ফ্রস্ট-এর 'Stopping by Woods on a Snowy Evening'-এর বাংলা অনুবাদ
বনের পথে থমকে এক তুষারসন্ধ্যায়
অনুবাদকঃ স্বপন ভট্টাচার্য
বনরাজি কার এই চারিধার হয়ত আমি তা জানি
যদিও গ্রামের ভিতরে রয়েছে তার সে কুটিরখানি;
দেখেনি আমায় জানে না সে আমি এ পথে দিয়েছি পাড়ি
দেখে নিতে তার কেমন তুষার ঢেকে দেয় এ বনানী।
নিশ্চিত ছোট ঘোড়াটি ভাবছে অদ্ভুত বাড়াবাড়ি
থামা কেন তার ধারেকাছে আর নেই তো খামারবাড়ি
বনভূমি আর জমে যাওয়া হ্রদ সেই ব্যবধানে আজ
সারা বছরের আঁধারকে নিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে ভারি।
ঘন্টার ধ্বনি বাজে টুং টাং দোলে সে ঘোড়ার সাজ
জিজ্ঞাসা করে বুঝি পথ ভুলে এখানে এসে কি কাজ।
এছাড়া শব্দ বন জুড়ে শুধু কান পেতে শোনবার
ধীর লয়ে বয় এখানে বাতাস তুষার ঝরছে আজ।
এই সুন্দর প্রগাঢ় গভীর বনভূমি একাকার,
যদিও রয়েছে শপথ এখনও বহু কথা রাখবার,
ঘুমিয়ে পড়ার আগে বাকি আছে বহু পথ পেরোবার,
ঘুমিয়ে পড়ার আগে বাকি আছে বহু পথ পেরোবার।
[রবার্ট ফ্রস্টের জন্ম হয় সান ফ্রানসিসকোতে ১৮৭৪-এর ২৬শে মার্চ। পড়েছেন নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডার্টমাউথ কলেজ থেকে হারভার্ড ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত নানা জায়গায়--কিন্তু কোন প্রথাগত বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি তিনি লাভ করেন নি। প্রথম প্রকাশিত কবিতা কুড়ি বছর বয়সে নিউ ইয়র্কের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট কাগজে। হলে কি হবে, আমেরিকায় একটার পর একটা তাঁর কবিতা সম্পাদকদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হতে থাকে। বিবাহের পর ১৯১২তে চলে আসেন ইংল্যান্ডে এবং পরিচয় হয় এজরা পাউন্ডের সঙ্গে। এজরা পাউন্ডই তাঁকে কবি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেন সে দেশে। A Boy’s Will এবং North of Boston – দুটি কবিতা সংকলন প্রকাশিত হবার পরে তিনি স্বদেশের নজরে আসেন এবং ১৯২০ সালের মধ্যেই আমেরিকার প্রথম সারির কবিদের মধ্যে স্থান করে নেন। চার চারবার পুলিৎজার প্রাইজে সম্মানিত কবি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতায় নিউ ইংল্যান্ডের জীবন ও প্রকৃতি বারবার ফিরে ফিরে আসে। অনেকটাই প্রথাসিদ্ধ কবিতা লিখে গেছেন তিনি এবং সে সময়ের নানা কাব্য আন্দোলন তাঁকে তেমন নাড়া দিতে পারে নি সত্যিই, তবু রূপকের ব্যবহারে ও নিহিত অর্থের ব্যঞ্জনায় তিনি বহুমাত্রিকতা থেকে সরে আসেন নি এবং সেই কারণেই রবার্ট ফ্রস্ট একই সঙ্গে আধুনিক ও কালোত্তীর্ণ। তাঁর অন্যান্য কাব্যসংগ্রহের মধ্যে New Hampshire, A Further Range, In the Clearing উল্লেখযোগ্য। ২৯ জানুয়ারি ১৯৬৩ তে তাঁর জীবনাবসান হয়।
অনূদিত কবিতা Stopping by Woods on a Snowy Evening রবার্ট ফ্রস্টের ১৯২২ সালে লিখিত কবিতা এবং সেভাবে দেখতে গেলে New Hampshire সংকলনের অন্তর্গত এই কবিতার শতবর্ষ আসন্ন। একশো বছর পরেও এই কবিতার মায়াময়তা ও অনিত্যতার অনুরণন সমানভাবে সারা বিশ্বের সমস্ত প্রান্তের মানুষের কবিতামুখীনতায় এক মাইলফলক হয়ে আছে। মূল কবিতার ছন্দবিন্যাস চতুষ্পদী টেট্রামিটারধর্মী মাত্রাবৃত্ত যার গড়নটি এই রকমঃ AABA BBCB CCDC DDDD। অনুবাদে মূলের ছন্দবিন্যাস অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করেছি সাধ্যমত। বলা ভালো, রবার্ট ফ্রস্টের এই কবিতা শুধু বাংলা নয়, সব ভাষাতেই বহু বহুবার অনুদিত হয়েছে, সুতরাং অন্য কোন কাজের সঙ্গে কোথাও কোন মিল একান্তই মূল কবিতার প্রতি অনুরক্ত থাকার কারণে যা যে কোন অনুবাদকের দায়বদ্ধতাও বটে।—স্বপন ভট্টাচার্য]
বনপাশে থেমে কোনো তুষারসন্ধ্যায়
অনুবাদকঃ দত্তাত্রেয় দত্ত
মনে হয় এ বনানী কার, আমি জানি।
যদিও এ গ্রামে তার আছে আবাসনই,
সে তো জানবেনা, আমি থেমে এ-কাননে
দেখছি, কেমন তাকে ভরায় হিমানী।
এ ক্ষুদে ঘোড়াটা ঠিক ভাবে : অকারণে
এই থামা: কাছে কোথা খামার এখানে
তুষারিত দীঘি আর বনের মাঝারে
বছরে আঁধারতম দিন-সমাপনে।
বল্গার ঘণ্টিতে তার ঝাঁকি দিয়ে নাড়ে,
কারণ শুধায় যেন : এ কি ভুল ক’রে ?
এছাড়া যেটুকু শব্দ, তা শ্বসিত থাকে
বহতা বাতাস আর পালকতুষারে।
আঁধার, গভীর বন কী পিয়ারী লাগে
দেওয়া যতো প্রতিশ্রুতি মনে তবু জাগে
যোজন পেরোতে হবে ঘুমোবার আগে
যোজন পেরোতে হবে ঘুমোবার আগে।
[Rhyme scheme: aaba/bbcb/ccdc/dddd
Sweep শব্দটা অনুবাদে আনা গেল না। অগত্যা Onomatopoeia অবলম্বন।—দত্তাত্রেয় দত্ত]
ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
অনুবাদকঃ স্বর্ভানু সান্যাল
হয়তো জানি আমি এই বনাঞ্চল কার...
বোধ হয় কোনো কাছের গ্রামে ছোট্ট সে সংসার
জানবে না সে আমি ক্ষণিক থেমেছি নিশ্চুপ
দেখতে বরফ-ঢাকা গাছের অপার্থিব রূপ
আমার ঘোড়া ভাবছে বোধ হয় কেমন থামা এই
এখানে তো কোথাও কোনো খামার বাড়ি নেই
নিবিড় অরণ্যানী আর জমাট বাঁধা হ্রদ
নিকষ কালো শর্বরী, নেই কোথাও জনপদ
হয়তো ভুলে থামা, ঘোড়া আলতো মাথা নাড়ে
বরফ কুচি মাখা বাতাস বইছে চুপিসারে
নিবিড় ঘন এই বনপথ... অলীক উপস্থিতি...
তবু আমায় যেতেই হবে রাখতে প্রতিশ্রুতি
যোজন মাইল যাবো আমি ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
যোজন মাইল যাবোই আমি ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
[প্রতিটা লেখার পরে, সে লেখা অনুবাদ হোক বা মৌলিক, লেখকের ভীষণ ইচ্ছে করে লেখাটিকে কোনো কাব্যানুরাগীকে শোনানোর। আমারও হয়। কিন্তু অন্যান্য কবি এবং অকবিদের মতই তেমন কাব্যানুরাগী পাঠক পাওয়া যায় না। আমি সম্প্রতি আমার পঞ্চম বর্ষীয়া শিশুকন্যাকে কবিতা পড়ে শোনাই কখনও কখনও। সানাই স্বভাবত কল্পনাপ্রবণ এবং কবিতার বিশেষ অনুরাগী। আমি রবার্ট ফ্রস্ট-এর আসল ইংরাজি কবিতাটি ওকে শোনালাম এবং মানে খানিকটা বুঝিয়ে দিলাম। অতঃপর আমার তর্জমাটি পড়ে শোনালাম। শেষের লাইনে "Miles to go before I sleep"-এর অনুবাদ আমি করেছিলাম "যোজন মাইল যাবো আমি ফুরিয়ে যাওয়ার আগে"। শুনে সানাই বলল, বাবা তোমার লেখা উচিত “ঘুমিয়ে পড়ার আগে”। পাঁচ বছরের শিশু এত মন দিয়ে কবিতা শুনেছে এবং তার অর্থ অনুধাবন করেছে দেখে আমি চমৎকৃত হলাম। ওকে বললাম,
“কবিতার সাথে গদ্যের, সানাই, মূল পার্থক্য হল কবিতার অনেক ক্ষেত্রেই একটি গূঢ়ার্থ থাকে যা আক্ষরিক অর্থের থেকে আলাদা এবং সেই জন্যই নতুন নতুন রূপে ধরা দেয় ভিন্ন মানুষের কাছে। এখানে আমার মনে হয়েছে, before I sleep বলতে লেখক আক্ষরিক অর্থে ঘুমোনোর কথা বোঝাতে চান নি। কোনো final sleep-এর কথা বা নিঃশেষ হয়ে যাওয়া বা ফুরিয়ে যাওয়ার কথা বোঝাতে চেয়েছেন।”
আমার পাঁচ বছরের স্বততচঞ্চল কন্যা সম্পূর্ণ বুঝল কিনা জানি না কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে চুপ করে থাকল ইংরেজিতে যাকে বলে "went into deep contemplative mood." এটুকুই পাওয়া।—স্বর্ভানু সান্যাল]
কোন হিমায়িত দিনান্তে সেই বনপ্রান্তে দু’দণ্ড বিরতি
অনুবাদকঃ উস্রি দে
এই বনাঞ্চল কার বোধহয় আমি জানি
যদিও তার নিবাস ওই দূরের গ্রাম খানি
সে দেখবে না আমার এই ক্ষণ বিরতি
আমার সম্মুখে দেখি তুষারে ঢেকে যায় তার বন খানি।
আমার ছোট্ট ঘোড়াটির চোখে বিমূঢ় বিস্ময়
হঠাৎ থমকে যাওয়া, কাছেধারে কোন খামারবাড়িও নয়!
একধারে ঘন বন, অন্যধারে জমে যাওয়া হ্রদ
বছরের সবচেয়ে ঘন আঁধারঘেরা সন্ধ্যায়।
সে তার গলার সাজ ঘন্টা নাড়িয়ে যেন জানতে চায়
কোথাও কোন ভ্রম হয়নি তো, হায়!
এ ছাড়া এই নিস্তব্ধতা ভাঙছে আর একটিই ধ্বনি
মৃদু মন্দ বায়ু ও পতনশীল তুষারের ফিসফিসানি।
নিবিড় আঁধারে মিশে যাওয়া এই গহীন বন, অতি মনোরম
একে ছেড়ে যেতে চায় না মন,
কিন্তু আমি যে কথা দিয়েছি, রাখতেই হবে তা
নিশ্চিন্ত বিশ্রামের আগে দীর্ঘ পথ দিতে হবে পাড়ি
পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ নিশ্চিন্ত বিশ্রামের আগে।।
অরণ্যে থামলাম এক তুষারময় সন্ধ্যায়
অনুবাদকঃ সুপূর্ণা সিংহ
কার এই অরণ্য যা আমার লাগছে চেনা,
তার কুটির রয়েছে সেই গ্রামে হয়ত বা,
সে দেখবে না আমায় দাঁড়াতে হেথা,
যখন দেখব আমি তার বন বরফে ঢেকে যেতে।
আমার ছোট্ট ঘোড়া ভাবে এ বড় আজব!
আমি দাঁড়াই হেথা, নেই কোনো কুটির যেথা,
বন আর বরফ জমা জলাশয়ের মাঝে,
বর্ষের অন্ধকারতম সন্ধ্যায়!
সে গলার ঘন্টা ঝাঁকায়,
জানতে চায় আমি করেছি কি ভুল?
আমরা শুনি শুধু মৃদু বাতাসের শব্দ,
আর হালকা বরফ পড়ার শব্দ।
এ অরণ্য বড় সুন্দর, গভীর,
তাতে জমাট বাঁধা অন্ধকার ...
তবে আমি করেছি বহু প্রতিশ্রুতি,
নিদ্রার পূর্বে রয়েছে বাকি বহু ক্রোশ পথ,
রয়েছে বাকি বহু ক্রোশ পথ।
বনের পথে থামা--এক তুষারসন্ধ্যায়
অনুবাদকঃ শম্পা ভট্টাচার্য
এ বনানী কার মনে হয় তাও জানি
আছে ঘর তার কিন্তু পাশের গ্রামেই--
জানবে না তার বনের বরফে ঢাকা
দেখতে থেমেছি আমি।
ছোট্ট ঘোড়াটা অবাক ভাবছে মনে
থামছি এখানে কেন, এ খামার তো না
শুধু বন, আর বরফ-হ্রদের মাঝে
বছরের গাঢ় সন্ধ্যা এ ছায়াঘনা।
সাজঘণ্টায় টুংটাং, ঘোড়া বলে
কী হল আবার? কিছু কি গেছ ভুলে?
আর সাড়া দেয় তুষার পালক ও হাওয়া
পৃথিবীর সব ভীষণ নীরব হলে।
গভীর সবুজ বন তো মধুরই লাগে,
কিন্তু শপথগুলি পথ থেকে ডাকে--
যে পথ পেরোবো ঘুমিয়ে পড়ার আগে,
পেরোবো যে পথ ঘুমিয়ে পড়ার আগে।
বরফপাতের সন্ধ্যায়, জঙ্গলে থেমে
অনুবাদকঃ সুমন চক্রবর্তী
এ জঙ্গলটা কার তা হয়তো আমার জানা।
সে থাকে দূরের এক গ্রামে;
তাই সে দেখতে পাবেনা আমার থমকে দাঁড়ানো,
দেখতে সবুজের বরফে ঢেকে সাদা হওয়া।
আমার ঘোড়াটা হয়তো হচ্ছে খুব অবাক,
থেমেছি আমি যদিও আশপাশে নেই কোনো খামার-বাড়ি;
জঙ্গল আর জমে যাওয়া ঝিলের মাঝখানে,
বছরের সবচেয়ে অন্ধকার বিকেলে।
নিজের গলার ঘন্টা নাড়িয়ে সে প্রশ্ন করে
কোনো ভুল হচ্ছে না তো?
ভেসে আসে হালকা হাওয়া বওয়ার শব্দ,
বরফ পড়ার আওয়াজ।
জঙ্গলটা সুন্দর, অন্ধকার আর গভীর,
কিন্তু এখনও অনেক কথা রাখা বাকি,
পথিককে চলতে হবে অনেকটা পথ,
পথিকের চলা বাকি অনেকটা পথ।
জোসেফ স্যামুয়েল-এর 'O What is the News'-এর বাংলা অনুবাদ
এ কি খবর শুনছি?
অনুবাদকঃ সজল কুমার মাইতি
ও! এ কি খবর - আমি ভয় পেয়ে যাই
উহানে কেবল মরছে মানুষ মরছে?
বন্ধু, এ তো সাধারণ জ্বর
সেই জ্বরে সবাই কেমন হারিয়ে যাচ্ছে।
কি ভয়ংকর সংবাদ শুনতে পাই
হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে?
বন্ধু কি ভয়ানক মিথ্যা প্রচার চলছে
কেবলই ভূয়ো খবর রটছে রটছে।
ওহ! আমি দেখি শব শকটের সারি
পেছনে শুধুই শিশুদের কান্নার হাহাকার?
বন্ধু মোর, এ তো কেবল সাধারণ ছোঁয়াচে জ্বর
আমরা তো জানি কেউই পাব না রেহাই।
এ কি মহামারি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে
বজ্র বেষ্টনী দিয়ে আমা সবে বাঁধছে?
বন্ধু মোর, এ কি শুধু সাধারণ ফ্লু জ্বর
হয়তো বা নতুন কোন ভয়ংকর জীবাণু।
আমাদের কি আছে যথেষ্ট মুখাবরণী আর রক্ষাবরণী
পারবো কি রক্ষা করতে সতত সেবারত আমাদের সেবিকাদের?
বন্ধু মোর আমরা সে কথাও ভেবেছি
আমরা সতত তৈরি হয়েই থেকেছি।
হায়! এ পথ দিয়ে এ সব কি চলে যায়
শবযাত্রার সারি যে মন্থর গতিতে এগিয়ে যায়
বন্ধু মোর এরা সব আমাদেরই চিকিৎসক
তাদের বিধবা পত্নীসকল করে হাহাকার।
এখন আমি ডাক্তার কোথায় খুঁজে পাই?
এ জ্বর কেবলই বাড়ছে তো বাড়ছেই
বন্ধু মোর, এখন ডাক্তার খুঁজে পাবে না তুমি
ধৈর্য ধরো, সুস্থ তুমি হবেই।
আমার মাথায় জ্বলছে আগুন কানে বাজে আওয়াজ
প্রাণ বায়ু হচ্ছে ছোট রুদ্ধ হচ্ছে শ্বাস।
হাইড্রোক্লোরোকুইন দিয়ে চালাও চেষ্টা বন্ধু
হয়তো আমিও বাঁচবো না আর।
এই প্রাণঘাতী রোগ হয়তো খাবে সবে গিলে
খুঁড়তে হবে কবরের পর কবর
ফুসফুস আমার ভরেছে ফেনময় তরলে
শ্বাস অবরুদ্ধ হয়েছে গরলে।
কি সে খবর!
অনুবাদকঃ সুমন চক্রবর্তী
এমন কি সে খবর যা আমায় ভয়ে কুঁকড়ে দেয়?
উহানে মানুষ মরছে। মরছে?
ধুর, ও তো সামান্য জ্বর।
সামান্য জ্বর মাত্র।
কি সব ভয়ঙ্কর খবর কানে আসছে।
হাসপাতাল উপচে পড়েছে রুগীতে। গাদাগাদি ভিড়।
যত্তসব বাজে গুজব।
কান দিও না ওতে।
শুনলাম রাস্তায় নাকি শববাহী গাড়ির মিছিল?
পিছনে কাঁদতে কাঁদতে ছুটছে শিশুরা। দুঃখে, যন্ত্রণায়?
না না ওসব কিছুনা। সামান্য জ্বর আর কি।
এসময় যেমন একটু-আধটু হয়।
কে জানি কি এক মহামারি এল এ বছর।
বিষাক্ত থাবা টানছে অতল খাদে।
নারে বাবা। মরশুমি জ্বর।
নতুন কোনো ভাইরাসের আবির্ভাবে।
কিন্তু আছে কি মাস্ক, সুরক্ষা সরঞ্জাম, পর্যাপ্ত?
স্বাস্থ্য-সেবিকাদের জন্য চিন্তা করেছে কি রাষ্ট্র?
আরে ওসব ভাবা আছে।
সেসব মজুত আছে প্রচুর, যথেষ্ট।
কোথায় গেলে পাই ডাক্তার?
জ্বর যে এদিকে বাড়ছে। বাড়ছে?
কিন্তু এখন কাকে পাবে বলো তো?
সকালে উঠে দেখবে একদম সুস্থ।
ও কি! কে যায়!
কার শেষযাত্রা ওটা?
কেন, চিনতে পারলে না? আমাদের ডাক্তার।
পিছনে সাদা শাড়িতে হাঁটছে তার বিধবা।
মাথা ঘুরছে, ভোঁ ভোঁ করছে কান।
দম বন্ধ হয়ে আসছে, বুকের রাস্তা সব বন্ধ।
তুমি বরং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নাও।
আমি এবার উঠি, সনির্বন্ধ।
আট থেকে আশি, যমদূত কাউকে দিচ্ছেনা বাদ।
বেলচা শুধুই খুঁড়ছে, মাটি খুঁড়ছে।
ফেনায়িত তরলে ভরেছে বুক।
নিঃশ্বাসের আজ ভীষণ অসুখ।