মোহনা যেমন কথা দিয়েছিল সেই মতো ঠিক সময়ে তৈরি হয়ে নিল। মনে একটা চাপা উত্তেজনা রয়েছে। এখানে আসার পর এই প্রথম ও অভিরূপকে না বলে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোহনা জানে অভিরূপকে বললে তৎক্ষণাৎ না বলে দিত। গম্ভীর প্রকৃতির অভিরূপ এখানে আসার পর পরই মোহনাকে স্থানীয় লোকজনের সাথে বেশি মেলামেশা করতে বারণ করেছিল। যদিও কেন সে কথা খুব স্পষ্ট করে বলে নি। আসলে অভিরূপ এরকমই। যেটা বলার সেটুকু বলেই ওর দায়িত্ব শেষ। কি, কেন এত কিছুর জবাবদিহি করার মতো সময় বা ধৈর্য কোনটাই ওর নেই। মোহনা জেনে বুঝেই আজকের এই যাওয়ার ব্যাপারটা উহ্য রেখেছে অভির কাছে।
কলকাতা ছেড়ে এখানে এসে ইস্তক ভাল নেই মোহনা। যেদিকে তাকাও মাইলের পর মাইল শুধু রোদজ্বলা শুকনো ঘাস আর কাঁটাঝোপ। কোথায় গড়িয়াহাটের বাজার, কোথায় রঙবেরঙের মেলা আর কোথায় বা সেই নন্দনের আড্ডা। বিয়ের পরই অভিরূপের বদলির অর্ডার এসে গেল। পুবের কোমল শ্যামল আঁচল ছেড়ে সিধে পশ্চিমের রুক্ষ তপ্ত মরুভূমিতে এসে পড়ল ওরা। জায়গাটার নাম সূরজবাড়ি। কচ্ছের একদম কিনারা বলা চলে। অভিরূপ কাজে ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ। মোহনা একাকীত্বে ভুগতে থাকে। হাইওয়ের ধারে একটুকরো জমিতে স্টাফ কোয়ার্টারস বানিয়েছে কোম্পানি। লোকালয়ের বাইরে বলে মোবাইলের টাওয়ার ঠিক মতো আসে না। ইলেক্ট্রিসিটির অবস্থা তথৈবচ। একবার গেলে দিন তিনেকের আগে ফেরে না। তখন কোম্পানির জেনারেটরই ভরসা। এখানে ওর সময় কাটতেই চায় না। অভিরূপ অফিসে বেরিয়ে গেলে ঘরের কাজ সেরে হাঁ করে বাইরের এক টুকরো বারান্দায় বসে থাকে। কলোনির ভেতর সামান্য যা মানুষের চলা-বলার আওয়াজ পাওয়া যায়। তা বাদ দিলে দূরের সীমান্ত বেয়ে চলতে থাকা ট্রাক আর গাড়ির শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দই নেই। এভাবেই দিন কেটে যায়। বিকেলের আলো থাকতে থাকতে লম্বা মাঠ পেরিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে সূরজবাড়ি রেল স্টেশনে ঘুরতে। এখানের একমাত্র বেড়াবার জায়গা বলা চলে। বেঞ্চে বসে থাকলে দেখতে পায় জল-ভর্তি ট্যাংকার নিয়ে রেল ইঞ্জিনগুলো হুস হুস করে দম ফেলতে থাকে। আস্তে আস্তে গোটা সূরজবাড়ি গোধূলির কমলা আলোয় ভরে ওঠে। বিষন্নতার রং কি কমলা? জানা নেই মোহনার। লোকসমাজ থেকে দূরে এই মরুপ্রান্তরের কাঁটাঝোপের সারি দেখতে দেখতে কখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, গা ছমছম করে ওঠে ওর। মায়ের জন্য মন কেমন করে, প্রিয় শহরের জন্য মন কেমন করে ওঠে। পা চালিয়ে ফেরে ছোট্ট বাসাটায়। একটা খুপরি ঘর, তাতে তিন বাই তিন ফুটের একমাত্র জানলা, ছোট্ট চালা দেওয়া সেই কোয়ার্টারে ফিরে অপেক্ষা প্রিয় মানুষটার। এভাবেই কেটে গেল মাস তিনেক। চাকরি ছেড়ে এসে যে খুব একটা ভাল হয় নি সেটা বুঝতে পারছে মোহনা। অভির প্রতি অভিমান আর অনুযোগের পাহাড় জমছে মনে মনে। নতুন বিয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই নোনতা মুচমুচে স্বাদ চলে গিয়ে ভালবাসা যেন পানসে আর আলুনি হয়ে উঠেছে। মোহনা চিরকাল নোনতা জিনিসের ভক্ত। মিষ্টি কিংবা টক কোনও স্বাদই তার বিশেষ পছন্দ না। এই পানসে জীবন কিছুটা নোনতা স্বাদ আনতেই যেন আজ তার এই গোপন অভিযান।
ঘরের জানলা দিয়ে চোখ চালিয়ে সে দেখল দূরে যেদিকে ছোট ছোট গ্রাম আছে সেই দিগন্তরেখার কাছ থেকে একটা কালো বিন্দু আস্তে আস্তে বড় হয়ে মানুষের আকার নিচ্ছে। আর যেন তর সয় না। এখানে পানীয় জলের খুব সমস্যা। ট্রেনের ট্যাঙ্কারে করে বাইরে থেকে জল আসে সূরজবাড়িতে। সব কোয়ার্টারের সামনে একটা করে জলের ট্যাংক বসিয়েছে কোম্পানি। প্রতিদিন বেলা হলে ট্র্যাক্টরে করে জল এনে সেই ট্যাংক ভরে দিয়ে যায় স্থানীয় জল ব্যবসায়ী। দূরের ওই গ্রামগুলোতে থাকে ওরা। ওখানেই থাকে হাসিনা। হাসিনা দ্রুত পা চালিয়ে চলেছে বাবুদের কলোনির দিকে। তপ্ত বালুতে পা ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু হাসিনার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। পরনে রঙচটা শত তাপ্পিমারা ঘাঘরা আর চোলি। একটা মলিন ওড়না মাথায় জড়ানো। হনহনিয়ে চলতে গিয়ে হাঁফ ধরে যাচ্ছে ওর তবু সেসব উপেক্ষা করে কলোনির দিকে পা চালায় হাসিনা। প্রতিদিন এভাবেই চড়চড়ে রোদ মাথায় নিয়ে মাইল তিনেক হেঁটে হাসিনা কলোনিতে আসে কাজ করতে। ঘরকন্নার কাজ। এখানে ছেলেপুলে নিয়ে বাবুদের পরিবাররা থাকে। তাদের ঘরে ঘরে কাজ করে হাসিনার পেট চলে। অবশ্য হাসিনা জানে এই সুখ তার কপালে বেশিদিন নেই। বাবুরা পুলের কাজ করতে এসেছে। পুলের কাজ শেষ হলেই এখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে পালাবে। তখন আবার সেই পুরোনো কাজেই ফিরতে হবে তাকে। পুরোনো কাজের কথা ভাবলেই বুক দুরদুর করে ওঠে হাসিনার। মন ঘোরাবার জন্য আকাশের দিকে চেয়ে সময় আন্দাজ করতে চায় ও। আজ বহুত দেরি হয়ে গেল, আরও জোরে পা চালাতে গিয়ে হোঁচট খেতে খেতে বেঁচে গেল। হুড়মুড় করে ‘রাঠো দরয়াজো’ অর্থাৎ কিনা লাল দরজাওয়ালা দিদিমণির ঘরে ঢুকে পড়ল হাসিনা। ‘ইতনা দের কিঁউ কিয়া?’ কৌতূহল চেপে রাখতে পারে না মোহনা। ‘আজ হমলোগ জানেওয়ালে থে না?’ হাসিনা তখনও হাঁপাচ্ছে। একটু থেমে হাসিনা আধা হিন্দি আধা গুজরাটি আর কচ্ছি ভাষা মিশিয়ে যা বলল তার সারমর্ম হল ওর গাঁয়ে একজনের ‘ইন্তেকল’ হয়েছে তাই আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। হাসিনা বুঝল মেমসাহেব একটু হতাশ হয়েছে। সে মাথা নেড়ে জানায় এক ঘণ্টা দেরি করে গেলে কোনও ক্ষতি নেই এখন সবে বারোটাই বাজে। বরং রোদ একটু পড়লে এই বালির ওপর দিয়ে চলতে সুবিধা হবে। মেমসাহেবের তো অভ্যাস নেই। ও ততক্ষণে ক’টা বাড়ির কাজ সেরে ঝট করে চলে আসবে।
এখানে এসে হাসিনার সঙ্গে বেশ আলাপ হয়ে গেছে ওর। কাজ শেষ হয়ে গেলে মোহনার বারান্দার সামনে এসে হাঁটু মুড়ে বসে রোজ। মোহনাও একটা কথা বলার লোক পেয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। হাসিনা বয়সে সামান্যই বড় হবে। ওদের গ্রামের কথা, রোজকার জীবনের চাওয়া-পাওয়া, না -পাওয়া সব গল্পই হতো মোহনার সাথে। হাসিনা ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে কথা বলত, মোহনাও বাংলা হিন্দি মিশিয়ে কথা চালিয়ে যেতে লাগল। হাসিনারা জাতে আগারিয়া। ওদের আসল পেশা হল নুন তৈরি করা। কচ্ছের রাণে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নুনের খেত আছে। বর্ষায় সমুদ্রের জলে ভেসে যায় সূরজবাড়ির বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আর শরৎ এলে অক্টোবর মাসে নুনের কাজ চালু হয়। তখন আগারিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ জমিতে খোপ কেটে জমির নীচের জল পাম্প করে তুলে ভরে দেয় সেই খোপগুলো। তারপর মরুভূমির দুরন্ত রোদের তেজে সেই জল বাষ্প হয়ে উবে গেলে জমিতে পড়ে থাকে নুন। বর্ষার সময় তিন চার মাস কাজ থাকে না বলে এধার-ওধার কাজ করে দিন গুজরান হয়। প্রতিদিন প্রায় পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে ওদের কলোনিতে কাজে আসে হাসিনা। বজরার রুটি কেমন খেতে হয় জানাই ছিল না মোহনার। সে কথা শুনে হাসিনার খিলখিল করে কী হাসি! ‘মেমসাহেব একদিন গাঁও দেখনে কে লিয়ে চলিয়ে।’ খিচুড়ি ভাষায় যা বলল তার অর্থ হল “তোমায় দাওত দিলাম। আমার গ্রাম ঘুরে দেখবে আর দুপুরে আমার ঘরে খাবে।" সত্যিই ভারি মজা হবে। মোহনা উত্তেজনায় অধীর হয়ে ওঠে, ’আর নুনের খেত?’ হাসিনা বলে ওঠে ‘বেশ তবে খেতের কাজ চালু হোক তখন তোমায় নিয়ে যাব।’
এরপর বর্ষা কেটে গিয়ে শরৎ কাল এসে গেল। নীল আকাশে সাদা মেঘের দল উড়ে বেড়াতে লাগল। আজ এমনি একটা দিন। তাই মোহনা চলেছে লবণ অভিযানে। অনেকটা পথ হেঁটে যখন হাসিনার গ্রামে পৌঁছাল তখন ওর শরীরের অর্ধেক নুন গলে জল হয়ে মরুভূমির বাতাসে মিলিয়েছে। এখানে ঘাম হয়ে ঝরে পড়ার মতো বিলাসিতা জলের নেই। ত্রিপল, প্লাস্টিক, দড়ি আর বাঁশ দিয়ে তৈরি হাসিনার মেক-শিফট ঘর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমনই আরও কয়েকটা ঘর। যত দূর নজর পড়ে শুধু সাদা লবণের মরুভূমি। নুনের ওপর রোদের প্রতিফলনে চোখ ঝলসে যাচ্ছে মোহনার। সব কিছু অবাক হয়ে দেখতে থাকে। চৌকো চৌকো খোপ কাটা জমি। কোনটা নুনে সাদা আবার কোনটা মাটির রঙের। মধ্যে মধ্যে নুনের টিলা জমাট বেঁধে উঁচু হয়ে আছে। ঠিক যেন সমুদ্রের ঢেউ জমাট বেঁধে আছে। এই সেই নুন যা কিনা গরীব থেকে বড়লোক প্রতিটা ঘরে অপরিহার্য, যা না থাকলে আমাদের মুখে স্বাদ লাগে না, খাবার আলুনি লাগে। হাসিনা মোহনার অবাক দৃষ্টি দেখে মজা পাচ্ছে। ঘুরে ঘুরে কতক্ষণ দেখেছে খেয়াল নেই। কোদাল দিয়ে টেনে টেনে নুন জড়ো করছে একটি মেয়ে। ওরা নাকি দিন রাত কাজ করে। রাতের ঠান্ডায় নুন জমাট বেঁধে গেলে সেই নুন আর খুঁড়ে তোলা যায় না। এসব কথা হাসিনার কাছেই শুনেছে। হাসিনা এসে ওর হাত ধরতে, মোহনার চিন্তায় ছেদ পড়ল। হাসিনার তাপ্পি মারা ঘরে ঢুকল দুজনে। চারপাশে দারিদ্র্য আর অভাবের ছাপ স্পষ্ট। হাসিনার মা চারপাইয়ে কাচা এক টুকরো কাপড় বিছিয়ে দিল। যত্ন করে একটা থালায় করে বেড়ে দিল মোটা বাজরার রুটি আর ছোলার ডাল। মোহনা যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। এই তাপ্পি মারা সংসারের অভাবের ছবি তার শহুরে মনকে নাড়া দিয়ে গেল। এত কিছু তো আছে তার তবু খুশি হতে পারে না ভেবে নিজেরই লজ্জা করতে লাগল। মনে মনে কিছুটা অপরাধবোধও হয়তো। শিক্ষার আলো পৌঁছায় না এই প্রত্যন্ত মরুভূমিতে। এই নুনের পাহাড়ে খেলে বেড়াচ্ছে দুধের শিশু। এইখানেই বড় হয়ে উঠবে সে। এই তার কর্মস্থল, এই বুঝি তার সমাধিও বটে। কে জানে কত যুগ ধরে এভাবে এরা নুনের জোগান দিচ্ছে। আরও কতকাল দেবে! আনমনা হয়ে পড়ে মোহনা। এক ভারতবর্ষের মধ্যে যে কত অজানা ভারতবর্ষ লুকিয়ে আছে তাদের মতো শহরের মানুষ কতটুকুই বা জানে তার। আজ দিনটা ওর মনে থাকবে। নুনের চাষ শুনে প্রথমে খুব অবাক হয়েছিল ও। নুন কি গাছে ফলে নাকি রে বাবা! কিন্তু এখানে এসে সব দেখে শুনে মোহনা বুঝেছে নুন শুনতে যত সামান্য হোক আসলে এই নুনে মিশে আছে এক দল মানুষের ঘাম যারা স্বাধীনতার এত বছর পরেও কিস্যু পায় নি। ইতিহাসের পাতায় গান্ধীজীর লবণ অভিযান সোনার অক্ষরে লেখা আছে বটে কিন্তু এইসব মানুষগুলো এই প্রত্যন্ত প্রান্তরে আজও ব্রাত্য হয়ে রয়ে গেছে।
হাসিনা তাড়া লাগায়। এবার ফিরতে হবে। অনেকটা পথ যেতে হবে। সন্ধ্যা নামার আগে ফেরা দরকার। যখন হাসিনার সঙ্গে ফিরছে তখন মোহনা দেখল কয়েকজন লোক ওদের দিকেই আসছে। হাসিনা একটু থমকে দাঁড়ায়। ওদের দলে একটি কিশোর ছেলেও আছে। হাসিনা নিজের ভাষায় কিছু জিজ্ঞাসা করল ওদের। ওরা উত্তর করল বটে কিন্তু মোহনা প্রশ্ন বা উত্তর কোনওটাই বুঝতে পারল না। শুধু দেখল হাসিনা হন হন করে ওদের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। মোহনাও ওকে অনুসরণ করল। মনে কৌতূহল হচ্ছে। হাসিনা যেন ওকে খেয়ালই করল না। ও এভাবে চলে গেল কেন? এতক্ষণে মোহনা খেয়াল করল ওদের হাতে কাপড়ে মোড়া কিছু একটা আছে। ও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে হাসিনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদের কথোপকথন কিছুই বুঝছে না। লক্ষ করল কিশোর ছেলেটির চোখে চিক চিক করছে জল। চোখের জলের স্বাদও নোনতাই বটে। ততক্ষণে হাসিনার অনুরোধে কাপড়ে জড়ানো বস্তুটি মাটিতে রেখে জড়ানো কাপড়খানা খুলল ওরা। প্রথমটা ধরতেই পারে নি বস্তুটা কী! হাসিনা হাঁটু গেড়ে বসেছে মাটির ওপর। হাত দুটো আকাশের দিকে তুলে কী যেন বিড় বিড় করে ওঠে মেয়েটা। মোহনা বুঝে উঠতে পারে না জিনিসটা কী? একটা বিশ্রী পোড়া গন্ধ নাকে এসে লাগতে গা গুলিয়ে ওঠে ওর। ভাল ভাবে দেখে বুঝতে পারে এক জোড়া কালো আধপোড়া পা। হাসিনা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। অন্তহীন নুনের সাগরের বুকে দাঁড়িয়ে দু' হাতে মুখ ঢাকে মোহনা। নুনের সাদা রঙে যেন চোখ ঝলসে যাচ্ছে। হাসিনা বলে চলে, ‘ইয়ে বদ নসিবী মেমসাব…… নমক কা খেতি মে কাম করতে করতে গোর ইতনা খরা হো যাতা হ্যায় কি চিতা পে ভি জ্বলতা নেহি …’ মোহনা যেন শুনতেই চাইছে না তবু হাসিনা বলে চলেছে। সারা জীবন নুনে দাঁড়িয়ে কাজ করে বলে সারা শরীর পুড়লেও চিতার আগুন নুন শ্রমিকের পা দু'খানা পোড়াতে পারে না। তাই আলাদা করে সে দু'খানাকে সমাধিস্থ করতে হয় নুনের খেতে। অস্তগামী সূর্যের শেষ আলো মুছে গিয়ে নেমে আসে কালো আঁধার। দ্রুত পা চালায় মোহনা। মরুভূমির বুকে হিমশীতল রাত নামার আগে এখান থেকে পালানো দরকার। মুখের মধ্যে তীব্র একটা নুনে পোড়া স্বাদ টের পায় ও।