ইস্টবেঙ্গলঃ প্রথম একশো বছর--রূপক সাহা; দ্য কাফে টেবল, ব্যান্ডেল, হুগলি-৭১২১২৩; প্রথম প্রকাশঃ ২০২০
ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগানকে নিয়ে যতটা মাতামাতি, ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে তার অর্ধেকও হয় না। যদিও, ‘আভিজাত্য’র বুলি ছেড়ে কেবলমাত্র ফুটবল খেলায় পারঙ্গমতার বিচারে (বিশেষত কলকাতার মাঠে) এই ‘বাঙালদের ক্লাব’ কয়েক যোজন এগিয়ে আছেই!
যেমন, ১৯১১র সেই হঠাৎ ঝলকের পরে মোহনের মতো ২৮ বচ্ছর তাদের অপেক্ষা করতে হয়নি প্রথম লীগ জয় করতে। বিশ সালে জন্মগ্রহণের বাইশ বছরের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম কলকাতা লীগ-ফুটবল জয়, বলতে গেলে বাগানের আগেই (কারণ, ১৯৩৯-এ বাগানের প্রথম লীগ জয়ে জল-মেশানো ছিল--সে-বছর মহাশক্তিধর মহঃ স্পোর্টিং ও ইস্টবেঙ্গলের উইথড্র করার কারণে)। বাগানের দ্বিতীয় শিল্ডবিজয় হলো এগারোর ছ-ত্রি-শ বছর পরে, স্বাধীনতালাভের বছরে (১৯৪৭), যার মধ্যে ইস্টবেঙ্গল ’৪৩-’৪৫-এ দু দু বার শীল্ড জিতে ফেলেছে। ডুরান্ড-রোভার্সেও ই. বেঙ্গল এগিয়ে--বাগানের ’৫৩-তে প্রথম ডুরান্ড জয়ের আগেই ’৫১-’৫২ পর পর দু বছর দিল্লি জিতে নিয়েছে বাঙালরা। বম্বে রোভার্স কাপেও বাগানের ’৫৫-র প্রথম বিজয়ের ছয় বছর আগে বেঙ্গলের শুরুয়াৎ, ১৯৪৯এ।
কোচবিহার কাপে ৮ই অগাস্ট ১৯২১এ প্রথম মোহন-ইস্ট দ্বৈরথেও পূর্ববঙ্গীয়গণের বিজয়।
এতাবৎ বাগান ৩০ বার কলকাতা-লীগ জিতে থাকলে বেঙ্গল ৩৯ বার (রেকর্ড); শীল্ডেও বাগান: বেঙ্গল :: ২২:২৯।
২০১০ থেকে ’১৮--টানা আটবার কলকাতা ফুটবল লীগ জেতার রেকর্ডও বেঙ্গলের। জানি না ভবিষ্যতে কখনও এ’ রেকর্ড ভাঙবে কিনা।
এত ফলাও করে রেকর্ডের কহানী বিন্যাস করছি কেন?
কারণ বর্তমান এই আলোচিতব্য বইটির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো।
কারণ লেখালেখির ক্ষেত্রেও মোহনবাগানের প্রতি যথেষ্ট পক্ষপাত করা হয়ে থাকে। ভারতীয় ফুটবল বলতেই যেমন মোহনবাগানের জয়গাথা গাওয়া হয় তার মূর্ত প্রতিবাদ যেন এই বইখানি--কিংবদন্তির ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষপূর্তিতে এ’খানি এক নামী সাংবাদিক ও নব্য প্রকাশনালয়ের বিনম্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন!
***
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে বুঝতে গেলে দেশভাগ বুঝতে হবে।
তারও আগে থেকে যেমন যেমন পূর্ববঙ্গে সংখ্যালঘু হয়ে পড়তে থাকার চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়া, রুজির টানে কলিকাতা শহরে আগমন, এবং তথায় ‘বহিরাগত’ তকমা পাওয়া--এবং যার মূর্ত প্রতিবাদ ইস্টবেঙ্গল ক্লাব’ প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে--তার জয়ে ঘর-হারানোর বেদনার অপনোদন। তাই, বাগানীদের কাছে ‘মোহনবাগান’ যতটা, ‘ইস্টবেঙ্গল ক্লাব’ বাঙালদের কাছে তার চাইতে অনেক অনেক বেশি। মায়ের কোল সেটা তাদের কাছে। উমাকান্ত পালধির [#] মতো সমর্থক মোহনের অবশ্যই আছে/ছিল, কিন্তু লাল্টু ব্যানার্জীর [##] মতো ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টার আরও মিলবে হয়ত খুঁজলে।
[#, ## ’৭৫-এ ৫ গোল খাওয়ার লজ্জায় আত্মহত্যা করেছিলেন উমাকান্ত। আর বাড়ির দলিল ও অসুস্থ মায়ের গহনা বন্ধক রেখে টিম করার জন্য ক্লাবকে টাকা দিতে গিয়েছিলেন লাল্টু!]
***
সমাজতত্ত্ব ছেড়ে খেলায় আসি, খেলা ছেড়ে বই-এ।
২০০৩-এ ইস্টবেঙ্গল ইন্দোনেশিয়াতে গিয়ে ‘আশিয়ান ক্লাব কাপ চাম্পিয়নশিপ’ জিতলে কথা উঠেছিল যে কৈ এর আগে তো মোহন/মহঃ-র মতো আর কোনো ভারতীয় মহাক্লাব এত বড় এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি [’৬০-এ ঢাকায় মহঃ-স্পোর্টিং এর ‘আগা খান গোল্ড কাপ’ জেতা ছাড়া]? হ্যাঁ, বেঙ্গলের মুকুটে এ’ছিল এক নব্য-পালক যা আজও অক্ষত আছে। আর হ্যাঁ, এই এই সব রেকর্ড ফলাও করে গেঁথে রেখেছেন প্রবীণ ক্রীড়াসাংবাদিক রূপক ঘোষ, যা বইখানির আর্কাইভাল ভ্যালু বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
যদিও সেটা তো বইটির শেষের দিকে। এর মূল অঙ্গে যে গল্প-ইতিহাস-ছুট্কহানী (anecdote)-র বহতা স্রোত, স্রোতের পরে স্রোত--তাহাতে অবগাহন অতি আনন্দের অতীব সুখপাঠ সে-সব; শুরু যার দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ থেকে।
দুই ‘বঙ্গাল’ দেশনায়ক, চিত্তরঞ্জন ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত তখন কলকাতায় বসে বঙ্গরাজনীতি কাঁপাচ্ছেন। এই দুইজনেই ব্রিটিশ ক্লাব-কালচারের গুণগ্রাহী ছিলেন, এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জন্মের পিছনে ছিলেন পরোক্ষ মদতদার, কারণ শৈলেশ বসু, সুরেশ চৌধুরী, তড়িৎভূষণ রায়ের মতো প্রতিষ্ঠাতৃগণ এই দুই নেতারই সমর্থক ছিলেন, এবং দেশবন্ধুর দক্ষিণ-কলিকাতার বাসভবনে এঁদের সভা বসত ক্লাব প্রতিষ্ঠার গোড়ার দিকে। তাই, জাতীয়তাবাদী যে সুর সর্বদাই মোহনের উপরে আরোপিত হয় সেটি বাগানের একচেটিয়া ছিল না।
***
চমৎকার চমৎকার শীর্ষনাম অধ্যায়গুলির। শুনবেন?
• ‘সুটোবেলা থেইক্যাই রক্তে ইসবেঙ্গল’
• ‘পাঁঠার মাংস বনাম ল্যাংড়া আম’
• ‘অক্সিজেনের নল, আপ্পারাও অটল’
• ‘এশিয়ায় লাফ, আশিয়ান কাপ’
ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর ছুট্গপ্পো, যাকে সাহেবরা anecdote বলেন?
কিংবদন্তির আপ্পারাও একবার জ্বরে পড়ে আছেন। প্রবাদপ্রতীম জ্যোতিষ গুহ দেখা করতে এসে দেখেন তার তক্তপোষের তলায় বিস্কুট হরলিকস সব জড়ো করা রয়েছে।
‘খাওনি কেন আপ্পা? এই সব পুষ্টিকর খাবার না খেলে কী করে শীঘ্র সুস্থ হবে, কী করে খেলবে?’ আপ্পা নিশ্চুপ।
উপর্যুপরি প্রশ্ন করবার পর সাশ্রুনয়ন আপ্পা রাওয়ের নিবেদন, ‘এই সব ভালো ভালো খাবার মুখে তুলতে গেলেই যে আমার ছেলে দুটির মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সা’ব। জানি না, দেশে ওরা খেতে পাচ্ছে কিনা।’
না, এরপর থেকে গুহসাহেব তার কাকিনাড়ার (অন্ধ্রপ্রদেশ) গৃহেও ছেলেদের জন্যে খাবার পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে ভোলেন নি।
***
বা, ১৯৯২তে কলম্বো-তে এ এফ সি কাপে খেলতে যাবে দল, কিন্তু এয়ার টিকিটের ভাড়া জোগাড় হচ্ছে না। দোরে দোরে ঘুরে ঘুরে হন্যে হয়ে শেষ পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার এক কর্তা ও ক্লাব-অন্ত-প্রাণ কল্যাণ মজুমদারের পরামর্শে সটান রুশি মোদীর সঙ্গে গিয়ে দেখা করলেন পল্টু দাসের ডান-বাঁ দুই হাত নীতু সরকার ও স্বপন বল।
ফ্রি টিকিট চাই!
সব শুনেটুনে রুশি বলেন, ‘দোব ফ্রি টিকিট। তবে তার ৫% আপনাদের বেয়ার করতে হবে।’
স্বপন ততক্ষণে মোদীর পায়ে ডাইভ মেরে দিয়েছেন, ‘স্যর, আপনি এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান, ফুটবলে এত অবদান আপনার--টাটা ফুটবল একাডেমি গড়েছেন। ঐ ৫% আপনিই আমাদের ডোনেশন হিসেবে দিয়ে দিন না!’
রুশি মোদী হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারছেন না।
চব্বিশটা টিকিটই ফ্রি-তে দিয়েছিলেন উনি ইস্টবেঙ্গলকে।
এমন এমন শ’য়ে শ’য়ে এনিকডোটে ভরা এ’বই।
***
একটা দেশের ইতিহাস যতটা তার রাজাগজার যতটা তার শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের ততটাই তার সাহিত্যের, সিনেমা-নাটকের, তার ক্রীড়ার। ক্রীড়া ছাড়া কোনো দেশের গল্প সম্পূর্ণ হতে পারে না, বিশেষত, আধুনিক কালের। তাই স্যর যদুনাথ থেকে বিপান চন্দ্র যতটা ভারতেতিহাসকার, তার পাশেই মাথা উঁচিয়ে স্থান করে নেবে এই লাল-হলুদ মলাটের বইখানি।
যুগপৎ বধাঈ পাওনা লেখক-প্রকাশকের।
বধাঈ! বধাঈ!!
সংবাদ-সাময়িকপত্রে উনিশ শতকের বাঙালি মুসলমান সমাজ--স্বপন বসু (সংকলিত ও সম্পাদিত); প্রকাশকঃ বুকস স্পেস, কলকাতা ৯; প্রথম প্রকাশঃ নভেম্বর ২০১৯; ISBN: নেই
এ’ এক মহাগ্রন্থ!
এবং এ’বাংলা থেকে অন্তত এই বিষয়ের উপরে এত ব্যপ্ত কাজ এর আগে হয়নি। হয়ই নি। তাই, অতি সম্প্রতি, ডিসেম্বর ২০১৯-এ বর্ষীয়ান স্বপন বসু মহাশয়ের এই এনসাইক্লোপেডিক কাজখানি প্রকাশিত হতে দেখে আশার পারদ যেমন চড়েছিল, হাতে পেয়ে, পড়ে (পুরো পড়া এখনও শেষ হয়নি) তেমনি তাকে স্থান দিই মস্তকোপরি।
--সেক্কি মশয়, বই পড়া শেষ না করেই তার সমালোচনা লিকতে বসে গেলেন?
--হ। গেলেম। কারণ সাত শত পৃষ্ঠার প্রায় রয়াল-অক্টেভো সাইজের এই বই একবারে পড়ে শেষ করে ফেলা যায় না; আর ‘আভিধানিক-কেতাব’-এর গ্র.স. কবে আবার পুরো পড়া শেষ করে তবে লেখা হয়? সম্ভব কি সেটা? তা’বলে কি আর অভিধানের গ্র.স. লেখা হবে না?
***
তার আগে থেকেও বঙ্গদেশে আরব বণিকদের আগমন ঘটেছিল বটে তবে ত্রয়োদশ শতাব্দীর থেকেই এখানে ইসলামের প্রচার-প্রসারের রমরমা শুরু হয়---যার সঙ্গে বখতিয়ার খিলজীর অষ্টাদশ অশ্বারোহীর আক্রমণের গল্প যেমন জড়িয়ে আছে, তার থেকে অধিক শাহ্জালাল/ শেখ ফরিদের মতো মরমীয়াদের প্রেমসন্দেশ।
প্রায় সাড়ে পাঁচ শত বৎসর মুসলিম শাসন উপরান্ত যখন ব্রিটিশ শাসনামল শুরু হয়, মেকলে সাহেব যখন ফার্সীকে হঠিয়ে ইঙ্গভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করে ফেল্লেন, বঙ্গীয় মুসলিমের অভিমান, তার ‘পিছিয়ে পড়া’-র শুরু সেই থেকে।
যে কারণে স্বপনবাবুকে এই বই লিখতে হয়েছে।
***
সোর্স কী এই বই এর?
না, কোনো গ্রন্থিত কেতাবের (secondary source) সাহায্য নেননি লেখক, তাঁর ভরসা কেবলমাত্র ‘প্রাথমিক’ সূত্রে (অর্থাৎ, সংবাদ-ও-সাময়িকপত্র)। বঙ্গদেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে, মূলত নগর কলিকাতা থেকে, প্রকাশিত কমপক্ষে ৮১টি বাঙলা ও ২৬টি ইংরেজি এমন সোর্স সেঁচে ৭০০ পৃষ্ঠার এই মহাগ্রন্থের রচনা! লেখকের উদ্দেশ্য কোন ভাষণ দেওয়া বা টীকা লিখন নহে, নিজের মত চাপিয়ে দেওয়া তো নয়ই, কেবলমাত্র প্রাইমারি সোর্স থেকে তথ্যাবলী হুবহু তুলে তুলে এনে মুক্তাহার গেঁথেছেন উনি। বিশ্বাসের ভার, গ্রহণের ভার (বা, বর্জনের) পুরোপুরিই ছাড়া পাঠকের উপরে। চমৎকার এপ্রোচ।
***
(১) সামাজিক অবস্থা ও রীতিনীতি; (২) শিক্ষা; (৬) গো-হত্যা; (৭) কংগ্রেস ও মুসলমানসমাজ; (১২) বিবিধ----এবংবিধ তেরোটি অধ্যায়ে বিস্তৃত, অতি-বিস্তৃত আলোকপাত। ‘আলোচনা’ নয় কিন্তু, কারণ, আগেই বলেছি, কুত্রাপি লেখক তাঁর কোনো মত প্রকাশ করেননি, একমাত্র দীর্ঘ (৭২ পৃষ্ঠা ব্যাপী) মনোজ্ঞ ও তথ্যবহ এক ভূমিকা ছাড়া। বস্তুত, স্বপনবাবুর এই ভূমিকাখানি পড়লেই গ্রন্থটির ধারভার বুঝতে পারা যায়।
একটু পড়িঃ
বা, ওঁর ভাষাতেই লিখিঃ
“উনিশ শতকের অধিকাংশ পত্রিকার কোনও অস্তিত্ব আজ আর নেই, কিন্তু সরকারি উদ্যোগে ১৮৬৩ থেকে বিভিন্ন বাংলা পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলির অনুবাদ ‘Report on Native Papers’ নামে প্রতি সপ্তাহে ছাপা হতে আরম্ভ করে। ...এগুলি থেকে প্রচুর সাহায্য নিয়েছি।”
জানাতে লজ্জা নেই যে এই রিপোর্টের অস্তিত্ব আগে অজানা ছিল এই অধম কলমচির কাছে। এখন জেনে, পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। যে যে সকল পত্রিকা থেকে প্রচুর আহরণ করেছেন লেখক, যার মধ্যে সমাচার দর্পণ, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, বঙ্গদর্শন প্রভৃতি নামী বাংলা পত্রিকা যেমন আছে তেমনি প্রয়াস, আলো, লহরী, নুর-অল-ইমান-এর মতো অপরিচিত বা স্বল্পখ্যাতও রয়েছে। ঐ ঐ পত্রিকা ঘেঁটে ঘেঁটে মণিমুক্তা সেঁচে এনে তুলেছেন বর্ষীয়ান লেখক। কতটা যে পরিশ্রমের কাজ--বলে দেবার অপেক্ষা রাখে না।
***
তেরোটি দীর্ঘ দীর্ঘ অধ্যায়ের প্রত্যেকটিই আনপুটডাউনেবল! তারমধ্যে দুইটির কথা এখনই বলতে ইচ্ছা করছে, (এর বেশির তো স্থান অসংকুলান)--
(১) প্রসঙ্গ--গো-হত্যা, ও
(২) কংগ্রেস ও মুসলমান সমাজ
গো-হত্যাঃ হজরত ইসমাইলের স্বীয় পুত্রকে আল্লাহতায়লার উদ্দেশ্য জবেহ্ করতে উদ্যত হওয়া এবং তা থেকে ইসলামীয় এক প্রধান উৎসব ‘ঈদ-উল-আজহা’-তে কুরবানির প্রথার প্রচলন অতীব প্রাচীন। কিন্তু কুরবানিতে তো উট, দুম্বা, ছাগ প্রভৃতি দিলেও সমান পুণ্য হয়, তবে হিন্দুদিগের বিশ্বাসে আঘাত করে গো-জবেহই বা করতে হবে কেন? উপরন্তু, ভারতীয় উপমহাদেশে ছাড়া গো-হত্যার প্রতিই এতটা টান কিন্তু মুসলিম বলয়ের অন্য অন্য দেশে এতটা নাই--সে-সেখানে উট-দুম্বা-র কুরবানিই অধিক চলে।
না পাঠক, এ’যুক্তি আমার দেওয়া নয়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি লেখক মীর মোশাররফ হোসেন সাহেব [‘বিষাদ সিন্ধু’] এই যুক্তি দিয়ে ‘আহমদী’ পত্রিকায় দীর্ঘ নিবন্ধ লিখলে ‘আখবারে এসলামীয়া’-র সম্পাদক মৌলবী নইমুদ্দীন তাঁকে ‘কাফের’ ও ‘স্ত্রী-হারাম’ বলে গালি দেন। লিখিতভাবে। ফলতঃ, আদালতে মানহানির মামলা করলেন মোশাররফ তাঁর বিরুদ্ধে।
বস্তুতঃ, গো-হত্যা নিয়ে ভারতে হিন্দু-মুসলিম বিসম্বাদ এত তারস্বরে হয়েছে ও এত এত বার হয়েছে যা অন্য কোনো একটা বিষয় নিয়ে হয়নি। ষষ্ঠ অধ্যায়ের পাঠ তাই অতীব তথ্যবহ, কারণ কত কত মুসলিম মানুষ যে গো-হত্যার বিরোধিতা করেছেন তার ইয়ত্তা নেই।
ইতিহাসের এক তন্নিষ্ঠ পাঠক, অবশ্যি, এক নির্মোহ নৈর্ব্যক্তিকতা নিয়ে পাঠ করবেন এই অধ্যায়।
কংগ্রেস ও মুসলমান সমাজঃ
জন্মলগ্ন থেকেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস যে উচ্চবিত্ত ও উচ্চবর্ণের সংগঠন ছিল বলার অপেক্ষা রাখে না তা, কিন্তু বদরুদ্দীন তায়েবজীর মতো মুসলমান নেতা এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য হওয়া সত্ত্বেও (নৌরজী, ওয়াশা-র মতো পার্শী সদস্যও তো ছিলেন)
তাই দেখতে পাই, উদ্দেশ্য মহৎ, মিহির ও সুধাকর, হিতকারী, ইসলাম প্রচারক
প্রভৃতি মুসলমান-মালিকানাধীন পত্রিকাগুলি অন্য বহু ক্ষেত্রেই যথেষ্ট উদারতা ও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির জয়গান গাইলেও কংগ্রেস-বিরোধিতার লাইনে ছিল এককাট্টা। যদিও সহচর, স্বদেশী-র মতো কয়েকটি অন্যমতের পত্রিকাও যে ছিল না তা নয়।
এর কারণ কী?
পলাশী-পরবর্তীকালের [১৭৫৭ খ্রি. ] বঙ্গদেশে প্রায় এক শতাব্দীকাল ধরে সদ্য রাজ্য হারানো মুসলমান রাগে-দম্ভে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ইংরেজি শিক্ষা থেকে--শিকড়ে ফেরার ওয়াহাবী/ফরায়াজী আন্দোলন তখন তার কাছে প্রিয় হয়েছে, হিন্দুরা যখন হেয়ার স্কুল/হিন্দু কালেজে যাচ্ছে। ১৮৬০-এর দশকে সৈয়দ আমীর আলি ও নবাব আবদুল লতিফের মতো আলোকবর্তিকাধারীদের আগমনের পূর্বে নবজাগরণ-এর উন্মেষ ঘটেইনি মুসলমান সমাজে। তাই এর বিশ বছরের মধ্যে যখন কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা (১৮৮৫ খ্রি. ) হলো তাঁরা পিছিয়ে আছেন তখন অনেকটাই। এই অধ্যায়ে গ্রন্থিত অনেকানেক সংবাদ-পত্রিকার নমুনায় এই সত্য উঠে এসেছে বেশ।
আবারও বলি, ইতিহাসের এক পাঠককে কিন্তু সবিশেষ নৈর্ব্যক্তিকতা নিয়ে দেখতে হবে এই এই সকল ঘটনাবলী।
***
আগেই বলেছি সাতশো পৃষ্ঠার দীর্ঘ অভিধানধর্মী এই মহাগ্রন্থের পাঠ অমনি হুট্ করে শেষ হয়ে যায় না। এই পাঠ চলতেই থাকবে।
অসাধারণ এই বইটি ISBN নং ছাড়াই প্রকাশিত হয়েছে দেখে আশাহত হয়েছি।
বাঙালি--অনতিঅতীতচারণ--দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত; সূত্রধর প্রকাশনা, কলকাতা-৩; ডিসেম্বর ২০২০; ISBN: নেই
আজ থেকে বারো বছর আগে ‘পরবাস’-পত্রিকায় এই গ্রন্থ-সমালোচনার কলম লিখতে শুরু করেছিলাম যাঁর বই দিয়ে (https://www.parabaas.com/PB42/LEKHA/brBhababhuti42.html), আজ এত বছর পরে আবারও তাঁর বই সম্বন্ধে দু’-কথা বলতে বসে বড় ভালো লাগছে। কারণ, রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ সাহিত্যের প্রমুখ লেখক ডাঃ দেবাঞ্জন সেনগুপ্তের প্রতিভা যে কেবল ঐ পরিধিতেই সীমাবদ্ধ নয় সেটা বর্তমান প্রবন্ধ-সংকলনটি পড়লেই বেশ বোঝা যায়। জগদীশচন্দ্র, প্রফুল্লচন্দ্র থেকে উপেন্দ্রকিশোর-বিধানচন্দ্রের জীবনের নানান কাহিনী, নানান অপ্রকাশিত বা স্বল্প-পরিচিত কাহিনী যে সরস-সুখপাঠ্য ঢঙে শুনিয়েছেন উনি--সচরাচর পড়তে পাওয়া যায় না তা।
***
‘বিবেকানন্দের শিকাগো-জয়ঃ কলকাতার প্রতিক্রিয়া’, ‘কলকাতা বন্দর’, ‘বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ’, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’--এমন এমন বারোটি সুখপাঠ্য প্রবন্ধের ডালি এ’গ্রন্থ। বিষয় নির্বাচনে মুন্সিয়ানা, কারণ সব কয়টিতেই কোন-না-কোনভাবে ঐ বাঙালির ‘অনতি-অতীতচারণ’-এর সুবাস। কলকাতা বন্দর যতটা বাঙালির, ততটাই ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ বা/এবং ‘চা’ (শেষ নিবন্ধ)। এবং প্রতিটিই চমৎকার তথ্যবহ। এবং সুখপাঠ্য।
কয়েকটি প্রসঙ্গ উত্থাপনের লোভ এখানে সামলাতে পারছি না। যেমন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে ‘আধুনিক ভারতের রসায়নশিক্ষার জনক’ বলে তো সকলেই জানে, কিন্তু পেটরোগা ছাত্রটিকে যে শারীরিক অসুস্থতার কারণে হেয়ার স্কুল ছেড়ে দুই বছরের জন্য যশোরের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়েছিল এবং সেখানে বহুভাষাবিদ পিতার কাছে বাংলা-ইংরেজি-সংস্কৃতের সঙ্গে লাতিন ও ফরাসী ভাষাও শিখে নিয়েছিলেন--সেটা ক’জন জানে? এবং এই ভাষাশিক্ষা তাঁর গিলক্রিস্ট বৃত্তি পেয়ে এডিনবার্গে পড়তে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করেছিল, যেখানে তিনি ‘১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহ’-এর উপরে এক জ্বালাময়ী রচনা লিখে এক প্রতিযোগিতা জিতে নিয়েছিলেন প্রায়!
বা,
বিবেকানন্দের শিকাগো-বক্তৃতার পরে পরে শহর কলিকাতায় যখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে (বেশিটাই বিরূপ-প্রতিক্রিয়া) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন নিজহস্তে এক দীর্ঘ প্রশস্তিপত্র লিখে নরেন্দ্রের পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন!
বা,
১৯৫০এ মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে এক ডেপুটেশনে কম্যুনিস্ট পার্টির শৈলেন দাশগুপ্ত (পরবর্তীকালে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান) প্রবল চিৎকার করে শ্লোগান দিয়ে গলাই ভেঙে ফেললেন। ঔষধ নিতে হলো সেই ডাঃ রায়ের কাছেই
যিনি আবার সাতদিন পরে দেখাতে আসার নিদান দিয়ে ‘একটু কম জোরে’ শ্লোগান দেবার নিদান দেন!
চমৎকার পাঠ!
***
বাঙালির বাঙালিত্ব তো ছড়িয়ে রয়েছে কত কত ব্যক্তিত্ত্ব কত কত বিষয় ও স্থানের মধ্যে। ‘রসগোল্লা’ থেকে ‘গড়ের মাঠ’ থেকে ভাষাচার্য মহম্মদ শহীদুল্লা, রেভারেন্ড লালবিহারী দে, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রমুখ অনতি-অতীতকালের আরও অন্য অন্য ‘প্রখ্যাত বাঙালিদের’ উপরেও ভবিষ্যতে কোনো সংকলন পড়বার ইচ্ছা রয়ে গেল দেবাঞ্জনের জাদুকলম থেকে।
***
শেষে বলি, প্রথমেই মুখবন্ধে দেবাঞ্জনের ‘ফরমায়েশি রচনা’-র সংকলন নিয়ে কুণ্ঠার কারণটি বোধগম্য হলো না, কারণ এই মানের রচনাগুলি নানান পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে, কতক হয়ত হারিয়ে যাবে,--তার থেকে এই গ্রন্থাকারে প্রকাশনা স্বাগত নয় কি?
নূতন প্রকাশনালয়ের কাজের মান ভালো।
স্যর দুখীরাম---হরিপ্রসাদ চটোপাধ্যায়; সূত্রধর প্রকাশনা, কলকাতা-৩; এপ্রিল ২০১৯; ISBN: নেই
সন ১৮৭৫এ, ইংল্যান্ডে যখন আজকের প্রখ্যাত বার্মিংহাম ফুটবল ক্লাবে র জন্ম হচ্ছে, অনেকেই মনে রাখেন না, সেই সময়েই উত্তর কলিকাতার বাগবাজার বোসপাড়ায় (যেখানে দু’-দশক পরে ভগিনী নিবেদিতার নিবাস হবে) মধ্যবিত্ত মজুমদার পরিবারে এক সন্তান জন্মলাভ করে, ফুটবল খেলাকে জীবন-তপস্যার স্তরে তুলে নিয়ে গিয়ে যিনি ভারতবর্ষকে ফুটবল খেলা শেখাবেন। প্রথম। কাছাকাছি সিমলে পাড়ার নরেন দত্ত নামের ১২ বছরের এক কায়স্থসন্তান তখন মেট্রোপলিটন ইস্কুলে পড়ে; ও'পাশের পাড়ার নগেনের [নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী--The Father of Indian Football] বয়স তখন মাত্র ৬, প্রথম ফুটবলে লাথি মারতে তখনও তার চারি বৎসর বাকি আছে। শিবদাস ভাদুড়ী, ১৯১১-এ শীল্ড জিতে যিনি ভারতের নয়নের মণি হবেন, তাঁর জন্ম হবে এরও দশ বছর পরে।
***
আজও কলকাতা ময়দানের এরিয়ান ক্লাব-তাঁবুতে ঢুকলে প্রথমেই এক কেশহীন পুষ্টগুম্ফ মানুষের ছবি নজরে আসে। এঁর নাম শ্রী উমেশচন্দ্র মজুমদার [১৮৭৫—১৯২৯ খ্রি.], ইংরিজি 'O' দিয়ে যিনি নিজের নামের বানান শুরু করতেন; এবং 'স্যর' দুখীরাম বলে যিনি আজও প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন। ঈশ্বরচন্দ্র আধুনিক বাঙালিকে অক্ষরজ্ঞান করালে, মধুসূদন গুপ্ত ডাক্তারি শেখালে, 'স্যর' দুখীরাম শিখিয়ে গেছেন ফুটবল। এক পরাধীন জর্জরিত জাতের মেরুদণ্ড দৃঢ় করতে তাই 'স্যর' দুখী পিছিয়ে নন এঁদের চাইতে।
এই মহামানবের জীবনী প্রথম গ্রন্থায়িত করে বর্তমান লেখক তাই আমাদিগের ধন্যবাদের পাত্র হয়েছেন।
**
শুধু ফুটবল? ক্রিকেট নয়?
আর হকি? হ্যাঁ, তা-ও।
কমল ভট্টাচার্য, সুঁটে ব্যানার্জী, নির্মল চ্যাটার্জী প্রমুখ প্রথম যুগের বাঙালি ক্রিকেটারদেরও প্রাথমিক শিক্ষাগুরু এই 'স্যর' দুখীরামই ছিলেন, তবে ফুটবলের দাপটে তাঁর ক্রিকেট-হকির মুন্সিয়ানা চাপা পড়ে গেছে।
কে ছিলেন তাঁহার গুরু? গুরুর গুরু কে?
না, ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রেখে যায় নি এই স্বশিক্ষিত মানুষটির বাল্যের গল্প। বরং উনি লিখে গিয়েছিলেন ফুটবল শেখার যে এক আদি গ্রন্থ, ‘Hints to the Young Footballer’, ইতিহাসবিস্মৃত বাঙালি আমরা তা হারিয়ে ফেলেছি। হারিয়ে গেছে। যদিও তাঁর পরবর্তীকালের ছাত্রগণ আজকের দিনে বলে থাকেন স্যারের সে লেখা এগিয়ে ছিল নিজ সময়ের থেকে ৫০ বৎসর! ১৯৭০-র দশকে ইউরোপ থেকে প্রকাশিত অনেকানেক ফুটবল-শিক্ষার কেতাবের সঙ্গে দুখীরামের ঐ বই-এর শিক্ষার মিল খুঁজে পাওয়া যায়! ডন ব্রাডম্যানের ‘The Art of Cricket’ আজ এক ক্রিকেট-বেদের দর্জা পায়, কিন্তু দুখীরাম গেঁয়ো যোগী, ভিখ্ পাননি আজও। কবে আর দুখীরাম-বাঘাসোম-অচ্যুত ব্যানার্জীদের মতো ‘কিন্ডারগার্টেন-কোচ’দের আমরা সম্মান করতে শিখলাম? অমল দত্ত/ পি কে ব্যানার্জী তবু ট্রফি জিতেটিতে কিছু স্বীকৃতি পেয়েছেন।
***
বর্তমান গ্রন্থের লেখক হলেন এক মান্য ও বরিষ্ঠ স্কোরার, বিগত ৫০ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের স্কোর ও পরিসংখ্যানের শেষ কথা এই হরিপ্রসাদবাবু। কিন্তু তিনি যে প্রেমরসে ভিজিয়ে এমন এক জীবনকাহিনী গাঁথতে পারেন, জানা ছিল না। এ’খানি যদিও তাঁর চল্লিশ বছর আগে লেখা এক রচনা, সম্প্রতি এইরূপে গ্রন্থায়িত। তবে না, ‘স্যর দুখীরাম’, সম্ভবতঃ, পূর্বেই গ্রন্থায়িত হয়ে গেছেন! কী করে? কেন, পাঠক কি মতি নন্দীর কলমে ‘ক্ষিদ্দা’ [‘কোনি’ উপন্যাস] বা, ‘কমল-দা’-কে [‘স্টপার’ উপন্যাস] পড়েননি?
ঐ ঐ চরিত্র যেন ‘স্যর দুখী’-র-ই প্রতিচ্ছায়া।
***
বুট পরে ফুটবল খেলা। কড়া মিলিটারি শাসনের মতো প্রশিক্ষণ। হার-না-মানা মানসিকতা--চ্যাম্পিয়নের এই এই গুণগুলি প্রোথিত করে দিয়ে গিয়েছিলেন উমেশবাবু তাঁর ছাত্রদের মধ্যে। যদিও বল বে-কন্ট্রোল হয়ে যাবার ভয়ে ভারতীয়রা ১৯৪৮-এর লন্ডন অলিম্পিক পর্যন্ত খালি পায়েই খেলে এসেছে, তবু মহমেডানের আজিজ সাহেবের মতো প্রশিক্ষক ঐ বুট পরে খেলিয়েই তিরিশের দশকে তাঁর ক্লাবের আকাশছোঁয়া সাফল্য এনে দিতে পেরেছিলেন। স্যর দুখীরামের এ-ও এক পরোক্ষ জয়।
***
সন্তসম ব্রহ্মচারী মানুষ! ভাইপো ছোনে মজুমদারকে আরেক কিংবদন্তি গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, যেমন সামাদ, করুণা ভট্টাচার্য, ডাঃ সন্মথ দত্তের মতো ফুটবলারদেরও গড়ে ছিলেন। এবং হ্যাঁ, যুগপুরুষ গোষ্ঠ পালও প্রথমে তাঁর এরিয়ান ক্লাবেই খেলা শুরু করেছিলেন উমেশবাবুর তত্ত্বাবধানে। ‘ক্রীড়াশিল্প’ দুখীরামের কাছে প্রতিষ্ঠিত ধর্মের চেয়ে অনেক উপরে ছিল। ফুটবল শেখানোর তাগিদে তাই তো ধর্মীয় গোঁড়ামিকে কলা দেখিয়ে ‘সামাদ’-কে ‘সন্তোষ’, ‘মতিউর রহমান’-কে ‘মতি’ ছদ্মনামে নিজগৃহে ঠাঁই দিতে দ্বিধা করেননি।
পণ করেছিলেন, নিজের এরিয়ান ক্লাব লীগ/শিল্ড না জেতা পর্যন্ত বিবাহ করবেন না। করেনও নি।
তাই তো ১৯৪০-এ মোহনবাগানকে ৪-১ গোলে হারিয়ে এরিয়ান প্রথম আই.এফ.এ. শীল্ড জিতলে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠেছিলেন শিষ্য বিচে মিত্তির, "ওরে, বেঁচে থাকলে আজ একটা লোকের বিয়ে হতো!"